রোগী পরীক্ষা- ৬ষ্ঠ অধ্যায় - প্রথম বর্ষ

                                                                   ৬ষ্ঠ অধ্যায় 

রোগী পরীক্ষা 
(Examination of Patients) 






প্রশ্ন- রোগী পরীক্ষা বলিতে কি বুঝ?

উত্তর : একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্তব্য হইল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোগী পরীক্ষা বা ভালভাবে তাহার লক্ষণ সংগ্রহ করা। যথার্থ আরোগ্য সম্পাদনের জন্য চিকিৎসককে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করিতে হয়। চিকিৎসক রোগীকে গ্রহন করার সময় হইতে ঔষধের ক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সর্বাঙ্গীণ ভাবে এবং রোগকে বিশেষ ভাবে অধ্যয়ন করিতে হয়। রোগী পরীক্ষা বলিতে তাই আমরা বুঝি রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন করা।





প্রশ্ন- রোগীলিপি বা রোগচিত্র কাহাকে বলে?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গীতে রোগীকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করিয়া রোগ নির্ণয় করিতে হয়। চিকিৎসক প্রত্যেকটি রোগীকে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা রোগলক্ষণসমূহের অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, স্বরূপ অনুধাবন ও যথাযথভাবে তথ্যাবলী লিপিবদ্ধকরণকে রোগীলিপি বলা হয়।



প্রশ্ন- রোগীলিপি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বা উদ্দেশ্য কি?
বা, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীলিপির ভূমিকা কি?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করিতে গেলে রোগীলিপি প্রস্তুতের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। রোগলক্ষণের মধ্যেই প্রকৃত রোগচিত্র পাওয়া যায়। রোগীর অন্তর প্রকৃতির ভাষা শুধু ইংগিত। ইশারা বা প্রকাশিত লক্ষণের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। এই রোগলক্ষণ বা রোগচিত্রের উপর ভিত্তি করিয়াই চিকিৎসক চিকিৎসা করিয়া থাকেন। রোগীলিপি প্রস্তুতের উদ্দেশ্য হইল 
১) বিভিন্ন প্রকার রোগলক্ষণ যত প্রকারে সম্ভব সংগ্রহ করা, 
২) লক্ষণসমষ্টির মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্র ফুটাইয়া তোলা, 
৩) লক্ষণসমূহের মাধ্যমে রোগের গভীরতা ও ব্যাপকতা জানা, 
৪) রোগের সম্ভাব্য পরিণতি সম্বন্ধে ধারণা করা, 
৫) পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র তৈরীর সময় পূর্বতন যাবতীয় লক্ষণের পুনর্বিচার করা।
সব বিষয়ে জ্ঞান থাকিলেও যদি রোগচিত্র সম্পর্কে চিকিৎসকের জ্ঞান না থাকে তবে চিকিৎসক অকৃতকার্য হন। তাই চিকিৎসা কার্যে সফলতার জন্য রোগীলিপি প্রস্তুত একান্ত প্রয়োজন।




প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিতে রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার পদ্ধতি কিকি? 
বা, পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রণয়নের পদ্ধতি আলোচনা কর ।

