স্ট্রামোনিয়াম - STRAMONIUM, চতুর্থ বর্ষ


স্ট্রামোনিয়াম 
STRAMONIUM





প্রাকৃতিক অবস্থা:- সোলানেসিয়া। 

প্রতিশব্দ:- ধৃতরা, ধৃতরা লুরিডা, কাঁটা আতা, সোলানাম মেনিয়া কাম, ট্র্যামোনিয়াম ফরটিডাম, পেরুর আতা, ষ্টিংক উইড।

উৎস:- ধুতুরা গাছ হইতে এই ঔষধটি প্রস্তুত হইয়া থাকে।

উদ্ভিদের বর্ণনা:- ইহা তীব্র দুর্গন্ধময়, বিষাক্ত, প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট বর্ষজীবি গাছড়া। ইহার মূল খাড়া এবং আশযুক্ত । পাতাগুলি পাঁচ হইতে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, বিচ্ছিন্ন, ত্রিকোনাকার, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতি হয়। উপরের ভাগ ঘন সবুজ এবং নিম্ন ভাগ ফ্যাকাশে হইয়া থাকে। বৃদ্ধ পাতাগুলিতে পোকা ছিদ্র করিয়া ফেলে। জুলাই হইতে অক্টোবর মাসে প্রায় ৩ ইঞ্চি লম্বা চুঙ্গির আকৃতি বিশিষ্ট সাদা অথবা বেগুনী বর্ণের ফুল এই সকল গাছে দেখা যায়। ফলগুলি প্রায়ই গোলাকার ও সূঁচালো। গাছের প্রত্যেক অংশই বিষাক্ত। ফুলে ফলে ভরা তাজা গাছ হইতে সুরাসার সহযোগে মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয়।

প্রাপ্তিস্থান:- বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ মহাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে এই গাছড়া পাওয়া যায় ।
 
প্রস্তুতের ফরমুলা:- এফ-৪।

গ্রুভার:- ডাঃ হ্যানিমান ইহা প্রুড করেন। 

ক্রিয়াস্থান:- মস্তিষ্কেই ইহার মুখ্য ক্রিয়া প্রকাশিত হয়। জননেন্দ্রিয় ও গলনলীতে ইহার কিঞ্চিৎ ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু ইহার পূর্ণ ক্ষমতা একমাত্র মস্তিষ্ক বা বোধ শক্তির উপরই প্রকাশ পাইয়া থাকে। ইহার ক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের ক্রিয়া বিকৃতি ঘটিয়া বিবমিষা, প্রলাপ ও বিভ্রম উপস্থিত হয়। ইহা ছাড়া চর্ম, চক্ষু, ইন্দ্রিয়ও স্নায়ু মণ্ডলীর উপরও ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে ।

মানসিক লক্ষণ:-
১) রোগী একাকী থাকিতে ভয় পায় সে জন্য আলোক ও লোকজনের নিকট থাকে। কাল্পনিক ভীতি, জলাতঙ্কও ভীতির ভাবটি প্রধানতঃ ক্ষিপ্ত কুকুর, শৃগাল প্রভৃতি জন্তুর কামড়ের বিষ ক্রিয়ায় হয়।
২) রোগী কখনও খিল খিল করিয়া হাসিতে থাকে। কখনও আনন্দ চিত্তে 'তুড়ি' বা শিষ' দেয়, আবার কখনও বিকৃত মুখ ভঙ্গী সহকারে দাঁত ভেঙ্গাইতে থাকে। চীৎকার করিয়া অশ্রাব্য ভাষায় গালি বর্ষণ করে, অপরকে মারিতে উদ্যত হয়, কামড়াইতে চায় এমনকি উলঙ্গ হইয়া নাচিতে পর্যন্ত আরম্ভ করে।
৩) ইহার প্রলাপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বাচালতাপূর্ণ প্রচণ্ড প্রলাপ। সেই সাথে কামোন্মত্ততা ও ধর্ম্মোন্মত্ততা। কখনও হাত জোড় করিয়া সৃষ্টিকর্তার নিকট অনুনয় বিনয় করিতে থাকে। আবার পরক্ষণেই বিকট ভাবে হাসিতে থাকে। জননেন্দ্রিয় স্থান বাহির করে- পনুরায় ক্রন্দন সহকারে সকলের নিকট মার্জনা ভিক্ষা করে ।
৪) রোগী অতিশয় ভীতু ও আশংকাযুক্ত তাই একাকী বেশীক্ষণ শুইয়া থাকিতে পারেনা এমনকি সঙ্গাহীন বা বিকার অবস্থাতে পর্যন্ত বার বার বালিশ হইতে মাথাটি তুলিয়া এদিক ওদিক এক দৃষ্টে চাহিয়া দেখে, আবার গুইয়া পড়ে।
৫) রোগী মনে করে, সে যেন দুইটি মানুষ হইয়াছে এবং একটার উপর আর একটা যেন পড়িয়া রহিয়াছে।

