সাধারণ অবস্থা - কেইস টেকিং - চতুর্থ বর্ষ
প্রশ্ন - হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক কি কি পরীক্ষা করা হয় ?
১। পরিপাকযন্ত্র খাদ্যের রুচি , অরুচি , রুচি থাকা সত্ত্বেও শুকাইয়া যাওয়া , ক্ষুধা না থাকা , রাক্ষুসে ক্ষুধা , সামান্যতেই পেট ভর্তি হইয়া যাওয়া , অত্যধিক লবণ খাওয়া বা না খাওয়া , মিষ্টি , টক , চর্বি , প্রভৃতি খাদ্যের প্রতি রুচি , খাদ্য ঠাণ্ডা না গরম পছন্দ করে , কোন বিশেষ খাদ্য যেমন , মাংস , দুধ , শাক নবজ প্রভৃতির প্রতি আগ্রহ , পিপাসা বেশী না কম , ঢেকুর ও বমির প্রকৃতি , কোন বাদ্য বা পানীয় গ্রহণের পর পীড়ার বৃদ্ধি বা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়ে জানিতে হইবে ।
২। জিহ্বা- জিহ্বার অবস্থা কেমন , মুখাস্বাদ কেমন , পঁচা , তিক্ত , তামাটে বা স্বাদহীন , খাদ্যে স্বাদ পাওয়া যায় কিনা প্রভৃতি বিষয় জানিতে হইবে ।
৩। নাড়ী- নাড়ীর স্পন্দন কত , দেহের তাপমাত্রার সহিত নাড়ীর স্পন্দনের সম্পর্ক , প্রভৃতি জানা উচিত ।
৪। শ্বাসযন্ত্র- শ্বাসটের ধরণ , শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত কিনা , বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হয় কিনা , দম বন্ধ হইবার উপক্রম হয় কিনা , কাশি শুষ্ক না ঘড়ঘড়ে , কাশিলে সর্দি উঠে কিনা , কাশিতে রক্ত আসে কিনা , হাঁপানির টান আছে কিনা প্রভৃতি জানিতে হইবে ।
৫। মস্তিষ্ক- মাথা ব্যথা কেমন , মাথা দপদপ করে কিনা , মাথার খুলিতে বদনা হয় কিনা , বেদনা চক্ষু পর্যন্ত বিস্তৃত কিনা , হাতুড়ি মারার ন্যয় অনুভব হয় কিনা , মাথা ঘোরা আছে কিনা প্রভৃতি বিষয় জানিতে হইবে ।
৬। চর্ম- গাত্রচর্য তৈলাক্ত না শুষ্ক , সহজে ঘাম হয় কিনা , দেহের কোন স্থানে হাত পায়ের তালু , বগল , বুক , মুখমণ্ডল বেশী ঘামে , ঘর্ণের প্রকৃতি কেমন , গন্ধ বা বর্ণ কেমন , মাথার তালু , হাতের পায়ের তালু গরম বা জ্বালাবোধ হয় কিনা প্রভৃতি জানিতে হইবে ।
৭। প্রস্রাব প্রস্রাবের বর্ণ কেমন , শর্করাহীন বা শর্করাযুক্ত , প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয় কিনা , কখন হয় , প্রস্রাবে তলানি পড়ে কিনা , প্রস্রাব দ্বার চুলকায় কিনা , প্রস্রাব কতবার হয় , অসাড়ে হয় কিনা , প্রভৃতি জানিতে হইবে ।
৮। হস্তপদ- হাতের তালু পায়ের তালু ঘামে কি না , জ্বালাপোড়া হয় কিনা , ঠাণ্ডা না গরম , নখের অবস্থা প্রভৃতি জানিতে হইবে ।
প্রশ্ন - ভালভাবে রোগী পরীক্ষা না করিয়া ঔষধ নির্বাচন করা যায় না - আলোচনা কর ।
উত্তর : যে কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচন করিতে গেলে ভালভাবে রোগী পরীক্ষা করিতে হইবে । রোগীর নিকটে বসিয়া প্রথমে তাহার অন্তর লক্ষণগুলি যেমন— শীতবোধ , মাথাধরা বা ঘোরা , হাত পা কামড়ানো , জিহ্বার স্বাদ , বুক জ্বালা , ডয় উদ্বেগ প্রভৃতি বিষয় জানিতে হয় । তার পর রোগের কারণ যেমন - ঠাণ্ডা লাগা , বৃষ্টিতে ভিজা , গুরুপাকদ্রব্য আহার , ভারী জিনিষ তোলা , অনিদ্রা , প্রাতঃকালে হ্রাসবৃদ্ধি , রাত্রে হ্রাসবৃদ্ধি , নড়াচড়ায় হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি জানিতে হইবে । বাহ্যিক লক্ষণগুলি যেমন দেহের তাপমাত্রা , নাড়ী , জিহ্বা , চর্ম , বক্ষ , মলমূত্র , রক্তচাপ প্রভৃতি পরীক্ষার দ্বারা দেখিতে হইবে । এই বিষয়ে জানিয়া চিকিৎসককে ঔষধ নির্বাচন করিতে হয় ।
বা , মুখমণ্ডলের ভাব প্রকাশ দেখিয়া কিভাবে সাধারণ রোগ নির্ণয় করা যায় ?
