ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকাম - Calcarea Fluoricum

 

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকাম  (Calcarea Fluoricum)

 

 উৎস - প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ ফ্লোরস্পার বা ফ্লোরাইড অব লাইম হইতে ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের চূর্ণ প্রস্তুত হয়।
সাধারণ নাম, অপর নাম ও সংক্ষিপ্ত নাম:- সাধারণ নাম-ফ্লোরাইড অব লাইম, ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড ।
অপর নাম-ক্যালকেরিয়া ফ্লোরেটা, ক্যালসি ফ্লোরিডাম, ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড।


সংক্ষিপ্ত নাম-ক্যাক ফ্লোর (C.F.)


রাসায়নিক তত্ত্ব ঃ- এই স্ফটিকের আপেক্ষিক গুরুত্ব ৩.৪ । ইহাতে ৫৮.২১ ভাগ ক্যালসিয়াম আছে। ইহা প্রকৃতি প্রদত্ত খনিজ পদার্থ ফ্লোরস্পার। ইহা নানা রঙের, নানা আকারের, ত্রিকোণ, অষ্টকোণ বিশিষ্ট স্ফটিকাকারে জন্মায়। পানিতে ইহা অদ্রবণীয় কিন্তু সালফিউরিক এসিডে দ্রবীভূত হইয়া হাইডোফ্লোরিক এসিডে পরিণত হয়।
 
হোমিওপ্যাথিক স্বীকৃতি ঃ-  ডাঃ জে. বি. বেল ক্যালকেরিয়া ফ্লোর ঔষধটি পরীক্ষা করেন। ইহা ডাঃ এলেনের এনসাইক্লোপিডিয়া গ্রন্থের দশম খণ্ডে ৩৯৮ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করেন। ইহার সম্পূর্ণ স্বীকৃতি গাইডিং সিম্পটমের তৃতীয় খণ্ডে পাওয়া যাইবে।

প্রস্তুত প্রণালী ঃ কয়েক টুকরা বিশুদ্ধ ফ্লোরাইড অব লাইম বা ফ্লোরস্পার লইয়া উহার ওজনের ৯ ভাগ দুগ্ধ শর্করা পৃথক ভাবে লইয়া হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া অনুযায়ী বিচূর্ণ প্রস্তুত করিতে হয় এবং প্রথম বিচূর্ণ হইতে উচ্চতর শক্তি প্রস্তুত করা হয়।
 
ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের অভাবে মানবদেহে প্ৰকাশ পেতে পারে এমন পিড়া সমুহ ঃ-  মানবদেহের অস্থির বহিরাবরণ শক্ত হয় এবং গিটটি ভাব দেখা দেয়। ইলাসটিক ফাইবারগুলি শিথিল হইয়া পড়ে এবং ইহার ফলে জরায়ুর শিথিলতা, জরায়ু স্থানচ্যুতি, উদর প্রাচীরের শিথিলতা থাকে যাহাকে আমরা পেট ঝুলিয়া পড়া বলিয়া থাকি, অশবলি সৃষ্টি হয়। অণ্ডকোষের কাঠিন্য দেখা দেয়, স্তন পাথরের মত শক্ত হয়।
ত্বককোষে কিরাটিনের অভাব, সাধারণতঃ ত্বকে, চুলে এবং নখে এই কিরাটিন নামক পদার্থ থাকে। ইহার অভাবে হাতের ও পায়ের তালু ফাটা, হস্তপদে কড়া, ঠাণ্ডায় মুখ-ঠোঁট ফাটা, গুহ্যদ্বার ও স্তনবৃত্ত ফাটা, চর্মের স্ফীতি ও কাঠিন্য, মলদ্বার ফাটিয়া গিয়া ঘন হলদে রং এর রস নিঃসৃত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।

