সোরিনাম - PSORINUM, চতুর্থ বর্ষ - মেটেরিয়া মেডিকা


সোরিনাম 
PSORINUM




প্রতিশব্দ:- সোরা বিষ, কচ্ছুবিষ।

উৎস:- পরিপর পাঁচড়ার পূঁজ হইতে ইহা উদ্ভূত।

প্রভার:- ডাঃ হেরিং, ডাঃ হ্যানিমান ও ডাঃ এস ইহা প্রুভ করেন।

প্রস্তুত প্রণালী:- এই নোসোড ঔষধটি পরিপক্ক পাঁচড়ার পূঁজ হইতে সুরাসার সহযোগে মূল অরিষ্ট এবং সুগার অব মিল্কের সহিত ইহার বিচূর্ণ প্রস্তুত হইয়া থাকে। পরে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে বিভিন্ন শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয়।

প্রস্তুতের ফরমুলা:-  এফ-৬-বি অথবা এফ-৮। 

সোরিনামের ধাতু প্রকৃতি:- ইহা একটি নোসড জাতীয় ঔষধ এবং গভীর ক্রিয়াশীল এন্টিসোরিক, এন্টিসাইকোটিক, এন্টিসিফিলিটিক, টিউবারকুলার ঔষধ। সোরা বিষ নষ্ট করার জন্য এবং মোরা দুষ্ট ধাতুতেই ইহা ব্যবহৃত হয়। অনবরত খাই খাই ভাব, পেট বড় ও হাত পা সুরু, দেহে পুরাতন ক্ষত চিহ্ন কদাকার, শীর্ণ রুগ্ন ও মলিন, মুখমণ্ডল চকচকে, শরীর হইতে যাহাদের অতিশয় দুর্গন্ধ বাহির হয় কান দিয়া পচা গন্ধযুক্ত পূঁজ নির্গ হয় তাহারাই সোরিনামের ধাতুযুক্ত রোগী।

ক্রিয়াস্থান:- সোরাঘটিত রোগসমূহে ইহার অসীম ক্রিয়া। চর্মের উপর সোরিনামের প্রধান ক্রিয়া প্রকাশ পায়। পরিপোষণ যন্ত্রমণ্ডলেও ইহার বিশেষ ক্রিয়া দৃষ্ট। চর্মের উপর ক্রিয়া করিয়া চুলকানি যুক্ত রক্ত ও পূজপূর্ণ, ক্ষতকারক বা শুদ্ধ উদ্ভেদ সৃষ্টি করে এবং পরিপোষণ যন্ত্রে ক্রিয়া করিয়া দুর্বলতা ও প্রতিক্রিয়াহীন নিস্তেজ ভাব উৎপন্ন করে।

মানসিক লক্ষণ:
১) সোরিনামের রোগী অতিশয় বিষণ্ণ, বিষণ্ণতাটি এত প্রবল যে, নিজেই বুঝিতে পারে না কি করিলে তাহার সন্তুষ্টি আসিতে পারে। 
২) সোরাবিষ ও গণ্ডমালা ধাতুগ্রস্ত রোগী, শীতকাতুরে, অত্যন্ত ছটফট করে, সামান্য কারণে চমকিয়া উঠে বা ভয় পায়। 
৩) রোগীর মনের মধ্যে ভীতিপূর্ণ উদ্বিগ্নতা ও উৎকণ্ঠা এবং ধর্মোন্যত্ততা, নৈরাশ্য, আত্মহত্যার ইচ্ছা, নিজের মুক্তি ও আরোগ্য বিষয়ে হতাশাপূর্ণ ভীতি ভাব এত প্রবল হইয়া উঠে যে, সে মনে করে অবশ্যই তাহার মৃত্যু হইবে, ব্যবসায়ে সে লোকসান খাইবে অথবা জীবনে প্রতি পদক্ষেপেই অকৃতকার্যতা আসিয়া তাহার সমগ্র জীবনকেই দুঃখময় করিয়া তুলিবে। 
৪) ইহার শিশু রোগী নিরতিশয় বিরক্তি বোধসহ লোকসঙ্গ পছন্দ করে না, একলাই থাকিতে চায়। ধর্মের জন্য রোগী পাগল হয়। 
৫) কোন বিপদ হইবার কিংবা চোর ডাকাতদের ভয়জনক স্বপ্ন। 
৬) ইহার মানসিক লক্ষণসমূহ রাত্রিকালে, নিদ্রার সময়, বিশেষ করিয়া শয্যার উত্তাপে সমধিক বৃদ্ধি পায় এবং আহারে উপশমিত হয়।

