এই ব্লগটি
শুধুমাত্র
নব্য চিকিৎসক
এবং শিক্ষার্থীদের
জন্য প্রযোজ্য
।
LACHESIS - ল্যাকেসিস
প্রতিশব্দ:-
সুরুকুকু , ডেডলি বুশ মাস্টার , লাঞ্চ হেডেড ভাইপার।
উৎস :-
দক্ষিণ আমেরিকার সুরুকুক নাস এক প্রকার বিষধর সর্পের বিষ হইতে ইহা পাওয়া যায় ।
বর্ণনা :-
এই সর্পসমূহ লম্বায় ৭ফুট
, চামড়া লাল বাদামী রং এর , পিঠের
উপর দিয়া বড় বড় কালো বাদামী রঙের দাগ আছে । ইহার বিষ থুথুর মত প্রতীয়মান হয় । জীবন্ত সাপকে আঘাত করিয়া বিহ্বল করার পর বিষ সংগ্রহ করা হয় ।
প্রস্তুত প্রণালী :-
সুরুকুকু নামক বিষধর সর্পের বিষ থলের বিপরীত দিকে বিষ দাঁতকে চাপ দিয়া সুগার অব মিল্কের উপর বিষ সংগ্রহ করা হয় । সুগার অব মিল্কের সহিত ইহার বিচুর্ণ কিংবা গ্লিসারিনে দ্রবীভত করিয়া টিংচার প্রস্তুত হয় । হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে বিভিন্ন শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয় ।
আবিষ্কার করেণ :-
১৮২৮ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুলাই ডাঃ হেরিং ইহা আবিষ্কার করেন ।
ক্রিয়াস্থান :-
ক্রিয়াস্থান - স্নায়ুমণ্ডলীর উপর ইহার ক্রিয়া প্রকাশ পায় । শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও চর্মের উপর ইহার গঠন ক্রিয়া হইয়া থাকে । শোষণ
, ক্ষরণ , রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া , হৃদপিণ্ড , শ্বাসযন্ত্র , এবং মস্তিষ্কের উপর ইহার উত্তম ক্রিয়া প্রকাশ পাইয়া থাকে । দেহের বামদিকের পীড়াতেই ইহা অধিক ক্রিয়াশীল । সোরা
, সিফিলিস ও সাইকোসিস এই তিনটি ধাতুগত দোষের উপরই ক্রিয়া করিয়া উহাদিগকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে ।
মানসিক লক্ষণ :-
ডাঃ কেন্টের মতে , সর্পের ন্যায় যাবতীয় খলতা
, কুরতা ও হিংসা ইত্যাদি গুণগুলি ল্যাকেসিসের রোগীতে অতিমাত্রায় সুস্পষ্ট আকারে বিদ্যমান ।
০১. বাচালতা, সন্দেহপ্রবণতা
, অবিশ্বাস , নিজের প্রতি মমত্ববোধ ও অপরের প্রতি উদাসীনতা ল্যাকেসিস রোগীর সহজাত প্রবৃত্তি ।
০২. সংসারের সমস্ত সুখ সম্পদ নিজে একাই ভোগ করিতে চায় । সকলে তাহাকে সম্মান করুক এই তাহার ইচ্ছা , কেহ তাহার কথার প্রতিবাদ করিলে তাহার প্রতি অত্যান্ত গালিবর্ষণ করে।
০৩. একটানা দীর্ঘসময় কথা বলিতে পারে । কোন গৃহে এই লক্ষণের গৃহকর্তা বা গৃহিনী থাকিলে ঐ সংসারে ঝি চাকর টিকিতে পারে না, এমন কি নিজ পুত্রকন্যাগণ অতিষ্ঠ হইয়া উঠে।
০৪. দুই ভাই বোন বা পিতা পুত্র যদি সামান্য দূরে থাবার্তা বলিতে থাকে তাহা হইলে ল্যাকেসিসের গৃহিনী ধারণা করিবেন নিশ্চয়ই উহারা তাহারই বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিতেছেন ।
০৫. কোন ব্যক্তি তোষামোদ
করে তাহার মন যোগাইয়া চলিতে পারে। তাহার প্রাধান্য স্বীকার করিয়া লয় , তাকেই ল্যাকেসিসের রোগী বিশ্বাস ।
০৬. ইহার রোগী জ্ঞানপাপী , কোনও আচরণ করা সঙ্গত নয় জানিয়াও উহা করিতে সে আনন্দ পায় । অহংকার ও স্বার্থপরতার ভাবটিও প্রবল এবং ঐ প্রকার অহংকারি।
০৭. নিজের অযোগ্যতা জন্য সংসারের অমঙ্গল , অন্যায় বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটিলে সে তাহা স্বীকার করে না , অথচ যাবতীয় সঙ্কর্মের ব্যাপারে নিজের কোনও অবদান না থাকা সত্বেও সে প্রচার করে।
০৮.