ক্রিয়া ক্ষেত্র ঃ দেহস্থ অণ্ডলালার সহিত মিশ্রিত হইয়া ইহা স্থিতিস্থাপক তন্তুসমূহ মাংসপেশীস্থ স্থিতিস্থাপক সূত্র অস্থির উপরিস্থ আবরণ, দস্তের এনামেল নামক পদার্থ, ত্বকের উপরিস্থ এপিডার্মিস, সকল প্রকার সংযোজক টিসু কোষ নির্মাণ করিয়া থাকে । শিরা ও ধমনীর উপরও ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে এবং ইহার অভাবে শিরা ও ধমনী স্ফীত হইয়া অর্শ, ধমনীর অর্বুদ, শিরাস্ফীতি প্রভৃতি পীড়া উৎপন্ন হয়। যখনই স্থিতিস্থাপক তন্ত্রসমূহের মধ্যে এই লাবণিক পদার্থের অভাব হয় তখন যে তন্ত্রতে ইহার অভাব হইয়াছে তাহাদের সংকোচন শক্তি নষ্ট হওয়া বশতঃ ইহারা ক্রমাগত স্ফীত হইয়া পুরাতন শিথিল ভাব ধারণ করে। যখন কোন রক্তবহা শিরা বা ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা অথবা কোন সংযোজক তন্ত্র কিংবা রক্তবহা সমূহে এই লবণের অভাব হয় তখন উহারা নিয়মিত কার্য করিতে পারে না এবং সেই স্থানের রস বা রক্তস্থ কঠিন পদার্থ অশোষিত হইতে না পারিয়া সেই সকল স্থানে একত্রিত হইয়া কঠিন হইরা থাকে।

মানসিক লক্ষণ : ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের মানসিক লক্ষণ-
ক) রোগী অত্যন্ত সন্ধিগ্ধ চিত্ত।
খ) মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ-বিশেষতঃ সব সময় ভাবে যে তাহার অর্থ নাশ হইবে। অর্থাভাব তাহার ভয়।
গ) কোন বিষয় চিন্তা করিয়াও স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারে না। বিবেচনা শক্তি লোপ পায় ।
ঘ) কোন দ্রব্য প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা বেশী মূল্যবোধ করে।

পরিচায়ক লক্ষণ-

ক) অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত, সন্ধিগ্ধচিত্ত, উদ্বেগ এবং অর্থনাশ হইবার ভয়।
খ) সদোপ্রসূত শিশুর মস্তকের প্যারাটাইল অস্থিতে রক্তময় অর্বুদ। মস্তকের অস্থির যে কোনও স্থান ফুলিয়া শক্ত হয়।
গ) কোন স্থানের রস সঞ্চিত হইয়া শক্ত হয়, স্ফোটক, ব্রণ, গ্রন্থিস্ফীতি ইত্যাদি প্রস্তরের ন্যায় কঠিন। 
ঘ) যে কোন স্থানের বা যে কোন প্রকারের ক্ষত হোক না কেন, ক্ষতের চতুষ্পার্শ্ব কঠিন ও অমসৃণ এবং উহা হইতে দুর্গন্ধযুক্ত গাঢ় হরিদ্রাবর্ণের পুঁজময় স্রাব নির্গমন ।
ঙ) জরায়ুর স্থানচ্যুতি, প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনা, মনে হয় যেন জরায়ু যোনিপথ দিয়া বাহির হইয়া যাইবে।
চ) দুর্দমনীয় কোষ্ঠবদ্ধসহ উদরী পীড়া। উদর শক্ত এবং উদরের উপর দিয়া শিরাসকল ভাসিয়া উঠে।
ছ) যে কোন স্থানের চর্ম ফাটা ফাটা, পায়ের তলায় কড়া, চর্ম স্ফীত ও কঠিন। 
জ) দন্তের শিথিলতা প্রযুক্ত দন্তশূল এবং আহারকালীন উহার বৃদ্ধি।
ঝ) অণ্ডকোষের শীর্ণতা, অণ্ডকোষে জল জমা এবং উহার প্রস্তরবৎ কাঠিন্যতা ।
ঞ) সর্বপ্রকার লক্ষণ আর্দ্র বায়ুতে ও আর্দ্র স্থানে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। উত্তাপে ও শুষ্ক স্থানে পীড়া লক্ষণের হ্রাস।