উত্তর ঃ হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিতে রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার জন্য নিম্নের নিয়ম কানুনগুলি অবলম্বন করিতে হয়। যথা :
১) রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করিবার প্রাক্কালে প্রথমেই রোগীলিপি বই বা খাতার বাম পার্শ্বে উপরে রোগীর নাম ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা প্রভৃতি লিখিয়া রাখিতে হইবে
২) রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার সময় তিন ধরনের ব্যক্তির মাধ্যমে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার পরিচয় জানিতে হয়।
(ক) রোগীর নিজের বিবরণ 
(খ) রোগীর আত্মীয় স্বজন বা পরিচর্যাকারীর নিকট হইতে 
(গ) চিকিৎসক স্বয়ং।
৩) চিকিৎসককে দর্শন, শ্রবন এবং স্পর্শন এই তিন পদ্ধতিতে রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করিতে হয়।
৪) দর্শন ক্রিয়ায় খালি চোখে এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে চিকিৎসক রোগীর যেসব প্রকৃতি, লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য দেখিতে পান তাহা রোগীলিপির মাধ্যমে লিখিয়া নিতে হয়।
৫) শ্রবণ প্রক্রিয়ায় রোগী এবং তাহার আত্মীয় স্বজন বা ক্রেষাকারীদের নিকট হইতে রোগের বিবরণ, বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির বর্ণনা চিকিৎসক শুনেন এবং লিখিয়া রাখেন। বর্ণনাকারীকে ধীরে সুস্থে রোগী লক্ষণ বর্ণনা করার উপদেশ দিতে হইবে । অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় বিবরণ বর্জন করাইতে হইবে।
৬) বর্ণনাকারীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত লক্ষণগুলি অবিকল ভাষায় রোগীলিপি বা খাতাতে লিখিয়া রাখিতে হইবে। বর্ণিত লক্ষণগুলি মনোযোগ সহকারে পাঠ করিয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়া বর্ণনাকারীকে অতিরিক্ত প্রশ্ন করিয়া ঐ লক্ষণের ইতিবৃত্ত, অবস্থান, অনুভূতি, বিশেষ বৈশিষ্ট্য, হ্রাসবৃদ্ধি, আনুসঙ্গিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে কোন অসম্পূর্ণতা থাকিলে তা জানিয়া লিখিয়া রাখিতে হয়।
(৭) স্পর্শন প্রক্রিয়ায় রোগীকে স্পর্শ করিয়া এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে যে সব লক্ষণ পাওয়া যায়, তাহা লিখিয়া রাখিতে হয়।
৮) প্রকৃত নিখুঁত রোগীচিত্র লিপিবদ্ধ করার জন্য রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সময় যদিও রোগীর নিজের বর্ণনা এবং তাহার আত্মীয় স্বজন বা সেবাকারীদের বর্ণনার উপর নির্ভর করিতে হয়, তবুও আরও নিখুঁত রোগীচিত্রের জন্য চিকিৎসককে তাঁহার নিজের বিবেক, বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ শক্তি, ধৈর্য এবং মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা প্রভৃতি প্রয়োগ করিতে হয়।
৯) নিখুঁত ও পুর্ণাঙ্গ রোগীচিত্র অংকন করার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করিয়া রোগী লিপিতে রোগীর নিম্নোক্ত বিষয়গুলি পাওয়া যায় এবং তাহা লিপিবদ্ধ করিতে হয়। যথা-
(ক) রোগীর মুখ ভঙ্গিমা যেমন- প্রসন্ন, বোকাবোকা, উৎকণ্ঠিত, শিশুসুলভ ভয়ংকর, বৃদ্ধের ন্যায়, ক্লান্ত প্রভৃতি।
(খ) রোগীর বিশেষ মানসিক প্রকৃতি ও দৃষ্টি আকর্ষনীয় লক্ষণ যেমন-ঝগড়াটে, তন্দ্রালু, কন্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতা, বর্ণনার অসংলগ্নতা প্রভৃতি ।
(গ) দৈহিক কাঠামো ও লম্বা না বেঁটে, মোটা না পাতলা, বিকলাঙ্গ, চুল, কপাল, নাক, চোখ, মুখমন্ডল প্রভৃতি অংঙ্গের গঠন ও আকৃতি, রস, বাত, পিত্ত, মেদ, শ্লেষ্মাপ্রবণ, পেশী দৃঢ় বা শিথিল কিনা, দাঁত, জিহ্বা, নখ প্রভৃতির অবস্থা।
(ঘ) বেশভূষা যেমন-নোংরা বা পরিচ্ছন্ন, ঢিলা পোশাক বা আট সাঁট পোশাক, দেহের কোন অংশে কি ধরনের আবরণ পছন্দ করে প্রভৃতি।
(ঙ) কষ্টকর লক্ষণসমষ্টির কারণ যেমন-চির মায়াজমের প্রভাব, উত্তেজক বা পরিপোষক কারণ, কোন বিসদৃশ চিকিৎসার কুফলে, কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা বা আঘাতাদির কারণে প্রভৃতি।
(চ) মানসিক লক্ষণ যেমন-ইচ্ছাবৃত্তি, স্মৃতি শক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি প্রভৃতি ।
(ছ) দৈহিক সর্বাঙ্গীন বা সার্বদৈহিক লক্ষণ যেমন- খাদ্য দ্রব্য ও যৌনবিষয়ে ইচ্ছা অনিচ্ছায় হ্রাসবৃদ্ধি, ক্ষুধা পিপাসা, আলো আধারে, আবৃত অনাবৃত অবস্থায়, শীতে উত্তাপে, স্নানে, বিশ্রামে, সঞ্চালনে, আহারে, ঘর্মে, নিদ্রায়, চাপে প্রভৃতি।
(জ) সাধারণ ও বিশেষ অণুভূতি, আক্রান্ত পার্শ্বদেশ, লক্ষণের গতিপ্রকৃতি প্রভৃতি।
ইহা ছাড়া কোন কোন সময় শরীর উপাদান ও গঠন কাঠামোগত কিছু নিদানগত পরিবর্তন, বা রোগের চরম স্থুল ফলাফল রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসূচক পরিবর্তণ পাওয়া যায়।
 



প্রশ্ন-  ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় বলিতে কি বুঝায়?

