কষ্টিকাম - CAUSTICUM, চতুর্থ বর্ষ

 কষ্টিকাম 
CAUSTICUM





প্রতিশব্দ— হ্যানিমানস কস্টিকাম, টিংচার এক্রিস সাইনকালী ।


উৎস, বর্ণনা ও প্রস্তুত প্রণালী- কস্টিক লাইনের সহিত বাই সালফেট অব পটাশ মিশ্রিত করিয়া চুরাইয়া লইয়া যে পরিষ্কার জলবৎ পদার্থ পাওয়া যায় তাহাকে সমান অংশে সুরাসার মিশাইয়া লইলে কস্টিক প্রস্তুত হয়। প্রায় ২ পাঃ ওজনের একটা টুকরা সদ্য দাহ্য চুন এক মিনিটকাল পরিশ্রুত জলে নিমজ্জিত রাখিয়া, জল হইতে উহা উঠাইয়া একটি শুকনা পাত্রে রাখিলে চমৎকার চূর্ণে পরিণত হইবে। ২ আঃ পরিমাণ এই চূর্ণ একটি উষ্ণ খলে রাখিয়া ২ আঃ বাই-সালফেট অব পটাশ এবং ২ আঃ গরম জল ইহার সহিত মিশাইতে হয়। এই বাই সালফেট অব পটাশ ভগ্ন হইবার পূর্বে পরে ইহাকে পরিশ্রুত করিতে হয়।
উত্তপ্ত হইয়া লাল হইয়া যায় এবং পরে ঠাণ্ডা হইয়া বিচূর্ণাকারে পরিণত হয়।

প্রুভার- মহাত্মা হ্যানিমান ইহা প্রুভ করেন।

ক্রিয়াস্থান কোথায়- গলমধ্য, চর্ম, স্বরযন্ত্র, শ্লৈষ্মিকঝিল্পী ও পাকাশয়ের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে। শক্ত পেশীযুক্ত ও কৃষ্ণবর্ণ মনুষ্য শরীর ইহার প্রিয় স্থান। ইহা একটি এন্টিসোরিক ও টিউবারকুলার ঔষধ। 

মানসিক লক্ষণ-
১) তীব্র সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত ভীতিপূর্ণ উৎকণ্ঠা। আসন্ন দুর্ভাগ্যের বিভীষিকাময় ঘটনাসমূহ সুনিশ্চিত ভাবে সংঘটিত হইবেই এই প্রকার একটি অবাস্তব চিন্তাধারা মনের মধ্যে সর্বদাই দানা বাঁধিয়া থাকে।
২) মনটি অত্যন্ত দুর্বল ও বিষাদে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে মনটি কোমলও বটে।
৩) অপরের দুঃখে কাঁদিয়া ফেলে, রক্ত দেখিলে ভয় পায় ।
৪) সকল বিষয়ে আশা শূন্য, চুপচাপ বসিয়া থাকার স্বভাব।
৫) অনেকদিন ধরিয়া মানসিক দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও শোক সন্তাপ ভোগ করিয়া এই প্রকার মানসিক গোলযোগ। 