রোগীর ধর্মোন্মত্ততা জাতীয় মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটিলে নিজেকে কোনও জাগ্রত দেবতা মনে করে । রোগী হিন্দু ধর্মাবলম্বী হইলে মনে করে কালী , দূর্গা প্রভৃতি দেবী তাহার উপর ভর করিয়াছে ।
ধাতুপ্রকৃতি :-
ইহার রোগী বিমর্য , উদ্যামহীন , অলস , পাতলা ব্যক্তিদের পীড়ায় এবং দেহের বামদিকে পীড়ায় ইহা অধিক উপযোগী । নিদ্রায় উপক্রমে , শীতকালে ঋতু পরিবর্তনে পীড়ার বৃদ্ধি । ইহার রোগী বাচাল প্রকৃতির ।
চরিত্রগত লক্ষণ :-
০১. অধিকাংশ পীড়া বাম দিকে হয় কিংবা বামদিক হইতে ডানদিকে প্রসারিত হয় ।
০২. নিদ্রার পর রোগলক্ষণের বৃদ্ধি ।
০৩. গলায় , পেটে , জরায়ু প্রদেশে ও ওভরীতে সামান্য ভার পর্যন্ত সহা করিতে পারে না , কাপড় ঢিলা করিয়া দেয় । অথচ টিপিলে সেখানে বেদনা অনুভূত হয় না।
০৪. রোগী অজ্ঞান অভিভূত হইয়া পড়িয়া থাকে তাহাকে স্পর্শ করিলে সে বিরক্তি প্রকাশ করে , অথচ জোরে কোন স্থান ঘষিলে বা টিপিলে আরাম বোধ
০৫. তরল দ্রব্য পান করিতে কষ্ট পায় কিন্তু কঠিন বা শক্ত বস্তু অনায়াসে গিলিতে পারে ।
০৬. রোগী মনে করে হঠাৎ যেন কি একটি দ্রব্য ঘাড়ের দিক হইতে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে ,
তাহাতে রোগীর ঘুম ভাঙ্গিয়া যায় ।
০৭. রাত্রে শীত ও দিনে গাত্রদাহ ।
০৮. শোক , দুঃখ ভয় ,
বিরক্তি , হিংসা , প্রেমে নিরাশ হইয়া পীড়ার উৎপত্তি ।
০৯. সামান্য কোন বস্তু মুখের কিংবা নাকের গোড়ায় আনিলেই যেন শ্বাস বন্ধ হইয়া যায় । পাখার বাতাস করিতে বলে কিন্তু অতি ধীরে ধীরে ও অনেক দূর হইতে ।
১০. ক্ষত হইতে কালচে রক্ত পড়ে । ক্ষতের চারিদিকের চর্ম বেগুনী বর্ণ বা কাল হইয়া যায় ।
১১. শীতের দিনে বক্ষঃদেশের লক্ষণ বৃদ্ধি পায়
, রোগী ঠাণ্ডা বা গরম কোনও প্রকার জলে স্নান সহ্য করিতে পারে না ।
১২. চোখের সাদা অংশ কমলালেবুর রঙ্গের ন্যায় হলদে হয় ,
ঠাণ্ডা ঘাম দেয়
, ঘামে হলদে রংঙ্গে দাগ পড়ে।
১৩. ডিপথিরিয়া - বামদিক হইতে আরম্ভ হইয়া ডানদিকে চালিত হয় , আক্রান্ত স্থান ঘোর লাল অথবা বেগুনী বর্ণ বিশিষ্ট।
১৪. অর্শ , রক্তস্রাব , শরীর আগুনের মত অনুভব ও গরম ঘাম , মাথার চাঁদিতে জ্বালাজনক বেদনা , বামদিকের ডিম্বকোষে বেদনা , সামান্য রক্তস্রাব হইলে বেদনার হ্রাস , স্রাব বন্ধ হইলে বেদনা আরম্ব হয়ে যায়।
নানাবিধ রোগের উৎপত্তি ।
১৫. স্ত্রীলোকদের প্রায় ৪৫ বৎসর বয়স হইতে অর্থাৎ ঋতু বন্ধ হইয়া ।
১৬. পায়ের হাড়ে অনেকক্ষণ স্থায়ী কনকনানি বেদনা ।
১৭. প্রস্রাব কাল রঙের , রক্তে চাপ বাধে না ।
১৮. টাইফয়েড জ্বরে অজ্ঞান অভিভূতের মত থাকে
