৬ষ্ঠ অধ্যায়
লক্ষণসমষ্টি
(Totality of Symptoms)
প্রশ্ন- লক্ষণসমষ্টি বলিতে কি বুঝায়?
উত্তর - লক্ষণসমষ্টি হইল ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র পথপ্রদর্শক। সম্পূর্ণ মানুষই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার লক্ষ্য। মানুষ দেহমন ও প্রাণ দিয়া গঠিত এক অনন্ত চৈতন্যময় সত্তা। মানুষ যখন পীড়িত হয়, কোন বিশেষ অঙ্গ পীড়িত হয় না। ব্যক্তিমানুষের তখনকার অবস্থার পরিচয় জানা যায় সেই অবস্থায় প্রকাশিত লক্ষণাবলীর সামগ্রিক রূপের মধ্যে রোগলক্ষণ রুগ্ন প্রকৃতির নিজের অবস্থা জানানোর এবং সাহায্য প্রার্থনা করিবার স্বাভাবিক ভাষা। যে সকল চিহ্ন বা লক্ষণের মাধ্যমে আমরা পীড়িত দেহীর অবস্থা জানিতে পারি তাহাদের সমষ্টিগতরূপকে আমর। লক্ষণসমষ্টি বলিয়া অভিহিত করি। লক্ষণসমষ্টি হইল আভ্যন্তরিক ব্যাধির যথার্থ ও বোধগম্য বহিঃপ্রকাশিত প্রতিচ্ছবি। কেবল মাত্র একটি লক্ষণ দ্বারা কোন রোগীর প্রকৃতি নির্ণয় ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা যায় না। অজ্ঞাত পীড়াকে জানিতে হইলে উহার প্রকাশিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যাবতীয় লক্ষণের সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন। অতএব চিকিৎসার নিমিত্ত লক্ষণসমষ্টিই কার্যত রোগ।
প্রশ্ন- রোগ চিকিৎসায় লক্ষণ সমষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি?
বা, চিকিৎসা কার্যে রোগ লক্ষণের ভূমিকা কি?
উত্তর : চিকিৎসার জন্য লক্ষণসমষ্টিই হইল রোগ। যতক্ষণ রোগ আরোগ্যযোগ্য অবস্থায় থাকে ততক্ষণ রোগলক্ষণের স্বকীয় বিশিষ্টতা বর্তমান থাকে। যখন রোগ থাকে না তখন লক্ষণসমষ্টিও থাকে না। আভ্যন্তরীণ রোগের পরিচয় জানিবার একমাত্র বিশ্বস্ত উপায় হইল লক্ষণ সমষ্টি। লক্ষণের মধ্যেই রোগের পশ্চিম থাকে। আর হোমিওপ্যাথি একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। ঔষধ নির্বাচনে তথা সদৃশ বিধানের চিকিৎসায় লক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও মূল্য অপরিসীম। ঠক ভাবে চিহ্নিত না হইলে চিকিৎসা কর্ম ব্যর্থ হইয়া থাকে। অন্য সব পদ্ধতিতে কিছু না। কিছু অনুমান বা কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়; হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্র এই বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করিয়াই প্রতিষ্ঠিত। হোমিওপ্যাথিতে রোগ লক্ষণ শুধু রোগের চিহ্ন নয়, কার্যত রোগ। সেজন্যই রোগ লক্ষণের ব্যঞ্জনা এত ব্যাপক ও গভীর। ঔষধ পরীক্ষা, রোগী পরীক্ষা, মেটিরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন, ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ চিকিৎসা কার্যের প্রতিটি স্তরেই রোগ লক্ষণ এক বিশিষ্ট স্থান দখল করিয়া আছে।
প্রশ্ন- কখন স্পষ্ট রোগ লক্ষণ পাওয়া যায় না?