উত্তর ঃ চিকিৎসার ইতিহাসে রোগনির্ণয় বা ডায়াগনসিস শব্দটি অতি পুরাতন। রোগের ডায়াগনোসিস না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ঔষধের কথা ভাবিতে পারেন না। হোমিওপ্যাথিক মতে জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খল অবস্থায় দেহের বিভিন্ন অঙ্গে প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টিকে রোগ বলে। রোগী সম্বন্ধে পুংখানুপুংখভাবে বিভিন্ন প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টি জানার নামই রোগনির্ণয়। অর্থাৎ যাহা দ্বারা রোগের প্রকৃতি নির্ণীত হয়। তাহাকে ডায়াগনোসিস বলা হয়।




প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডায়াগনোসিস ও এনামনেসিসের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

উত্তর ঃ চিকিৎসার ইতিহাসে ডায়াগনোসিস শব্দটি অতি পুরাতন এবং প্রচলিত। তবে প্রচলিত ডায়াগনোসিস একাঙ্গিক। ইহা রোগের পরিণত ফলের উপর একমাত্র নির্ভরশীল। রোগীর ব্যক্তিনিষ্ঠ ও মানসিক লক্ষণ এই ডায়াগনোসিসে বিবেচ্য নহে। অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অপরিহার্য সদৃশ লক্ষণসমষ্টির প্রধান অঙ্গ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও মানসিক লক্ষণ, কাজেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় তথাকথিত ডায়াগনোসিসের তেমন মূল্য নাই। তবে যথার্থ ডায়াগনোসিসের প্রয়োজন আছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তিনিষ্ঠ ও মানসিক লক্ষণ ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণসমষ্টির অন্তর্ভুক্ত করিয়াই রোগের প্রতিকৃতি নির্ণয় করেন। এই অর্থে ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণসমষ্টির দ্বারা রোগচিত্র অংকন একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনোসিস, যাহা তথাকথিত প্রচলিত ডায়াগনোসিস হইতে স্বতন্ত্র। এইরূপ যথার্থ ডায়াগনোসিস হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তাহা ছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক সময় রোগীকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট প্রদান করিতে হয়। এই কাজেও ডায়াগনোসিনের প্রয়োজন আছে।
অন্যদিকে এনামনেসিসের অর্থ হইল রোগীর লক্ষণসমষ্টি। রোগীর বর্তমান ও অতীত লক্ষণ, রোগ লক্ষণের ক্রমবিকাশ, লক্ষণবৃদ্ধির কারণ, রোগীর বংশানুক্রমিক রোগের ইতিহাস, রোগীর দৈহিক গঠনমূলক লক্ষণ, রোগ নিরাময়ের পারিপার্শ্বিক বাধা, জীবাণুঘটিত ব্যাধির জটিল প্রকৃতি প্রভৃতি এনামনেসিসের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ এনাননেসিসের সাহায্যে ব্যাধির আক্রমণে রোগীর দেহ ও মনের উপর কিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটিয়াছে এবং তাহাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিরূপ হইতে সে সম্বন্ধে জানা যায়। কাজেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ডায়াগনোসিস ও এনামনোসিসের যথেষ্ট প্রয়োজনীয় আছে।





প্রশ্ন-  কিভাবে রোগ নির্ণয় করিতে হয়?
বা, তুমি কিভাবে রোগ নির্ণয় করিবে?

উত্তর ঃ যথার্থভাবে হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গীতে রোগীতে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা- নিরীক্ষা করিয়া রোগ নির্ণয় করিতে হয়। চিকিৎসক প্রথমে রোগীকে তাহার রোগের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করিতে বলিবেন এবং উপদেশ দিবেন। বর্ণনাকালে যেন এমন ধীরে ধীরে বলেন যাহাতে তিনি বর্ণনা হইতে প্রয়োজনীয় অংশটুকু ধীর, শান্ত ও সঠিকভাবে লিখিয়া লইতে পারিবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীর নিকট যাহারা সর্বক্ষণ থাকেন তাহারা রোগীর মুখে কি কি বর্ণনা শুনিতে পাইয়াছেন, কখন রোগীকে কি করিতে দেখিয়াছেন প্রভৃতি তাহারা চিকিৎসককে জানাইবেন। রোগী এবং তাহার আত্মীয়-স্বজন বা সেবা শ্রষাকারীরা বর্ণনাকালে চিকিৎসক নীরবথ থাকিয়া শুধু শুনিয়া লিখিয়া যাইবেন। তাহারা অবান্তর কিছু না বলিলে বর্ণনায় বাধা দিবেন না। তৃতীয় পর্যায়ে চিকিৎসক স্বী চক্ষু, কর্ণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে রোগীর যাবতীয় অবস্থা অনুধাবন করিবেন। চতুর্থতঃ চিকিৎসকের কোন প্রশ্ন করিবার থাকিলে তাহা করিবেন এবং লক্ষণ লিখিয়া যাইবেন। বর্ণিত এবং নিজের উপলব্ধিতে প্রাপ্ত লক্ষণসমূহ প্রত্যেকটি পৃথক পৃথক পংক্তিতে লিখিতে হইবে যাহাতে অসম্পূর্ণ বর্ণনাকে পরে সম্পূর্ণ করিয়া লিখা যায়। রোগলক্ষণ বর্ণনায় রোগীর দৈহিক মানসিক এবং অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে অপ্রকাশিত কিছু থাকিলে চিকিৎসক পুনরায় তাহা প্রশ্ন করিয়া জানিয়া নিবেন। দর্শন, শ্রবন এবং সর্বশেষে স্পর্শণ দ্বারা চিকিৎসক রোগী পরীক্ষা করিবেন। প্রাপ্ত সমস্ত তথ্যাবলী সংগ্রহ করিয়া তাহা দ্বারা সুস্থ এবং অসুস্থ অবস্থার পার্থক্য নির্ণয় করিয়া রোগ নির্ণয় করিতে হয়।




প্রশ্ন- রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসকের কর্তব্য কি?
বা, রোগী পরীক্ষায় চিকিৎসকের করণীয় বা অপরিহার্য গুণ কি কি?


