সংজ্ঞা ও পরিচিতি - রেপার্টরী - প্রথম অধ্যায়- চতুর্থ বর্ষ

 প্রথম অধ্যায়
সংজ্ঞা ও পরিচিতি





প্রশ্ন- হেমিওপ্যাথিক রেপার্টরী কাহাকে বলে?

উত্তর ঃ হোমিওপ্যাথিতে রোগী চিকিৎসায় সঠিক ঔষধ নির্বাচনের সুবিধার্থে জানব দেহ ও মনের সর্ব প্রকার রোগ লক্ষণ ও উহার সদৃশ ঔষধাবলীর নাম যে পুস্তকে ধারাবাহিকভাবে আভিধানিক পদ্ধতিতে সজ্জিত থাকে, তাহাকে রেপার্টরী বলে। রেপার্টরী এমন একটি ঔষধ ভান্ডার যাহা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নির্দেশক এবং সাদৃশ্যতম ঔষধটি মেটিরিয়া মেডিকার মহাসমুদ্র হইতে আহরন করার চাবিকাঠি হিসাবে কাজ করে।



প্রশ্ন- রেপার্টরীর আভিধানিক অর্থ কি?
বা, রেপার্টরী শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ কি?
বা, রেপার্টরী নামকরণের যৌক্তিকতা আলোচনা কর।

উত্তর ঃ রেপার্টরী ল্যাটিন শব্দ Repertoir হইতে উৎপত্তি বা লওয়া হইয়াছে। ল্যাটিন শব্দ Repertoir এর অর্থ হইল এমন একটি ছক (table) যাহাতে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে পাওয়ার জন্য সাজানো থাকে।
সংক্ষেপে রেপার্টরীকে ঔষধ বাছাই প্রণালী বলা হইয়া থাকে। 
রেপার্টরী শব্দের আভিধানিক অর্থ বিভিন্ন রূপ। 
যেমন- সূচিপত্র, ভান্ডার, কোষাগার, তোষাখানা,এমন একটি নাট্যগৃহ যেখানে কোন নাট্যগোষ্ঠী নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করিয়া থাকে।
নিম্নলিখিত ভাবে ভাঙ্গিয়া রেপার্টরী শব্দের অর্থ বাহির করা যায়।
Re + Part + Ary
Re অর্থ হইল পুনরায়, 
Part হইল অংশ, 
Ary অর্থ আলোচনা, বিষয়বস্তু প্রভৃতি। 
সুতরাং রেপার্টরী শব্দের অর্থ দাঁড়ায় "পুনরায় অংশ আলোচনা বা পুনরায় আলোচনার অংশ বিশেষ"।
উপরোক্ত আলোচনা হইতে দেখা যায় যে রেপার্টরীর নাম, গঠন এবং কাজের মধ্যে যথেষ্ট মিল খুঁজিয়া পাওয়া যায়; তাই রেপার্টরী নামকরণটি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত হইয়াছে। .





প্রশ্ন- রেপার্টরীর জনক কে?

উত্তর : মহাত্মা হ্যানিমান রেপার্টরীর জনক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তাঁহার লিখিত রেপার্টরী অদ্যাবধি প্রকাশিত হয় নাই। ডাঃ হ্যানিমান যদিও রেপার্টরীর জনক কিন্তু ডাঃ বোনিং হোসেন ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে তাঁহার রচিত রেপার্টরী “Boenning hausen's Therapeutic Pocket Book" মুদ্রিত অবস্থায়। প্রকাশ করিয়া প্রথম রেপার্টরী প্রকাশের কৃতিত্ব অর্জন করেন।





প্রশ্ন- কে, কখন, কিভাবে প্রথম রেপার্টরী প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন?
বা, রেপার্টরী সংক্রান্ত হ্যানিমানের প্রয়াস সম্বন্ধে কি জান?

উত্তর : হোমিওপ্যাথির জন্মের পর ডাঃ হ্যানিমান কর্তৃক পরীক্ষিত ঔষধাবলী সম্বলিত মেটিরিয়া মেডিকার আকার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তাঁহার রচিত গ্রন্থটির নাম “মেটিরিয়া মেডিকা পিউরা"। ইহা এত বৃহৎ যে ইহার অজস্র লক্ষণাবলী মনে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। তাই রোগী চিকিৎসায় সঠিক ঔষধ নির্বাচনে জটিলতা দেখা দিল। কারণ এত বড় গ্রন্থ হইতে সঠিক ঔষধটি খুঁজিয়া বাহির করা সহজ কাজ নয়। তাই ডাঃ হ্যানিমান বহু চিন্তার পর এক অভিনব পদ্ধতি বাহির করেন। তাঁহার প্রতিদিনের ব্যবহৃত সূচীপত্রের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪২৩৯। এই সূচীপত্র বা সহজ প্রাপ্তির নির্দেশিকাই রেপার্টরী নামে পরিচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁহার লিখিত রেপার্টরী অদ্যাবধি প্রকাশিত হয় নাই।






প্রশ্ন-  রেগার্টরীর প্রয়োজনীয়তা বা রেপার্টরী পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ মানব দেহে পরীক্ষিত এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হইল লাক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করিয়া রোগের প্রতিকারক স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়। যিনি এই স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচনে যত পারদর্শী তিনিই তত বিজ্ঞ চিকিৎসক। হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় প্রায় দুই হাজার ঔষধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। এই বিশাল ঔষধ ভান্ডার হইতে কোন রোগীর জন্য একটি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা বড়ই দুরুহ ব্যাপার। ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোন রোগীর বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন | করিতে হইলে রেপার্টরীর সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন। অনেক সময় একজন রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ঔষধ সদৃশ বলিয়া মনে হয়। আবার কখনও কখনও কোন ঔষধের সহিত রোগীর লক্ষণ আংশিক সদৃশ হয়। এই সকল ক্ষেত্রে রেপার্টরীই একমাত্র সঠিক ঔষধ নির্বাচনে সাহায্য করে। রেপার্টরী প্রয়োজনীয় ঔষধ নির্দিষ্ট করিয়া দেয় বলিয়া উক্ত ঔষধটি মেটিরিয়া মেডিকায় সহজে পাওয়া যায়। চিররোগের ক্ষেত্রেও সহজেই উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা যায়। কোন কোন রেপার্টরীতে ঔষধ বিভিন্ন গ্রেডে থাকে বলিয়া ঔষধ প্রাপ্তিতে সময় কম লাগে। ইহা ছাড়া নির্বাচন যোগ্য ঔষধগুলির তুলনা করাও সহজ হয়। মেটিরিয়া মেডিকার বিশাল সমুদ্র হইতে রেপার্টরীর সাহায্যে একক ঔষধ নির্বাচন করা অধিকতর সহজ। এই সকল কারণে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রেপার্টরী পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।





প্রশ্ন- রেপার্টরী কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর : রেপার্টরীর প্রকারভেদ - রেপার্টরী প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
(১) লাক্ষণিক রেপার্টরী
(২) নৈদানিক বা ক্লিনিক্যাল রেপার্টরী
হোমিও চিকিৎসকদের সুবিধার্থে রেপার্টরীকে আবার ছয়ভাগে ভাগ করা হইয়াছে। যথা-
(১) সাধারণ (General) রেপার্টরী।
(২) নৈদানিক (Clinical) রেপার্টরী। (৩) নির্ঘন্ট (Concordance) রেপার্টরী।
(৪) কার্ড (Card) রেপার্টরী ।
(৫) সিনথেটিক (Synthetic) রেপার্টরী।
(৬) কম্পিউটারাইজড (Computerised) রেপার্টরী। 





প্রশ্ন- সংক্ষেপে রেপার্টরীর প্রকার সমূহের শ্রেণী বিভাগ কর এবং প্রতিটি শ্রেণীর উদাহরণ দাও ।
অথবা, হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর শ্রেণীবিন্যাস কর। অথবা, বিভিন্ন প্রকার রেপার্টরীর উদাহরণ দাও ।

উত্তর : বর্তমানে হোমিওপ্যাথিতে অসংখ্য রেপার্টরী রহিয়াছে। ইহানা সবগুলি একজাতীয় নয়। বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রেপার্টরীর সৃষ্টি হইয়াছে। বাজারে প্রচলিত রেপার্টরীগুলি নিম্নোক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় ।

(১) প্রথম শ্রেণী : সাধারণ (General)  
(ক) ডাঃ জেমস্ টাইলার কেন্ট রচিত "হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকার রেপার্টরী” (Repertory of the Homoeopathic Materia Medica).
(খ) ডাঃ বোনিং হোসেন রচিত - (i) Boenning hausen's Theraputic Pocket Book (ডাঃ টি, এফ, এলেন কর্তৃক অনুদিত)
(ii) "Boenning hausen's Characteristics and Repertory"
(ডাঃ সি, এম, বোগার কর্তৃক সংকলিত)।

(২) দ্বিতীয় শ্রেণী : নৈদানিক (Clinical) রেপার্টরী :
এই শ্রেণীর রেপার্টরীতে রুব্রিক হিসাবে না দেখাইয়া রোগের নামে সাজানো থাকে। যেমন-
(ক) ডাঃ উইলিয়াম বোরিক রচিত "Clinical Repertory" যাহা Hand book of Homoeopathic Materia Medica এর সঙ্গে জড়িত। 
(খ) ডাঃ জে, এইচ, ক্লার্ক রচিত "Clinical Repertory to the Dictionary of Materia Medica".
(গ) ডাঃ এইচ, এ, রবার্ট রচিত- "Sensation as if 
(ঘ) ডাঃ বেল রচিত "Diarrhoea".
(ঙ) ডাঃ কিং রচিত Headache.