বা , রোগীর মুখমণ্ডল দেহের অবস্থার দর্পণ স্বরূপ - আলোচনা কর ।
উত্তর : মুখমণ্ডল রোগীর আভ্যন্তরীন অবস্থার দর্পণস্বরূপ । মুখমণ্ডল দেখিয়া দেহের সুস্থতা অসুস্থতার বিষয়ে অনেকটাই জ্ঞাত হওয়া যায় । প্রসন্ন মুখ দেহের সুস্থতার পরিচয় বহন করে । ফুসফুসের তরুণ প্রদাহে মুখমণ্ডল চিন্তাযুক্ত , সংকুচিত ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । জ্বরের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাব থাকিলে মুখমণ্ডলের মলিনতা , কালবর্ণের ঠোঁট প্রভৃতি অবস্থা প্রকাশ পায় । মুখমণ্ডল লালাভ দেখাইলে জ্বর , বিবর্ণ , সাদা বা ফ্যাকাশে দেখাইলে শক , হেমারেজ বা এনিমিয়া , স্ফীত দেখাইলে মূত্ররোগ , নীলবর্ণ , দেখাইলে হৃদরোগ , কাশি বা শ্বাসনালীর অবরোধ , সদ্যজাত শিশুর মুখমণ্ডল নীলবর্ণ দেখাইলে সায়ানোসিস নিওনেটোরাম , পীত বা পীতাভ হলুদ দেখাইলে জন্ডিস , উদ্বিগ্ন দেখাইলে উদর সংক্রান্ত রোগ বা হৃদরোগ প্রভৃতি নির্দেশ করে । রোগীর মুখে হাসিখুশী ভাৰ থাকিলে বুঝিতে হইবে যে , রোগ ধীরে ধীরে হ্রাস পাইতেছে ।
প্রশ্ন - নাড়ী ( Pulse ) কাহাকে বলে ?
উত্তর ঃ হৃদপিণ্ডের নিলয়দ্বয়ের সিসটোলিক ও ডায়াসটোলিক চাপের পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ নিলয়দ্বয়ের সংকুচিত ও প্রসারিত হওয়ার ফলে ধমনীতে যে স্পন্দন সৃষ্টি হয় তাহাকে নাড়ী বলে ।
প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দন কাহাকে বলে ?
উত্তর : নাড়ী স্পন্দন একপ্রকার ঙ্গে বিশেষ এবং ইহা রক্তচাপের দ্বারা সৃষ্টি হয় । নাড়ী স্পন্দন মহাধমনীতে নিলয়ের রক্ত উৎক্ষেপনের ফলে উৎপন্ন হইয়া রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয় । ইহার গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫ হইতে ৭ মিটার অগ্রসর হইতে পারে । এই গতিবেগ রক্ত প্রবাহ প্রাচীরের নমনীয়তা এবং রক্তের জড়তার উপর নির্ভরশীল ।
প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দনের তরঙ্গ সৃষ্টির কারণ লিখ ।
উত্তর ঃ তিনটি কারণের জন্য নাড়ী স্পন্দনের তরঙ্গ সৃষ্টি হয় । যথা ধমনীর মধ্যে পরিপূর্ণ রক্ত থাকা অবস্থায় হৃদপিণ্ডের বার বার রক্ত নিক্ষেপ , প্রান্ত পীয় বাধা এবং ধমনী প্রাচীরের নমনীয়তা ।
প্রশ্ন - কোথায় কোথায় নাড়ী দেখা হয় ?
উত্তর : সাধারণত হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগের সাহায্যে রোগীর হাতের কবজির সামনের দিকে রেডিয়্যাল ধমনীর নাড়ী গ্রহণ করা হইয়া থাকে । কবজি ছাড়াও কনুইয়ের সামনে কিউবিটাল ফসাতে ব্রাকিয়াল ধমনী , ঘাড়ে ক্যারোটিড ধমনী ও পপলিটিয়িাল ফসাতে পপলিটিয়াল ধমনীতে নাড়ী পাওয়া যায় । তাহা ছাড়া উরুর ভিতরের দিকে ফিমোরাল ধমনী এবং পায়ের পাতার উপরে । বৃদ্ধাঙ্গুলি ও দ্বিতীয়ার মাঝ বরবার মেটাটারসাল ধমনীতে নাড়ী অনুভব করা যায়।
প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দন অনুভবের বৈশিষ্ট্যের ফলাফল আলোচনা কর।
ক ) গতিমাত্রা ( Rate ) : প্রতি মিনিটে নাড়ী স্পন্দনের ঘটনা মাত্রাকে ( Frequency ) নাড়ী স্পন্দনের গতিমাত্রার হার বলে । বিশ্রাম কালে প্রতি মিনিটে ১০০ বার স্পন্দন নাড়ী স্পন্দনের স্বাভাবিক মাত্রা । স্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৬০ বার এর কম হইলে তাহাকে সাইনাস ব্রাডিকার্ডিয়া এবং ১০০ এর বেশী হইলে তাহাকে সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া বলে ।
খ ) ছন্দ ( Rhythum ) : ছন্দ বলিতে প্রতিটি ধর্মনীঘাত সমদূরবর্তী কিনা তাহা ইঙ্গিত দান করে । নাড়ী স্পন্দন অনুভব করার সময় স্পন্দন নিয়মিত না অনিয়মিত তাহা বুঝিতে হইবে । অনিয়মিত নাড়ী স্পন্দন হৃদরোগের ইঙ্গিত বহন করে ।
গ ) মান ( Volume ) : মান বলিতে প্রসারী চাপের সমতা হইতে নাড়ী স্পন্দনের বৃদ্ধির পরিমাণকে বুঝায় । ধাক্কার স্ফীতি যখন বলবান হয় তখন বুঝিতে হইবে বাম নিলয় দ্বারা রক্ত নিক্ষেপের পরিমাণ বেশী হইয়াছে । গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নাড়ী স্পন্দনের মান অপেক্ষাকৃত বেশী । হার্ট ফেলিওর , শক এবং রক্তে জলীয় অংশ কমিয়া গেলে রক্ত স্পন্দনের ঢেউয়ের ধাক্কা খুব ক্ষীণ হইয়া যায় ।