উত্তর : যখন আন্তর প্রকৃতি কোন রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করে না বা করিতে পারে না তখন বুঝিতে হইবে যে প্রকৃতি কোন সাহায্য চায় না। অর্থাৎ হয় কোন প্রকৃত রোগ হয় নাই অথবা রোগ অসাধ্য স্তরে পৌছিয়া গিয়াছে। এই অবস্থা দেখা দেয় রোগের একেবারে প্রথম এবং শেষ অবস্থায়। রোগের প্রথম অবস্থায় দেহী আপন বলেই প্রতিকূল শক্তির মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকে। রোগী তখন সামান্য অসুস্থতা বোধ করে। সময় পাইলে দেহী স্বীয় শক্তিতেই সেই অবস্থা কাটিয়া উঠিতে পারে, তখন আর কোন বাহিরের সাহায্য প্রযোজন হয় না। রোগের একেবারে অন্তিম অবস্থায় যখন রোগ শক্তির আক্রমনে দেহী সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত তখন সে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করে। এই অবস্থায় স্পষ্ট রোগলক্ষণ পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন- রোগের সামগ্রিক প্রতিনিধি স্বরূপ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য প্রত্যক্ষণীয় লক্ষণাবলী কি এবং কিরূপে ঐ লক্ষণসমূহ সংগৃহীত হয়?
উত্তর : রোগলক্ষণ দেহীর রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যেক ব্যক্তিগত রোগী ক্ষেত্রে রোগীর দেহ ও মনের এবং স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে। জীবনীশক্তির এই রোগীর প্রকৃতি নির্ণয় ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা যায় না। অজ্ঞাত পীড়াকে জানিতে হইলে উহার প্রকাশিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যাবতীয় লক্ষণের সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন। অতএব চিকিৎসার নিমিত্ত লক্ষণসমষ্টিই কার্যত রোগ।
প্রশ্ন- রোগ চিকিৎসায় লক্ষণ সমষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি?
বা, চিকিৎসা কার্যে রোগ লক্ষণের ভূমিকা কি?
উত্তর : চিকিৎসার জন্য লক্ষণসমষ্টিই হইল রোগ। যতক্ষণ রোগ আরোগ্যযোগ্য অবস্থায় থাকে ততক্ষণ রোগলক্ষণের স্বকীয় বিশিষ্টতা বর্তমান থাকে। যখন রোগ থাকে না তখন লক্ষণসমষ্টিও থাকে না। আভ্যন্তরীণ রোগের পরিচয় জানিবার একমাত্র বিশ্বস্ত উপায় হইল লক্ষণ সমষ্টি। লক্ষণের মধ্যেই রোগের পশ্চিম থাকে। আর হোমিওপ্যাথি একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। ঔষধ নির্বাচনে তথা সদৃশ বিধানের চিকিৎসায় লক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও মূল্য অপরিসীম। ঠক ভাবে চিহ্নিত না হইলে চিকিৎসা কর্ম ব্যর্থ হইয়া থাকে। অন্য সব পদ্ধতিতে কিছু না। কিছু অনুমান বা কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়; হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্র এই বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করিয়াই প্রতিষ্ঠিত। হোমিওপ্যাথিতে রোগ লক্ষণ শুধু রোগের চিহ্ন নয়, কার্যত রোগ। সেজন্যই রোগ লক্ষণের ব্যঞ্জনা এত ব্যাপক ও গভীর। ঔষধ পরীক্ষা, রোগী পরীক্ষা, মেটিরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন, ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ চিকিৎসা কার্যের প্রতিটি স্তরেই রোগ লক্ষণ এক বিশিষ্ট স্থান দখল করিয়া আছে।
প্রশ্ন- কখন স্পষ্ট রোগ লক্ষণ পাওয়া যায় না?
উত্তর : যখন আন্তর প্রকৃতি কোন রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করে না বা করিতে পারে না তখন বুঝিতে হইবে যে প্রকৃতি কোন সাহায্য চায় না। অর্থাৎ হয় কোন প্রকৃত রোগ হয় নাই অথবা রোগ অসাধ্য স্তরে পৌছিয়া গিয়াছে। এই অবস্থা দেখা দেয় রোগের একেবারে প্রথম এবং শেষ অবস্থায়। রোগের প্রথম অবস্থায় দেহী আপন বলেই প্রতিকূল শক্তির মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকে। রোগী তখন সামান্য অসুস্থতা বোধ করে। সময় পাইলে দেহী স্বীয় শক্তিতেই সেই অবস্থা কাটিয়া উঠিতে পারে, তখন আর কোন বাহিরের সাহায্য প্রযোজন হয় না। রোগের একেবারে অন্তিম অবস্থায় যখন রোগ শক্তির আক্রমনে দেহী সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত তখন সে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করে। এই অবস্থায় স্পষ্ট রোগলক্ষণ পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন- রোগের সামগ্রিক প্রতিনিধি স্বরূপ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য প্রত্যক্ষণীয় লক্ষণাবলী কি এবং কিরূপে ঐ লক্ষণসমূহ সংগৃহীত হয়?