(৩) তৃতীয় শ্রেণী ঃ নির্ঘন্ট (Concordance) রেপার্টরী :
(ক) ডাঃ নারের- "Dr. Knerr's Repertory" (খ) ডাঃ নাসের- "Dr. Nash's Repertory"
(গ) ভাঃ বয়েলের- "Dr. Boyel's Repertory"
(1) Dr. Gentry's Concordance.
(৪) চতুর্থ শ্রেণী : কার্ড (Card) রেপার্টরী
(4) Dr. Boger's Card Index.
(3) Dr. Field's Card Repertory.
(1) Dr. Jugal Kishur Card Repertory.

প্রশ্ন-  লেখকের নামসহ ৫টি রেপার্টরীর পূর্ণ নাম লিখ । 
বা, কয়েকটি প্রধান রেপার্টরীর নাম লিখ।

উত্তর : নিম্নে লেখকের নামসহ ৫টি রেপার্টরীর পূর্ণ নাম দেওয়া হইল।
(১) ডাঃ বোনিং হোসেন Dr. Boenning hausen রচিত - "Boenning hausen's Theraputic Pocket Book" (ডাঃ টি, এফ, এলেন কর্তৃক অনুদিত)।
(২) জা জেমস্ টাইলার কেস্ট রচিত "Repertory of the Homoeopathic Materia Medica". 
(৩) ডাঃ উইলিয়াম বোরিক কর্তৃক রচিত "Materia Medica and "Repertory", 
(৪) ডাঃ জে, এইচ, ক্লার্ক রচিত "Clinical Repertory to the Dictionary of Materia Medica". 
(৫)) ডাঃ বোনিং হোসেন রচিত "Boenning hausen's Characteristics and Repertory" (ডাঃ সি, এম, রোগার কর্তৃত সংকলিত)।



প্রশ্ন-  কোন কোন রেপার্টরী উল্লেখযোগ্য বর্ণনা কর।

উত্তর : বাজারে বহু রেপার্টরী থাকিলেও সত্যিকার অর্থে চিকিৎসকদের প্রয়োজন মিটানোর মত রেপার্টরীর খুবই অভাব রহিয়াছে। তবে প্রচলিত রেপার্টরীগুলির মধ্যে 
ডাঃ বোনিং হোসেনের "Boenning hausen's Theraputic Pocket Book" (ডা. টি. এফ. এলেন কর্তৃক অণুদিত), "Boenning hausen's Characteristics and Repertory" (ডাঃ সি, এম, বোগার কর্তৃক সংকলিত), ডাঃ কেন্ট রচিত "Repertory of the Homoeopathic Materia Medica", ডাঃ উইলিয়াম বোরিক কর্তৃক রচিত- Clinical Repertory", ডাঃ যে, এইচ, ক্লার্ক রচিত- "Clinical Repertory to the Dictionary of Materia Medica" প্রভৃতি মনীষীদের রেপার্টরী শীর্ষস্থানীয়। ইহা ছাড়া বাজারে অসংখ্য রেপার্টরী রহিয়াছে, উহারা কোনটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় ।






প্রশ্ন- ব্যবহারিক ক্ষেত্রে রেপার্টরী কত প্রকার ও কি কি? 

উত্তর : ব্যবহারিক ক্ষেত্রে রেপার্টরী সাধারণতঃ ৩ প্রকার। যথাঃ-
(ক) Thumb Index Method ইয় অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত ব্যবহারযোগ্য প্রণালী।
(খ) Plain Paper Method এই প্রণালীর ব্যবহার কিছুটা সময় সাপেক্ষ কারণ এই প্রণালীতে সূচীপত্র অনুযায়ী শিরোনাম খুঁজিতে হয়।  
(গ) Repertory Sheet Method : সীমিত লক্ষণের উপর ইহা খুবই ি সহজ পদ্ধতি।





প্রশ্ন- রেপার্টরী গঠনের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
বা, রেপার্টরী করনের বিভিন্ন পদ্ধতি কি কি বর্ণনা দাও? 

উত্তর : বহু প্রণালী দ্বারা রেপার্টরী প্রস্তুত করা যায়। তার মধ্যে নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতিগুলি উল্লেখযোগ্য
(১) প্রথম পদ্ধতি বা হ্যানিমান ও বোনিং হোসেন পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে = আক্রান্ত অঙ্গ বা অসুস্থতার স্থান, অনুভূতি, সহকারী লক্ষণ ও হ্রাসবৃদ্ধির গুরুত্ব ও অনুযায়ী ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম গ্রেড এই পাঁচটি স্তরে সুবিন্যস্ত ও মূল্যায়ন করা হইয়াছে।
(২) দ্বিতীয় পদ্ধতি বা কেন্ট পদ্ধতি ঃ ডাঃ কেন্ট এই এই পদ্ধতিতে ১ম, ২য়, ৩য় গ্রেড এই তিনটি স্তরে ঔষধের মূল্যায়ন করিয়াছেন এবং ছাপার বিভিন্ন অক্ষরে পার্থক্য নির্ধারণ করিয়াছেন। শারীরিক গঠন ও শারীরিক বিধানে বিভক্ত করিয়া গুরুত্ব অনুসারে - বর্ণমালা ক্রমিক ভাবে বিভিন্ন রুব্রিক (Rubric) প্রদান করিয়াছেন। অবশ্য তিনি আক্রান্ত স্থান, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতির গুরুত্ব বজায় রাখিয়াছেন।
(৩) তৃতীয় পদ্ধতি ঃ রেপার্টরী গঠনের তৃতীয় পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক লক্ষণের উপর গুরুত্ব কম দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে শারীরিক গঠন ও বিধানের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হইয়াছে।
(৪) চতুর্থ পদ্ধতি বা কি নোট পদ্ধতি : এই পদ্ধতিকে কি নোট বা প্রধান সূত্র পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রধান প্রধান রোগ লক্ষণের উপর গুরুত্ব দিয়া ঔষধ সাজানো হইয়াছে। ইহাতে সাধারণ ও গৌণ লক্ষণগুলি বাদ দেওয়া হইয়াছে। শুধু অদ্ভুত, অসাধারণ, কদাচপ্রাপ্ত লক্ষণাবলীর ঔষধ প্রদান করা হইয়াছে। তাই ইহা পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি নয়।
(৫) পঞ্চম পদ্ধতি ঃ এই পদ্ধতিতে রোগীর স্থানিক লক্ষণের দিকে নজর না দিয়া শুধু রোগীর প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যটির রুব্রিক (Rubric) প্রদান করা হইয়াছে। যেমন- রোগীর নিজস্ব ও পারিবারিক ইতিহাস, মেজাজ, শারীরিক গঠন ও বর্ণ, পছন্দ, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, পীড়ার কারণ প্রভৃতি। তাই এই পদ্ধতিও পূর্ণাঙ্গ নয় ৷
(৬) ষষ্ঠ পদ্ধতি বা বোরিকের পদ্ধতি : ডাঃ বোরিক এই পদ্ধতিতে শ্রেণীবিভাগ করিয়াছেন। ইহাতে রোগের নাম দিয়া শ্রেণীবিভাগ করা হইয়াছে এবং শিরোনাম ও উপশিরোনামে বিভক্ত করিয়া ঔষধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। ক্লিনিক্যাল রেপার্টরী নামে পরিচিত। 





প্রশ্ন- আপনার মতে রেপার্টরী করনের কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভাল এবং কেন?

উত্তর : আমার মতে রেপার্টরী করনের প্রথম পদ্ধতি বা হ্যানিমান এবং বোনিং হোসেন পদ্ধতি সবচেয়ে ভাল। কারণ এই পদ্ধতিতে রোগ লক্ষণসমূহের সহিত সম্পর্কযুক্ত ঔষধগুলির গুরুত্ব অনুসারে খুব সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হইয়াছে। প্রতিটি লক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধগুলিকে উহাদের গুরুত্ব অনুসারে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম এই পাঁচটি গ্রেডে বিভক্ত করা হইয়াছে। অন্য কোন পদ্ধতিতে ঔষধের এই রূপ সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ দেখা যায় না। তাই রেপার্টরীকরনের প্রথম পদ্ধতিই আমার নিকট সবচাইতে ভাল লাগে।




প্রশ্ন- সঠিক রোগী লিপির সহিত সঠিক রেপার্টরী করনের সম্বন্ধ লিখ । 
বা, রেপার্টরী ব্যবহারের জন্য কেমনভাবে রোগী লিপি হইতে লক্ষণগুলি সাজাইতে হইবে?

