KALI BICHROMICUM - কেলিবাইক্রম

 

কেলিবাইক্রম - KALI  BICHROMICUM 



কেলি বাইক্রমের প্রতিশব্দ ঃ- পটাশি বাইক্রোমাস , পটাশিয়ামডিক্রোমেট , কেলি বাইক্রোমেট , কেলি ক্রোমিকাম , রূব্রাম বাইক্রোমেট অব পটাশিয়াম ।

রাসায়নিক প্রতীক ঃ- K2Cr2O7

উৎস বর্ণনা ও প্রস্তুত প্রণালী ঃ- বাইক্রোমেট অব পটাশ হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয় । ইহা কমলা লাল বর্ণের ফলকাকার স্ফটিকবৎ গন্ধবিহীন অথচ তিক্ত ধাতব স্বাদ বিশিষ্ট পদার্থ । এই স্ফটিকবৎ পদার্থকে উত্তপ্ত করিয়া গলাইয়া পরে চূর্ণে রূপান্তরিত করা হয় । বাইক্রোমেট অব পটাশ , সুগার অব মিল্কের সহিত মিশ্রিত করিয়া বিচূর্ণ প্রস্তুত হয় । ৬ হইতে সকল উচ্চ শক্তি পরিশ্রুত সুরাসারের সাহায্যে প্রস্তুত হয় ।

প্রস্তুতের ফরমূলা ঃ- এফ- ৭ ( বিচূর্ণ ) , এফ- ৫- বি ( তরল ) ।

প্রুভার ঃ- লন্ডনে ডাঃ ড্রাইডাল ইহা প্রুভ করেন ।

ক্রিয়াস্থান ঃ- কেলি বাইক্রম একটি এন্টিসোরিক , এন্টি সাইকোটিক ও এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ । শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী , অন্ননালী , মাংসপেশী , জরায়ু মলদ্বার ও স্বরযন্ত্রের উপর ইহার ক্রিয়া প্রধান । শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া ঐ সকল স্থানে সর্দিজ প্রদাহ উৎপন্ন করে এবং সুতার ন্যায় স্রাব নির্গত হইতে থাকে । মোটা সোটা মাংসল ব্যক্তি , মোটা শিশু , বেঁটে ঘাড় , গৌরবর্ণ ও বিয়ার মদ্যপানকারীদের পক্ষে এই ঔষধ উপকারী ।

ধাতু প্রকৃতি ঃ- ইহা এন্টিসোরিক , এন্টিসিফিলিটিক ও এন্টি সাইকোটিক ধাতুর ঔষধ । মোটা সোটা ব্যাক্তি , মোটা শিশু , বেঁটে ঘাড় , গৌরবর্ন ও মদ্যপায়ীদের পক্ষে ইহা উপযোগী । উপদংশ ও শ্লেষ্মাদোষ যুক্ত ব্যাক্তিদের দেহে ইহা ভাল কাজ করে । কোন স্থান হইতে যদি নিঃসৃত স্রাব টানিলে তারের মত লম্বা হইয়া যায় তাহা হইলে কেলিবাই নির্দিষ্ট । ইহার রোগী শীতকাতর কিন্তু গরম সহ্য করিতে পারেনা । অথচ আবহাওয়ার পরিবর্তনে সর্দি দেখা দেয় ।

মানসিক লক্ষণ ঃ-

( ১ ) রোগীর সব কিছু তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাব ।

( ২ ) মানুষজন দেখিতে পারে না ।

( ৩ ) মানুষজন দেখিলে অস্থির হইয়া পড়ে ।

( ৪ ) রোগী অলস ও জড়সড় প্রকৃতির ।

( ৫ ) শীতকাতরতা ।

চরিত্রগত বা ধাতুগত লক্ষণ ঃ-

( ১ ) বায়ুনলী , নাসিকা , জরায়ু , মুত্রনালী কিম্বা ক্ষতাদির যে স্থান হইতেই হউক যে শ্লেষ্মাময় স্রাব নির্গত হয় তাহা রবার বা গাঢ় আঠার মত এবং টানিলে সূতার মত লম্বা হয় ।