ঘ ) চাপ ( Tenison ) : চাপ বলিতে সংকোচী চাপের আসন্ন মানকে বুঝায় । নাড়ী স্পন্দনের চাপ আমাদের প্রসারী রক্ত চাপ সম্বন্ধে জানাইয়া দেয় ।
প্রশ্ন - একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি মিনিটে স্বাভাবিক নাড়ীর গতি কত ? বিভিন্ন বয়সের নাড়ীর স্পন্দনের হার উল্লেখ কর ।
শিশুর জন্মকাল হইতে ১ বৎসর পর্যন্ত ১২০ হইতে ১৪০ বার ,
গর্ভস্থ ভ্রুণের স্পন্দন ১০১ বার,
২ বৎসর হইতে ৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত ৯০ হইতে ১১৫ বার ,
৬ বৎসর হইতে ১৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত ৯০ হইতে ৮০ বার ,
১৬ বৎসর হইতে ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত ৯৫ হইতে ৭০ বার ,
বৃদ্ধ বয়সে নাড়ীর স্পন্দন ৬৫ হইতে ৫০ বার
প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দনের গুরুত্ব বর্ণনা কর ।
১ ) নাড়ী স্পন্দনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড , ধমনী এবং রক্তচাপ সম্বন্ধীয় বহু তথ্য জানা যায় ।
২ ) আঙ্গুলের অগ্রভাগের সাহায্যে নাড়ী স্পন্দনের অনুভব করা না গেলে ইহার রেখাচিত্রের মাধ্যমে বহু বিষয় জানা যায় ।
৩ ) সাধারণভাবে প্রান্তীয় বাধা ও হৃদপিণ্ডের হার কমিয়া গেলে এবং ঘাত পরিমাণ বৃদ্ধি পাইলে নাড়ী স্পন্দনের রেখাচিত্রের প্রাথমিক তরঙ্গটি বড় হয় ।
৪ ) প্রান্তীয় বাধা অত্যধিক বৃদ্ধি পাইলে , রক্তনালীর প্রাচীর কঠিন হইলে এবং হৃদস্পন্দনের হার যদি বাড়িয়া যায় এবং হৃদ উৎপাদ কমিয়া যায় তবে প্রাথমিক তরঙ্গটি ছোট হয় ।
প্রশ্ন - ডাইক্রোটিক এবং এ্যানাকরটিক নাড়ীস্পন্দন কাহাকে বলে ?
উত্তর : ডাইক্রোটিক নাড়ী স্পন্দন- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দনের ক্ষেত্রে রেখাচিত্রে ডাইক্রোটিক খাঁজ অত্যন্ত গভীর থাকে এবং সেই সময় প্রান্তীয় বাধা কম থাকে । এই জাতীয় নাড়ী স্পন্দন টাইফয়েড রোগে পাওয়া যায় । এ্যানাকরটিক নাড়ী স্পন্দন- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন এ্যায়োটিক স্টেনোসিস রোগে পাওয়া যায় । এই ক্ষেত্রে এ্যায়োটিক কপাটিকাগুলি জুড়িয়া গিয়া বাম নিলয় ও মহাধমনীর সংযোগে মুখটি ছোট হইয়া যায় । রেখাচিত্রে এই নাড়ী স্পন্দনের ঊর্ধ্বমুখী রেখা অত্যন্ত ছোট এবং নাড়ী স্পন্দনের মান অত্যন্ত কম থাকে । এই ঊর্ধমুখী রেখার একটি খাঁজ পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন - দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ কোন কোন রোগের নির্দেশক ?
উত্তর : দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক । এনিমিয়া , অজীর্ণ , নিউরোসিস , স্নায়বিক চঞ্চলতা , ভেগাস স্নায়ুর পক্ষাঘাত , স্পাইনাল কর্ডের পীড়া , মাইট্রাল স্টেনোসিস , হৃদপিণ্ডের প্রসারণ , মূত্রযন্ত্রাদির পীড়া , আরক্ত জ্বর , ডিপথিরিয়া , পেরিটোনাইটিস , ধমনীর অর্বুদ , বাত ও সন্ধিবাত প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণত কোন কোন রোগের নির্দেশক?
উত্তর ঃ ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক । শ্বাসকষ্ট , হৃদস্পন্দন , বক্ষ সংকোচনবোধ , বিবমিষা ও বমন , এনজাইনা প্রভৃতি । পেক্টোরিস , মেনিনজাইটিস , টাইফয়েড জ্বর , হৃদপিণ্ডের পক্ষাঘাত , জন্ডিস
প্রশ্ন - অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দনের প্রকারভেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
ক ) ওয়াটার হ্যামার নাড়ী স্পন্দন বা করিজেন্স নাড়ী স্পন্দনঃ মহাধমনীর ক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য নাড়ী স্পন্দনের উঠানামা অত্যন্ত গভীর ও আকস্মিক হয় । রেখাচিত্রের ডাইক্রোটিক তরঙ্গ বা খাঁজ থাকে না । এই ক্ষেত্রে নাড়ী স্পন্দনের মান বেশী থাকে । এই প্রকার অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দন থাইরোটক্সিকোসিস পীড়া , রক্ত শূন্যতা ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ইহা দেখা যায় ।
