এপিলেন্সী বা মৃগী
Epilepsy
প্রশ্ন- এপিলেন্সী বা মৃগী রোগের সংজ্ঞা লিখ।
উত্তর: ইহা স্নায়ুমন্ডলের একটি রোগ। হঠাৎ চেতনাশক্তি লোপ পাইয়া রোগী পড়িয়া গেলে এবং তাহার সাথে হাত পা সর্বশরীরের মাংসপেশী সজোরে সংকোচন হইয়া আক্ষেপ বা খিচুনী ভাব দেখা দিলে এই জাতীয় পীড়াকে এপিলেন্সী বা মৃগী রোগ বলে।
প্রশ্ন- এপিলেন্সী বা মৃগীরোগের শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর: শ্রেণীবিভাগ- এই পীড়াকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) পেটিটমাল বা লঘু মৃগী রোগ।
২) গ্রান্ড মাল বা গুরু মৃগী রোগ।
৩) 'জ্যাকসোনিয়ান এপিলেন্সী-ব্রেণের কার্টিকাল এরিয়ার নির্দিষ্ট অংশের পীড়া।
৪) জেনারেল এপিলেন্সী-রোগীর সম্পূর্ণ অজ্ঞানাবস্থা।
প্রশ্ন- এপিলেন্সী বা মৃগী রোগের কারণ তত্ত্ব লিখ।
উত্তর: কারণতত্ত্ব- একাধিক কারণে এই রোগ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
১) অতিরিক্ত শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবা, হস্ত মৈথুন এবং নেশাজনিত কারণ।
২) চর্মপীড়া বা কোন উদ্ভেদ বসিয়া গিয়া এই রোগ সৃষ্টি হইতে পারে।
৩) উপদংশ, সংক্রামক রোগ, ক্রিমিরোগ হইতেও ইহা সৃষ্টি হইতে পারে।
৪) চিন্তা, শোক, দুঃখ, ক্রোধ হেতু প্রকোপিত বায়ু, কফ ও পিত্ত হৃদযন্ত্রস্থিত ধমনীসমূহে বাধার সৃষ্টি করিয়া স্মৃতিশক্তি নষ্ট হইয়া এই রোগ সৃষ্টি হইতে পারে।
৫) হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা, প্রবল মানসিক আবেগসমূহ।
৬) মস্তিষ্কের কেন্দ্রস্থলে হঠাৎ প্রবল অবসাদের সৃষ্টি হইয়া তাহাদের নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হইয়া এই রোগ দেখা দিতে পারে।
৭) বংশগত কারণে, পিতামাতার এই রোগ থাকিলে সন্তানদের মধ্যেও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮) মস্তিষ্কের রক্তহীনতা, মস্তিষ্ক মধ্যে অর্বুদ, রক্তস্রাব, থ্রম্বোসিস, প্রভৃতির চাপ, ঋতুর গোলযোগ, হস্তমৈথুনের কুফল, বালকদের দন্তোদাম, ক্রিমি, ভয় ও শোক প্রভৃতি কারণে।
প্রশ্ন- এপিলেন্সী বা মৃগী রোগের লক্ষণাবলী বা উপসর্গ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
উত্তর: লক্ষণাবলী:
১) মাথায় বেদনা, চক্ষুর সম্মুখে বিদ্যুৎবৎ আলোক দর্শন, হৃদস্পন্দন ও মাথাঘোরা, কানে ভোঁ ভোঁ করা, অস্থিরতা, মাথায় ভারবোধ, মুখে রক্তহীনতা, হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি তালুর দিকে আকৃষ্ট হওয়া প্রভৃতি সৃষ্টি হইয়া পীড়া হঠাৎ আক্রমণ করে।
২) কোনরূপ পূর্বলক্ষণ ছাড়াই রোগী হঠাৎ চীৎকার করিয়া মূর্ছিত হইয়া পড়ে এবং খেঁচুনী, বা আক্ষেপ দেখা দেয়। মুর্ছিত হইয়া পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে দাঁত লাগিয়া যায়, চোখ মুখ বিকৃত হয়। মুখে ফেনা উঠে, হাত শক্তভাবে মুঠা করা থাকে।
৩) মুর্ছিত হওয়ার আগে চীৎকার করিয়া উঠা লক্ষণটি অনেক সময় দেখা যায়।
৪) অচেতন হইয়া পড়িয়া গোঁ গোঁ শব্দ করিতে থাকে, প্রথমে চক্ষু ঘুরিতে থাকে, পরে চক্ষু স্থির হয়, চক্ষু তারকা ঊর্ধে উঠিয়া যায়, চক্ষু তারকা প্রসারিত হয়।
৫) মুখ পাণ্ডুবর্ণ পরে রক্তবর্ণ ধারণ করে।
৬) সর্বাঙ্গে আক্ষেপভাব দেখা দেয়, গ্রীবা শক্ত ও বাঁকা হয়, হাতের আঙ্গুলগুলি কুঞ্চিত হয়, বুক ধড়ফড় করে, ঠাণ্ডা ঘাম নির্গত হয়।
৭) অনেক সময় অসাড়ে পায়খানা প্রস্রাব নির্গত হয়।
৮) জিহ্বায় কামড় পড়ে।
৯) উপসর্গসমূহ প্রশমিত হইলে রোগী ঘুমাইয়া পড়ে এবং ঘুম ভাঙ্গার পর সুস্থ রোধ করে।
0 মন্তব্যসমূহ