নিউমোনিয়া / ফুসফুস প্রদাহ

ফুসফুস প্রদাহ/ নিউমোনিয়া (PNEUMONIA)




সংজ্ঞা:- নিউমোনিয়া শব্দটির মানে হচ্ছে ফুসফুস প্রদাহ। কেবলমাত্র ফুসফুস বায়ু কোষের মধ্যে প্রদাহ হলে তাকে নিউমোনিয়া বা ফুসফুস প্রদাহ বলে। প্রদাহ সহ প্রবল জ্বর থাকে। একটি ফুসফুসের প্রদাহ হলে Singie Pneumonia এবং দুটি ফুসফুসে প্রদাহ | হলে তাকে Double Pneumonia বলে। যদি প্লুরা সহ না হয় তবে তাকে Pleuro Pneumonia বলে।

কারণ:-  (1) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ফুসফুস এবং বায়ুকোষের গর্তগুলোকে আক্রমণ করে এই. রোগের সৃষ্টি করে। এই জীবাণুগুলোর মধ্যে নিউমোকক্কাই প্রধান। এছাড়া স্ট্রেপটো নিউমোনিয়া, স্ট্রেপটো পাইরোজিনস, কে বসাইলা নিউমোনিয়া, মাইকোব্যাকট্রিয়াম টিসি প্রভৃতি জীবাণু এই রোগ বিস্তারে সহায়তা করে। 
(ii) অধিক মাত্রায় বৃষ্টিতে ভেজা ভেজা জামাকাপড় পরে থাকা। ভেজামাটিতে শয়ন করা, হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা, আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বাস করা। 
(ii) বুকে কোনও প্রকার আঘাত লাগা, 
(iv) কঠিন পরিশ্রমের পর ঘর্মাক্ত অবস্থায় ঠাণ্ডা লাগার জন্য। 
(v) হাম, বসন্ত, প্লুরিসি, টাইফয়েড জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর ইত্যাদিও উপসর্গ হিসাবে দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ:-  (I) ফুসফুস ডারী ও ঈষৎ কঠিন আকার হয়। 
(ii) ফুসফুসের কর্ণ ঘোর লাল বা বাদামী বর্ণের দাগ পড়ে। 
(iii) বায়ুকোষ ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুনালি সমূহ শ্লেষ্মা, রক্ত ও পূজে পূর্ণ হয়ে যায়। 
(iv) বুকের প্রসারণ ও সংকোচন শক্তি হ্রাস পায়। 
(v) শ্বাসপ্রশ্বাসে শব্দ হয় এবং বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় করে। 
(vi) শীত শীত করে কম্প দিয়ে জ্বর আসে এবং তাপমাত্রা 10207105° পর্যন্ত হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ফুসফুসের বায়ুপথগুলোর প্রদাহ হলে ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের আবরক ঝিল্লীর প্রদাহ হলে প্লুরিসি, নিউমোনিয়ার সঙ্গে ঘুরিসি থাকলে পুরো নিউমোনিয়া বলে।

 জটিল উপসর্গ :-  
(i) লোবার নিউমোনিয়াতে বুকে ব্যথার সৃষ্টি হয়। আচ্ছন্নতা, প্রচণ্ড জ্বর, প্রলাপ,অজ্ঞানতার ভাব।
(ii) লোবার নিউমোনিয়া থেকে যক্ষ্মা, প্লুরিসি হতে পারে। 
(iii) শ্বাসকষ্ট এবং শেষ পর্যন্ত সায়নোসিস (cyanosis) হতে পারে। 
(iv) ফুসফুস শক্ত হয়ে যাবার জন্য বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ার ব্যাঘাত হয়। ঘটে, ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এই অবস্থাকে কার্ডিয়াক ডিমপোনিয়া বলে। 
(v) ফুসফুসের মধ্যে, স্ফোটক, পচন ক্রিয়া শুরু হতে পারে। 
(vii) জণ্ডিস উদর স্ফীতি, ম্যানিংজাইটিস হতে পারে।
 
