পেনিসিলিনাম - PENICILLINUM, চতুর্থ বর্ষ - মেটেরিয়া মেডিকা

পেনিসিলিনাম
PENICILLINUM







রাসায়নিক রূপ:- 6 aminopenicillanic acid.

প্রতিশব্দ:- পেনিসলিন।

আবিষ্কারক:- ১৯২৮ সালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন।

পেনিসিলিনামের উৎস:- পেনিসিলিনাম নোটেটাম নামক এক জাতীয় ছত্রাক হইতে ইহা উদ্ভূত। ইহা একটি শক্তিশালী জীবাণু নাশক ঔষধ ।

কেমিস্ট্রি বর্ণনা:- পেনিসিলিন অনেক রাসায়নিক জৈব অম্লীয় লবণের নাম। ইহা এনঅ্যাসাইলেটেড ডেরিভেটিভস অব ৬-এমিনো পেনিসিলানিক এসিড, সাধারণতঃ সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের লবণ ব্যবহৃত হয়। জলে ও সুরাসারে ইহা দ্রবণীয়। ফারমান্টেশন পদ্ধতিতে ২৫-২৭° তাপে ইহা ৫০ হইতে ১০০ ঘণ্টা সময় ব্যাপিয়া প্রস্তুত হয়। তবে পটাশিয়াম পেনিসিলিন প্রস্তুত করা অনেকটা সহজতর।

প্রিপারেশনের ভাগ:- ক্রিয়াগতভাবে পেনিসিলিন প্রিপারেশনের ভাগ নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ইহার প্রিপারেশনগুলিকে ভাগ করা চলে-
১) ইঞ্জেকশান- বেঞ্জিল পেনিসিলিন, প্রোকেন পেনিসিলিন, বেঞ্জানি পেনিসিলিন, বেনেথামাইন পেনিসিলিন।
২) ট্যাবলেট- ক) পটাশিয়াম পেনিসিলিন জি ট্যাবলেট, খ) ফিনক্সি মেথিল পেনিসিলিন ট্যাব ওরাজিন কে, গ) মিশ্রিত ট্যাব (সালফা ও পেনিঃ মিশ্রণ)
৩) লজেও পেনিসিলিন লজে।
৪) মলম- ক্রিটাপেন অয়েন্টমেন্ট প্রভৃতি।

ক্রিয়ার ধরণ:- বিভিন্ন গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে। গ্রাম পজিটিভ, ব্যাকটিরিয়া সমূহ যেমন- মেনিনগোকক্কাস, স্টাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, মাইক্রোকক্কাস, রুস্টিডিয়াম, বোরোলিয়া এবং ব্যাসিলাস। ইহা গ্রাম নিগেটিভ ককাই, স্পাইরোচিটিস নোমাইনোকোসিসের বিরুদ্ধেও কার্য করে।

ঔষধ প্রস্তুতি:- হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় ইহা একটি নূতন, সংযোজিত ঔষধ। সুরাসার অথবা জলে দ্রব করিয়া ইহার মূল অরিষ্ট প্রস্তুত করা হয়। পরে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে বিভিন্ন ক্রমের ঔষধ প্রস্তুত হয়।

নির্দেশক লক্ষণ:- ১) মেনিনজাইটিস, ২) সেপটিসিমিয়া, ৩) কার্নংকল, ৪) গ্যাস গ্যাংগ্রীণ বা দুষ্টক্ষত, ৫) সাইকোসিস, ৬) এমপায়েমা, ৭) পুরা মধ্যে পুঁজ, ৮) টিবির উপসর্গ, ৯) হিমোথোরাক্স, ১০) সিফিলিস বা উপদংশ, ১১) দাঁতের গোড়ায় ও মুখের কোণে ঘা, ১২) অস্থিক্ষত ও অস্থিমজ্জার প্রদাহ, ১৩) ডিপথিরিয়া, ১৪) নিমোনিয়া, ১৫) সর্দি কাশি, ১৬) হুপিং কাশি, ১৭) বিষাক্ত জাতীয় ক্ষত ।