চরিত্রগত লক্ষণ -
১) হঠাৎ ভয়, আনন্দ, ক্রোধ, পুরাতন শোক, অনিদ্রা, রাত্রিজাগরণ এবং মৃত চর্মপীড়া জনিত কোনও পীড়ার উৎপত্তি।
২) ভঙ্গ, হঠাৎ স্বর বন্ধ হইয়া ল্যারিনজিয়াল পেশীর পক্ষাঘাত । গলায় টাটানি বেদনাসহ গলাধরা, প্রাতে স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি ।
৩) কাশি এবং কাশিতে খুব গলা খাকাইয়া ভিতর হইতে গয়ার তুলিতে অসমর্থ, ঠাণ্ডা জল পান করিলে কাশির উপশম। কাশিতে কাশিতে অসাড়ে প্রস্রাব নিঃসরণ।
৪) প্রথম ঘুমেই ছেলেরা বিছানায় প্রসাব করে । 
৫) শিশুরা অনেক বিলম্বে চলিতে শিখে।
৬) ঘন ঘন বাহ্যের বেগ কিন্তু বাহ্য হয় না। দাঁড়াইয়া খুব জোরে কোঁথ দিলে তবে বাহ্য হয় ।
৭) হাঁচিতে ও চলিতে অসাড়ে প্রস্রাব নিঃসরণ।
৮) কাশিতে বুকে বেদনা, সে জন্যে সর্দি তুলিয়া ফেলিতে পারে না, গিলিয়া ফেলে। হুপিং কাশির প্রবল আক্ষেপ হইবার পর কাশি।
৯) অত্যন্ত দুর্বলতা, মূর্ছার মত হয় ও কাঁপে।
১০) পুড়িয়া যাইবার ক্ষত চিহ্নে পুনরায় বেদনা হয় ও পাকে। 
১১) নাকে, মুখে ও চক্ষুর ক্রর উপর আঁচিল। মুখের বাত ও উপরের চক্ষুর পাতায় ভার বোধ ও পক্ষাঘাত। প্রায় ডান অঙ্গে পক্ষাঘাত। ঠাণ্ডা লাগা হেতু পীড় ।
১২) টাইফয়েড বা ডিপথিরিয়া প্রভৃতি পীড়ার পর হইতে ধীরে ধীরে পক্ষাঘাত উৎপন্ন ।
১৩) রজঃস্রাব ক্ষীণ ও বিলম্বিত, রাত্রিতে শুইলে স্রাব বন্ধ হয় ।
১৪) বর্ষাকালে রোগী ভাল থাকে আর সুন্দর ঋতুতে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয়।
১৫) চোখের সামনে অগুন ও কালো দাগ দেখা। 
১৬) রমনি, মহিলারা সহবাস করিতে চায়না।

প্রয়োগক্ষেত্র:- পক্ষাঘাত, শিশুদের পীড়া, কোষ্ঠবদ্ধত, অর্শ, কাশি, স্বরভঙ্গ, চক্ষুর পীড়া, কর্ণ ও মুখের পীড়া, দন্তের পীড়া, বাত, মৃগী রোগ, আঁচিল, তড়কা, সন্যাস রোগ, মূত্রযন্ত্রের পীড়া ও স্ত্রীরোগে কস্টিকাম ব্যবহৃত হয়।

পক্ষাঘাত- কস্টিকান সাধারণত পক্ষাঘাতিক ঔষধ । শীতকালীন শুষ্ক ঠাণ্ডা হইতে পক্ষাঘাত। কোন রোগ ভোগের পর দুর্বলতা ক্রশম বৃদ্ধি পাইয়া পক্ষাঘাত। ইহার পক্ষাঘাত সাধারণত দেহাংশিক-বিশেষ করিয়া শরীরের ডানদিকেই সমধিক প্রকাশিত হয়। আকস্মিক ও ধীরগতির পক্ষাঘাত এই উভয় প্রকার অবস্থাই ইহার মধ্যে পাওয়া যায় অর্থাৎ তরুণ ও পুরাতন এই উভয় রূপেই পক্ষাঘাতটি আসিতে পারে। তাহা ছাড়া টাইফয়েড, বসন্ত এবং অন্যান্য রোগ ভোগের পরও ইহার পক্ষাঘাত লক্ষণ আসিতে দেখা যায়। এই শেষোক্ত পক্ষাঘাতটি সাধারণত ঐ সকল তরুণ রোগের অসদৃশ চিকিৎসার ফলরূপেই আসিয়া থাকে। তবে ইহার পক্ষাঘাতের আনুষঙ্গিক লক্ষণ হিসাবে মানসিক অবস্থাটি উৎকণ্ঠাগত হইবে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। স্থানীয় বা আংশিক পক্ষাঘাত যেমন মুখের, জিহ্বার, মূত্রনালীর পদদ্বয়ের, গলার পেশীর প্রভৃতির পক্ষাঘাতেও কষ্টিকামের যথেষ্ট কার্যকরী ক্ষমতা আছে।

পোড়া ক্ষতের লক্ষণ- বহুদিনের পোড়া ক্ষতের চিহ্ন স্থানে ঘা হইলে, পাকিলে এবং ব্যথা হইলে। চুনে মুখ পুড়িয়া গেলে ব্যবহৃত হয়। বক্ষ ও পৃষ্ঠদেশে বৃহৎ ফোস্কাসহ জ্বর ও উদ্বেগ, রাত্রিতে ভয়ানক চুলকায়।