চারিত্রিক লক্ষণ:-
১) বাচালতা পূর্ণ প্রচণ্ড প্রলাপ । প্রলাপে কাল্পনিক ভূতপ্রেত, দৈত্য দানব, জন্তু জানোয়ার প্রভৃতি দেখিতে পায় ৷ 
২) অনবরত কথা বলে ও হাসে, গান করে, এই হর্ষান্বিত এই বিষাদগ্রস্ত ।
৩) কামোন্মত্ততা, ধর্মোন্মতা।
৪) কাল্পনিক ভীতির সহিত জলাতঙ্কও মতিভ্রম।
৫) একাকী থাকিতে ও অন্ধকারে ভয়।
৬) বিকারে বিছানা হইতে ঝাঁকিয়া উঠিতে ও পালাইতে চেষ্টা করে।
৭) রোগী কথা বলিবার পূর্বে অনেকক্ষণ তোৎলামি করিয়া অতি কষ্টে কথা বলে। কথা বলিতে নানা প্রকার মুখ ভঙ্গী করিয়া থাকে। 
৮) নিদ্রাভাব, কিন্তু নিদ্রা হয় না। নিদ্রা ভঙ্গে ভয় পাইয়া উঠে, কি দেখিয়া যেন ভয় পায় ।
৯) শিশু কোথায় আছে, বুঝিতে পারে না, কারণ তাহার পিতা মাতা নিকটে থাকিলেও তাহাদিগকে ডাকে অনুসন্ধান করে।
১০) মুখ গরম, লালও ফুলো, ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়া থাকে ।
১১) উজ্জ্বল আলোক বা অন্য কোন উজ্জ্বল চকচকে দ্রব্য দেখিয়া স্প্যাজম বা কনভালসান হয়।
১২) জলাতঙ্ক তরল দ্রব্যের উপর বীত রাগ, জল বা আয়না দেখিয়া ফিট হয়।
১৩) মুখ ও গলা শুষ্ক, তথাপি জলপানে সম্পূর্ণ অনিচ্ছা।
১৪) আহারে খাদ্য দ্রব্যের কোন আস্বাদ পায় না।
১৫) মল ও মূত্র বন্ধ থাকা অথবা ফোঁটা ফোঁটা মূত্র নির্গত হয়।
১৬) সমস্ত শরীরে কম্পন, হাত পায়ে আক্ষেপিক সংকোচ। 
১৭) শরীরের কোনও একটি পেশী কিম্বা অনেকগুলি পেশী নাচে।
১৮) টাইফয়েডে প্রস্রাব বন্ধ ।
 
প্রয়োগক্ষেত্র:- বিকার, তাণ্ডব, প্রলাপ, জলাতঙ্ক, জ্বর, টাইফয়েড জ্বর, তড়কা, উন্মত্ততা, হাঁপানি কাশি, প্রস্রাবের পীড়া, স্ত্রীলোকের কামোন্মত্তা, বিসর্প, হিপজয়েন্ট, বসন্ত ও হাম, শিরঃপীড়া, কর্ণপীড়া, বক্র দৃষ্টি, তোতলামি, আলোকাতঙ্ক প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় ।