( ২ ) পেশী ও তন্তুসমূহে কাঠের মধ্যে তুরবিনের গর্তের ন্যায় সামান্য পরিসর স্থানে গভীর জাতীয় মসৃণ আকারের ক্ষত উৎপাদন । ঐ প্রকার ক্ষত সূচাগ্র পরিমিত স্থানেও হইতে দেখা যায় ।

( ৩ ) ইহার ঘর্ম সার্বদহিক ও ঝাঁঝাল গন্ধযুক্ত সাইলিসিয়ার ন্যায় দুর্গন্ধযুক্ত ও কপালে বা মাথায় সীমাবদ্ধ নয় ।

( ৪ ) গ্রীষ্মকালে কোনও পীড়ার উৎপত্তি , খোলা বাতাসে থাকিলেই ঠান্ডা লাগে । ইহার রোগী শীত কাতর কিন্তু গ্রীষ্ম সহ্য করিতে পারে না ।

( ৫ ) ক্ষতসমূহ হইতে প্রচুর পরিমাণে রস বা পুঁজ নির্গত হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ যন্ত্রণা বোধ দেখা যায় না ।

( ৬ ) প্রথমে জলবৎ সর্দি হইয়া পরে উহা ঘন জিবল আঠার মত হয় । পরে সেই সঙ্গে কাশি এবং নাসারন্ধ শ্লেষ্মাতে পুরিয়া থাকে ।

( ৭ ) পুরাতন বাত রোগে আক্রান্ত স্থান শীতল ।

( ৮ ) আলজিব ফুলিয়া চেপ্টা হইয়া যায় কিন্তু লাল হয় না ।

( ৯ ) ক্রুপ রোগে গলা ধরা , ঘড়ঘড়ে কাশি ।

( ১০ ) নাসিকার সেপ্টম অস্থিতে ক্ষত , তাহা হইতে রক্তাক্ত , শক্ত , লম্বা , জমাট শ্লেষ্মা নির্গমন ।

( ১১ ) প্রতিদিন এক সময়ে স্নায়ুশূল বেদনা আরম্ভ ।

( ১২ ) শরীরের সামান্য একটু স্থানে বেদনা হয় , বেদনা একস্থান হইতে অন্যস্থানে চলিয়া বেড়ায় , শরীরে ক্ষত হইলে ঠিক গোলাকার । বেদনার স্থান আঙ্গুলের ডগা দিয়া আবৃত করা যায় । বেদনা হঠাৎ আসে , হঠাৎ যায় ।

( ১৩ ) পুরাতন আমাশয় ।

( ১৪ ) বাত ভিন্ন সমস্ত পীড়া ঠান্ডায় বাড়ে ও গরমে উপশমিত হয় । সায়েটিকা ভিন্ন সমস্ত বেদনা নড়াচড়ায় বর্ধিত ও স্থির হইয়া থাকিলে উপশম বোধ ।

প্রয়োগক্ষেত্র ঃ- বায়ুনলী , নাসিকা , জরায়ু , মুত্রনলী , মলদ্বার , কিম্বা ক্ষতাদি হইতে রাবার বা গাঢ় আঠার ন্যায় শ্লেষ্মাময় স্রাব নির্গত হওয়া , বেদনা , ক্ষত , নাসিকার ক্ষত , উদরের পীড়া , আমাশয় , শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত পীড়া , ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানি , শিরঃপীড়া , চক্ষুর পীড়া , হৃৎপিন্ডের পীড়া , জিহ্বার পীড়া , উপদংশ , কোষ্ঠবদ্ধতা , চর্মরোগ , হামের পরবর্তী কাশি , ঘুংড়ি কাশি প্রভৃতি পীড়ায় ইহা প্রয়োগ হয় ।

শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীঃ- কেলি বাইক্রমের সর্বপ্রকার লক্ষণ হইল শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি হইতে সূতার ন্যায় শ্লেষ্মা বাহির হওয়া । সর্দি , কাশি , ব্রঙ্কাইটিস , মেহ , গণোরিয়া , প্রদর ইত্যাদি পীড়ায় যদি নাক , মুখ , জনেনেন্দ্রিয় হইতে সূতার ন্যায় শ্লেষ্মা বাহির হয় বা আঠার মত শ্লেষ্মা নির্গত হয় ও উহা টানিলে দড়ির মত লম্বা হইয়া শ্লেষ্মা বাহির হয় তবে কেলি বাই সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ ।

