সাধারণ অবস্থা - কেইস টেকিং - চতুর্থ বর্ষ


সাধারণ অবস্থা - কেইস টেকিং - চতুর্থ বর্ষ



প্রশ্ন -  হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক কি কি পরীক্ষা করা হয় ? 

উত্তর  ঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর নিম্নলিখিত শারীরিক পরীক্ষাগুলি করা হয় এবং এই সব পরীক্ষা দ্বারা বহু তথ্য জ্ঞাত হওয়া যায় । 
১। পরিপাকযন্ত্র খাদ্যের রুচি , অরুচি , রুচি থাকা সত্ত্বেও শুকাইয়া যাওয়া , ক্ষুধা না থাকা , রাক্ষুসে ক্ষুধা , সামান্যতেই পেট ভর্তি হইয়া যাওয়া , অত্যধিক লবণ খাওয়া বা না খাওয়া , মিষ্টি , টক , চর্বি , প্রভৃতি খাদ্যের প্রতি রুচি , খাদ্য ঠাণ্ডা না গরম পছন্দ করে , কোন বিশেষ খাদ্য যেমন , মাংস , দুধ , শাক নবজ প্রভৃতির প্রতি আগ্রহ , পিপাসা বেশী না কম , ঢেকুর ও বমির প্রকৃতি , কোন বাদ্য বা পানীয় গ্রহণের পর পীড়ার বৃদ্ধি বা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়ে জানিতে হইবে । 
২। জিহ্বা- জিহ্বার অবস্থা কেমন , মুখাস্বাদ কেমন , পঁচা , তিক্ত , তামাটে বা স্বাদহীন , খাদ্যে স্বাদ পাওয়া যায় কিনা প্রভৃতি বিষয় জানিতে হইবে । 
৩। নাড়ী- নাড়ীর স্পন্দন কত , দেহের তাপমাত্রার সহিত নাড়ীর স্পন্দনের সম্পর্ক , প্রভৃতি জানা উচিত । 
৪। শ্বাসযন্ত্র- শ্বাসটের ধরণ , শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত কিনা , বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হয় কিনা , দম বন্ধ হইবার উপক্রম হয় কিনা , কাশি শুষ্ক না ঘড়ঘড়ে , কাশিলে সর্দি উঠে কিনা , কাশিতে রক্ত আসে কিনা , হাঁপানির টান আছে কিনা প্রভৃতি জানিতে হইবে । 
৫। মস্তিষ্ক- মাথা ব্যথা কেমন , মাথা দপদপ করে কিনা , মাথার খুলিতে বদনা হয় কিনা , বেদনা চক্ষু পর্যন্ত বিস্তৃত কিনা , হাতুড়ি মারার ন্যয় অনুভব হয় কিনা , মাথা ঘোরা আছে কিনা প্রভৃতি বিষয় জানিতে হইবে । 
৬। চর্ম- গাত্রচর্য তৈলাক্ত না শুষ্ক , সহজে ঘাম হয় কিনা , দেহের কোন স্থানে হাত পায়ের তালু , বগল , বুক , মুখমণ্ডল বেশী ঘামে , ঘর্ণের প্রকৃতি কেমন , গন্ধ বা বর্ণ কেমন , মাথার তালু , হাতের পায়ের তালু গরম বা জ্বালাবোধ হয় কিনা প্রভৃতি জানিতে হইবে । 
৭। প্রস্রাব প্রস্রাবের বর্ণ কেমন , শর্করাহীন বা শর্করাযুক্ত , প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয় কিনা , কখন হয় , প্রস্রাবে তলানি পড়ে কিনা , প্রস্রাব দ্বার চুলকায় কিনা , প্রস্রাব কতবার হয় , অসাড়ে হয় কিনা , প্রভৃতি জানিতে হইবে । 
৮। হস্তপদ- হাতের তালু পায়ের তালু ঘামে কি না , জ্বালাপোড়া হয় কিনা , ঠাণ্ডা না গরম , নখের অবস্থা প্রভৃতি জানিতে হইবে । 



প্রশ্ন - ভালভাবে রোগী পরীক্ষা না করিয়া ঔষধ নির্বাচন করা যায়  না - আলোচনা কর । 

উত্তর : যে কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচন করিতে গেলে ভালভাবে রোগী পরীক্ষা করিতে হইবে । রোগীর নিকটে বসিয়া প্রথমে তাহার অন্তর লক্ষণগুলি যেমন— শীতবোধ , মাথাধরা বা ঘোরা , হাত পা কামড়ানো , জিহ্বার স্বাদ , বুক জ্বালা , ডয় উদ্বেগ প্রভৃতি বিষয় জানিতে হয় । তার পর রোগের কারণ যেমন - ঠাণ্ডা লাগা , বৃষ্টিতে ভিজা , গুরুপাকদ্রব্য আহার , ভারী জিনিষ তোলা , অনিদ্রা , প্রাতঃকালে হ্রাসবৃদ্ধি , রাত্রে হ্রাসবৃদ্ধি , নড়াচড়ায় হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি জানিতে হইবে । বাহ্যিক লক্ষণগুলি যেমন দেহের তাপমাত্রা , নাড়ী , জিহ্বা , চর্ম , বক্ষ , মলমূত্র , রক্তচাপ প্রভৃতি পরীক্ষার দ্বারা দেখিতে হইবে । এই বিষয়ে জানিয়া চিকিৎসককে ঔষধ নির্বাচন করিতে হয় । 



প্রশ্ন -  রোগীর মুখমণ্ডল দেখিয়া দেহের অসুস্থতার বিষয় অনেকটা জানা যায় আলোচনা কর । 
বা , মুখমণ্ডলের ভাব প্রকাশ দেখিয়া কিভাবে সাধারণ রোগ নির্ণয় করা যায় ? 
বা , রোগীর মুখমণ্ডল দেহের অবস্থার দর্পণ স্বরূপ - আলোচনা কর । 

উত্তর : মুখমণ্ডল রোগীর আভ্যন্তরীন অবস্থার দর্পণস্বরূপ । মুখমণ্ডল দেখিয়া দেহের সুস্থতা অসুস্থতার বিষয়ে অনেকটাই জ্ঞাত হওয়া যায় । প্রসন্ন মুখ দেহের সুস্থতার পরিচয় বহন করে । ফুসফুসের তরুণ প্রদাহে মুখমণ্ডল চিন্তাযুক্ত , সংকুচিত ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । জ্বরের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাব থাকিলে মুখমণ্ডলের মলিনতা , কালবর্ণের ঠোঁট প্রভৃতি অবস্থা প্রকাশ পায় । মুখমণ্ডল লালাভ দেখাইলে জ্বর , বিবর্ণ , সাদা বা ফ্যাকাশে দেখাইলে শক , হেমারেজ বা এনিমিয়া , স্ফীত দেখাইলে মূত্ররোগ , নীলবর্ণ , দেখাইলে হৃদরোগ , কাশি বা শ্বাসনালীর অবরোধ , সদ্যজাত শিশুর মুখমণ্ডল নীলবর্ণ দেখাইলে সায়ানোসিস নিওনেটোরাম , পীত বা পীতাভ হলুদ দেখাইলে জন্ডিস , উদ্বিগ্ন দেখাইলে উদর সংক্রান্ত রোগ বা হৃদরোগ প্রভৃতি নির্দেশ করে । রোগীর মুখে হাসিখুশী ভাৰ থাকিলে বুঝিতে হইবে যে , রোগ ধীরে ধীরে হ্রাস পাইতেছে । 



প্রশ্ন - নাড়ী ( Pulse ) কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ হৃদপিণ্ডের নিলয়দ্বয়ের সিসটোলিক ও ডায়াসটোলিক চাপের পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ নিলয়দ্বয়ের সংকুচিত ও প্রসারিত হওয়ার ফলে ধমনীতে যে স্পন্দন সৃষ্টি হয় তাহাকে নাড়ী বলে । 


প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দন কাহাকে বলে ? 

উত্তর : নাড়ী স্পন্দন একপ্রকার ঙ্গে বিশেষ এবং ইহা রক্তচাপের দ্বারা সৃষ্টি হয় । নাড়ী স্পন্দন মহাধমনীতে নিলয়ের রক্ত উৎক্ষেপনের ফলে উৎপন্ন হইয়া রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয় । ইহার গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫ হইতে ৭ মিটার অগ্রসর হইতে পারে । এই গতিবেগ রক্ত প্রবাহ প্রাচীরের নমনীয়তা এবং রক্তের জড়তার উপর নির্ভরশীল । 


প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দনের তরঙ্গ সৃষ্টির কারণ লিখ । 

উত্তর  ঃ তিনটি কারণের জন্য নাড়ী স্পন্দনের তরঙ্গ সৃষ্টি হয় । যথা ধমনীর মধ্যে পরিপূর্ণ রক্ত থাকা অবস্থায় হৃদপিণ্ডের বার বার রক্ত নিক্ষেপ , প্রান্ত পীয় বাধা এবং ধমনী প্রাচীরের নমনীয়তা । 


প্রশ্ন - কোথায় কোথায় নাড়ী দেখা হয় ? 

উত্তর : সাধারণত হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগের সাহায্যে রোগীর হাতের কবজির সামনের দিকে রেডিয়্যাল ধমনীর নাড়ী গ্রহণ করা হইয়া থাকে । কবজি ছাড়াও কনুইয়ের সামনে কিউবিটাল ফসাতে ব্রাকিয়াল ধমনী , ঘাড়ে ক্যারোটিড ধমনী ও পপলিটিয়িাল ফসাতে পপলিটিয়াল ধমনীতে নাড়ী পাওয়া যায় । তাহা ছাড়া উরুর ভিতরের দিকে ফিমোরাল ধমনী এবং পায়ের পাতার উপরে । বৃদ্ধাঙ্গুলি ও দ্বিতীয়ার মাঝ বরবার মেটাটারসাল ধমনীতে নাড়ী অনুভব করা যায়। 


প্রশ্ন -  নাড়ী স্পন্দন অনুভবের বৈশিষ্ট্যের ফলাফল আলোচনা কর। 

উত্তর  ঃ রোগীর পরীক্ষার সময় নাড়ী স্পন্দনের যে চরিত্রগুলি অনুভূতির মাধ্যমে অনুভব করা যায় তা নিম্নে উল্লেখিত করা হইল । 
ক ) গতিমাত্রা ( Rate ) : প্রতি মিনিটে নাড়ী স্পন্দনের ঘটনা মাত্রাকে ( Frequency ) নাড়ী স্পন্দনের গতিমাত্রার হার বলে । বিশ্রাম কালে প্রতি মিনিটে ১০০ বার স্পন্দন নাড়ী স্পন্দনের স্বাভাবিক মাত্রা । স্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৬০ বার এর কম হইলে তাহাকে সাইনাস ব্রাডিকার্ডিয়া এবং ১০০ এর বেশী হইলে তাহাকে সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া বলে । 
খ ) ছন্দ ( Rhythum ) : ছন্দ বলিতে প্রতিটি ধর্মনীঘাত সমদূরবর্তী কিনা তাহা ইঙ্গিত দান করে । নাড়ী স্পন্দন অনুভব করার সময় স্পন্দন নিয়মিত না অনিয়মিত তাহা বুঝিতে হইবে । অনিয়মিত নাড়ী স্পন্দন হৃদরোগের ইঙ্গিত বহন করে । 
গ ) মান ( Volume ) : মান বলিতে প্রসারী চাপের সমতা হইতে নাড়ী স্পন্দনের বৃদ্ধির পরিমাণকে বুঝায় । ধাক্কার স্ফীতি যখন বলবান হয় তখন বুঝিতে হইবে বাম নিলয় দ্বারা রক্ত নিক্ষেপের পরিমাণ বেশী হইয়াছে । গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নাড়ী স্পন্দনের মান অপেক্ষাকৃত বেশী । হার্ট ফেলিওর , শক এবং রক্তে জলীয় অংশ কমিয়া গেলে রক্ত স্পন্দনের ঢেউয়ের ধাক্কা খুব ক্ষীণ হইয়া যায় । 
ঘ ) চাপ ( Tenison ) : চাপ বলিতে সংকোচী চাপের আসন্ন মানকে বুঝায় । নাড়ী স্পন্দনের চাপ আমাদের প্রসারী রক্ত চাপ সম্বন্ধে জানাইয়া দেয় । 



প্রশ্ন - একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি মিনিটে স্বাভাবিক নাড়ীর গতি কত ? বিভিন্ন বয়সের নাড়ীর স্পন্দনের হার উল্লেখ কর । 

উত্তর : একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭২ হইতে ৮০ বার । তাহা ছাড়া 
শিশুর জন্মকাল হইতে ১ বৎসর পর্যন্ত         ১২০ হইতে ১৪০ বার , 
গর্ভস্থ ভ্রুণের স্পন্দন                                     ১০১ বার, 
২ বৎসর হইতে ৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত             ৯০ হইতে ১১৫ বার ,
৬ বৎসর হইতে ১৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত        ৯০ হইতে ৮০ বার , 
১৬ বৎসর হইতে ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত     ৯৫ হইতে ৭০ বার ,
বৃদ্ধ বয়সে নাড়ীর স্পন্দন                             ৬৫ হইতে ৫০ বার



প্রশ্ন - নাড়ী স্পন্দনের গুরুত্ব বর্ণনা কর । 

উত্তরঃ নাড়ী স্পন্দনের যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । যথা 
১ ) নাড়ী স্পন্দনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড , ধমনী এবং রক্তচাপ সম্বন্ধীয় বহু তথ্য জানা যায় ।   
২ ) আঙ্গুলের অগ্রভাগের সাহায্যে নাড়ী স্পন্দনের অনুভব করা না গেলে ইহার রেখাচিত্রের মাধ্যমে বহু বিষয় জানা যায় । 
৩ ) সাধারণভাবে প্রান্তীয় বাধা ও হৃদপিণ্ডের হার কমিয়া গেলে এবং ঘাত পরিমাণ বৃদ্ধি পাইলে নাড়ী স্পন্দনের রেখাচিত্রের প্রাথমিক তরঙ্গটি বড় হয় । 
৪ ) প্রান্তীয় বাধা অত্যধিক বৃদ্ধি পাইলে , রক্তনালীর প্রাচীর কঠিন হইলে এবং হৃদস্পন্দনের হার যদি বাড়িয়া যায় এবং হৃদ উৎপাদ কমিয়া যায় তবে প্রাথমিক তরঙ্গটি ছোট হয় । 



প্রশ্ন - ডাইক্রোটিক এবং এ্যানাকরটিক নাড়ীস্পন্দন কাহাকে বলে ? 

