এনাকার্ডিয়াম ওরিয়েন্টাল - Anacardium Oriental

 এনাকার্ডিয়াম ওরিয়েন্টাল 
(Anacardium Oriental )






প্রতিশব্দ : ভেলা, মার্কিং নাট।

উৎস : একপ্রকার বৃক্ষের ফলের ভিতরের ধূনার ন্যায় তরল পদার্থ হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। বাংলায় ইহাকে ভেলা বলা হয়, রজকেরা ইহার দ্বারা কাপড়ে দাগ দেয়।

প্রাপ্তিস্থান : এশিয়ার শুষ্ক পর্বতবহুল বনে এবং পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এই গাছগুলি পাওয়া যায়।

ক্রিয়াস্থান : ইহা জ্ঞান স্থানের উপর ক্রিয়া করিয়া মস্তিষ্ক কেন্দ্র ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের অবসাদ জন্মায় । ইহা একটি এন্টিসোরিক ঔষধ। 

প্রস্তুতের ফরমূলা : এফ-৪ (তরল), এফ-৯ বিচূর্ণ ।

মানসিক লক্ষণ :
১/ মনোস্তরের উপর ইহা বিশেষভাবে ক্রিয়া করে। মনটি বড়ই দুর্বল, বিষণ্ণ, মমতাহীন, নিষ্ঠুর ও সর্বদাই সন্দেহপ্রবণ। 
২/ রোগী সব সময় দুইটি ভিন্নজাতীয় ইচ্ছা প্রবাহ দ্বারা চালিত হয়- যেন কুমতি ও সুমতিতে জোরে একটি দ্বন্দ মনের মধ্যে চলিতে থাকে। 
৩/ রোগী মনে করে সে যেন দুইজন। 
৪/ চলিবার সময় উদ্বেগ, মনে করে কেহ যেন তাহার পিছনে পিছনে হাঁটিতেছে। 
৫/ মস্তিষ্কের অবসন্নতা, কোন কিছুতে মনোযোগ দেওয়া সম্ভবপর নয়। 
৬/ রোগী তাহার স্বামী, স্ত্রী বা পুত্র কন্যাদের নিজের ভাবিতে পারে না। 
৭/ রোগীর স্মৃতিশক্তিটি সাংঘাতিকভাবে লোপ পায়, সন্দেহপ্রবণতার জন্য নিজের উপরও বিশ্বাস রাখিতে পারে না। 
৮/ বার্ধক্যজাত বুদ্ধিনাশ, সর্বপ্রকার নৈতিক জ্ঞান বিবর্জিত।

চরিত্রগত লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ : 
১/ অত্যন্তভীতি, স্মরণশক্তির হ্রাস, কোন জিনিষ বা লোকের নাম মনে থাকে না।
২/ অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা করিয়া কোনও মস্তিষ্কের পীড়া, হঠাৎ স্মৃতিশক্তি লোপ।
৩/ মনে হয় যেন শরীরের স্থানে স্থানে টানিয়া বাঁধা রহিয়াছে।
৪/ মনে সর্বদাই উদ্বেগ, নিরাশভাব। পরের উপর এমনকি নিজের উপরও অবিশ্বাস।
৫/ সমস্ত ইন্দ্রিয়ের দৌর্বল্য ও শিথিলতা ।
৬/ মনে হয় দুইটি ইচ্ছা রহিয়াছে, একটি করিতে বলে অপরটি বারণ করে। 
৭/ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সন্দেহ করে, হতাশার ভাব, প্রত্যেক জিনিষ ও প্রত্যেক মানুষকে ভয়, চলিতে ভয় যেন কেহ পিছে পিছে আসিতেছে।
৮/ তাড়াতাড়ি পানাহার করে। পানাহারের পর দমবন্ধের ভাব ।
৯/ ভীষণ কোষ্ঠবদ্ধতা। পাকস্থলী খালি থাকিলে বেদনা হয়, আহারে উপশমবোধ ।

স্মরণশক্তি হ্রাসে এনাকার্ডিয়ামের প্রয়োগ লক্ষণ :
স্নায়বিয় বৃদ্ধ ও ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসে ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ । অতিরিক্ত অধ্যয়ন বা অত্যধিক মানসিক শ্রমজন্য স্নায়বিক দুর্বলতায় ইহা অধিক ফলপ্রদ । পরীক্ষা দিবার পূর্বে ছাত্রদের বিশেষ ভয় হয়। তাই ইহা ছাত্রদের স্মৃতিসুধা । পরীক্ষার একমাস পূর্ব হইতে ইহা প্রত্যহ সেবনে স্মৃতিশক্তি বর্ধিত হয়। অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় পরিচালনা জনিত বা হস্তমৈথুনের কুফলের জন্য মস্তিষ্কের দুর্বলতায় ও স্মরণ শক্তি হ্রাসে ইহা মহা উপকারী। কোন দুর্বলকর পীড়ার পর স্মৃতি শক্তি হ্রাসেও ইহা উত্তম ফল প্রদান করে ।

পাগল বা উন্মাদ পীড়ায় :
পাগল হইবার আগে রোগী চুপচাপ করিয়া বসিয়া ভাবে ও তাহার মনে নানা প্রকার ইচ্ছা হয়। নাকে কত প্রকার গন্ধ পায়, কখনও মনে হয় যে উলঙ্গ হইয়া রাস্তার উপর নাচে, কিন্তু যতক্ষণ তাহার বিবেচনা শক্তি থাকে ততক্ষণ নিজেকে সংযত রাখে, তারপর একদিন পাগল হইয়া পড়ে। প্রথমেই এনাকার্ডিয়াম প্রয়োগ করিতে পারিলে আর পাগল হইবার ভয় থাকে না এবং পাগল অবস্থায়ও সেবন করাইতে পারিলে আরোগ্য প্রাপ্ত হইবে। 