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) ঠাণ্ডা বা শীতল বাতাস অসহ্য। এমনকি গ্রীষ্মকালেও গায়ে সর্বদা কাপড় ঢাকিয়া রাখে, ঋতু পরিবর্তনে প্রায়ই অসুখ করে। ঝড় বৃষ্টির পূর্বে বা সময়ে অস্থিরতা বৃদ্ধি হয় ।
২) শরীরে উদ্ভেদ নাই অথচ অসহ্য চুলকানি বর্তমান থাকে। অতিশয় চুলকানির জন্য অনিদ্রা।
৩) কোনও কঠিন পীড়ায় সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়া হয় না, ভালভাবে ক্ষুধা হয় না, নতুন ব্যাধির পর বিশেষ কোন কারণ থাকিয়াও শরীর শোধরাইতে পারে না। 
৪) শিশু রক্তহীন, মলিন, দিনরাত্রি মধ্যে একবারও ঘুমায় না, শুধু কাঁদে, কিংবা দিনের বেলায় বেশ হাসে, খেলা করে, কিন্তু রাত্রে বড় বিরক্ত করিয়া তোলে, ছটফট করে, চিৎকার করিয়া কাঁদে।
৫) নিঃসৃত প্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধ, বাহ্য, প্রস্রাব, কানের পূজ, ঢেকুর, স্ত্রীলোকদের ঋতু ও প্রদর স্রাব, ঘাম ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের স্রাবেই অত্যন্ত কটু গন্ধ, পঁচা গন্ধ। ময়লার গন্ধ, ইহাদের অপেক্ষা ও কটু গন্ধ, শরীরে দুর্গন্ধ, স্নান করিলেও ঐ দুর্গন্ধ যায় না।
৬) অতিশয় ক্ষুধা, এমন কি রাত্রিতে উঠিয়াও কিন্তু আহার করিতে হয়।
৭) চর্মপীড়া- উত্তেদগুলি সহজে পাকে, কখনও শুষ্ক, চর্ম দেখিতে কদাকার, যেন জীবনে কখনও স্নান করে নাই, কোন স্থান এবড়ো থেবড়ো বা মসৃণ যেন তৈল মাখানো।
৮) চর্মরোগ বসিয়া গিয়া কোন পীড়া বিশেষতঃ কাশির উৎপত্তি, রাতে বেড়াইবার সময়ও সন্ধ্যায় শুইলে কাশির বৃদ্ধি, গয়ার সবুজ হলদে লোনা স্বাদ বিশিষ্ট পুঁজের মত, গয়ার উঠিবার পূর্বে অনেকক্ষণ ধরিয়া কাশে।
৯) তরুণ পীড়া আরোগ্যের পর অত্যধিক ঘর্ম, তাহাতে কষ্টের অবসান হয়। 
১০) বহুদিনের পুরাতন প্রমেহ আরোগ্য হইতে চায় না, সুনির্বাচিত ঔষধও বিফল হয়।
১১) কোমর বেদনাসহ কোষ্ঠবদ্ধ সালফারে উপকার হয় না।
১২) উদরাময় হঠাৎ বাহ্যের বেগ (সালফার, এলো), মলে বিশ্রী দুর্গন্ধ, রাত্রি ১টা হইতে ৪টার মধ্যে বৃদ্ধি।
১৩) ডিম পঁচার ন্যায় দুর্গন্ধযুক্ত উদার।
১৪) মাথায় শুষ্ক আঁশের মত পদার্থের দ্বারা আবৃত কিংবা রসপূর্ণ দুর্গন্ধ উদ্ভেদ, তাহা হইতে আঠার মত দুর্গন্ধ পূঁজ বা রস পড়ে।
১৫) সর্বক্ষণ নাক দিয়া সর্দি করে, সমস্ত যন্ত্রের কার্য ধীর গতিতে চলে, ঔষধের ক্রিয়া অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়।
১৬) পরিপাক যন্ত্রের দুর্বলতা, দুর্গন্ধ উদরাময়, অস্বাভাবিক প্রবল ক্ষুধা ও বলক্ষয়কারী ধর্ম ইহার বিশিষ্টতা।
১৭) কোনও সুনির্বাচিত ঔষধে কাজ হয় না। 

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- পুরাতন পীড়ায় সুনির্বাচিত ঔষধে উপকার না হইলে, রক্তশূন্য শিশুদের পীড়া প্রতি শীতে সূচনা হইলে, চর্মপীড়া, বিষণ্ণতা, পরিপাক যন্ত্রের পীড়া, উদরাময়, হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট, স্ত্রীরোগ, উত্থাদ পীড়া, প্রতিশ্যায় জ্বর, প্রতিক্রিয়া শূন্যতা, অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত কৰ্ণপীড়া, অস্থিক্ষত, যক্ষ্মা, শোথ, পুরাতন যকৃত প্রদাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সোরিনাম প্রয়োগ হয়।

সালফার ও সোরিনামের চারিত্রিক লক্ষণের তুলনা:- সালফার ও সোরিনাম উভয়ই উত্তম এন্টিসোরিক ঔষধ। সোরিনামের লক্ষণগুলি প্রায় সমস্ত ই সালফারের মত তবে ইহাদের মধ্যে প্রভেদ এই যে, সোরিনাম নিজে সোরা বিষ ও সালফার সোরার সদৃশ ঔষধ। সালফারের রোগী আদৌ স্নান করিতে চাহে না, কারণ তাহাতে রোগের পুনরাক্রমণ হয়, সালফারের নিঃসৃত স্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকিলেও সোরিনামের তুলনায় কিছুই নহে। সোরিনামের রোগীর ঠাণ্ডা সহ্য হয় না, সালফারের রোগী ঠাণ্ডা ভালবাসে, ঠাণ্ডা সহ্য হয়, ঠাণ্ডা স্থানে থাকিতে চায় কিন্তু স্নান করিতে চায় না, স্নানে কষ্ট হয় ও উপসর্গ বাড়ে। সোরিনাম রোগী শীত বোধ করে, গ্রীষ্মকালেও গায়ে গরম কাপড় ও মাথায় টুপি ব্যবহার করে। আর সালফারের রোগী সর্বদাই গরম বোধ করে, ঠাণ্ডা তার ভাল লাগে।

পূর্বশর্ত:- সোরিনাম ব্যবহারের পূর্বশর্ত যখন কোন রোগে সুনির্বাচিত ঔষধে স্থায়ী উপকার হয় না অথবা অন্য কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন সোরিনাম উপযোগী। যে সকল গণ্ডমালা ধাতুবিশিষ্ট ব্যক্তি অত্যন্ত ছটফটে, সামান্য কারণে ভয় পায় বা চমকাইয়া উঠে বা যাহাদের চুলকানি থাকে, চুলকানির জন্য ভাল ঘুম হয় না। যে সকল রোগী শীত কাতুরে, এমন কি গ্রীষ্ম কালেও গায়ে সর্বদা কাপড় রাখিতে চায়, দেহস্থ সকল নিঃসৃত স্রাবে দুর্গন্ধ ও পচাগন্ধ, শরীরে দুর্গন্ধ, স্নান করিলেও ঐ দুর্গন্ধ যায় না, যাহারা নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন তাহাদের ক্ষেত্রেই সোরিনাম ব্যবহৃত হয়।

