বহুমূত্র / ডায়েবেটিস (Diabetes) মধু মেহ
ডায়াকেটিস বা বহুমূত্র দুই প্রকারে যেমন— (১) শর্করা যুক্ত। (২) শর্করা বিহীন।
মধুমেহ হইলে প্রস্রাব প্রচুর পরিমাণে হয় এবং রক্তে যে শর্করা (চিনি) জমে উহা প্রচুর পরিমাণে নির্গত হইতে থাকিলে শরীরের পুষ্টি সাধনে ব্যহত হয়।
২। শর্করা বিহীন / মূত্র মেহ / ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ঃ- ইহা লক্ষণ হচ্ছে প্রস্রাবে শর্করা থাকেনা। প্রস্রাবে সুগার বেশী ঘনঘন প্রস্রাব হয়।
মূত্রমেহ হইলে প্রস্রাবের সহিত শর্করা থাকে না অথবা দূষিত পদার্থ নির্গত হয় না কিন্তু প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব নির্গত হইতে থাকে। মূত্রমেহ হইলে কোন ভয় থাকে না।
এখানে মধু মেহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
যাহারা মূত্র মেহ সম্পর্কে জানতে চান তাহারা মূত্রযন্ত্রের রোগ অধ্যায় মূত্র মেহ দেখুন।
চিকিৎসা:-
আর্সেনিক - ব্রোমাইড - যে সমস্ত ব্যক্তির চর্মরোগ থাকে অথবা গর্মী পীড়াযুক্ত হয় তাহাদের বহুমূত্রে এই ঔষধ উপযোগী। চিকিৎসক মাত্র মনে রাখিবেন যে এই ঔষধটি এন্টিসাইকোটিক এবং এন্টিসোরিক জাতীয়।
সিজিজিয়ম-জ্যাম্বোলিন - এই ঔষটি শর্করা মুক্ত করিতে অদ্বিতীয় ঔষধ, এই ঔষধটির অন্যান্য লক্ষণ সমূহ যথা— রোগীর খুব পিপাসা হওয়া, শরীর দুর্বল হইয়া শীর্ণ হইতে থাকা, ঘন ঘন প্রস্রাবে ত্যাগের ইচ্ছা এবং প্রস্রাবে প্রচুর শর্করা থাকা। ভায়েবেটিস হওয়ার ফলে যদি দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাহা হইলে এই ঔষধ প্রয়োগে উপকার পাওয়া যায়। মোট কথা এই ঔষধটি এই পীড়ার যে কোন অবস্থায় ফলন।
ইউরেনিয়ম নাইট্রিকাম- রোগীর প্রস্রাবে অতিরিক্ত শর্করা নির্গত হয়। প্রস্রাব দিনে ও রাত্রিতে বার বার হইয়া থাকে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ অধিক পরিমাণে হয়। ইহার অন্যান্য লক্ষণ সমূহ যথা- অতিরিক্ত তৃষ্ণা, কোষ্ঠ-বস্তুতা, জিহ্বার রক্তিমতা, অনিদ্রা এবং প্রস্রাব ত্যাগ করিবার সময় জননেন্দ্রিয়ে জ্বালা ইত্যাদি দেখা দিয়া থাকে। রোগী খুব দুর্বলতা অনুভব করে এবং নাক ও চোখ দিয়া পুঁজের মত শ্রেষ্মা নির্গত হয়।
ক্রিয়োজোট- রোগী প্রস্রাবের বেগ মোটেই ধারন করিতে পারে না। প্রসাব পরিমাণে খুব বেশী হইয়া থাকে। প্রস্রাবে কোন বর্ণ না থাকা, লাল ইস্তক ও গুড়ার মত তলানি পড়া, বার বার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা ইত্যাদি উপসর্গে ইহা ব্যবহার্য। এই ঔষধ ব্যবহারে প্রস্রাবে সুগারের পরিমাণ কমিয়া যায়। ক্রিয়াজোট ব্যবহার করাইয়া "ডাঃ হেল" অনেক রোগী চিরদিনের জন্য আরোগ্য করাইয়াছেন।
এমন এসেটিকাম- ইহার রোগীর প্রচুর মর্ম হয়। ঘামে সমস্ত শরীর ভিজিয়া যায়। প্রস্রাবের সহিত শর্করা জাতীয় পদার্থ থাকিলে ইহা প্রযোজ্য।
টেরিবিছিনা- রোগীর রাত্রিকালে প্রস্রাবের বেগ খুব বেশী হইয়া থাকে। প্রস্রাব ত্যাগ কালীন রোগী খুব জ্বালা অনুভব করে। মূত্র বোতলে ধরিয়া রাখিলে অনেক সময় ইহার নীচে কাল রংএর তলানি দৃষ্ট হয়। অনেক সময় আবার মূত্রে কোন রং থাকে না। প্রস্রাবে কিছুটা শর্করা জাতীয় পদার্থ থাকে।
রস এরোম্যাটিক - রোগীর প্রসাবের এলবুমেনের ভাগ বেশী থাকে। প্রস্রাব নির্গমনের পূর্বে বেদনা, ফোঁটা ফোঁটা প্রথার ইত্যাদি উপসর্গাদি ইহাতে দৃষ্ট হয়। ইহার রোগীর প্রসাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব তত বেশী নয়। প্রসাব পরিমাণে কম হয় কিন্তু ঘন ঘন হয়।
এসিড এসেটিকাম- ইহার রোগীর গায়ের চামড়া শুরু এবং ফ্যাকাশে হয়। শরীরের তাপমাত্রাও খুব বেশী থাকে। তৃষ্ণা, ঘর্ম ইত্যাদিও ইহাতে দৃষ্ট হয়। প্রস্রাবের সহিত উদরাময়, শোল, কমন ইত্যাদিও অনেক সময় থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই থাকে না। রোগীর প্রস্রাব খুব ঘন ঘন এবং পরিষ্কার জলের মত হয়।
খাবেন- সামান্য দুধ, মাংস, ডিম, দধি, পনির, মাঠাতোলা ঘোল, পরিষ্কৃত জল, পুরাতন চাউলের ভাত, বই, মধু, যজ্ঞডুমুর, মোচা, মূলা, লবণজলসহ কাগজী লেবুর রস ইত্যাদি। অর্থাৎ চিনিবিহীন খাদ্য ব্যবহার করিতে হইবে।
খেতে পারবেনা - নূতন চাউলের ভাত, চিনি, গুড়, চিনি সংযুক্ত মিষ্টিদ্রব্য, আলু, ময়দা, আটা, শর্করা শাক-শঙ্গী, বার্লি, সাত, সরবং, গেমডেন, মত, তৈলাক্ত পদার্থ, মাছ, চ রুটি ইত্যাদি। চিনিযুক্ত খাদ্য সম্পূর্ণ পরিত্যাজ।
0 মন্তব্যসমূহ