নিদ্রা লক্ষণ-  দুর্নিবার তন্দ্রালুতা, শয়ন না করিয়া পারা যায় না। রাত্রে অনিদ্রা, তাহার সাথে গাত্র ত্বক শুষ্ক এবং উত্তপ্ত। নিদ্রাবস্থায় পা নাড়াচাড় করা। অস্থির নিদ্রা হইতে চমকিয়া উঠে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আড়া মোড়া ভাঙ্গে ।

বাত রোগে-  কস্টিকামে বাত আক্রান্ত স্থান খুব শক্ত ও অসাড় হইয়া থাকে, মনে হয় যেন সেখানকার মাংসপেশীসমূহ একত্রে বাঁধা আছে। গলা, কোমর হাত ও পায়ে শক্ত ও আড়ষ্ট ভাব দেখা যায়। ঘাড় ও গলায় শক্ত ও আড়স্টভাব, সেজন্য মাথাটি পর্যন্ত নাড়িতে পারে না। পুরাতন বাত। কোমরেও সে রকম অস্থির উপর বেদনা শক্তভাব, বিশেষতঃ বসিয়া উঠিতে গেলে বেদনা অধিক বোধ হয়। বাতে হাত ও পদদ্বয়ের পক্ষাঘাত। হাত যেন সর্বদাই সেঁটে থাকে ও সেই সঙ্গে বেদনা। সমস্ত পায়ে, উরুতে, হাঁটুতে, পায়ের পাতায় সেঁটে ধরা ও ফেড়ে ফেলার মত বেদনা। এই বেদনা যুক্ত বায়ু লাগিলে, সন্ধ্যায়, রাত্রিতে এবং নড়াচড়ায় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, বিছানায় শুইয়া থাকিলে উপশম। বাতজনিত প্রদাহ এবং সেজন্য হাত পা খেলিবার পেশীসমূহের সংকোচন এবং সন্ধিসমূহের শক্ত ভাব। বাতে পঙ্গু হইলে ইহা অপেক্ষা ফলপ্রদ ঔষধ আর নাই।  

আঁচিলে লক্ষণ— থুজাই আঁচিলের প্রধান ঔষধ। তবে কস্টিকাম তাহার নিচে। কস্টিকামের আঁচিল নিরেট, আকারে ক্ষুদ্র ও থেবড়া কিন্তু সূঁচাল । ইহা সাধারণত মুখে, পায়ে, চোখের পাতায়, নাকের ডগায়, হাতের আঙ্গুলে ও নথের ধারে হয়। পুজা, আঁচিল ফাটা ফাটা। চোখে, যোনীর উপর, নাসিকায়, আঙ্গুলে আঁচিল। 
ক্যাল কার্ব- মুখে, ঘাড়ে শরীরের উর্ধাংশের আঁচিল। 
লাইকোপোডিয়াম-ফাটা ফাটা আঁচিল, দাড়ীতে ও হাতে। 
নেট্রাম মিউর- হাতের আঙ্গুলে অসংখ্যা আঁচিল, হাতের তালুতেও হয়।  
নেট্রাম সালফ— আঁচিল গাঁট, মলদ্বারে, পেটে ও উরুর মধ্য স্থলে আঁচিলের ন্যায় উদ্ভেদ।
নাইট্রিক এসিড- আঁচিল যেন ভিজা ভিজা, ফুলকপির মত, শক্ত, ছুঁইলেই রক্ত পড়ে। মুখে, চক্ষুর পাতায়, বাহুতে, আঙ্গুলে আঁচিল ।
 
