হেলিবোরাস নাইজার - HELLEBORUS NIGER, চতুর্থ বর্ষ- মেটেরিয়া মেডিকা


হেলিবোরাস নাইজার
HELLEBORUS NIGER






প্রাকৃতিক অবস্থা:- রেনানকুলেসিয়াই ।

প্রতিশব্দ:- হেলিবোরাস, ক্রিষ্ট মান রোজ, এলিবোরান নাােগ্রাম, হেলিবোরাস গ্র্যান্ডি ফ্লোরাস, ভিরেট্রাম নাইগ্রাম, বাক হেলিবোর।

উৎস ও বর্ণনা:- বাক হেলিবোর নামক গাছের শুদ্ধ মূল হইতে ইহা প্রস্তুত হয় । ইহা ১ হইতে ৩ ইঞ্চি লম্বা সংশিষ্ট মাংসল নিরাট কন্দ বিশিষ্ট বহুবর্ষজীবি গাছড়া। নিরাট কন্দ বাদামী বর্ণের নলাকৃতি এবং গ্রন্থিযুক্ত হইয়া থাকে। লম্বা ডাঁটার মধ্যকার পাতাগুলি সোজাসুজি মূল হইতে উৎপন্ন হয়। এই সকল ভাঁটা নলাকৃতি, ফ্যাকাশে সবুজ বর্ণের এবং মাঝে মাঝে লাল দাগযুক্ত। পাতার উপরিভাগ ঘন সবুজ এবং নীচের ভাগ ফ্যাকাশে। ইহার ছোট শিকড়গুলি ভঙ্গুর, শুষ্ক হইলে শিকড়গুলি অস্বচ্ছ বাদামী বর্ণ ধারণ করে। ডিসেম্বর হইতে মার্চ মাসে ধূসর সাদা বর্ণের ফুল ফুটিয়া থাকে। আলপস পর্বত শ্রেণী, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে এই সকল গাছ জন্মিয়া থাকে।

প্রস্তুত প্রণালী:- মধ্য ও দক্ষিণ ই রাপের পার্বত্যময় প্রদেশের ক্রিষ্ট মাস রোজ নামক গাছের শুদ্ধ মূল হইতে ইহার অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে ইহার উচ্চ শক্তি প্রস্তুত হয়।

ক্রিয়াস্থান:- বক্ষঃস্থল, মস্তিষ্ক, পেরিটোনিয়াম, সিরাস মেমব্রেন প্রভৃতির উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া।

প্রস্তুতের ফরমুলা:- এ- ৪।

মানসিক লক্ষণ:- উত্তর দিতে বিলম্ব হয়, চিন্তা শক্তির শূন্যতা। জড়বুদ্ধি, একদৃষ্টে রোগী তাকাইয়া থাকে। অনিচ্ছায় দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। সম্পূর্ণ অজ্ঞান। ঠোঁট ও কাপড় খোঁটে। বিষণ্নতার সহিত চিত্তোন্মাদ।

চারিত্রিক বা পরিচায়ক লক্ষণ:
১) অনিচ্ছাক্রমে দীর্ঘশ্বাস, সম্পূর্ণ অচৈতন্য অবস্থায় ওষ্ঠ এবং বস্ত্র খুঁটিতে থাকে।
২) অজ্ঞান ভাবে পড়িয়া থাকে বা নিদ্রা। ৩) রোগ লক্ষণ বৈকালে প্রায় ৪টা হইতে ৮টার মধ্যে বৃদ্ধি।
৪) পিপাসা খুবই বেশী, মুখের নিকট জলের পাত্রটি ধরিলেই আগ্রহের সহিত হাঁ করে। 
৫) একদিকের হাত পা অসাড়ে নাচে, অন্যদিকের অঙ্গে পক্ষাঘাত; স্থির ভাবে থাকে।
৬) কপালে কোঁচকান এবং সেই সঙ্গে ঘর্ম। 
৭) বালিশে মাথা একবার একদিকে আবার ওদিকে নাড়ে।
৮) প্রস্রাব হয় একেবারে বন্ধ কিংবা অতি অল্প পরিমানে হয়। প্রস্রাবের তলানি কাফি গুঁড়ার মত।
৯) চক্ষুর তারা প্রসারিত, কিছুমাত্র দেখিতে শুনিতে পায় না।
১০) মস্তিষ্কে জল সঞ্চর, শিশু মাঝে মাঝে চীৎকার করিয়া উঠে, মস্তিষ্ক ঝিলীর প্রদাহ।
১১) শোথ ।