প্রয়োগক্ষেত্রঃ- ধমনীর অর্বুদ, রক্তার্বুদ, অস্থিপীড়া, ছানি, কর্ণিয়ার অস্বচ্ছতা, বিবর্ধিত গ্রন্থি, হস্ত পদের কড়া ও ফাটিয়া যাওয়া, গলগণ্ড, স্তনের কাঠিন্য, কাশি, শিরা প্রসারণ, জরায়ুর কাঠিন্য, যকৃত পীড়া, ওজিনা, বাগী, কঠিনক্ষত উপদংশ, দণ্ডপীড়া, অর্শ, হাঁপানী, কোষ্ঠবদ্ধ প্রভৃতি।

তত্ত্বসমূহের উপর ক্রিয়া ঃ- ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের অভাবে স্থিতিস্থাপক তন্ত্রসমূহের শিথিলতাবশতঃ উদর কুলিয়া পড়ে, পেশীবন্ধনীর বা সন্ধিস্থানের কোষ বিশিষ্ট ক্যাপসুলার বন্ধনীর স্ফীতি ও কাঠিন্যতা, অস্থিতে স্ফীতি, জরায়ু হইতে রক্তস্রাব। প্রসবের পর নিয়মিত বেদনার অভাব, স্ত্রীলোকদের স্তনে গ্রন্থির ন্যায় অর্বুদ, জঙ্ঘার সম্মুখস্থ অস্থির উপর আঘাত লাগিয়া উহা অমসৃণ, কঠিন ও খসখসে, স্থিতিস্থাপক তন্ত্রসমূহের অতিরিক্ত মচকানোর ফলে গ্রন্থিবিশিষ্ট স্নায়ুসকলের কৌষিক মূত্রনালী বা পিত্তাধারে অর্বুদ সৃষ্টি, দাঁতের গোড়ার শিথিলতা, দম্ভের এনামেলের ক্ষয়, অস্থি হইতে রক্তস্রাব হইয়া গ্রন্থিবৎ এবং কাঠিন্যতা, অস্থিক্ষয় হেতু ক্ষয়কারী পাতলা স্রাব, অক্ষিপট এবং মনিবন্ধের সন্ধিস্থলে অস্থিবিবৃদ্ধি, উপরের চোয়ালে সার্কোমার তন্ত্রর শিথিলতা, অস্থিতে অর্বুদ প্রভৃতি পীড়া সৃষ্টি হয়। ক্যালকেরিয়া ফ্লোর উলে-খিত অবস্থায় সফলতার সহিত কাজ করিয়া থাকে।

অর্বুদ বা টিউমারে কার্যকারিতা :- চোয়াল বা মুখের অস্থিতে কঠিন স্ফীতি বা অর্বুদ, মুখমণ্ডলের অস্থির উপর কঠিন অর্বুদ, ধমনীর অর্বুদ রোগ, কর্ণের ওভারীতে, হাতপায়ে বা শরীরের যে কোন স্থানে কঠিন অর্বুদ, নবজাত শিশুর প্যারাইটাল বোনে রক্তময় অর্বুদ, মস্তকের অস্থির উপর আঘাত লাগিয়া অস্থি অসমৃণ হইলে ও অস্থির উপর অর্বুদ হইলে ক্যালকেরিয়া ফ্লোর কার্যকরী। শরীরের যে কোন স্থানেই হোক পাথরের মত শক্ত হওয়াই ইহার অর্বুদ বা টিউমারের বৈশিষ্ট্য।
 
