ব্যবস্থাপত্র - ৬ষ্ঠ অধ্যায় - প্রথম বর্ষ

প্রথম বর্ষ - ৬ষ্ঠ অধ্যায়

ব্যবস্থাপত্র 
(Prescription)





প্রশ্ন- ব্যবস্থাপত্র কি?

উত্তর : রোগীর ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণসমূহ দর্শন, শ্রবন, স্পর্শন প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগীর নিজের বর্ণনা হইতে রোগীর আপনজনের নিকট হইতে এবং চিকিৎসক স্বয়ং দেখিয়া শুনিয়া রোগীর দেহে ও মনে যে লক্ষণসমূহ প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করেন সেগুলির সাহায্যে রোগীলিপি প্রস্তুত করিয়া যে সদৃশ্যতম ঔষধটি সেবন করিবার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করেন বা ব্যবস্থা করেন, তাহাকেই ব্যবস্থাপত্র বা প্রথম ব্যবস্থাপত্র বলা হয়।

ব্যবস্থাপত্রে রোগীর ইতিহাস, ঔষধ সেবন প্রণালী, কতদিন পর চিকিৎসকের সহিত পুনরায় দেখা করিতে হইবে ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ থাকে। "ব্যবস্থাপত্রে ঔষধের নাম ও বিস্তারিত বিষয় জটিল ও অস্পষ্টভাবে লেখা উচিত নয়। সহজ, সরল এবং স্পষ্টভাবে লেখা উচিত যাহাতে কম্পাউণ্ডার সহজেই বুঝিতে বা পড়িতে পারেন। যদি চিকিৎসক মনে করেন যে ঔষধের নাম রোগীকে জানানো উচিত নয় তাহা হইলে তিনি সাংকেতিক ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারেন।



প্রশ্ন-  ব্যবস্থাপত্রের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দাও।

উত্তর : ব্যবস্থাপত্রের চারিটি অংশ আছে। যথা-
১। সুপারস্ক্রিপশন। .
২। ইনসস্ক্রিপশন।
৩। সাবস্ক্রিপশন।
৪। সিগনেচার ।
১। সুপারস্ক্রিপশন-ইহাতে রোগীর নাম, বয়স ঠিকানা প্রভৃতি উল্লেখ থাকে। এই অংশের পর ব্যবস্থাপত্র লেখার সময়ে প্রথমে Rx লেখা হয়। R রোমানদের দেবরাজ জুপিটারের প্রতীক এবং X মিশরীয় তুকতারের জন্য উল্লেখিত বাজ পাখির মাথাওয়ালা সূর্যদেব হোরাসের চোখের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
২। ইনস্ক্রিপশন-ব্যবস্থাপত্রের মূল অংশ ইহা। এই অংশে রোগের লক্ষণ, লক্ষণের সাদৃশ্যতম ঔষধের নাম, শক্তি, মাত্রা প্রভৃতি লেখা থাকে। এই অংশটি আবার তিনভাগে বিভক্ত ।

ক) প্রধান উপাদান যাহার উপর নির্ভর করিয়া বিশেষ লক্ষণটি বিবেচনায় ঔষধটি নির্বাচন করা তাহা উল্লে থাকে। যেমন- চুলকানিযুক্ত চর্ম উম্মে সাল ব্যবস্থেয়।

খ) সহায়ক উপাদান-উপরে উল্লেখিত লক্ষণকে সাহায্য করার জন্য যে ঔষধের প্রয়োজন হয় তাহা এখানে উল্লে থাকে। যেমন সালফারের পর সোরিণাম প্রয়োগ করা যায়।

গ) সংশোধনী-কোন একটি ঔষধ প্রয়োগ করার পর আর একটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে যাহা আদৌ ঔষধজনিত নয়। তখন প্রয়োজন বোধে লক্ষণটি অন্য একটি ঔষধের সাহায্যে সংশোধন করিয়া নেওয়া যায়।

৩। সাবস্ক্রিপশন-এই অংশে কম্পাউন্ডারকে নির্দেশ প্রদান করা হয় যাহাতে কম্পাউন্ডার নির্দেশ মোতাবেক ঔষধ বিতরণ করেন।

৪। সিগনেচার এই অংশে রোগীর প্রতি নির্দেশ থাকে কখন ঔষধ সেবন করিতে হইবে, কি পরিমাণে খাইতে হইবে এবং পরবর্তী সময়ে কতদিন পর রোগীকে দেখা করিতে হইবে প্রভৃতির নির্দেশ থাকে। পরে চিকিৎসকের স্বাক্ষরসহ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও তারিখ লেখা হয়।






প্রশ্ন- একটি ব্যবস্থাপত্রের নমুনা লিখ ।


উত্তর :