উপযুক্ত ঔষধের ব্যর্থতায় সোরিনাম:- সুনির্বাচিত উপযুক্ত ঔষধ ব্যবহারেও যাহাদের শরীরে ঔষধের প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন হয় না, সুনির্বাচিত ঔষধেও স্থায়ী উপকার হয় না তখন সোরিনাম উপকারী। যেমন রোগীর লক্ষণ দৃষ্টে পালসেটিলা যথোপযুক্ত ঔষধ নির্বাচিত হইয়া যথানিয়মে প্রযোজিত হইলেও যখন ক্ষণস্থায়ী শান্তি ভিন্ন সম্যক আরোগ্য জন্মে না, তখন রোগের মূলে কোন প্রকার ধাতুদোষ প্রচ্ছন্ন আছে বলিয়া সিদ্ধান্ত করিতে হয়। যে পর্যন্ত এই ধাতু দোষ দূরীভূত করিতে না পারা যায় সে পর্যন্ত রোগের আরোগ্যের আশা করা বৃদ্ধা। এই ধাতু দোষ বিদ্যমান থাকে বলিয়াই যথোপযুক্ত ঔষধ ব্যবহারেও অনেক তরুণ ও পুরাতন রোগ আরোগ্য হয় না। পুরাতন জটিল এবং সাংঘাতিক জাতীয় তরুণ রোগে রোগীর শুধু শীতকাতরতা ও প্রতিক্রিয়ার অভাব ভিন্ন যখন আর অন্য কোন লক্ষণই পাওয়া যায় না এবং চিকিৎসকও শুধু একের পর এক ঔষধ প্রয়োগ করিতে বাধ্য হন অথচ আশানুরূপ ফল পান না তখন সোরিনাম প্রয়োগ করিলে রোগী আরোগ্য না হইলেও একটি শৃংখলাপূর্ণ অবস্থার উদয় হয় এবং পরবর্তী প্রয়োগযোগ্য সদৃশতম অন্য কোনও ঔষধের চিত্র আনিয়া দেয় এবং রোগীর আরোগ্য কার্যে যথেষ্ট সহায়তা করিয়া থাকে।

শিশুচিত্রের একটি প্রতিকৃতি:- সোরিনামের শিশুমাত্রই শীর্ণ রক্তশূন্য ও ক্ষীনজীবি। কোনও সময়েই বিশেষ করিয়া রাত্রিকালে তাহাদের চক্ষে ঘুমের লেশমাত্র লক্ষ্য করা যায় না। কেবলই খুঁত খুঁত করে, ক্রন্দন ও অস্থিরতাসহ তাহারা জননীকে জ্বালাতন করে। কখনও রাক্ষুসে ক্ষুধা, আবার কখনও ক্ষুধার অভাব, সেজন্য সামান্যতম খাদ্যবস্তুর মাত্রাধিক্যে তাহারা উদরাময় হইয়া থাকে। রাক্ষুসে ক্ষুধা সত্ত্বেও শরীর শীর্ণ, পেটটা বড় ও উঁচু হয়, ঢেকুর তোলে, বায়ু নিঃসৃত হয়, বায়ুতে বিশ্রী দুর্গন্ধ থাকে, প্রতি শীতকালই সোরিনাম রোগীর নিকট বিপদ সংকুল পরীক্ষার সময়। স্মরণ রাখা উচিত যে, বিদ্যুৎযুক্ত আবহাওয়া সে মোটেই সহ্য করিতে পারে না। শুধু তাহাই নয় ঝড়বিদ্যুৎ আসিবার দুই দিন পূর্ব হইতেই সে অতিশয় অস্থিরতা বোধ করে, তাহা ছাড়া সে কোনও প্রকার আবহাওয়ায় বিশেষতঃ ঠাণ্ডায় সোরিনাম রোগী বিশেষভাবে অভিভূত হইয়া পড়ে। ফসফোরাসেও ঝড় বিদ্যুৎ পছন্দ করে না, বরং ঝড় বিদ্যুতের সময়টিতে সে শুধু অস্বস্থি বোধ করে, এমনকি সে ঐ সময় এত বেশী ভয় পায় যে, ঘরের দরজা জানালা পর্যন্ত কাহাকে খুলিতে দেয় না। নীচ শ্রেনীর সন্তান সন্ততিগণ যাহারা অত্যন্ত অপরিষ্কার, নোংরা, দুর্গন্ধ স্থানে প্রতিপালিত এবং যে সকল শিশুর প্রায়ই গালগলা ফোলে, ঘাড়ের গ্ল্যাণ্ড ফোলে, ব্রুফুলা ধাতুগ্রস্ত, চিররুগ্ন ও পীড়িত, যাহাদের আকৃতি দেখিতে কদাকার, চোখের প্রদাহ থাকে, কান দিয়া দুর্গন্ধ পুঁজ বাহির হয়, নাকে সর্দি ঝরে, মন সদাই বিষন্ন, তাহাদের পীড়ায় ইহা অধিক উপযোগী ।

শীতকাতরতা লক্ষণে সোরিনামের প্রয়োগ:- সোরিনামের রোগী শীত সহ্য করিতে পারে না। বিশেষ করিয়া মাথায় ঠাণ্ডা বাতাস লাগিলে পীড়া বৃদ্ধি পায় ও অত্যন্ত অশান্তি বোধ করে, সেজন্য মাথায় টুপি বা পাগড়ী যা হোক একটি কিছু দিয়া ঢাকিয়া রাখা ইহার রোগীর স্বভাব, এমনকি গ্রীষ্মকালেও গরম জামা লেপ ব্যবহার করিয়া থাকে। ইহার রোগী শীত কাতুরে বলিয়া বঝড় বৃষ্টির সময় ঠাণ্ডা হাওয়ায় রোগী পীড়িত হইয়া পড়ে বা রোগীর অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।