খ ) পতনশীল নাড়ী স্পন্দন- মহাধমনীর কপাটিকা অসম্পূর্ণ হইলে মহাধমনীতে নিক্ষিপ্ত রক্তের কিছু পরিমাণ অংশ বাম নিলয়ে ফিরিয়া যায় । এই অবস্থায় স্পন্দন তরঙ্গ রেখচিত্র দ্রুত ঊর্ধমুখে উঠিয়া আবার দ্রুত নিচে পড়িয়া যায় । গ ) সাইনাস ছন্দ বিকার- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দনে নিঃশ্বাস গ্রহণকালে নাড়ী স্পন্দনের কম্পনাঙ্ক বাড়িয়া যায় এবং প্রশ্বাসের সময় ইহার হ্রাসপাপ্তি ঘটে । এই অবস্থা বয়স্কদের ক্ষেত্রে শয়নকালে ও শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
ঘ ) পালসাস প্যারাডক্সাস- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন শ্বাসনালীতে অসুবিধা থাকাকালীন এজমারোগে ও পেরিকার্ডিয়াল ইফিউসনে পাওয়া যায় । এই ক্ষেত্রে শ্বাসগ্রহণের সময় নাড়ী স্পন্দনের মান বেশ কমিয়া যায় ।
ঙ ) স্পন্দন পর্যায়ক্রম- হৃদপেশীর গুরুতর ক্ষয় বিকৃতিতে নাড়ী স্পন্দনের উর্ধমুখী রেখাচিত্র একবার বড় এবং একবার ছোট হইতে দেখা যায় । এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন ডেন্ট্রিকুলার ফেলিওর ও হাইপারটেনশন রোগের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় ।
চ ) দুর্বল নাড়ী স্পন্দন প্রতিবার পেশী সংকোচনের বাম নিলয় মহা ধমনীতে স্বাভাবিক অপেক্ষা অল্প পরিমাণ রক্তকে নিক্ষেপ করিলে নাড়ী স্পন্দন দুর্বল হয় ।
ছ ) অত্যধিক নাড়ী স্পন্দন- মহাধমনীর কপাটিকা সংকীর্ণ বা সংকুচিত হইলে রেখচিত্রের তরঙ্গ প্রথমাবস্থায় উপরে উঠিয়া যায় এবং পরে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হইয়া যায় । ইহা ছাড়াও নাড়ী স্পন্দনের অস্বাভাবিক রূপ এ্যানাকরটিক ও ডাইক্রোটিক নাড়ী স্পন্দন ক্ষেত্রে দেখা যায় ।
প্রশ্ন - তাপমাত্রার সহিত নাড়ীস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সম্বন্ধ কি প্রকার লিখ ।
উত্তর ঃ শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি না পাইলে নাড়ীর গতি বা শ্বাসের গতির পরিবর্তন দেখা যায় না । তাপমাত্রা যদি এক ডিগ্রী বৃদ্ধি পায় তবে নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০ বার বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ২ বার বৃদ্ধি পাইয়া থাকে । এই সময় শরীরের তাপ ৯৮.৪ ডিগ্রী হইলে নাড়ীর স্পন্দন ৭২ বার এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ১৮ হইতে ২০ বার পর্যন্ত হয় । অতঃপর শরীরের উত্তাপ বাড়িয়া যদি ১০০ ডিগ্রী হয় তাহা হইলে নাড়ীর গতি স্পন্দন ৯১ বার এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ২২ হইতে ২৩ বার হয় । মনে রাখিতে হইবে যে , একবার শ্বাস লইলে ৪ বার নাড়ী স্পন্দন হয় ।
প্রশ্ন - দেহে কিভাবে তাপ উৎপাদন হয় ?
১ ) দেহে অক্সিডেশন ক্রিয়া- দিবারাত্র শরীরের কলকব্জা , সবযন্ত্র কাজ করে , অক্সিডেশন ক্রিয়া চলে অর্থাৎ অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন হইতেছে , ইহার দরুন দেহে তাপ সৃষ্টি হয় ।
২ ) আহার্যবস্তু বিপাক ক্রিয়া- দেহে প্রোটিন , কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্যের বিজারনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় । যকৃত , মাংসপেশী ও দেহের অন্যান্য দেহাঙ্গ তাপ উৎপাদনে বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করে । প্রোটিন খাদ্যে সর্বাধিক মাত্রায় দেহে তাপ উৎপাদন হয় ।
৩ ) মৌল বিপাক হার দেহে মৌল বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপাদন
8 ) পেশী সঞ্চালন ঐচ্ছিক পেশীতে তাপ উৎপাদন পেশী সক্রিয়তার সমানুপাতিক ।
৫ ) গরম খাদ্য ও পানীয় গরম খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ হইতেও দেহে তাপ উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায় ।
৬ ) শারীরিক পরিশ্রম- শারীরিক পরিশ্রমের ফলে দেহে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় ।
৭ ) বাহ্যিক তাপ- বাহিরের তাপ বেশী হইলে দেহের তাপ বেশী হয় ।
৮ ) উত্তেজনার ফল- রোগ ব্যাধিতে বেশী উত্তেজিত হইলে তাপ বেশী
প্রশ্ন - দেহ হইতে কিভাবে তাপ ক্ষয় হয় ?