উত্তর : রোগলক্ষণ দেহীর রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যেক ব্যক্তিগত রোগী ক্ষেত্রে রোগীর দেহ ও মনের এবং স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে। জীবনীশক্তির এই পারে। যে সমস্ত চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমরা কোন ঔষদের রোগোৎপাদিকা শক্তি তথা আরোগ্যদায়িনী শক্তির পরিচয় পাই তাহাদের সমষ্টিগত রূপকে আমরা সেই ঔষধের লক্ষণসমষ্টি বলি। লক্ষণসমষ্টি রোগের প্রতিচ্ছবি, আবার লক্ষ ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি। তাই ঔষধ নির্বাচনের ভিত্তি এই সমষ্টি। অর্থাৎ রোগান্ত জীবনীশক্তি প্রতিকারের জন্য লক্ষণ সমষ্টি প্রকাশের মাধ্যমে যে আবেদন জানায়, চিকিৎসক এই লক্ষণসমষ্টি প্রত্যক্ষ করিলেই ঔষধের চিত্রটি তাঁহার মানসপটে উদিত হয়। এই লক্ষণসমষ্টির উপর ভিত্তি করিয়াই সদৃশ বিধান অনুসারে সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন ঔষধটি নির্বাচন ও প্রয়োগ করেন। যদি রোগীতে লক্ষনরাজির প্রকাশ না ঘটে তাহা হইলে ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব হইয়া পড়িত। প্রকাশিত লক্ষণরাজিল দ্বারা গঠিত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম রোগের সদৃশ চিত্রই প্রতিকারক ঔষধ নির্বাচনের অদ্বিতীয় উপায় এবং প্রকৃতির মধ্যে এই পথটিই সকল বিভাগে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় পরীক্ষিত। তাই বলা যায় লক্ষণসমষ্টি ছাড়া প্রয়োজনীয় প্রতিকারক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনের আর অন্য কোন পথ নাই এবং হোমিওপ্যাথিকে একমাত্র লাক্ষণিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলা হয়।
প্রশ্ন- প্রতিটি লক্ষণগুচ্ছ এক একটি রোগের পূর্ণ চিত্র-ব্যাখ্যা কর।
বা, লক্ষণসমষ্টিকে রোগীর জীবন্ত প্যাথলজি বলা হয় কেন?
উত্তর : মানুষের কোন এক অঙ্গকে বা তার সমস্ত অঙ্গসমষ্টিকে যেমন মানুষ বলা চলে না, মানুষ তার চেয়ে বেশী কিছু। তেমনি দুই একটি রোগলক্ষণকে কিংবা সমস্ত রোগলক্ষণের যোগফলকে লক্ষণ সমষ্টি বা রোগের প্রতিচ্ছবি বলা চলে না। লক্ষণসমষ্টি শুধুমাত্র কতকগুলি চিহ্ন ও লক্ষণের সমষ্টি নয়, লক্ষণসমষ্টির মাধ্যমে একটা আইডিয়া মূর্ত হইয়া ফুটিয়া উঠে। সেই মূর্তি পীড়িত প্রাণসত্তার মূর্তি। লক্ষণসমষ্টি তাই নিজেই এক পূর্ণাঙ্গ লক্ষণ, যাহা রোগীরই লক্ষণ, রোগীর চিত্র। এইদিক হইতে বিচার করিলে লক্ষণ সমষ্টিকে রোগীর জীবন্ত প্যাথলজি বলা চলে। সেই মূর্তির মধ্যে একাধারে থাকে রোগের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত কতকগুলি চিহ্ন ও লক্ষণ যাহা রোগের প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদিগকে পরিচয় করাইয়া দেয়। এই সকল লক্ষণ যারা আমরা এক রোগীকে অন্য রোগী হইতে আলাদা করিয়া নিতে পারি। তাই প্রতিটি লক্ষণ সমষ্টি এক একটি রোগের পূর্ণ চিত্র।