বেদনা ও বাতের বেদনায় ঃ- বুক হইতে পিঠ পর্যন্ত একটি সঞ্চরনশীল সূঁচ ফোটান বেদনা । বেদনা সামান্য একটু স্থানে আবদ্ধ থাকে । এত অল্প স্থানে আবদ্ধ থাকে যে আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়া ঢাকিয়া রাখা যায় । ইহার বেদনার বিশিষ্টতা হইল রাত্রি ২।৩ টা হইতে ভোর ৫ টা পর্যন্ত বৃদ্ধি লক্ষণ উৎপাদন করে । সাইকোটিক দোষের অবস্থিতি জনিত ইহার লক্ষণসমূহ এক যন্ত্র বা অঙ্গ হইতে অন্য অঙ্গে ধাবিত হয় এবং বাত লক্ষণটি ক্রমান্বয়ে স্থান পরিবর্তন করিতে থাকাই ইহার বৈশিষ্ট্যজনক প্রকৃতি । যে বাত গ্রীষ্মকালে উৎপন্ন হয় , ফুলাবোধ হয় না , গিরায় গিরায় ঘুরিয়া বেড়ায় , বেলেডোনার ন্যায় বেদনা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায় , ব্রায়োনিয়ার ন্যায় বেদনা নড়াচড়ার বৃদ্ধি পায় , পালসের ন্যায় বেদনা একস্থান হইতে অন্য স্থানে যায় , তাহাতেই কেলি বাইক্রম উপকারী । প্রতি বসন্তকালে বাত দ্বারা যাহারা আক্রান্ত হয় তাহাদের পক্ষে ইহা বিশেষ উপকারী ।

শ্বাস যন্ত্রের পীড়ায় ঃ- কেলি বাইক্রমের ঠান্ডা ও সর্দি লাগার প্রবণতাটি গরমের দিনে বিশেষ করিয়া বর্ষাকালের গরমে বৃদ্ধি পায় । সর্দি দুর্গন্ধযুক্ত এবং তাহা তরল থাকিলেও সূতার ন্যায় লম্বা আকৃতির এবং সহজেই শুষ্ক হইয়া মামড়িতে পরিবর্তিত হয় ও নাসারন্ধ্রদ্বয়কে রাত্রিকালেই বিশেষ ভাবে বন্ধ করিয়া দেয় । তাহার পর ঠান্ডার আক্রমণটি শ্বাসনালীতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং সেখান হইতেও ঐ একই প্রকার শ্লেষ্মা নির্গত হয় ও গলদেশে শ্বাস রোধের অবস্থা আসিয়া পড়ে । ক্রমান্বয়ে সর্দির আক্রমণটি বক্ষযন্ত্র আক্রমণ করে । ঐ সর্দির আক্রমণ যদি কেবলমাত্র গলদেশেই সীমাবদ্ধ থাকে , তাহা হইলে স্বরভঙ্গ ও আক্ষেপযুক্ত কাশিতে পর্যবসিত হয় এবং পরিশেষে গলমূলে ক্ষতের সূচনা করে । যদি রোগী পূর্ব হইতে টিউবার কুলার দোষে দুষ্ট থাকে , তাহা হইলে ঐ অবস্থাটি ক্রমান্বয়ে শ্বাসনালীর ক্ষয় পীড়ায় রূপান্তরিত হইয়া বলক্ষয়কারী অল্প অল্প জ্বর , নৈশঘর্ষ , শীর্নতা , উদরাময় ইত্যাদির মধ্য দিয়া রোগীর জীবন লীলা সাঙ্গ হয় । যদি ঐ সর্দির অবস্থাটি নিম্নপথে প্রসারিত হয় , তাহা হইলে দক্ষিণ ফুসফুসের দিকের নিম্নাংশের অল্প পরিসর স্থানে সমধিক আক্রান্ত হয় । এবং তখন প্রচুর ঘর্ম , সুঁচ ফোটান বেদনা এবং ঐ স্থানে স্পর্শ কাতরতা এবং দক্ষিণ পার্শ্বে শয়নে অক্ষমতা সহ দড়ির ন্যায় লম্বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা বাহির হইতে থাকে । শ্লেষ্মা তোলার জন্য রোগীকে বার বার জোরের সহিত কাশিতে হয় এবং শ্লেষ্মা না উঠা পর্যন্ত কাশির নিবৃত্তি হয় না ।