উত্তর : ডাইক্রোটিক নাড়ী স্পন্দন- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দনের ক্ষেত্রে রেখাচিত্রে ডাইক্রোটিক খাঁজ অত্যন্ত গভীর থাকে এবং সেই সময় প্রান্তীয় বাধা কম থাকে । এই জাতীয় নাড়ী স্পন্দন টাইফয়েড রোগে পাওয়া যায় । এ্যানাকরটিক নাড়ী স্পন্দন- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন এ্যায়োটিক স্টেনোসিস রোগে পাওয়া যায় । এই ক্ষেত্রে এ্যায়োটিক কপাটিকাগুলি জুড়িয়া গিয়া বাম নিলয় ও মহাধমনীর সংযোগে মুখটি ছোট হইয়া যায় । রেখাচিত্রে এই নাড়ী স্পন্দনের ঊর্ধ্বমুখী রেখা অত্যন্ত ছোট এবং নাড়ী স্পন্দনের মান অত্যন্ত কম থাকে । এই ঊর্ধমুখী রেখার একটি খাঁজ পাওয়া যায় । 



প্রশ্ন - দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ কোন কোন রোগের নির্দেশক ? 

উত্তর : দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক । এনিমিয়া , অজীর্ণ , নিউরোসিস , স্নায়বিক চঞ্চলতা , ভেগাস স্নায়ুর পক্ষাঘাত , স্পাইনাল কর্ডের পীড়া , মাইট্রাল স্টেনোসিস , হৃদপিণ্ডের প্রসারণ , মূত্রযন্ত্রাদির পীড়া , আরক্ত জ্বর , ডিপথিরিয়া , পেরিটোনাইটিস , ধমনীর অর্বুদ , বাত ও সন্ধিবাত প্রভৃতি ।



প্রশ্ন - ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণত কোন কোন রোগের নির্দেশক?

উত্তর  ঃ ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক । শ্বাসকষ্ট , হৃদস্পন্দন , বক্ষ সংকোচনবোধ , বিবমিষা ও বমন , এনজাইনা প্রভৃতি । পেক্টোরিস , মেনিনজাইটিস , টাইফয়েড জ্বর , হৃদপিণ্ডের পক্ষাঘাত , জন্ডিস 



প্রশ্ন - অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দনের প্রকারভেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । 

উত্তর : অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ কারণের জন্য অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দন দেখা যায় । লক্ষণানুসারে ইহাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা যায় । নিম্নে অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দনের পরিচয় দেওয়া হইল । 
ক ) ওয়াটার হ্যামার নাড়ী স্পন্দন বা করিজেন্‌স নাড়ী স্পন্দনঃ মহাধমনীর ক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য নাড়ী স্পন্দনের উঠানামা অত্যন্ত গভীর ও আকস্মিক হয় । রেখাচিত্রের ডাইক্রোটিক তরঙ্গ বা খাঁজ থাকে না । এই ক্ষেত্রে নাড়ী স্পন্দনের মান বেশী থাকে । এই প্রকার অস্বাভাবিক নাড়ী স্পন্দন থাইরোটক্সিকোসিস পীড়া , রক্ত শূন্যতা ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ইহা দেখা যায় । 
খ ) পতনশীল নাড়ী স্পন্দন- মহাধমনীর কপাটিকা অসম্পূর্ণ হইলে মহাধমনীতে নিক্ষিপ্ত রক্তের কিছু পরিমাণ অংশ বাম নিলয়ে ফিরিয়া যায় । এই অবস্থায় স্পন্দন তরঙ্গ রেখচিত্র দ্রুত ঊর্ধমুখে উঠিয়া আবার দ্রুত নিচে পড়িয়া যায় । গ ) সাইনাস ছন্দ বিকার- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দনে নিঃশ্বাস গ্রহণকালে নাড়ী স্পন্দনের কম্পনাঙ্ক বাড়িয়া যায় এবং প্রশ্বাসের সময় ইহার হ্রাসপাপ্তি ঘটে । এই অবস্থা বয়স্কদের ক্ষেত্রে শয়নকালে ও শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় । 
ঘ ) পালসাস প্যারাডক্সাস- এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন শ্বাসনালীতে অসুবিধা থাকাকালীন এজমারোগে ও পেরিকার্ডিয়াল ইফিউসনে পাওয়া যায় । এই ক্ষেত্রে শ্বাসগ্রহণের সময় নাড়ী স্পন্দনের মান বেশ কমিয়া যায় । 
ঙ ) স্পন্দন পর্যায়ক্রম- হৃদপেশীর গুরুতর ক্ষয় বিকৃতিতে নাড়ী স্পন্দনের উর্ধমুখী রেখাচিত্র একবার বড় এবং একবার ছোট হইতে দেখা যায় । এই প্রকার নাড়ী স্পন্দন ডেন্ট্রিকুলার ফেলিওর ও হাইপারটেনশন রোগের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় । 
চ ) দুর্বল নাড়ী স্পন্দন প্রতিবার পেশী সংকোচনের বাম নিলয় মহা ধমনীতে স্বাভাবিক অপেক্ষা অল্প পরিমাণ রক্তকে নিক্ষেপ করিলে নাড়ী স্পন্দন দুর্বল হয় । 
ছ ) অত্যধিক নাড়ী স্পন্দন- মহাধমনীর কপাটিকা সংকীর্ণ বা সংকুচিত হইলে রেখচিত্রের তরঙ্গ প্রথমাবস্থায় উপরে উঠিয়া যায় এবং পরে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হইয়া যায় । ইহা ছাড়াও নাড়ী স্পন্দনের অস্বাভাবিক রূপ এ্যানাকরটিক ও ডাইক্রোটিক নাড়ী স্পন্দন ক্ষেত্রে দেখা যায় । 



প্রশ্ন - তাপমাত্রার সহিত নাড়ীস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সম্বন্ধ কি প্রকার লিখ । 

উত্তর  ঃ শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি না পাইলে নাড়ীর গতি বা শ্বাসের গতির পরিবর্তন দেখা যায় না । তাপমাত্রা যদি এক ডিগ্রী বৃদ্ধি পায় তবে নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০ বার বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ২ বার বৃদ্ধি পাইয়া থাকে । এই সময় শরীরের তাপ ৯৮.৪ ডিগ্রী হইলে নাড়ীর স্পন্দন ৭২ বার এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ১৮ হইতে ২০ বার পর্যন্ত হয় । অতঃপর শরীরের উত্তাপ বাড়িয়া যদি ১০০ ডিগ্রী হয় তাহা হইলে নাড়ীর গতি স্পন্দন ৯১ বার এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ২২ হইতে ২৩ বার হয় । মনে রাখিতে হইবে যে , একবার শ্বাস লইলে ৪ বার নাড়ী স্পন্দন হয় । 



প্রশ্ন - দেহে কিভাবে তাপ উৎপাদন হয় ? 

উত্তর : যে সব কারণে দেহে তাপ উৎপাদন হয় তাহা নিম্নে আলোচনা করা হইল । 
১ ) দেহে অক্সিডেশন ক্রিয়া- দিবারাত্র শরীরের কলকব্জা , সবযন্ত্র কাজ করে , অক্সিডেশন ক্রিয়া চলে অর্থাৎ অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন হইতেছে , ইহার দরুন দেহে তাপ সৃষ্টি হয় । 
২ ) আহার্যবস্তু বিপাক ক্রিয়া- দেহে প্রোটিন , কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্যের বিজারনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয় । যকৃত , মাংসপেশী ও দেহের অন্যান্য দেহাঙ্গ তাপ উৎপাদনে বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করে । প্রোটিন খাদ্যে সর্বাধিক মাত্রায় দেহে তাপ উৎপাদন হয় । 
৩ ) মৌল বিপাক হার দেহে মৌল বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপাদন 
8 ) পেশী সঞ্চালন ঐচ্ছিক পেশীতে তাপ উৎপাদন পেশী সক্রিয়তার সমানুপাতিক । 
৫ ) গরম খাদ্য ও পানীয় গরম খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ হইতেও দেহে তাপ উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায় । 
৬ ) শারীরিক পরিশ্রম- শারীরিক পরিশ্রমের ফলে দেহে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় । 
৭ ) বাহ্যিক তাপ- বাহিরের তাপ বেশী হইলে দেহের তাপ বেশী হয় । 
৮ ) উত্তেজনার ফল- রোগ ব্যাধিতে বেশী উত্তেজিত হইলে তাপ বেশী 



প্রশ্ন -  দেহ হইতে কিভাবে তাপ ক্ষয় হয় ? 

উত্তর : দেহ হইতে তাপ ক্ষয় পদ্ধতির বিভিন্ন উপায় নিম্নে আলোচনা করা 
১ ) নিঃশ্বাস প্রশ্বাস দ্বারা - ফুসফুস হইতে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনের সময় জলের বাস্পীভবন প্রক্রিয়া এবং প্রশ্বাসবায়ুর উষ্ণীকরণ প্রক্রিয়ায় দেহ হইতে তাপ ক্ষয় হইয়া থাকে । 
২ ) পরিবহন পদ্ধতি - চর্ম সরাসরি কোন শীতল পদার্থের সংস্পর্শে আসিলে এই পদ্ধতিতে তাপ ক্ষয় হয় । পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ায় তাপমাত্রা , জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ও বাতাসের গতিবেগের উপর দেহ হইতে তাপ ক্ষয় নির্ভর 
৩ ) পরিচলন পদ্ধতি- দেহের চারিদিকের বাতাসের তাপমাত্রা দেহ অপেক্ষা কম থাকিলে এই উপায়ে তাপ ক্ষয় হয় । 
৪ ) বিকিরণ পদ্ধতি— পারিপার্শ্বিক পদার্থের তাপমাত্রা দেহ অপেক্ষা নিম্নতর থাকিলে দেহ হইতে তাপ বিকিরণ হইতে থাকে । বিকিরণ পদ্ধতির মাধ্যমে দেহের তাপ ক্ষয় প্রধানত চর্ম উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল ।
৫ ) বাষ্পীভবন - ঘর্ম হইতে জল বাষ্পীভূত হইবার সময়কালে গাত্রতাপ ক্ষরণ হয় । এই পদ্ধতি সাধারণতঃ দেহ নিঃসৃত চর্মের বাষ্পীভবন এবং অতীন্দ্রিয় বাষ্পীভবন এই দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।   
৬ ) অতীন্দ্রিয় বাষ্পীভবন- ইহা একটি অদৃশ্য প্রক্রিয়া যাহার সাহায্যে চর্মে উপরিতল ও শ্বসনপথ হইতে অবিরাম জলের বাষ্পীভবন সম্পন্ন হয় । ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিম্ন উষ্ণতায় যখন ঘর্ম ক্ষরণ সম্ভবপর হয় না তখন প্রধানতঃ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের তাপ ক্ষয় হয় । 
৭ ) মলমূত্র ত্যাগের দ্বারা মলমূত্র ত্যাগের মাধ্যমে দেহের প্রায় ২ শতাংশ তাপ ক্ষয় হয় । 
৮ ) পোশাকের প্রভাবে দেহে পোষাক বেশী পরিধান করিলে তাপ ক্ষয় বেশী হয় না । তাই শীতের সময় পরিচ্ছদ দ্বারা তাপক্ষয় কমানো যায় । গ্রীষ্মকালীন পোষাক হালকা ও পাতলা বিধায় দেহের তাপ ছাড়িতে সহায়ক 



