আর্জেন্টাম মেটালিকাম, ARGENTUM METALLICUM - মেটেরিয়া মেডিকা, চতুর্থ বর্ষ

আর্জেন্টাম মেটালিকাম 
ARGENTUM METALLICUM







প্রতিশব্দ:— মেটালিক সিলভার, আর্জেন্টাম, সিলভার, আর্জেন্ট, আর্জেন্ট মেট।
 
রাসায়নিক চিহ্ন:- ag. 

উৎস ও বর্ণনা:- সিলভার হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। সিলভার উজ্জ্বল শুভ্র ধাতব পদার্থ এবং ইহার আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০.৫। স্বর্ণ হইতেও ইহা কঠিন কিন্তু ইহা নমনীয় এবং সহজে পরিচালনীয় । ১০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে ইহা গলিয়া যায়। রাসায়নিক খাঁটি সিলভার খাঁটি নাইট্রিক এসিডে গলিয়া যায় এবং এক প্রকার স্বাচ্ছ বর্ণহীন দ্রবণ উৎপন্ন করে।
 
উৎস:- দেশীয় রূপার খনি হইতে ইহা সংগ্রহ করা হয়। 

প্রস্তুত প্রণালী:- খাঁটি রূপা হইতে বিচূর্ণাকারে এই ঔষধটি প্রস্তুত হয়।

প্রস্তুতের করমুলা:- এফ ৭ (বিচূর্ণ)। 

ক্রিয়াস্থান:- পরিপাক যন্ত্রের ও অন্যান্য স্থানের মিউকাস মেমন্ত্রেনের এবং হাড়, কার্টিলেজ, লিগামেন্ট, রেলিংস ও মূত্র যজ্ঞের উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া। হিষ্টিরিয়া প্রস্তা, নার্ভাস স্ত্রী ও যে সকল পুরুষ শুক্রক্ষয় করিয়া অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে তাহাদের ধাতুতে ইহা অধিক উপকারী।

মানসিক লক্ষণ:- রোগী উত্তেজিত স্বভাব সম্পন্ন। স্মৃতিশক্তি, বিচারশক্তি ও চিন্তাশক্তিকে ক্রমশঃই বিলুপ্ত করিয়া শেষ পর্যন্ত তাহাকে একটি বোকাটে রোগীতে পরিণত করাই ইহার স্বভাব। ঐ প্রকার মনোলক্ষণযুক্ত রোগীতে এই ঔষধটি প্রয়োগ করিতে হইলে ইহার অন্যান্য দেহাংশিক লক্ষণেরও সাদৃশ্য থাকা চাই। রোগী কথা বলিতে বলিতে ভুলিয়া যায় ও চুপ করিয়া থাকে। কাহারও সহিত কথা বলিতে চায় না। অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা বশতঃ একস্থানে থাকিতে পারে না।

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) রোগী- রোগাটে ও লম্বা। উত্তেজিত স্বভাবের।
২) আধকপালে মাথাব্যথা ও মাথাধরা।
৩) গায়ক ও বক্তাদের গলাধরা।
৪) নিম্নাঙ্গের, স্নায়ুগুলি অতিশয় দুর্বল ও বেদনাযুক্ত। 
৫) লিঙ্গোচ্ছাস ব্যতীত প্রতি রাত্রেই স্বপ্নদোষ। হস্তমৈথুনের শিথিল, বক্র ও ক্ষুদ্র । 
৬) রাত্রিতে কিংবা গিলিতে গলায় বেদনা, হাসিলেই কাশি।
৭) হাঁচির সহিত নাক হইতে সর্দি নিঃসরণ। 
৮) গলায় জেলির মত শেখা জমিয় থাকে- প্রাতঃকালে উঠিয়া যায় ।
৯) স্বরবন্ধতা ও সেই সঙ্গে ডানদিকের গলায় বেদনা।
১০) ঋতু লোপকালের বয়সে অত্যধিক রজঃস্রাব।
১১) বাম ওভিরিতে বেদনা, বেদনাসহ জরায়ুর বহিঃনিঃসরণ। 
১২) জরায়ুর সংকোচন ও ক্ষত, সেই সঙ্গে অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ।
১৩) অজীর্ণ রোগের সহিত পেট ফোলা।
১৪) উদরাময় ও আমাশয়ে মলত্যাগের সময় ম ক ক করিয়া চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে।
১৫) বামদিকের বক্ষে অত্যন্ত দুর্বলতা অনুভব। 
১৬) ইহার রোগীর পা ফোলা থাকে, হাঁটুতে কিছুমাত্র বল থাকে না, প্রত্যেকদিন হেকটিক জ্বরের মত বেলা ১ টার সময় জ্বর আসে এবং ২/১ ঘন্টা থাকিয়া ছাড়িয়া যায়।