প্রয়োগক্ষেত্র:- শোথ, সবিরাম জ্বর, টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, হাইড্রোকেফাল্‌স, প্রভৃতিক্ষেত্রে এই ঔষধটি প্রয়োগ হয়।

শিশু চিত্র:- শিশু অচৈতন্যভাবে পড়িয়া থাকে। রোগী বালিশের উপর মাথা চালিতে থাকে, বালিশের, ভিতর মাথা ঢুকাইয়া দেয় । হঠাৎ চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠে। মাথায় এক প্রকার খোঁচান ব্যথার জন্য ঐরূপ ক্রদন করে। চোখ উল্টাইয়া যায়। চক্ষু প্রসারিত। সর্বদা যেন কিছু চিবাইতেছে এইরূপ মনে হয়। দাঁত কিড়মিড় করে। এক হাত ও এক পা আপনা আপনি নড়িতে থাকে। শিশু স্তন খায় কিন্তু খাদ্যদ্রব্য খাইতে চায় না। শিশু মূত্র ত্যাগ করিতে কষ্ট হয়। মূত্রাধার অত্যধিক ফুলিয়া উঠে। দাঁত উঠিবার সময় কোন প্রকার উদ্ভেদ নির্গমন বন্ধ হইয়া উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দিলে ইহা উপযোগী।

শোথ লক্ষণ:- যে সকল শোথ উদরীতে ইন্দ্রিয় ভোগের বিষয়ে রোগীর বিরাগ জন্মে, দেহের পেশী সমূহের দুর্বলতা আসে ও রোগীর মুখ রক্তশূণ্য অথচ থমথমে হয় এবং সেই সাথে আমাতিসার থাকে, তথায় হেলিকোৱাস উপকারী। শোথ ও উদররোগে প্রস্রাব কালবর্ণ কিংবা খোলা; পরিমাণে অত্যন্ত অল্প, প্রস্রাব ধরিয়া দেখিলে তাহাতে ধোঁয়ার মত পদার্থ ভাসে। কাফি গুঁড়ার মত প্রস্রাবের তলানি পড়ে। হৃৎপিণ্ডের কোনও পীড়াজনিত শোখে ডিজিটালিস, এপোসাইনাম ও হেলিবোরাস এই তিনটি ঔষধই উপযোগী। 

জ্বর লক্ষণ:- সবিরাম জ্বরে হঠাৎ নাড়ী দমিরা গিয়া সেই সঙ্গে যদি হিমাঙ্গ, কপালে শীতল ঘর্ম, নাড়ী অতিশয় মৃদু, পেশী সমূহ যেন শিথিল ও শখ, তড়কা ও আক্ষেপ, জ্বরে নাকের ভিতর কালবর্ণ হইয়া যায়, শ্বাস প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ, অজ্ঞানাবস্থায় নাক, ওষ্ঠ ও কাপড় খোঁটে, ভালপানে আগ্রহ থাকে না অথচ জল দিলে পান করে, তথায় ইহা উপকারী ।

টাইফয়েড লক্ষণ:- টাইফয়েড পীড়ায় জ্বর বিকাল ৪টা হইতে ৮টার মধ্যে বৃদ্ধি পায়। সমস্ত শরীর অসাড় ও ভারবোধ এবং মাথায় ভয়ানক বেদনা, রোগীর মনে হয় যেন মাথার খুলি ফাটিয়া কপাল বা চক্ষুর ভিতর দিয়া কিছু বাহির হইবার চেষ্টা করিতেছে। নাকের ডগা হইতে ঠোঁট পর্যন্ত যেন কালি মাখা, মুখে ও নিশ্বাসে ভয়ানক দুর্গন্ধ, জল গিলিতে গেলে গড়গড় শব্দে তাহা নামে। বিকালে রোগী ঠোঁট কাপড় বা বিছানা খোঁটে। দাঁত কড়মড় করে, কিছু চিবাইবার মত ঠোঁট দুইটি নাড়ে। সম্পূর্ণ অচৈতন্য ভাব, রোগীর কোন সাড়া শব্দই পাওয়া যায় না এবং কোন পিপাসার লক্ষণও দেখা যায় না। তবে জঁল দিলে তাহা আগ্রহের সহিত পান করে।