চর্মরোগে সোরিনামের লক্ষণ:- সোরিনাম, চর্মপীড়ার একটি জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি বিশেষ। নানাবর্ণের নানা প্রকার চর্মপীড়া ইহার মধ্যে দেখা যায়। লালাভ হলুদ বা কাল বর্ণের চকচকে রসপূর্ণ বা রসশূন্য নিস্তেজ প্রায় নানা জাতীয় চর্মপীড়ায় বারবার আক্রমণে ইহার দেহটি নানা বর্ণের সমন্বয়যুক্ত ঠিক একখানি মানচিত্রের ন্যায় দেখায়। সোরিনামের চর্মপীড়া অতিশয় অদ্ভূত ও বিভিন্ন প্রকৃতিযুক্ত যথা-
১) নানা প্রকার বর্ণ বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়া কোথাও বা গাঢ় বা পাতলা পঁচা গন্ধযুক্ত পূঁজে পরিপূর্ণ, আবার কোথাও বা একেবারে শুষ্ক প্রকৃতির অথচ দুর্গন্ধযুক্ত, কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্ভেদগুলি অসলগ্ন, আবার ক্ষেত্র বিশেষে দলবদ্ধ আকারে বিকশিত থাকিতেও দেখা যায়।
২) চর্মপীড়ার বৃদ্ধি যদিও শীতকালে তথাপি সমগ্রীক রোগী হিসাবে ইহার বৃদ্ধিও যে কোন প্রকার ভিজা বা শুষ্ক জাতীয় ঠাণ্ডায় এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনেই লক্ষ্য করা যায়।
৩) অতি মাত্রায় চুলকানি এবং বাতাসটি যতই গরম হইতে থাকে, চুলকানিও ততই বৃদ্ধি পায়, সেজন্য আক্রান্ত স্থানে পাখার বাতাস পাইতে চায় । 
৪) শয্যার উত্তাপে নিরতিশয় বৃদ্ধি।
৫) চর্মপীড়াগুলি চাপা দেওয়া হইলে সাধারণতঃ শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হইয়া
কষ্টকর শ্বাস প্রশ্বাস যুক্ত হাঁপানীর আবির্ভাব হয়।
৬) গাত্রচর্ম কোন মতেই পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না।
৭) চর্মপীড়া থাকুক বা নাই থাকুক রোগী নিজেই নিজের দুর্গন্ধে অতিষ্ট। সোরিনামের আরও বিশেষ লক্ষণ এই যে, চর্মপীড়ায় চুলকাইতে চুলকাইতে রক্ত বাহির হইলেও চুলকানির নিবৃত্তি হয় না। অনেক সময় দেখা যায় কোন প্রকার উদ্ভেদ নাই তবুও দারুন চুলকায়। চর্মরোগ বসিয়া গিয়া জ্বর, উদরাময়, কলেরা, কাশি, হাঁপানি প্রভৃতি পীড়া।

গ্রাফাইটিস ও পেট্রোলিয়ামের সহিত সোরিনামের পার্থক্য:-
গ্রাফাইটিস:- রোগীর কোন না কোন রূপ চর্মরোগ থাকে। ইহার রোগী মোটাসোটা ও ফর্সা। শরীরে কোন স্থানে ক্ষত হইলে পূঁজ জন্মায়। কানের উপরে ও পিছন দিকে, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ও শরীরের নানা স্থানে বিশেষতঃ মস্তক, মুখমণ্ডল, জননেন্দ্রিয় স্থানে, চোখের পাতায় ফুস্কুড়ি হইয়া ঘা হয় এবং দাদের মত চর্মরোগ দেখা দেয়। উহা হইতে আঠা বা মধুর মত চটচটে রস বাহির হয় এবং হাতে, পায়ে, গলার চামড়ার ভাঁজের মধ্যে, কুঁচকিতে ও কানের পিছন দিকে হাজিয়া যায়। উত্তাপে চুলকানির বৃদ্ধি হয়।
পেট্রোলিয়াম:- চর্মপীড়া শীকতালে বৃদ্ধি ও গ্রীষ্মকালে উপশম হয়। পুরাতন একজিমা হইয়া চামড়া ক্ষয়ে যাওয়ার মত দেখায়। শরীরে স্থানে স্থানে ঘা হয় বা ফাটে। ঐ ঘা খুব চুলকায় ও উহাতে রস করে। ফাটা চামড়ার স্থানে স্থানে হলদে বর্ণ দাগের মত দেখায়। ঘামের ভিতরে হুল ফোটানোর মত ব্যথা বোধ হয় এবং উহার চারিদিকে মাংস বাড়িয়া উঠে। অধিকাংশ স্থলে ঘাগুলি গভীর হয়। ও উহার ধারগুলি উঁচু হইয়া উঠে ।

একজিমা বা পামায় সোরিনামের লক্ষণ:- সোরিনাম চর্মে এক প্রকার দদ্রু প্রকৃতির উদ্ভেদ জন্মায়। মাথায় ও শরীরে খোস পাঁচড়া হয়। ঐ পাঁচড়া ভয়ানক চুলকায়, বিছানার গরমে ঐ চুলকানি এত বাড়ে যে অসহ্য বোধ হয়। করোটি হইতে নিম্নাভিমুখে মুখমণ্ডলের উভয় পাশে, গণ্ডময় ও কর্ণদ্বয় আক্রমণ করিয়া টিনিয়া ক্যাপিটিস রোগের ন্যায় প্রকাশিত হওয়াই ইহার বিশেষ প্রকৃতি। এই উদ্ভেদ কখনও আর্দ্র থাকে, দুর্গন্ধ স্রাব নিঃসৃত হয়। কখনও শুদ্ধ থাকে, শুল্ক উৎপাদন করে। এই চর্মরোগের সহিত কান হইতে পঁচা মাংসের মত ভয়ানক দুর্গন্ধযুক্ত পূঁজ বাহির হইতে থাকে।