প্রশ্ন - দেহে কিভাবে তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ? বা , দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রণালী বর্ণনা কর । 

উত্তর : দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রণালী 
১ ) আভ্যন্তরীণ যন্ত্র হইতে বাহিরের চর্মে রক্ত চালাচালি হইয়া তাপসাম্য রক্ষিত হয় । চর্মের রক্তনালী সংকুচিত হইলে বহু রক্ত খোলের মধ্যে ও যন্ত্রে চলিয়া যায় । আর চর্মের সব রক্তনালী যদি প্রসারিত হয় তবে খোলের যন্ত্র হইতে বহু রক্ত চামড়ায় আসিয়া পড়ে । 
২ ) রক্তের ভলিউম ও আয়তনের কমবেশী হইলে তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় । দেহের তাপ বৃদ্ধি পাইলে রক্তের ভলিউম বাড়ে । পক্ষান্তরে তাপ কমিয়া গেলে রক্ত ঘন হয় ও রক্তের ভলিউম কমে । এইভাবে বেশী ও কম তাপে , রক্তের প্রবাহ ও ভলিউম কমবেশী হইয়া দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত হয় । 
৩ ) বাহিরের উত্তাপ বৃদ্ধি পাইলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় , ফলে দেহের তাপ বৃদ্ধি পায় । 
৪ ) যাহাদের শরীরে চর্বি বেশী আছে তাহাদের তাপ সহজে বাহির হয় না , তাই অল্প গরমে কাতর হয় , কিন্তু বেশী ঠাণ্ডা অনায়াসে সহ্য করিতে পারে । 
৫ ) আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাস তাপ বিকিরণ করে ।
৬ ) ঘাম দেহে শুকাইয়া গেলে তাপ ক্ষয় হয় । যখন ঘাম ঝরে , গায়ে শুকায় না তখন তাপ ক্ষয় হয় না । শুদ্ধ বাতাসে ঘাম উঠিয়া গিয়া দেহ শীতল করে । 
৭ ) শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ও চর্ম দিয়া যে সূক্ষ্ম জলীয়কণা নির্গত হয় তাহাতে অজ্ঞাতসারে দেহের তাপ কিছুটা কমিয়া যায় । 
৮ ) মলমূত্র ত্যাগের ফলে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত হইতে নির্গত হইবার সময় কিছু তাপ ক্ষয় হয় । ৯ ) দেহের তাপ উৎপাদন ও তাপক্ষয়ে থাইরয়েড গ্রন্থি , অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি , পিটুইটারী গ্রন্থি , আইলেটস অব ল্যাঙ্গার হ্যান্স প্রভৃতি অন্তঃক্ষরাগ্রন্থিগুলি তাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 



প্রশ্ন - সুস্থাবস্থায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ? 

উত্তর : সুস্থাবস্থায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা জিহ্বায় ৩৬.৯ ° সেঃ বা ৯৮.৪ ° ফাঃ , বগলে ৯৭.৪ ° ফাঃ এবং মলদ্বারে ৯৯.৪ ° ফাঃ । 



প্রশ্ন -  কোথায় কোথায় তাপ দেখা হয় ? 

উত্তর : জিহ্বায় , বগলে ও মলদ্বারে তাপ দেখা হয় । 


প্রশ্ন - দেহের তাপ কিভাবে নিরুপণ করা হয় ? দেহের তাপ কম বা বেশী হইলে কি কি রোগ নির্দেশ করে ? 

উত্তর : ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার দ্বারা দেহের উষ্ণতা বা তাপ নির্ণয় করা হয় । ইহাতে ৮৫ ° ফাঃ হইতে ১১০ ° ফাঃ পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে । সাধারণ অবস্থায় বগলের তাপ ৯৭ ° এবং জিহ্বার নিচে ৯৮ ° ফাঃ । বালক বালিকাদের তাপ যুবকদের চাইতে বেশী থাকে । চল্লিশ বৎসর পার হইলে দেহের তাপ হ্রাস পায় । শরীরের তাপ ২-৩ ডিগ্রীর বেশী হইলে জ্বর বুঝায় । ম্যালেরিয়া , মেনিনজাইটিস , সেপটিক জ্বরে দেহের তাপ ১০০ ° ফাঃ পর্যন্ত উঠে । টাইফয়েড জ্বরে ১০৫ ° ফাঃ ভয়াবহ কিন্তু ম্যালেরিয়াতে তাহা নহে । ৯০ ° ফাঃ এর নিচে গাত্রতাপ হইলে তাহা অবসাদ বা মৃত্যুর ভয় বুঝিতে হইবে । ঘুম এবং বিশ্রামকালে দেহের উষ্ণতা কিছু কম হয় । সাধারণত শরীরের উষ্ণতা ৯৯ ° ফাঃ উঠিলে বা ৯৭ ° ফাঃ এর নিচে নামিলে কোনরূপ পীড়া হইয়াছে বুঝিতে হইবে । 



প্রশ্ন - গাত্ৰতাপ রোগের প্রকৃত অবস্থার মানদণ্ড - আলোচনা কর । 

উত্তর : দেহের তাপমাত্রা ১০৮.৬ ° হইতে ১১০ ° ডিগ্রী পর্যন্ত প্রায়শঃ মৃত্যু । ১০৭ ° ডিগ্রী ম্যালেরিয়া জ্বর ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে মারাত্মক । ১০৬ ° ডিগ্রী অত্যস্ত ( Intense ) জ্বর , ১০৫ ° ডিগ্রী উচ্চ জ্বর ( Hyper pyrexia ) , ১০৪ ° ডিগ্রী , প্রচণ্ড জ্বর ( Severe ) , ১০২ ° পর্যন্ত নাতিপ্রখর ( Moderate ) জ্বর , ১০১ ° ডিগ্রী মৃদু জ্বর , ৯৮.৪ ° ডিগ্রী স্বাভাবকি তাপমাত্রা , ৯৬.৬ ° ডিগ্রী হইতে ৯৪ ডিগ্রী তাপমাত্রা অতিশয় অবসন্নতা বা কোলান্স , ৯৪ ° ডিগ্রীর হ্রাসপ্রাপ্ত তাপমাত্রা হিমাঙ্গ , ৯৩ ° ডিগ্রী তাপমাত্রা কলেরা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে মারাত্মক কোলান্স এর ইঙ্গিত প্রদান করে । 


প্রশ্ন -  শ্বাসপ্রশ্বাস বলিতে কি বুঝায় ? 

উত্তর : শ্বাসপ্রশ্বাস একপ্রকার ফিজিকো কেমিক্যাল প্রসেস যাহা দ্বারা রক্তের উপস্থিতিতে জৈবকলার মধ্যে বায়বীয় পদার্থের বিনিময় হয় । পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডল হইতে ফুসফুসে বাতাসের প্রবেশকে প্রশ্বাস এবং ফুসফুস হইতে নাসারন্ধ্র পথে বাতাসের মুক্তিকে নিঃশ্বাস বলে । পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডল হইতে ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ এবং ফুসফুস হইতে বায়ু নির্গমনকে শ্বাসকার্য বলে । 


প্রশ্ন - সুস্থাবস্থায় আমরা প্রতি মিনিটে কতবার শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া সম্পাদন করি ? 

উত্তর : সুস্থাবস্থায় আমরা প্রতিমিনিটে ১৮ হইতে ২০ বার শ্বাসপ্রশ্বাস নিই । ৫ বৎসরের ছোট শিশুরা ২৫ হইতে ৩০ বার এবং নবজাত শিশুরা ৪০ বার নিয়া থাকে । 


প্রশ্ন - শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক শব্দ কয়টি ও কি কি বর্ণনা দাও । 

উত্তর : শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক শব্দ দুই প্রকার । যথা 
১ ) ভিজিকুলার শব্দ , 
২ ) ব্রঙ্কিয়াল শব্দ । 
১ ) ভিজিকুলার শব্দ— স্বাভাবিক অবস্থায় ফুসফুসের মধ্যে বাতাস প্রবেশ ও .ফুসফুস হইতে বাতাস বাহির হওয়ার সময় যে শব্দ হয় তাহাকে ভিনিকুলার শব্দ বলে । ইহা মৃদু শব্দ । শ্বাস গ্রহণের শব্দ শ্বাসত্যাগের শব্দের চাইতে বেশী এবং শ্বাস গ্রহণের শব্দ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কোন ফাঁক না দিয়াই শ্বাস ত্যাগের শব্দ আরম্ভ হয় । 
২ ) ব্রঙ্কিয়াল শব্দ— স্বাভাবিক অবস্থায় ট্রাকিয়া ও ব্রঙ্কাইয়ের মধ্যে বায়ু চলাচলের জন্য যে শব্দ হয় তাহাকে ব্রঙ্কিয়াল শব্দ বলে । ইহাতে শ্বাস গ্রহণের শব্দ ও শ্বাসত্যাগের শব্দ সমান অথবা শ্বাস গ্রহণের শব্দের চাইতে শ্বাস ত্যাগের  শব্দ বেশী এবং শ্বাস গ্রহণের শব্দ শেষ হইলে কিছু সময় ফাঁক দিয়া শ্বাসত্যাগের শব্দ আরম্ভ হয় । 



প্রশ্ন -  শ্বাসপ্রশ্বাসের অস্বাভাবিক শব্দ কয়টি ও কি কি ? 

উত্তর : পীড়াগ্রস্ত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসের তিনটি অস্বাভাবিক শব্দ পাওয়া যায় । যথা 
১ ) রঙ্কাই ( Ronchi ) 
২ ) ক্রিপিটেশনস ( Cripitations ) 
৩ ) রাব ( Rub ) 
১ ) রঙ্কাই ( Ronchi ) : যখন শ্বাসনালী স্বাভাবিক হইতে ' সরু হয় তখন ‘ কুন কুন ' শব্দ রঙ্কাইর সৃষ্টি হয় । উহা শ্বাসনালীর ভিতরের আবরণী মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ , শ্বাসনালীর গায়ে লাগিয়া থাকা আঠালো কফ বা শ্লেষ্মার ফলে অথবা ব্রঙ্কিয়াল মাসল সংকোচনের ফলে হইতে পারে । শ্বাসনালীর পরিসরের অনুপাতে উচ্চ , মধ্যম বা নিচু স্বরের অর্থাৎ হাই পিচ্‌ড ( High Pitched ) , মিডিয়াম পিচ্‌ড ( Medium Pitched ) , এবং লো পিচ্‌ড ( Low pitched ) রঙ্কাই হইতে পারে । 
২ ) ক্রিপিটেশন্স ( Crepitations ) : পানির মধ্যে বুদবুদ উঠিলে বা পচা ডোবায় পা দিলে যেমন পচ পচ শব্দ হয় , শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরণের শব্দ হইলে তাহাকে ক্রিপিটেশনস বলে । এলভিওলি , ব্রঙ্কাস বা কেভিটির মধ্যে যখন জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হয় তখন শ্বাস প্রশ্বাসের দরুন উহাদের মধ্যে আর্দ্র শব্দ বা ক্রিপিটেশনস এর সৃষ্টি হয় । উহারা ছোট ছোট বা ফাইন ( Fine ) , মধ্যম ধরনের বা মিডিয়াম ( Medium ) , বড় আকারের বা কোর্স ( Coarse ) হইতে পারে । 
৩ ) রাব ( Rub ) : মাথার কিছু চুল দুই আঙ্গুলের মধ্যে লইয়া ঘর্ষণ করিলে যে শব্দ হয় , শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের শব্দ হইলে তাহাকে রাব বলে । 




প্রশ্ন - কোন্ কোন্ রোগে রঙ্কাই এবং ক্রিপিটেশনস পাওয়া যায় ? 