উত্তর: সঠিক রোগী লিপির সহিত সঠিক রেপার্টরীকরনের গভীর সম্পর্ক রহিয়াছে। রোগী লিপি যদি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা না হয়, তবে রেপার্টরীকরন সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভবপর নয়। রেপার্টরী ব্যবহারের জন্য সঠিক রোগী লিপি হইতে লক্ষণগুলিকে নিম্নলিখিত ভাবে সাজাইতে হইবে। নিম্ন বর্ণিতভাবে যদি রোগী লিপি প্রস্তুত করা হয় তবেই সঠিকভাবে রেপার্টরী ব্যবহার করা যাইবে। যেমন-
(ক) রোগীর প্রধান প্রধান কষ্টসমূহ-উহাদের স্থান, অনুভূতি এবং সকল প্রকার হ্রাসবৃদ্ধি ।
(খ) রোগীর ইচ্ছা অনিচ্ছা।
(গ) মানসিক লক্ষণ।
(ঘ) স্মৃতি শক্তি ।
(ঙ) রোগীর দেহের রক্ত ও শ্লেষ্মার সহিত সঠিকভাবে জড়িত বিধান যেমন শৈত্য,  উষ্ণতা, ঝড়, বৃষ্টি, কর্ম, বিশ্রাম, দিবা, যাত্র প্রভৃতিতে সংচেত্যতা। এই নিয়ায় এই রুগী লিপি তৈরী হইলে সঠিকভাবে রেপার্টরীকরণ সম্ভব হইবে।
 



প্রশ্ন- রেপার্টরী করনে কোন কোন বিষয়ের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে?

উত্তর : রেপার্টরী করনে নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি সবিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
(i) সঠিকভাবে বিশেষ সতর্কতার সহিত সম্পূর্ণ রোগী লিপি প্রস্তুত করা।
(ii) লক্ষণের গুরুত্ব অনুযায়ী রোগলক্ষণের মূল্য নির্ধারণ।
(iii) রেপার্টরীর সহিত মেটেরিয়া মেডিকার যোগাযোগ অনুধাবন করা এবং উত্তমরূপে মেটেরিয়া মেডিকা আয়ত্ব করা। অতএব রেপার্টরী ব্যবহার ক্ষেত্রে উত্তম কলা কৌশল প্রয়োগ করিয়া রোগী লিপি প্রস্তুত করিতে হইবে এবং লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধের গাণিতিক মূল্যায়ন করিলেই সঠিকভাবে রেপার্টরীকরন সম্ভব হইবে।




প্রশ্ন- রেপার্টরী ব্যবহারের সাফল্য কিভাবে অর্জিত হয়? বা, রেপার্টরীর সঠিক ব্যবহারের জন্য কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করিতে হয়?
বা, রেপার্টরী ব্যবহারের নিয়মাবলী কি কি?
বা, সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রেপার্টরীর প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা কর।

উত্তর : মেটিরিয়া মেডিকার অজস্র ঔষধাবলীর লক্ষণরাজি কোন চিকিৎসকের পক্ষেই কণ্ঠস্থ রাখা সম্ভবপর নয়। তাই রেপার্টরীর সাহায্য গ্রহণ করা অপরিহার্য। তবে ইহার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি অবশ্যই পালন করিতে হইবে। তাহা হইলেই সঠিক ঔষধ নির্বাচনে তথা রেপার্টরী ব্যবহারের সাফল্য অর্জিত হইবে। রেপার্টরীর সঠিক ব্যবহারের জন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করিতে হইবে।
(i) একটি আদর্শ স্থানীয় রেপার্টরী সংগ্রহ করতঃ ভালভাবে পাঠ করিতে হইবে এবং ইহার গঠন, ব্যবহার, কলাকৌশল প্রভৃতি আয়ত্ব করিতে হইবে। (ii) সঠিকভাবে বিশেষ সতর্কতার সহিত সম্পূর্ণ রোগীলিপি প্রস্তুত করা,
(iii) রেপার্টরীর উপযোগী করিয়া রোগীর লক্ষণগুলিকে ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত করা এবং লক্ষণের গুরুত্ব অনুসারে রোগলক্ষণের মূল্য নির্ধারন। এবং রেপার্টরীর সহিত
(iv), উত্তমরূপে মেটিরিয়া মেডিকা আয়ত্ব করা মেটিরিয়া মেডিকার যোগাযোগ অনুধাবন
হোমিওপ্যাথিক কলেজ রেপার্টরী
(v) রোগীকে জিজ্ঞাসা করিয়া, রোগী পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করিয়া, রোগীর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ও রোগীর পারিপার্শ্বিক লোকজনদের জিজ্ঞাসা করিয়া রোগীর সম্পর্কে জানা অজানা সকল তথ্য সংগ্রহ করিতে হইবে।
(vi) রোগীর অব্যক্ত ও অসমাপ্ত লক্ষণগুলিকে বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সংগ্রহ করা।
(vii) রোগীলিপির সংগৃহীত লক্ষণগুলিকে রোগীর ভাষা হইতে রেপার্টরীর পরিভাষায় রূপান্তরিত করিতে হইবে।
(viii) লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারন করা। যেমন- মানসিক, অস্বাভাবিক ও বিরল লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক এবং স্থানিক লক্ষণ অপেক্ষা সর্বাঙ্গীন লক্ষণের গুরুত্ব অধিক।
(ix) লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধের গাণিতিক মূল্যায়ন করা। 




প্রশ্ন- রেপার্টরী ব্যবহারের জন্য একটি ছকের নমুনা দাও। 
বা, আমেরিকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেপার্টরী ব্যবহারের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : আমেরিকার হ্যানিমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেপার্টরী ব্যবহারের একটি ছকের নমুনা নিম্নে দেওয়া হইল ।






প্রশ্ন- কেমন করিয়া রেপার্টরী হইতে ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়? বা, ঔষধ নির্বাচন বা বাছাইরের ক্ষেত্রে রেপার্টরীর ভূমিকা কি?

উত্তর ঃ ঔষধ নির্বাচন বা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রেপার্টরী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেপার্টরী হইতে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করিতে হইলে প্রথমেই সঠিকভাবে বিধিবন্ধ নিয়মে রোগীলিপি প্রস্তুত করিতে হইবে। রোগী লিপি হইতে লক্ষণগুলিকে নিম্নলিখিত ভাবে সাজাইতে হইবে। নিম্নবর্ণিতভাবে লক্ষণসমূহ লিপিবদ্ধ করিলে রেপার্টরী হইতে ঔষধ নির্বাচন সহজ হইবে। যেমন- 
(ক) রোগীর প্রধান প্রধান কষ্ট বা অসুবিধা গুলি- উহাদের স্থান, অনুভূতি এবং সকল প্রকার হ্রাসবৃদ্ধি ।
(খ) রোগীর ইচ্ছা অনিচ্ছা ।
(গ) মানসিক লক্ষণ।
(ঘ) স্মৃতি শক্তি।
(ঙ) রোগীর দেহের রক্ত ও শ্লেষ্মার সহিত সঠিকভাবে জড়িত বিধান যেমন শৈত্য, উষ্ণতা, ঝড়, বৃষ্টি, কর্ম, বিশ্রাম, দিবা, রাত্র প্রভৃতিতে সংচেত্যতা ইত্যাদি।
শীর্ষস্থানীয় রেপার্টরীতে সূচীপত্র দেওয়া আছে, চিকিৎসকগন সহজেই তাহা ব্যবহার করিতে পারেন। মানসিক লক্ষণ, দেহের বিভিন্ন আঙ্গিক লক্ষণ, প্রান্তদেশের লক্ষণ, নিদ্রা, শৈত্য, উষ্ণতা, চর্ম, ঘর্ম, সাধারণ লক্ষণ, প্রভৃতি সুসংবদ্ধভাবে প্রয়োজনীয় লক্ষণসমূহ সাধারণ অনুভূতিসহ বর্ণিত হইয়াছে। রেপার্টরী অনুশীলন করিয়া রোগলিপি প্রস্তুত করিয়া লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারন করতঃ লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধের গাণিতিক মূল্যায়ন করা হইলে সহজেই রেপার্টরী হইতে ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব।





প্রশ্ন-  লাক্ষণিক রেপার্টরী কাহাকে বলে?

উত্তর : যে সকল রেপার্টরীতে সমস্ত রোগের লক্ষণগুলি রুব্রিক আকারে বর্ণমালা ক্রমিকভাবে সজ্জিত থাকে উহাদিগকে লাক্ষণিক রেপার্টরী বলে। ডাঃ জে. টি. কেন্ট এবং উইলিয়াম বোরিকের রেপার্টরী এই ধরণের।





প্রশ্ন-  নৈদানিক রেপার্টরী বা ক্লিনিক্যাল রেপার্টরী কাহাকে বলে?

উত্তর : যে সকল রেপার্টরীতে সমস্ত রোগের নামগুলি রুব্রিক আকারে বর্ণমালা ক্রমিকভাবে সজ্জিত থাকে উহাদিগকে নৈদানিক রেপার্টরী বলে । ইহা দ্বিতীয় শ্রেণীর রেপার্টরী। ডাঃ বোরিক রোগের নাম দিয়া এই শ্রেণীবিভাগ করেন।




প্রশ্ন-  নৈদানিক রেপার্টরী বা ক্লিনিক্যাল রেপার্টরীর সীমাবদ্ধতাগুলি কি কি?
বা, নৈদানিক রেপার্টরীর ব্যবহারের অসুবিধা কি কি?

