এমোনিয়াম কার্ব - AMMONIUM CARB - তৃতীয় বর্ষ, মেটেরিয়া মেডিকা

এমোনিয়াম কার্ব - AMMONIUM CARB





রাসায়নিক চিহ্ন:-  NH4 HCO3 NH2 CO2

প্রস্তুতের ফরমুলা :-
অরিষ্ট ৫-এ, বিচূর্ণ-৭।

প্রতিশব্দ:-
এমোনিয়াম কার্বোনেট, এমোনি কার্বোনাস, ভোলাটাইল সল্ট, এমন কার্ব।

বর্ণনা:-
এক প্রকার সাদা স্ফটিক অথবা আলো আসিতে পারে অথচ অস্বচ্ছ পিন্ডাকার পদার্থ। এমোনিয়ার তীব্র গন্ধ ইহাতে বর্তমান থাকে। ইহাতে লোনা স্বাদ আছে। বাতাসে ইহা খোলা অবস্থায় রাখা হইলে এমোনিয়া ও কার্বনিক এসিড গ্যাস নিঃশেষিত হইয়া যায়। এই লবণ অত্যন্ত অস্থায়ী। সকল অবস্থাতেই নতুন টাটকা ভাবে তৈারি করিতে হয়। কেমিক্যাল ল্যাবরেটরীতে ইহা পাওয়া যায়।

উৎস ও প্রস্তুত প্রণালী:-
নিশাদল (এমোনিয়া) ও চুনের বিষক্রিয়া পদ্ধতিতে এই লবণ প্রস্তুত হয়। অরিষ্ট প্রস্তুত করিতে হইলে পরিশ্রুত জলের সহিত ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুযায়ী এমন কার্ব মিশ্রিত করিতে হয়। ২X এবং উচ্চশক্তি আশু ব্যবহারের জন্য পরিশ্রুত জলের সহিত প্রস্তুত করিতে হইবে। প্রকৃত পক্ষে ৬X এর উপরের সকল ক্রম পরিশ্রুত সুরাসার দ্বারা তৈরী করিতে হয়।

প্রুভার:-
মহাত্মা হ্যানিমান ইহা প্রুভ করেন।

ক্রিয়াস্থান:-  
রক্তের উপর ইহার ক্রিয়া অধিক। শ্বাসনালী, শ্লৈষ্মিকঝিল্লী, স্নায়ুমন্ডল, প্রভৃতির উপর ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে।

ধাতুগত লক্ষণ:- 
কফ প্রধান ধাতুর লোক, শীত কাতর, রক্তস্রাব প্রবণতাযুক্ত, অবসাদ গ্রস্ত, অলস, মোটাসোটা, অপরিষ্কার ও সহজেই ঠান্ডা লাগে এই ধরণের ব্যক্তিতে এমন কার্ব ভাল কাজ করে। সকল লক্ষণ শীতকালে, ঠান্ডা বা ভিজা বাতাসে, শীতল জলে স্নান করিলে এমনকি ঠান্ডা জলে হাত পা ধুইলেও বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে, গরম ঘরে, যন্ত্রণাযুক্ত পার্শ্বে ও উপুড় হইয়া শুইলে এবং চা পানে রোগ উপশম পায়।

প্রয়োগক্ষেত্র:-
শ্বাসকৃষ্ণতা, অত্যধিক অবসন্নতা, শরীরের নানা স্থানের রক্তস্রাব, হাজা ভাব, মেনিনজাইটিস, কাশি ও ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, নিমোনিয়া, হৃৎপিন্ডের পীড়া, চর্মপীড়া, অর্শ, প্রস্রাবের পীড়া, স্ত্রীপীড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয়।

মানসিক লক্ষণ:-
১। রোগী অবসাদগ্রস্ত।
২। অমনোযোগী এবং অখুশি।
৩। কোন কিছু বলিতে গেলে ও লিখিতে গেলে ভুল করে।
৪। রোগী বিষন্ন এবং অযথা কান্না করে।
৫। শিশুরা স্নান করিতে চায়না।