১ ) নিঃশ্বাস প্রশ্বাস দ্বারা - ফুসফুস হইতে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনের সময় জলের বাস্পীভবন প্রক্রিয়া এবং প্রশ্বাসবায়ুর উষ্ণীকরণ প্রক্রিয়ায় দেহ হইতে তাপ ক্ষয় হইয়া থাকে ।
২ ) পরিবহন পদ্ধতি - চর্ম সরাসরি কোন শীতল পদার্থের সংস্পর্শে আসিলে এই পদ্ধতিতে তাপ ক্ষয় হয় । পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ায় তাপমাত্রা , জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও বাতাসের গতিবেগের উপর দেহ হইতে তাপ ক্ষয় নির্ভর
৩ ) পরিচলন পদ্ধতি- দেহের চারিদিকের বাতাসের তাপমাত্রা দেহ অপেক্ষা কম থাকিলে এই উপায়ে তাপ ক্ষয় হয় ।
৪ ) বিকিরণ পদ্ধতি— পারিপার্শ্বিক পদার্থের তাপমাত্রা দেহ অপেক্ষা নিম্নতর থাকিলে দেহ হইতে তাপ বিকিরণ হইতে থাকে । বিকিরণ পদ্ধতির মাধ্যমে দেহের তাপ ক্ষয় প্রধানত চর্ম উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল ।
৫ ) বাষ্পীভবন - ঘর্ম হইতে জল বাষ্পীভূত হইবার সময়কালে গাত্রতাপ ক্ষরণ হয় । এই পদ্ধতি সাধারণতঃ দেহ নিঃসৃত চর্মের বাষ্পীভবন এবং অতীন্দ্রিয় বাষ্পীভবন এই দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।
৬ ) অতীন্দ্রিয় বাষ্পীভবন- ইহা একটি অদৃশ্য প্রক্রিয়া যাহার সাহায্যে চর্মে উপরিতল ও শ্বসনপথ হইতে অবিরাম জলের বাষ্পীভবন সম্পন্ন হয় । ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিম্ন উষ্ণতায় যখন ঘর্ম ক্ষরণ সম্ভবপর হয় না তখন প্রধানতঃ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের তাপ ক্ষয় হয় ।
৭ ) মলমূত্র ত্যাগের দ্বারা মলমূত্র ত্যাগের মাধ্যমে দেহের প্রায় ২ শতাংশ তাপ ক্ষয় হয় ।
৮ ) পোশাকের প্রভাবে দেহে পোষাক বেশী পরিধান করিলে তাপ ক্ষয় বেশী হয় না । তাই শীতের সময় পরিচ্ছদ দ্বারা তাপক্ষয় কমানো যায় । গ্রীষ্মকালীন পোষাক হালকা ও পাতলা বিধায় দেহের তাপ ছাড়িতে সহায়ক
প্রশ্ন - দেহে কিভাবে তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ? বা , দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রণালী বর্ণনা কর ।
১ ) আভ্যন্তরীণ যন্ত্র হইতে বাহিরের চর্মে রক্ত চালাচালি হইয়া তাপসাম্য রক্ষিত হয় । চর্মের রক্তনালী সংকুচিত হইলে বহু রক্ত খোলের মধ্যে ও যন্ত্রে চলিয়া যায় । আর চর্মের সব রক্তনালী যদি প্রসারিত হয় তবে খোলের যন্ত্র হইতে বহু রক্ত চামড়ায় আসিয়া পড়ে ।
২ ) রক্তের ভলিউম ও আয়তনের কমবেশী হইলে তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় । দেহের তাপ বৃদ্ধি পাইলে রক্তের ভলিউম বাড়ে । পক্ষান্তরে তাপ কমিয়া গেলে রক্ত ঘন হয় ও রক্তের ভলিউম কমে । এইভাবে বেশী ও কম তাপে , রক্তের প্রবাহ ও ভলিউম কমবেশী হইয়া দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ।
৩ ) বাহিরের উত্তাপ বৃদ্ধি পাইলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় , ফলে দেহের তাপ বৃদ্ধি পায় ।
৪ ) যাহাদের শরীরে চর্বি বেশী আছে তাহাদের তাপ সহজে বাহির হয় না , তাই অল্প গরমে কাতর হয় , কিন্তু বেশী ঠাণ্ডা অনায়াসে সহ্য করিতে পারে ।
৫ ) আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাস তাপ বিকিরণ করে ।
৬ ) ঘাম দেহে শুকাইয়া গেলে তাপ ক্ষয় হয় । যখন ঘাম ঝরে , গায়ে শুকায় না তখন তাপ ক্ষয় হয় না । শুদ্ধ বাতাসে ঘাম উঠিয়া গিয়া দেহ শীতল করে ।
৭ ) শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ও চর্ম দিয়া যে সূক্ষ্ম জলীয়কণা নির্গত হয় তাহাতে অজ্ঞাতসারে দেহের তাপ কিছুটা কমিয়া যায় ।
৮ ) মলমূত্র ত্যাগের ফলে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত হইতে নির্গত হইবার সময় কিছু তাপ ক্ষয় হয় । ৯ ) দেহের তাপ উৎপাদন ও তাপক্ষয়ে থাইরয়েড গ্রন্থি , অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি , পিটুইটারী গ্রন্থি , আইলেটস অব ল্যাঙ্গার হ্যান্স প্রভৃতি অন্তঃক্ষরাগ্রন্থিগুলি তাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
প্রশ্ন - সুস্থাবস্থায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ?
উত্তর : সুস্থাবস্থায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা জিহ্বায় ৩৬.৯ ° সেঃ বা ৯৮.৪ ° ফাঃ , বগলে ৯৭.৪ ° ফাঃ এবং মলদ্বারে ৯৯.৪ ° ফাঃ ।
প্রশ্ন - কোথায় কোথায় তাপ দেখা হয় ?
উত্তর : জিহ্বায় , বগলে ও মলদ্বারে তাপ দেখা হয় ।
প্রশ্ন - দেহের তাপ কিভাবে নিরুপণ করা হয় ? দেহের তাপ কম বা বেশী হইলে কি কি রোগ নির্দেশ করে ?