কান পাকায় বা কর্ণপীড়ায় সোরিনামের লক্ষণ:- কানের ভিতর হইতে সর্বদা দুর্গন্ধযুক্ত ঘন পুঁজ বাহির হয়। কান পাকার সঙ্গে দুর্গন্ধময় পাতলা দাস্ত হয়। কানের পিছনদিকে একজিমা থাকে।

শিশু কলেরায় সোরিনামের লক্ষণ:- কলেরার আক্রমণের দুই তিন দিন পূর্বে শিশু রাত্রে ঘুমের মধ্যে ভরা পাইয়া চিৎকার করিয়া উঠে বা জাগিয়া উঠে। উহার দুই তিন দিন পরে উদরাময় আরম্ভ হয়। রোগের প্রথম কয়েকদিন চটচটে ও ভয়ানক দুর্গন্ধযুক্ত বদহজমের দাস্ত হয়। মলের বর্ণ গাঢ় বাদামী বা কালচে। শিশুর শরীর ভয়ানক অপরিচ্ছন্ন দেখায়। নাক ও মুখ বসিয়া যায়। ইহার মলে, ঢেঁকুরে বা বাতকর্মে ডিম পচার মত দুর্গন্ধ থাকে। দাস্ত পাতলা জলের মত ও বাদামী বর্ণ এবং সময়ে সময়ে রক্ত মিশ্রিত থাকে এবং খুব বেগে বাহির হয়।

বিষণ্ণতা লক্ষণ:- সোরিনামের রোগীর নিরতিশয় বিষণ্ণতাটি আহারের পর যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিপাক কার্যটি সুচারুরূপে আরম্ভ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বেশ কম থাকে, কিন্তু পরিপাক কার্যটি ক্রমান্বয়ে যতই অগ্রসর হইতে থাকে তাহার বিষণ্ণতাটিও ততই পরিস্ফুট হইতে দেখা যায়। (বিপরীত নেট্রাম কার্ব)। ইহার রাক্ষুসে ক্ষুধাটি রাত্রির দিকেই সর্বাধিক বিকাশ লাভ করে। সেজন্য ইহার রোগীকে বিশেষ করিয়া শিশু রোগীকে দিবাভাগে বেশ প্রফুল্ল দেখায়, কিন্তু রাত্রির আগমনে ক্রন্দনসহ সে কেবলই নানা প্রকার বায়না করিতে থাকে এবং বার বার কিছু না কিছু আহার করিতে চায়। ক্ষুধাবস্থায় গরম কাতর আয়োডিনের ন্যায় ইহার শিরঃপীড়া ও স্নায়বিকতা বৃদ্ধি পায়, ইহা ছাড়া ইহার মানসিক প্রফুল্লতা আবির্ভাবের আর একটি অদ্ভূত লক্ষণ এই যে, রোগাক্রমণের একদিন পূর্বে ইহার রোগী সাধারণতঃ বেশ স্বাচ্ছন্দ ও প্রফুণ্ণতা বোধ করে, কিন্তু রোগাক্রমণের পর তাহার নিরতিশয় দুর্বলতার আবির্ভাব হয়।

পরিপাক যন্ত্রের পীড়ায় (উদরাময় লক্ষণ) সোরিনামের লক্ষণ:- সম্পূর্ণ ক্ষুধার অভাব বা রাক্ষুসে ক্ষুধা উভয় অবস্থাই ইহাতে আছে। সোরিনামের লক্ষণ পরিপাক শক্তি দুর্বল, আহার্য বস্তু ভালভাবে হজম হয় না, পঁচিয়া দুর্গন্ধযুক্ত হয়, পচা ডিমের আস্বাদযুক্ত ঢেকুর, হঠাৎ প্রবল বেগে ডিম বা মাংস পঁচাবৎ দুর্গন্ধযুক্ত উদরাময় এবং উহার বৃদ্ধি সালফার, পড়ো ও নেট্রাম সালফের ন্যায় রাত্রি ১টা হইতে ভোর ৫টা পর্যন্ত অথবা প্রাতঃকালীন উদরাময়। শীতের দিনে এবং চর্মপীড়া চাপা দেওয়ার ফলেই ইহা বিকাশ লাভ করিতে দেখা যায়। অত্যন্ত দূর্গযুক্ত উদরাময়ে বিশেষ করিয়া পুরাতন উদরাময়ে এবং শিশু কলেরাতে জলবৎ কাল দুর্গন্ধযুক্ত মল দেখিতে পাইলে ইহা অবিলম্বে প্রয়োগ করা উচিত। ইহার রোগী কৃশ, শীর্ণ ও দুর্বল। খাইবার সময় হঠাৎ বাহ্যের বেগ, পায়খানায় দৌড়াইয়া যাওয়ার সময় হয় না। প্রবল কোষ্ঠবদ্ধাও ইহাতে আছে, তবে ঐ সঙ্গে প্রচুর ক্ষুধা, অবিরত কোমর ব্যথা, ও দুর্গন্ধ বায়ু নিঃসরণ বর্তমান থাকে। ইহার সর্ব প্রকার স্রাব এমনকি বাতকর্ম, ঢেকুর, নিঃশ্বাস, মুখ গহব্বর এবং সমগ্র দেহটি পর্যন্ত দুর্গন্ধময়। রোগী অম্ল খাদ্য পছন্দ করে।

শিরঃপীড়ার লক্ষণ:- সোরিনাম রোগীর শিরঃপীড়ার শুরুতে অত্যন্ত ক্ষুধা পায়। কিছু আহার করিলেই মাথার যন্ত্রণা কিছুটা কমিয়া যায়। লাইকো, কষ্টি ও সাইলিসিয়ার রোগীরও ক্ষুধার জন্যই শিরঃপীড়া হইয়া থাকে। সোরিনামের ক্ষেত্রে মাথার যন্ত্রণা মধ্যে মধ্যে আসে এবং ঘুমানো অবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন করিলেই এই যন্ত্রণার বৃদ্ধি হয়। শিরঃপীড়ার পূর্বে রোগী তাহার চোখের সামনে আগুনের মত দেখে ও তাহার দৃষ্টি লোপ পাইবার উপক্রম হয়। নাক হইতে রক্ত পড়ার পর শিরঃপীড়ার উপশম।

হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ:- ইহার রোগী অপছন্দ করে না, কিন্তু স্নানে তাহার প্রতিশ্যায় জ্বর এবং গল লক্ষণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত । নিদারুন শীতকাতরতা জনিত রোগী সর্দি জ্বর, টনসিলাইটিস, অবিতর কাশি, কানে পুঁজ, শয্যামূত্র, হাঁপানী প্রভৃতিতে কষ্ট পায়। শীতকালেই ইহার হাঁপানীর বৃদ্ধি। হাপানী ও শ্বাসকষ্টে সোরিনামের লক্ষণটি বড়ই অদ্ভূত। কেননা হাঁপানীর সময় ইহার রোগী তাহার সমগ্র বাহুদ্বয়কে বক্ষঃপঞ্জর হইতে দূরে প্রসারিত করিতে চায় এবং প্রসারণটি যতদূর বিস্তৃত হয় ততই সে উপশম বোধ করে। প্রত্যেক হাঁপানী রোগীই রোগাক্রমণের সময় শয়ন করিতে পারে না। কিন্তু সোরিনামের রোগীর শয়নাবস্থাতেই শ্বাসকষ্ট হ্রাস পায়। ইহার কাশিও শয়নে উপশমিত হয়। ঠাণ্ডা ও ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহে বৃদ্ধি অথচ গরম বিশেষ করিয়া শয্যার উত্তাপ মোটেই তাহার সহ্য হয় না।

স্ত্রীরোগের লক্ষণ:- গর্ভবর্তী স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে সোরিনাম একটি রত্ন বিশেষ। ইহার দ্বারা মাতার গর্ভকালীন নানা প্রকার কষ্টদায়ক উপসর্গ প্রায়ই উপশমিত হয় এবং গর্ভস্থ সন্তানেরও সোরা দোষজ প্রবণতাটি গর্ত মধ্যেই বহুলাংশে পরিশোধিত হইয়া যায়। গর্ভাবস্থায় অস্বাচ্ছন্দতা। গৰ্ভস্থ সন্তানটি এত জোরে নড়াচড়া করে যে মাতা যন্ত্রণায় কাতর হইয়া উঠেন। উপরন্তু তাহারা অনেক সময় নিম্ন উদরে প্রচুর বায়ু সঞ্চয়ে এবং দুর্দমনীয় বিশ্বমিয়াতেও কষ্ট পান। ৰমি কোন ভাবে বন্ধ হইয় না। ইহা ছাড়া প্রসবাস্তিক দীর্ঘস্থায়ী নানা প্রকার জানা অজানা রোগে অননীয় যখন মাঝে মাঝে কষ্ট পাইতে থাকেন, তখনও উচ্চশক্তির সোরিনাম সুনিশ্চিত ভাবে সকল কষ্টের অবসান ঘটায়। তবে ইহার প্রসবাস্তিক যোনি পথে নিদারুণ দুর্গন্ধস্রাব- শুধু এই লক্ষণটি এত তীব্র প্রকাশমান যে সোরা দুষ্টা সোরিনাম নারী অপরের সন্নিধ্যে পর্যন্ত যাইতে লজ্জাবোধ করেন। ইহার সকল প্রদরস্রাব ও ঋতুস্রাবও অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত আবার প্রসবাস্তিক কোনও প্রকার রোগ ভোগের পর বা বিনা রোগেই গর্তিনী যে ক্ষেত্রে পুষ্টি লাভ কনে না বা পূর্ব স্বাস্থ্যটি ফিরিয়া পান না, সাধারণ ভাবের ক্ষুধাটিও আসে না বা স্তনে দুগ্ধ সঞ্চার হয় না, গর্ভাবস্থায় ও প্রসব কার্যের ফল স্বরূপ মাতার স্বাস্থ্যটি সাংঘাতিকভাবে ভঙ্গ হয় তখন লক্ষণ সাদৃশ্যে সোরিনাম পূর্ব স্বাস্থ্যটি ফিরাইয়া আনিতে অদ্ভূতভাবে সাহায্য করে।

উন্মাদ পীড়ায় সোরিনামের লক্ষণ:- উন্মাদ পীড়ায় অরামমেটও যখন সম্পূর্ণ আরোগ্য কার্য সমাধা করিতে অকৃতকার্য হয় তখন অথবা অন্যান্য সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগে তরুণ লক্ষণসমূহ অবসানের পর যখন পুনরাক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন উন্মাদের ঐ প্রবণতাটিকে সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য করিতে প্রায়শঃই সোরিনামের প্রয়োজন হয়। মহাত্মা হ্যানিমানের ইহাই ধারণা ছিল যে, উন্মাদ রোগী মাত্রেরই যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনও প্রকার চর্মপীড়া জাতীয় দৈহিক লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ সাধিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের পুনরাক্রমণের সম্ভাবনা দূরীভূত হয় না এবং ঐ কার্যের জন্য যে সকল ধাতুগত ঔষধের প্রয়োজন হয়, সোরিনাম তাহাদের মধ্যে অন্যতম ।

প্রতিশ্যায় জ্বরে সোরিনামের লক্ষণ:- প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট ঋতুতে বা নির্দিষ্ট দিনে অথবা নির্দিষ্ট সময়ে একই রোগে বার বার আক্রমণ প্রবণতা এবং তৎসহ ক্ষুধার আবির্ভাব সোরিনামের একটি বৈশিষ্ট্যজনক লক্ষণ। ইহার প্রতিশ্যায় জ্বরটিই ঐ নিয়মে সর্বাধিক বিকাশ লাভ করে। প্রতিশ্যায় জ্বর মাত্রেই হয় সোরাদোষজ না নয় টিউবারকুলার। নানিকা পথ দিয়া তরল সর্দি স্রাব আকারে উহা বিকাশ লাভ করে। শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষার দিনেই উহার সমধিক প্রকোপ পরিলক্ষিত হয়। সোরিনাম রোগীর শীতকালে উহা কখনই আসে না। শীতকালটি বরং তাহার চর্মপীড়া আবির্ভাবের উপযুক্ত সময় বলিয়াই জানিতে হইবে। প্রতিশ্যায় অবস্থায় ইহার নাসিকা পথদ্বয় দুর্গন্ধযুক্ত দুর্দমনীয় সরস মামড়িতে পরিপূর্ণ হইয়া উঠে ।