টাইফয়েড জ্বরে লক্ষণ:- জ্বর বিকারে ট্র্যামোনিয়াম একটি মূল্যবান ঔষধ। বিকার লক্ষণের প্রধান্যতাযুক্ত বেলেডোনা ও হায়োসিয়ামসের সম্মিলিত চিত্রের একত্র সমাবেশই ট্র্যামোনিয়ামের মধ্যে বিশেষ ভাবে লক্ষ করা যায়। সবিরাম প্রকৃতির জ্বর ইহাতে খুব কমই দেখা যায়। তৎপরিবর্তে বরং উচ্চতাপ সহ অবিরাম জাতীয় ও টাইফয়েড প্রকৃতি যুক্ত। ট্র্যামোনিয়ামে প্রলাপ বকা ও পাগলের ভাব নিতান্ত উন্মত্ততাজনক, সেই সঙ্গে রোগীর মুখ উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয় এবং তাহার চক্ষু যদিও বেলেডোনার ন্যায় লালবর্ণ নহে, কিন্তু চক্ষু কেমন পাগলের মত ছলছলে। নিজ কল্পনায় নানা বিষয় রোগীর মনে আসে এবং তাহাতে সে নিজে ভয় পায়। রোগী মনে করে গৃহের সকল কোণ হইতে নানা প্রকার জন্তু যেন তাহার দিকে আসিতেছে এবং তাহা দেখিয়া রোগী ভয় পায়। চক্ষু সম্পূর্ণ খোলা ও চক্ষু কনীনিকা প্রসারিত হইয়া থাকে। পূর্ণ বয়স্ক হইলে প্রলাপ বকে। এক সময় হাসে, গান গায়, অন্যকে ভেঙচায়, আবার পরক্ষণেই হস্ত যুক্ত করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। টাইফয়েড জ্বরে ট্র্যামোনিয়ামের রোগী অনেকক্ষণ পর্যন্ত বকে, তাহাতে সে যেন ক্রমশঃ আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে। রোগী তাহার নিকটে সর্বদা লোকও আলোক চাহে এবং লোকও আলোক না থাকিলে বিকার ও প্রলাপ বকা ভীষণতর হইয়া দাঁড়ায়, রোগী মনে করে সে খুব বড় অথবা তাহার একটা হাত খুব বড় কিম্বা সে যেন আকারে দিগুণ হইয়াছে। 

তড়কায় লক্ষণ:- হাম, বসন্ত বা অন্য কোনও পীড়ায় উদ্ভেদ বসিয়া কিম্বা হাম ও বসন্তের সহিত তড়কা হইয়া ট্র্যামোনিয়াম উপকারী। শিশুর হাম বসন্ত প্রভৃতির উদ্ভেদ সমূহ রীতিমত বাহির হয় না। ছটপট করে, ঘুমাইতে ঘুমাইতে কাঁদিয়া উঠে, সম্মুখে যাহাকে পায় তাহাকেই জড়াইয়া ধরে, লোক চিনিতে পারে না, এই সব লক্ষণে ইহা উপকারী। ট্র্যামোনিয়ামে শরীর লাল বর্ণ ধারণ করে। জ্ঞান সহ তড়কা, চকচকে বস্তু, আলোক কিম্বা জল দেখিলে পুনরায় তড়কা হয়। ইহার তড়কায় মস্তিষ্কে কনজেসসন ও অধিক জ্বর থাকে। উন্মত্ততা ভয় প্রকৃতিও ইহাতে দেখা যায় ।

জলাতঙ্ক রোগে লক্ষণ:- আর্শি বা জল কিম্বা কোন উজ্জ্বল বস্তু দেখিলে রোগী ভয়ানক প্রলাপ বকে, ফিট হইয়া যায়। বিকারে রোগী পালাইতে চেষ্টা করে। কুকুর বা শৃগাল কামড়াইবার কিছুদিন পরে যখন রোগী জল কিংবা কোনও প্রকার চকচকে বস্তু দেখিয়া ভয় পায়, পাগলের মত হয়, তখনই জলাতঙ্ক রোগ হইয়াছে বুঝিতে হইবে। রোগী কুকুরের ন্যায় ডাকে কিংবা কামড়াইতে চায়। মুখ শুষ্ক, চক্ষু তারকা প্রসারিত হয়। এই সকল লক্ষণে ট্র্যামোনিয়াম উপযোগী