, বিড়বিড় করিয়া মৃদু প্রলাপ বকে কিংবা জোরে জোরে এক কথা অবিরত বকে, চোখ বসিয়া যায়, মুখ মরার মত বিবর্ণ হয় ,
নিচের চোয়াল ঝুলিয়া পড়ে , জিহ্বা শুষ্ক ও কাল হয় , কাঁপে , জিহ্বা দাঁতের বাহিরে আনিতে পারে না , আটকায় ।
রোগলক্ষণ বাড়ের সময় ও কারণ –
০১. ল্যাকেসিসের লক্ষণসমূহ নিদ্রাবস্থায় বা নিদ্রার উপক্রমে বাড়ে , এমন কি রোগীর গলনলী বন্ধ হইয়া স্বাসবন্ধ হইবার উপক্রম হয় এবং রোগী জাগিয়া পড়ে । প্রাতে নিদ্রা ভাঙিবার পরও রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি ইহার আর একটি বিশেষত্ব ।
০২. যদিও রোগলক্ষণ দুপুর বেলায় বাড়ে
, তবে কিছু কিছু লক্ষণ সকাল বেলায় ও দুপুরের পর্বে বাড়ে । যেমন প্রাতকালে জাগ্রত হইবার পর মাথাঘোরা
, আবার বেলা ১১ / ১২ । টায় চক্ষু বন্ধকরিলে ও মাথা ঘোরে । সকালবেলায় নিদ্রা
হইতে উঠিবার পর দুর্বলতা ও মাথা ধরা প্রভৃতি বাড়ে
, প্রাতে ঘুমভঙ্গের পর তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিলেই শ্বাসকষ্ট হয় । আবার সন্ধ্যা হইতে রাত্রি ১২টার পূর্বে নিম্নলিখিত লক্ষণ বাড়ে । যথা - গলা ব্যথা
, উদরাময় , শুষ্ক কাশি
, আর জ্বরে শীত দুপুর বেলা হইতেই আরম্ভ হয় কিন্তু রাত্রি দুপুরের মধ্যে জ্বর অধিক হয় ।
৩. শীতকালে , ঋতু পরিবর্তন কালে এবং বিছানার গরমে রোগ বৃদ্ধি হয় , ভিজিলে অথবা ব্যায় বা হাওয়া লাগিলে রোগ বৃদ্ধি হয় । রৌদ্র লাগিয়া নানা প্রকার রোগ হয় ,
বসন্ত ঋতুতে উপর্যপুরি জ্বর হইলে ইহা উপকারী । আবার অতিশয় শীত বা গ্রীষ্ম সহ্য করিতে পারে না তাহাতে রোগী বড়ই দুর্বলতা বোধ করে । শরীরের যে দিকে বেদনা নাই ,
সেদিকে চাপিয়া শুইলে আরাম বোধ করে কিন্তু বিছানার গরমে আবার রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয় । '
বাচালতা :-
এই ঔষধের একটি বিশেষ লক্ষণ । ল্যাকেসিস রোগী খুব বেশী কথা বলে । এত কথা বলে যে , এককথা বলা শেষ হতে না হইতে অন্য কথা আরম্ভ করিয়া দেয় । সব সময়েই কথা বলিতে চায় , অনর্গল পাগলের মত কথা বলতে থাকে ।
বাম দিকের পীড়ায় :-
শরীরের বামদিক ল্যাকেসিসের প্রিয়স্থান । যে কোন পীড়াই হউক না কেন , তাহা বামদিকে আক্রমণ করিলে কিংবা বামদিক আক্রমন করিয়া ডানদিকে প্রসারিত হইলে ইহা ফলপ্রদ । বিশেষতঃ বামদিকের ফোড়া , ক্ষত , টনসিল প্রদাহ
, শিরঃপীড়া , পক্ষাঘাত , ব্রঙ্কাইটিস , নিমোনিয়া , বাম ডিম্বাশয়ের পীড়া
, প্রভৃতিতে ল্যাকেসিস অতি উক্তৃষ্ট । বাম ডিম্বাশয়ের পীড়ায় গ্রাফাইটিসের সহিত ইহা তুলনাযোগ্য । ল্যাকেসিস ক্ষীণকার স্ত্রীলোকদের এবং গ্রাফাইটিস মোটাসোটা স্ত্রীলোকদের পক্ষে উপযোগী ।