উত্তর : ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার দ্বারা দেহের উষ্ণতা বা তাপ নির্ণয় করা হয় । ইহাতে ৮৫ ° ফাঃ হইতে ১১০ ° ফাঃ পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে । সাধারণ অবস্থায় বগলের তাপ ৯৭ ° এবং জিহ্বার নিচে ৯৮ ° ফাঃ । বালক বালিকাদের তাপ যুবকদের চাইতে বেশী থাকে । চল্লিশ বৎসর পার হইলে দেহের তাপ হ্রাস পায় । শরীরের তাপ ২-৩ ডিগ্রীর বেশী হইলে জ্বর বুঝায় । ম্যালেরিয়া , মেনিনজাইটিস , সেপটিক জ্বরে দেহের তাপ ১০০ ° ফাঃ পর্যন্ত উঠে । টাইফয়েড জ্বরে ১০৫ ° ফাঃ ভয়াবহ কিন্তু ম্যালেরিয়াতে তাহা নহে । ৯০ ° ফাঃ এর নিচে গাত্রতাপ হইলে তাহা অবসাদ বা মৃত্যুর ভয় বুঝিতে হইবে । ঘুম এবং বিশ্রামকালে দেহের উষ্ণতা কিছু কম হয় । সাধারণত শরীরের উষ্ণতা ৯৯ ° ফাঃ উঠিলে বা ৯৭ ° ফাঃ এর নিচে নামিলে কোনরূপ পীড়া হইয়াছে বুঝিতে হইবে ।
প্রশ্ন - গাত্ৰতাপ রোগের প্রকৃত অবস্থার মানদণ্ড - আলোচনা কর ।
উত্তর : দেহের তাপমাত্রা ১০৮.৬ ° হইতে ১১০ ° ডিগ্রী পর্যন্ত প্রায়শঃ মৃত্যু । ১০৭ ° ডিগ্রী ম্যালেরিয়া জ্বর ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে মারাত্মক । ১০৬ ° ডিগ্রী অত্যস্ত ( Intense ) জ্বর , ১০৫ ° ডিগ্রী উচ্চ জ্বর ( Hyper pyrexia ) , ১০৪ ° ডিগ্রী , প্রচণ্ড জ্বর ( Severe ) , ১০২ ° পর্যন্ত নাতিপ্রখর ( Moderate ) জ্বর , ১০১ ° ডিগ্রী মৃদু জ্বর , ৯৮.৪ ° ডিগ্রী স্বাভাবকি তাপমাত্রা , ৯৬.৬ ° ডিগ্রী হইতে ৯৪ ডিগ্রী তাপমাত্রা অতিশয় অবসন্নতা বা কোলান্স , ৯৪ ° ডিগ্রীর হ্রাসপ্রাপ্ত তাপমাত্রা হিমাঙ্গ , ৯৩ ° ডিগ্রী তাপমাত্রা কলেরা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে মারাত্মক কোলান্স এর ইঙ্গিত প্রদান করে ।
প্রশ্ন - শ্বাসপ্রশ্বাস বলিতে কি বুঝায় ?
উত্তর : শ্বাসপ্রশ্বাস একপ্রকার ফিজিকো কেমিক্যাল প্রসেস যাহা দ্বারা রক্তের উপস্থিতিতে জৈবকলার মধ্যে বায়বীয় পদার্থের বিনিময় হয় । পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডল হইতে ফুসফুসে বাতাসের প্রবেশকে প্রশ্বাস এবং ফুসফুস হইতে নাসারন্ধ্র পথে বাতাসের মুক্তিকে নিঃশ্বাস বলে । পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডল হইতে ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ এবং ফুসফুস হইতে বায়ু নির্গমনকে শ্বাসকার্য বলে ।
প্রশ্ন - সুস্থাবস্থায় আমরা প্রতি মিনিটে কতবার শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া সম্পাদন করি ?
উত্তর : সুস্থাবস্থায় আমরা প্রতিমিনিটে ১৮ হইতে ২০ বার শ্বাসপ্রশ্বাস নিই । ৫ বৎসরের ছোট শিশুরা ২৫ হইতে ৩০ বার এবং নবজাত শিশুরা ৪০ বার নিয়া থাকে ।
প্রশ্ন - শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক শব্দ কয়টি ও কি কি বর্ণনা দাও ।
১ ) ভিজিকুলার শব্দ ,
২ ) ব্রঙ্কিয়াল শব্দ ।
১ ) ভিজিকুলার শব্দ— স্বাভাবিক অবস্থায় ফুসফুসের মধ্যে বাতাস প্রবেশ ও .ফুসফুস হইতে বাতাস বাহির হওয়ার সময় যে শব্দ হয় তাহাকে ভিনিকুলার শব্দ বলে । ইহা মৃদু শব্দ । শ্বাস গ্রহণের শব্দ শ্বাসত্যাগের শব্দের চাইতে বেশী এবং শ্বাস গ্রহণের শব্দ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কোন ফাঁক না দিয়াই শ্বাস ত্যাগের শব্দ আরম্ভ হয় ।
২ ) ব্রঙ্কিয়াল শব্দ— স্বাভাবিক অবস্থায় ট্রাকিয়া ও ব্রঙ্কাইয়ের মধ্যে বায়ু চলাচলের জন্য যে শব্দ হয় তাহাকে ব্রঙ্কিয়াল শব্দ বলে । ইহাতে শ্বাস গ্রহণের শব্দ ও শ্বাসত্যাগের শব্দ সমান অথবা শ্বাস গ্রহণের শব্দের চাইতে শ্বাস ত্যাগের শব্দ বেশী এবং শ্বাস গ্রহণের শব্দ শেষ হইলে কিছু সময় ফাঁক দিয়া শ্বাসত্যাগের শব্দ আরম্ভ হয় ।
প্রশ্ন- স্বাভাবিক প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট লিখ ।
উত্তর : স্বাভাবিক প্রস্রাব রিপোর্ট :
Phsical
Examination
1
.
Colour Pale yellow
2
.
Appearance or Transparency Clear
3 . Sediment Nil
4 . Odour Normal
5 . Sp. Gravity 1010-1020
Chemical Examination
1 . Reaction Acidic
2 . Albumin Nil
3 . Sugar Nil
4 . Acetone Nil
5 . Reactive Acid Nil
6 . Bile Salts Nil
7 . Bile Pigment ( Bilirubin ) Nil
8 . Indican Nil
9 . Diacetic Acid Nil
10 . Chyle Nil
11 . Uryle Normal
12 . Excess phosphate Nil
Organized Deposits
1 . Epithelelial cells 1-2 per HP Field
2 . RBC Nil
3 . Pus cell Nil
4 . Spermatozoa (Malen) Nil
5 . Trichomonus Vaginalis (Femae) Nil
Un-organised Deposits
1 . Uric acid cryatal Nil
2 . Urate Crystal Nil
3 . Calcium oxalate crystal Nil
4 . Triple phosphate crystal Nil
5 . Stellar phosphate crystal Nil
6 . Sulphonamide crystal Nil
7 . Amorphous crystal Nil
8 . Tyrosine crystal Nil
9 . Leucine cryatal Nil
10 . Cholesterol cryatal Nil
Microscopic Examination
1 . Epithelial cast Nil
2 . RBC cast Nil
3 . WBC cast Nil
4 . Fatty cast Nil
5 . Hyaline cast Nil
6 . Amyloid cast Nil
7 . Granular cast Nil
প্রশ্ন - অসুস্থ অবস্থায় প্রস্রাবে কি কি পাওয়া যাইতে পারে ?