উত্তর  ঃ নিম্নলিখিত রোগে রঙ্কাই এবং ক্রিপিটেশনস পাওয় যায় । 
রঙ্কাই— ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানি , ড্রাই পুরিসি , ল্যারিনজাইটিস , এম্পাইজিমা প্রভৃতি রোগের রঙ্কাই পাওয়া যায় ।
 ক্রিপিটেশনস- ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস , এস্পায়েমা , নিউমোনিয়া , যক্ষ্মা , পুরাল এফিউশন প্রভৃতি রোগে ক্রিপিটেশনস পাওয়া যায় । 



প্রশ্ন - চেনী স্টোকী শ্বাসপ্রশ্বাস সম্বন্ধে আলোচনা কর । 

উত্তর : শ্বাস প্রশ্বাসের ছন্দ বিশৃঙ্খলা এবং পুনঃপুনঃ তাহার চক্রবৎ পরিবর্তনকে চেনী স্টোকী শ্বাসপ্রশ্বাস বলে । ইহাতে শ্বাস প্রশ্বাসের একপ্রকার বিচিত্র ছন্দ বিশৃঙ্খলা এবং পুনঃপুনঃ তাহার চক্রবৎ পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । ইহাতে রোগীর ধীর ও অগভীর শ্বাস প্রশ্বাসের সংখ্যা পর পর স্তরে স্তরে ছন্দোবদ্ধভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া একটি নির্দিষ্ট সীমায় উপস্থিত হয় । তৎপরে ধীরে ধীরে ক্রমশঃ হ্রাস প্রাপ্ত হইয়া পূর্বাবস্থায় উপনীত হইয়া কয়েক সেকেণ্ড অস্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ স্তব্ধ থাকিবার পর পুনঃ পুনঃ চক্রবৎ এই প্রকার বৃদ্ধি , হ্রাস এবং নিস্তব্ধতার সংঘটন হইতে থাকে । প্রত্যেক চক্রে ১২ হইতে ২০ বার এইরূপ শ্বাস প্রশ্বাস সংঘটিত হয় , ইহা অতি অশুভ লক্ষণ । প্রত্যেক চক্রে শ্বাস প্রশ্বাসের সংখ্যা যতই বর্ধিত হয় , তাহা ততই রোগের গুরুতর অবস্থা নির্দেশ করে । মস্তিষ্কে রক্তস্রাব , মস্তিষ্কের স্ফোটক , মস্তিষ্কে অর্বুদ মেনিনজাইটিস , পেরিটোনাইটিস , এন্ডোকার্ডাইটিস , ক্রনিক নেফ্রাইটিস প্রভৃতি রোগে এইরূপ শ্বাস প্রশ্বাস সংঘটিত হয় । 




প্রশ্ন -  বায়টস শ্বাসপ্রশ্বাস সম্বন্ধে আলোচনা কর । 

উত্তর  ঃ দুই তিনবার অতি দ্রুত ও ক্ষুদ্র শ্বাস প্রশ্বাসের পর রোগী কয়েক সেকেণ্ড হইতে আধা মিনিট কাল নিস্তব্ধ থাকিয়া পুনরায় ঐরূপ শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে এইরূপ পুনঃ পুনঃ হইতে থাকে । ইহা প্রায়শঃ মেনিনজাইটিস রোগে সংঘটিত হয় বলিয়া এইরূপ শ্বাসপ্রশ্বাসকে মস্তিষ্কঝিল্পী প্রদাহজনিত শ্বাসপ্রশ্বাসও বলে । কখনও কখনও নিদ্রাকালে এইরূপ শ্বাসপ্রশ্বাস সংঘটিত হইতে দেখা যায় । 



প্রশ্ন - অ্যানক্সিয়া কাহাকে বলে ? 

উত্তর : অ্যানক্সিয়া অর্থ অক্সিজেনের অভাব । সাধারণতঃ টিসুতে অক্সিজেনের অভাব হইলে যে অবস্থা দেখা দেয় তাহাকে অ্যানক্সিয়া বলা হয় । শ্বাসপ্রশ্বাসে নানা অসুবিধা হইলে অথবা রক্তে কোন রোগ হইলে টিসুতে অ্যানক্সিয়া দেখা দেয় ।
 


প্রশ্ন - প্রশ্বাস বায়ু , নিঃশ্বাস বায়ু ও বায়ুস্থলীর বায়ুর উপাদান লিখ । 

উত্তরঃ প্রশ্বাসবায়ু , নিঃশ্বাস বায়ু ও বায়ুস্থলীর বায়ুর উপাদান উপাদান 



প্রশ্ন - শ্বাস প্রশ্বাস কোন্ অবস্থায় কমবেশী হয় ? 

উত্তর : নিম্নলিখিত অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাস কমবেশী হইয়া থাকে । ১৪.৮ % ৫.৫ % ৮০.৩ % ৬২ % ১ ) নবজাতকের ৪০ হইতে ৭০ বার শ্বাসক্রিয়া দেখা যায় । 
২ ) শিশুদের গভীর নিদ্রাকালে , অনেক সময় চেইন স্টোক ব্রিদিং ( মাঝে মাঝে কমে আবার ঘন হয় ) দেখা দেয় । 
৩ ) বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শ্বাস সংখ্যা কমে , যৌবনে মিনিটে ১৭/১৮ বার হয় । বৃদ্ধকালে কিছু কম হয় । 
৪ ) শুইয়া থাকিলে কিছু কম , বসিলে একটু বাড়ে, দাঁড়াইলে আরও বাড়ে, দৌড়াইলে বেশী বাড়ে। 
৫) দীর্ঘাকৃতি লোক অপেক্ষাকৃত কমবার শ্বাস নেয়, তার কারণ সম্ভত তাহাদের বৃহৎ ফুসফুসে অনেক বায়ু ধরে। 
৬) শ্রমকালে শ্বাসবাড়ে, নিদ্রাকালে কমে। 
৭) জ্বর হইলে শ্বাসক্রিয়া দ্রুত চলে। 
৮) ভাব প্রবণতা ও হিষ্টিরিয়া কেসে শ্বাসের নানারুপ বিকার দেখা দেয়। 



প্রশ্ন -  শ্বাসবায়ুর পরিমাণ কত ? 

উত্তর : মাঝারি রকমের ফোলানো বুকে ১৮০ কিউবিক ইঞ্চি হাওয়া ধরে । কিন্তু সাধারণতঃ আমরা প্রতি নিশ্বাসে মাত্র ৩০ কিউবিক ইঞ্চি ( ৬ ভাগের ১ ভাগ ) হাওয়া নিয়া থাকি । অর্থাৎ শয়নকালে যদি আমরা মিনিটে ১৬ বার শ্বাস গ্রহণ করি তবে প্রতি মিনিটে ৪৮০ কিউবিক ইঞ্চি , শারীরিক শ্রমকালে ৯৬০ কিউবিক ইঞ্চি এবং লম্বা দৌড় দিবার সময় মিনিটে ৩০০০ কিউবিক ইঞ্চি বায়ু নিয়া থাকি । 



প্রশ্ন - ডেড স্পেস এয়ার কাহাকে বলে ? 

উত্তর : শ্বাসত্যাগের পরও নাসিকা , ফ্যারিংস , ট্রেকিয়া , ব্রঙ্কাই , গলা , প্রভৃতি অংশে যে বায়ু থাকিয়া যায় তাহাকে ডেড স্পেস এয়ার বলে । গড়ে ইহার পরিমাণ ১৫০ সিসি ধরা হয় । 




প্রশ্ন - ভাইটাল ক্যাপাসিটি কাহাকে বলে ? 

উত্তর : ইহার অর্থ হইল শ্বাস ধারণ শক্তি । সবচেয়ে জোরে জোরে চাপ দিয়া যদি শ্বাস গ্রহণ করিয়া পরে ধীরে ধীরে যতটা সম্ভব মোট নিঃশ্বাস ত্যাগ করা যায় তাহাকে ভাইটাল ক্যাপাসিটি বলে । এক কথায় ডাইটাল ক্যাপাসিটি = ভাইটাল এয়ার + কমপ্লিমেন্টারী এয়ার + সাপ্লিমেন্টারি এয়ার । ইহার মোট পরিমাণ ৩৪০০-৫০০০ সিসি । খেলোয়াড়দের ভাইটাল ক্যাপাসিটি বেশী হয় । পুরুষদের ক্যাপাসিটি নারীদের চাইতে বেশী হয় । 



প্রশ্ন - কমপ্লিমেটারী এয়ার , সাপ্লিমেন্টারী এয়ার , রেসিডুয়াল এয়ার ও রিজার্ড এয়ার কাহাকে বলে ? 

উত্তর : ১ ) কমপ্লিমেন্টারী এয়ার স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহণের পরও যে অতিরিক্ত পরিমাণ বায়ু সবচেয়ে চাপ দিয়া নিঃশ্বাস নিলে গ্রহণ করা যায় তাহাকে কমপ্লিমেন্টারী এয়ার বলে । ইহার পরিমাণ ২৮০০-৩৫০০ সিসি । 
২ ) সাপ্লিমেন্টারী এয়ার স্বাভাবিক শ্বাসত্যাগের পরও জোরে জোরে শ্বাস ত্যাগ করিলে যতটা অতিরিক্ত বাতাস ফুসফুস হইতে বাহির করিয়া দেওয়ার যায় তাহাকে সাপ্লিমেন্টারী এয়ার বলে । ইহার পরিমাণ ১৫০০ সিসি । 
৩ ) রেসিডুয়াল এয়ার দীর্ঘ প্রশ্বাসেও যে বায়ু বাহির হয় না ভিতরে থাকিয়া যায় তাহাকে রেসিডুয়াল এয়ার বলে । ইহার পরিমাণ ১৫০০ সিসি ।
 ৪ ) রিজার্ভ এয়ার স্বাভাবিক শ্বাসত্যাগের পর ফুসফুসে যে বায়ু অবশিষ্ট থাকে , এবং ইচ্ছা করিলে বাহির করিয়া দেওয়া যায় ইহাকে রিজার্ভ এয়ার বলে । ইহার পরিমাণ ১৫০০ সিসি । 




প্রশ্ন - শ্বাসরোধ কাহাকে বলে ? ইহার কারণ কি কি ? 

উত্তর : শ্বাসরোধ— যদি কোন অবস্থায় বা কোন কারণ বশতঃ প্রাণীর রক্তে কিছুক্ষণের জন্য স্বাভাবিক বায়ু প্রবেশ করিতে না পারে এবং রক্তের অক্সিজেন সংপৃক্তি খুব বেশী পরিমাণ হ্রাস পায় তবে ঐ প্রাণী কিছু কিছু রোগলক্ষণ প্রকাশ করে অবশেষে মারা যায় । ঐ সকল লক্ষণের অভিব্যক্তিকে সমষ্টিগতভাবে শ্বাসরোধ বলে । শ্বাসরোধের কারণ  ঃ 
১ ) গলা টিপিয়া ধরা । 
২ ) শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা । 
৩ ) দেহের কোন অঙ্গের রক্ত প্রবাহে হঠাৎ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া । তিনটি অবস্থায় শ্বাস রোধ ঘটিতে পারে 
ক ) অক্সিজেনের অভাব এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য । অক্ষত অবস্থায় প্রাণীটির দেহ থাকা আবশ্যক । তাহা না হইলে সাইনো এয়োটিক স্নায়ু কাটিয়া দিলে সাধারণ শ্বাসরোধের লক্ষণাবলী প্রকাশ পাইবে না । 
গ ) রক্তের মধ্যে স্বাভাবিক বায়ু প্রবেশে কিছুক্ষণ ব্যাঘাত ঘটাইতে হইবে । উপরোক্ত তিনটি অবস্থা বিদ্যমান থাকিলে শ্বাস রোধের লক্ষণাবলীর পরিষ্কার চিত্র দেখিতে পাওয়া যায় । 




প্রশ্ন - এপ্লনিয়া ও হাইপারপনিয়া কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ ১ ) এপ্লনিয়া বা শ্বসন বিরতি ( Apnonea ) : নিঃশ্বাস প্রশ্বাস প্রতিক্রিয়ার খঅনিক বিরতিকে শ্বসন বিরতি বলা হয় । সাময়িক শ্বসন বিরতি বিভিন্ন অবস্থায় পরিলক্ষিত হয় । রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পার্শ্বচাপের হ্রাস , খাদ্য গলাধকরণ , হঠাৎ রক্তচাপ বৃদ্ধি , ভেগাস স্নায়ুস্থিতি সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতে উদ্দীপনা প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে শ্বসন বিরতি ঘটে । 
২ ) হাইপারগনিয়া বা বর্ধিত শ্বসন : নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়ার বৃদ্ধিকে বর্ণিত শ্বসন বলা হয় । অক্সিজেন গ্রহণ বা কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন পরিমাণগত ভাবে বৃদ্ধি পায় । বর্ধিত শ্বসনের জন্য দায়ী - পেশী সঞ্চালন , রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য , অক্সিজেনের অভাব , স্বতঃপ্রবৃত্ত মানসিক আবেগ ইত্যাদি কারণে শ্বাসকেন্দ্রের উপর গুরুমস্তিষ্কের প্রভাব , কর্ম উদ্দীপনা হইতে উৎপন্ন প্রতিবাহ , রক্তচাপের হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি । 



প্রশ্ন - ডিসপোনিয়া বা ক্লেশদায়ক শ্বসন কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ শ্বাসক্রিয়ার বৃদ্ধি যখন অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক হয় তখন ইহাকে ক্লেশদায়ক শ্বসন বলে । ফুসফুসীয় বায়ু চলন যখন স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪ হইতে ৫ গুণ বাড়িয়া যায় এবং বায়ু ধারকত্বের সমপর্যায়ে উন্নীত হয় সেই সময় ক্লেশদায়ক শ্বসন আরম্ভ হয় । শ্বাসকেন্দ্রের অত্যধিক সক্রিয়তা সাধারণতঃ ক্লেশদায়ক শ্বসনের জন্য দায়ী । ক্লেশদায়ক শ্বসনের কারণ হইল - অক্সিজেনের অভাব , রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য , হাইড্রোজেন আয়নের তীব্রতা বৃদ্ধি , গুরুমস্তিষ্কস্থিত স্নায়ুকেন্দ্র অন্তরযন্ত্র বা দেহের অন্যান্য অংশ হইতে উৎপন্ন স্নায়ু উদ্দীপনা । 



প্রশ্ন -  কি ধরণের শ্বাসপ্রশ্বাস অশুভ ? বয়স অনুসারে শ্বাস প্রশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ ? 