নিদ্রার পর পীড়ার বৃদ্ধি লক্ষণে :-
যে কোন রোগেই হউক, তাহা যদি ঘুমের মধ্যে বা ঘুম হইতে জাগরত হইবার পর বৃদ্ধি হয়।
কখনও ঘুমের উপক্রমে পীড়ার বৃদ্ধি হয় । শিরঃপীড়ায় রোগী ভয়ে নিদ্রা যাইতে চায় না , কারণ ঘুম ভাঙিয়া গেলেই তাহার শিরঃপীড়ায় বৃদ্ধি পাইয়া থাকে ।
প্রান্তদেশে :-
প্রান্তদেশ বলিতে মস্তক , চক্ষু , মুখ হস্ত
- পদ প্রভৃতি বুঝাইয়া থাকে । ইহা ছাড়া দেহের বাম পাস্তের পীড়া বা বাম দিকের যে কোন পীড়াতে উপকারী । বামদিকের শিরঃপীড়া
, পক্ষাঘাত বাম ডিম্বাশয়ের পীড়া । রৌদ্র লাগিয়া মাথাধরা , মাথার বাম পাশ্বে । বেশী আক্রান্ত হয়, বামদিক হইতে বেদনা ডানদিকে যায় । বাম চক্ষুতে যন্ত্রণা
, উহা ডানদিকে পরিচালিত হয় । ঠাণ্ডা লাগিয়া ঘাড় বেদনা
, সকালে ঘুম হইতে উঠার পর ঘাড়ে ( পশ্চাৎ মস্তকে
) বেদনা অনুভব । টনসিল প্রদাহ হইলে আলাজিবের দুই কিংবা একপাশ সুপারির মত ফুলিয়া উঠে । টাইফয়েডে বিড় বিড় করিয়া মৃদু প্রলাপ বকে , চোখ বসিয়া যায় , মুখ মরার মত বিবর্ণ হয় , নিচের চোয়াল কুলিয়া পড়ে
, জিহ্বা শুষ্ক ও কালো হয় , কাপে , জিহবা দাঁতের বাহিরে আনিতে পারে না আটকায়। মাথার চাঁদিতে জ্বালাকর
বেদনা । পায়ের হাড়ে অনেকক্ষণ স্থায়ী কনকনানি ব্যথা । দেহের বাহিরের কোন প্রকার ক্ষত হইতে কালচে রক্ত পড়ে । ক্ষতের চারিদিকে চর্ম বেগুনী বর্ণ বা কাল হইয়া যায় । ঋতু অবসান কালে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত হইয়া মুখে ভয়ানক উত্তাপােচ্ছাস , মাথায় রক্ত উঠে, পা ঠাণ্ডা থাকে ।
মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্ক ঝিল্লী প্রদাহ :-
মাথায় তীক্ষ ব্যথার জন্য রোগী চিৎকার করিয়া উঠে । রোগী এদিকে ওদিকে মাথা চালিতে থাকে ও বালিশের ভিতর মাথা গোঁজে । শরীরের কোনরূপ উদ্ভেদ
, ইরিসিপেলাস ইত্যাদি ভালভাবে ফুটিয়া উঠিতে না পারিলে বা বসিয়া গিয়া মস্তিষ্ক ঝিল্লীর প্রদাহ হইলে ইহা ব্যবহার্য ।
ডিপথিরিয়ায় :-
নাক দিয়া যে স্রাব বাহির হয় তাহা পাতলা ও ক্ষতকর। সর্দি লাগিলে গলার ভিতর যেরূপ লাল হয় তার চেয়ে বেশী লাল দেখায় । বামদিকের টনসিলের উপরই বেশীর ভাগ পর্দা পড়ে অথবা বাম দিকে পর্দা পড়িয়া ডানদিকে আক্রন্ত হয় । রোগের সূত্রপাতেই পচন আরম্ভ হয় এবং মুখ দিয়া দুর্গন্ধ বাহির হয় । তরল জিনিসের চাইতে কঠিন পদার্থ সহজে গিলা যায় । নাসিকা গ্রন্থিসমূহ ফুলিয়া উঠে এবং গাঢ় বেগুনী রঙ দেখায় । শিশুর জ্বর জ্বর ভাব থাকিলেও নিদ্রাযুক্ত থাকে ।
সবিরাম জ্বরে :-