হাঁপানী কাশি লক্ষণ:- সাধারণতঃ ৪ প্রকার হাঁপানী দেখিতে পাওয়া যায়- রেনাল, কার্ডিয়াক, ব্রঙ্কিয়াল এবং স্প্যাজমডিক। রেনাল এজমায় পরিমাণে প্রস্রাব অধিক হইলে রোগী বেশ সুস্থ থাকে, প্রস্রাব অল্প হইলে টান, কাশি প্রভৃতি কষ্টকর উপসর্গের বৃদ্ধি হয়। কার্ডিয়াক এজমায় পরিশ্রম না করিলে হৃৎপিণ্ডের অবস্থা একটু ভাল থাকিলে হাঁপানী ও কষ্টের অনেকটা উপশম হয়। ইহার ব্যতিক্রম হইলেই কষ্টের বৃদ্ধি হয়। ব্রঙ্কিয়াল এজমায় ঠাণ্ডা আদৌ সহ্য হয় না, ঋতু পরিবর্তনে, ঠাণ্ডায় ও শীতে দারুণ কষ্ট হয় সেজন্য তাহাকে স্নান ও আহার খুব সাবধানে করিতে হয়। স্প্যাজমাটিক এজমা ইহার ঠিক বিপরীত। হঠাৎ ঠাণ্ডাই বেশ সহ্য হয়। রোগী ঠাণ্ডা চায়। প্রত্যহ স্নান, ঠাণ্ডা দ্রব্য পানাহার, ঠাণ্ডা বাতাস ইত্যাদি বাহ্যিক আভ্যন্তরীক সকল প্রকার ঠাণ্ডাই বেশ সহ্য হয়। এই শেষোক্ত জাতীয় হাঁপানীতে রোগীর যেন শ্বাস বন্ধ হয়। খোলা বাতাস চায়, কথা বলিতে পারে না, নিঃশ্বাস গ্রহণে দারুণ কষ্ট ইত্যাদি লক্ষণগুলি পাইলেই ট্র্যামোনিয়াম ব্যবহার করা উচিত।আক্ষেপিক হুপিং কাশিতেও ইহা ফলপ্রদ ।

উদরাময়ে লক্ষণ:- টাইফয়েড জ্বর ও সুতিকা জ্বর ভোগকালীন উদরাময় হইলে এবং তাহাতে মলে অত্যন্ত বিশ্রী দুর্গন্ধ থাকিলে ইহা উপকারী। মল তরল ও কাল রঙের, কখন কখন ঈয়ৎ হরিদ্রা বর্ণের এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধ যুক্ত, পচা গন্ধ, বাহ্যের সহিত পেটে কোন প্রকার বেদনা, কামড়ানি বা খামচানি থাকে না। বাহ্যের সময় প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম হয়। শিশুদের পীড়ায় ইহা অধিকতর উপযোগী। উদরাময় কালে শিশু বড়ই রাগী ও খিটখিটে হয় এবং যাকে তাকে মারে বা কামড়ায় ।

প্রস্রাব লক্ষণ:- টাইফয়েড জ্বরে কিম্বা প্রসবের পর প্রস্রাব বন্ধ থাকিলে ট্র্যামোনিয়াম উপকারী। মূত্রাশয়ে প্রস্রাব জমিয়া প্রস্রাব না হইলে ইহা উপকারী।

স্ত্রীলোকের কামোন্মত্ততায় লক্ষণ:- লজ্জাশীলা, সচ্চরিত্রা, সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোক হঠাৎ মুখরা হয়, কামুক হইয়া কামপূর্ণ গান ও কথা বলে, অশ্রাব্য কুকথা বলে, কামোন্যাদের পরিচয় দেয়, কামরিপু পূরণের নিমিত্ত ব্যস্ত হইয়া পড়ে। বিশেষতঃ এইরূপ ভাব মাসিক ঋতুর পূর্বে হইলে ট্র্যামোনিয়াম উপকারী। এই সময় ঋতুস্রাব প্রায়ই প্রচুর পরিমাণে হয়। কুকুরাদি জন্তুদের জোড় খাওয়ার সময় তাহাদের শরীরের যে রকম বিকট গন্ধ নির্গত হয় এই রোগাক্রান্ত স্ত্রীলোকদিগের এই পীড়া হইয়া তাহাদের গাত্র হইতে ঐরূপ গন্ধ নির্গত হইলে ট্র্যামোনিয়াম অধিকতর উপযোগী।
 
তোতলামী লক্ষণ:- রোগী কখনও কথা বলিবার
পূর্ব্বে অনেকক্ষণ তোলামি করিয়া অতি কষ্টে কথা বলে, কথা বলিবার জন্য অত্যন্ত চেষ্টা করিতে হয়, তাহাতে নানা প্রকার মুখভঙ্গী হইতে থাকে। রোগীর জিহ্বা ফুলা ফুলা আড়ষ্টও শুষ্ক, সে সহজে জিহ্বা নাড়িতে পারে না। 
 