উত্তর : নৈদানিক রেপার্টরীর ব্যবহারের অসুবিধা হইল এই যে, রোগ সম্বন্ধে পূর্ণ ধারণা না রাখিলে ইহা ব্যবহার করা যায় না। কেননা ইহাতে সমস্ত রোগের নামগুলি বর্ণমালা ক্রমিকভাবে সজ্জিত থাকে। ইহা ব্যবহার করিতে হইলে চিকিৎসককে প্রথমে রোগ নির্ণয় করিতে হইবে। রোগ নির্ণয়ে অভিজ্ঞ না হইলে ইহা ব্যবহার করা যায় না। এই রেপার্টরীতে সাধারণ লক্ষণ অপেক্ষা চিকিৎসা বিষয়ক শব্দ বা টার্ম বেশী ব্যবহার করা হইয়াছে। ইহাতে রুব্রিকগুলির থেরাপিউটিক বিন্যাসও ভিন্নতর ভাবে আছে ।




প্রশ্ন- সাধারণ রেপার্টরী কাহাকে বলে?

উত্তর : প্রথম শ্রেণীর রেপার্টরীকে সাধারণ রেপার্টরী বলে। এই রেপার্টরীতে লক্ষণসমূহকে গুরুত্ব দিয়া ব্যাপকভাবে সাজানো হইয়াছে। এই রেপার্টরীর লক্ষণ সহজে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বাহির করা যায়। ডাঃ কেন্ট ও ডাঃ বোনিং হোসেনের রেপার্টরী এই শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।




প্রশ্ন-  নির্ঘন্ট রেপার্টরী কাহাকে বলে? ইহার বর্ণনা দাও।

উত্তর : অনেক লেখক তাঁহাদের মেটিরিয়া মেডিকার অংশ হিসাবে পুস্তকের শেষাংশে Key Note হিসাবে ঔষধের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলির একটি রেপার্টরী সংযোজন করিয়াছেন। এইরূপ রেপার্টরীকে নির্ঘন্ট রেপার্টরী বলে। ইহা তৃতীয় শ্রেণীর রেপার্টরী। ডাঃ নার, ডাঃ ন্যাস ও ডাঃ বয়েলের রেপার্টরী এই ধরনের।




প্রশ্ন-  নির্ঘন্ট রেপার্টরীর ব্যবহার সুবিধাজনক কেন?

উত্তর : নির্ঘণ্ট রেপার্টরীর ব্যবহার এই কারণে সুবিধাজনক যে, মেটিরিয়া মেডিকা এবং রেপার্টরী যেহেতু একই সাথে সংযুক্ত তাই রেপার্টরী হইতে ঔষধ বাছাই করিয়া ঐ অন্যান্য লক্ষণগুলি সহজেই মেটিরিয়া মেডিকার লক্ষণের সাথে, মিলানো সম্ভব। প্রধান লক্ষণগুলি মিলানোর পর অন্যান্য লক্ষণ অতি সহজেই হাতের কাছে মেটিরিয়া মেডিকার পাওয়া যায়। তাই নির্ঘন্ট রেপার্টরী ব্যবহার সুবিধাজনক।





প্রশ্ন-  কার্ড রেপার্টরী কাহাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর : এই প্রকার রেপার্টরীতে এক একটি লক্ষণের জন্য এক একটি কার্ড নির্ধারিত থাকে এবং উহাতে লক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ঔষধের ইনডেক্স নাম্বার লেখা থাকে। প্রত্যেকটি কার্ডের মধ্যে অনেকগুলি ছিদ্র থাকে। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন লক্ষণের জন্য বিভিন্ন কার্ড বাহির করিয়া সবগুলি কার্ড একত্রে লইলে প্রত্যেকটি কার্ডে আছে এমন একটি সাধারণ ছিদ্র পাওয়া যাইবে। এই সাধারণ ছিদ্র বরাবর যে ঔষধের ইনডেক্স নাম্বার পাওয়া যাইবে তাহা দেখিয়া সঠিক ঔষধটির নাম বাহির করিতে হয়। ডাঃ বোগার, ডাঃ ফিল্ড এবং ডাঃ যুগল কিশোরের রেপার্টরী এই জাতীয়।
[10:39 AM, 4/13/2023] আরোহী প্রমি: হোমিওপ্যাথিক কলেজ রেপার্টরী





প্রশ্ন- কার্ড রেপার্টরী ব্যবহারের অসুবিধা কি কি?

উত্তর : কার্ড রেপার্টরীর অসুবিধা হইল এই যে ইহা পূর্ণাঙ্গ রেপার্টরী নয়। সীমিত সংখ্যক লক্ষণ ইহাতে সংযোজিত হইয়াছে। ইহাতে এক একটি লক্ষণের জন্য এক একটি কার্ড প্রয়োজন বিধায় প্রত্যেকটি লক্ষণের বিস্তারিত বিশ্লেষনাত্মক অবস্থায় প্রয়োজনীয় ঔষধের তালিকা সংযোজন করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীলিপি হইতে নির্বাচিত লক্ষণসমূহের প্রয়োজনীয় কার্ডগুলির মধ্যে সাধারণ ছিদ্র পাইতে কাট ছাট করিতে হয়। ইহা দ্বারা একটি মাত্র ঔষধ নির্বাচিত হয় কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ঔষধ নির্বাচন করা যায় না। তদুপরি এই ধরণের রেপার্টরী আকারে এত বৃহৎ যে তাহা বহন করিয়া চলা বা চিকিৎসকের সঙ্গে রাখা মোটেই সম্ভবপর নয়।




প্রশ্ন-  কম্পিউটারাইজড রেপার্টরী সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর : কম্পিউটার যন্ত্রের মেমোরিতে যে রেপার্টরী ঢুকানো হয়, সেই রেপার্টরী অনুসারেই ফলাফল বাহির করা যায়। ইহার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন লেখকের রেপার্টরী কম্পিউটারাইজড করিয়া রাখিতে পারি। চিকিৎসার সময় রোগীলিপি প্রস্তুত করিয়া নির্বাচিত লক্ষণসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ এই কম্পিউটার যন্ত্র হইতে বাহির করিতে পারি। ইহা দ্বারা ঔষধ নির্বাচনে চিকিৎসকের সময় ও পরিশ্রম লাঘব হয় মাত্র, কিন্তু ইহা কোন স্বতন্ত্র রেপার্টরী নয়।




প্রশ্ন- সিনথেটিক রেপার্টরী সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তর : এই রেপার্টরী এখনও ব্যপকভাবে পরিচিতি লাভ করে নাই। কিছু কিছু হোমিওপ্যাথিক জার্নালে এই রেপার্টরীর কথা জানা যায়। বর্তমানে প্রচলিত বিখ্যাত রেপার্টরীগুলির অনুকরনে আরও সূক্ষ্ম বিচার করিয়া সকল রেপার্টরীর সম্মিলিত সহায়তায় আর একটি রেপার্টরী প্রস্তুত করা হয়। ইহাই সিনথেটিক রেপার্টরী।



প্রশ্ন- Thumb Index রেপার্টরী কাহাকে বলে?

উত্তর : যখন কোন রেপার্টরীর রুব্রিকগুলির সূচীপত্র লেজার আকারে সজ্জিত থাকে তাহাকে Thumb Index রেপার্টরী বলা হয়। 




প্রশ্ন- রুব্রিক (Rubric) কাহাকে বলে? রুব্রিক কত প্রকার ও কিকি?

উত্তর : রুব্রিক অর্থ শিরোনাম। রেপার্টরীতে বিভিন্ন শিরোনামে বিভিন্ন লক্ষণ সাজানো থাকে। রেপার্টরীর প্রত্যেকটি শাখাকে কয়েকটি উপ শাখায় বিভক্ত করা হইয়াছে। এই উপশাখাগুলিতে যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হইয়াছে ঐ শব্দ গুলিকে হোমিওপ্যাথিক কলেজ রেপার্টরী রুব্রিক বলে। Rubric-A heading in speacial Lettering placed in red letter. যেমন- শিরঃপীড়া শাখায় শিরঃপীড়ার কারণ, প্রকার, পার্থ, ব্যথার নমুনা, হ্রাসবৃদ্ধি এক একটি রুব্রিক ।

কব্রিকের প্রকারভেদ:
রুব্রিক প্রধানতঃ ২ প্রকার। যথাঃ-

(ক) লাক্ষণিক রুব্রিক ও যখন কোন রেপার্টরীতে রুবিকগুলি রোগের লক্ষণ ভিত্তিক সাজানো থাকে উহাদিগকে লাক্ষণিক রুব্রিক বলে। 
(গ) নৈদানিক রুব্রিক ও যখন কোন রেপার্টরীতে করিকগুলি রোগের নাম: ভিত্তিক সাজানো থাকে উহাদিগকে নৈদানিক রুব্রিক বলে।