এন্টিম টার্ট - নিউমোনিয়া রোগের উৎকৃষ্ট ঔষধ। শিশু ও বৃদ্ধদের সমস্ত ফুসফুসের মধ্যে শ্লেষ্মার ঘড় ঘড় শব্দ। শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড কাশি, সামান্য জ্বর, ঘাম হয় সকালের দিকে রোগবৃদ্ধি, কাশির সঙ্গে শ্লেম্মা উঠে না। ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া। উদরাময় লক্ষণ। ব্রঙ্কিয়াল এবং বিকার লক্ষণে প্রযোজ্য। অত্যন্ত জ্বর।

ফসফরাস - নাড়ী দুর্বল, চঞ্চল। কাশি সহ বুকে বেদনা। বুকে শ্লেষ্মার শব্দ। রক্তের রেখাযুক্ত শ্লেষ্মা উঠে। কষ্টকর শ্বাসপ্রশ্বাস। মনে হয় বুকে রক্ত জমার জন্য শ্বাসকষ্ট। বুকে যেন সর্দি ভরা। গলা সাঁই সাঁই ও ঘড় ঘড় করে। রোগের তরুণ অবস্থায় একোনাইট এবং পরে ফসফরাস। 

ইপিকাক: - আক্ষেপিক কাশি, শ্রেয়া সহজে ওঠে না। বমি হয়, শিশু কানতে কানতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বমির সঙ্গে সর্দি বের হয়। গলায় ও বায়ুনালীতে সাই সাই বা ঘড়ঘড় শব্দে। নিউমোনিয়ার সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা, বিকার যুক্ত। শিশুদের নিমোনিয়া , কষ্টকর শ্বাসপ্রশ্বাস , বুকে ঘড় ঘড় শব্দ , হাঁপানী ও গা বমিতে ।

হায়োসায়ামাস:- রাত্রে দুর্বলজনক কাশি, বুকে ঘড় ঘড় শব্দ, বেদনা, শিশু কানতে কানতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বমির সঙ্গে সর্দি বের হয়। শিশু ভয় পাইয়া নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠে, চিৎকার করিয়া কাঁদিতে থাকে। ঘুমাতে ঘুমাতে হঠাৎ লাপিয়ে উঠে তাই অনিদ্রা (ঘুম হয় না)। 

ব্রায়োনিয়া:-  চুপচাপ থাকিলে উপশম, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। জিহবা সাদা ক্লেদাবৃত এবং শুষ্ক , তাহার সাথে যথেষ্ট পিপাসা। বুকে পিঠে ব্যথা, ধরা রোগী কথা বলিতে পারেনা, নড়াচড়া করিতে পারেনা, বুকে সুইচ পোটানো ব্যথায়। শিশু কোথায়ও গেলে বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো বলে চিক্তার করতে থাকে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে ব্রায়োনিয়া এবং পরে ফসফরাস

চেলিডোনিয়াম 3x :-  নিউমোনিয়ার সঙ্গে লিভার দোষ থাকলে, ফেনা যুক্ত হলদে বা কালো বা ঘোলা প্রস্রাব, মূত্র সোনালী হলুদ রঙের। বিকাল ৪টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগের বৃদ্ধি। 

অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ :- স্যাংগুনেরিয়া, হিপার সালফার, আর্সেনিক, একোনাইট,  

 
 

বায়োকেমিক ঔষধ :- কেলি মিউর 6x, নেট্রাম মিউর 6x, নেট্রাম ফস 12x উপকারী। 
২/৩ গ্রেন যাত্রায় গরম জলে দিনে ৪/৫ বার সেব্য।

পথ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ঃ-রোগীর বুক এবং পিঠ গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। পূর্ণ বিশ্রাম এবং আলে বাতাস খেলে এমন ঘর। স্থিরভাবে থাকা, বেশী নড়াচড়া নিষেধ। পুরাতন থিয়ে বুক ও পিঠ মালিশ করে উষ্ণ সেঁক।










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