শিশুচিত্র- শৈশবাবস্থা হইতে কস্টিকাম শিশু দেহের পরিপুষ্টি ও বর্ধনের গতিটি রুদ্ধ করিয়া দেয়। সে কারণে ইহার শিশুরা অনেক দেরীতে চলিতে শিখে। কারণ এই যে, যে সকল স্নায়ু গুচ্ছ পদদ্বয়ে পেশীসমূহের সঞ্চালন বা প্রসারণ কার্য পরিচালনা করে তাহার সাথে পক্ষাঘাত । এই অবস্থায় আনুষঙ্গিক লক্ষণ হিসাবে অসাড়ে প্রস্রাব নির্গত হওয়া, কোষ্ঠবদ্ধ, দণ্ডায়মান অবস্থায় পায়খানা, পায়খানা পরিস্কার হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলি পরিস্ফুট থাকে। সন্ধ্যা বেলায় ও অন্ধকারে শিশুর মনের ভীতি ভাবটি বৃদ্ধি পায় । শিশু সামান্য প্রতিবাদেই বিরক্ত হয় বা কাঁদিয়া ফেলে। শিশুদের বিছানায় প্রস্রাবে, প্রথম ঘুমের সময়ই প্রস্রাব করিয়া ফেলে। যে সকল শিশু শীতকালে বিছানায় প্রস্রাব করে ও গ্রীষ্মকালে কমিয়া যায় তাহাদের পক্ষেও উপযোগী।

কোষ্ঠবদ্ধতায় লক্ষণ- কস্টিকামের কোষ্ঠবদ্ধতায় বাহ্যের বেগ ঘন ঘন হয়, বেগের সহিত যন্ত্রণা ও কুন্থন থাকে, চোখ মুখ লাল হইয়া যায় কিন্তু কিছুতেই বাহ্য হয় না। দাঁড়াইয়া বাহ্য করিলে বাহ্য হয়। বসিলে মল নিঃসরণ হয় না। নাক্স ভমিকা" কোষ্ঠবদ্ধতার প্রধান ঔষধ হইলেও উপরোক্ত লক্ষণ ও প্রভেদটুকু জানা থাকিলে অর্থাৎ অধিকতর বেশ যন্ত্রণা ও মুখ চোখ লাল হওয়া প্রভৃতি লক্ষণে কস্টিকামই উপকারী ঔষধ।  

প্রান্তদেশের বা হস্তপদাদির লক্ষণ-  অবশতার সহিত বাম পার্শ্বের সায়েটিকা। হাত ও বাহুদ্বয়ে অপ্রবল ছিঁড়িয়া ফেলামত বেদনা, ভারবোধ ও দুর্বলতা। সম্মুখ বাহু ও হাতের পেশীগুলি আয়ত্বের মধ্যে থাকে না। হাতের অনুভূতি শক্তির অভাব। পেশীগুলি টানিয়া ধরে। হাঁটিতে কষ্ট হয়। বাতে নিম্ন শাখায় ছিঁড়িয়া ফেলার মত বেদনা। বিছানার উত্তাপে সন্ধি স্থলে জ্বালা । শিশুর পদক্ষেপ ধীর ও অসম। রাত্রে পদদ্বয় নাড়াইতে থাকে। হাঁটুতে টান টান ভাব ও কট কট শব্দ হয়।

কাশি ও স্বরভঙ্গে লক্ষণ- কস্টিকামে গলার ভিতর বেদনা, টাটানি ভাব ও জ্বালা। কাশিতে গলা সুড় সুড় করে, গলার ব্যথা থাকে, অনেকবার কাশিবার পর সামান্য একটু গয়ার উঠে এবং কাশিবার ধমকে অনেক সময় অসাড়ে প্রস্রাব নির্গত হয়। সামান্য ঠাণ্ডা জলপানে উহা উপশমিত হয়। সন্ধ্যায় ও বিছানার গরমে কাশি বাড়ে। প্রাতে স্বরভঙ্গের বৃদ্ধি, প্রাতে স্বরনালী অত্যন্ত শুষ্ক ও গলার স্বর কর্কশ থাকে। কিন্তু পানাহার করিলে বা কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলিলে ক্রমশ ঐ ভাবটি কমিয়া আসে। গলার স্বর প্রায় বন্ধ, তৎসহ টাটানি ব্যথা। চীৎকার করিয়া বা জোরে কথা বলিতে পারে না। রোগী মনে করে গলায় শ্লেষ্মা জড়াইয়া আছে, সে জন্য পুনঃ পুনঃ উহা তুলিয়া ফেলার চেষ্টা করে। শ্বাসনলীর কোনও তরুণ পীড়া অতীত হইবার পরও পুরাতন স্বরভঙ্গে প্রাতে বৃদ্ধি পাইলে কস্টিকামই উপযোগী।  