 
প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজনীয়তা কি?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক প্রাকৃতিক নিয়মভিত্তিক সদৃশ বিধানানুসারে এক আরোগ্যময় চিকিৎসা পদ্ধতি। ইহা এক নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। কোনও রোগীতে কোন ঔষধ প্রয়োগ করিলে ঐ ঔষধের কি ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাহা জানা হোমিও চিকিৎসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। হোমিওপ্যাথিতে নির্বিচারে ঔষধ সেবন করা বা ব্যবস্থা করার কোন নিয়ম নাই। রোগীর পূর্ব ইতিহাস বা পূর্বে কি ঔষধ ব্যবহার করিয়াছে তাহা জানা চিকিৎসকের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই ব্যবস্থাপত্রের মধ্যে ঔষধ সেবনের ইতিহাস উল্লে থাকা প্রয়োজন যাহাতে পরবর্তীতে ঔষধ নির্বাচন করিতে চিকিৎসকের কোন বেগ পাইতে না হয়। যেমন কোনও রোগী প্রথমে এক চিকিৎসকের নিকট ঔষধের ব্যবস্থা করিয়া ব্যবহার করিল। পরবর্তীতে কোন চিকিৎসকের নিকট পূর্বের কোন চিকিৎসার কথা না বলিলে বা কি ঔষধ সেবন করিয়াছে তাহা চিকিৎসকের অজ্ঞাত থাকিলে ঔষধ নির্বাচন করিতে যথেষ্ট অসুবিধা হইবে এমনকি দ্বিতীয় চিকিৎসকের প্রদত্ত ঔষধের সুফল পাওয়াও দুষ্কর হইবে। সেজন্যই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং রোগীর নিকট চিকিৎসাকার্যের যাবতীয় ব্যবস্থাপত্র সংরক্ষণ করা একান্তই প্রয়োজন এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজনীয়তা সেজন্যই অনস্বীকার্য।




প্রশ্ন- অবস্থাভেদে ব্যবস্থাপত্রকে কি কি নামে অভিহিত করা যায়?

উত্তর : ব্যবস্থাপত্রকে অবস্থাভেদে নিম্নলিখিত নামে অভিহিত করা যায়-

১) উত্তেজক কারণঘটিত ব্যবস্থাপত্র বিভিন্ন উত্তেজক কারণজনিত যেমন হঠাৎ গরম বা ঠাণ্ডা লাগা হেতু, প্রাকৃতিক বা আবহাওয়ার পরিবর্তন:নিত, প্রাবণ, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে, অচির মায়াজমের প্রভাবে, অতিভোজনের ফলে, সুপ্ত সোরার সাময়িক উচ্ছাস প্রভৃতি কারণে যে সকল অচির রোগ (জ্বর, পেটের পীড়া, কলেরা বমি প্রভৃতি) ঐ সকল প্রকাশিত লক্ষণ সাদৃশ্যে যে উপযুক্ত ঔষধটি ব্যবস্থা করা হয়, সেই ব্যবস্থাপত্রকে উত্তেজক কারণঘটিত ব্যবস্থাপত্র বলা হয় ।

২) পরিপোষক কারণঘটিত ব্যবস্থাপত্র-বিভিন্ন পরিপোষক কারণের ফলে (যেমন-অমিতাচার, অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস, মানসিক গোলমাল, ক্রমাগত অনিদ্রা) যে সকল রোগ দেখা দেয় এবং যে সকল রোগ অনেকটা চিররোগের ন্যায় মনে হইলেও ঐগুলি মূলতঃ চিররোগ নয় (যেমন-কোষ্ঠ কাঠিন্য, নিদ্রাহীনতা, আহারে বিশ্বাদ, মাথাঘোরা প্রভৃতি) এই সব ক্ষেত্রে লক্ষণের সাদৃশ্যে যে উপযুক্ত ঔষধটি ব্যবস্থা করা হয় তাহাকে পরিপোষক কারণঘটিত ব্যবস্থাপত্র বলা হয়।
 
৩) চির মায়াজম ঘটিত ব্যবস্থাপত্র-চির মায়াজমের ফলে অর্থাৎ সোরা সিফিলিস ও সাইকোসিসের একক বা মিশ্র কারণের ফলে যেসব চিররোগ দেখা দেয়। (যেমন-ক্যান্সার, অর্শ, চর্মপীড়া, বাত প্রভৃতি) তাহার লক্ষণানুসারে যে সাদৃশ্য ঔষধটি ব্যবস্থা করা হয়, তাহাকে চির মায়াজম ঘটিত ব্যবস্থাপত্র বলা হয়।

৪) ঔষধজনিত ব্যবস্থাপত্র- বিসদৃশ উগ্র ঔষধ বৃহৎমাত্রায় সেবন করার ফলে যে ধরণের ঔষধজনিত চিররোগ বা কৃত্রিম রোগ সৃষ্টি হয় এবং রোগজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়, ঐ সকল লক্ষণ সাদৃশ্যে যে ঔষধ ব্যবস্থা করা হয় তাহাকে ঔষধজনিত ব্যবস্থাপত্র বলা হয়।