কণ্ঠনালী ও শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণ:- ফ্যারিংস, ল্যারিংস কিংবা ব্রহ্মাইয়ের কোন পুরাতন পীড়ায় জেলির মত শেম্মা জড়াইয়া থাকে, রোগী উহা পুনঃ পুনঃ কাশিয়া তুলিয়া ফেলার চেষ্টা করে। জোরে হাসিলে, কথা বলিলে বা পাঠ করিলেই কাশি হয়। যে সকল ব্যক্তি প্রায়শঃই বক্তৃতা দিয়া থাকেন, সঙ্গীতালাপ করিয়া থাকেন, তাঁহারাই এই ঔষধের লক্ষণযুক্ত স্বরভঙ্গে অধিক কষ্ট পান। এই অবস্থায়, অনেকের গলাটি ধরিয়া যায়, গলার মধ্যে বেদনা করে, জ্বালা করে ও কাশি হয়, সামান্য কাশিবা মাত্রই শেহা নির্গত হয়। ঐ শেখাটি ঠিক তালের শাঁসের মত, ঐ শেখাটি সহজেই উঠিয়া আসে। উক্ত লক্ষণে আর্জেন্টমেট উপকারী।

শিরঃপীড়া ও বেদনা লক্ষণ:- শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদনা। একপ্রকার মাথার বেদনা ক্রমে ক্রমে বাড়িয়া খুব বেশী হয় এবং আবার হঠাৎ কমিয়া যায়। এই বেদনা প্রায় মাথার বামদিকেই হয় এবং ঐ সঙ্গে মাথাঘোরাও থাকে। রোগী অত্যন্ত স্মরণশক্তি বিহীন হইয়া পড়ে। এই সময় হৃৎপিণ্ডের পেশী সমূহে বিশেষতঃ রোগী চিৎ হইয়া শয়ন করিলে এক প্রকার নিউরালজিক বেদনা অনুভূত হয়। ইহা ছাড়া সন্ধি সমূহে, কোমরে এবং মেরুদণ্ডেও প্রায় এই দুই প্রকারের বাতের বেদনা প্রকাশ পায়। উহা হিষ্টিরিক স্ত্রীলোকদের ও যে সকল পুরুষ বীর্য ক্ষয় করিয়া স্বাস্থ্য নষ্ট করিয়াছেন, তাঁহাদের এইরূপ অবস্থাতেই আর্জেন্ট উপকারী।