উত্তর : অসুস্থ অবস্থায় প্রস্রাবে নিম্নলিখিত বস্তু থাকিতে পারে । ১ ) এলবুমিন , ২ ) রক্ত , ৩ ) কাইল ( Chyle ) , ৪ ) বাইল সল্ট , ৫ ) বাইল পিগমেন্ট , ৬ ) গ্লুকোজ , ৭ ) এসিটোন , ৮ ) কাস্ট , ৯ ) পাস সেল , ১০ ) সুগার প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - অস্বাভাবিক প্রস্রাবে কি কি রোগ নির্দেশ করে ?
১ ) Colour : স্বাভাবিক প্রস্রাব ঈষৎ হলুদ রঙের বা খড়ের মত রঙ হয় । তবে প্রস্রাব অনেকক্ষণ জমিয়া থাকিলে , প্রস্রাব কম হইলে , ইহাতে রক্ত পিও প্রভৃতি থাকিলে রঙ গাঢ় হয় । Red অথবা Dark Brown হইলে Blood Pigments , yellow , orange or green হইলে bilirubin , Milky রঙ হইলে chyle এর উপস্থিতি , Albumin থাকিলে ঘোলাটে বর্ণ হয় ।
২ ) Chyle : ইহাতে পূঁজ থাকিলে তাহা সাদা রঙ হয় , হিমোগ্লোবিন থাকিলে কাল হয় , এলবুমিন থাকিলে ঘোলাটে হয় ।
৩) Transparancy : স্বাভাবিক প্রস্রাব স্বচ্ছ হয় । যদি সাদা বা ঘোলাটে হয় তবে পূঁজ , Mucus বা Albumin প্রভৃতি আছে জানিতে হইবে যাহা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ।
8 ) Sediment : স্বাভাবিক প্রস্রাবে তলানি থাকে না । যদি থাকে তবে তাহা দুই ধরনের Organic বা Inorganic Organic হইল Pus , RBC , Epithelial cell প্রভৃতি । আর Inorganic হইল Phosphate , Carbonate প্রভৃতি ।
৫ ) Specific gravity : স্বাভাধিক আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০১০-১০২০ । বেশী হইলে নেফ্রাইটিস , ডায়াবেটিস মেলিটাস , এলবুমিনুরিয়া প্রভৃতি এবং কম হইলে - ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস প্রভৃতি নির্দেশ করে ।
৬ ) Albumin : প্রস্রাবে বেশী এলবুমিন থাকিলে নেফ্রাইটিস , এলবুমিনুরিয়া , প্রস্রাব থলী ও প্রস্টেটের প্রদাহ প্রভৃতি হইতে পারে ।
৭ ) Sugar : প্রস্রাবে চিনি থাকিলে ডায়াবেটিস , হাইপার থাইরয়েডিসম , সিরোসিস , লিভার ডেমেজ প্রভৃতি রোগ বুঝায় ।
৮ ) Acetone : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । ইউরিমিয়া বা উপবাস করিলে ইহা প্রস্রাবে দেখা দেয় ।
৯ ) Phosphate : ইহা বেশী থাকিলে নির্দিষ্টভাবে স্নায়বিক দুর্বলতা বুঝায় ।
১০ ) Bilirubin : অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে এবং কেন কোন ক্ষেত্রে Hepatic Jaundice এ প্রস্রাবে Conjugated bilirubin থাকে ।
১১ ) Bile Salts : অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে ইহা দেখা যায় ।
১২ ) Haemoglobin : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । যদি থাকে তবে ম্যালেরিয়া , ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার , ইয়েলোফিভার , হিমোলাইটিস জন্ডিস প্রভৃতি নির্দেশ করে ।
১৩ ) Epithelial cell : বেশী হলে Infection বুঝায় ।
১৪ ) RBC : প্রস্রাবে ইহা থাকিলে কিডনী ইনফেকশান বুঝায় ।
১৫ ) Pus cell : বেশী থাকিলে নেফ্রাইটিস , গনোরিয়া , সিফিলিস প্রভৃতি বুঝায় ।
১৬ ) Cast : ইহা নেফ্রাইটিস রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ ।
১৭ ) Squamous Epithelium : প্রস্রাবে ইহা কম থাকে । বেশী ইলে সিস্টাইটিস প্রভৃতি রোগ বুঝায় ।
১৮ ) Crytanine sediment : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । যদি দেখা যায় তবে পাথুরী রোগ বুঝায় ।
প্রশ্ন - প্রস্রাব কিসে বৃদ্ধি পায় ?
১ ) কিডনীতে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাইলে ।
২ ) এমিনোফাইলিন , চা , কপি প্রভৃতি মূত্রকারক বস্তু ব্যবহার করিলে গ্লমেরুলের কৈশিক নলী প্রসারিত হওয়ার কারণে ।
৩ ) শীতকালে চামড়ার কৈশিকনলী কুঁচকানোর জন্য কিডনীতে বেশী বেশী রক্ত গেলে ।
৪ ) অত্যধিক জল পানে বা বেশী মাংস খাইলে ।
৫ ) এন্টিরিয়র , পিটুইটারী , এড্রিনালিন ইনজেকশনে ।
৬ ) স্যালাইন ইনজেকশান গ্রহণে ।
প্রশ্ন - প্রস্রাব কিসে কমে ?