৫) আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত ব্যবস্থাপত্র বিভিন্ন আকস্মিক দুর্ঘটনাজ যেমন-আঘাতাদির কারণে, বিষাক্ত জীবজন্তুর দংশনের ফলে, কোন স্থান কাটা গেলে প্রভৃতি কারণে যেসব রোগ দেখা দেয় ঐ সকল অবস্থায় আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থাপত্রের সাথে যে সব ঔষধের ব্যবস্থা করা হয়, তাহাকে আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত ব্যবস্থাপত্র বলা হয়।

৬) ধাতুগত ব্যবস্থাপত্র রোগীর ধাতুগত বা জন্মগত বা বংশগত কারণের ফলে রোগীতে যে ধরণের দৈহিক, মানসিক ও ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, ঐ সকল বৈশিষ্ট্য বা ধাতুগত লক্ষণের সাদৃশ্যে যে ঔষধের ব্যবস্থা করা হয় তাহাকে ধাতুগত ব্যবস্থাপত্র বলা হয়। যেমন- যেসব যুবক যুবতীর চেহারা সুন্দর, লম্বা, পাতলা, কটা চুল, সুন্দর নয়ন, রক্তপ্রধান ধাতু, যাহার শীঘ্র বাড়িয়া উঠে, সামান্য কুঁজো হইয়া হাঁটে, বুদ্ধিমান, চালাক ও অভিমানী তাহাদের ক্ষেত্রে ধাতুগত ব্যবস্থাপত্রে ফসফোরাস ব্যবস্থা করিতে হয়।




প্রশ্ন-  দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র কাহাকে বলে?

উত্তর : কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থাপত্র রচনার সময় আমরা রোগীতে প্রকাশমান সমুদয় লক্ষণ সংগ্রহ ও বিচার বিশ্লেষণ করিয়া থাকি। সুনির্বাচিত ঔষধ নির্বাচন করিয়া রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উপযুক্ত শক্তি ও মাত্রার প্রয়োগ করি। ঔষধ সুনির্বাচিত হইলে ফল অবশ্যই পাওয়া যাইবে। কিন্তু আবশ্যকীয় সময় অপেক্ষা করিয়াও রোগীতে বোধগম্য কোন প্রতিক্রিয়া যদি পরিলক্ষিত না হয় তবে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচনে নয় শক্তি নির্বাচনে ভুল হইয়াছে। এইক্ষেত্রে প্রদত্ত ঔষধটি উপযুক্ত শক্তিতে প্রয়োগ করিতে হয়। রোগীতে সুনির্বাচিত ঔষধের ক্রিয়াধারার উপরই পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে। প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ সঠিকভাবে নির্বাচিত না হইলে বা প্রদত্ত ঔষধটি ক্রিয়া না করিলে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রশ্নই উঠে না। এক কথায় দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র বলিতে একের পর এক পূর্ববর্তী ঔষধের পর পরবর্তী ঔষধ ও শক্তি নির্বাচনকে বুঝায়। আগত রোগীকে পুনরায় ভালভাবে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া এবং পূর্ববর্তী প্রদত্ত ঔষধগুলির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করিয়া দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়।




প্রশ্ন- কখন এবং কেন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়?

উত্তর : প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণে যখন রোগীর অবস্থা পরিবর্তন লক্ষিত হয় তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পুনর্বার বা প্রতিষেধক অথবা পরিপূরক হিসাবে প্রদান করা যাইতে পারে। প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর দেখা গেল যে ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা উন্নতির দিকে যাইতেছে, এইরূপ উন্নতি বেশ কিছুদিন চলার পর আর কোন ক্রমোন্নতি বা অবনতি পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধের লক্ষণাবলী তখনও বর্তমান আছে। তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পূর্ণবার হিসাবে প্রদান করা হয়। আর যদি প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধের লক্ষণাবলী বর্তমান না থাকিয়া অন্য একটি ঔষধের লক্ষণাবলীর সদৃশ হয় তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরিপূরক হিসাবে প্রদান করা হয়। যখন প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীর অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে না গিয়া অবনতির দিকে যায় তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের প্রতিষেধক হিসাবে প্রদান করা হয়। এইভাবে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ প্রয়োগের পর রোগীর লক্ষণের অর্থ উপলব্ধি, রোগী অবস্থা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিটি লক্ষণের সুচিন্তিত বিশ্লেষণ দ্বারা আমরা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র সম্বন্ধে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছিতে পারি। প্রত্যেক দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্বাচনে। এইভাবে যুক্তিপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করিলে রোগী সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নিশ্চিতরূপে আরোগ্যর পথে অগ্রসর হইবে।