 চক্ষু পীড়ার লক্ষণ ঃ চক্ষুতে ছানি পড়া, কর্ণিয়ার উপর দাগ, চক্ষুপত্রের প্রদাহ ও চক্ষু উঠা, চোখের সামনে যেন কোন বস্তু নড়াচড়া করিতেছে, ঝিকমিক করিতেছে বা উজ্জ্বল কোন বস্তু হঠাৎ যাতায়াত করিতেছে, চক্ষুপাতার প্রদাহের পর কাঠিন্য বা চক্ষু পাতার উপরিস্থ জলপূর্ণ অর্বুদ, কিছুক্ষণ পড়িবার পর চক্ষুতে ঝাপসা দেখা, চক্ষু গোলক ব্যথাযুক্ত, চক্ষুর পাতার অগুনি, একদৃষ্টে চাহিয়া থাকিলে ক্রমে দৃষ্টি শক্তির হ্রাস বোধ প্রভৃতি লক্ষণে ইহা ব্যবহৃত হয়।
চক্ষুতে ছানি বা ক্যাটার্যাক্ট পীড়ায় ঃ চক্ষুতে ছানি পড়িলে ইহা অতিশয় উৎকৃষ্ট ঔষধ। ছানি কঠিন হইয়াছে বুঝিতে পারিলেই ইহা প্রয়োগ করা উচিত। ছানির কোমল অবস্থায় নেট্রাম মিউর ৩০x কিন্তু কঠিন হইলেই ক্যালকেরিয়া ফ্লোর ৩০x একমাত্র ঔষধ ।
কর্ণপীড়ার লক্ষণ ঃ কর্ণের পিছনের নিম্নদিকে উচ্চস্থানকে ম্যাসটয়েড অস্থি বলে, উহার পীড়ায় ক্যাল্ক ফ্লোর উপকারী। ম্যাসটয়েড অস্থি পীড়ায় যখন অস্থি আবরক আক্রান্ত হয় এবং টিম্পেনাম নামক স্থানে চুনের ন্যায় পদার্থ সঞ্চিত হয় তখন ইহা ফলপ্রদ ।
নাসিকা পীড়ার ঃ নাসিকা সড়সড় করে, সর্দিপূর্ণ থাকে অথবা শুষ্ক সর্দি বা হলদে সর্দি প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়। হাঁচিবার ইচ্ছা হয় অথচ হাঁচি হয় না। ওজিনা রোগ নাসিকার অস্থি পীড়ায় অস্থি আবরক আক্রান্ত হইলে ইহা প্রযোজ্য। নাসিকাস্থির বিবৃদ্ধি বা অস্থিতে অর্বুদ। নাসিকার পশ্চাৎ দিকের ছিদ্রের ও ফেরিংসে মাসাংকুর ।

অস্থিপীড়ায় বা অস্থির উপর কার্যকারিতা- বিভিন্ন স্থানের অস্থি পীড়ার লক্ষণে ইহা কার্যকরী। নবজাত শিশুর প্যারাইটাল বোনে রক্তময় অর্বুদ, মস্তকের অস্থির উপর আঘাত লাগিয়া অস্থি অমসৃণ হইয়া গেলে এবং অস্থির উপর অর্বুদ হইলে কর্ণের পেছন দিকের ম্যাসটয়েড অস্থির পীড়া, কর্ণপীড়ায় হাড় বা পেরিসটিয়াম আক্রান্ত, চোয়াল বা মুখের অস্থিতে কঠিন স্ফীতি অর্বুদ, দন্ত আবরক পদার্থের ক্ষয় বা দন্তোদ্গামে বিলম্ব, অস্থি ও দাঁতের ভালভাবে পরিপোষণ না হওয়া, অস্থি স্ফীতি, পুরাতন উপদংশজনিত অস্থিপীড়া প্রভৃতিতে ইহা কার্যকরী ।