উত্তর : সুস্থ শরীরে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজে ও ধীরে ধীরে এবং নিঃসব্দে সম্পন্ন হওয়া শুভ লক্ষণ । কিন্তু ঘন ঘন হওয়া অশুভ লক্ষণ । বুকের বা ফুসফুসের পীড়ায় শ্বাসের গতি বৃদ্ধি হয় , দুর্বল অবস্থায় কমে । নিউমোনিয়া , হাঁপানি প্রভৃতি রোগে শ্বাসপ্রশ্বাস ঘনঘন হইতে পারে । হাঁপানিতে দমবন্ধ ভাব থাকে । তাই রোগীর শ্বাস প্রশ্বাসের লক্ষণটি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । বয়স অনুসারে শ্বাসপ্রশ্বাস কিরূপ হইতে পারে তাহার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হইল -
প্রশ্ন - জিহ্বা পরীক্ষাকালে কোন্ কোন্ বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখিতে হইবে ? 

উত্তর  ঃ জিহ্বা পরীক্ষাকালে উহার আকৃতি ও গঠন , বর্ণ , আর্দ্রতা বা শুষ্কতা , আবরণাদি এবং তাহার উপর কোন ফাটল , ক্ষত , উদ্ভেদ , স্ফীতি প্রভৃতি আছে কিনা তাহা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । 




প্রশ্ন - জিহ্বার অবস্থা বা বর্ণ হইডে রোগ সম্বন্ধে কি কি বিষয় - জানা যায় ? 
বা , জিহ্বা পরীক্ষা করিয়া কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় ? 

উত্তর : রোগীর জিহ্বা পরীক্ষা করিয়া অনেক সময় রোগ নির্ণয় করিতে সহজ হয় । রোগ না হইলে জিহ্বা পরিস্কার ও সরস থাকে । জিহ্বা শুষ্ক হইলে বুঝিতে হইবে রোগীর তরুণ জ্বর বা টাইফয়েড বা স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দিয়াছে । জিহ্বার প্রান্ত ও অগ্রভাগাদি আরক্ত বা উহার মধ্যভাগ লাল ও শুষ্ক রেখাঙ্কিত দেখাইলে টাইফয়েড ও পাকাশয়িক জ্বর বুঝায় । জিহ্বার বর্ণ লাল দেখিলে বুঝিতে হইবে রোগী পাকস্থলী পীড়ায় বা স্ফোটক জ্বরে ভুগিতেছে । আরক্ত জ্বরে জিহ্বা সাদা লেপযুক্ত হয় এবং তাহার উপর দানাযুক্ত লালবর্ণের হয় । পৈত্তিক জ্বরে জিহ্বার বর্ণ ফ্যাকাশে হইয়া উঠে । পাকাশয়ের গোলযোগ এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দিলে জিহ্বার উপর সাদা লেপ পড়ে । হলদে বর্ণের লেপ জিহ্বায় পড়িলে বুঝিতে হইবে যে রোগীর পিত্ত নিঃসৃত হইতেছে বা যকৃত যন্ত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়াছে । নীলবর্ণের জিহ্বা দেখিতে বুঝিতে হইবে যে রোগীর রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হইতেছে । আমাশয় রোগ ভোগ করিবার সময় যদি দেখা যায় জিহ্বার বর্ণ কালো হইয়া উঠিতেছে তখন বুঝিতে হইবে রোগী আর বাঁচিবেনা । ন্যাবা রোগে জিহ্বার রঙ কালো লেপযুক্ত হইলে জানিতে হইবে যে রোগী যকৃতের গভীর যান্ত্রিক পীড়ায় ভুগিতেছে । বসন্ত রোগে জিহ্বার বর্ণ কালো হওয়া অশুভ লক্ষণ । অজীর্ণতা দেখা দিলে জিহ্বায় ঘা হয় বা দাগ পড়ে । শিরায় রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হইলে জিহ্বার রঙ কাল বা বেগুনী হইয়া উঠে । 



প্রশ্ন -  জিহ্বার পরিপাক যন্ত্রের দর্পণ স্বরূপ - আলোচনা কর । 

উত্তর  ঃ রোগ নির্ণয়ে জিহ্বা প্রধান ভূমিকা পালন করে । দর্পনের ন্যায় পরিপাকযন্ত্রের স্বাভাবিক অস্বাভাবিক অবস্থা জিহ্বার বর্ণ দেখিয়াই চিকিৎসক বলিতে পারেন । তাই জিহ্বাকে পরিপাক যন্ত্রের দর্পণ স্বরূপ বলা হয় । যেমন অতিরিক্ত রক্তবর্ণ জিহ্বা পাকস্থলীর রোগের নির্দেশক । জিহ্বায় ঘা বা দাগ থাকিলে তাহা পরিপাক যন্ত্রের ক্রিয়ার গোলযোগ নির্দেশ করে । জিহ্বা সাদা ময়লা থাকিলে পেটের রোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা প্রকাশ করে । আবার কলেরায় এবং পাকস্থলীর কোমলতন্ত্রর ধ্বংসে জিহ্বা সীসকবর্ণ ধারণ করে । জিহ্বা হরিদ্রা বর্ণ ধারণ করিলে জন্ডিস রোগাবস্থা নির্দেশ করে । অজীর্ণতা দেখা দিলে জিহ্বায় ঘা হয় বা উহাতে দাগ পড়ে । এইভাবে আমরা জিহ্বা দেখিয়া পরিপাকযন্ত্রের অবস্থা সম্বন্ধে জানিতে পারি । কাজেই জিহ্বাকে আমরা পরিপাক যন্ত্রের দর্পন স্বরূপ আখ্যায়িত করিতে পারি । 




প্রশ্ন -  বিভিন্ন মায়াজমের জিহ্বার স্বাদ বর্ণনা কর । 

উত্তরঃ বিভিন্ন মায়াজমের জিহ্বার স্বাদ নিম্নে বর্ণনা করা হইল 
সোরার জিহ্বার স্বাদ- সোরার মুখে নানা প্রকার স্বাদ টক , মিষ্টি , বিস্বাদ বা তিক্ত । এমনকি কখনও কখনও ভুক্তখাদ্য পানীয়ের অবিকল স্বাদযুক্ত ঢেকুর উঠে । কখনও কখনও সকল খাদ্যদ্রব্যই পোড়া আস্বাদ বোধ হয়। 
সিফিলিসের জিহ্বার স্বাদ- সিফিলিসের মুখে ধাতবদ্রব্যের স্বাদ পাওয়া যায় , বিশেষ করিয়া তাম্র ধাতুর ন্যায় স্বাদ পাওয়া যায় । 
সাইকোসিসের জিহ্বার স্বাদ- সাইকোসিসের মুখাস্বাদ মাছের আঁইশের গন্ধযুক্ত অথবা বিস্বাদ ।
টিউবারকুলারের জিহ্বার স্বাদ-- টিউবারকুলারের মুখে পূঁজ ও রক্তের স্বাদ , কফস্রাব মিষ্টি , সময়ে সময়ে লবণাক্ত বা ডিম পচার ন্যায় স্বাদযুক্ত কিংবা একেবারেই স্বাদহীন ।




প্রশ্ন -  রোগীর শয়নভঙ্গী পরীক্ষা করিয়া কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় ? 

উত্তর : নিম্নবর্ণিত উপায়ে রোগীর শয়নভঙ্গী পরীক্ষা করিয়া রোগ নির্ণয় করা যায় । 
১ ) রোগী যদি বিশেষ একপাশ ফিরিয়া শুইয়া থাকে এবং অন্য পাশ ফিরিয়া শুইতে না চায় বা পারে না তবে বুঝিতে হইবে যে শুইয়া থাকা পাশের ফুসফুসটি অসুস্থ । 
২ ) রোগী যদি শুইতে কষ্ট পায় , বসিয়া থাকিতে ভালবাসে এবং বসিয়া থাকার সময় পিঠে বালিশ দিয়া থাকিতে আরামবোধ করে তবে বুঝিতে হইবে যে রোগীর শ্বাসকষ্ট আছে ।
৩ ) রোগী তাহার দেহটিকে যদি বাঁকা করিয়া শুইয়া থাকে অর্থাৎ মাথা ও গোড়ালি দুইটি বিছানার দিকে রাখে এবং দেহের মাঝখান উঁচু করিয়া রাখে তবে ইহা হিস্টিরিয়া , মেনিনজাইটিস , টিটেনাস , ইউরেমিয়া প্রভৃতি রোগের পরিচায়ক ।
৪ ) রোগী যদি শুইতে দেহ সামনের দিকে বাঁকা করিয়া শুইয়া থাকে অথবা পিছনের দিকে বাঁকা করিয়া শুইয়া থাকে তবে তাহা টিটেনাস রোগের পরিচায়ক । 
৫ ) রোগী যদি অবসন্ন অবস্থায় হাত পা ছাড়িয়া চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে তবে অবস্থা সংকটজনক বলিয়া বুঝিতে হইবে । সাধারণতঃ টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীর জটিল অবস্থায় এইরূপ শয়নভঙ্গী দেখা যায় । 



প্রশ্ন - নিদ্ৰা বলিতে কি বুঝ ? নিদ্রার প্রকারভেদ কর্ণনা কর । 

উত্তর : নিদ্রা মানুষের একটি জীবনবাপী পর্যায়ক্রমিক দৈহিক নিয়মিত ক্রিয়া যাহাতে সাময়িক জ্ঞান হারাইয়া গিয়া গুরুমস্তিষ্কের বহিস্তরের চেষ্টীয় ও সংজ্ঞাবহ কাজগুলিতে অবদমন দেখা দেয় । সুতরাং নিদ্রা এমন একটি সচেতন অবস্থা যে অবস্থায় মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয় এবং একটি সংকটসীমা পর্যন্ত পরিবর্তনে বহির্জগতের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা লোপ পায় । বয়সের সহিত ঘুমের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ বয়স যত বৃদ্ধি পাইতে থাকে ঘুমের চাহিদাও তত হ্রাস পায় । 
নিদ্রার প্রকারভেদ - নিদ্রাকে সাধারণতঃ ২ ভাগে ভাগ করা যায় । কথা -১ ) আপাত বিরোধি নিদ্রা , ২ ) মন্থর তরঙ্গ বিশিষ্ট নিদ্ৰা ।  
১ ) আপাত বিরোধী নিদ্রা- নিদ্রাকালে একদিকে যেমন অধিকতর গভীর ঘুমের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় , তেমনি অপরদিকে হালকা ঘুম বা জাগ্রত অবস্থার কিছু কিছু লক্ষণেরও প্রকাশ ঘটে । এই পরস্পর বিরোধী পরিবর্তনের জন্য এই জাতীয় ঘুমকে আপাত বিরোধী নিদ্রা নামে অভিহিত করা হয় । অধিকতর গাঢ় ঘুমের যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তাহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হইল সমগ্র দেহের পেশীটান লোপ , রক্তচাপের হ্রাসবৃদ্ধি , হৃদস্পন্দনের হ্রাসবৃদ্ধি , অনিয়ত শ্বাসকার্য , সুষুম্নাকাণ্ডীয় প্রতিবর্তী কার্যের অবনতি প্রভৃতি । প্রতিরাত্রে এই জাতীয় ঘুম ৮০ হইতে ১২০ মিনিট ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে ৩ হইতে ৪ বার আবির্ভূত হয় এবং ৫ মিনিট হইতে ১ ঘন্টারও বেশী স্থিতিশীল থাকে ।
৩ ) মন্থর তরঙ্গ বিশিষ্ট নিদ্রা- এই নিদ্রায় ঘুমন্তকালে ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মস্তিষ্ক তড়িৎলেখ তরঙ্গের ও বিস্তৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । যেমন  
ক ) তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় নিদ্রার এই অবস্থায় আলফা তরঙ্গ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং পরিশেষে বিলুপ্ত হয় । 
খ ) অগভীর নিদ্রায় অগভীর নিদ্রায় সেকেণ্ডে প্রায় ১৪ টি স্পিন্ডেল তরঙ্গের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায় এবং নিম্ন বিভরে ডেল্টা তরঙ্গ সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পায় । 
গ ) গভীর নিদ্রা- গভীর নিদ্রায় উর্ধবিভব সম্পন্ন দীর্ঘ বিস্তৃতি ও অধিক স্থায়িত্ব সম্পন্ন ডেল্টা তরঙ্গ প্রাধান্য লাভ করে । 