ব্রঙ্কাইটিসে কাশি ঘঙঘঙে এবং শ্লেষ্মায় শ্বাসনলী পূর্ণ থাকিলেও সহজে শ্লেষ্মা উঠে না । কেলি বাই এর সর্দি বা গয়ার সূতা বা তারের মত লম্বা ঝোলে । কাশির বৃদ্ধি ভোর ৩ টা হইতে ৪ টার মধ্যে ও বিছানা হইতে উঠার পর । হাঁপানী পীড়ায় একটু ঠান্ডা পড়িলেই অমনি হাঁপানীর টান ও কাশির বৃদ্ধি হয় । যদি কখনও ভোর ৩/৪ টায় হাঁপানীর টান বৃদ্ধি হয় তবে কেলি বাইক্রম নির্দিষ্ট । রোগী রাত্রে শুইতে পারেনা , সামনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতে বাধ্য হয় এবং তাহাতেকিছু উপশম বোধ করে ।

ক্ষত লক্ষণ ঃ- ক্ষত পঁচন উৎপাদনে কেলিবাই এর ক্ষমতা অসীম । ঐ ক্ষত মসৃণ বৃত্তাকার ও গভীর প্রকৃতির , ঠিক যেন কেহ ধারাল সূচ্যাগ্রবৎ যন্ত্রের সাহায্যে কতকটা মাংস তুলিয়া লইয়াছে । ক্ষত হইতে যে রস বা পুঁজ নির্গত হয় তাহা নুতন ভাবে ক্ষতটিকে বর্ধিত করে বা নতুন স্থানে ক্ষতভাব সৃষ্টি করে । ক্ষত ও পঁচন লক্ষণের সহিত রোগীর দুর্বলতা , প্রচুর ঘর্ম এবং গ্রীষ্মের দিনে বৃদ্ধিটি অবশ্যই বর্তমান থাকে । মুখ ও গলার মধ্যে গোলাকার ক্ষত হইলে এবং নাসিকা ক্ষতেও কেলি বাই বিশেষ উপযোগী । সিফিলিটিক দোেষ দুষ্ট দেহে রক্ত কণিকার বিশেষ স্বল্পতা দৃষ্ট হয় , ঐ সকল ক্ষত হইতে যদি সূতার ন্যায় স্রাব নির্গত হয় তবে ইহা একমাত্র ঔষধ । উপদংশ দোষ হইতে ক্ষত উৎপন্ন হইলেও অস্থি পর্যন্ত আক্রান্ত হইলে ইহা সুফল দান

উদর পীড়ায় - উদর যন্ত্রে কেলি বাই সুনিশ্চিতভাবে ক্রিয়া করিতে সক্ষম । রোগীর পেটটি অতিশয় ভারবোধ , মনে হয় যেন পাকস্থলী হইতে অস্ত্র পর্যন্ত একটি ভারী বোঝা চাপান আছে । গা বমি ও প্রকৃত বমনের মধ্য দিয়া স্বচ্ছ আঠাল সুতা বা তারের ন্যায় শ্লেষ্মা লম্বা আকারে বহির্গত হওয়াই ইহার লক্ষণ । মল ত্যাগের সময় নিম্নোদারে ও গুহ্যদ্বারে মোচড়ানি যন্ত্রণা হয় ও সেজন্য বেগ দিয়া মল ত্যাগ করিতে হয় । সূচ ফোটান বেদনাটি ইহাতে সৃনিশ্চিত ভাবেই বর্তমান থাকে । কেলি কার্বের ন্যায় আহারের সঙ্গে সঙ্গেই উদরটিতে একটি অস্বস্তিকর বায়ুর চাপ ইহাতেও অনুভূত হয় । মনে হয় যেন পেটটি ফাটিয়া যাইবে । ইহা ছাড়া আহারের ৪/ ৫ ঘন্টা পরে অজীর্ণ আকারের ভুক্তদ্রব্য সহ প্রচুর সূতার ন্যায় শ্লেষ্মা বমি হওয়াতে রোগীকে বড়ই অবসন্ন করিয়া দেয় । বিশেষ করিয়া ঠান্ডা খাদ্য আহারের পরই এই বমন ও বিবমিষা দেখা দেয় । পাকস্থলীর ক্ষত জন্যই এই প্রকার বমি হয় । ঐ প্রকার বমিতে পেটের নিদারুণ পূর্ণতা বোধ ও সে জন্য কষ্টটি লাঘব হয় এবং রোগী সুস্থ থাকে । এইভাবে কিছু দিন চলার পর পাকস্থলীতে প্রচুর অম্লরস তৈরী হয় এবং তখন পাকস্থলীর আবরক চর্মে ক্ষত সৃষ্টি হয় , উদরে শূণ্যতাবোধের সৃষ্টি হয় এবং রোগী তখন প্রায়ই আহার করিতে বাধ্য হয় । অতঃপর উদরাময় লক্ষণ আসিয়া পড়ে এবং তখন সুঁচ ফোটান ব্যথা , ভার বোধ ও জ্বালা সহ প্রত্যহ কয়েকবার করিয়া মলত্যাগ করিতে হয় । মাতালদের অজীর্ণ পীড়ায় ইহা সমধিক উপকারী । পর্যায়ক্রমে বাত রোগ ও পাকস্থলীর পীড়া হইলে এই ঔষধে বিশেষ উপকার হয় ।