প্রশ্ন- লক্ষণ সমষ্টি ঔষধের প্রতিচ্ছবি-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : রোগীর ক্ষেত্রে যেমন লক্ষণসমষ্টি কথাটি প্রযোজ্য, ঔষধের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি প্রযোজ্য। প্রতিটি ঔষধ সুস্থ দেহে কতকগুলি লক্ষণ সৃষ্টি করে। এই সমস্ত লক্ষণের মাধ্যমেই আমরা ঔষধের প্রকৃত পরিচয় জানিতে পারি। যে সমস্ত চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমেই আমরা কোন ঔষধের রোগোৎপাদিকা শক্তি তথা আরোগ্যদায়িনী শক্তির পরিচয় পাই তাহাদের সমষ্টিগত রূপকে আমরা সেই ঔষধের লক্ষণসমষ্টি বলি। ঔষধের লক্ষণসমষ্টি হইল ঔষধের পরিচয়বহ চিত্র। বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিতে ঔষধ বিভিন্ন লক্ষণগুচ্ছ সৃষ্টি করে। এই সমস্ত লক্ষণগুচ্ছের সম্মিলিত রূপই সেই ঔষধের পূর্ণ লক্ষণসমষ্টি । মূলকথা হইল কোন ব্যক্তিতে কোন বিশেষ অবস্থায় যে লক্ষণগুচ্ছ সৃষ্টি হয় সেই ক্ষেত্রে তাহা সেই রোগের এবং তার ঔষধের লক্ষণসমষ্টি। আসল কথা হইল রোগীতে প্রকাশিত লক্ষনাবলী কোন ঔষধের মূল চরিত্রের পরিচয়বহন করে এবং এই সমস্ত লক্ষণ সমন্বিত একটি মাত্র ঔষধের দিকে অংগুলি নির্দেশ করে। তাই লক্ষণসমষ্টি একদিকে রোগের অন্য দিকে ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন- আদর্শ লক্ষণসমষ্টিতে কোন তিনটি বিষয় থাকা একান্ত অপরিহার্য?
উত্তর : আদর্শ লক্ষণসমষ্টিতে তিনটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ইংগিত থাকা আবশ্যক।
১) রোগের প্রকৃতি : শত্রু শক্তির সহিত মোকাবেলা করিতে হইলে যেমন শত্রুর শক্তির পরিমাণ, তাহার প্রকৃতি, অধিকৃত স্থানের পরিমাণ, আক্রমণের পরিণতি প্রভৃতির পরিচয় জানা অপরিহার্য, তেমনি রোগ শক্তির সহিত মোকাবেলা করিতে হইলে রোগের গতি, প্রকৃতি, শক্তি, দেহের আক্রান্ত অংশের অবস্থান এবং গুরুত্ব ও সম্ভাব্য পরিণতি সম্বন্ধে পূর্ব হইতেই অবহিত থাকা প্রয়োজন । তাহা ছাড়া অচির রোগের মূল কারণ প্রভৃতি যাবতীয় তথ্য জানা আবশ্যক। লক্ষণ সমষ্টিতে এই সকল তথ্যের বিস্তারিত বিবরণ থাকা বিশেষ প্রয়োজন।
২) রোগীর প্রকৃতি ঃ রোগশক্তির সহিত সার্থক ভাবে মোকাবেলা করিতে হইলে রোগীকে ব্যক্তিগত অবস্থার সাম্যক পরিচয় জানা অত্যাবশ্যক। এইজন্য রোগীর ধাতু প্রকৃতি, স্বভাব, অভ্যাস, জীবনযাপন প্রণালী এবং চির রোগবীজজনিত তাহার অন্তর্নিহিত দূর্বলতা জানা প্রয়োজন। লক্ষণসমষ্টিতে এইসব তথ্যের পূর্ণ বিবরণ আবশ্যই থাকা চাই।
৩) ঔষধের প্রকৃতি : লক্ষণসমষ্টি অবশ্যই আমাদের ভেষজ ভান্ডার, যাহা রোগশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্রের ভান্ডার হইতে এমন একটি ঔষধের সন্ধান দিবে যাহা রোগশক্তির সমতুল্য শক্তিশালী এবং রোগশক্তির মোকাবেলা করার মত সামর্থ রাখে।
প্রশ্ন- লক্ষণসমষ্টি রোগের সূচনা হইতে পরিণাম পর্যন্ত এমন এক কাহিনী যাহার মধ্যে রোগ বিনাশের পথের নির্দেশ থাকে-আলোচনা কর।
বা, রোগলক্ষণ দুরীভূত হইলে রোগ দূর হয়-প্রমাণ কর।
বা, লক্ষণসমষ্টি দূর হওয়ার পরও রোগ থাকে কি?