প্রশ্ন- অচিররোগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র কিভাবে করিতে হয়?
উত্তর ঃ অচিররোগের ক্ষেত্রে সদৃশ মতে কোন ঔষধ প্রয়োগের পর যদি রোগীর যন্ত্রণার উপশম হয় অর্থাৎ যদি সুনিশ্চিত উন্নতির লক্ষণ দেখা যায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের কোন প্রয়োজন হইবে না। যতক্ষণ রোগীর উন্নতি অব্যাহত থাকে ততক্ষণ ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিতে হইবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে পুনরায় যদি প্রথমে ত্রান পাওয়া লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োগকৃত ঔষধটির অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে। কিন্তু এই রোগীতে যদি প্রথম হ্রাস পাওয়া লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োগকৃত ঔষধটির অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে। অনেক ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাধিক বৃদ্ধি দূর হওয়ার পর রোগী ক্রমোন্নতির পথে অগ্রসর হইবে এবং প্রয়োগকৃত ঔষধের একমাত্রাতেই আরোগ্য হইবে। কিন্তু যদি এই বৃদ্ধির জন্য রোগীর জীবন সংশয় দেখা দেয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে বিষয় ঔষধ দিয়া ঐ ঔষধের ক্রিয়া শেষ হইলে অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধির অবসান হইলে যদি প্রথমে প্রয়োগকৃত ঔষধটির লক্ষণ তখনও বর্তমান থাকে তবে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিতে অনেক বেশী সময় ব্যবধানে ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে।

যদি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন ক্রমোন্নতি অব্যাহত থাকার পর রোগলক্ষণগুলি সম্পূর্ণ দূরীভূত না হয় বা পূর্বে দূরীভূত লক্ষণগুলি বারবার আবির্ভূত হয় এবং প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করিয়াও একই অবস্থা চলিতে থাকে তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরিপূরক কোন ঔষধ দিতে হইবে। যদি কোন অচিররোগের সুনির্বাচিত ঔষধের প্রত্যেক মাত্রা প্রয়োগের পর ঔষধের ক্রিয়া খুব স্বল্পকাল স্থায়ী হয় এবং তাহার পরই তীব্র মারাত্মক, এই ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধশক্তি পরিবর্তন পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া প্রতিবারই অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে দ্রুত পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে। কারণ এইসবক্ষেত্রে প্রদাহজনিত অবস্থার আধিক্য হেতু ঔষধের ক্রিয়া বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না।

কিছুদিন সঠিকভাবে ভাল থাকার পর যদি রোগীর সকল লক্ষণ পুনরায় উদয় হয় তবে বুঝিতে হইবে এই অচির রোগের পেছনে কোন মায়াজমঘটিত দোষ বর্তমান আছে। এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ পরিবর্তন করতঃ কোন এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিতে হইবে।





প্রশ্ন-  চিররোগের ক্ষেত্রে কিভাবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হয়।

উত্তর : চিররোগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্বাচন করা বেশ কঠিন কাজ। রোগী প্রায়শই তাহার অতীত ইতিহাস, বংশ ইতিহাস, রোগের সম্ভাব্য উত্তেজক ও বাহক কারণসমূহ ভুলিয়া যায় এবং দীর্ঘদিন রোগ ভোগের ফলে সঠিক প্রকৃতি, হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনা প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের সঠিক বর্ণনা দিতে পারে না। ইহা ছাড়া প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর সামান্য পরিবর্তন রোগী ঠিকভাবে উপলব্ধি করিতে পারে না। ইহাতে চিকিৎসক ভুল বিবরণের কারণে ভুল ঔষধ নির্বাচন, করেন। দুরারোগ্য ও একদৈনিক রোগে এই অসুবিধা আরও বেশী দেখা দেয়।

প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি কোন চিররোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ কিছুদিনের জন্য উপশমিত হইয়া পুনরায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় অথবা পূর্বের দূরীভূত লক্ষণ পুনরায় দেখা দেয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে পূর্বে নেওয়া উষাই অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে। কিন্তু যদি কিছুদিন উপশম লাভের পর রোগী একটা স্থিতাবস্থায় আনিয়া দাঁড়ায় তবে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে লক্ষণগুলির কোনরূপ হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে কিনা? যদি উপযুক্ত সময়ের ব্যবধানেও লক্ষণের কোন পরিবর্তন না ঘটে তবে প্রথম ব্যবস্থাপত্রে নির্বাচিত ঔষধই আর একবার উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিয়া দেখা দরকার যে ঐ ঔষধটি রোগীতে আর কোন পরিবর্তন আনিতে পারে কি না? প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি রোগীতে কিছু নূতন লক্ষণ দেখা দেয় যাহা প্রয়োগকৃত ঔষধরেও নয় বা পূর্বের অবদমিত অবস্থারও নয় তবে বুঝিতে হইবে ইহা রোগের বৃদ্ধি। এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে নূতন করিয়া রোগলিপি প্রস্তুত করিয়া ঔষধ পরিবর্তন করিতে হইবে।