প্রশ্ন - প্রস্রাব পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর । 

উত্তর : রোগনির্ণয়ে প্রস্রাব পরীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে । প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ পরীক্ষা করা হয় । ডায়াবেটিস সন্দেহে , নেফ্রাইটিস ও মূত্ররেচন তন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণ নির্ণয়ে এবং জন্ডিসের ধরণ নির্ণয়ে মূত্র পরীক্ষার প্রয়োজন হয় । গ্লোমারুসো নেফ্রাইটিস , পায়েলোনেফ্রাইটিস , নেফ্রোটিক সিনড্রোম , জ্বর , টক্সিমিয়ায় মূত্র পরীক্ষায় প্রোটিনের উপস্থিতি ধরা পড়ে । ডায়াবেটিস , নেফ্রাইটিস , থাইরয়েড গ্রন্থির অতি সক্রিয়তা এবং গর্ভাবস্থায় কোন কোন রোগীর মূত্রে শর্করা ধরা পড়ে । লোহিত কণিকা ও পাস সেল এর যুগপৎ উপস্থিতি মূত্র রেচনতন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনার ইংগিত বহন করে । অধিক সংখ্যক লোহিত কণিকার অব্যাহত নির্গমন একিউট গ্লোমারুলোনেফ্রাইটিস , রেনাল টিউবারকুলোসিস , মূত্র রেচন পথে পাথুরী , প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ , মূত্র রেচন পথে টিউমার প্রভৃতির ইঙ্গিত বহন করে । বাইল সল্টের উপস্থিতি জন্ডিসের ধরণ নির্ণয়ে সাহায্য করে । কাজেই সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষার প্রয়োজন আছে ।



প্রশ্ন- স্বাভাবিক প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট লিখ ।

উত্তর : স্বাভাবিক প্রস্রাব রিপোর্ট :

Phsical Examination 

1 . Colour                                                              Pale yellow

2 . Appearance or Transparency                            Clear

3 . Sediment                                                           Nil

4 . Odour                                                                Normal

5 . Sp. Gravity                                                        1010-1020

Chemical Examination

1 . Reaction                                                             Acidic

2 . Albumin                                                              Nil

3 . Sugar                                                                  Nil

4 . Acetone                                                               Nil

5 . Reactive Acid                                                      Nil

6 . Bile Salts                                                             Nil

7 . Bile Pigment ( Bilirubin )                                    Nil

8 . Indican                                                                 Nil

9 . Diacetic Acid                                                      Nil

10 . Chyle                                                                 Nil

11 . Uryle                                                                Normal

12 . Excess phosphate                                              Nil

Organized Deposits

1 . Epithelelial cells                                     1-2 per HP Field

2 . RBC                                                          Nil

3 . Pus cell                                                      Nil

4 . Spermatozoa (Malen)                                Nil

5 . Trichomonus Vaginalis (Femae)               Nil

Un-organised Deposits

1 . Uric acid cryatal                                       Nil

2 . Urate Crystal                                            Nil

3 . Calcium oxalate crystal                            Nil

4 . Triple phosphate crystal                           Nil

5 . Stellar phosphate crystal                          Nil

6 . Sulphonamide crystal                               Nil

7 . Amorphous crystal                                    Nil

8 . Tyrosine crystal                                        Nil

9 . Leucine cryatal                                         Nil

10 . Cholesterol cryatal                                  Nil

Microscopic Examination

1 . Epithelial cast                                           Nil

2 . RBC cast                                                   Nil

3 . WBC cast                                                  Nil

4 . Fatty cast                                                   Nil

5 . Hyaline cast                                               Nil

6 . Amyloid cast                                             Nil

7 . Granular cast                                             Nil

 


প্রশ্ন - অসুস্থ অবস্থায় প্রস্রাবে কি কি পাওয়া যাইতে পারে ? 

উত্তর : অসুস্থ অবস্থায় প্রস্রাবে নিম্নলিখিত বস্তু থাকিতে পারে । ১ ) এলবুমিন , ২ ) রক্ত , ৩ ) কাইল ( Chyle ) , ৪ ) বাইল সল্ট , ৫ ) বাইল পিগমেন্ট , ৬ ) গ্লুকোজ , ৭ ) এসিটোন , ৮ ) কাস্ট , ৯ ) পাস সেল , ১০ ) সুগার প্রভৃতি । 


প্রশ্ন -  অস্বাভাবিক প্রস্রাবে কি কি রোগ নির্দেশ করে ? 

উত্তর : অস্বাভাবিক প্রস্রাবে কি কি থাকে এবং কোন রোগ নির্দেশ করে তাহা নিম্নে বর্ণনা করা হইল । 
১ ) Colour : স্বাভাবিক প্রস্রাব ঈষৎ হলুদ রঙের বা খড়ের মত রঙ হয় । তবে প্রস্রাব অনেকক্ষণ জমিয়া থাকিলে , প্রস্রাব কম হইলে , ইহাতে রক্ত পিও প্রভৃতি থাকিলে রঙ গাঢ় হয় । Red অথবা Dark Brown হইলে Blood Pigments , yellow , orange or green হইলে bilirubin , Milky রঙ হইলে chyle এর উপস্থিতি , Albumin থাকিলে ঘোলাটে বর্ণ হয় । 
২ ) Chyle : ইহাতে পূঁজ থাকিলে তাহা সাদা রঙ হয় , হিমোগ্লোবিন থাকিলে কাল হয় , এলবুমিন থাকিলে ঘোলাটে হয় ।
৩) Transparancy : স্বাভাবিক প্রস্রাব স্বচ্ছ হয় । যদি সাদা বা ঘোলাটে হয় তবে পূঁজ , Mucus বা Albumin প্রভৃতি আছে জানিতে হইবে যাহা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ । 
8 ) Sediment : স্বাভাবিক প্রস্রাবে তলানি থাকে না । যদি থাকে তবে তাহা দুই ধরনের Organic বা Inorganic Organic হইল Pus , RBC , Epithelial cell প্রভৃতি । আর Inorganic হইল Phosphate , Carbonate প্রভৃতি । 
৫ ) Specific gravity : স্বাভাধিক আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০১০-১০২০ । বেশী হইলে নেফ্রাইটিস , ডায়াবেটিস মেলিটাস , এলবুমিনুরিয়া প্রভৃতি এবং কম হইলে - ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস প্রভৃতি নির্দেশ করে । 
৬ ) Albumin : প্রস্রাবে বেশী এলবুমিন থাকিলে নেফ্রাইটিস , এলবুমিনুরিয়া , প্রস্রাব থলী ও প্রস্টেটের প্রদাহ প্রভৃতি হইতে পারে । 
৭ ) Sugar : প্রস্রাবে চিনি থাকিলে ডায়াবেটিস , হাইপার থাইরয়েডিসম , সিরোসিস , লিভার ডেমেজ প্রভৃতি রোগ বুঝায় । 
৮ ) Acetone : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । ইউরিমিয়া বা উপবাস করিলে ইহা প্রস্রাবে দেখা দেয় । 
৯ ) Phosphate : ইহা বেশী থাকিলে নির্দিষ্টভাবে স্নায়বিক দুর্বলতা বুঝায় । 
১০ ) Bilirubin : অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে এবং কেন কোন ক্ষেত্রে Hepatic Jaundice এ প্রস্রাবে Conjugated bilirubin থাকে । 
১১ ) Bile Salts : অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসে ইহা দেখা যায় । 
১২ ) Haemoglobin : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । যদি থাকে তবে ম্যালেরিয়া , ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার , ইয়েলোফিভার , হিমোলাইটিস জন্ডিস প্রভৃতি নির্দেশ করে । 
১৩ ) Epithelial cell : বেশী হলে Infection বুঝায় । 
১৪ ) RBC : প্রস্রাবে ইহা থাকিলে কিডনী ইনফেকশান বুঝায় । 
১৫ ) Pus cell : বেশী থাকিলে নেফ্রাইটিস , গনোরিয়া , সিফিলিস প্রভৃতি বুঝায় ।
১৬ ) Cast : ইহা নেফ্রাইটিস রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ । 
১৭ ) Squamous Epithelium : প্রস্রাবে ইহা কম থাকে । বেশী ইলে সিস্টাইটিস প্রভৃতি রোগ বুঝায় । 
১৮ ) Crytanine sediment : প্রস্রাবে ইহা থাকে না । যদি দেখা যায় তবে পাথুরী রোগ বুঝায় । 



প্রশ্ন - প্রস্রাব কিসে বৃদ্ধি পায় ? 

উত্তর  ঃ নিম্নলিখিত কারণে প্রস্রাব বৃদ্ধি পায় ।   
১ ) কিডনীতে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাইলে । 
২ ) এমিনোফাইলিন , চা , কপি প্রভৃতি মূত্রকারক বস্তু ব্যবহার করিলে গ্লমেরুলের কৈশিক নলী প্রসারিত হওয়ার কারণে । 
৩ ) শীতকালে চামড়ার কৈশিকনলী কুঁচকানোর জন্য কিডনীতে বেশী বেশী রক্ত গেলে । 
৪ ) অত্যধিক জল পানে বা বেশী মাংস খাইলে । 
৫ ) এন্টিরিয়র , পিটুইটারী , এড্রিনালিন ইনজেকশনে । 
৬ ) স্যালাইন ইনজেকশান গ্রহণে । 



প্রশ্ন -  প্রস্রাব কিসে কমে ? 

উত্তর : নিম্নলিখিত কারণে প্রস্রাব কমিয়া যায় । 
১ ) পানি কম পান করিলে । 
২ ) দৈহিক পরিশ্রম , পোস্টিরিয়র পিটুইটারী , হাইপোথালামাস প্রয়োগে । 
৩ ) রক্তপাত , আঘাতজনিত শক প্রভৃতিতে । 
৪ ) দেহরসের অভাব যেমন - কলেরা , ডিসেন্ট্রি প্রভৃতি কারণে । 



প্রশ্ন -  প্রস্রাবে এলবুমিন নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর । 

উত্তর  ঃ প্রস্রাবে এলবুমিন পরীক্ষার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি আছে । যেমন 
ক ) এসিটিক এসিড পরীক্ষা । 
খ ) হেলারের ঠাণ্ডা নাইট্রিক এসিড পরীক্ষা । 
গ ) সালকো - সেলিসিলিক পরীক্ষা ।

নিম্নে এলবুমিনের জন্য , এসিটিক এসিড পরীক্ষা পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করা হইল । রি এজেন্ট ৫ % গ্লাসিয়াল এসিটিক এসিড । প্রথমে একটি পরিস্কার পরীক্ষা নলে / অংশ প্রস্রাব নিতে হইবে । তারপর উহার উপরের অংশে স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে তাপ দিতে হইবে । তাপ দেওয়ার পর যদি উপরের অংশে ঘোলাটে হয় তবে ৫ % গ্লাসিয়াল এসিটিক এসিড ৩-৫ ফোঁটা উক্ত পরীক্ষা নলে দিয়া পুনরায় তাপ দেওয়ার পরও যদি ঘোলাটে থাকিয়া যায় তবে এলবুমিন এর উপস্থিতি নির্দেশ করে । 


প্রশ্ন —  প্রস্রাবে এলবুমিনুরিয়া হওয়ার কারণ কি কি ? 