মেনিনজাইটিস লক্ষণ:- রোগী অচৈতন্য ভাবে পড়িয়া থাকে। কিছুই দেখিতে বা শুনিতে পায় না। বালিশের উপর মাথা রাখিয়া এদিক ওদিক নাড়ে, সেই সঙ্গে চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠে। এই লক্ষণটি এপিসেও আছে। তবে হেলিবোরাসের শিশু মাথায় এক রকম খোঁচান ব্যথার জন্য ঐরূপ ক্রন্দন করে। পিপাসা থাকে না অথচ আগ্রহের সহিত জল পান করেন। চক্ষু প্রসারিত, কপাল কোঁচকান কিছু চিবাইবার মত মাড়ী নাড়ে কিংবা ভ্রু দুইটি এপাশ ওপাশ করে। একদিকে হাত পা নাড়ে, অন্যদিকের হাত পা স্থিরভাবে পড়িয়া থাকে। মাথার দিকে হাত উঠায়, প্রস্রাব প্রায়ই বন্ধ থাকে কিংবা অতি অল্প হয়। বাহা বন্ধ থাকে। যদিও বা হয় খুব সামান্য ও কাল রং এর। প্রস্রাবও কালচে, তাহার সহিত অগুলাল থাকে। উপরোক্ত লক্ষণে হেলিবোরাস অব্যর্থ। হেলিবোরাসের খেঁচুনীতে আঙ্গুল মুঠা হইয়া থাকে।

হাইড্রোফেকালস লক্ষণ:- দাঁত উঠিবার সময় কোনও প্রকার উদ্ভেদ নির্গমন বন্ধ হইয়া পীড়া হইলে ইহা বিশেষ উপযোগী। এই পীড়ায় যখন মস্তিষ্কের মধ্যে জল জমিয়াছে, রোগী অজ্ঞান, কিছুতেই জাগানো যায় না, অনবরত মাথা এদিক ওদিক নাড়ে, বালিশে মাথা গোঁজে, কিংবা থাকিয়া থাকিয়া অনবরত চীৎকার করিয়া উঠে, চোখের নিকট আলো ধরিলেই চক্ষু তারকা স্থির থাকে। অথচ কিছু চিবাইবার মত মাড়ী নাড়ে, দাঁত কড়কড় করে একদিকের হাত পা নাড়ে, অন্য দিকের হাত পা স্থির থাকে, কখন কখন প্রস্রাব বন্ধ প্রবল বৈঁচুনী প্রভৃতি লক্ষনগুলি থাকে, তখন হেলিবোরাম 'উপযোগী।

হাইড্রোফেকালস লক্ষণ:- মস্তকে আঘাত নিত সক লাগিলে, মস্তিষ্কের ক্রিয়া লোপ পাইলে, আর্ণিকায় কোন উপকার না হইলে হেলিবোরাস উপকারী।

প্রাপ্তদেশের লক্ষণ:- রোগী এক হাত ও এক পা নাড়ে, অপর দিকের হাত ও পা স্থির থাকে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভারী ও বেদনাযুক্ত। হাত পা ছড়াইতে থাকে। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ হাতের তালুতে আকৃষ্ট হয়। হাতের ও পায়ের ফাঁকে ফাঁকে ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ।

বৃদ্ধি:- অনাবৃত দেহে, বিকাল ৪টার মধ্যে দেহ সঞ্চালন।

উপশম:- দেহ আচ্ছাদনে: শরনে- শিরঃপীড়ায়। 

অনুপূরক ঔষধ:- ফসফোরাস, পালসেটিলা, জিঙ্কাম, বেলেডোনা, চায়না, নাম, সালফার, লাইকোপোডিয়াম । 

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- চায়না, ক্যাক্ষর। 

ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম:- ৩x হইতে ৩০ শক্তি।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ২০ হইতে ৩০ দিন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