প্রশ্ন-  লক্ষণের মূল্য নির্ণয় ও রেপার্টরী দেখিবার সংকেত বর্ণনা কর। 

উত্তর : হোমিওপ্যাথি স্বতন্ত্রীকরন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেক মানুষ একে অন্যের চাইতে পৃথক। ঔষধ প্রতিংএ ও দেখা গিয়াছে কোন দুইটি ঔষধের প্রুভিংএ হুবহু একই প্রকার লক্ষণ পাওয়া যায় নাই। আবার এক ঔষধও অন্য ঔষধের সমগুণ সম্পন্ন হইতে পারেনা। তাই হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী আমরা এক ঔষধের পরিবর্তে অন্য ঔষধ রোগীকে দিতে পারিনা। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এমন অসুবিধা সৃষ্টি হয় যে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও পার্থক্য নির্ণয়ের যারা একাধিক নির্বাচনের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন হইয়া পড়ে। তবুও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে একটি মাত্র ঔষধই নির্বাচন করিতে হয়।
স্বোতন্ত্রীকরনে অভিজ্ঞ হইতে হইলে মেটিরিয়া মেডিকা ভালভাবে পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন। ঔষধগুলি এমনভাবে আয়ত্ব করিতে হইবে যেন প্রতিটি ঔষধ আমাদের নিকট জীবন্ত হইয়া উঠে। আমাদের চতুষ্পার্শে গাড়ীতে, রাস্তায়, বাড়ীতে, হাটে বাজারে, অফিস আদালতে বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ দেখিয়া ঔষধের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ একজন রোগী খিটমিটে মেজাজের ও শীতকাতর, অপরজন শান্ত স্বভাবের ও গরম কাতর। দুইজন যদি একই কক্ষে জানালা খুলিয়া নিদ্রা যায় তবে শীতকাতর ব্যক্তির কিছুক্ষণ পরই নিদ্রাভঙ্গ হইবে এবং বিরক্ত হইয়া জানালাগুলি বন্ধ করিয়া দিবেন এবং শীঘ্রই সুমাইয়া পড়িবেন। অপর দিকে জানালা বন্ধ করায় বন্ধ ঘরে গরম কাতর ব্যক্তির কিছুক্ষণ পরই নিদ্রা ভঙ্গ হইবে এবং তিনি বিরক্ত হইয়া জানালা খুলিয়া দিয়া নিদ্রা যাইবেন। অতঃপর শীতকাতর ব্যক্তির নিদ্রা ভঙ্গ হওয়া, জানালাগুলি বন্ধ করা ও নিদ্রা যাওয়া এবং গরম কাতর ব্যক্তির নিদ্রা ভঙ্গ, জানালা পুনরায় খুলিয়া দেওয়া ও নিদ্রা যাওয়া পর্যায়ক্রমে সারা রাত চলিতে থাকিবে। এমনকি সকালবেলা উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি হওয়াও বিচিত্র নয়। এই দৃশ্যের মধ্যে একজন নাক্স ভমের রোগী অপর জন পালসেটিলার রোগী। এই ভাবে পর্যবেক্ষণ করিয়া আমাদিগকে মেটিরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন সার্থক করিয়া তুলিতে হইবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কে সারা জীবনই মেটিরিয়া মেডিকা নিয়া ঘাঁটা ঘাঁটি ও আলোচনা করিতে হইবে। অসংখ্য ঔষধাবলীর বিশাল লক্ষণাবলী মনে রাখার গুরু দায়িত্ব হ্রাস করার জন্য রেপার্টরীর প্রয়োজন। রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র বিশেষ। রেপার্টরীর সাহায্যে কোন ঔষধ সুনির্বাচিত হইল কিনা তাহা জানার জন্য যেমন মেটিরিয়া মেডিকা আলোচনার প্রয়োজন, তেমনি ব্যস্তভাবে ঔষধ নির্বাচনে ভুল হইলে রেপার্টরী দ্বারা সংশোধিত হইতে পারে। লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারণের পর পুনঃ পুনঃ রেপার্টরীর আলোচনা দ্বারা উহাতে দক্ষতা লাভ করা। যায়।
সঠিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য লক্ষণের গুরুত্ব সর্বপ্রথম নির্ধারণ করা উচিত। লক্ষণের মূল্যের তারতম্য অনুসারে উহার শ্রেণী বিভাগ করিতে হইবে। বিস্তারিত ভাবে রোগলিপি তৈরী করার জন্য ঔষধ নির্বাচনের সময় রোগীর চারিত্রিক লক্ষণাদির সন্ধান করিতে হয়। রোগীর বিশেষত্ব ও বিরল লক্ষণ বাদ দিয়া একশত লক্ষণ লিপিবন্ধ করিলেও ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব। সমগ্র রোগী লিপিতে অসংখ্য লক্ষণ থাকিতে পারে। কিন্তু রোগীর যথার্থ ঔষধ নির্বাচন করিতে হরত ৪/৫ টি লক্ষণের সাদৃশ্য পাওয়া যাইতে পারে এবং উক্ত লক্ষণানুসারে ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগে রোগী আরোগ্য লাভও করিতে পারে। এইভাবে লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারণ করিয়া রেপার্টরী হইতে ঔষধ বাছাই করিতে হইবে।




প্রশ্ন-  চিকিৎসা কর্মে রেপার্টরীর গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এ কথা কেহই অস্বীকার করিতে পারেন না। কারণ অন্যান্য পদ্ধতির চিকিৎসার ন্যায় রোগের নাম ধরিয়া রোগী চিকিৎসা তথা ঔষধ নির্বাচন হোমিওপ্যাথিতে নাই। হোমিওপ্যাথিক প্রতিটি ঔষধ সুস্থ মানব দেহে পরীক্ষিত। এই পরীক্ষিত ঔষধের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। বিপুল সংখ্যক এই সকল ঔষধের লক্ষণ মনে রাখা বা মুখস্থ রাখা কোন ক্রমেই সম্ভবপর নয়। রেপার্টরী উক্ত কর্মকে সহজতর করিয়াছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় ঔষধ নির্বাচনে ইহা সহজ ও দ্রুত নির্দেশ প্রদান করে। উক্ত নির্দেশের মাধ্যমে অতি সহজেই মেটিরিয়া মেডিকা হইতে ঔষধ সংগ্রহ করা যায়। ফলে চিকিৎসক সহজেই রোগীলিপি তৈরী ও পর্যালোচনা কৌশল প্রভৃতি শিক্ষা করিতে পারেন। তাই বলা যায় চিকিৎসা কার্যে রেপার্টরীর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।





প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাক্ষেত্রে রেপার্টরীর অবদান আলোচনা কর।

উত্তর : অসংখ্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মধ্য হইতে প্রয়োজনীয় লক্ষণ সম্বলিত সঠিক ঔষধটি খুঁজিয়া বাহির করিতে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হইতে হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য ডাঃ হ্যানিমান রেপার্টরী আবিষ্কার করেন। তাই ইহার অবদান ছোট করিয়া দেখার কোন অবকাশ নাই। ইহা মেটিরিয়া মেডিকার সম্পূরক এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রাপ্তির চাবিকাঠি। গ্রুপ ঔষধ প্রান্তিতেও ইহা সহায়তা করিয়া থাকে। রেপার্টরী প্রয়োজনীয় ঔষধটি নির্দিষ্ট করিয়া দেয় বলিয়া উক্ত ঔষধটি সহজেই মেটিরিয়া মেডিকা হইতে অধ্যয়ন সহজ হয় এবং রোগে প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। ইহা চিকিৎসককে রোগীলিপি প্রণয়ন ও রোগী পর্যবেক্ষণের কৌশল শিক্ষা দেয়। উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা বলা যায় যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাক্ষেত্রে রেপার্টরীর অবদান অনেক।




প্রশ্ন- একজন চিকিৎসক কিভাবে রেপার্টরী ব্যবহারের জ্ঞান অর্জন করিতে পারেন?

উত্তর : রেপার্টরী ব্যবহারের জ্ঞান অর্জন করিতে হইলে রেপার্টরীতে কি আছে, কোথায় আছে, কিভাবে আছে তাহা জানিতে হইবে। তারপর রেপার্টরী হইতে কিভাবে ঔষধ বাহির করিতে হয় তাহা জানিতে হইবে। কাজেই রেপার্টরী ব্যবহারের জ্ঞান অর্জন করিতে হইলে প্রথমেই রেপার্টরীর বিভিন্ন অধ্যায়ের রুব্রিকগুলির সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত হইতে হইবে। তার পর লক্ষণগুলি কিভাবে রুব্রিকে রূপান্তরিত করা আছে তাহা জানিতে হইবে। এইভাবে বারবার অধ্যয়নের যারাই রেপার্টরী ব্যবহারের জ্ঞান অর্জন করা যায় ।




প্রশ্ন- রেপার্টরী হইতে ঔষধ বাছাই করণের জন্য একজন চিকিৎসকের কি প্রকার জ্ঞান অর্জন করা করা উচিত?

উত্তর ঃ রেপার্টরী হইতে ঔষধ বাছাই করণের জন্য একজন চিকিৎসকের কি প্রকার জ্ঞান অর্জন করা উচিত তাহা নিম্নে আলোচনা করা হইল ।

(i) শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রকার রেপার্টরীর গঠন প্রণালী সম্বন্ধে অবগত হওয়া।
(ii) সঠিকভাবে রোগীলিপি প্রস্তুত করা এবং লক্ষণের মূল্য নির্ধারণে দক্ষতা অর্জন করা।
(iii) রোগী যে ভাষায় লক্ষণ প্রকাশ করে সে ভাষায় রুব্রিক নাও পাওয়া যাইতে পারে। কাজেই রোগীর ভাষাকে রেপার্টরীর পরিভাষায় রূপান্তরিত করার দক্ষতা অর্জন।
(iv) বিভিন্ন শাখা ও উপশাখা গুলির রুব্রিকের সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত হইতে হইবে। লক্ষণগুলি কিভাবে রুব্রিকে রূপান্তরিত করা আছে তাহাও জানিতে হইবে।




প্রশ্ন- রেপার্টরীকরণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে কি কি করিতে হয়?