জ্বরপীড়ায় সোরিনামের লক্ষণ:- নানা প্রকার বিশৃঙ্খলাপূর্ণ জ্বরে সোরিনাম প্রয়োগে অভাবনীয় ফল পাওয়া যায়। সর্বপ্রকার স্রাব যথা ধর্ম, মলমূত্র, পূজ, প্রদরস্রাব ইত্যাদির দুর্গন্ধময় অবস্থা নিদারুন শীতকাতরতা, প্রচুর ক্ষুধা এবং বিষণ্ণ ও খিটখিটে মেজাজই ইহার জুরাবস্থার সহচর এবং প্রধান প্রয়োগ প্রদর্শক লক্ষণ। তাহা ছাড়া ইহার অধিকাংশ জ্বরের পশ্চাতে প্রায়শঃই যোগ, পাঁচড়া, চুলকানি, দাদ, একজিমা প্রভৃতি চাপা দেওয়ার ইতিহাস বর্তমান থাকে। উপরোক্ত অবস্থার মধ্য দিয়া অবিরাম, সবিরাম বা অল্প বিরাম জাতীয় যে কোন প্রকারের জ্বর ৫/৭ দিন চলিতে চলিতে অনেক সময় তাহা টাইফয়েডের 
দিকে গতি প্রাপ্ত হয়। এ অবস্থায় দ্বিধাশূন্য চিত্তে সোরিনাম প্রয়োগ করা চলে। জ্বর তাপটি যখন নিম্নমুখী হয় তখন অথবা শেষ রাত্রিই ঔষই প্রয়োগের উপযুক্ত সময় । ইহাতে জ্বরটি প্রাতঃকালে নতুবা বৈকালে সামান্য বৃদ্ধি পাইয়া সম্পূর্ণ মগ্ন হইয়া যায়।

গলাব্যথা ও টনসিল স্ফীতিতে সোরিনামের লক্ষণ:- প্রদাহপূর্ণ গলাব্যথায় বা টনসিল স্ফীতিতে সোরিনামের কার্য অতিমাত্রায় গঠনমূখী। সেজন্য এই প্রকার রোগাক্রান্ত সোরিনাম ধাতুগত বহুরোগী দীর্ঘদিন যাতে ঐ পীড়ায় কষ্ট ভোগ করা সত্ত্বেও গলদেশে কোন প্রকার ক্ষত বা পচন লক্ষণের সম্মুখীন হন নাই। সোরিনামে ক্ষতোৎপাদন শক্তির অভাব। কিন্তু সাইকোটিক বা সিফিলিটিক ঔষধ মাত্রেরই রোগীকে অনেক সময় ২/৩ মাসের মধ্যে বা ততোধিক অল্প সময়ের মধ্যে গভীর ক্ষত উৎপাদনের মাধ্যমে টিউবারকুলার পথে পরিচালিত করে। এক্ষেত্রে সোরিনাম যে কেবলই নিরীহ ও গঠনমুখী তাহা নয়, নিরতিশয় যন্ত্রণাদায়কও বটে, কেননা ক্ষত ও পচনশূন্য টনসিল প্রদাহ, যাহা অন্য কোনও ঔষধেই লক্ষ্য করা যায় না, তাহারই মধ্য দিয়া রোগীকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কষ্ট দেয়।

প্রতিক্রিয়া শূন্যতায় সোরিনামের লক্ষণ:- যে কোনও প্রকার তরুণ জাতীয় রোগ ভোগের পর শরীরে প্রতিক্রিয়া শক্তির অভাব হেতু যখন রোগীর জিহ্বাটি পরিষ্কার এবং নাড়ীর গতি ও শরীরের তাপ স্বাভাবিক আকার ধারণ করা সত্ত্বেও রোগী দিনের পর দিন মৃতবৎ শয্যাশায়ী থাকে, স্বাভাবিক ক্ষুধা ফিরিয়া পায় না এবং শরীরের পুষ্টি সাধনের জন্য সামান্যতম আহারে পুনরায় জ্বরোদয় বা উদরাময় দেখা দেয় অথবা জোরপূর্বক লঘুপাচ্য পুষ্টিকর পথ্য গ্রহণে পূর্বরোগেরই পুনরাক্রান্ত হইয়া পড়ে, এমনকি তথাকথিত বলকারক 'টনিক' জাতীয় ঔষধ পর্যন্ত যখন কোনও প্রকার সুফল আনয়ন করিতে পারে না, তখন শুধু শীত কাতরতা স্নায়বিক দুর্বলতা ও বিমর্ষতা এই কয়টি লক্ষণ বর্তমান থাকিলে সোরিণাম অভাবনীয় ভাবে রোগীর জীবনটি রক্ষা করিতে সক্ষম হয়। সকলেই জানেন যে, সোরিনাম রোগীর নিরতিশয় বিষণ্নতাটি আহারের পর যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিপাক কার্যটি সুচারুরূপে আরম্ভ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বেশ কম থাকে। কিন্তু পরিপাক কার্যটি যতই অগ্রসর হইতে থাকে, তাহার বিষণ্ণতাটিও ততই পরিস্ফুট হইতে দেখা যায়। ইহার রাক্ষুসে ক্ষুধা রাত্রির দিকেই সর্বাদিক বিকাশ লাভ করে। সেজন্যই ইহার শিশু রোগী রাত্রির আগমনে ক্রন্দনসহ নানা প্রকার বায়না ধরিতে থাকে। আহারে ইহার সর্ব প্রকার রোগলক্ষণ বিশেষ করিয়া মাথার যন্ত্রণা উপশমিত হয়। ইহা ছাড়া ইহার মানসিক প্রফুল্লতা আবির্ভাবের আর একটি অদ্ভূত লক্ষণ এই যে, রোগাক্রমণের একদিন পূর্বে সোরিনাম রোগী সাধারণতঃ বেশ স্বচ্ছন্দ ও প্রফুল্লবোধ করে, কিন্তু রোগাক্রামণের পর তাহার নিরতিশয় দুর্বলতার আবির্ভাব হয়। এই অবস্থায় সোরিনাম প্রয়োগ না করা পর্যন্ত তাহার সাধারণ সুস্থ অবস্থাটি ফিরিয়া আসে না। পুরাতন জটিল এবং সাংঘাতিক জাতীয় তরুণ রোগে রোগীর শুধু শীতকাতরতা ও প্রতিক্রিয়ার অভাব ভিন্ন যখন অন্য কোন লক্ষণই পাওয়া যায় না এবং একের পর এক ঔষধ প্রয়োগ করিলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না তখন সোরিনাম প্রয়োগ করিলে রোগী আরোগ্য না হইলেও একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থার উদয় হয়।