কুইনাইন প্রয়োগে যে সবিরাম জ্বর যায় না, পক্ষান্তিক এবং প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম ও বসন্ত কালের জ্বরে ল্যাকেসিস উপকারী । জ্বর আসার সময় বেলা প্রায় ১টা হইতে ২টার মধ্যে , শীত করিয়া জ্বর আসে । অত্যন্ত শীত , ভীষণ শীতের জন্য গায়ে লেপ চাপাইতে কিংবা তাহাকে কেহ চাপিয়া ধরে এইরূপ ইচ্ছা করে । মাথাব্যথা
, কোমরে ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গগুলি অতিরিক্ত হয়ে
থাকে । ঘর্মাবস্থায় সমস্ত উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে , এই অবস্থা গাত্রদাহ ও পিপাসা অধিক হইয়া থাকে । ঘর্মাবস্থায় পিপাসা অধিক হয় ।
টাইফয়েড :-
টাইফয়েড জ্বরের শেষাবস্থায় ল্যাকেসিসের লক্ষণ উপস্থিত হয় । এই পীড়ায় ইহার চরিত্রগত পচন লক্ষণের সহিত অতি মাত্রায় দুর্বলতা
, বিড়বিড়ানি পূর্ণ বিকার,
শীতল ঘর্ম, হস্ত দ্বয় ও জিহবার কম্পন , নিদারুন অবসাদ,
নিম্নচোয়াল ঝুলিয়া পড়া এবং শয্যাক্ষতের দ্রুত আগমন ও বিস্তার ইত্যাদির আবির্ভাব হয় , রোগীর অত্যন্ত দুর্বল ও নিস্তেজ ভাব ,
হাত - পা ঠাণ্ডা হয় , হাত পায়ের স্পন্দন , রোগী কিছুক্ষণ বকে এবং বকুনির পর আবার কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকে । জিহ্বাটি কোটিং কাল , অনেক সময় লাল হয় । কখনও জিহ্বার ফোস্কা ও ক্ষত হয় , কখনও জিহ্বা ফাটিয়া রক্ত বাহির হয় । টাইফয়েডের শেষাবস্থায় ইহা উপয়োগী , বাহ্যেতে পচা দুর্গন্ধ থাকে । শেষাবস্থায় যখন রোগী প্রায় মরার মত অজ্ঞান ভাবে পড়িয়া থাকে ।
ওপিয়াম - রোগীর একেবারে সংজ্ঞাহীন ও ঘোর অজ্ঞান অবস্থা , কোন মতেই তাহাকে জাগান যায় না । মুখের রঙ লালবর্ণ দেখায় , নাক ডাকার সঙ্গে জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ে , চোয়াল ধরিয়া যায় , মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয় বা পক্ষাঘাত হয় ,
সর্বাঙ্গ ঘামে , প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ । ল্যাকেসিসে ওপিয়ামের কতকগুলি লক্ষণ থাকিলেও বুঝিতে হইবে যে , ল্যাকেসিসে মস্তিষ্কে টাইফয়েড বিষ সঞ্চয় জনিত রোগী বিকারে বকে ,
আর ওপিয়ামে - মস্তিষ্কে অত্যধিক রক্ত সঞ্চয় হেতু বিকারে জ্ঞানশূন্য অবস্থায় পড়িয়া থাকে।
শিরঃপীড়ায় :-
রৌদ্র লাগিয়া মাথা ধরিলে তাহার প্রধান ঔষধ । সর্দি স্রাব বন্ধ হইয়া মাথা ব্যথা হইলে ইহাই একমাত্র ঔষধ । সর্দি হাঁচির সহিত মাথাব্যথা , সেই মাথাব্যথা নাসিকা পর্যন্ত পরিচালিত হয় ,
বামদিকের রগ ও মাথার বামদিক অধিক আক্রান্ত হয় এবং তাপ প্রয়োগে বেদনার উপশম হয় । এক প্রকার মস্তিষ্কের স্নায়ুশল । বেদনা