উত্তর : লক্ষণসমষ্টি কথাটির ব্যঞ্জনা ব্যাপক ও গভীর। লক্ষণসমষ্টি বলিতে আমরা বুঝি কোন বিশেষ পটভূমিকায় (ব্যক্তি বিশেষের বিশেষ ধাতু প্রকৃতি প্রভৃতি) পরিচায়ক লক্ষণসহ অন্যান্য লক্ষণ সমূহের এমন এক সমাবেশ যাহা রোগের সার্বিক পরিচয় বহন করে এবং এই সমস্ত লক্ষণ সমন্বিত একটি মাত্র ঔষধের দিকে অংগুলি নির্দেশ করে। অর্থাৎ রোগের সার্বিক পরিচয় জানার জন্য যাহা কিছু প্রয়োজন লক্ষণসমষ্টি আমাদিগকে তাহা জানাইয়া দেয়। একদিকে লক্ষণসমষ্টি রোগের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে ইহা ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি। তাই সদৃশ লক্ষণমতে ঔষধ প্রয়োগে রোগলক্ষণই রোগের অস্তিত্বের পরিচয় বহন করে। সদৃশ ঔষধ প্রয়োগে একে একে রোগীর সকল লক্ষণই দূরীভূত হয় এবং রোগের উপশম আরম্ভ হয়। দেহের অভ্যন্তরে যদি রোগ শক্তির বিন্দুমাত্রও বিদ্যমান থাকে তাহা হইলে ইহার কোন না কোন লক্ষণ রোগীর দেহে, মনে, অনুভূতিতে প্রকাশিত হইবেই। লক্ষণ মানেই রোগ। লক্ষণের অবসানে রোগের অবসান অবশ্যম্ভাবী। তাই লক্ষণ অবসানের পরও রোগ থাকে এইরূপ ধারণ করা অসংগত ও অবৈজ্ঞানিক। শুধু তাহাই নয় পৃথিবীতে কোন অভিজ্ঞতা দ্বারাই প্রমাণ করা যাইবে না যে লক্ষণ অপসারিত হওয়ার পরও রোগ থাকিয়া যায়। লক্ষণসমষ্টির মধ্যেই রোগের বিনাশের পথের নির্দেশ থাকে ।
প্রশ্ন- লক্ষণের মূল্যায়ন পদ্ধতি আলোচনা কর।
উত্তর : লক্ষণসমূহের সঠিক মূল্যায়নের উপরই নির্ভর করে রোগের প্রকৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটন। গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণসমষ্টিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ব্যাপক বা সর্বাঙ্গীক লক্ষণ, স্থানিক লক্ষণ এবং সাধারণ লক্ষণ। মূল্যমানের ক্রমঅনুযায়ী এই তিন বিভাগের অন্তর্গত লক্ষণসমূহকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এই তিন শ্রেনীতে ভাগ করা হয়।
প্রথম শ্রেণীর লক্ষণ : সেগুলিকে বলা হয় যে সমস্ত লক্ষণ সমস্ত বা অধিকাংশ প্রভার পরীক্ষান্তে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, যেগুলি পরবর্তী পরীক্ষাতেও প্রমাণিত হইয়াছে এবং যেগুলির যথার্থতা রুগ্ন ব্যক্তির উপর পরীক্ষা করিয়া যাচাই করা হইয়াছে।
দ্বিতীয় শ্রেণীর লক্ষণ : বলিতে আমরা সেই সবলক্ষণ বুঝিয়া থাকি যেগুলি সমস্ত প্রভার লিপিবদ্ধ করেন নাই কিন্তু যে গুলির যথার্থতা অনেক সময় প্রুভিং এ বা রোগীর উপর প্রয়োগ করিয়া প্রমাণ করা হইয়াছে।
তৃতীয় শ্রেনীর লক্ষণ ও সেই গুলিকে বলা হয় যেগুলি দুই একজন মাত্র প্রতার লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, কয়েক ক্ষেত্রে তাহা অনুসরণ করিয়া রোগের আরোগ্য সাধনও সম্ভব হইয়াছে, কিন্তু যাহার যথার্থতা এখনও সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয় নাই। কিছু লক্ষণ হিসাবে যার দাবী একেবারে উড়াইয়া দেওয়া যায় না।