আমাশয়ের ঃ- যাহাদের শরৎ বা গ্রীষ্মকালের প্রথমে প্রায়ই বৎসর বৎসর পীড়া হয় , তাহাদের রোগে ইহা অধিকতর উপযোগী । মল ফ্যাকাশে , জলবৎ , সেইসঙ্গে রক্ত ও জিবল আঠার মত আম থাকে । বাহ্যের সময় এবং বাহ্যের পর কুন্থন বেগ থাকে । ফলতঃ আমাশয়ে কেলি বাইক্রম নির্বাচনকালে জিহ্বা শুষ্ক , পিচ্ছিল রক্তবর্ণ ও ফাটা ফাটা , তবে মল কাল কাল এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত । কেলি বাইতে থকথকে জেলির মত আম এবং উহা এত আঠা যেন তারের মত টানা যায় ।

শিরঃপীড়ায় ঃ- শিরঃপীড়ার সহিত সম্পূর্ণ দৃষ্টি লোপে এই ঔষধ সর্বাপেক্ষা ফলপ্রদ । কেলি বাইক্রমে প্রথমে দৃষ্টিলোপ আসে , পরে মাথা ব্যথা যত অধিক হইতে থাকে , ততই দৃষ্টি শক্তির পুনরাবির্ভাব হয় । ঐ মাথা ব্যাথা কোনও এক অল্প পরিসর স্থানে এবং অত্যন্ত যন্ত্রনা দায়ক । স্মরণ রাখিবেন যে লি বাইক্রমের সকল বেদনাই হঠাৎ আসে , হঠাৎ যায় এবং একস্থান হইতে অন্য স্থানে চলিয়া বেড়ায় ।

চক্ষু পীড়ায় - সকালে নিদ্রা হইতে উঠিবার পর হরিদ্রা বর্ণের ঘন পূজের মত পিচুটির দ্বারা চক্ষু জুড়িয়া থাকে , চক্ষুর পাতা ফোলা ফোলা দেখায় । কেলি বাইক্রমের চক্ষুর পীড়াও সেই জন্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হয় বলিয়া ততটা আলোকাতঙ্ক থাকে না । চক্ষুর কর্ণিয়ার ক্ষতে পীড়া খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হইলে এবং তৎসঙ্গে অত্যধিক আলোক ভীতি , চক্ষুর লালিমা , হরিদ্রা বর্ণের পূজ বা পিচুটি পড়া ইত্যাদি লক্ষণগুলি থাকিলে কেলি বাইক্রম উপযোগী । আইরাইটিস পীড়ায় যখন প্রদাহ ভাগ কমিয়া যায় অথবা অতি অল্প মাত্র থাকে , আলোক ভীতি থাকে না , তখন ইহা উপকারী । হামের পর যদি দেখা যায় যে চক্ষুর স্বচ্ছ ত্বকে ছোট ছোট ফুস্কুড়ির বা ফোস্কার মত উদ্ভেদ বাহির হইতেছে , তখন পালসেটিলা হইতেও বেশী উপকারী । চক্ষু , মুখ , নাসিকা ইত্যাদিতে ক্ষত হইলে এবং ঐ ক্ষত হইতে সুতার মত লম্বা বা আঠার মত চটচটে স্রাব নির্গত হইলে কেলি বাইক্রম উপকারী