উত্তর :
১) রোগীর নিজস্ব বর্ণনার প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগী হওয়া ও বিশ্বাস স্থাপন
২) রোগী পর্যবেক্ষণের বিশেষ ক্ষমতা থাকিতে হইবে।
৩) বিশেষ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হইতে হইবে।
৪) রোগী নির্বাচনে সুনিপুণতার অধিকারী হইতে হইবে।
৫) মানব প্রকৃতি ও রোগ প্রকৃতি সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান থাকিতে হইবে। 
৬) রোগলক্ষণ অনুসন্ধান কার্যে বিশেষ সতর্কতা ও ধৈর্য থাকিতে হইবে করা।
 




প্রশ্ন- রোগী চিত্র কি?

উত্তর : চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া, রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও পারিপার্শ্বিক লোকদের জিজ্ঞাসা করিয়া রোগী সম্পর্কে যে তথ্যাবলী সংগৃহীত হয় তাহাকে রোগী চিত্র বলা হয়। পীড়াক্রান্ত রোগীর শরীর শরীর ও মনের যে বিকৃতি দেখা দেয় বা যে পরিবর্তন দেখা দেয় তাহা রোগলক্ষণ নামে পরিচিত। এই লক্ষণসমষ্টি ব্যক্তি রোগের চিত্র এবং রোগীতে দেখা যায় তাই রোগীচিত্রও বটে।






প্রশ্ন- রোগের গুপ্ত কারণ কিভাবে সংগ্রহ করিতে হয়?

উত্তর : রোগী অতি সহজে রোগের গুপ্ত কারণ চিকিৎসকের নিকট প্রকাশ করে না বা বলিতে লজ্জাবোধ করে। যেমন-যৌন যন্ত্রের বিকৃতি, গোপন প্রণয়, অস্বাভাবিক উপায়ে যৌন তৃপ্তি, আত্মহত্যার অপচেষ্টা প্রভৃতি রোগোৎপাদক কারণসমূহ রোগী ও তাহার বন্ধুবান্ধবগণ বলিতে চায় না এমনকি জিজ্ঞাসা করিলেও স্বীকার করে না। এইরূপ ক্ষেত্রে রোগীকে নির্জনে অথবা গোপনে নিয়া অথবা রোগীর বন্ধু-বান্ধবের নিকটর হইতে বিস্তারিত জানিয়া লইতে হইবে।





প্রশ্ন-  রোগ নির্ণয়ের গুরুত্ব কি?

উত্তর : রোগের প্রকৃতি যাহা দ্বারা নির্ণিত হয় তাহাইকে Diagnosis বা রোগ নির্ণয় বলা হয়। এই Dignosis শব্দটি চিকিৎসার ইতিহাসে অত্যন্ত পুরাতন। তবে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি আংগিক। ইহা রোগের পরিণতি ফলের উপর একমাত্র নির্ভরশীল । এই জাতীয় Diagnosis এ রোগীর ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ বা মানসিক লক্ষণের কোন বিবেচনা নাই। অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অপরিহার্য সদৃশ লক্ষণসমষ্টির প্রধান অঙ্গ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও মানসিক লক্ষণসমষ্টি। তাই তথাকথিত Diagnosis এর তেমন মূল্য হোমিওপ্যাথিতে নাই। তবে যথার্থ Diagnosis এর অবশ্যই প্রয়োজন রহিয়াছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণসমষ্টির অন্তর্ভূক্ত করিনাই রোগের প্রকৃতি ও প্রতিকৃতি নির্ণয় করেন। এই অর্থে ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণসমষ্টির দ্বারা রোগের চিত্র অংকন একটি পূর্ণাঙ্গ Diagnosis প্রচলিত আংগিক Diagnosis হইতে এই Diagnosis স্বতন্ত্র। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে হোমিওপ্যাথি একটি Diagnositic চিকিৎসা এবং হোমিও চিকিৎসায় ইহার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।





প্রশ্ন-  এনামনেসিল কাহাকে বলে? এনামনেসিসের উদ্দেশ্য কি?