উদর সম্বন্ধীয় লক্ষণ বা পাকস্থলী পীড়ায় :
এনাকার্ডিয়ামের অজীর্ণ জনিত শূলব্যথা আহারের পর উপশম হয় এবং ক্ষুধা লাগিলে বা পেট খালি হইলেই বেদনা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পরিপাক কার্য শেষ হওয়া মাত্রই যাতনা অতিশয় বৃদ্ধি পায় এবং উদরটি পূর্ণ হইলে বেদনার অবসান ঘটে। রোগী সেজন্য বেদনা নিবৃত্তির জন্য বার বার আহার করে। উদ্ধার, বমনেচ্ছা ও বমন । আহার অথবা পানকালে শ্বাসরোধের ভাব।

কোষ্ঠবদ্ধতায় এনাকার্ডিয়ামের লক্ষণ :
এনাকার্ডিয়ামের কোষ্ঠব লক্ষণে রোগী তাহার গুহ্যদ্বারে একটি ছিপি আটকাইয়া আছে বলিয়া মনে করে এবং ঘন ঘন তাহার বাহ্যের বেগ হয় অথচ বাহ্য হয় না। তহ্যদ্বারের পেশীসমূহের পক্ষাঘাত জন্য ইহার কোষ্ঠবদ্ধতা হইয়া থাকে। গরম জলে ইহার পেট বেদনা বৃদ্ধি পায়।

শিরঃপীড়ায় :
অভিশয় মানসিক পরিশ্রম জনিত শিরঃপীড়া, মানসিক অবসাদ, একটু মস্তিষ্ক চালনা করিলেই মাথাধরা, মাথার যন্ত্রণা সম্মুখ দিকে পশ্চাৎ দিকে হয়। সময়ে সময়ে মনে হয় যেন মাথার ভিতর কোন অংশে গুঁজি দেওয়া রহিয়াছে। এনাকার্ডিয়ামের শিরঃপীড়া আহারে ও নিদ্রাকর্ষণে উপশম পায় এবং নড়াচড়ায় বৃদ্ধি হয়। অলস প্রকৃতির লোকনের পরিপাক শক্তির দুর্বলতার সহিত প্রায়ই শিরঃপীড়া হয়।

মেরুদণ্ডের পীড়ায় :
হাঁটু ও মেরুদণ্ডের পীড়া সহ কোনও এক নির্দিষ্ট অংশের পক্ষাঘাত। রোগীর বোধ হয় যেন তাহার মেরুদণ্ডের ভিতর কিছু গুঁজি দেওয়া রহিয়াছে বা শরীরটিতে যেন জোরে কেহ ব্যান্ডেজ বাঁধিয়া রাখিয়াছে সেজন্য চলার শক্তি থাকে না। এক প্রকার মরিবাম আক্ষেপিক বেদনা পায়ের গোড়ালি হইতে আরম্ভ হইয়া পায়ের গোছের ভিতরে যায়। 

পুরুষত্বহীনতায় প্রয়োগ :
জ্ঞাতসারেই হোক বা অজ্ঞাতসারেই হোক ক্রমাগত বীর্যস্থলন হইয়া এই পীড়া ও তৎসহ স্বাৰু দৌর্বল্য লক্ষণ প্রকাশিত হইলে ইহার ১২ শক্তি প্রতাহ প্রাতে সেবনে উপকার পাওয়া যায়। বাহ্যের সময় ও প্রস্রাবের পর কেবল অৰ্শ পীড়ায় এনাকার্ডিয়ামের ব্যবহার রক্ত স্রাবযুক্ত অর্শে এবং যে অর্শে রক্ত পড়ে না তাহাতেও সেসাথে রেকটামের ফিসার বা ফাটা ঘায়ে ইহা উপকারী।

গর্ভাবস্থায় বমনে লক্ষণ :
গর্ভাবস্থায় বমনে নাক্স ভমই ভাল ঔষধ। প্রাতঃকালে রমন ও গা বমি বমির বৃদ্ধি মাঝে ও এনাকার্ডিয়ান এই দুই ঔষধেই আছে কিন্তু এই সমন ও গা বমি বমি আহারের পাই নিবৃত্তি পাইলে এনাকার্ডিয়ান প্রয়োগে তাহা নিবারিত হয়।

চর্মপীড়ায় লক্ষণ :
অত্যন্ত চুলকানি, একজিমা তৎসহ মানসিক উত্তেজনা। ফোস্কাকার উদ্ভেদ, ফোলা, আমবাত । চাকা চাকা হইয়া ফুলিয়া উঠে। স্নায়ুমণ্ডলের বিকার হেতু একজিমা, হাতের উপর আঁচিল, কনুই হইতে মনিবন্ধ পর্যন্ত স্থানে ক্ষত ।

বৃদ্ধি : মানসিক পরিশ্রমে, ক্রোধান্বিত হইলে, ঠাণ্ডায়, আহারের দুই ঘণ্টা পর, সঞ্চালনে।

হ্রাস : আহারে ও উষ্ণ পানিতে গোসল করিলে।

ক্রিয়ানাশক: ক্লিমেটিস, ক্রোটন, কফিয়া, রাসটক্স।

ক্রিয়া স্থিতিকাল : ২০ হইতে ৩০ দিন ।

ক্রম : ৬x-২০০ শক্তি।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