প্রয়োগক্ষেত্র:- বিভিন্ন পীড়ায় বহুল পরিমাণে ইহার প্রয়োগ হয়। স্ট্যাফাইলোকক্কাই ইনফেকশন, সেপটিমিসিয়া, একিউট অস্টিমারেলাইটিসের প্রথম আক্রমণ, দূরন্ত কার্বংকল, কাভার্নাস সাইনাস গ্রন্থোদিস, মারাত্মক ইনফেকশান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয়। রিমিনিটিক স্ট্রেপটোকক্কাই, নিউমোকক্কাই, মেনিনগোকক্কাই ইনফেকশনেও ইহা প্রয়োগ হয়। রেজিস্ট্যান্ট গনোরিয়া কেসে ইহা ব্যবহৃত হয়। গ্যাস প্যাচ. কর্ণিয়া, কনজাংটাইভার আঘাত, বিষাক্ত ক্ষত, পোড়া ঘা, সাইকোসিস, ইমপিটিগো, গনোরিয়া, এস্পায়েমা ও পুরা-মধ্যে-পুঁজ, টিকির উপসর্গ, কমপাউন্ড ফ্রাকচার, আঘাত, হিমোথোরাক্স, অস্থিমজ্জা প্রদাহ, পোস্ট ট্রমেটিক নিউমোনিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহার ব্যবহার আছে।

মায়াজনের উপর ক্রিয়াশীল:- পেনিসিলিন হোমিওপ্যাথিক মতে পরীক্ষিত না হইলেও ইহার শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগে সুফল পাওয়া গিয়াছে। সিফিলিস, সাইকোসিস মায়াজনের উপর ক্রিয়া করিয়া থাকে। ডিপথেরিয়া, কর্ণমূল প্রদাহ, হাঁপানী, ব্রাইটিস, বাত জ্বর, অস্থি মজ্জা প্রা প্রকৃতি পীড়ায় উপযোগিতার সহিত ব্যবহৃত হয় বলিয়া ইহা ফি সাইকোসিস মায়াজনের উপর ক্রিয়াশীল ধারণা করা হয়।

শ্বাসকষ্টে বা ব্রঙ্কাইটিস:- শ্বাসকষ্টে বা ব্রঙ্কাইটিস জনিত হাঁপানিতে ইহার ব্যবহার- ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ব্রাইটিস জনিত হাঁপানীতে ইহার ব্যবহার আছে। শনি কাশি, হুপিং কাশি এবং উক্ত লক্ষণসমূহে এরোসল আকারে প্রস্তুত পেনিসিলিনের আগ (The Watery solution contains 25,000 units per cm) দিনে দুইবার আধঘন্টা করিয়া মুখ দিয়া নিঃশ্বাসের সহিত টানিয়া লইলে উপকার পাওয়া যায়।

চর্মপীড়ায় পেনিসিলিনামের ব্যবহার:- চর্মরোগেও ইহার ব্যবহার আছে। বিভিন্ন গ্রাম পজিটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে। মারাত্মক ইনফেকশান, দুরন্ত কার্বকেল, ক্ষৌরকৃত প্রভৃতিতে ইহার আভ্যন্তরীক ও মলম আকারে বাহ্যিক প্রয়োগ হয়।

চক্ষুরোগে:- অনেক দিন হইতেই চক্ষু রোগে এই ঔষধটি ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে। চক্ষু রোগে ইহা ভাল ঔষধ। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ইহা কাজ করিয়া থাকে। ইহা ছাড়া ইনফেকশানে, চক্ষু কর্ণিয়া, কনজাংটাইভার আঘাত প্রভৃতিতে সফলতার সহিত ব্যবহৃত হয়। ইহা একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক ঔষধ ।

বিষক্রিয়া:- অতি উচ্চ মাত্রায় মাংসে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশান অথবা মেরুরসে উচ্চ মাত্রায় পেনিসিলিন ইঞ্জেকশান ছাড়া যথার্থ বিষক্রিয়া বড় একটা দেখা যায় না। ভাব প্রবন লোকের এলার্জির লক্ষণ, র‍্যাস, আমবাত, চুলকানি প্রভৃতি হইতে দেখা যায় এবং এই ধরণের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়িয়া চলিতেছে। পূর্বের ন্যায় পেনিসিলিন লজেন্স ও মলমের ব্যবহার আজকাল আর নাই। কারণ ইহার ব্যবহারে মুখে ও চর্মে এলার্জি হইতে দেখা যাইতেছে।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- ক্লোরাম ফেনিকল, এসিড।

বৃদ্ধি:- প্রাতঃকালে, মাদকদ্রব্য সেবনে।

উপশম:- ঘুরিয়া বেড়াইলে, ঠাণ্ডা বাতাসে।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ক্যাক্ষর।
 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