উত্তর ঃ এনামনেসিসের অর্থ রোগীর লক্ষণসমষ্টি। রোগীর বর্তমান ও অতীত লক্ষণ, রোগলক্ষণের ক্রমবিকাশ, লক্ষণ বৃদ্ধির কারণ, রোগীর বংশানুক্রমিক রোগের
ইতিহাস, রোগীর দৈহিক গঠনমূলক লক্ষণ, রোগ নিরাময়ের পারিপার্শ্বিক বাধা বিপত্তি, জীবাণুঘটিত ব্যাথির জটিল প্রকৃতি প্রভৃতি এনামনেসিসের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ রোগী সম্বন্ধে পুংখানুপুংখভাবে জানার নাম এনামেসিস। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এনাননেসিস অপরিহার্য। পীড়ার আক্রমণে দেহ ও মনের উপর কিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটিয়াছে এবং তাহাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিরূপ সে সম্বন্ধে পরিচয় লাভ করাই এনামনেসিসের লক্ষ্য।





প্রশ্ন-  রোগচিত্র প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা কি?

উত্তর চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করিতে গেলে রোগ চিত্র প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। মহাত্মা হ্যানিমান রোগ বলিতে রোগ চিত্র তথা রোগের লক্ষণকে বুঝাইয়াছেন। এই চিত্র পাওয়া যায় রোগের লক্ষণের দ্বারা। রোগীর অন্তর প্রকৃতির কোন ভাষা নাই, শুধু ইংগিত, ইশারা বা প্রকাশের মাধ্যমেই বা প্রকাশিত লক্ষণের মাধ্যমেই অন্তর প্রকৃতি। ভাষা পাওয়া যায়। এই রোগলক্ষণ বা রোগচিত্রের উপর ভিত্তি করিয়াই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা করিয়া থাকেন। সব বিষয় জ্ঞান থাকিলেও যদি রোগচির সম্পর্কে চিকিৎসকের জ্ঞান না থাকে তবে চিকিৎসক অকৃতকার্য হন। অতএব সঠিক ঔষধ নির্বাচনে এই রোগচিত্র প্রণয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।






প্রশ্ন-  রোগীলিপিতে প্রত্যেকটি নতুন বিষয় পৃথক পৃথক ছত্রে লিখিতে হয় হয় কেন?

উত্তর : লক্ষণ লিখিবার সময় প্রত্যেক নতুন ঘটনার লক্ষণ নতুন ছত্রে একটু ফাঁক ফাঁক লিখিয়া লইতে হইবে, যাহাতে কোন লক্ষণ রোগী ও তাহার পরিজনবর্গ প্রথমে অসম্পূর্ণ এবং পরে বিস্তৃতভাবে বলিতে অথবা চিকিৎসক প্রশ্ন দ্বারা সম্পূর্ণভাবে জানিয়া ঐ স্থানে সংযোগ করিয়া লইতে পারেন। সেই জন্য নতুন লক্ষণগুলি প্রত্যেকটি পৃথক পৃথক পংক্তিতে লিখিতে হয় এবং পংক্তিগুলিকে একটিকে আর একটির নিচে সাজাইয়া রাখিতে হয়।





প্রশ্ন- রোগীর বিবরণ লিপি চিকিৎসা কার্যের একটি প্রধান অংশ-আলোচনা কর।

উত্তর : রোগীর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হইলে চিকিৎসা কার্যের একটি প্রধান অংশ শেষ হইয়াছে বলিয়া ধরা হয়। কারণ এই বিবরণের উপর নির্ভর করিয়াই সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হয় লক্ষণসমূহ লিল্কি থাকিলে প্রতিবারই নির্বাচিত ঔষধ সেবনের পর কি কি লক্ষণের অবলুপ্তি ঘটিয়াছে বা ঐ ঔষধ সেবনের

[5:36 PM, 3/10/2023] Dr. Mohi Uddin: ফলে কোন নতুন লক্ষণ প্রকাশ পাইয়াছে কিনা তাহা অতি সহজে নির্ণয় করা যায়। কাজেই রোগীর লিপিই চিকিৎসকের পথ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে।

প্রশ্ন-৬.৭৯। অচির রোগের লক্ষণ সংগ্রহ প্রণালী লিখ। বা, অচির রোগের অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য কি কি বিষয়ের অনুসন্ধান আবশ্যক?