চক্ষু পাতার পক্ষাঘাত ও পাতা ঝুলিয়া পড়া লক্ষণে লক্ষণ— চোখের পাতা ঝুলিয়া পড়ে, রোগী পাতা তুলিতে পারে না। কস্টিকামে পক্ষাঘাত হেতু বা হামের পর এই পীড়া হইতে দেখা যায়। টাইফয়েড ও মস্তিষ্ক মেরুমজ্জার প্রদাহে চোখের পাতা ঝুলিয়া পড়িলে জেলস এবং বাতের রোগীর ঠাণ্ডায় বা জলে ভিজায় চোখের পাতা ঝুলিয়া পড়িলে রাসটক্স উপযোগী। সিপিয়ার পক্ষাঘাত হইবার মত চোখের উপরের পাতা ভারী বোধ হয় ও ঝুলিয়া পড়ে।

গলনলীর পীড়ায়- কাশির সহিত গলার ভিতরের মাংস ছিড়িয়া গিয়াছে এইরূপ ব্যথা বোধ হয়। কোন জিনিষ গিলিতে গেলে গলার ভিতর তীক্ষ্ণ ব্যথা মনে হয়। গলার ভিতরের পেশীর পক্ষাঘাত হেতু গিলিতে কষ্ট মনে হয়। সর্বদা ঢোক গিলার ইচ্ছা কিন্তু ঢোক গিলিতে গেলে অন্ননালীতে ফোলা বা সংকোচন বোধ। গলনালীতে ঠাণ্ডাবোধ হয়। গলার ভিতর ও তালুর পিছনে গয়ার জমে, কাশিলে উহা বাহির হয়।

উদরাময়ে লক্ষণ- অজীর্ণ ও ক্ষয়রোগগ্রস্ত ব্যক্তির মাংস খাইলেই যদি উদরাময় হয়। বিকাল ও রাত্রিতে দাস্ত হয়। উদরাময়ের সহিত মলদ্বারে কোথানি ও জ্বালা থাকে। পেটে ঠাণ্ডা লাগিয়া উদরাময় হয়। মলত্যাগ করিবার সময় মলদ্বার হইতে রক্তস্রাব হয় ও ছুরি দিয়া কাটিয়া ফেলার মত যন্ত্রণা হয়। দাস্ত হইবার পর উৎকণ্ঠা, বুক ধড়ফড়ানি ও মলদ্বারে জ্বালা, চুলকানি ।

মৃগীরোগে লক্ষণ- কস্টিকামের রোগী বহির্বায়ুতে বেড়াইতে বেড়াইতে হঠাৎ অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া যায়, কিন্তু তৎক্ষণাৎ জ্ঞানোদয় হয় ও অজ্ঞান অবস্থায় অসাড়ে প্রস্রাব করে। যৌবন আমগন কালে যে সকল রোগীর মৃগীর ন্যায় আক্ষেপ হয় অর্থাৎ প্রথম ঋতু দর্শনের সময় বা ঋতুর দোষে মৃগী হইলে এবং রাত্রিতে নিদ্রিতাবস্থায় মৃগীর আবির্ভাবে কস্টিকাম ফলপ্রদ । অত্যধিক ঠাণ্ডা লাগা হেতুও ইহাতে মৃগীরোগ হইতে পারে। 

মুত্রযন্ত্রের পীড়ায় লক্ষণ- ইহার রোগী প্রস্রাবের বেগ এক মুহূর্তও ধারণ করিতে পারে না। অসাড়ে প্রায়ই প্রস্রাব নির্গত হয়। পুনঃ পুন প্রস্রাবের বেগ, তৎসঙ্গেই অসাড়ে ২/১ ফোঁটা মূত্র নিঃসরণ, হাঁচিতে কাশিতে প্রস্রাব নিঃসরণ, প্রস্রাব দ্বারে চুলকানি, চলাফেরার সময় ফোঁটা ফোঁটা প্রসাব নিঃসরণ, নিদ্রিতাবস্থায় অসাড়ে মূত্রত্যাগ, প্রথম নিদ্রাতেই শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব গ্রীষ্মকালে কম, শীতকালে বেশী। মূত্রথলীর গ্রীবাদেশে পক্ষাঘাত প্রভৃতি লক্ষণে কষ্টিকাম উপকারী। কষ্টিকামের প্রস্রাবে লিথিক এসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। প্রস্রাবের তলানি কালচে কটা রঙের ঘোলা বা ধোয়ার মত ।