ব্যাপক, স্থানিক ও সাধারণ লক্ষণের মূল্যমানের ক্রম অনুযায়ী ডাঃ কেন্ট যে পদ বিন্যাস করিয়াছেন তাহা নিম্নে উদ্ধৃত করা গেল। ব্যাপক বা সর্বাঙ্গীক লক্ষণ
১। প্রথম শ্রেনীর লক্ষণ :
(ক) বিরল এবং অদ্ভুত ধরণের লক্ষণ।
(খ) ঔষধের বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক লক্ষণ ।
(গ) রোগীর ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ভালবাসা, ঘৃণা, ভয় প্রভৃতি প্রকাশ করে এই সব লক্ষণ।
(ঘ) রোগীর বোধ শক্তি ও স্মৃতিশক্তির বিকৃতিজ্ঞাপক লক্ষণ
২। দ্বিতীয় শ্রেনীর লক্ষণ :
(ক) বিবেক বুদ্ধি ও যুক্তিশীল মনের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত লক্ষণ ।
(খ) পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রতি দেহীর সার্বদৈহিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপক লক্ষণ।
(গ) আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাবের প্রতি, খাদ্যদ্রব্যের প্রতি, উত্তাপের তারতম্যের প্রতি, অবস্থান, চলন প্রভৃতির প্রতি দেহীর প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপক লক্ষণ ।
(ঘ) স্নানে, জলে ভিজিলে, চাপে, স্পর্শে, ঘর্ষণে, ঝাঁকুনিতে হ্রাসবৃদ্ধি হয়, দিবা, মাত্রা বা ঋতু অনুযায়ী হ্রাসবৃদ্ধি হয়, নিদ্রা ও স্বপ্ন বিষয়ক এই জাতীয় লক্ষণ।
(ঙ) দেহের পার্শ্বসূচক লক্ষণ যেমন- ডানদিক হইতে বামদিকে আড়াআড়ি ভাবে, একবার ডানদিকে, আবার বামদিকে এইরূপ পর্যায়ক্রমিক লক্ষণ, অনবরত স্থান পরিবর্তনশীল লক্ষণ, অঙ্গ বিশেষে রক্ত সঞ্চার, সংকোচন, বিবর্ণতা, ক্ষীনতা প্রভৃতি জ্ঞাপক লক্ষণ।
(চ) পঞ্চেন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত লক্ষণ, যেমন- নানারকম গন্ধে পীড়িত হওয়া, রান্নার গন্ধে বমির উদ্রেক, আলো, গন্ধ, শব্দ প্রভৃতির প্রতি অতিরিক্ত সচেতনশীলতা জ্ঞাপক লক্ষণ ।
(ছ) দৈহিক ক্ষুধা জ্ঞাপক লক্ষণ ।
(জ) যৌন সম্পর্কিত লক্ষণ ।
(ঝ) দেহ নিঃসৃত স্রাব বিষয়ক লক্ষণ।
(ঞ) সময় ও অবস্থা অনুযায়ী হ্রাস বৃদ্ধির লক্ষণ
৩) তৃতীয় শ্রেনীর লক্ষণ ঃ
(ক) রোগের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত সাধারণ লক্ষণ যেমন- মাথা ধরা, অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ, জ্বর প্রভৃতি । (খ) ঔষধের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত সাধারণ লক্ষণ, যেগুলি অনেক ঔষধের প্রুভিং এ পাওয়া গিয়াছে।
স্থানিক লক্ষণ
(১) প্রথম শ্রেনীর লক্ষণ :
এই সকল লক্ষণ বিরল এবং অস্বাভাবিক, যেমন-বেদনাহীন প্রদাহ, জ্বরবিহীন পিপাসা, পিপাসাবিহীন জ্বর, উদ্ভেদবিহীন চুলকানি প্রভৃতি ।
(২) দ্বিতীয় শ্রেনীর লক্ষণ : আঙ্গিক লক্ষণের হ্রাসবৃদ্ধি ।
(৩) তৃতীয় শ্রেনীর লক্ষণ : দেহের অংশ বিশেষের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত সাধারণ
সাধারণ লক্ষণ :
যে সমস্ত লক্ষণ বিভিন্ন ঔষধের প্রুভিং এ পাওয়া গিয়াছে কিংবা যে সমস্ত লক্ষণ সাধারণ রোগাবস্থায় দেখা যায় সেগুলি এই শ্রেণীর অন্তর্গত। যেমন- মাথা ব্যথা, উদরাময় ইত্যাদি।
0 মন্তব্যসমূহ