অনিয়মিত হৃদস্পন্দন - Atrial or Auricular Fibrillation, চতুর্থ বর্ষ - প্র্যাকটিস অব মেডিসিন

অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
Atrial or Auricular Fibrillation







অরিকিউলার ফাইব্রিলেশনের সংজ্ঞা:- হৃদস্পন্দনের বেগ যদি চূড়ান্ত ভাবে অনিয়মিত হইয়া পড়ে, হার্টবিট দ্রুত কিন্তু অসম, হার্টবিট অপেক্ষা পালস ধীরে হয় ইহার নাম অরিকিউলার ফাইব্রিলেশন অরিকলের ভিন্ন ভিন্ন পেশী তন্তু সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। চূড়ান্ত অনিয়মিত এবং অতি দ্রুত-মিনিটে কমপক্ষে ৪০০ বার সংকুচিত হইতে থাকে কিন্তু অরিকলের পূর্ণ সংকোচন হয় না, অধিকাংশ অরিকলের উদ্দীপনাই ভেন্ট্রিকল পর্যন্ত পৌঁছায় না।

অরিকিউলার ফাইব্রিলেশনের কারণতত্ত্ব:- কারণতত্ত্ব - যুবক বয়সে বাতজ্বরজনিত হৃদপেশীর দুর্বলতা, মাইট্রাল স্টেনোসিস এবং মাঝারি বয়সের পর করোনারী ধমনীর কাঠিন্য বা সিফিলিস, এথারোমা প্রভৃতি কারণে এই পীড়া হইয়া থাকে ।

রিকিউলার ফাইব্রিলেশনের লক্ষণাবলী:-
১) পালপিটিশন, বুকে ভারবোধ ।
২) বক্ষস্থলে পক্ষ সঞ্চালনের ন্যায় বিশৃংখল আলোড়ন অনুভব ।
৩) সামান্য পরিশ্রমে হাঁপানী ।
৪) নাড়ীর গতি অনিয়মিত, গড়ে মিনিটে ১০০-১২০ বার।
৫) শ্বাসকষ্ট বেশী হয়।
৬) রক্তের চাপ হ্রাস পায়।
৭) শোথ দেখা দিতে পারে।

অরিকিউলার ফাইব্রিলেশনের রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস:- রোগ নির্ণয়-এই পীড়ায় নাড়ী দ্রুত ও অনিয়মিত হয়। স্টেথোস্কোপ দ্বারা বক্ষ পরীক্ষায় এই রোগ নির্ণয় করা যায়। হাতে নাড়ীর স্পন্দন ১০০ বার হইলে বুকে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ১৫০ বার হয়। মাল্টিপল এক্সট্রাসিস্টোল, পার্শিয়াল হার্ট ব্লক এবং এট্রিয়াল ফ্লাটার হইতে এই রোগকে পৃথক করা দরকার। যখন সুস্থ শরীরে এবং স্বাভাবিক নাড়ীর গতি মধ্যে এক্সট্রা সিস্টোল দেখা দেয় তখন কিছুক্ষণ ব্যায়াম করিলে ঐ এক্সট্রা সিস্টোল বন্ধ হয় কিন্তু এট্রিয়াল ফাইব্রিলশনে অনিয়মিত অবস্থা আরও বৃদ্ধি পায় এবং নাড়ীর গতি স্বাভাবিক হইতে অধিক পাওয়া যায়। পার্শিয়াল হার্ট ব্লক ও এট্রিয়াল ফ্লাটারের ক্ষেত্রে নাড়ীর গতি বেশী থাকিলেও উহাদের স্পন্দনের একটা নিয়ম আছে। কিন্তু এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে কোন নিয়ম থাকে না। ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম দ্বারা নির্দিষ্টরূপে রোগ নির্ণয় করা যায় ।

অরিকিউলার ফাইব্রিলেশনে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:-  সকাল প্রকার দৈহিক ও মানসিক উত্তেজনার কারণাদি ও পরিশ্রম হইতে দূরে থাকিতে হইবে। মানসিক প্রশান্তি অপরিহার্য। সব "সময় রোগীকে বিছানায় শোয়াইয়া রাখা উচিত। রোগের কারণ অনুসারে চিকিৎসা করিতে হইবে।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) একোনাইট— উৎকণ্ঠাজনিত হৃদকম্প, চলাফেরায় হৃদকম্পের প্রাবল্য, কর্তনবৎ সূচীভেদ্য বেদনা, রোগী দীর্ঘশ্বাস লইতে কষ্টকর অবস্থা। সূত্রবৎ ক্ষীণ। নাড়ী ।
২) ডিজিট্যালিস- রক্ষে সূচ ফোটা বেদনা, বাম পার্শ্বে শুইলে হৃদকম্প, হৃদপিণ্ডের পীড়াজনিত শোথ লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট, ক্ষীণ নাড়ী, অনিয়মিত, ধীর ও সবিরাম, মনে হয় হৃদক্রিয়া বন্ধ হইয়া যাইবে।
৩) আর্সেনিক- রোগী চিৎ হইয়া শুইতে পারে না। নিঃশ্বাস লইলে খুব কষ্ট হয়। কোন উদ্ভেদ বসিয়া যাওয়া হেতু পেরিকার্ডাইটিস, হৃদশূল, বক্ষ মধ্যে চাপবোধ, উদ্বেগ, হৃদস্পন্দন, শোথ, অস্থিরতা, চক্ষুদ্বয় ও পদদ্বয় স্ফীত।
৪) স্পাইজেলিয়া- শ্বাসকষ্ট ও অতিশয় বুক ধড়ফড়ানি। চিৎ হইয়া শুইলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। হৃদপিণ্ডে তীক্ষ্ণ বেদনা। বাতজ্বরজনিত পেরিকার্ডাইটিস। সমস্ত বক্ষে এবং পিঠে বেদনা ছড়ায়। হৃদপিণ্ডে ছটফট ভাব, নাড়ী সবিরাম ও হৃদস্পন্দনের সাথে তালহীন ।
৫) জিঙ্কাম- কার্ডিয়াক এরিয়ার স্ফীতি, স্পর্শে অত্যন্ত বেদনাবোধসহ দুরন্ত হৃদস্পন্দন, হৃদপিণ্ডের মধ্যে সহসা ঝাঁকিবোধ। হৃদপিণ্ডের আক্ষেপিক স্পন্দন, মাঝে মাঝে হৃদপিণ্ডে একটি সজোরে আঘাত অনুভূত হয়।

ভাবীফল:-  হৃদপিণ্ডের পেশী যদি অধিক পীড়িত না হয়, ভেন্ট্রিলের স্পন্দন হার যদি অত্যধিক না হয় এবং রোগী যদি উদ্বেগ, উত্তেজনা, পরিশ্রমের কাজ না করে তবে ১০/১৫ বৎসর পর্যন্ত বাঁচিতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