যদি নূতন লক্ষণগুলি প্রয়োগকৃত ঔষধের লক্ষণ হয় তবে বুঝিতে হইবে ভুল ঔষধ নির্বাচন করা হইয়াছে এবং তাহা অহেতুক বারবার প্রয়োগ করা হইয়াছে। এইক্ষেত্রে কয়েকদিন অপেক্ষা করিলে আপনা আপনিই চলিয়া যাইবে। তখন পুনরায় লক্ষণসমষ্টি পর্যালোচনা করিয়া দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে নূতন ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে।

নূতন লক্ষণগুলি যদি রোগীর পুরাতন অবদমিত লক্ষণ হয় তবে বুঝিতে হইবে রোগী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতেছে। এখানে শুধু ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিলেই দেখা যাইবে কিছুদিন পরে লক্ষণগুলি প্রথমে ঔষধের ক্রিয়াতেই ধীরে ধীরে দূরীভূত হইবে। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় যে লক্ষণগুলি দূরীভূত হইতেছে না তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রথম ব্যবস্থাপরের ঔষধ পুনরায় উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিতে হইবে।

যদি প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীতে সকল লক্ষণ দূরীভূত হয় কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বার বার ঘুরিয়া আসে তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রথম ঔষধটির পরিপূরক ঔষধটি অবশ্যই রোগীর লক্ষণসমষ্টির সদৃশ হওয়া আবশ্যক ।

সোরা প্রধান মিশ্র মান্নাজমেটিক রোগে যদি সুনির্বাচিত এন্টিসোরিক ঐ প্রয়োগের পর রোগীর সকল সোরিক লক্ষণসমষ্টি উপশমিত হয় কিন্তু রোগী হঠাৎ গলায় বা জিহ্বা ক্ষত বা অন্য কোন সিফিলিটিক লক্ষণ প্রকাশিত হয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে এন্টিসোরিক ঔষধ পরিবর্তন করিয়া এন্টি সিফিলিটিক ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে। অনুরূপভাবে যদি কোন সাইকোটিক লক্ষণ দেখা দেয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে এন্ট্রি সাইকোটিক ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে। রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়ার পূর্বে এইভাবে অনেকবার চিকিৎসা পরিকল্পনা পরিবর্তন হইতে পারে ।

প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি রোগীর সকল লক্ষণ হ্রাসপ্রাপ্ত হয় কিন্তু রোগী সামগ্রিকভাবে ভাল অনুভব না করে তবে বুঝিতে হইবে রোগীদেহে কোন মূল্যবান দেহযন্ত্রের বিকৃতি ঘটিয়াছে বা অভাব আছে এবং এই রোগী কখনও পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিবে না। এই অবস্থায় রোগীকে সারাজীবন উপশমদায়ক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। 






প্রশ্ন- দ্বিতীয় ব্যবস্থাপদের ঔষধ নির্বাচনের জন্য কি কি সংকেতের উপর নির্ভর করিতে হয়?

উত্তর : দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ নির্বাচন নিম্নলিখিত চারটি সংকেতের উপর নির্ভর করে।

১) পূর্ব ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ :
ক) রোগীর প্রাথমিক লক্ষণগুলি ফিরিয়া আসিলে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করিতে হয়। ডাঃ কেন্টের মতে প্রত্যেকটি ঔষধ প্রথম দুইবার একই শক্তিতে পরে শ্রেণীমত উচ্চতর শক্তিতে ব্যবহার করিতে হয়।
খ) যখন পীড়ার কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হইয়া একস্থানে স্থির থাকে, কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণ তখনও ফিরিয়া আসে না, তখন প্রায়ই অপেক্ষা করা উচিত। কেননা, বুঝিতে হইবে যে, ঔষধের ক্রিয়া চলিতেছে এবং প্রাথমিক অবস্থা অবশ্যই ফিরিয়া আসিবে। এই অবস্থায় রোগীর সন্তুষ্টির জন্য অনৌষধির পুরিয়া ব্যবস্থা করিতে হইবে।
গ) রোগী যদি কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করে তখনও প্রাথমিক লক্ষণের জন্য
অপেক্ষা করা উচিত।
ঘ) লক্ষণের পরিবর্তন ঘটে তবুও রোগী সুস্থ বোধ করে, এই সময়ও ঔষধ পরিবর্তন করা উচিত নয় ।