উত্তর : রেপার্টরীকরণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে নিম্নলিখিত কাজগুলি সুসম্পন্ন করিতে হয়।
(i) প্রথমে সঠিকভাবে রোগী লিপি প্রস্তুত করিতে হইবে। (ii) রোগীর রোগ লক্ষণের প্রাবল্যতা হিসাবে বিশ্লেষণ এবং এনামনেসিস করিয়া লক্ষণের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করিতে হইবে ।
(iii) মূল্যায়নকৃত লক্ষণগুলিকে রেপার্টরীর পরিভাষায় রূপান্তরিত করিতে হইবে।




প্রশ্ন- রেপার্টরীতে এলিমিনেটিং (Eliminating) লক্ষণ কাহাকে বলে?

উত্তর ঃ কোন একটি সামগ্রিক লক্ষণ যদি বিশেষভাবে প্রকট হয় যাহাকে বাদ দিয়া ঔষধ নির্বাচন করা চলেনা তবে সেই লক্ষণটির রেপার্টরীকরণ প্রথমে করিয়া পরের রুব্রিক গুলিতে যে সকল ঔষধে ঐ লক্ষণ দেখা যায় না সেইগুলি বাদ দেওয়া যাইতে পারে। এই ধরণের লক্ষণকে এলিমিনেটিং লক্ষণ বলে। যেমন- প্রচন্ড গরমের সময়ও যদি কেহ শীত বোধ করে বা গরম পোষাক পরে বা রাত্রে কম্বল গায়ে দিয়া শয়ন করে তবে তাহার জন্য প্রথম রুব্রিক হিসাবে “শীতকাতরতা” এই লক্ষণটি নিতে হইবে। পরের রুব্রিক গুলি হইতে গরম কাতর ঔষধগুলি সহজেই বাদ দেওয়া যাইতে পারে।




প্রশ্ন- রেপার্টরীকে মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র বলা হয় কেন?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে সারা জীবনই মেটিরিয়া মেডিকার আলোচনা করিতে হইবে। মেটিরিয়া মেডিকার স্থান কোন কিছুর দ্বারা পূর্ণ হওয়াও সম্ভবপর নয়। অসংখ্য ঔষধ সমূহের বিস্তৃত লক্ষণাবলী মনে রাখিবার গুরু দায়িত্ব হইতে কিঞ্চিত নিস্কৃতি প্রদান করিবার জন্য রেপার্টরীর প্রচলন হইয়াছে। রেপার্টরীর সাহায্যে কোনও ঔষধ নির্বাচিত হইল কিনা তাহা অবগত হইতে যেমন মেটিরিয়া আলোচনা প্রয়োজন, তেমনি ব্যস্তভাবে ঔষধ নির্বাচনে ভুল হইলে রেপার্টরীর দ্বারা সংশোধিত হইতে পারে। সে জন্যই রেপার্টরীকে মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র বলা হয়।




প্রশ্ন-  “মেটিরিয়া মেডিকার উত্তম জ্ঞান না থাকিলে রেপার্টরী অধ্যয়ন পন্ডশ্রম মাত্র”-আলোচনা কর।
বা, “রেপার্টরীর সফল ব্যবহারের জন্য মেটিরিয়া মেডিকার উত্তম জ্ঞান আবশ্যক"-আলোচনা কর।

উত্তর : একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে সারাজীবন মেটিরিয়া মেডিকা আলোচনা করিতে হয়। অসংখ্য ঔষধাবলীর বিস্তৃত লক্ষণসমূহের জ্ঞান একমাত্র মেটিরিয়া মেডিকার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। মেটিরিয়া মেডিকা ভাল ভাবে পাঠ না করিলে লক্ষণ সম্বন্ধে একটা সীমাবদ্ধ ধারনা থাকিয়া যাইবে। ফলে রেপার্টরীর সাহায্যে সর্বদা নির্ভুল ঔষধটির নির্বাচন করার আশা ঠিক হইবে না। রোগ চিত্র সম্পূর্ণ করার জন্য লক্ষণ সমূহের সম্পূর্ণ আবিষ্কার করা চাই। রোগীর লক্ষণ চিত্রটি যখন সম্পূর্ণ সংগ্রহ করা যায় তখনই রেপার্টরী দেখা সার্থক হয়। রেপার্টরী দেখিবার সময় ঔষধের মূল্যমান ধরিয়া কোন ঔষধটি কতগুলি লক্ষণের মধ্যে পাওয়া গেল এবং তাহাদের মূল্যমান কত তাহা তুলনা করিয়া সদৃশ একটি ঔষধ নির্বাচন করাই হইবে রেপার্টরী দেখার শেষ কাজ। নির্ভুল ভাবে নির্বাচনের কৃতিত্ব উপযুক্ত ভাবে লক্ষণ সংগ্রহের উপর নির্ভর করে, আর লক্ষণ সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞানের জন্য দরকার "মেটিরিয়া মেডিকার উত্তম জ্ঞান।




প্রশ্ন- রেপার্টরীর জান মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞানকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করে আলোচনা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় প্রায় দুই হাজার ঔষধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। কাজেই মেটিরিয়া মেডিকার ক্ষেত্র এত বৃহৎ যে সম্পূর্ণ মেটিরিয়া মেডিকা বা সকল ঔষধের লক্ষণাবলী হুবহু মুখস্থ রাখা কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। রেপার্টরী ব্যতীত মেটিরিয়া মেডিকা হইতে কোন রোগীর জন্য একটি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা সহজ ব্যাপার নয়। হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকার বিশাল সমুদ্র হইতে রেপার্টরীর সাহায্যে সুনির্বাচিত একক ঔষধ নির্বাচন করা অধিকতর সহজ।
রেপার্টরীর জ্ঞান নির্বাচনযোগ্য ঔষধগুচ্ছ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে। ইহা দ্বারা অনেক সময় চিকিৎসকের না জানা ঔষধও নির্বাচন করা যায়। রেপার্টরীর জ্ঞান স্থান, কাল, পাত্র ভেদে লক্ষণের পার্থক্য নির্ণয় করিতে সাহায্য করে এবং নির্বাচনযোগ্য ঔষধ সমষ্টির তুলনামূলক বিশ্লেষণে সহায়তা করে। তাহা ছাড়া একদৈশিক রোগে যেখানে লক্ষণ সমষ্টির সঠিক চিত্র পাওয়া অনেক সময় সম্ভবপর হয় না সেখানে রেপার্টরী আমাদিগকে সবিশেষ সাহায্য করে। আবার লক্ষণসমষ্টি যদি একটি মাত্র ঔষধকে নির্দেশ না করে এবং দুই তিনটি ঔষধ আংশিকভাবে সদৃশ বলিয়া মনে হয় তখন সঠিক ঔষধটি নির্বাচন করিতে রেপার্টরীর সাহায্য অপরিহার্য।
মেটিরিয়া মেডিকায় যে কোন একটি ঔষধের সব লক্ষণ বা যে কোন ঔষধের যে কোন একটি লক্ষণ সব সময় মনে রাখা সম্ভব নয়, কোন রোগীর নিকট হইতে হয়ত বা কোন বিশেষ লক্ষণ পাওয়া গেল, তাহা মেটিরিয়া মেডিকার কোন ঔষধে আছে তাহা আমাদের স্মরন নাই, অথবা যে ঔষধে আছে বলিয়া মনে হয় সেই ঔষধের সাথে রোগীর ধাতুগত মিল নাই। এই ক্ষেত্রে আর কোন ঔষধের ঐ সকল লক্ষণ আছে তাহা জানিতে হইলে রেপার্টরী ছাড়া উপায় নাই। কাজেই দেখা যায়। মেটিরিয়া মেডিকার সাথে রেপার্টরীর একটা গভীর সম্পর্ক আছে এবং রেপার্টরীর জ্ঞান মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞানকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।




প্রশ্ন- কেবল মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞান দ্বারা সকল চিকিৎসা কি সম্ভব? যুক্তি সহ আলোচনা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকার প্রায় দুই হাজারের অধিক ঔষধে যে সকল তথ্য সন্নিবেশিত আছে তাহা দ্বারা সকল রোগীরই চিকিৎসা করা যায়। তথাপি শুধুমাত্র একক মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞান দ্বারা সব চিকিৎসা সম্ভব নয়। কেননা মেটিরিয়া মেডিকার ক্ষেত্র এত বিশাল যে সম্পূর্ণ মেটিরিয়া হুবহু মুখস্ত রাখা কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে কোন রোগীর বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা একরকম দুরুহ ব্যাপার। আবার একদেশিক ব্যাধিতে যখন লক্ষণগুলি স্পষ্ট নয় তখন সামান্যতম লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া মেটিরিয়া মেডিকার সাহায্য ছাড়া অগ্রসর হওয়া যায় না। যেন কোন একটি রোগীর বিদ্যুৎ চমকানির আলো চোখে পড়ায় তাহার দৃষ্টি শক্তি লোপ পাইয়াছে। এই রোগীর জন্য হোমিওপ্যাথিতে একটি মাত্র ঔষধ আছে, তাহা হইল ফসফোরাস। কিন্তু চিকিৎসকের যদি ইহা স্মরণ না থাকে তবে তাঁহাকে সমস্ত মেটিরিয়া মেডিকা খুঁজিতে হইবে। এই কাজটি চিকিৎসাকালীন সময়ে মোটেই সম্ভব নয়। কিন্তু রেপার্টরীর সাহায্যে আমরা অতি সহজেইন করিতে পারি। তাই শুধুমাত্র মেটিরিয়া মেডিকার জন
 