রাসায়নিক সংকেত- রাসায়নিক সংকেত Ca F2

দৈহিক ও রাসায়নিক স্বীকৃতি ঃ- ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড দাঁত এবং হাড়ের বহিরাবরনে দেখা যায়। ইহা মাংসপেশীর স্থিতিস্থাপক সূত্রে, সর্বপ্রকার টিসু এবং রক্তবহা নাড়ী প্রাচীরের ভিতর পাওয়া যায়। শরীরস্থ শিরা, উপশিরা, ধমনী প্রাচীরের রক্তবহা প্রণালীর বা কোন তন্ত্রসমূহে ফ্লোরাইড অব লাইমের অভাব হইলে শিরা ও ধমনী ফুলিয়া উঠিয়া অর্শ হয়। ধমনীর অর্বুদ-ও শিরা স্ফীতি প্রভৃতি পীড়ার সৃষ্টি হয়। কোন কোন জায়গা ফুলিয়া পাথরের মত শক্ত হয়। যদি শরীরের কোন অংশে ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের অভাব দেখা দেয় তবে সংশিষ্ট স্থানের টিসু বা তন্তুর সংকোচন ক্রিয়া নষ্ট হয়। ফলে জরায়ু হইতে রক্তস্রাব, জরায়ুচ্যুতি, দাঁতের শিথিলতা, পেটের শিথিলতা, ভেরিকোজ ভেইন এবং রক্তবহা নাড়ীর ক্রিয়ার অভাব ঘটে। ইহার অভাবে শিরাদি স্ফীত হইলে অর্শের বলি উৎপন্ন হয়। ইহার অভাবে দেহের গ্রন্থি সকল পাথরের মত কঠিন ও শক্ত হইয়া পড়ে এবং প-ীহা, যকৃত ইত্যাদিও পাথরের মত কঠিন হয়। ইহার অভাবে হার্ড ক্যাঙ্কার নামক উপদংশ পীড়া প্রকাশ পায়। ইহার অভাবেই জিহ্বা, গুহ্যদ্বার, স্তনবৃত্ত ফাটাফাটা হইয়া থাকে, হাতে পায়ে কড়া জন্মে এবং ফাটাফাটা দেখা যায় ।

 দস্তুপীড়ার লক্ষণ ঃ দাঁতের বেদনা থাক বা না থাক, দাঁতের গোড়া শিথিল হইলে এবং 8 আহারকালে দন্তে খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ হইলেই শূল বেদনায় ইহা অব্যর্থ। ইহার অভাবে দাঁতের এনামেল নষ্ট হইয়া দন্তক্ষয় বা শীঘ্র দাঁত নষ্ট হইয়া যায়। দাঁত উঠিতে বিলম্ব। দাঁতের মাড়ি প্রদাহের পর কঠিন হইয়া যায়। দন্তোদ্গমকালীন বমন।

গল মধ্যস্থ পীড়ায় ঃ গলার ভিতরের অবস্থা শিথিলযুক্ত হইলে বা আলজিব বড় হইয়া পড়িলে এবং সেজন্য গলার মধ্যে সুড়সুড়ি লাগিলে ও খুকখুকে কাশি হইলে নেট্রাম মিউরের সহিত ইহা কার্যকরী। ডিপথিরিয়া পীড়ায় ফল্স মেমেব্রেণ শ্বাসনালী পর্যন্ত বিস্তৃত হইলে, গলার ভিতর শুষ্কবোধ, গলার রক্তবহা ধমনীসমূহ শিথিল, প্রভৃতি লক্ষণে ইহা উপযোগী। ক্যাল্ক ফ্লোরের বৈশিষ্ট্য হইল শীতল পানীয়ে রোগ বৃদ্ধি এবং গরম পানীয়ে উপশম বোধ ।

শিরঃপীড়ার লক্ষণ ঃ মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপক যন্ত্রের শিথিলতা বশতঃ যে সকল পীড়া সৃষ্টি হয় তাহাতে ইহা উপকারী। মস্তকের অস্থির উপর আঘাত লাগিয়া অস্থি অসমৃণ হইয়া গেলে এবং অস্থির উপর অর্বুদ হইলে, মস্তকের ত্বকে কোন প্রকার ক্ষত হইয়া উহার চতুর্দিকে প্রস্তরবৎ কাঠিন্য, সদ্যপ্রসূত শিশুর প্যারাইটাল বোনের রক্তার্বুদ, মাথার মধ্যে একপ্রকার টানিয়া ধরার ন্যায় বা মোচড়ানো ব্যথা, বিকালে শিরঃপীড়াসহ বমনোদ্বেগ, সন্ধ্যায় শিরঃপীড়ার উপশম।

জিহ্বার লক্ষণ: জিহ্বার পুরাতন স্ফীতি, জিহ্বা ফাটা ফাটা এবং উহাতে কোন সময় বেদনা থাকে, কোন সময় থাকে না। জিহ্বা প্রদাহের পর জিহ্বার কঠিনতা।

