হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়া - Valvular Heart Diseass, চতুর্থ বর্ষ - প্র্যাকটিস অব মেডিসিন

 হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়া 
Valvular Heart Diseass




হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়া:
হৃদপিণ্ডের রুপাটিকার অনিয়মিত কার্যাবলীর জন্য যে পীড়া হয়, অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের ভালব সরু হইয়াই হউক বা ঢিলা হইয়াই হউক, হার্টের মধ্যে যদি অধিক পরিমাণে রক্ত জমে, তখন হৃদপেশী স্বয়ং জোরে সংকুচিত ও প্রসারিত করিয়া রক্ত বাহির করিয়া দেয়, হার্টের পেশী ঐভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে দুর্বল হইয়া পড়ে এবং দেহে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। ইহাকেই হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়া বলে। 

ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার শ্রেণীবিভাগ প্রধানতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
১) মাইট্রাল ভালভের পীড়া- হৃদপেশী দুর্বল ও পালমোনারী ধমনীতে রক্তাধিক্য ঘটে। 
২) ট্রাইকাসপিড ভালভের পীড়া- হৃদপেশী দুর্বল হইয়া অস্ত্রে সর্দি, প্রান্তদেশ - নীলবর্ণ হওয়া, ন্যাবা প্রভৃতি দেখা দেয়। 
৩) এওটিক ভালভের পীড়া-হৃদপেশীর ক্ষমতা নষ্ট হইয়া বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা, হৃদপিণ্ডে বেদনা প্রভৃতি দেখা দেয়। 

ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার কারণতত্ত্ব:-  
কোন কারণবশতঃ যদি হৃদপিণ্ডের কপাটিকার মুখ সরু হইয়া যায় তবে সেই কামরার সমস্ত রক্ত বাহির হইতে পারে না, রক্তের কিছু অংশ কামরার মধ্যেই থাকিয়া যায়, ইহাতে হার্টের ডাইলেটেশন হয়। আবার যদি হৃদকপাট সম্পূর্ণ বন্ধ না হয় তবে পুনরায় সেই কামরায় রক্ত ফিরিয়া আসে ইহাতেও কামরার মধ্যে অধিক রক্ত থাকিয়া যায় ফলে হার্টের মধ্যে অধিক পরিমাণে রক্ত জমে এবং দিন দিন ক্রমশঃ হার্ট বড় হইতে থাকে, ইহাকেও হার্টের ডাইলেটেশন বলে । এই কারণেই রোগ সৃষ্টির সুযোগ হয়। ইহা ছাড়া অন্যান্য কারণেও ভালভের পীড়া হইতে পারে যেমন:-
১) অতিরিক্ত মদ্যপান ও উগ্রজাতীয় নেশা গ্রহণ ।
২) অতিরিক্ত পরিশ্রম ।
৩) অনবরত হাতুড়ী, মুগুর বা করাত চালানো। 
৪) অতিরিক্ত চা, কফি পান, ইন্দ্ৰিয় চালনা, প্রভৃতি ।
৫) উপদংশ, বাত, এলবুমিনুরিয়া প্রভৃতি হইলে।
৬) অতিভোজন ও অল্প ভোজন ।
৭) অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করিলে।
৮) জন্মগতভাবে গঠনের অস্বাভাবিকতা।
৯) ব্যাকটেরিয়্যাল এন্ডোকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডিয়াল জীবাণু সংক্রমণের ফলে ভাবে রাপচার হওয়া।

ভালভুলার হার্ট ডিজিজের বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার লক্ষণাবলী:- 
১) পালমোনারী ধমনীতে রক্তাধিক্য, লিভার বড় হওয়া।
২) কোষ্ঠবদ্ধতা ।
৩) পায়ে শোথ দেখা দেয়, সর্বাঙ্গ কোলে।
৪) প্রস্রাব পরিমাণে কম হয়।
৫) বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট।
৬) মুখ, ঠোঁট, হাত পায়ের আঙ্গুল নীলবর্ণ হওয়া, শিরাসমূহে রক্তাধিক্য।
৭) ন্যাবা ।
৮) হৃদপিণ্ড প্রদেশে অত্যধিক বেদনা, ঐ বেদনা সমস্ত বাহুতে বিস্তৃত হয়।
৯) মাথা ঘোরা।
১০) পুরাতন পীড়ায় কাশি, শ্বাসকষ্টের বৃদ্ধি, শুইতে না পারা, বালিশে ঠেস দিয়া বসিয়া থাকা প্রভৃতি ।
১১) পালমোনারী এরিয়াতে সিসটোলিক মার্মার এবং ট্রাইকাসপিড এরিয়াতে ড ডায়াস্টোলিক মার্মার পাওয়া যায়। 

ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার ডায়াগনোসিস ও পরীক্ষা:-
Haemogram/Sugar (F)/ Ureal Cholesterol/ LDH/ SGOT/ C PK/ CK-MB/ Sodium/ -ostassium.

ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার চিকিৎসা ও পথ্য :-
এই জাতীয় পীড়ার জন্য অনেক সময় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। আজকাল এই সব রোগের জন্য Pace Maker বসানোর ব্যবস্থা আছে। তবে তাহা সাধারণ লোকের জন্য নয়। সময় মত আহার, বিশ্রাম, ঘুম, পরিমিত পরিশ্রম ও বিশ্রাম, উষ্ণজলে গোসল, ঠাণ্ডা না লাগানো, মুক্ত বায়ুতে বেড়ানো প্রভৃতি হিতকর। দোক্তা, পান, তামাক, মদ গ্রহণ নিষেধ ।
সহজে হজম হয় এই জাতীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, আলু, মানকচু, শাকসবজি,ছানার পানি, বেদানা, আঙ্গুর প্রভৃতি সুপথ্য।

ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) ডিজিট্যালিস- নাড়ী ধীরগতি বিশিষ্ট ও অনিয়মিত, আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক শোথ লক্ষণ, হৃদবেষ্টের দুর্বলতা ও বিবৃদ্ধি, হৃদ ধমনীতে তন্তুময় পদার্থ সঞ্চয়, চর্ম, ওষ্ঠ, জিহ্বা, নখ নীলবর্ণ হওয়া, কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, মনে হয় এখনই হৃদক্রিয়া বন্ধ হইয়া যাইবে। সামান্য পরিশ্রমে বুকে ধড়ফড়ানি, বুকে সুঁচ ফোটানো ব্যথা, শুইতে অক্ষমতা প্রভৃতি লক্ষণে ইহা ব্যবহার্য ।
২) ক্র্যাটেগাস- পুরাতন হৃদপিণ্ডের পীড়া, অতিশয় দুর্বলতা, হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া অনিয়মিত, হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম, সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি, হৃদশূল, হৃদকপাটের মুখের বিকৃতি, নাড়ীর দ্রুতগতি প্রভৃতি লক্ষণে ইহা ব্যবহার্য।
৩) এডোনিস ভার্নালিস— হৃদপীড়ার ইহা উত্তম ঔষধ। হৃদধমনীর পশ্চাদগমন, হৃদাবরনীয় পর্দার বেদনা, হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, কার্ডিয়াক এজমা, হৃদপিণ্ডের শোথ, বক্ষদেশে জল সঞ্চয়, সর্বাঙ্গীন শোথ, উদরী, প্রভৃতি লক্ষণে ইহা ব্যবহৃত হয়। ইহা সেবনে প্রস্রাবের পরিমান বৃদ্ধি পায় ।
৪) কনভ্যালেরিয়া মেজালিস-হৃদ কপাটের প্রসারণ ও হৃদপেশীর বিবর্ধনে ইহা মূল্যবান ঔষধ। হৃদপিণ্ডের পীড়াজনিত শ্বাসকষ্ট, শয়নে অক্ষমতা, শোথ, উদরী, ব্যায়ামকালীন বুক ধড়ফড়ানি, দ্রুত ও অনিয়মিত নাড়ী, সামান্য নড়াচড়াতেও বুক ধড়ফড়ানি, হৃদপিণ্ড চলিতে চলিতে যেন বন্ধ হইয়া গেল, পরক্ষণেই যেন চলিতে আরম্ভ করে, এই সব লক্ষণে ইহা ব্যবহার্য ।
৫) স্পাইজেলিয়া- হৃদপীড়ার আনুষঙ্গিক লক্ষণরূপে বাতের ব্যথা, প্রচণ্ড হৃদকম্পন, বাহির হইতে অনুভব করা যায় এমন, রোগীর নিকট দাঁড়াইলে হৃদস্পন্দনের শব্দ শোনা যায়, বামদিক চাপিয়া শয়নে অক্ষমতা, হৃদপিণ্ডে খোঁচামারা ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণে ইহা ব্যবহার্য ।
ইহা ছাড়া লক্ষণানুযায়ী এই পীড়ায় আর্সেনিক, আইবেরিস, এমিল নাইট, এপোসাইনাম, স্ট্রোফেনথাস, ক্যাক্টাস, লাইকোপোডিয়াম, ট্যাবেকাম প্রভৃতি ঔষধও ব্যবহৃত হয়। লিখ ।

ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়ার ভাবীফল:-
হৃদপিণ্ডের যে কোন পীড়াই অশুভ। এই পীড়ায় হঠাৎ রোগী মারা যাইতে পারে। পীড়া তীব্র না হইলে অনেকদিন রোগী বাঁচিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই হৃদপেশী পর্যুদস্ত হইয়া পড়ে এবং অরিকিউলার ফাইব্রিলেশন উপস্থিত হইয়া রোগীকে শয্যাশায়ী করিয়া ফেলে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