সোরিনাম ও পাইরোজেনের স্রাবের তুলনা:-  

ক) সোরিনাম:- সোরিনামের নিঃসৃত স্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধ, বাহ্য, প্রস্রাব, কানের পূজ, ঢেকুর, স্ত্রীলোকদের ঋতু ও প্রদর স্রাব, ঘাম ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের স্রাবেই অত্যন্ত কটুগন্ধ, পঁচাগন্ধ। ময়লার গন্ধ অপেক্ষাও কটু দুর্গন্ধ। শরীরে দুর্গন্ধ, স্নান করিলেও ঐ দুর্গন্ধ যায় না। মাথায় রসপূর্ণ দুর্গন্ধ উদ্ভেদ, তাহা হইতে আঠার মত দুর্গন্ধ পুঁজ বা রস পড়ে। ইহার রোগীর উদরাময়, নিঃশ্বাস, ঘর্ম প্রভৃতিও দুর্গন্ধযুক্ত হইয়া থাকে। স্ত্রীলোকদের প্রসবাস্তিক যোনিপথে নিদারুন দুর্গন্ধ স্রাব এত তীব্র আকারে প্রকাশমান থাকে যে সোরা দুষ্ট সোরিনাম নারী অপরের সান্নিধ্যে পর্যন্ত যাইতে লজ্জাবোধ করেন।
খ) পাইরোজেন:- ইহার সকল প্রারও দুর্গন্ধযুক্ত। ইহার উদরাময়ে মল পঁচামাংসের গন্ধের ন্যায়, কষ্টকর, কোষ্ঠবদ্ধতার মলও পঁচা মাংসের ন্যায় গন্ধ বিশিষ্ট, জল পাইয়ের আকারে কাল কাল বলের ন্যায় মল, পঁচা গন্ধ, রক্তাক্ত মল, জরায়ু হইতে রক্তস্রাব, পঁচাগন্ধ, স্বপ্ন প্রসবাস্তিক যাব। ঋতুস্রাব মাত্র একদিন থাকে। তাপর রক্তাক্ত প্রদর স্রাব। কণ্ঠনালী হইতে শ্লেষ্মার বড় বড় চাপযুক্ত গয়ার উঠে। পঁচা গন্ধ ঘন পুঁজের ন্যায় গয়ার। কাশির সহিত প্রচুর দুর্গন্ধ নিশাধর্ম ।

প্রাপ্তদেশের লক্ষণ:- সন্ধিসমূহে দুর্বলতা যেন উহারা আর সংযুক্ত থাকিতে পারিতেছে না। নখের চারিদিকে উদ্ভেদ। দুর্গন্ধযুক্ত পদঘর্ম । শুদ্ধ চাকচিক্যহীন খসখসে চুল।

বৃদ্ধি:- ঠাণ্ডায়, ঠাণ্ডা বাতাসে ও ঠাণ্ডা জলে মানে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, সন্ধ্যাকালে, দুই প্রহর রাত্রির পূর্বে, অনাবৃত বায়ুতে, কফির গন্ধে। অম্ল গন্ধে, রন্ধন করা মাংসের গন্ধে, ফল ও শব্জী আহারে, আলু ভক্ষণে, ডিম, মাছ, দুগ্ধ ও মধু সেবনে এবং স্তন দানে বৃদ্ধি লক্ষণ দেখা যায়।

উপশম:- প্রাতে শয়ন করিলে, গৃহাভ্যন্তরে, আহারে চাপনে।
বিশেষ করিয়া শিরঃপীড়ার সময় আহারে, নাসিকা হইতে রক্তস্রাবে ও জোরে

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধসমূহ:- গর্ভাবস্থায় বমনে ল্যাকটিক এসিডের পর এবং ডিম্বকোষে আঘাতজনিত পীড়ায় আর্নিকার পর সোরিনাম উত্তম ফলদায়ক। স্তনের ক্যানসারে সোরিনামের পর সালফার উপযোগী। পাচড়ায় হিপার তুল্য। রোগের সময় ঘর্মে নেট্রাম মিউর তুলা, রাত্রে ক্ষুধায় চায়না ও সালফার তুল্য, শয্যামূত্রে ক্রিয়োজোট তুলা, সোরিনাম ও ল্যাকেসিস পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন।

অনুপূরক ঔষধ:- টিউবারকুলার, সালফার।

পরবর্তী ঔষধ:- এলো, চায়না, হিপার, ফেরাম, টিউবারকুলিনাম প্রভৃতি ।

ত্রিন্যানাশক ঔষধ:- কপিয়া।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৩০-৪০ দিন ।

ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম:- ২০০ হইতে উর্ধশক্তি। চেতম শক্তিই সর্বাধিক ক্রিয়াশীল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