 পাকস্থলীর লক্ষণ ঃ ভুক্তদ্রব্য জীর্ণ না হইয়া বমন হইয়া গেলে ফেরাম ফস প্রয়োগে উপকার না হইলে ইহা প্রযোজ্য। পাকস্থলীর ক্যান্সার। পেট ফাঁপা, মাঝরাতে ক্ষণে ক্ষণে পেট বেদনা, বেদনার দিকে শয়ন করিলে বেদনার বৃদ্ধি। বেদনাহীন দিকে শয়নে বা উপুড় হইলে আরামবোধ । সকাল ৮টায় যকৃত প্রদেশে কাটা ছেঁড়ার ন্যায় পুনঃ পুনঃ বেদনা হয়। গলা খেঁকারী দিলে হিক্কা হয়, হিক্কাসহ শো উঠে

কোষ্ঠবদ্ধতার লক্ষণ ঃ সরলান্ত্রের পেশীসমূহের অক্ষমতা বশতঃ অনেকদিন ধরিয়া মলভাণ্ডে জমিয়া থাকা হেতু বাহির হইতে পারে না। নিম্নান্ত্রের বোধশক্তি হ্রাস জন্য কোষ্ঠবদ্ধ । কোষ্ঠবদ্ধতাসহ শিরোঘূর্ণন ও মাথাভার। সামান্য উদরাময় সেই সঙ্গে মলত্যাগের পূর্বে কষ্টকর মলত্যাগের ইচ্ছা। স্ত্রীলোকদের গর্ভাবস্থায়, প্রসবের পর এবং স্থূলকায় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রকার কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয়। কোষ্ঠবদ্ধতার সাথে অর্শ ও ভগন্দর থাকিলে এবং কোমর হইতে স্যাক্রাম পর্যন্ত তীক্ষ্ণ বেদনা - থাকিলে ইহা কার্যকরী।

অর্শ ও ভগন্দর পীড়ার লক্ষণ ঃ নিম্নান্ত্রে অধিক পরিমাণে বায়ু সঞ্চিত হয়। মলদ্বার ফাটিয়া যায়। ক্ষত ও টাটানিবোধ হয়। অত্যন্ত কোঁথ দেওয়া হেতু গুহ্যদ্বার ফাটিয়া যায়। অর্শরোগের চুলকানি, অর্শের জন্য কোষ্ঠবদ্ধতা ও কোমর হইতে স্যাক্রাম পর্যন্ত তীক্ষ্ণ বেদনা (১২x, ৩০x ব্যবহার্য)। আভ্যন্তরীক ও বাহ্যিক অর্শের বেদনায় ফেরাম ফসসহ পর্যায়ক্রমে ব্যবহার্য। অর্শের বেদনায় এবং অর্শ পীড়াগ্রস্ত রোগীর মস্তকে রক্তাধিক্য হইলে ফেরাম ফসসহ ইহা পর্যায়ক্রমে ব্যবহার্য। গুহ্যদ্বারে অতিশয় চুলকানি।

 মূত্রযন্ত্রের উপর ঃ রোগীর সব সময় প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা হয়। অধিক পরিমাণে প্রস্রাব হয় । প্রস্রাবথলীর পেশীসমূহের শিথিলতা হেতু একবারে অধিক প্রস্রাব জমিয়া থাকে। কখনও কখনও সামান্য পরিমাণে গাঢ় বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয়। প্রস্রাব ত্যাগের সময় প্রস্রাবনালী মধ্যে চুলকায় ও কুটকুট করে ।

কোমরের বেদনায় ঃ কোমরে বেদনাসহ মেরুদণ্ডের উত্তেজনা ও তৎসহ দুর্বলতা, টানিয়া ধরার মত বেদনা। কোমরের নিম্নে গুহ্যদ্বারের উপরের স্থানে বেদনা, মনে হয় যেন অবশ হইয়া গিয়াছে। পুরাতন কটিবাত। বেদনা প্রথম সঞ্চালনে বৃদ্ধি, কিন্তু ক্রমাগত সঞ্চালনে উপশম হয়। অনেকক্ষণ যাবত একভাবে বসিয়া থাকিলে কটিবাত। ঠাণ্ডায় বেদনার বৃদ্ধি, উত্তাপে ও সামান্য সঞ্চালনে বেদনার হ্রাস ।