উত্তর : অস্থির রোগের ক্ষেত্রের রোগলক্ষণসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্তমান থাকে। অচির রোগ অল্পকাল স্থায়ী হয়। ইহার লক্ষণসমূহের প্রকাশ ও বিকাশ অভি দ্রুত হয়। রোগশক্তির প্রভাবে প্রাণসত্তা প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হয় বলিয়া বাহিরের সাহায্যে জরুরী প্রয়োজন হয় কাজেই প্রাণসত্তা তখন সুস্পষ্ট লক্ষণ তুলিয়া ধরিয়া সাহায্যের বিশেষ দ্রব্যটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রোগী নিজে তাহার কষ্টকর উপসর্গগুলির প্রকৃতি সহজে বুঝিতে ও বর্ণনা করিতে পারে। তাহার পরিজনেরাও বুঝিতে পারেন কোন উপসর্গগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও দৃষ্টি আকর্ষণ এবং চিকিৎসকও সেইসব লক্ষণের ব্যঞ্জনা সহজে ধরিতে পারেন। অল্পদিনের রোগ বলিয়া এবং কষ্টকর অনুভূতিগুলি তীব্র হয় বলিয়া রোগী স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবেই সব কথা খুলিয়া বলেন। কাজেই রোগের সার্বিক পরিচয় পাইতে চিকিৎসককে খুব বেশী প্রশ্ন করিতে হয় না এবং অপরের সাহায্যের খুব বেশী প্রয়োজন হয় না। তবে স্মরণ রাখিতে হইবে যে অচির রোগের বিকাশ যেমন দ্রুত, তেমনি দ্রুত পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। সেইজন্য অচির রোগের ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

প্রশ্ন-৬.৮০। পূর্বে কোন চিকিৎসার অধীনে থাকা রোগীর ক্ষেত্রে রোগচিত্র সংগ্রহের উপায় কি?

উত্তর ঃ পূর্ব হইতে চিকিৎসিত হইয়া আসিতেছিল এমন কোন বাক্তিকে তখনই পরীক্ষা করিলে রোগের ও ঔষধ সৃষ্ট লক্ষণের এক মিশ্র চিত্র পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় রোগীকে কিছুকাল বিনা ঔষধে রাখিতে পারিলে ঔষধজনিত লক্ষণ সাধারণতঃ তিরোহিত হয় এবং রোগের অবিমিশ্র ও স্থায়ী লক্ষণগুলি প্রকাশ হইয়া পড়ে। কিন্তু অচিররোগের ক্ষেত্রে শীঘ্র ঔষধের ব্যবস্থা না করিলে রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করিতে পারে। প্রকৃত রোগচিত্র পাওয়ার জন্য তাই অপেক্ষা করা চলে না। এই জন্য রোগীর তখনকার পর্যবেক্ষণ করিয়া লক্ষণ সাদৃশ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়।
[5:37 PM, 3/10/2023] Dr. Mohi Uddin: নিয়মনীতি ২১১

প্রশ্ন-৬.৮১। চিররোগের অবস্থা সম্বন্ধে বিশেষভাবে জানিবার জন্য কি কি

বিষয়ের অনুসন্ধান আবশ্যক?

বা, চিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ প্রণালী বর্ণনা কর ।

উত্তর ঃ চিররোগই আর অচিররোগই হোক সর্বক্ষেত্রেই চিকিৎসকের যত্ন, নিষ্ঠা, অভিনিবেশ ও দূরদর্শিতার বিশেষ প্রয়োজন। চিররোগের ক্ষেত্রে রোগের সূচনা হইতে পূর্ণ বিকাশ লাভ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগে। চিররোগ বিষ এবং প্রাণসত্ত্বার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ঘটনা জন্ম নেয়। কিন্তু কোন ঘটনা, কোন রোগ ভোগই প্রকৃত রোগের পরিচয় বহন করে না। প্রতিটি রোগভোগ মূল রোগের আংশিক প্রকাশ মাত্র। বিভিন্ন রোগ ভোগের ঘটনা মিলিতভাবে প্রকৃত রোগের সঠিক পরিচয় প্রকাশ করে। কাজেই চিররোগের ক্ষেত্রে শুধু বর্তমান রোগের বিবরণ সংগ্রহ করিলেই যথেষ্ট হইবে না। রোগীর রোগভোগের সম্পূর্ণ ইতিহাস এমনকি বংশগত রোগ ধারার ইতিহাসও সংগ্রহ করিতে হইবে। এইসব উপাদানের মধ্যেই আসল রোগের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করিতে হইবে।

চিররোগের চিকিৎসায় যথেষ্ট যত্ন ও ধৈর্য প্রয়োজন। তাই রোগীর আত্মীয়- স্বজনকে নানারকম প্রশ্ন করিয়া রোগের বিভিন্ন লক্ষণ সংগ্রহ করিতে হয়। প্রকৃত • পক্ষে দীর্ঘকাল রোগভোগের ফলে রোগী বুঝিতেই পারে না যে প্রকৃত রোগ কোনটি। অনেক সময় রোগের মূল উপসর্গগুলিতে রোগী এমন অভ্যস্ত হইয়া পড়েন যে সেগুলি তাঁহার নিকট আর বিশেষ কোন রোগ বলিয়াই মনে হয় না। অথচ এ ঘটনা রোগের সর্বাধিক পরিচয় বহন করে। তেমনি রোগীর আচার-আচরণ পোশাক-পরিচ্ছদ, আহার-বিহার, জীবন-যাপন প্রণালীর মধ্যে চিররোগের লক্ষণসমূহ প্রচ্ছন্ন থাকে। পুংখানুপুংখভাবে পর্যবেক্ষণ করিলে সূক্ষ্মতম বৈশিষ্টগুলি ধরা পড়ে। চিকিৎসকের মানবপ্রকৃতি সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। অনেকে উপসর্গসমূহ আলস্য বশত, সৌজন্যতার খাতিতে ব্যক্ত করেন না। অনেকে আবার অনেক বিচার বুদ্ধি করিয়া নানাদিক ভাবনা চিন্তা করিয়া কিছুটা বাদ দিয়া বা কিছু যোগ করিয়া নিজের মন্তব্যসহ রোগের পরিচয় প্রদান করেন। এই জন্য রোগের প্রকৃত পরিচয় প্রচ্ছন্নই থাকিয়া যায়। ইহা ছাড়া ব্যক্তিগত কোন লজ্জাকর কারণ স্বেচ্ছায় প্রকাশ করিতে চান না।
চিররোগ প্রকৃতপক্ষে বহুরূপী রোগ। রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানিয়া প্রতিটি ক্ষেত্রে রোগীলিপি প্রস্তুত করা তাই চিকিৎসকের অবশ্য কর্তব্য।