প্রশ্ন-  মেটিরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরীর মধ্যে সম্পর্ক কি?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় প্রায় দুই হাজার ঔষধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। কাজেই মেটিরিয়া মেডিকার ক্ষেত্র এত বিশাল যে সম্পূর্ণ মেটিরিয়া মেডিকা হুবহু মুখস্থ রাখা কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। মেটিরিয়া মেডিকায় অন্তর্গত ঔষধসমূহের লক্ষণাবলী সহজে খুঁজিয়া বাহির করার জন্যই রেপার্টরী তৈরী করা হইয়াছে। তাই বলা যায় মেটিরিয়া মেডিকা হইতেই রেপার্টরীর উৎপত্তি হইয়াছে, রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মেটিরিয়া মেডিকা রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল নয়। ঔষধ নির্বাচনে রেপার্টরী আমাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হইলে মেটিরিয়া মেডিকার সাহায্য দরকার হয়। কাজেই রেপার্টরী নির্বাচক নয়, সাহায্যকারী, আর মেটিরিয়া মেডিকা চূড়ান্ত নির্বাচক।
আবার রেপার্টরীর জ্ঞান নির্বাচনযোগ্য ঔষধগুচ্ছ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে। মেটিরিয়া মেডিকায় যে কোন একটি ঔষধের সবলক্ষণ বা যে কোন ঔষধের যে কোন একটি লক্ষণ সব সময় মনে রাখা সম্ভব নয়। কোন রোগীর নিকট হইতে হয়ত বা কোন বিশেষ লক্ষণ পাওয়া গেল তাহা মেটিরিয়া মেডিকার কোন ঔষধে তাহা আমাদের স্মরণ নাই। অথবা যে ঔষধে আছে বলিরা মনে হয় সেই ঔষধের সাথে রোগীর ধাতুগত মিল নাই। এই ক্ষেত্রে আর কোন ঔষধের ঐ সকল লক্ষণ আছে তাহা জানিতে হইলে রেপার্টরী ছাড়া উপায় নাই। কাজেই দেখা যায়। মেটিরিয়া মেডিকার সাথে রেপার্টরীর একটা গভীর সম্পর্ক আছে।






প্রশ্ন- শুধুমাত্র রেপার্টরীর উপর ভিত্তি করিয়াই কি ঔষধ নির্বাচন করা যায়? - আলোচনা কর।

উত্তর : শুধুমাত্র রেপার্টরীর উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ নির্বাচন করা যায় না। কারণ রেপার্টরীর সফল ব্যবহারের জন্য অর্গানন অব মেডিসিন এবং মেটিরিয়া মেডিকার উত্তম জ্ঞান আবশ্যক। তাহা ছাড়া কোন রেপার্টরীই সর্বতোভাবে উপযুক্ত নহে। কেননা নূতন আবিষ্কৃত ঔষধসমূহ এখনও রেপার্টরীতে সংযোজিত হয় নাই। বংশগত ইতিহাস বা বিগত জীবনের ইতিহাস, দৈবাৎ ঘটনা প্রভৃতি হইতে প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ও কপাট প্রাপ্ত লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধ নির্বাচনে কতকগুলি মূলভিত্তির প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হয়, যাহা কোন রেপার্টরীতেই মূল্যায়ন করা হয়। নাই। যেখানে মায়াজন সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, সেখানে রেপার্টরীতে অবস্থানরত লক্ষণের উপর নির্ভর করিলে ব্যর্থতা অনিবার্য। বিশেষ করিয়া জটিল ও  চিররোগের ক্ষেত্রে রেপার্টরী খুব একটা সাহায্য করিতে পারে না। অতএব ইহা প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র রেপার্টরীর উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ নির্বাচন চলেনা। 



প্রশ্ন- রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার বিকল্প নহে-আলোচনা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা হইতেই রেপার্টরীর উৎপত্তি হইয়াছে। সুস্থ মানবদেহে ভেষজ পরীক্ষা করিয়া যে সকল অসুস্থকর লক্ষণ পাওয়া গিয়াছে, সে সকল লক্ষণই মেটিরিয়া মেডিকায় স্থান পাইয়াছে। আর মেটিরিয়া মেডিকার অন্তর্গত ঔষধাবলীর লক্ষণসমূহ হইতে রেপার্টরী তৈরী করা হইয়াছে। তাই বলা যায় রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু মেটিরিয়া মেডিকা রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল নয়। রেপার্টরী ঔষধ নির্বাচনে আনাদেরকে যথেষ্ট সহায়তা করে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হইলে মেটিরিয়া মেডিকার সাহায্য দরকার। কাজেই রেপার্টরী হইল সাহায্যকারী। আর মেটিরিয়া মেডিকা চূড়ান্ত সহায়ক। রেপার্টরীতে মানব দেহের বিভিন্ন রোগ লক্ষণ ও উক্ত লক্ষণের সাদৃশতম ভেষজ এমনভাবে বর্ণমালা ক্রমে সাজানো যাহা মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র হিসাবে কাজ করে। কাজেই রেপার্টরীকে মেটিরিয়া মেডিকার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায় না।




প্রশ্ন- রেপার্টরী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংক শাস্ত্র ব্যাখ্যা কর।

উত্তর ঃ রেপার্টরীকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংক শাস্ত্র আখ্যায়িত করা যায়। অংক কষিয়া নির্ভুলভাবে সঠিক ঔষধ নির্বাচনে রেপার্টরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রহিয়াছে। রেপার্টরীর সঠিক ব্যবহারের জন্য লক্ষণের মূল্যায়ন করা এবং বাছাই করা লক্ষণগুলি হইতে মানসিক ও অন্যান্য সামগ্রিক লক্ষণগুলির প্রয়োজনীয় রুব্রিক হইতে ঔষধের একটি তালিকা প্রস্তুত করিতে হয়। বাছাই করা প্রত্যেকটি ঔষধের নামের পাশে উহাদের মূল্য হিসাবে মোটা বা বড় অক্ষরের জন্য আংকিক মান ৩, বাঁকা বা তারকা চিহ্নিত অক্ষরের জন্য আংকিক মান ২ এবং সাধারণ অক্ষরের জন্য আংকিক মান ১ হিসাবে মূল্য লিখিতে হয়। এইভাবে সামগ্রিক রেপার্টরীকরণ শেষ হইলে যে ঔষধ মোট আংকিক মানের দিক হইতে সর্বোচ্চ মূল্য লাভ করে, সেই ঔষধটিই সাধারণতঃ রোগীর জন্য নির্বাচিত হইয়া থাকে। এইভাবে রেপার্টরীর সাহায্যে অংক কষিয়া সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা যায় বলিয়া রেপার্টরীকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংকশাস্ত্র বলা হয়।
 

প্রশ্ন- মেটিরিয়া মেডিকা এবং রেপার্টরীর মধ্যে পার্থক্য কি? আলোচনা কর।

উত্তর : মেটিরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করা হইল।

মেটিরিয়া মেডিকা

১। সকল ঔষধই সুস্থ মানব দেহে পরীক্ষিত।
২। মেটিরিয়া মেডিকায় নূতন ঔষধের সংযোজন করা হয় ।
৩। রেপার্টরী ছাড়া শুধু মেটিরিয়া মেডিকা দ্বারা চিকিৎসা চলিতে পারে।
৪। মেটিরিয়া মেডিকা ঔষধের ভান্ডার হিসাবে কাজ করে।
৫। ঔষধের বিবরণ পরিপূর্ণ ও বিস্ত ারিতভাবে দেওয়া থাকে। ইহা হইতে | প্রয়োজনীয় ঔষধাবলী রেপার্টরীর সাহায্যে সম্ভাব্য সঠিক ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করা যায় ।

রেপার্টরী

১। সকল ঔষধ সুস্থ মানব দেহে পরীক্ষিত নয়।
২। রেপার্টরীতে নূতন ঔষধের সংযোজন করা হয় না।
৩। মেটিরিয়া মেডিকা ছাড়া শুধু রেপার্টরী যারা সত্যিকার চিকিৎসা চলে না।
৪। রেপার্টরী ঔষধ প্রাপ্তির সহজ নির্দেশক তথা মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র হিসাবে কাজ করে।
৫। রোগের বর্ণনা ও উহার প্রয়োজনীয় ঔষধাবলী সাজানো থাকে। তবে সঠিক ঔষধটি ব্যবহার করিতে হইলে মেটিরিয়া মেডিকার সাহায্য নিতে হয়।