চরিত্রগত:-
১। প্রাতঃ কালে হাত মুখ ধুইবার সময় নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হয়।
২। রাত্রি কালে নাসিকা বন্ধ। সে জন্য মুখ দিয়া নিঃ শ্বাস ফেলিতে হয়। দিনে নাক দিয়া সর্দি ও চোখ দিয়া জল পড়ে।
৩। রাত্রি ৩টার পর গলায় সুড়সুড়ি করিয়া কাশি।
৪। ঘুমাইলে হঠাৎ শ্বাসবন্ধের মত হয়, সে জন্য উঠিয়া পড়ে।
৫। ব্রঙ্কাইটিস ও ব্রঙ্কোনিমোনিয়া।
৬। সাংঘাতিক প্রকারের আরক্ত জ্বর।
৭। ঋতুস্রাব হইলেই কলেরার ন্যায় অবস্থা হয়। প্রতিবার ঋতুতে রক্তবাহ্য।
৮। সমস্ত শরীর রক্ত বর্ণ, যেন আরক্ত জ্বর হইয়াছে।
৯। পৃষ্ঠদেশে অত্যন্ত বেদনা ও ঠান্ডা বোধ।

রক্তস্রাবে লক্ষণ:- 
দেহস্থ বিভিন্ন ছিদ্র পথ দিয়া রক্তস্রাব ইহার একটি প্রকৃত লক্ষণ। সেজন্য ইহাতে নাসিকা, অর্ণবলি ও গলক্ষত হইতে প্রচুর পরিমানে রক্ত নির্গত হয় এবং স্ত্রীলোকদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবও প্রচুর হইতে থাকে। প্রাতঃ কালে হাত মুখ ধুইবার সময় কিংবা আহারের পর নাক দিয়া রক্তস্রাব হয়। কিছুদিন ডান নাক দিয়া রক্ত পড়িয়া আবার কিছুদিন বাম নাক দিয়া পড়িতে থাকে। নাকে ঘা, নাক ঝাড়িলে নাক দিয়া রক্ত মিশ্রিত মামড়ি জোরে বাহির হয়, নাক দিয়া জল পড়ে। রাত্রিতে নাক বন্ধ হয়। আহারের পর অর্শবলির রক্তস্রাব দৃষ্ট হয়। শরীরের কোনও স্থান হইতে রক্তস্রাব দেখা দিলে লোকে সাধারণতঃ সেই স্থানটিতে ঠান্ডা পানি ঢালিতে থাকে। কিন্তু স্মরণ রাখা কর্তব্য যে এমন কার্বের লক্ষণযুক্ত রোগীর রক্তস্রাব দেখা দিলে সে স্থানে কোনও মতেই ঠান্ডা পানি দেওয়া সঙ্গত নয় ইহাতে রক্তস্রাবটি আরও বৃদ্ধি পায়। ইহার রক্ত কাল বর্ণের এবং সহজে জমাট হতে চায় না।

নাসিকা বন্ধে:-  
এমন কার্বের নাসিকা বন্ধ হইয়া যাওয়া একটি অতি মূল্যবান ধাতু গত লক্ষণ। সাধানণতঃ সর্দি ও ডিপথিরিয়া রোগে ইহার রোগী স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস লইতে না পারায় বড়ই কষ্ট অনুভব করে। নাসিকার ঐ প্রকার অবস্থাটি রাত্রিতে বৃদ্ধি পায় এবং রোগী মুখ দিয়া নিঃশ্বাস ফেলিতে বাধ্য হয়। এমনকি নিদ্রার মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হইয়া যায় বলিয়া রোগী চমকিয়া উঠে। তাহা ছাড়া নিমোনিয়া, হাম, বসন্ত, স্কার্লেট ইত্যাদি যে কোনও নামের উদ্ভেদযুক্ত পীড়ায় ইহার নাসিকাটি ঐভাবে বন্ধ হইয়া যায়।