২) ক্রিয়ানাশক ঔষধের সংকেত :
ক) রোগীতে নতুন লক্ষণ দেখা দেয় কিন্তু রোগীর কোনরূপ উন্নতির লক্ষণ দেখা যায় না। এই অবস্থায় বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচনে ভুল হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়ানাশক ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে।
ঘ) যদি রোগ অতিশয় বৃদ্ধি পায় বা কমার কোন লক্ষণই দেখা যায় না, তখন বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচনে ভুল হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়ানাশক ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত।
গ) চিররোগের ক্ষেত্রে ঔষধটি ক্রিয়ারত মায়াজনের সদৃশ না হইয়া মুখ মায়াজমের সাদৃশ্য হইলে সুখ মায়াজম উত্তেজিত হইয়া ক্রিয়ারত মায়াজমের সহিত একত্রিত হইয়া এক বিরাট জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিয়ানাশক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়।

৩) সাহায্যকারি ঔষধ নির্বাচনের সংকেত :
(ক) পূর্বে প্রয়োগকৃত ঔষধে যদি সম্পূর্ণ লক্ষণ বিদুরিত না হয়, কিছু কিছু লক্ষণ তখনও থাকিয়া যায়, তখন সাহায্যকারী ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়।
(খ) প্রথমে প্রয়োগকৃত ঔষধ কিছু কাজ করিয়া যদি থামিয়া থাকে এবং বদির লক্ষণের সাথে আরও কিছু নতুন লক্ষণ দেখা দেয়, এই অবস্থায় পূর্বের ঔষধের সাহায্যকারী ঔষধগুলির মধ্য হইতে সদৃশতম ঔষধটি নির্বাচন করিতে হয়।

(৪) নূতন ঔষধের সংকেত ঃ
(ক) জটিল পীড়ার ক্ষেত্রে একটি চিররোগের মায়াজমের ক্রিয়া শেষ হইয়া অন্য একটি মায়াজমের লক্ষণ পরিষ্কারভাব ফুটিয়া উঠিলে ঐ নুতন মায়াজমের লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়।
(খ) পূর্ববর্তী ঔষধের অবস্থানরত কষ্ট দূর হইয়া যায় কিন্তু পূর্বের চাপা অন্য একটি রোগের পুনরাবির্ভাব ঘটিলে এবং তাহা স্থায়ীভাবে অবস্থান করিলে বর্তমান লক্ষণানুসারে সদৃশতম একটি ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়।





.
প্রশ্ন-  কখন প্রদত্ত ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ করা হয়?
কোন ঔষধ তখনই পুনঃপ্রয়োগ করা যায় যখন যে লক্ষণাবলীর উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছিল তাহা প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় বর্তমান থাকে। যখন রোগলক্ষণের পরিবর্তন ঘটিয়াছে, রোগীর অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়াছে তখন আর পূর্ববর্তী ঔষধ প্রয়োগ করা শুধু অর্থহীন নয়, ক্ষতিকারকও বটে। হ্যানিমানের উপদেশ হইল অচির বা চিররোগের চিকিৎসাকালে প্রত্যেকটি উপশম যতক্ষন স্পষ্ট, উন্নতিশীল ও ক্রমবর্ধমান থাকিবে, ততক্ষন কোন ঔষধই পুনঃপ্রয়োগ করা চলিবে না।
কারণ প্রদত্ত ঔষধের উপকার প্রদান করা তখন সম্পূর্ণতার পথে চলিতেছে। আরোগ্য ক্রিয়া যাহাতে ত্বরান্বিত হয় সেজন্য স্বল্প সময় অন্তর পুনঃপ্রয়োগ করা দূরে থাকুক একই ঔষধ অপরিবর্তিত মাত্রায় পুনর্বার দেওয়া ও অর্থহীন। যদি অবস্থা উপযোগী থাকে, তবে পরবর্তী মাত্রাসমূহ প্রত্যেকবারে যদি অল্প অল্প পরিবর্তিত হয়, যেমন উচ্চশক্তিতে উন্নীত করে তাহা হইলে প্রানসত্তা অনায়াসে সেই ঔষধ দ্বারা পরিবর্তন লাভ করে এবং আরোগ্য ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

[7:13 PM, 3/13/2023] +880 1821-809336: নিয়মনীতি ২২৬।

কোন ঔষধ প্রয়োজন হইলে বেশ কয়েকবার প্রয়োগ করা যাইতে পারে। যতক্ষন না প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, কিংবা প্রদত্ত ঔষধের উপকার প্রদান করা সম্পূর্ণ হয় অথবা নতুন বা পরিবর্তিত লক্ষণাবলী ঔষধ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। সকল ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থার উন্নতি পরিলক্ষিত হওয়া মাত্র পুনঃপ্রয়োগ বন্ধ করিতে হইবে।

প্রশ্ন-৬.৯৪। কখনও ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ চলে না?

বা, ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ না করার সাধারণ নিয়ম কি?