, প্রথমে ঘাড় বেদনা হয় , সকালে ঘুম হইতে উঠিয়া রোগী ঘাড়ে
( পশ্চাৎ মন্তকে ) একটা বেদনা অনুভব করে, সেই বেদনা বাড়ে এবং বেদনার জন্য হাত পর্যন্ত লাগানু যায় না । বেদনা বিকালে কিছু কম সে পুনরায় সকালে পূর্বের ন্যায় বৃদ্ধি হয় ।
গলনলী ও টনসিল :-
ইহার পীড়া প্রথমে শরীরের বামদিকে আরম্ভ হয় । অথবা প্রথমে বামদিকে হইয়া পরে ডানদিকে পরিচালিত হয় । টনসিলের প্রদাহ হইলে আলজিবের দুইদিক কিংবা একপাশ সুপারির ন্যায় ফুলিয়া উঠে ,
লালবর্ণ হয়।
গলক্ষত :-
পুরাতন গলাবেনা
, বার বার গলায় বেদনা ক্ষত উৎপন্ন হয় । গলক্ষতের সহিত ঘাড়ের চতুষ্পর্শস্থ গ্রন্থি ও পেশীগুলি যন্ত্রণায় জর্জরিত থাকে । রোগী ঢোক গিলিতে যন্ত্রণাবোধ করে । গলক্ষত বামদিক হইতে ডানদিকে প্রসারিত হয় । গরম পানীয় গলার লক্ষণসমূহ বৃদ্ধি করে । গরম চা পান করিতেই রোগী গলা চাপিয়া ধরিবে এবং মনে হইবে যে তাহার শ্বাস বন্ধ হইয়া যাইতেছে । রোগীর কোন পিপাসা থাকে না , গলা খুব শুদ্ধ থাকে ।
মুখক্ষত :-
রোগীর দাঁতের মাড়ী প্রদাহ , দাঁত ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং দাঁতের গোড়ায় ক্ষত হয় , সেই সঙ্গে ঘায়েতে দুর্গন্ধ
, মুখে অত্যন্ত পচাগন্ধ থাকে ।
কাশি :-
এক প্রকার খুকখুকে শুষ্ক কাশি , তাহাতে নাকের বা মুখের কাছে জোরে হাওয়া লাগিলে অথবা গলায় কাপড় পেছিয়ে রাখিলে রোগীর দমবন্ধ হইয়া যাওয়ার মত হয়। সামান্য একটু কাশি হইতে ব্রঙ্কাইটিস
, হাঁপানী , নিমোনিয়া ইত্যাদি সকল প্রকার কাশিতেই উপকারী । হাঁপানী কাশিতে ঘুমাইতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি হইয়া রোগীকে কাতর করিয়া ফেলে
, তখন রোগী বুকে বা গায়ে আদৌ কাপড় রাখিতে পারে না, গলা সুড়সড় করিয়া কাশি হয় , কাশি যেন বুক হইতে আসে , গয়ার সহজে উঠে নাভ।
হৃদপিণ্ডের :-
হৃদপিণ্ডের পীড়াজনিত শোথ উদরীতে উপকারী । নিদ্রার পর বা নিদ্রার উপক্রমে যদি শ্বাসকৃজ্ঞতা হয় এবং রোগী মনে করে যে , কেহ যেন হৃদপিণ্ড চাপিয়া ধরিয়াছে এমন মনে হয় । ঘুম আসিলে কিংবা ঘুম ভাঙ্গিবার পর এই লক্ষণটি অধিক হয় । হৃদপিণ্ডের প্রায় সকল প্রকার প্রাদাহিক পীড়ায় অত্যন্ত বুক ধড়ফড়ানি ও অত্যন্ত চাপ বোধ এবং তাহাতে শ্বাসরোধের উপক্রম
, হৃৎপিণ্ডে বেদনা , বেদনা বাম বাহুতে পর্যন্ত পরিচালিত হয় , হৃৎপিণ্ড এত জোরে স্পন্দিত হয় যে , মনে হয় বুঝি এখনই শ্বাসবন্ধ হইয়া মৃত্যু হইবে।
অর্শ :-
অর্শের বলি ,
তাহা অন্তর্বলিই হউক আর বহির্বলিই হউক , অত্যন্ত দপদপানি ব্যথা থাকে