কর্ণপীড়ায় ঃ- কর্ণস্রাব অত্যস্ত আঠাল এবং পূজের ন্যায় । সেই সঙ্গে কানে ভয়ানক বেদনা ও যন্ত্রনা । এই বেদনা যেন কান হইতে মাথার বা ঘাড়ে বিস্তৃত হয় । সেই সঙ্গে প্রায় ঘাড়ের গ্ল্যান্ডের স্ফীতি এবং বিশেষতঃ সে দিকের প্যারোটিড গ্র্যান্ডও স্ফীত হয় । এই স্ফীতি সময়ে খুব বড় ও অত্যন্ত শক্তও হয় এবং কানের বেদনা প্যারোটিড গ্ল্যান্ডের স্ফীতি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় ।

কোষ্ঠবদ্ধতায় ঃ- কোষ্ঠবদ্ধে মল কঠিন ও শুষ্ক , উহা অতি কষ্টে নির্গত হয় । পুরাতন কিম্বা কোন নির্দিষ্ট সময় অন্তর আবির্ভাবশীল কোষ্ঠবদ্ধ । মল ত্যাগের পর মলদ্বার অত্যন্ত জ্বালা করে । কেলি বাইক্রমে উপরোক্ত লক্ষণগুলিসহ মলদ্বারে কখনও কখনও ক্ষতের মত ভয়ানক বেদনা থাকে , একটু চলাফেরা করিলে ঐ বেদনা বাড়ে , রোগী মনে করে যেন মলদ্বারে একটা প্ল্যাগ দেওয়া রহিয়াছে । বেদনা সময়ে সময়ে এত অধিক হয় যে বসিতে পারে না ।

চর্মরোগে ঃ- ইহার চর্মরোগ গ্রীষ্মে বৃদ্ধি হয় । কেলি বাইক্রমে প্রথমে ফোস্কার মত উদ্ভেদ হয় , তাহার মধ্যস্থান বসা এবং চারদিকে উঁচু থাকে । পরে তাহা হইতে পুঁজ নিঃসৃত হইয়া ক্রমে উহা আরোগ্য হইলে তথায় দাগ পড়িয়া থাকে । শীতকালে উপশমিত হইলে উহা উপযোগী ।

বৃদ্ধি - গ্রীষ্মের দিনে , গরম আবহাওয়ায় , অনাচ্ছাদিত অবস্থায় , মদ্যপানে , ভোরের দিকে , ভিজা ঠান্ডায় ও সঙ্গম কার্যের পর ।

হ্রাস- সাধারণ উত্তাপে , সঞ্চালনে এবং চর্মপীড়া লক্ষণ শীতের দিনে ।

সম্বন্ধযুক্ত ঃ- উপদংশিক রোগে কেলি আয়োড , এসিড নাইট , ফাইটোলাক্কা । দ্রুত স্থান পরিবর্তনশীল বেদনায় এসিড ক্রমিক , ম্যাগ ফস , বেলেডোনা । ঘুংড়িতে আয়োডাম , হিপার ও ব্রোমিয়াম । নাসিকা হইতে গাঢ় আঠার ন্যায় শ্লেষ্মা নির্গমনে হাইড্রাসটিস , গ্রাফাইটিস , আইরিস প্রভৃতি কেলি বাইক্রমের সমকক্ষ ।

পরবর্তী ঔষধ ঃ- আর্সেনিক আয়োড ।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ ঃ- পালসেটিলা , আর্সেনিক , ল্যাকেসিত ।

ক্রিয়া স্থিতিকাল ঃ- ৩০ দিন ।

ব্যবহারের শক্তি ঃ-X হইতে ১০০০ শক্তি ।

হাঁপানিতে নিম্নশক্তি , পুরাতন ও জটিল রোগে যে কোন উচ্চ শক্তি প্রযোজ্য ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