উত্তর : ঔষধ পুনঃপ্রয়োগের সাধারণ নিয়ম নিম্নরূপ-

(ক) যতক্ষন পর্যন্ত ঔষধ ক্রিয়া করিতেছে বলিয়া প্রতীয়মান হইবে ততক্ষন পুনঃপ্রয়োগ করা যাইবে। ঔষধের ক্রিয়াজনিত লক্ষন যতক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান থাকিবে ততক্ষন পুনঃপ্রয়োগ নিষিদ্ধ ।

(খ) রোগীর ভাললাগা বোধ যতক্ষণ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকিবে, ততক্ষণ পুনঃপ্রয়োগ নিষিদ্ধ।

(গ) লক্ষণসমূহ হেরিং এর আরোগ্যনীতি অনুসরন করিয়া চলিলে পুনঃপ্রয়োগ

নিষিদ্ধ। আরোগ্যের গতি হইল ভিতর হইতে বাহিরের দিকে, উর্দ্ধ হইতে নিম্নদিকে,

প্রধান অস হইতে অপ্রধান অঙ্গে এবং লক্ষণসমূহের আবির্ভাবের পশ্চাৎগতিতে

অপসারনে ।

(ঘ) ঔষধ প্রয়োগের পর ঘর্ম, মল, মূত্র, প্রদর স্রাব, নাসিকা স্রাব এবং অন্যান্য পুরাতন স্রাব দেখা দিলে পুনঃপ্রয়োগ নিষিদ্ধ ।

(ঙ) পুরাতন চর্মরোগ বা অন্য কোন উদ্ভেদ, পুরাতন ক্ষত, ফিশ্চুলা ইত্যাদি পুনরায় দেখা দিলে ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ।





প্রশ্ন- চিররোগের ক্ষেত্রে ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ বা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের নিয়ম?

উত্তর : চিররোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগেও আশানুরূপ ফল লাভ করা যায় না। রোগীতে তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না বলিয়াই এই অবস্থা দেখা যায়। এই সব ক্ষেত্রে কোন অন্তবর্তী ঔষধ প্রয়োগ করিলে নির্বাচিত ঔষধের ক্রিয়া করার মত উপযুক্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়। তখন প্রদত্ত ঔষধটি পুনরায় প্রয়োগ করিতে হয়। এই সব ক্ষেত্রে বোনিং হোসেন কার্বোভেজ, পরোসিরেসাস, ওপিয়াম, সালফার প্রভৃতি ঔষধ অন্তবর্তী ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ করিতে নির্দেশ দিয়াছেন। স্টুয়ার্ট ক্লোজ এই তালিকায় মেডোরিনাম, সোরিনাম, পাইরোজেনিয়াম টিউবারকুলিনাম, সিফিলিনাম এবং বুজা সংযুক্ত করিয়াছেন ।
একাধিক মায়াজমের সম্মেলনে উৎপন্ন জটিল চিকিৎসায় সাধারনতঃ অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধের প্রয়োজন হয়। এই সব ক্ষেত্রে রোগীতে যখন যে মায়াজমের ক্রিয়া প্রকট থাকে তখন সেই মায়াজামের প্রতিকারার্থে ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়া থাকে। ফলে সেই বিশেষ মায়াজমঘটিত অবস্থার প্রতিকার হয় বটে, কিন্তু অন্য যে মায়াজমটি এতকাল প্রচ্ছন্ন ছিল তাহা প্রকাশিত হইয়া পড়ে। সম্পূর্ণ নতুন এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমাদের তখন চিকিৎসার পূর্ব পরিকল্পনা পরিবর্তন করিতে হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, কোন রোগীর সোরার লক্ষণ অত্যধিক প্রকট। রোগীতে দীর্ঘস্থায়ী টনসিল প্রদাহ, গলাব্যথা প্রভৃতি প্রাদাহিক লক্ষণ বেশী পরিস্ফুট। লক্ষণানুযায়ী তখন কোন এন্টিসোরিক ঔষধ যেমন সালফার, গ্রাফাইটিস, ক্যান্ডেরিয়া ইত্যাদি প্রয়োগ করা হইল। দেখা গেল ঐ কষ্টকর লক্ষণগুলি সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হইয়া গিয়াছে। কিন্তু তাহার স্থলে রোগীর মুখে ঘা, ভয়ানক মাথাব্যথা, প্রভৃতি নতুন উপসর্গ দেখা গেল এবং এই সমস্ত উপসর্গের সাধারণভাবে রাতে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হইল। রোগীকে প্রশ্ন করিয়া জানা গেল তাহার বহু বৎসর পূর্বে সিফিলিস রোগ হইয়াছে এবং পারদ প্রয়োগে তাহা দূরীভূত হইয়াছিল। স্পষ্টতঃ এক নূতন ক্ষেত্র উন্মোচিত হইল। এই অবস্থার মোকাবিলার জন্য আমাদেরকে কোন এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। ইহার পর যদি সাইকোটিক মায়াজমঘটিত কোন অবস্থা পরিস্ফুট হয় তবে আমাদের কোন এন্টিসাইকোটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। তারপর পূর্ণ আরোগ্য বিধানের জন্য সাধারণতঃ আবার কোন এন্টিসোরিক ঔষধের প্রয়োজন হয়। কোন ঔষধের একটি মাত্রা কোন চিররোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার করিবে তাহা আশা করা যায় না।
চিররোগের চিকিৎসাকালীন অনেক সময় কোন অচির প্রকৃতির রোগের সহসা আবির্ভার হইতে দেখা যায়। তখন আমাদের প্রথমেই সুনিশ্চিত হইতে হইবে যে, এই নবাগত রোগটি মূল রোগের অন্যরূপ বহিঃপ্রকাশ কিনা। যদি তাহা না হয়। তবে আমাদের এই তরুন রোগের জন্য কোন উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করিয়া তাহা প্রয়োগ করিতে হইবে। স্মরণ রাখিতে হইবে যে, অন্তবর্তী এই ঔষধটি শুধু অন্তর্বর্তী তরুণ অবস্থার জন্য রোগের মূল অবস্থার জন্য নয়। তরুণ পীড়াটি আরোগ্য হইয়া যাওয়ার পর যদি মূল পীড়ার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে তবে পূর্বতন ঔষধটি আবার প্রয়োগ করিতে হইবে। 