, কাশিতে গেলে বোধ হয় অর্শের স্থানে যেন সুই ফোটায়
, আর যেন কি একটা পদার্থ মলদ্বারে আটকাইয়া আছে , তাহার জন্য রোগী ক্রমাগত কোথ দেয়
, বাহ্য কবিরার সময় এত কষ্ট হয় যে , দাঁড়াইয়া উঠিয়া পড়ে।
চক্ষু :-
চক্ষুতে কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না কিংবা অতি সামান্য ধোয়ার মত দেখে
, চক্ষুর সম্মুখে কাল কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকার মত যেন কি একটা উড়িতে দেখা যায় , বেশ দৃষ্টি শক্তি রহিয়াছে হঠাৎ যেন তাহার লোপ হইল।
অজীর্ণ ও উদরাময় :-
অধিকাংশ রোগীর প্রায় কোষ্ঠবদ্ধ থাকে , কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত পেটের অসুখে ভুগিয়া । অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়িলে এবং মলে অত্যন্ত পঁচা দুর্গন্ধ থাকিলে অনেক সময় ইহাতে আশ্চর্য উপকার হয় । গ্রীষ্মকালীন উদরাময়
, ঋতু বন্ধের বয়সে উদরাময় । নেশাখোর ও মদ্যপায়ী এবং যাহার অতিরিক্ত কুইনাইন সেবন করিয়াছে কিংবা যাহাদের শরীরে পারদ বিষ আছে তাহাদের অজীর্ণ ও উদরাময় । আহার করিলেই পেট ফুলিয়া উঠে , পেটে এক প্রকার ব্যথা ঐ ব্যথা আহারের সময় নিবৃত্তি হয় ,
কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই পুনরায় বৃদ্ধি হয় । কোনও প্রকার অদ্রব্য সহ্য হয় না ।
জরায়ু ও ডিম্বকোষ :-
জরায়ুতে অত্যন্ত বেদনা , সময়ে সময়ে এত বেদনা হয় যে হাত লাগানো যায় না , কাপড়টি লাগিলেও কষ্ট হয় ,
এই প্রকার বেদনা সামান্য মাত্র রক্তস্রাব হইলেই কমিয়া যায় কিন্তু ঋতু বন্ধ হইলে আবার বাড়ে । বাম ডিম্বকোষের প্রদাহ । প্রদাহ বামদিকে আরম্ভ হইয়া পরে ডানদিকে পরিচালিত হয় । বামদিকের ডিম্বকোষের প্রায় সমুদয় পীড়া যেমন
- টিউমার , ক্যান্সার , ওভেরি পাকিয়া পুঁজ , স্নায়ুশূল , ফোলা , শক্ত ভাব।
নিমোমিয়া :-
নিমোনিয়ার সহিত জ্বর বিকার হয় , বিকারে বিড় বিড় করিয়া বকে , গয়ার প্রায় থুথুর মত বুজবুজে রক্ত মিশ্রিত পুঁজের মত বা সম্পূর্ণ পূজা এবং মধ্যে মধ্যে রোগীর প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম হয়। নিমোনিয়ায় যদি বক্ষে ভার বোধ হয় , শুষ্ক থকথকে কাশি থাকে
, গলা , ঘাড় ও বুকের কাপড় ঢিলা করিয়া না দিলে রোগীর কষ্টানুভব হয় তাহা হইলে ইহা উপকারী ঔষধ ।
যক্ষ্মা :-
নিমোনিয়ায় ভুগিতে ভুগিতে বা উহা আরোগ্যের পর যক্ষ্মা হইলে বিশেষ উপযোগী । যক্ষ্মার বৃদ্ধি অবস্থায় যদি ভয়ানক শুষ্ক কাশি থাকে ও দ্রিাভঙ্গ হইয়া যায় অথবা খুব ঘন ঘন শক্ত গয়ার উঠে , গয়ার যদি মিউকাস ও পূজ মিশ্রিত হয় , বা সবুজবর্ণের হয়, অনেকক্ষণ কাশিলে তারপর গয়ার উঠে, এমন কি বমির মত হইয়া তবে ঐরূপ গয়ার উঠে, নিদ্রা আসার উপক্রমে গয়ার উঠার সহিত কাশি হয় , নিদ্রা আসিলেই ঘর্ম হয় ,