 
প্রশ্ন-  একটি রোগলিপির নমুনা লিখ ।

উত্তর :

গোপনীয়

ক্রমিক নং-
তারিখ :
রোগীর নাম
পিতা/স্বামীর নাম
জাতী
ধর্ম
বর্ণ
বয়স 
লিঙ্গ
ঠিকানা
রেফার্ড বাই
কেস টেকিং এর তারিখ

ক) রোগীর আকৃতিগত বৰ্ণনা

১। গঠন
২। উচ্চতা
৩ । বৰ্ণ
৪। ওজন
৫। বুকের মাপ

খ) পারিবারিক ইতিহাস

১। পিতা মাতা জীবিত না মৃত
২। তাহাদের স্বাস্থ্য কিরূপ
৩। মৃত্যু হইয়া থাকিলে রোগের নাম
৪। মৃত্যুকালীন বয়স
৫। তাহারা কোন বিশেষ রোগে আক্রান্ত ছিলেন 
৬। ক) ভাই বোন কয় জন
খ) মৃত কয় জন
গ) কি রোগে মারা গিয়াছে
ঘ) কত বৎসর বয়সে মারা গিয়াছে 
৫) জীবিতদের স্বাস্থ্য কেমন
৭। দাদা-দাদী, নানা-নানী, ফুফু-খালার স্বাস্থ্য কেমন

গ) বৈবাহিক অবস্থা

১। বিবাহিত/অবিবাহিত
২। কত বৎসর বয়সে বিবাহ হইয়াছে 
৩। সন্তান কয়টি কি না
৪। তাহাদের স্বাস্থ্য কেমন
৫ ৷ কয়টি জীবিত
৬। তাহাদের কোন রোগ আছে কিনা
৭। মৃত হইলে কি রোগে মারা গিয়াছে

ঘ) পেশা

১। কি কাজ করিতে হয় ২। বর্তমান পেশা কি
৩। অতীতে কি পেশা ছিল
৪ । বর্তমান পেশা মনঃপুত কিনা 

ঙ) রোগের ইতিহাস

১। কি রূপে রোগ আরম্ভ হইল
২। কিভাবে প্রকাশিত হইল
৩। পূর্বে কোন কঠিন পীড়া ছিল কিনা
৪ । উহার চিকিৎসা কিভাবে হয়
৫। কি ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছিল
৬। বর্তমানে উহার কোন উপসর্গ আছে কিনা

চ) বর্তমান পীড়া

১। কতদিন যাবত হইয়াছে
২। রোগের লক্ষণ ৩। রোগের কারণ
৪ । বর্তমান পীড়ার উপসর্গগত এবং কারণগত বিশদ বর্ণনা
৫। ক্ষুধা কিরূপ
৬। কোন খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ বেশী
৭ । কোন খাদ্যের প্রতি বীতস্পৃহ
৮। পিপাসা কেমন
৯। পরিপাক শক্তি কেমন
১০। শরীরে কোন চর্মরোগ আছে কিনা উহার বিবরণ
১১। আঁচিল/অর্বুদ আছে কিনা ১২। শীত কাতর না গরম কাতর
১৩। রোগীর সহজেই ঠাণ্ডা লাগে কিনা ১৪ । খুব কাশি আছে কিনা

ছ) দৈহিক বিবরণ

১। সাধারণ স্বাস্থ্য-দুর্বল/সবল 
২। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ বর্ণনা
ক) চোখ
খ) কান
গ) নাক
ঘ) গলা
ঙ) দাঁত
৩। উঠানামা করিলে বুক ধড়ফড় করে কিনা,
৪। দেহের কোন অংশ বিকল কিনা।