মস্তিষ্ক ঝিল্লি প্রদাহে:-
দুষ্ট জাতীয় বসন্ত, হাম, স্কার্লেট, নিমোনিয়া প্রভৃতিতে যদি রোগীর নাসিকা বন্ধ হইয়া যায় এবং স্বাভাবিক শ্বাস ক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এবং রোগী মুখ দিয়া নিঃশ্বাস ফেলিতে বাধ্য হয় ঐভাবে নাসিকা বন্ধ হওয়ায় যদি উদ্ভেদ সমূহ ভালভাবে বাহির হইতে না পারে এবং বুকের মধ্যে ঘড়ঘড় শব্দ, দুর্বল নাড়ী, তন্দ্রাঘোরে কোন কিছু ধরিবার জন্য উপর দিকে হাত বাড়ান, ঠোঁট ও শরীর নীল বর্ণ, পাংশুটে বর্ণের জিহবা ও তৎসঙ্গে হিমাঙ্গ অবস্থাটি বর্তমান থাকে তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ ইহা প্রয়োগ না করিলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়। কেননা ক্রমেই মস্তিষ্কের ঝিল্লী প্রদাহ আরম্ভ হইয়া ঘোর বিকার অবস্থার আবির্ভাব হয় এবং রোগী তন্দ্রাঘোরে ভয় পাইয়া চীৎকার করিতে করিতে সত্বর মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
আবার ঐপ্রকার লক্ষণটি আসিবার পুর্বেই অনেক ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ডের ক্রিয়াটি হঠাৎ বন্ধ হইয়া যায়। ইহা ছাড়া কলেরার শেষ অবস্থায় প্রস্রাব না হওয়ার জন্য ঐ প্রকার বিকার লক্ষণ আসিলেও ইহা সমভাবে কাজ করে।

সর্দিস্রাব লক্ষণ:-
সাধারণত সর্দি রোগেও এমন কার্বের ব্যবহার আছে। রোগীর নাকটি রাত্রে বন্ধ হইয়া যায়। বিশেষতঃ ইহার শিশু রোগী নিঃশ্বাসের কষ্ট হওয়াতে ঘুমাইতে ঘুমাইতে চমকাইয়া উঠে এবং গলাটি সুড়সুড় করে বলিয়া তাহার খুকখুকে কাশি হয়, আাবার এই সঙ্গে অনেকের গলাটি ভঙ্গিয়া যায়। রোগীর নাসিকা হইতে সামান্য সাদা ও সবুজ রং মিশ্রিত সর্দি নির্গত হয় ও উপরের ঠোঁটটি হাজিয়া যায়। রোগী মনে করে যে তাহার গলদেশে একটি পুঁটলি রহিয়াছে। সাধানণতঃ শীতকালে এই প্রকার হইয়া থাকে। ইহার সহিত কোষ্ঠবদ্ধ লক্ষণটিও বর্তমান থাকে।

শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায়:-
শ্বাস যন্ত্রের পীড়ায় এমন কার্ব বিশেষ কার্যকরী। পুরাতন ব্রঙ্কাইটিসেই ইহা বেশী উপকারী। শ্বাস নালীতে প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা জমিয়া গলা সাঁই সাঁই করে, অনবরত কাশি হয়, কিন্তু গয়ার উঠেনা। কাশির বৃদ্ধি প্রায় রাত্রি ৩।৪ টার সময়, গলা সুড়সড় করে। যদিও সামান্য উঠে তাহাও অনেক কষ্টে। সময়ে সময়ে কাশিতে হাঁপ হয়। টান আসে ও দম আটকাইয়া যায়, মনে হয় যেন গলায় চুল কি পালক আটকাইয়া আছে। নিঃশ্বাস ফেলিতে কষ্ট, সিঁড়িতে উঠিলে বা পরিশ্রম করিলে কষ্টের আরও বৃদ্ধি। রক্ত না উঠিলেও মুখে রক্তের স্বাদ, তাহার পর কাশি। মুখ দিয়া রক্ত উঠে, সেই রক্তের বর্ণ উজ্জ্বল লাল। যক্ষ্মা কাশির প্রথমাবস্থায় উপরোক্ত লক্ষণ সহ মজ্জাগত জ্বর, রক্ত উঠা ও সে সাথে দুর্বলতা থাকিলে ইহাতে বিশেষ উপকার হয়।