ঐ ঘর্ম যদি ঘাড় , কাঁধ ও বুকে অধিক হয়।
বৃদ্ধি :-
নিদ্রার পর , অম্বু আহারে , সুরা পানে
, পারদ সেবনে , বসন্তকালে , রৌদ্রে , গ্রীষ্মকালে , স্পর্শে ।
উপশম :-
বাহ্য উত্তাপে
, নির্মল বায়ুতে , শয়নে , রজঃস্রাবান্তে , ঢিলা করিয়া পোশাক পরিচ্ছদ পরিধানে , উপারে , আহারে ।
অনুপূরক ও সদৃশ :-
হিপার , লাইকো , এসিড নাইট্রিক ।
ল্যাকেসিসের তুলনীয় :-
নেট্রাম মিউর
, নাইট্রিক এসিড , ন্যাজা ।
সম্বন্ধযুক্ত ঔষধসমূহের :-
হৃদপিণ্ডের দুর্বলতার জন্য মর্জায় লরােসিরেসাস , অজীর্ণে নাক্স
, লাইকো , ডিম্বাশয়ের প্রদাহে এপিস , লাইকো , ফুসফুসের পক্ষাঘাতে এন্টিম , ফুসফুস প্রদাহে সালফার তুল্য ।
ক্রিয়ানাশক :-
কফিয়া , হিপার , লিডাম , মার্ক , এসিড নাইট
, নাঙ্গ , ওপিয়াম , এসিড ফস , ক্যালকেরিয়া
, ক্যামোমিলা , ককুলাস , কার্বোভেজ , বেলেডোনা , আর্সেনিক , এলিয়ম , সুরা ।
স্থিতিকাল :-
৩০ হইতে ৪০ দিন ।
ব্যবহারের ক্রম বা শক্তি :-
৩০ - ২০০ বা তদুর্ধ শক্তি ।
5 মন্তব্যসমূহ
অসংখ্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনপার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানা দরকার।
উত্তরমুছুনস্যার ল্যাকেসিস সি এম পযন্ত খাওয়ার পরে একটা রুগী আমার কাছে এসেছে এবং এর বাম সাইড ও গলার বাম পাশে সমস্যা হচ্ছে, এখন কিভাবে তাকে বাচাবো, দয়া করে বলবেন প্লিজ
উত্তরমুছুনউচ্চ শক্তিতে ওষধ cm দিলে রোগ লক্ষন বহুলাংশে বড়ে যাবেই তার পর এর ক্রিয়া নাশক করলে আস্তে আস্তে আরাম পাবে
উত্তরমুছুনআমাকে দয়াকরে বলবেন ল্যাকসিসের বিষক্রিয়া কিভাবে নষ্ট হয়। আমি একজন সুরিনামের রুগি সুরিনাম খাওয়ার পর আমার অন্ডকোষে চর্ম পিরা বের হয়েছিল য়া আমার জন্য ভাল লক্ষন ছিল। কিন্তু অন্ডকোষে দুই তিনটা ফুরার মত ছিল সে পাকানোর জন্য ভুল ক্রমে ল্যাকসিস ওষধ খেয়েছিলাম সে রাতে আমি সারা রাত কাশছিলাম। তার পার বইয়েতে দেখতে পেলাম সুরিনামের সতত্রুভাবন্ন ল্যাকসিস। এখন সম্যাস হচ্ছে কল্পনায় খারাপ কথা মনে এবং মুর্তি দেখি দিনে সুকিয়ে যাচ্ছি জিবারয় কোন স্বদ পাইনা রাতে ঘুম হয়না সব সময় কালি মুর্তিকে প্রানাম করি। খরাপ যত কথা আছে সেই মনে পরে। এক কথায় আমার বৃেইন সবসবময় এই গুলো মনে পরে। আমার যত টুকু বিশ্বাস ল্যাকসিসের বিষক্রিয়া নষ্ট করতে পারলে আমি সুস্ত হইব। ল্যাকসিসের এন্ডোট ঔষধ কোনটি লক্ষন অুসারে যদি দয়াকরে বলতেন
উত্তরমুছুন