হৃদপিণ্ডাবরণ প্রদাহ - Pericarditis, চতুর্থ বর্ষ - প্যাকটিস অব মেডিসিন

হৃদপিণ্ডাবরণ প্রদাহ 
Pericarditis






সংজ্ঞা:- হৃদপিণ্ডের বহিরাবরণের পর্দার প্রদাহকে পেরিকার্ডাইটিস বলে। 

শ্রেণীবিভাগ:- ইহাকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) ড্রাই ফিব্রিনাস বা একিউট পেরিকার্ডাইটিস।
২) রসক্ষরণপ্রবণ বা সিরাম পেরিকার্ডাইটিস। ঐ সংলগ্নতাপ্রবণ বা ক্রণিক অ্যাডেসিভ পেরিকার্ডাইটিস।
৩) পেরিকার্ডাইটিসের কারণতত্ত্ব লিখ।

পীড়ার কারণতত্ত্ব:
১) কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত যেমন গেঁটে বাত, এলবুমিনুরিয়া, বহুদূর প্রভৃতি।
২) ঠাণ্ডা লাগা বা কোন যান্ত্রিক উত্তেজনা ।
৩) হৃদ আবরক ঝিল্লীতে রস বা জলীয় পদার্থ সঞ্চয়। ৪) তরুণ অস্থিপচন, প্রসবাস্তিক জ্বর প্রভৃতি দুষিত প্রক্রিয়ায়।
৪) আর জ্বর, হাম, বসন্ত, টাইফয়েড, ডিপথিরিয়া, নিউমোনিয়া প্রভৃি পীড়ার উপসাগরূপে।

লক্ষণাবলী:- এই পীড়ায় নিম্নলিখিত লক্ষণাবলী প্রকাশ পায় । 
১) হৃদপিণ্ডের উপরিভাগে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব। বেদনা কখনো বুক হইতে বাম হাত পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
২) বুকে সামান্য চাপ দিলে বেদনায় অস্থির এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়।
৩) পেরিকার্ডিয়ামের মধ্যে জল, রস, রক্ত ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। ৪) হৃদপিণ্ড ও পেরিকার্ডিয়াম পৃথকভাবে থাকে না, উহারা জুড়িয়া যায় ।
৫) হৃদপিণ্ডের গতির ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, রোগীর অস্থির ও উদ্বেগপূর্ণ হয় এবং ফুসফুসের উপর চাপ পড়ায় শ্বাসকষ্ট হয়।
৬) মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়, শোধ ভাব, প্রলাপ দেখা দেয়।
৭) পেরিকার্ডিয়ামে জল সঞ্চিত হইলে হৃদপিণ্ডের উপরের দিকে ঘর্ষণ শব্দ শোনা যায়। হৃদযন্ত্রের শক্তির জলের চাপে কমিয়া যায়। 

রোগনির্ণয়:
দর্শন- হৃদপিণ্ড স্থান স্ফীত ও উঁচু দেখায়। হৃদস্পন্দন দেখা যায় না।
আঘাত- পূর্ণগর্ভ শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ।
আকর্ষণ- ঘর্ষণ শব্দ পাওয়া যায় না। হৃদপিণ্ডের শব্দ দুর্বল এবং অনেক সময় একেবারে পাওয়া যায় না।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে। সকল প্রকার উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা বর্জন করিতে হইবে। পেরিকার্ডিয়ামে অধিক পরিমাণ রুস সঞ্জয় হইলে পিচকারী দ্বারা টানিয়া বাহির করা এবং পুঁজযুক্ত রস সঞ্চিত হইলে অপারেশনের ব্যবস্থা করার নিয়ম এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় রহিয়াছে।
পথ্য- রোগীকে যতদূর সম্ভব সামান্য পরিমাণে পানি পান করিতে দেওয়া উচিত। খাঁটি দুগ্ধ উৎকৃষ্ট পথ্য। দুধে পানি থাকিলে পেরিকার্ডিয়ায় পানি জমিতে পারে।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) একোনাইট- পীড়ার প্রথমাবস্থায় উপকারী। আঘাতজনিত পাড়া তৎসহ ছটফটানি, পিপাসা, মৃত্যুভয় প্রভৃতি লক্ষণ থাকিলে ইহা ব্যবহার্য ।
২) বেলেডোনা- প্রাদাহিক অবস্থায় উপকারী। বাতাক্রান্ত স্থান লালবর্ণ, বেদনাযুক্ত ও ফোলা। রক্তাধিক্য অবস্থায় ইহা উপকারী। পীড়ার সহিত অস্থিরতা, প্রথমে প্রলাপ বকা এবং পরে মুখের বিবর্ণ ভাব ও অজ্ঞান ভাব প্রভৃতি লক্ষণ থাকিলে ইহা উপকারী।
৩) ভিরেট্রাম ভিরিডি— হৃদপিণ্ডের মধ্যে প্রবল ঝড়ের মত ক্রিয়া হইতে থাকে। নিমোনিয়ার সাথে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে দারুণ কষ্ট, পূর্ণ ও কঠিন নাড়ী। শিরঃপীড়া ও মুখের বর্ণ নীল থাকে। বাতজ্বরজনিত পেরিকার্ডাইটিস, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস মধ্যে রক্তাধিক্য হেতু শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা উপযোগী।
৪) স্পাইজেলিয়া— শ্বাসকষ্ট ও অতিশয় বুক ধড়ফড়ানি, হৃদপিণ্ডে প্রবল তীক্ষ্ণ ও সূঁচ ফোটানো বেদনা। বাতজ্বর জনিত পেরিকার্ডাইটিস। হৃদপিণ্ড হইতে বেদনা পৃষ্ঠদেশ, সমগ্রবক্ষে এবং বাহুদ্বয় ও মেরুদণ্ডে ছড়াইয়া পড়ে। বুকের মধ্যে কম্পনবোধ ।
৫) ল্যাকেসিস- পীড়ার বর্ধিতাবস্থায় ইহা উপকারী। হৃদপিণ্ডের পীড়াজনিত শোথ ও উদরী। নিদ্রার পর বা উপক্রমে শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, হৃদপিণ্ড যেন চাপিয়া ধরিয়া রাখিয়াছে। অতিশয় বুক ধড়ফড়ানি, বক্ষ বেদনা, বাম বাহু পর্যন্ত বেদনা প্রসারিত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয় । ইহা ছাড়া লক্ষণানুসারে এই পীড়ায় ভার্সেনিক, সিমিসিফিউগা, ক্যালমিয়া, কেলি আয়োড, ন্যাজা, রাসটক্স, কেলিকার্ব, কলচিকাম, ব্রায়োনিয়া প্রভৃতি ঔষধও ব্যবহৃত হয়। 

ভাবীফল:- বাতপীড়া সহকারে পীড়া হইলে হৃদপিণ্ডের ভালবগুলির যদি তেমন বিকৃতি না ঘটে তবে ভাবীফল অশুভ নহে। পুঁজযুক্ত স্রাব এবং রক্তস্রাবী পর্যায় খুবই বিপজ্জনক। পীড়ার ফলাফল হৃদপিণ্ডের অবস্থা, সংলগ্নতার বিস্তার প্রভৃতির উপর নির্ভর করে। ক্রণিক ক্ষেত্রে ভাবীফল সাধারণত ভাল হয় না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