স্ত্রীরোগে লক্ষণ- কস্টিকামে স্ত্রীরোগী সুস্থ ও সবল মাতারূপে কখনও পরিগণিত হইতে পারে না। শুধু যে ঋতুস্রাবের নানা প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তাহা নহে, সঙ্গম কার্যটিও তাহাদের নিকট যন্ত্রণাদায়ক হইতে দেখা যায়। কোনও প্রকারে গর্ভ সঞ্চিত হইলে গর্ভস্থ শিশুটি স্বাভাবিক ভাবে বর্ধিত হয় না। তাহা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ প্রদর স্রাব, স্তবদ্বয়ের শুষ্কতা বোঁটার ক্ষত ও ফাটা ফাটা ভাব এগুলিই কষ্টিকামের স্ত্রীচিত্র। ঋতুস্রাবটি চলাফেরা করিলে অর্থাৎ দিবাভাগে বৃদ্ধি হয় ও রাত্রে শয়নে উহা লোপ পায় (বিপরীত ক্রিয়োজোট)। ঋতুর পূর্বে বা ঋতুকালীন পেটে মোচড়ানি ব্যথা হইলে, সামনে ঝুঁকিলে বেদনার উপশম হইলে এবং ঐ বেদনা ও রজঃস্রাব আদৌ রাত্রে না থাকিলে কস্টিকাম উপকারী।

ইগ্লেসিয়া ও নেট্রাম মিউরের তুলনা- অত্যন্ত বিষণ্ণতাই কস্টিকামের প্রধান মাসসিক লক্ষণ। কস্টিকামের রোগী নিজের দেহের অসুস্থতার জন্য বিষণ্ন, কিন্তু ইগ্নেশিয়ার রোগী আপন জনের মৃত্যুর শোকে বিষ বা আত্মীয় স্বজনের স্নেহ ভালবাসা হারাইয়াছে এই আশংকায় বিষণ্ন। বন্ধু বান্ধবের সহানুভূতিতে ইগ্নেশিয়ার মনের সহানুভূতিতে বিমৰ্ষতা বৃদ্ধি হয়। ইগ্নেশিয়াতে বুক ফাটিলেও রোগীর মুখ ফোটে না, আর কস্টিকামের রোগীর নিজের দুঃখের কথা অন্যের নিকট বলিয়া তাহাদের কান কালাপালা করিয়া দেন।
 
বৃদ্ধি- শুষ্ক ঠাণ্ডা হাওয়ায়, ঠাণ্ডা জলে স্নানে, পরিষ্কার আবহাওয়াযুক্ত দিনে, কোনও প্রকার প্রচণ্ডতা পূর্ণ আবহাওয়ায়, সন্ধ্যাকালে, কফি পানে, আহারের পর, অগ্নিদগ্ধের পর, ঘর্মকালীন ।

উপশম - বর্ষার ভিজা ঠাণ্ডায়, গরমের দিনে ঠাণ্ডা পানীয়ে, উষ্ণ বায়ুতে, দ্বিপ্রহর রাত্রিতে, মৃদু সঞ্চালনে।

সদৃশ বা তুলনীয় ঔষধ- শ্লেষ্মা গিলিয়া ফেলায়-আর্ণিকা, অসম্পূর্ণ পক্ষাঘাতে জেলস, প্রাফাইটিস ও সিপিয়া, সন্ধ্যাকালে স্বরভঙ্গ বৃদ্ধিতে কার্বো ও রিউমেক্স, দীর্ঘকালের স্বর লোপে-সালফার। কস্টিকামের পূর্বে বা পরে ফসফোরাস ব্যবহৃত হয় না।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ- এসাফিউটিডা, ডালকামারা, ওয়েকাম, নাক্স ভম ।

সম্পূরক ঔষধ- কার্বোভেজ, কলোসিন্থ।

পরবর্তী ঔষধ- কেলি আয়োড, লাইকো, নাক্স ভম, পালস, রাসটক্স।

ক্রিয়া স্থিতিকাল- ৫০ দিন। 

শক্তি বা ক্রম- ৩০ হইতে ১০০০ বা উচ্চ শক্তি। ল্যারিনজাইটিসে তরুণ পীড়ায় উচ্চ শক্তি, পুরাতনে নিম্নশক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