 
প্রশ্ন- লক্ষণসমূহের উপশম সত্ত্বেও রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করিলে কি করিতে হইবে?

উত্তর : লক্ষণসমূহ একদিকে যেমন রোগের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে ই ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি। লক্ষণ দূরীভূত হইলে রোগের অবসান আবশ্যম্ভাবী। প্রয়োগের পর লক্ষণের উপশম সত্ত্বেও অনেক সময় রোগী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না। এমতাবস্থায় বুঝিতে হইবে এই জাতীয় রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্যের অযোগ্য। কারণ তাহার কোন প্রধান অঙ্গ যেমন লিভার, কিডনী, হৃদপিণ্ড প্রভৃতি অকেজো হইয়াছে। এইরূপ ক্ষেত্রে উপযুক্ত উপশমদায়ক ঔষধ প্রদান ছাড়া অন্য কোন পথ নাই ।






প্রশ্ন-  চিররোগের ঔষধ প্রয়োগের পর নিম্নে বর্ণিত অবস্থার প্রত্যাশিত ফলাফল কি হইবে?

ক) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম, পরে বৃদ্ধি।
খ) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি।
গ) সুদীর্ঘকাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি। ঘ) রোগলক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল চলিতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হইতে থাকে।

উত্তর : ক) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম, পরে বৃদ্ধি : প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম পরে বৃদ্ধি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে তবে নিম্নশক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে। তাই নির্বাচিত ঔষধ উচ্চ শক্তিতে প্রদান করা প্রয়োজন এবং দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে।

খ) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পরে অবনতি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ হয় নাই। তাই প্রতিষেধক হিসাবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে।

গ) সুদীর্ঘকাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি ও অধিকাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে। কিন্তু ঔষধের মাত্রা বেশী হওয়ায় সদৃশ বৃদ্ধি ঘটিয়াছে। এমতাবস্থায় ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিলে সদৃশ বৃদ্ধি অন্তর্হিত হইবে। এখানে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হইবে না ।

ঘ) রোগলক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল ধরিয়া চলিতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঃ এইরূপ অবস্থায় মনে করিতে হইবে ঔষধ সঠিকভাবে নির্বাচিত হইয়াছে কিন্তু রোগী অনারোগ্য ছিল। তাহার দেহযন্ত্রে নিদানগত অবস্থা বহু পূর্বে হইয়াছিল। এই অবস্থায় কোন গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রদান করা হইয়াছে। দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে জীবন বিপন্ন হইতে পারে।





প্রশ্ন- সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ সত্ত্বেও কোন সুফল লক্ষিত না হইলে কি করিতে হইবে?

উত্তর : চিররোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ করিলে যদি দেখা যায় অত্যন্ত সুনির্বাচিত সাদৃশ্যবাহী ঔষধটির সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করা সত্ত্বেও কোন প্রকার উপকার হইতেছে না তখন বুঝিতে হইবে যে, যে কারণটি রোগটিকে পরিপোষণ করে সেই কারণটি এখনও বিদ্যমান আছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে রোগের পরিপোষক কারণটি দূর করিতে হইবে। এইরূপক্ষেত্রে উক্ত রোগীর বাসস্থান, জীবনযাত্রা প্রণালীর মধ্য হইতে ঐ কারণ খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে এবং তাহা দূর করিতে হইবে। এই কারণগুলি দূরীভূত করিয়া সদৃশ লক্ষণে উপযুক্ত সাদৃশ্যবাহী ঔষধ প্রয়োগ করিলেই আরোগ্য সাধিত হইবে।





সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