১ ) পানি কম পান করিলে ।
২ ) দৈহিক পরিশ্রম , পোস্টিরিয়র পিটুইটারী , হাইপোথালামাস প্রয়োগে ।
৩ ) রক্তপাত , আঘাতজনিত শক প্রভৃতিতে ।
৪ ) দেহরসের অভাব যেমন - কলেরা , ডিসেন্ট্রি প্রভৃতি কারণে ।
প্রশ্ন - প্রস্রাবে এলবুমিন নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর ।
ক ) এসিটিক এসিড পরীক্ষা ।
খ ) হেলারের ঠাণ্ডা নাইট্রিক এসিড পরীক্ষা ।
গ ) সালকো - সেলিসিলিক পরীক্ষা ।
নিম্নে এলবুমিনের জন্য , এসিটিক এসিড পরীক্ষা পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করা হইল । রি এজেন্ট ৫ % গ্লাসিয়াল এসিটিক এসিড । প্রথমে একটি পরিস্কার পরীক্ষা নলে / অংশ প্রস্রাব নিতে হইবে । তারপর উহার উপরের অংশে স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে তাপ দিতে হইবে । তাপ দেওয়ার পর যদি উপরের অংশে ঘোলাটে হয় তবে ৫ % গ্লাসিয়াল এসিটিক এসিড ৩-৫ ফোঁটা উক্ত পরীক্ষা নলে দিয়া পুনরায় তাপ দেওয়ার পরও যদি ঘোলাটে থাকিয়া যায় তবে এলবুমিন এর উপস্থিতি নির্দেশ করে ।
প্রশ্ন — প্রস্রাবে এলবুমিনুরিয়া হওয়ার কারণ কি কি ?
খ ) দাঁড়ানো অবস্থায় অধিকক্ষণ থাকিলে প্রস্রাবে এলবুমিন চলিয়া আসিতে পারে কিন্তু বসিয়া থাকিলে অন্তর্ধান হয় ।
গ ) দীর্ঘসময় ধরিয়া ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা ।
ঘ ) বিলম্বিত বয়সে গর্ভসঞ্চার । ·
ঙ ) অত্যধিক মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ ।
চ ) রক্তাল্পতা , পুরাতন হৃদরোগ , কিডনী রোগ প্রভৃতি ।
ছ ) কিডনী , যান্ত্রিক পরিবর্তন , পূঁজ উৎপাদনকারী প্রদাহ ।
জ ) রক্তপ্রস্রাব , মূত্রপাথুরী , ক্যান্সার ।
ঝ ) রোগ জীবাণু সংক্রমণে জ্বালাকর কিডনীতে এবং দেহে পারদ বিষাক্তকরণ প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - প্রস্রাবে শর্করা বা চিনির উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রস্রাবে শর্করার উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নিম্নে ব্যাখ্যা করা হইল । একটি পরীক্ষা নলে ৫ মি.লি. বেনেডিক্স দ্রবণ লইয়া উহার সহিত ৮ ফোঁটা প্রস্রাব ভাল ভাবে মিশাইতে হইবে । তারপর একটি স্পিরিট লাম্পে পরীক্ষা নলটি ২ মিনিট জোরালেভাবে উত্তপ্ত করিয়া ঠাণ্ডা করিলে যদি দেখা যায় । যে পরীক্ষা নলের নিচে তলানি পড়িয়াছে তবে উহাই শর্করার উপস্থিতি নির্দেশ করে । রঙ পরিবর্তনের চাইতে তলানি পড়াটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ । প্রস্রাবের ভিতর যদি অকজালেট , এসকরবিক এসিড বা এই জাতীয় বিরঞ্জক পদার্থ থাকে তবে রঙ পরিবর্তন হইতে পারে । ১৩৭ সবুজবর্ণ হইলে সুগার অর্ধ হইতে ১ % , হলুদ বর্ণ হইলে ২ হইতে ৩ % , এবং লালবর্ণ হইরে ৪ % এর উর্ধে সুগার আছে বুঝিতে হইবে ।
প্রশ্ন - প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি লিখ ।
উত্তর ঃ প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হইল । একটি পরীক্ষা নলে ১০ মি.লি. পরিমাণ প্রস্রাব লইয়া উহাকে এসিটিক এসিড দ্বারা অম্লীয় করিতে হইবে । তারপর একটি ২৫ পয়সা মুদ্রার উপর যতটুকু ফিনাইল হাইড্রোক্লোরিক এসিড ধরে ততটুকু নিতে হইবে এবং পরিমাণের দ্বিগুণ সোডিয়াম এসিটেট নিয়া ভালভাবে মিশ্রিত করিতে হইবে । যতক্ষণ পর্যন্ত উপাদানগুলো দ্রবীভূত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাপ দিতে হইবে । তারপর উহা ফিল্টার করিতে হইবে । পরীক্ষা নলটিকে একটি Boiling water bath এ আধা ঘণ্টা হইতে ১ ঘণ্টা রাখিয়া দিতে হইবে । এখন water bath এর সুইস বন্ধ করিয়া পরীক্ষা নলটিকে রুমের তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা হইতে দিতে হইবে । পরীক্ষা নলের নিচে যে তলানি পড়িবে উহাকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করিলেই গ্লুকোজের উপস্থিতি বুঝা যাইবে ।
প্রশ্ন - প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেট এর উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি লিখ ।
উত্তর : নিম্নোক্ত পরীক্ষা দ্বারা প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেটের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় । একটি পরীক্ষা , ভাগ প্রস্রাব নিয়া উহার উপরের অংশে স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে তাপ দিতে হইবে । তাহাতে উপরের অংশে ধোঁয়াটে ভাবের সৃষ্টি হইবে । কিন্তু যদি কয়েক ফোঁটা এসিডিক এসিড যোগ করার পর ধোঁয়াটে ভাবের বিলুপ্তি ঘটে তবে প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেটের উপস্থিতি বুঝাইবে । পুনরায় তাপ প্রয়োগের প্রয়োজনও হইতে পারে ।
0 মন্তব্যসমূহ