হৃৎপিন্ডের পীড়ায়:- 
এমন কার্বের ধাতুযক্ত রোগীর হৃৎপিন্ড বড়ই দুর্বল, কিন্তু বাহ্যতঃ ইহার রোগীকে বেশ সুস্থ দেখায় অথচ হৃৎপিন্ডটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করেনা এবং কোনও প্রকার পরিশ্রমের কাজ করিলে বিশেষতঃ উপর দিকে উঠিলে হৃৎপিন্ডটি কাঁপিতে থাকে এবং রোগীর ঘর্ম হয়। সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে গেলে অথবা রূদ্ধ গৃহে প্রবেশ করিলে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব হয় এবং কাশি আসে। সেই সঙ্গে কখন কখন রক্ত উঠে, বুক ধড়ফড়ানির সঙ্গে সঙ্গে হাঁপ ও টান আসে এবং পেট সাঁটিয়া ধরে। এই সময় রোগী চুপচাপ শুইয়া থাকে কিন্তু নিদ্রা হয়না। শুধু তন্দ্রাভাবটি বর্তমান থাকে। এই অবস্থায় অনেক রোগীর হৃৎপিন্ডের কার্যটি হঠাৎ বন্ধ হইয়া যায়। স্মরণ রাখা উচিৎ যে, রোগী হিসাবে যদিও সমস্ত লক্ষণের ঠান্ডায় বৃদ্ধি ও গরমে উপশম হয় তথাপি হৃদপিন্ডের এই প্রকার লক্ষণটি এমন কার্বের গরমেই বৃদ্ধি পায়।

স্ত্রীপীড়ায়:- 
এমন কার্বের স্ত্রীরোগী ঋতুকালের পূর্বে কলেরার ন্যায় ভেদ বমিযুক্ত এক প্রকার উদরাময় রোগে আক্রান্ত হইয়া অত্যন্ত দুর্বলতা প্রযুক্ত প্রায়ই সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়ে। তাহা ছাড়া তলপেটে বেদনা সহ প্রচুর স্রাবের জন্য রোগিণী শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট লইয়া তন্দ্রাঘোরে পড়িয়া থাকে এবং তখন তাহার অতিশয় বুক ধড়ফড়ানির আবির্ভাব হয়। ইহার স্রাবটি বিশ্রামের সময় ও রাত্রিতেই বেশী হয় এবং রোগিনী তাহার জানুদ্বয় অতিশয় দুর্বল মনে করে। ঋতুস্রাবে কাল ও চাপ চাপ রক্ত যন্ত্রণার সহিত নির্গত হয়। প্লাটিনায় যতক্ষণ রক্তস্রাব থাকে ততক্ষণ বেদনা থাকে, কিন্তুএমন কার্বে অগ্রে বেদনা। প্রচুর রজঃস্রাব হয়, আবার স্রাব কতকটা কমিলে পুনরায় বেদনা অনুভূত হইয়া থাকে। ঋতুকালে পেটে ও কোমরে অত্যন্ত বেদনা, রক্তের পরিমাণ কম, ঋতু ঠিক সময়ে না হইয়া আগেই হয়। ঋতুকালে দাঁত কনকনানি, পেটে ব্যথা, শীত শীত ভাব, আড়ামোড়া খাইবার ইচ্ছা, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বোধ, বিষন্ন ভাব। ঋতুকালে শ্বেত প্রদর ও অর্শের বৃদ্ধি, শ্বেত প্রদর স্রাবপরিমাণে খুব বেশী। যেখানে লাগে সেখানে হাজিয়া যায় ও জ্বালা করে। স্রাবে এমোনিয়ার গন্ধ থাকে।

হ্রাস-বৃদ্ধি:-
বৃদ্ধি-সন্ধ্যাকালে, ঠান্ডা লাগিয়া, আর্দ্র আবহাওয়ায়; ভিজা জিনিষ লাগাইলে, ধৌত কার্য করিলে, ঋতুকালে, বর্ষাকালে, স্নানে, ভোর ৩।৪ টার মধ্যে, উর্ধপথে উঠিলে, আহারের পর ও সঞ্চালনে।
হ্রাস-গরমে, চাপনে, উপুড় হইয়া শুইলে, ডান বা আক্রান্ত পার্শ্বে শয়নে, গ্রীষ্মকালে, শুষ্ক বায়ুতে।

অনুপুরক:-
বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, ক্যাল্ক কার্ব, সালফার, ফসফরাস, পালসেটিলা, সিপিয়া, লাইকোপডিয়াম, রাসটক্স।

ক্রিয়ানাশক:
আর্ণিকা, হিপার, ক্যাম্ফর, ল্যাকেসিস।

ক্রিয়াস্থিতিকাল:
উত্তরঃ ৪০ দিন।

ব্যবহারের শক্তি:
৬-২০০ শক্তি।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