পুংজননেন্দ্রিয় পীড়ার ঃ কঠিন ক্ষত উপদংশের ইহা প্রধান ঔষধ। কঠিন বাগী। পুরাতন উপদংশ পীড়ায় অস্থির আবরণে প্রদাহ এবং ক্ষতের প্রান্তদেশ অসম ও কঠিন। কোষ মধ্যে জল সঞ্চয় ও অতিশয় কঠিনতাসহ যে কোন প্রকার অ কোষের পীড়া। অণ্ডকোষের শীর্ণতাসহ অবিরত প্রস্টেটিক রস ও শুক্র নিঃসরণ। প্রস্টেট গ্রন্থির বিবৃদ্ধিহেতু কাঠিন্য ।

স্ত্রী জননেন্দ্রিয় পীড়ার ঃ জরায়ুর শিথিলতা বশতঃ জরায়ু হইতে রক্তস্রাব, জরায়ুর পেশীসমূহের দৃঢ়তা বা শিথিলতা, মনে হয় যেন জরায়ু পাথরের ন্যায় কঠিন হইয়াছে। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, জরায়ু বাহির হইয়া পড়ে। জরায়ুতে বা কুঁচকিতে টানিয়া ধরার ন্যায় বেদনা, মনে হয় যেন প্রস্রাব দ্বার দিয়া কোন বস্তু বাহির হইয়া যাইতেছে। অত্যধিক পরিমাণে ঋতুস্রাব, স্রাবকালীন মনে হয় যেন জরায়ু বাহির হইয়া যাইতেছে, জরায়ুর অর্বুদ প্রভৃতি লক্ষণে ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ ।

স্তন ও স্তনগ্রন্থির উপর ঃ স্তনের মধ্যে কঠিন গ্রন্থিবৎ দৃষ্ট হয়। স্তনগ্রন্থির প্রদাহ। প্রসূতির স্তনে অতিরিক্ত দুগ্ধ হইলে ৬x ব্যবহার্য। আবার স্তনে দুগ্ধ অতিশয় হ্রাস পাইলেও ইহা ব্যবহার্য।

গর্ভাবস্থালক্ষণঃ গর্ভাবস্থায় ইহা মধ্যে মধ্যে সেবন করিতে দিলে জরায়ুতে বলাধান হইয়া সহজে প্রসব কার্য সমাধা হয় এবং প্রসবের পর গর্ভস্রাব ও ভ্যাদাল ব্যথা হয় না। গর্ভাবস্থায় অস্ত্রস্থ পেশীর শিথিলতার জন্য কোষ্ঠবদ্ধতা। প্রসবকালীন বা প্রসবের পর জরায়ুর শিথিলতাহেতু বেদনা কম বা জরায়ুর সংকোচন না হইলেও ইহা ব্যবহার্য। জরায়ুর পেশীর শিথিলতা হেতু প্রয়োজনমত সংকোচন না হইয়া প্রসবের পর অধিক রক্তস্রাব হইলেও ইহা ব্যবহার্য।

 শ্বাসযন্ত্রের পীড়ার : হাঁপানী কাশিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হরিদ্রাবর্ণের শে-আাখণ্ড অতিকষ্টে নির্গত হয়। আলজিব বড় হইয়া গলার ভিতর সুড়সুড় করে ও খুকখুকে কাশি হয়। ক্রুপ কাশিতে ইহা উৎকৃষ্ট ঔষধ। রোগী মনে করে তাহার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হইয়া যাইতেছে। গলার মধ্যে অত্যন্ত শুষ্কবোধ। উচ্চস্বরে পড়িবার পর বা হাসিবার পর স্বরভঙ্গ। গুহ্যদ্বারে চুলকানোর পরই স্বরযন্ত্রে সুড়সুড়ানি ও সেজন্য আক্ষেপিক কাশি।