প্রশ্ন- রেপার্টরীর ব্যবহার পদ্ধতি সম্বন্ধে লিখ।

উত্তর : রেপার্টরী ব্যবহারের সাফল্য সঠিক রোগী লিপি প্রস্তুতের উপর নির্ভর করে। ইহার ব্যবহার একটি মস্ত বড় আর্ট। প্রথমে সঠিকভাবে রোগীর লক্ষণাবলী সংগ্রহ করিয়া লক্ষণগুলিকে রেপার্টরীর পরিভাষায় রূপান্তরিত করিতে হইবে। তারপর লক্ষণানুসারে রেপার্টরী হইতে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণের জন্য বিভিন্ন ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। যেমন কেন্ট রেপার্টরীতে যেখানে বেদনা এর রুব্রিক দেওয়া আছে, সেই রুব্রিক হইতে বেদনার সময় স্থান, চরিত্র, সম্প্রসারণ, হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি প্রয়োজন মত খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। উক্ত লক্ষণ সমূহ রেপার্টরীতে বর্ণমালা ক্রমিকভাবে সাজানো, তাই খুঁজিয়া করা সহজ। উক্ত লক্ষণের পাশে প্রয়োজনীয় ঔষধ গুলির নাম লেখা আছে এবং ঔষধগুলি গুরুত্ব অনুসারে মোটা ও বড় অক্ষরে তারকা চিহ্নিত এবং সাধারণ অক্ষরে লিখিত আছে। বড় অক্ষরের মূল্য সর্বাধিক তারকা চিহ্নিত অক্ষরের মূল্য মধ্যম এবং সাধারণ অক্ষরের মূল্য সাধারণ। এই হিসাবে উহাদের আংকিক মান যথাক্রমে ৩, ২ এবং ১ ধরিয়া লক্ষণানুযারী রেপার্টরীতে লিখিত ঔষধগুলির নাম একটি পৃথক কাগজে লিখিয়া উহাদের পার্শ্বে উহাদের আংকিক মান বসাইতে হইবে। এইভাবে প্রত্যেকটি লক্ষণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ লিখিয়া নিতে হইবে। তারপর প্রত্যেকটি ঔষধের মান পৃথক পৃথক ভাবে যোগ করিয়া যে ঔষধের আংকিক মান সর্বাধিক উহাই সঠিক ঔষধ বলিয়া নির্বাচিত হইবে। তবে অবশ্যই স্মরণ রাখিতে হইবে যে, লক্ষণের গুরুত্ব নির্ণয় না করিতে পারিলে ঔষধ নির্বাচন অবশ্যই ভুল হইবে। কারণ স্থানীয় লক্ষণ অপেক্ষা। সর্বাঙ্গীন লক্ষণের মূল্য সবসময়ই অধিক এবং লক্ষণ যতই অদ্ভুত, অস্বাভাবিক প্রকৃতির ও বিরল প্রকৃতির হইবে তাহাদের মূল্যও তত বেশী হইবে।




প্রশ্ন- অর্গানন অব মেডিসিনের সহিত রেপার্টরীর সম্বন্ধ কি? 
বা, রেপার্টরী ব্যবহারের সফলতা অর্গানন অব মেডিসিনের জ্ঞানের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : রোগীর লক্ষণসংগ্রহ করিয়া পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত করার পরই রেপার্টরী ব্যবহার করিতে হয়। লক্ষণ সংগ্রহে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ পড়িলে সেই রোগী লিপির রেপার্টরীকরণ বৃদ্ধা এবং পন্ডশ্রমমাত্র। সঠিকভাবে লক্ষণ সংগ্ৰহ করিয়া কিভাবে পূর্ণাঙ্গ রোগী লিপি প্রস্তুত করিতে হয় অর্গানন হইতে আমরা সেই শিক্ষা লাভ করি। অর্গানন অব মেডিসিনের জ্ঞান ব্যতীত সঠিকভাবে পূর্ণাঙ্গ রোগী লিপি প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। লক্ষণ সংগ্রহের পর আসে লক্ষণের মূল্যায়ন। যথাযথ ভাবে লক্ষণের মূল্যায়ন করিতে সক্ষম হইলে তবেই রেপার্টরী হইতে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু লক্ষণসমূহের মূল্যায়নে রেপার্টরীর কোন অবদান নাই, ইহা নির্ভর করে চিকিৎসকের মূল্যায়নের ক্ষমতার উপর। এই ক্ষেত্রেও অর্গাননই আমাদেরকে সাহায্য করিতে পারে। ঔষধ নির্বাচনে কোন কোন লক্ষণগুলি বিশেষ প্রয়োজন এবং কোন্ কোন্‌ লক্ষণগুলি বাদ দেওয়া যায় তাহার বিস্তারিত আলোচনা অর্গাননে করা হইয়াছে। কাজেই অর্গাননের জ্ঞান দ্বারা চিকিৎসক লক্ষণ মূল্যায়নের ক্ষমতা অর্জন করিতে পারেন। অতএব রেপার্টরী ব্যবহারের সফলতা অর্গানন অব মেডিসিনের জ্ঞানের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
 



প্রশ্ন- "হোমিওপ্যাথিক অর্গানন হইল ব্যাকরণ, মেটিরিয়া মেডিকা সাহিত্য এবং রেপার্টরী অভিধানতুল্য”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : অর্গানন অব মেডিসিন হইল হোমিওপ্যাথিক ব্যাকরণ। ব্যাকরণের জ্ঞান ছাড়া যেমন সাহিত্য ও অভিধান পাঠ করা সম্ভব নয়, তেমনি অর্গাননের জান ছাড়া মেটিরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরী ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অর্গানন হইল হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতির উৎপত্তিস্থল। অর্গাননের জান থাকিলে হোমিওপ্যাথির তত্ত্ব ও তথ্যাদি সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। পীড়া কি, মানবদেহে ইহা কিভাবে সংক্রমিত হইয়া দেহ মনে লক্ষণাদির সৃষ্টি করে, ঔষধ কি, ঔষধ কিভাবে আরোগ্য সম্পাদন করে, মানসিক ও দৈহিক কোন লক্ষণে কোন সুনির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগ করা যাইবে, কতক্ষণ পরপর ঔষধ প্রয়োগ করা যাইবে, আরোগ্যের প্রতিবন্ধকতা কি কি, কিভাবে প্রতিবন্ধকতা দূর করা যাইবে, প্রভৃতি বিষয়াদির আলোচনা অর্গানন গ্রন্থে করা হইয়াছে। এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকিলে হোমিও চিকিৎসায় সাফল্য লাভ অসম্ভব। তদুপরি চিকিৎসকের দায়িত্ব কর্তব্য, চিকিৎসার পদ্ধতি, রোগী পরীক্ষার পদ্ধতি, রোগীকে প্রশ্ন করার পদ্ধতি, রোগের প্রকারভেদ, ত্রিদোষের উৎপত্তি ও বিকাশ, পথ্যাপথ্য সহ বিভিন্ন বিষয়াবলীর শিক্ষাও আমরা অর্গানন গ্রন্থে পাই। তাই অর্গানন হইল হোমিও প্যাথির ব্যাকরণ।
মেটিরিয়া মেডিকাকে হোমিওপ্যাথির সাহিত্য বলা হয়। মেটিরিয়া মেডিকা হইল ঔষধকোষ, যাহাতে অসংখ্য পরীক্ষিত ঔষধ সমূহের লক্ষণাবলী সুন্দরভাবে লিপিবন্ধ থাকে। ঔষধ তথা রোগীর মানসিক, দৈহিক ও সার্বিক লক্ষণাদির পূর্ণ বিবরণ আমরা মেটিরিয়া মেডিকাতেই পাই। সদৃশ লক্ষণে উপযুক্ত ঔষধটি আমরা মেটিরিয়া মেডিকা হইতেই বাছিয়া নিই।
রেপার্টরী হইল অভিধানতুল্য। মেটিরিয়া মেডিকার বিশাল ভান্ডার হইতে লক্ষণ সাদৃশ্যে ও নির্বাচন করা অসম্ভব বলিয়া ডাঃ হ্যানিমান মেটিরিয়া মেডিকার অন্তর্গত ঔষধসমূহের লক্ষণাবলী সহজে খুঁজিয়া বাহির করার জন্য রেপার্টরী তৈরী করিয়াছেন। কাজেই মেটিরিয়া মেডিকা হইতে রেপার্টরীর উৎপত্তি হইয়াছে। রেপার্টরীকে মেটিরিয়া মেডিকার সূচীপত্র বলা হয়। রেপার্টরীর সঠিক ব্যবহারের জন্য লক্ষণের মূল্যায়ন করা এবং বাছাই করা লক্ষণগুলি হইতে মানসিক ও অন্যান্য সামগ্রিক লক্ষণানুসারে প্রয়োজনীয় রুব্রিক হইতে ঔষধেন একটি তালিকা প্রস্তুত করিতে হয়। উক্ত বাছাই করা তালিকা হইতে মোট আংকিক মানের দিক হইতে যে ঔষধ সর্বোচ্চ মূল্য লাভ করে, উহাই রোগীর জন্য নির্বাচিত ঔষধ। রেপার্টরীকে তাই হোমিওপ্যাথির অভিধান বলা হয়।
 পন্ডিত ব্যক্তির যেমন ব্যাকরণ, সাহিত্য ও অভিধান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জন আছে তেমনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়ও পন্ডিত হইতে হইলে অর্গানন রূপ ব্যাকারণ, মেটিরিয়া মেডিকা রূপ সাহিত্য এবং রেপার্টরী রূপ অভিধান সম্পরে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভের প্রয়োজন। ইহারা একে অন্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।

 

সমাপ্ত



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