স্ত্রী জননেন্দ্রিয় পীড়ায় লক্ষণ:- স্ত্রীলোকদের বাম ওভেরিতে পীড়ায় একটি উত্তম ঔষধ। বাম দিকের ডিম্বকোষ বোধ হয় যেন খুব বড় ও মোটা হইতেছে (প্রকৃত পক্ষে উহা বড় হয় না)। তথায় বেদনা, বেদনা কোমরে ও বাম উরুতে পর্যন্ত পরিচালিত হয়, কখনও বেদনার সহিত জরায়ু বাহির হইয়া পড়ে, হলদে রঙের প্রদর স্রাব হয়, স্রাব যেখানে লাগে হাজিয়া যায়, স্রাবে দুর্গন্ধ থাকে। জরায়ু গ্রীবার ক্ষত ও ফোলা, দুর্গন্ধ প্রার নিঃসরণ ও জরায়ুর ক্যান্সারেও ইহা দ্বারা সাময়িক উপকার হয়, ঋতু বন্ধ থাকে, সমস্ত তলপেটে বেদনা।

পুংজননেন্দ্রিয় লক্ষণ:- আর্জেন্টমেটে অণ্ডকোষ থেঁতলাইয়া যাইবার মত বেদনা বোধ হয়, লিঙ্গোত্থান না হইয়া অজ্ঞাতসারে শুক্রপাত বা স্বপ্নদোষ হইলে ইহা উপকারী। হস্তমৈথুন জনিত ধ্বজভঙ্গ, পুরাতন গীট রোগে ঘন স্রাব নির্গত হয়, হলদে রঙের বা সবুজ রঙের স্রাব, জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না। প্রস্রাবের পীড়ায় ঘন ঘন ও প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব, প্রস্রাব ঘোলা ও মিষ্টি গন্ধ, বহুমূত্র ।

মৃগী রোগের লক্ষণ:- মৃগী রোগে প্রথমে ঘেঁচুনী আরম্ভ হইয়া মৃগীর লক্ষণ প্রকাশ পায়। মৃগীর সহিত অত্যন্ত রোধপূর্ণ প্রলাপ, রোগী চারদিকে লাফাইয়া বেড়ায়, নিকটস্থ লোককে মারিবার চেষ্টা করে।
 
উদরাময় লক্ষণ:- উদরাময়, মলদ্বারের নিকট অনবরত বেগ, পায়খানায় যায়- অতি সামান্য মাত্র তরল বাহ্য হয়, কখনও কে বালির মত মল ত্যাগ করে।
 
শিরঃপীড়ার লক্ষণ:- ইহার শিরঃপীড়াটি যেন বাম পার্শ্বকেই বাছিয়া লইয়াছে অর্থাৎ যখনই শিরঃপীড়াটি হয় তখনই তাহা বামদিকে সীমাবদ্ধ থাকে। স্নায়বিক যাতনা, রাতের বেদনা, শিরঃপীড়া ইত্যাদি যাবতীয় কষ্ট গরমে ও আচ্ছাদনে উপশম হয়। রোগী বড়ই শিতকাতর। 

বাত লক্ষণ:- রাতে হাঁটু, কনুই ও গাঁট আক্রান্ত হয়। পায়ে ভীষণ দুর্বলতা- পা কাঁপে, সম্মুখ বাহুর আংশিক পক্ষাঘাত, চলে। গোড়ালিতে ফোলা, লেখকদিগের আঙ্গুল কাঁপে, পিঠে বেদনা, কুঁজো হইয়া চলে। 

বৃদ্ধি:- স্পর্শে, দ্বিপ্রহরে, চীৎকার করিলে, বিশ্রামে, নিদ্রাভঙ্গের পর চিৎ হইয়া শুইলে ও ভিজা ঠাণ্ডায় ।
 
উপশম:- আচ্ছাদনে, সঞ্চালনে, খোলা বাতাসে, কাশিলে, রাত্রে শয়ন করিলে কাশি।

সদৃশ ঔষধ:- এলুমিনার পর ইহা ব্যবহার্য। হাস্যজনিত কাশিতে ষ্ট্যানমের ও ডিম্বকোষের পীড়ায় প্যালেডিয়মের সদৃশ। 

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- মার্কুরিয়াস, পালসেটিলা ।

স্থিতিকাল:- ৩০ দিন ।

ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম:- ৬ হইতে ২০০ শক্তি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