উন্মত্ততায় লক্ষণ:- অত্যন্ত ক্রোধসহ উন্মত্ততা। সেই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে মারধর করিবার বা কামড়াইবার ইচ্ছাও তড়কা। নিজের আকার সম্বন্ধে ভুল ধারণা। রোগীর মনে হয় যেন তাহার সমস্ত আকৃতিটা কিংবা শরীরের কোন অংশ দ্বিগুন হইয়া গিয়াছে বা দেহের অর্ধাংশ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে। রোগী ভূতপ্রেতের সহিত কথা বলে, বক্তৃতা করে ও ভক্তিভরে উপাসনা করে। অবিরাম আবোল তাবোল প্রলাপ বকে, হাস্য করে। অত্যন্ত কামোত্তেজনা হয়। আলো ও লোক সঙ্গ চায়, একেলা অন্ধকারে থাকিতে ভয় পায় ।

বিসর্পে লক্ষণ:- বিসর্প রোগে যেখানে বিকার লক্ষণ দেখা দেয় এবং যখন পচন ধরিয়া রোগীকে ক্রমশঃ অবসন্ন করিয়া ফেলে তখন বেলেডোনা অপেক্ষা ট্র্যামোনিয়াম অধিকতর উপযোগী। এই রোগে রাসটকেক্সর সহিত ইহার অনেক লক্ষণ সাদৃশ্য থাকে। তবে রাসটক্স অপেক্ষা বিকার লক্ষণ সকল বিশেষতঃ প্রলাপ বকা, ছটফটানি এবং ভয় পাইয়া চীৎকার করা প্রভৃতি লক্ষণ সকল ট্র্যামোতে অধিকতর প্রচণ্ড। জিহ্বা কখনও লাল, কখন ঈষৎ সাদা এবং ছোট লাল গোল দাগ দ্বারা আবৃত, জিহ্বা সদাই শুষ্ক, কখন জিহ্বা ফুলিয়া যেন মুখ হইতে বাহির হইয়া পড়ে।

হিপজয়েন্ট পীড়ায় লক্ষণ:- ট্র্যামোনিয়ামে বেদনার অভাব একটি বিশেষ লক্ষণ। কিন্তু এবসেস বা হিপজয়েন্ট পীড়া যদি বাম দিকের হিপ বা জঙ্ঘায় হয় এবং তথায় ভয়ানক বেদনা হয় এমনকি উহার আতিশয্যে তড়ক পর্যন্ত হয়, তাহা হইলে ট্র্যামোনিয়াম উপযোগী ।

শিরঃপীড়ায় লক্ষণ:- দুপুর বেলা মাথা এত বেদনা হয় যে মাথা দেওয়ালে ঠুকে। রোগীর মাথা ঘোরে, অন্ধকারে সে মোটেই চলিতে পারে না, শিরঃপীড়ায় সম্মুখ রগে ও ভ্রুতে বেদনা, ইহা প্রাতে ৫টায় আরম্ভ হয় ও প্রায় দ্বিপ্রহর পর্যন্ত থাকে।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- বেলেডোনা ও কুপ্রামের পর ট্র্যামোনিয়াম প্রয়োগে বিশেষ উপকার হয়। ফুল আটকাইয়া প্রলাপাদিতে-সিকেলি তুল্য। অলীক দর্শনে খুজা এবং বাচালতায় কুপ্রাম মেট তুল্য ।

 বৃদ্ধি:- অন্ধকারে, মেঘাচ্ছন্ন দিনে, নির্জনে, উজ্জ্বল বা চকচকে বস্তুর দিকে চাহিয়া থাকিলে, নিদ্রার পরও ঢোক গিলিবার ফলে।

 উপশম:- সঙ্গ প্রাপ্তিতে, উত্তাপে, উজ্জল আলোকে, শুইলে।
 
পূর্ববর্তী ঔষধ:- বলেডোনা, লাইকোপোডিয়াম ।
 
পরবর্তী ঔষধ:- একোনাইট, ব্রায়োনিয়া, নাক্স । 

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ট্যাবেকাম, নাক্স ভম, বেলেডোনা, এসিড এসেটিক, হায়োসিয়ামস, ওপিয়াম, পালসেটিলা ।
 
শক্তি বা ক্রম:- ৩০-২০০ শক্তি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