জ) মানসিক লক্ষণ

১। রোগী খিটখিটে, একগুয়ে বা শান্ত স্বভাবের কিনা
২। আত্মহত্যার প্রবণতা আছে কিনা।
৩। সঙ্গী চায় না একলা থাকিতে ভালবাসে
৪। মৃত্যু কামনা বা মৃত্যু ভয় আছে কিনা। ৫। জীবনে কোন মানসিক আঘাত পাইয়াছে কি না।
৬। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আছে কি ৭। স্মৃতিশক্তি ভাল/মন্দ ..
৮। স্মৃতিশক্তি লোপ পাইতেছে কিনা।

ঝ) যৌন পীড়ার ইতিহাস

১। উপদংশ/প্রমেহ রোগ আছে কিনা।
২। থাকিলে কতদিন ধরিয়া আছে
৩। এই রোগের জন্য কি চিকিৎসা হইয়াছে
৪। কি কি ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে।
৫। বর্তমানে উহা কি কি উপসর্গ ও লক্ষণ ৬। বর্তমান রোগের সঙ্গে উহার সম্পর্ক
৭। পুং জননেন্দ্রিয়
ক) স্বপ্নদোষ আছে কিনা খ) কতদিন পর পর হয়
গ) মৈথুন ইচ্ছা বেশী না কম ঘ) অপব্যবহার হইয়াছে বা হইতেছে কিনা
ঙ) কামচিন্তা কেমন
চ) লিঙ্গ শিথিল কি না।
ছ) লিঙ্গ ছোট না বড়
জ) অন্যান্য লক্ষণ

৮। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়

ক) কখনও গর্ভস্রাব হইয়াছে কিনা
খ) কখনও মৃত সন্তান হইয়াছে কিনা
গ) কামভাব বেশী না কম
ঘ) প্রসবকালে কষ্ট বেশী না কম
ঙ) জরায়ুচ্যুতি বা বক্রতা আছে কিনা
চ) মাসিক ঋতু কত বয়সে শুরু হইয়াছে
ছ) স্রাবের বর্ণ
জ) স্রাবের গন্ধ
ঝ) স্রাবের পরিমাণ
ঞ) ঋতুর পূর্বে বা পরে কোন প্রকার যন্ত্রণা হয় কিনা
ট) কি জাতীয় যন্ত্রণা
ঠ) কত দিন অন্তর মাসিক স্রাব হয়
ড) স্রাবের পরিমাণের সঙ্গে যন্ত্রণা সম্পর্ক আছে কিনা
ঢ) স্রাব কখন বাড়ে-কমে
ণ) কতদিন স্থায়ী হয়। ত) স্রাবের অপরাপর লক্ষণ
থ) অন্যান্য লক্ষণ দ) পরিপাক যন্ত্রের লক্ষণ

১। পেটে বায়ু হয় কিনা 
২। উদ্গার উঠে কিনা, উদগারের বর্ণ ও গন্ধ কেমন
৩। পেট ফাঁপা কখন বাড়ে বা কমে ৪ । পেটে ব্যথা আছে কিনা
৫ । ইহা কখন বাড়ে কমে

৬। মুখের স্বাদ কেমন
ক) মুখে দুর্গন্ধ আছে কিনা
খ) মাড়ী হইতে পূঁজ পড়ে কিনা গ) মুখের বর্ণ ও লক্ষণগত বর্ণনা
ঘ) লালা পড়ে কিনা

ট) পায়খানার বর্ণনা

১। পায়খানার প্রকৃতি
২। বর্ণ
৩। পরিমাণ
৪ । পাতলা/কঠিন 
৫ । কখন কিভাবে বাড়ে
৬। মল পরীক্ষার রিপোর্ট

৭। আমাশয় কিরূপ
ক) কতদিন যাবত
খ) আম পড়ে কিনা
গ) আম রক্ত পড়ে কিনা
ঘ) কতটা বেশী পড়ে
ঙ) কতবার পায়খানা হয়
চ) কোঁথ দিতে হয় কিনা
ছ) পেটে বেদনা কখন বাড়ে জ) আমাশয়ের সঙ্গে অন্যান্য সহজ পীড়া

ঠ) প্রস্রাবের বর্ণনা

১। প্রস্রাবের প্রকৃতি
২ । বৰ্ণ
৩। গন্ধ
৪। পরিমাণ
৫। কতবার হয়
৬। জ্বালা পোড়া আছে কিনা৭। বেদনা আছে কিনা।
৮। তলানি পড়ে কিনা
৯। প্রস্রাবের কোন রোগ আছে কিনা ১০। প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট
১১। দিনে রাতে কখন পরিমাণ বাড়ে বা কমে

ড) বিবিধ বর্ণনা

১। শরীরে কোথাও জ্বালাপোড়ার ন্যায় ব্যথা অনুভব হয় কিনা
২। ঘাম বেশী হয় না কম হয়
৩। কখন কোথায় কিরূপ ঘাম হয়
৪। ঘামের গন্ধ
৫ । ঘামের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
৬। শ্লেষ্মার প্রকৃতি
৭। কাশির প্রকৃতি
৮ । কফ পরীক্ষার রিপোর্ট

রোগীর স্বাক্ষর

তাং

চিকিৎসকের স্বাক্ষর

তাং





সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