ল্যাক ক্যানিনাম
LAC CANINUM
প্রতিশব্দ:- ল্যাক ক্যানিলাম, ল্যাকক্যান, কুকুরীর।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৮।
উৎস ও প্রস্তুত প্রণালী:- কুকুরীর দুগ্ধ হইতে এই ঔষধটি হোমিও ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুসারে ইহা প্রস্তুত হয়।
ক্রিয়াস্থান:- বিশেষ প্রকারের গলাবেদনা এবং ডিপথিরিয়া ও বাত রোগে এই ঔষধটির উপযোগীতা আছে। নাসিকা ও গলক্ষত গর্মী, ডেলটয়েড পেশীর বাত প্রভৃতিতেও ইহা প্রয়োগ করা হয়। হৃৎপিণ্ডের বিশৃংখলা জনিত রক্ত চলাচলের গোলযোগে যখন সর্বশরীরটি পুরাতন আকারে নীলবর্ণ ধারণ করে অর্থাৎ সাধারণ কথার যাহাকে "পেঁচোর” পাওয়া বলে, সেই অবস্থায় অন্যান্য লক্ষণাবলী বর্তমান থাকিলে ইহা ব্যবহৃত হয়।
মানসিক লক্ষণ:- অত্যন্ত বিস্মরণশীল নন, লিখিতে গেলে ভুল করে নিরালা, রোগী মনে করে, তাহার পীড়া ভাল হইবে না। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড রাগিয়া যায়। সৰ্ব্ব বিষয়ক স্বপ্নদোষ। কল্পিত সর্প দংশন। বাতাসে বা শূন্যে ভ্রমন করিতেছে এইরূপ অনুভূতি ।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) স্থান পরিবর্তনশীল বেদনা, ডান পার্শ্ব হইতে বাম পার্শ্বে বা বাম পার্শ্ব হইতে ডান পার্শ্বে স্থান পরিবর্তন করে। আজ ডানদিকের পায়ে বেদনা, কাল বামদিকের পায়ে বেদনা।
২) মস্তকের পশ্চাৎভাগে বেদনা, তৎসহ তীর বিদ্ধবৎ বেদনা ললাট পর্যন্ত প্রসারিত হয় । শিরঃপীড়ার আধিক্য অবস্থায় ঝালা দৃষ্টি, বমনোদ্বেগ ও বমন।
৩) সর্দ্দি, একটি নাসারন্ধ্র বন্ধ হইয়া যায়, অন্যটি খোলা থাকে। নাসিকার পক্ষদ্বয় এবং মুখের কোণাগুলি ফাটিয়া যায় ।
৪) জিহ্বার উপর সাদা প্রলেপ, তৎসহ উজ্জ্বল লালবর্ণের কিনারা, প্রচুর লালা নিঃসরণ। আহার কালে চোয়াল কটমট শব্দ করে। মিষ্ট দ্রব্য খাইলে পঁচা আস্বাদ বর্ধিত হয়।
৫) কোন কিছু গিলিতে কষ্ট, বেদনাবোধ, বেদনা কর্ণ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ডিপথিরিয়া ও টনসিলাইটিস পুনঃ পুনঃ একদিক হইতে অন্য দিকে পরিবর্তিত হইতে থাকে।
৬) ঋতু শীঘ্র শীঘ্র হয়। প্রচুর পরিমানে হড়হড়ে স্রাব। স্তনদ্বয় স্ফীতি, ঋতুর পূর্বে বেদনাদায়ক এবং ঋতুস্রাব আরম্ভ হইলেই উপশম ।
৭) ইহা স্তনদুগ্ধ শুল্ক করিয়া দিতে সাহায্য করে। স্তন দুগ্ধের আধিক্য।
ডিপথিরিয়া ও টনসিল লক্ষণ:- প্রায়ই ঠাণ্ডা সর্দি লাগে এবং গলদেশটিই মুখ্যভাবে আক্রান্ত হয়। ডিপথিরিয়া, টনসিল প্রদাহ ইত্যাদি যে কোনও প্রকার পীড়ায় আক্রমনটি সাধারণতঃ সর্ব প্রথম বাম পার্শ্বেই আক্রান্ত হয়, তাহার পর দক্ষিণ দিকে তাহা প্রসার লাভ করে এবং তখন আর বাম পার্শ্বে কোনও প্রকার অসুবিধা থাকে না। কিছু সময় বা কয়েকদিন পরে আবার দক্ষিণ পার্শ্বটি ছাড়িয়া রোগ শক্তিটি পুনরায় বাম পার্শ্বেই ফিরিয়া আসে, তখন আবার দক্ষিণ পার্শ্বে আর কোনও অসুবিধাই থাকে না। বার বার এইভাবে পার্শ্ব পরিবর্তন শুধু গলদেশ সংক্রান্ত পীড়ায় নয়, সমস্ত প্রকার রোগ লক্ষণেই চলিতে থাকে । ইহাই ল্যাক ক্যানের প্রধান প্রকৃতি ও নির্ভরযোগ্য প্রয়োগ প্রদর্শক লক্ষণ । প্রচুর লালাস্রাবসহ শূণ্য ঢোক গিলিবার একটি অদম্য ইচ্ছাও ইহার মধ্যে দেখা যায় এবং তাহাতে রোগীর গলদেশে ভীষণ কষ্ট অনুভূত হয়। ইহার গলদেশ বা অন্যান্য আক্রান্ত ক্ষতস্থান অতিশয় চকচকে ও উজ্জ্বল দেখায়।