উত্তর  ঃ ক ) অত্যধিক পেশীগত ব্যায়াম । 
খ ) দাঁড়ানো অবস্থায় অধিকক্ষণ থাকিলে প্রস্রাবে এলবুমিন চলিয়া আসিতে পারে কিন্তু বসিয়া থাকিলে অন্তর্ধান হয় । 
গ ) দীর্ঘসময় ধরিয়া ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা । 
ঘ ) বিলম্বিত বয়সে গর্ভসঞ্চার । · 
ঙ ) অত্যধিক মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ । 
চ ) রক্তাল্পতা , পুরাতন হৃদরোগ , কিডনী রোগ প্রভৃতি । 
ছ ) কিডনী , যান্ত্রিক পরিবর্তন , পূঁজ উৎপাদনকারী প্রদাহ । 
জ ) রক্তপ্রস্রাব , মূত্রপাথুরী , ক্যান্সার । 
ঝ ) রোগ জীবাণু সংক্রমণে জ্বালাকর কিডনীতে এবং দেহে পারদ বিষাক্তকরণ প্রভৃতি । 



প্রশ্ন - প্রস্রাবে শর্করা বা চিনির উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : প্রস্রাবে শর্করার উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নিম্নে ব্যাখ্যা করা হইল । একটি পরীক্ষা নলে ৫ মি.লি. বেনেডিক্‌স দ্রবণ লইয়া উহার সহিত ৮ ফোঁটা প্রস্রাব ভাল ভাবে মিশাইতে হইবে । তারপর একটি স্পিরিট লাম্পে পরীক্ষা নলটি ২ মিনিট জোরালেভাবে উত্তপ্ত করিয়া ঠাণ্ডা করিলে যদি দেখা যায় । যে পরীক্ষা নলের নিচে তলানি পড়িয়াছে তবে উহাই শর্করার উপস্থিতি নির্দেশ করে । রঙ পরিবর্তনের চাইতে তলানি পড়াটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ । প্রস্রাবের ভিতর যদি অকজালেট , এসকরবিক এসিড বা এই জাতীয় বিরঞ্জক পদার্থ থাকে তবে রঙ পরিবর্তন হইতে পারে । ১৩৭ সবুজবর্ণ হইলে সুগার অর্ধ হইতে ১ % , হলুদ বর্ণ হইলে ২ হইতে ৩ % , এবং লালবর্ণ হইরে ৪ % এর উর্ধে সুগার আছে বুঝিতে হইবে । 



প্রশ্ন - প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি লিখ । 

উত্তর  ঃ প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হইল । একটি পরীক্ষা নলে ১০ মি.লি. পরিমাণ প্রস্রাব লইয়া উহাকে এসিটিক এসিড দ্বারা অম্লীয় করিতে হইবে । তারপর একটি ২৫ পয়সা মুদ্রার উপর যতটুকু ফিনাইল হাইড্রোক্লোরিক এসিড ধরে ততটুকু নিতে হইবে এবং পরিমাণের দ্বিগুণ সোডিয়াম এসিটেট নিয়া ভালভাবে মিশ্রিত করিতে হইবে । যতক্ষণ পর্যন্ত উপাদানগুলো দ্রবীভূত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাপ দিতে হইবে । তারপর উহা ফিল্টার করিতে হইবে । পরীক্ষা নলটিকে একটি Boiling water bath এ আধা ঘণ্টা হইতে ১ ঘণ্টা রাখিয়া দিতে হইবে । এখন water bath এর সুইস বন্ধ করিয়া পরীক্ষা নলটিকে রুমের তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা হইতে দিতে হইবে । পরীক্ষা নলের নিচে যে তলানি পড়িবে উহাকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করিলেই গ্লুকোজের উপস্থিতি বুঝা যাইবে । 



প্রশ্ন - প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেট এর উপস্থিতি নির্ণয়ের পদ্ধতি লিখ । 

উত্তর : নিম্নোক্ত পরীক্ষা দ্বারা প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেটের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় । একটি পরীক্ষা , ভাগ প্রস্রাব নিয়া উহার উপরের অংশে স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে তাপ দিতে হইবে । তাহাতে উপরের অংশে ধোঁয়াটে ভাবের সৃষ্টি হইবে । কিন্তু যদি কয়েক ফোঁটা এসিডিক এসিড যোগ করার পর ধোঁয়াটে ভাবের বিলুপ্তি ঘটে তবে প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফসফেটের উপস্থিতি বুঝাইবে । পুনরায় তাপ প্রয়োগের প্রয়োজনও হইতে পারে ।



প্রশ্ন - প্রস্রাবে এসিটোনের উপস্থিতি নির্ণয়ে পদ্ধতি লিখ । 

উত্তর : নিম্নোক্ত পরীক্ষা দ্বারা প্রস্রাবের এসিটোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় । প্রথমে ১০ মি.লি. প্রস্রাবকে এমোনিয়াম সালফেট দ্বারা সম্পৃক্ত করিতে হইবে । তারপর উহার সহিত ২ হইতে ৩ ফোঁটা শক্তিশালী ও সদ্য তৈরী সোডিয়াম নাইট্রো প্রুসাইডের দ্রবণ যোগ করিতে হইবে । অতপর ২ মি.লি. শক্তিশালী এমোনিয়া আস্তে আস্তে যোগ করিলে দ্রবণ দুইটির সংযোগ স্থলে পারযাঙ্গানেট রং এর উপস্থিতিই এসিটোন নির্দেশ করিবে । 



প্রশ্ন - গাত্রচর্ম দ্বারা বা চর্ম লক্ষণ দ্বারা কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় ? 

উত্তর  ঃ চর্মলক্ষণেও অনেক রোগ নির্ণয় করা যায় । জ্বর হইলে শরীরের চর্ম শুষ্ক , খসখসেও উত্তপ্ত হয় । দেহের তাপ কমিলে ও চামড়া স্বাভাবিক হইতে থাকিলে তাহা ভাল লক্ষণ । জন্ডিস রোগে গাত্রচর্য হলুদ আভাযুক্ত হয় । ফ্যাকাসে চর্ম রক্তশূণ্যতার নির্দেশক । সুতিকা জ্বর , বিষমজ্বর এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে শীত হইয়া কাঁপুনি দেখা যায় । 



প্রশ্ন - সোরা , সিফিলিস , সাইকোসিস ও টিউবারকুলার দোষের চর্ম লক্ষণ লিখ । 

উত্তর : সোরার চর্ম- সোরা দুর্দমনীয় চুলকানি ও খোসপাঁচড়ারূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে । ইহার মামড়ি বা কম্ভুত্বক পাতলা , সরু , সূক্ষ্ম ও ক্ষুদ্র । চর্ম অতিশয় শুষ্ক । সিফিলিসের চর্ম- সিফিলিস চুলকানিবিহীন চর্মোদ্ভেদ ও পচনের প্রবণতা রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে । ইহার মামড়ি বা শঙ্ক সর্বদাই পুরু ও ভারী থাকে । চর্মে সামান্য টাটানি থাকে । গ্লান্ডের বৃদ্ধি দৃষ্ট হয় । মুখমণ্ডল তৈলাক্ত ৷ সাইকোসিসের চর্ম- সাইকোসিস আঁচিল , জড়ল , টিউমার , প্রভৃতি রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে । ইহার চর্ম চকচকে ও মসৃন ৷ ইহার বয়ঃব্রণ বড় আকারের , লালচে , টাটানি ব্যথা , পূঁজহীন ও বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত । মস্তক ত্বকের দাদ , প্রভৃতি সাইকোসিস । টিউবারকুলারের চর্ম- টিউবারকুলার দোষ দাদ ও একজিমা সৃষ্টি করে । ইহা ছাড়া আমবাত ও হার্পিস জাতীয় চর্মপীড়া টিউবারকুলারের সৃষ্টি । একের পর এক ফোঁড়ার বিকাশ সাধন , তাহাতে প্রচুর স্রাব ও অসহ্য জ্বর টিউবারকুলার দোষজ । তাহা ছাড়া কুণ্ঠ পীড়া , যোনিপথে যন্ত্রণাদায়ক উদ্ভেদ , চুলকানি যুক্ত উদ্ভেদ যাহা গর্ভাবস্থায় বেশী দেখা যায় তাহার মুলেও টিউবারকুলার দোষ বিদ্যমান । 



প্রশ্ন -  ঘর্ম দ্বারা কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় ? 

উত্তর : ঘর্ম স্বাভাবিক নিয়মে দেহে দেখা যায় । দেহের অন্যান্য অংশে না ঘামিয়া শুধু কপাল ঘামিলে তাহা প্রেসার , অতিরিক্ত চিন্তা , স্নায়বিক দুর্বলতা বুঝায় । যক্ষ্মা প্রভৃতি ক্ষয় জাতীয় রোগে রাত্রিকালে ঘর্ম হয় । সামান্য জ্বরে ঘর্ম নিঃসৃত হইলে উপশম হয় । সুতিকাজ্বর , বিষম জ্বর , ম্যালেরিয়া জ্বরে শীত হইয়া কাঁপুনি দেখা দেয় , যদি প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম হয় তবে বুঝিতে হইবে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাইতেছে । 



প্রশ্ন - ঘর্ম ক্ষরণের পদ্ধতি কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ? 

উত্তর : ঘর্ম ক্ষরণ পদ্ধতি স্নায়ু ও হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । 
১ ) স্নায়ুজ নিয়ন্ত্রণ- ঘর্ম ক্ষরণ স্নায়ুজ নিয়ন্ত্রণের অধীন । হাইপোথ্যালামাস ও গুরুমস্তিষ্কের প্রাক নিয়ামক অঞ্চল ঘর্ম ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে । সম্মুখস্থ হাইপোথ্যালামাসের তাপ নিয়ন্ত্রক স্নায়ুকেন্দ্র উত্তাপজনিত ঘর্মক্ষরণের নিয়ন্ত্রণ করে । আবেগ বা আক্ষেপজনিত ঘর্মক্ষরণ গুরুমস্তিষ্কের প্রাকনিয়ামক অঞ্চল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । 
২ ) হরমোন দ্বারা ঘর্ম ক্ষরণে বিভিন্ন হরমোন অংশগ্রহণ করে । অ্যাসিটাইলকোলিন , পাইলোকারপিন , অ্যাট্রোপিন , ব্রাডি কাইনিন প্রভৃতি ঘর্মক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে । 
৩ ) শারীরিক নিয়ন্ত্রণ- বাহ্যিক তাপমাত্রা , মানসিক উত্তেজনা , শ্বাসকষ্ট , ভয় , যন্ত্রণা প্রভৃতি ঘর্মগ্রন্থি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় স্নায়ুগুলিকে উত্তীপ্ত করে , ফলে ঘর্ম নিঃসৃত হয় । 



প্রশ্ন - ঘর্যের কার্যাবলী কি কি ? 

উত্তর : ঘর্ম বহুবিধ কার্য সম্পন্ন করে । নিম্নে ঘর্মের কার্যাবলী আলোচনা করা হইল । 
১ ) রেচন বিষয়ক কার্য- বিশেষ অবস্থায় পিত্তরঞ্জক , এলবুমিন , শর্করা , অধিক পরিমাণে পানি এবং খনিজ পদার্থ , অতি অল্প পরিমাণ ইউরিয়া , ল্যাকটেট , এমাইনো এসিড এবং কিছু কিছু ঔষধ ধর্মের সহিত বাহির হইয়া যায় । 
২ ) রক্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ঘর্ম পানি নিঃসরণ করিয়া দেহের রক্তের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করে । 
৩ ) দেহকে শীতল রাখে- চর্মের উপরিভাগ হইতে ঘর্ম নিঃসৃত হইয়া দেহকে শীতল রাখে । 
৪ ) দৈহিক তাপ নিয়ন্ত্রণ- দেহ চর্ম হইতে ঘর্মক্ষরণ ও বাস্পীভবনের ফলে দৈহিক তাপ নিয়ন্ত্রণ হয় । 
৫ ) পানির ভারসাম্য অবস্থা- চর্ম ঘর্মের উৎপাদনে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটাইয়া এবং স্বেদক্ষরণ ও বাস্পীভবন উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে । 
৬ ) অম্ল ক্ষারকত্বের সমতা রক্ষা- ঘর্মের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ অম্ল দেহ হইতে নির্গত হয় । ফলে দেহ তরলে অধিক অম্ল সৃষ্টি হইলে ঘর্ম দ্বারা বাহির হইয়া অম্লক্ষারের সাম্যাবস্থা বজায় রাখিতে চর্ম অংশগ্রহণ করে । 




প্রশ্ন -  নখের অবস্থা বা পরিবর্তন দ্বারা কিভাবে মায়াজম আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা যায় ? 

উত্তর  ঃ নখের অবস্থা বা পরিবর্তন দ্বারা বিভিন্ন মায়াজমে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা সম্ভব । যেমন 
১ ) রোগীর নখ কাগজের মত পাতলা এবং দেখিতে ঠিক চামচের মত এবং সহজেই বাঁকিয়া গেলে রোগী সিফিলিস দোষে আক্রান্ত বুঝিতে হইবে । 
২ ) নখগুলি ভঙ্গুর , অসম , পুরু বা বিবর্ণ হইলে , লম্বালম্বি উঁচু রেখাযুক্ত , ভারী , বিকৃত ও কুগঠিত নখ হইলে সাইকোসিস দোষের প্রাধান্য বুঝিতে হইবে । 
৩ ) নখে তীব্র সুঁচ ফোটানো ন্যায় ব্যথার অনুভূতি , নখগুলি নানা প্রকার দাগযুক্ত ও ভঙ্গুর , অসম ও ফাটাফাটা , নখ ও মাংসের সংযোগস্থলে পূঁজ জমা , মাংস হইতে নখ সহজেই পৃথক হইয়া যাওয়া , 



প্রশ্ন - রক্তের চাপ বলিতে কি বুঝ ? মানবদেহে রক্তের স্বাভাবিক চাপ কত ? 