চর্মপীড়ার লক্ষণ ঃ ত্বক কঠিন, হাত ও পায়ের তালু ফাটিয়া যায়, হস্তপদে কড়া হয় । শীতকালে বা ঠাণ্ডা লাগিয়া মুখের বা শরীরের ত্বক ফাটিয়া যায়। ঠোঁট ও গাল ফাটে । গুহ্যদ্বার ও স্তনবৃত্ত ফাটিয়া যায়, ক্ষতস্থানের চারিদিকে কাঠিন্য। একজিমা হইতে আঁইশের ন্যায় ছাল উঠে এবং তৎসহ চর্ম স্থূল ও ফাটা ফাটা হয়। অশজনিত গুহ্যদেশে একজিমা।

সন্ধি প্রদাহসন্ধিস্থানসমূহ মটমট কটকট শব্দ করে। অঙ্গুলির পর্বসকল সহজেই স্থানচ্যুত হয়। কনুই সন্ধির স্ফীতি, সঞ্চালন করিলে করকর শব্দ করে। আঙ্গুল ও পায়ের অস্থির উপর অর্বুদ। হাতের কব্জির পশ্চাৎ দিকে জলপূর্ণ অর্বুদ। গাঁইট পীড়াজনিত আঙ্গুলের অস্থি বা সন্ধি অস্থি স্ফীতি। আঙ্গুল হাড়া।

নিদ্রালক্ষণ বা স্বপ্ন লক্ষণ ঃ উজ্জ্বল ও স্পষ্টভাবে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখিয়া ভয় পায় এবং শয্যা হইতে লাফাইয়া পড়িয়া অন্য ঘরে পালাইতে চায়। বিপদের স্বপ্ন এবং নতুন নতুন দৃশের স্বপ্ন দেখে।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধের ঃ মানসিক ও কণ্ঠনালীর পীড়ায় ইহার সহিত ক্যালকেরিয়া কার্বের তুলনা 8 করা যায়। নিদ্রা বিষয়ে ফ্লোরিক এসিড এবং সূত্রবৎ অর্বুদের কাঠিন্যে ক্যালকেরিয়া আয়োড, কেলি আয়োড, ম্যাগ মিউরের সহিত তুলনীয়। কটিবাত পীড়ায় রাসটক্স এর লক্ষণের অনেক সাদৃশ্য আছে। রাসটক্সের পর ক্যালকেরিয়া ফ্লোর উপযোগী । পুঁজ জন্মিলে সাইলিসিয়ার পর, সন্ধিবাত পীড়ায় ব্রায়োনিয়া ও ক্যালকেরিয়ার পর, ঠাণ্ডা ক্ষতে নেট্রাম মিউরের পর উপযোগী। বিশেষ বিশেষ রোগে ক্যালকেরিয়া ফ্লোরের ব্যবহৃত বিশেষ বিশেষ শক্তির উলে-খ কর।

হ্রাস-বৃদ্ধি ঃ বৃদ্ধি-ভিজা আবহাওয়ায়বিশ্রামেগলা বেদনা শীতল পানীয়ে। হ্রাস ঘর্ষণে ও হাত বুলাইলেযেখানে সংকোচন হওয়ার দরকার সেখানে শীতল প্রয়োগেঅস্থি পীড়ায় উত্তাপে ও উত্তপ্ত পানীয়ে

শক্তি ব্যবহারx শক্তি অল্প ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। অস্থিপীড়ায় ইহার উচ্চশক্তি, অর্শ পীড়ায় ১২x, হার্ড স্যাংকারে ১২x, ৩০x, ক্রুপ পীড়ায় ১২x, প্রসূতির স্তনে অতিরিক্ত দুগ্ধ হইলে ৬x, ক্যান্সার পীড়ায় ১২x, শিরা প্রসারণে ২০০x, চোখের ছানিতে ৬x শক্তি ব্যবহার্য। প্রায় ক্ষেত্রেই ১২x শক্তি দিয়া চিকিৎসা করিতে হয়।



আরো দেখুন :- https://www.fhhfeni.com/2021/08/calcarea-florica.html




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