গলমধ্যস্থ পীড়ায় বা গলদেশের লক্ষণ:- কোনও দ্রব্য গিলিলে কান পর্যন্ত বেদনা করে। স্পর্শে বেদনা। ঋতুর সময় কাশি ও গলায় বেদনা। ঋতু আরম্ভে গলার ঘা এবং ঋতু বন্ধ হইলেই তাহা আরোগ্য হয়। গলার ভিতরে অনবরত কুট কুট করে ও কাশি হয়। গলার বেদনার জন্য রোগী কিছুই পানাহার করিতে পারে না। সময়ে সময়ে পানীয় বস্তু নাক দিয়া বাহির হইয়া আসে।
নাসিকার ক্ষতে লক্ষণ:- নাসিকায় ঘা, দুর্গন্ধ ও মামড়ি পড়ে। আজ বাম নাকে বেশী, কাল ডান নাকে বেশী, আবার আজ ডান নাকে কাল বাম নাকে বেশী এই ভাবে পর পর পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হইলে এই ঔষধে উপকার হয়, নাসিকার পীড়ায় চাপ দিলে নাকের অস্থি টাটায়, সর্দি প্রথমে এক নাকে, পরে অন্য নাকে অবরূদ্ধ হয়।
বাত রোগে লক্ষণ:- রাতের বেদনা শরীরের একস্থান হইতে অন্য স্থানে পরিচালিত হইলে- কেলি বাইক্রম ও পালসেটিলা উপযোগী। কিন্তু ল্যাক ক্যানের বেদনা আজ ডান দিকের উপরিভাগে, কাল বামদিকের ও নিলে আজ বাম দিকে, কাল ডানদিকে এইরূপ আড়াআড়ি ভাবে পরিচালিত হয়।
স্ত্রীরোগ লক্ষণ:- ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের পূর্বে, প্রচুর রক্ত ঝলকে ঝলকে নির্গত হয়। ঋতু স্রাবের পূর্বে, স্তনে অত্যন্ত বেদনা ও স্ফীতি কিন্তু ঋতুস্রাব আরম্ভ হইলেই সেই বেদনার হ্রাস হয়। স্তনের বোঁটায় প্রদাহ ও বেদনা, একটুমাত্র ঝাঁকি লাগিলেই প্রাণ বাহির হইয়া যায়। ল্যাক ক্যানের রোগিনীর জননেন্দ্রিয় প্রদেশে সামান্য স্পর্শে কামভাব জাগরিত হয়। শ্বেত প্রদর স্রাব কেবল দিনে, রঙ হলদে বা সাদা, হাজিয়া যায় না। ঋতুর সহিত গলা বেদনা আরম্ভ হয় এবং ঋতু অবসানে সারিয়া যায়।
স্তনগ্রন্থির:- স্তনের বোঁটায় এরূপ বাধা ও টাটানি হয় যে সামান্য নড়াচড়াতে অত্যন্ত যন্ত্রণাবোধ হয়। যে সমস্ত পোয়াতির সন্তান মরিয়া গিয়াছে ও যাহাদের সন্তান বহু দিন হইতে স্তন্যপান করিতেছে তাহাদের স্তনদুগ্ধ শুকাইবার নিমিত্ত ল্যাকক্যান উৎকৃষ্ট ঔষধ ( স্তনদুগ্ধ পুনরানয়ন জন্য ল্যাক ডিক্লোর)।
পানাহরের লক্ষণ:- ইহাতে ক্ষুধার যথেষ্ট অভাব লক্ষিত হয়। চর্বি বা তৈলাক্ত খাদ্যে ইহার যথেষ্ট অভিলাষ থাকে। কিন্তু দুধের প্রতি অতিশয় স্পৃহা বর্তমান থাকায় প্রচুর পরিমানে দুগ্ধপান, ইহার রোগীর একটা অভ্যাসে পরিণত হইয়া দাঁড়ায়।
প্রান্তদেশে লক্ষণ:- ডানদিকের সায়েটিকা, বাম পা অবশ ও শক্ত, পায়ে খিল ধরে। নিম্নাঙ্গে ও পৃষ্ঠে বাত বেদনা, এ পার্শ্ব হইতে ও পার্শ্বে স্থান পরিবর্তন করে। বাহু ও আঙ্গুলে বেদনা হস্ততল ও পদতলে জ্বালা।
বৃদ্ধি বা উপচয়:- স্পর্শে, শব্দে, সিঁড়ি নিয়া উচ্চ পথে উঠিলে, ভ্রমণে, পরিশ্রমে, একদিন প্রাতঃকালে আর একদিন সন্ধ্যায়, দণ্ডায়মান অবস্থায় প্রদর বা ঋতুস্রাব, বামপার্শ্বে শয়নে, শীতল বায়ুতে, উত্তাপ প্রয়োগে রাতের যন্ত্রণা।
উপশম:- শীতকাতর হইলেও মুক্তবাতাসে এবং রাতের বেদনা কেবলমাত্র ঠাণ্ডায় উপশম, বিশ্রামে ও শয়নে, শীতল জলে, পা গুটাইয়া পেটের উপর রাখিয়া শয়নে।
সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ তুলনীয়ঃ- ল্যাকেসিস, কোনাগ্রাম, ল্যাক ফেলিনাম ।
শক্তি বা ক্রম:- ৩০ হইতে উচ্চতর শক্তি (বার বার ব্যবহার না করাই ভাল)।
0 মন্তব্যসমূহ