উত্তর : রক্তচাপ- রক্ত সংবহনকালে রক্তনালীর মধ্য দিয়া প্রবাহমান রক্ত রক্তনালীর প্রাচীর গাত্রে যে পার্শ্বচাপ প্রদান করে তাহাকে রক্তচাপ ( Blood Pressure ) বলা হয় । সাধারণভাবে রক্তের চাপ বলিতে আমরা ধমনীর রক্তচাপকে বুঝিয়া থাকি । দেহে ধমনীর রক্তচাপই সর্বাধিক । হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণকালে ধমনীর রক্তচাপের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে । মানবদেহে রক্তের স্বাভাবিক চাপ- সাধারণ সুস্থ মানবদেহে পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তের চাপ সিস্টোলিক , চাপ ( সংকোচী চাপ ) ১২০ মি.মি. অব মার্কারী এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ( প্রসারী চাপ ) ৮০ মি.মি. অব মার্কারী । 




প্রশ্ন -  রক্তের চাপ কত প্রকারের ? 

উত্তর : হৃদপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত থাকায় ধমনীর রক্তচাপকে চারভাগে ভাগ করা যায় । যথা 
১ ) সিস্টোলিক রক্তচাপ বা সংকোচী রক্ত চাপ । 
২ ) ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বা প্রসারী রক্তচাপ । 
৩ ) পালস প্রেসার বা স্পন্দন চাপ । 
৪ ) রক্তের গড় চাপ বা মিন প্রেসার । 



প্রশ্ন -  সিস্টোলিক চাপ কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ের সংকোচন কালে ধমনীর উপর সর্বাধিক যে চাপ মাপা যায় সেই চাপকে সিস্টোলিক চাপ বলে । 



প্রশ্ন - ডায়াস্টোলিক চাপ কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ হৃদপিণ্ড নিলয়ের বিশ্রামের সময় অর্থাৎ নিলয়ের প্রসারণকালে রক্ত যখন হৃদপিণ্ডে ফিরিয়া যায় তখন ধমনীর উপর সর্বনিম্ন চাপকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে ।
 


প্রশ্ন - উচ্চ রক্ত চাপ কাহাকে বলে ? 

উত্তর : সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৫০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটার পারদ চাপের উপরে উঠিলে তাহাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে । 



প্রশ্ন -  নিম্ন রক্তচাপ কাহাকে বলে ? 

উত্তর  ঃ সিস্টোলিক রক্তচাপ ১০০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৫০ মিলিমিটার পারদচাপের কম হইলে তাহাকে নিম্নরক্তচাপ বলে । 



প্রশ্ন - পালস প্রেসার বা স্পন্দন চাপ কাহাকে বলে ? 

উত্তর : সিস্টোলিক রক্তচাপ ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের পার্থক্যকে পাল্‌সের চাপ বলা হয় । যদি সিস্টোলিক চাপ ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ মিলিমিটার পারদ চাপের সমান হয় তাহা হইলে পালসের চাপ হইবে ১২০ ৮০ = ৪০ মিলিমিটার পারদ চাপের সমান । 



প্রশ্ন - রক্তের গড় চাপ বা মিন প্রেসার কাহাকে বলে ? 

উত্তর : প্রসারী রক্তচাপ ও পাল্‌সের চাপের এক তৃতীয়াংশের যোগফলকে গড় চাপ বলে । ইহা সাধারণতঃ ১০০ মিলিমিটার পারদ চাপের সমান । সিস্টোলিক চাপ , ডায়াস্টোলিক চাপ এবং পালসের চাপের স্বাভাবিক অনুপাত ৩ঃ ২৪১ । অর্থাৎ সিস্টোলিক চাপ ১২০ হইলে ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ এবং পালসের চাপ ৪০ মি.লি পারদ চাপের সমান হইবে । 




প্রশ্ন -  রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টরগুলির বিবরণ দাও । 

উত্তর : যে সকল কারণসমূহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে তাহা নিম্নে আলোচনা করা হইল । 
১ ) কার্ডিয়াক আউটই কার্ডিয়াক আউটপুট পরিবর্তনের ফলে রক্তচাপেরও তারতম্য ঘটে । এই কার্ডিয়াক আউটপুট সাধারণত হৃদপিণ্ডের সংকোচন শক্তি , হৃদপিণ্ড স্পন্দনের সংখ্যা ও হার এবং শিরা রক্ত প্রত্যাবর্তনের উপর একান্ত নির্ভরশীল । 
২ ) হৃদপিণ্ডের সংকোচন শক্তি— হৃদপিণ্ডের সংকোচন শক্তিও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে । হৃদপিণ্ডের গতি দ্রুততর হইলে রক্তচাপ  বৃদ্ধি হয়। 
৩ ) ধমনী দেওয়ালের স্থিতিস্থাপকতা- ধমনী দেওয়ালের নমনীয়তা স্বাভাবিক থাকিলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং নমনীয়তা কমিয়া গেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় । 
৪ ) প্রান্তীয় বাধা দেহের বিভিন্ন অংশে শাখা ধমনীগুলি রক্ত প্রবাহে যে বাধা প্রদান করে তাহাকে প্রান্তীয় বাধা বলে । নালিকাগুলির ব্যাস কোন কারণে সংকুচিত হইলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং প্রশস্ততর হইলে চাপ কমিয়া যায় । 
৫ ) মোট রক্তের পরিমাণ- রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উভয় চাপই বৃদ্ধি পায় । রক্তের পরিমাণ হ্রাস পাইলে রক্তচাপ হ্রাস পায় । 
৬ ) রক্তের সান্দ্রতা রক্তের সান্দ্রতা রক্ত প্রবাহের উপর বিশেষভাবে সম্বন্ধযুক্ত । রক্তের সান্দ্রতার পরিবর্তনের ফলে সংকোচী রক্তচাপের তারতম্য ঘটে । 
৭ ) হরমোন- অ্যাড্রেনালিন , নর অ্যাড্রেনালিন ও পিটুইট্রিন হরমোন রক্তনালীর সংকোচন ঘটাইয়া রক্তচাপ বৃদ্ধি করে । ব্রাডিকাইনিন রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় ও চাপ কমিয়া যায় । 




প্রশ্ন -  ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন ? 

উত্তর : ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ প্রান্তীর বাধার স্বরূপ নির্ণয়ের প্রমাণস্বরূপ । ধমনীর মধ্যে সব সময় রক্ত থাকার জন্য সৃষ্ট রক্তচাপকে , ধমনী দেওয়ালের অবস্থাকে এবং নিলয় কতটা টানটান হইয়া রক্তকে ধরিয়া রাখিতে সমর্থ হইয়াছে তাহাদের বিষয়ে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের মাধ্যমে সহজেই বোধগম্য হইয়া থাকে । ডায়াস্টোলিক চাপের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করিতে কতটা শক্তি ক্ষয় হইতেছে সে সম্বন্ধে জানা যায় । হৃদপিণ্ড বেশী কাজ করার দরুণ ডায়াস্টোলিক চাপ বেশী হইয়া থাকে । এই রূপ বেশী কাজ করার ফলে হৃদপেশী পরিবর্ধিত হইয়া যায় এবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । সেজন্যই ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ অধিক গুরুত্বপূর্ণ । 




প্রশ্ন - বয়স অনুসারে সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ লিখ । 

উত্তর  ঃ বয়স অনুসারে সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ নিম্নরূপ উপরের সংখ্যার চাইতে প্রেসার ৫ বা ১০ কমবেশী হইলে খুব একটা মারাত্মক রোগ নয় । 






প্রশ্ন -  রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণগুলি কি কি ? 

উত্তর : সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটে । 
১ ) মানসিক আবেগ যেমন রাগ , শোক , কান্নার সময় সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় । 
২ ) হৃদপিণ্ড সজোরে পাম্প করিলে । 
৩ ) পেরিফেরাল রেজিস্টেন্স বৃদ্ধি পাইলে । 
৪ ) ধমনী গাত্রের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হইলে ।
৫ ) একিউট ও ক্রনিক নেফ্রাইটিসের রোগে । 
৬ ) সঙ্গমের সময় । 
৭ ) প্রান্তীয় বাধার কারণে শাখা ধমনীর ব্যাস সংকুচিত হইলে । 
৮ ) মোট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইলে । 



প্রশ্ন - ' বমি রোগের লক্ষণমাত্র ’ - আলোচনা কর । 

উত্তর : বমি কোন রোগ নয় । ইহা কোন রোগের লক্ষণ । বমি লক্ষণটি রোগ নির্ণয়ের জন্য খুব বেশী সহায়ক । পাকস্থলীতে উত্তেজক কোন দ্রব্য পড়িলে বা বেশী মদপান , অন্ত্রের কোনও পীড়া , অতি ভোজন প্রভৃতি কারণে বমি হইতে পারে । ফুসফুস সংক্রান্ত পীড়া বা উহাতে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিলেও বমি হইয়া থাকে । গর্ভ সঞ্চারের প্রথম দিকে অনেক সময় সকালের দিকে গর্ভিনীদের কমন হয় । শরীর বেশী দুর্বল হইলে বা অতিরিক্ত রক্তপাত হইলেও বমি হয় । তাই বলা যায় বমি রোগের লক্ষণমাত্র । 



প্রশ্ন -  রোগ নির্ণয়ে পায়খানার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে- আলোচনা 

উত্তর : রোগ নির্ণয়ে পায়খানার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । স্বাভাবিক পায়খানা হলুদ বর্ণের । স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১/২ বার পায়খানা হয় । ইহার বর্ণ , পরিমাণ ও প্রভৃতি দেখিয়া অনেক সময় রোগ নির্ণয় করা যায় । 
১ ) পায়খানা সবুজ বর্ণের হইলে অম্লদোষ বুঝিতে হইবে । 
২ ) সাদা বর্ণের হইলে বুঝিতে হইবে পিত্তরস ঠিকমত নিঃসরণ হইতেছে 
৩ ) চাউল ধোয়া পানির মত হইলে কলেরা বা ডায়ারিয়ার লক্ষণ বুঝিতে হইবে । 
৪ ) শুষ্ক গুটলে হইলে অস্ত্রের গোলযোগ ও কোষ্ঠ কাঠিন্যতা বুঝিতে হইবে । 
৫ ) পায়খানা পাংশুটে বা কাদার মত বর্ণ হইলে লিভারের গোলমাল বুঝিতে হইবে । 
৬ ) রক্ত বা শ্লেষ্মা মিশ্রিত থাকিলে আমাশয় বুঝিতে হইবে । 
৭ ) পেট বেদনাসহ মল বেশী নির্গত হইলে ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রি বুঝায় ।
৮ ) পেট বেদনাসহ অল্প অল্প পিচ্ছিল পায়খানা হইলে এমিবিক ডিসেন্ট্রি নির্দেশ করে । ১৪৬ ৯ ) অসাড়ে পায়খানা শুভ লক্ষণ নয় । 



প্রশ্ন - বক্ষ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি ? 
উত্তর : সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য বক্ষ পরীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে । সাধারণতঃ তিন পদ্ধতিতে বক্ষ পরীক্ষা করা হয় । যেমন- দর্শন , প্রতিঘাত ও স্টেথোস্কোপের সাহায্যে । হৃদপিণ্ডের কোন পীড়া নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বক্ষ পরীক্ষা একান্ত প্রয়োজন । ফুসফুসের কোনও পীড়া যেমন যক্ষ্মা , নিউমোনিয়া , ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানী , সর্দি জমিয়া থাকা প্রভৃতি পীড়ার ক্ষেত্রে বক্ষ পরীক্ষা অত্যাবশ্যক । তাই বলা যায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বক্ষ পরীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে । 




প্রশ্ন - ব্যথা বেদনা দ্বারা কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় ? 

উত্তর  ঃ ব্যথার স্থান , রকম , হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি বিচার করিয়া রোগ নির্ণয় ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন করা সহজ । কোমর ও গাঁটের ব্যথা , বাত , কটিবাত , গেঁটেবাত প্রভৃতি রোগ নির্দেশ করে । দেহের কোন বিশেষ অংশের ব্যথা স্থানিক প্রদাহের নির্দেশক । ব্যথা যদি সামান্য থাকে এবং সঞ্চালনে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় তবে তাহা পেশীর ব্যথা । লিভারের প্রদাহ হইয়া ডান কাঁধে বা দুই কাঁধেই হইতে পারে । গলার দুই প্রাপ্তের গ্রন্থিতে ব্যথা হইলে তাহা দেহের ব্যথা নির্দেশ করে । হৃদপিণ্ডের রোগের বাহুতে ব্যথা হয় । মূত্র পাথুরী রোগে পুরুষাঙ্গে ব্যথা হয় । পেট , মাথা , বুক যে কোন ব্যথাই দেহের ভিতরের কোন অংশের রোগ নির্দেশ করে । রোগ নির্ণয় করিতে হইতে তাই ব্যথা বেদনার দ্বারা রোগ নিরুপণ করা অনেকটাই সহজ ।
  


                            

                                                                সমাপ্ত




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