হার্ট ব্লক - Heart Block, চতুর্থ বর্ষ - প্যাকটিস অব মেডিসিন

  হার্ট ব্লক  
Heart Block





হার্ট ব্লক সংজ্ঞা:- হৃদস্পন্দন প্রথমে অরিকেলে শুরু হয়। এক টুকরা মাংসপেশী দ্বারা সেই স্পন্দন সমস্ত ভেন্ট্রিকলে ছড়াইয়া পড়ে। এই মাংসপেশীকে আটক করিয়া যদি স্পন্দন না যাইতে দেওয়া হয় তাহা হইলে অরিকেল মিনিটে ৭০ বার স্পন্দিত হয় কিন্তু ভেন্ট্রিকল তাহার স্বাভাবিক ২৮/৩০ বিট দিয়া চলে। হয়ত বা মধ্যে মধ্যে কিছুক্ষণ থামিয়া যাইবে। যে কোন কারণ বশতঃ ভালভের পীড়া বা যে কোন পীড়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ব্যাহত হইলে যে বিঘ্ন সৃস্টি হয় তাহাকে হার্ট ব্লক বলে।

হার্ট ব্লক শ্রেণী বিভাগ:- শ্রেণীবিভাগ- হার্ট ব্লক প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-
(১) মৃদু বা মাইল্ড ব্লাক- সাইনাস নোড হইতে উদ্দীপনা অলিন্দ বা অরিকল হইতে ভেন্ট্রিকল বা নিলয়ে পৌছাইতে দেরী হয় এবং ইহার ফলে একটি স্পন্দন লুপ্ত হয়।
২) আংশিক বা পার্সিয়াল ব্লক- ইহাতে অলিন্দ বা অরিকল হইতে উদ্দীপনা আংশিকভাবে নিলয় বা ভেন্ট্রিকলে পৌঁছায়। নাড়ী স্পন্দন ৩৫ বা তাহার উপরে হয়।
৩) পূর্ণ বা কমপ্লিট ব্লক- ইহাতে অলিন্দ বা অরিকল হইতে উদ্দীপনা নিলয় বা ভেন্ট্রিকলে আদৌ পৌছায় না। ভেন্ট্রিলের স্পন্দন হার মিনিটে ৩৬ বা তাহার নিচে হয়। অবস্থান ভেদে হার্ট ব্লক চার প্রকার। 
যথা-
১) সাইনো এন্ট্রিয়াল হার্ট ব্লক ।
২) এন্ট্রি ও ভেন্ট্রিকুলার হার্ট ব্লক।
৩) রাইট বা লেফট বান্ডল ব্রাঞ্চ হার্ট ব্লক ।
৪) আরবো রাইজেশন হার্ট ব্লক।

হার্ট ব্লক ব্লকের কারণতত্ত্ব:-
১) অজ্ঞানকারী ঔষধ প্রয়োগ, শল্য চিকিৎসা প্রভৃতি 
২) বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রকরণ দ্বারা ।
৩) হৃদযন্ত্র ঘটিত কারণে নিলয়ের সিস্টোলজনিত সংকোচনের অভাব; নিলয় বা পেশীর অনৈক্য স্বতন্ত্র সংকোচনের ফলে।
৪) নাড়ী বা হৃদযন্ত্রের স্পন্দন থামিয়া যাওয়া। 
৫) মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হইলে।
৬) হৃদযন্ত্রের কলার মধ্যে রক্ত জমার ফলে ফুসফুস ধমনীর বা মহাধমনীর আকস্মিক স্ফীতি ঘটিলে।
৭) কোনও কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হইলে।
৮) ঔষধের বিষক্রিয়ার ফলে।

লক্ষণাবলী:- এই পীড়ায় নাড়ী ধীর গতি হইলে মাথাঘোরা, দুর্বলতা বা ক্ষণস্থায়ী মূর্ছা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় সামান্য পরিশ্রমেই প্রবল শ্বাসকষ্ট, বুকে বেদনা বা বক্ষশূণ প্রকাশ পায়। কমপ্লিট হার্ট ব্লক হইলে মারাত্মক লক্ষণ প্রকাশ পায়, হৃদক্রিয়া সাময়িকভাবে স্তব্ধ হইয়া যায়। ইহার পরিণাম ফল হিসাবে মাথাঘোরা, মূর্ছা প্রভৃতি দেখা দেয়। সাংঘাতিক ক্ষেত্রে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হইয়া যায় এবং মৃগীর ন্যায় আক্ষেপ হইতে পারে। রোগী বিবর্ণ, মুখমণ্ডলী নীলাভ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ঘড়ঘড়ানি শব্দ হয়। ভেন্ট্রিকলদ্বয় সম্পূর্ণ স্তব্ধ হইয়া যায় এবং জুগুলার শিরা মধ্যে অরিকলের স্পন্দন দেখা দেয়। যদি এই অবস্থায় ভেন্ট্রিকল ক্রিয়াশীল হয়, তাহা হইলেই রোগীর জ্ঞান ফিরে এবং রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসে।

জটিলতা:- মৃদু আংশিক বা পূর্ণরক অবস্থা অনুযায়ী নানারূপ জটিলতা দেখা দেয়। শিরঃঘূর্ণন, দুর্বলতা বা ক্ষণস্থায়ী মূর্ছা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় প্রবল শ্বাসকষ্ট বা বক্ষঃশূল প্রকাশ পায়। আংশিক ব্লক বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলে হৃদক্রিয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ হইয়া যায়। সাংঘাতিক ক্ষেত্রে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হইয়া যায়। রোগী বিবর্ণ, মুখমণ্ডল নীলাভ হয়।

ভাবীফল:- তরুণ সংক্রামক জ্বরে যদি এই অবস্থা দেখা দেয় তবে মৃত্যুর আশংকা কম। আর যদি অজ্ঞানাবস্থায় কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর হয় তবে রোগী মৃত্যুবরণ করে। হৃদপেশীর দুর্বলতা হেতু বা সিফিলিসজনিত পীড়া হইলে ভেন্ট্রিকলের নিজস্ব গতি দ্বারা রোগী সাময়িকভাবে জীবিত থাকিতে পারে।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে। সকল প্রকার মানসিক ও দৈহিক পরিশ্রম ত্যাগ করিতে হইবে। ব্যথা বেদনা কমিলে ধীরে ধীরে উঠা-বসা করা যাইবে। রোগী কিছুটা সামলাইলে অল্প অল্প লবণবিহীন পথ্য ব্যবস্থা করা যায়।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) ক্যাকটাস গ্রান্ডি রোগী যেন দমবন্ধ হইয়া মূর্ছার মত হইয়া পড়ে, ধর্মের সহিত নাড়ীর গতির হ্রাস হয়। বামপার্শ্বে শয়ন করিতে কষ্ট, বুক ধড়ফড় করে। বুকে তীব্র বেদনা, ধীরে ধীরে বর্ধিত হইয়া ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। রোগী মনে করে তাহার বুক যেন কেহ সবলে মুঠা করিয়া চাপিতেছে, আবার ছাড়িয়া দিতেছে।
২) ডিজিট্যালিস- হৃদপীড়াসহ অতিশয় দুর্বলতা, চর্ম, চক্ষুর পাতা, ওষ্ঠ, নীলবর্ণ হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত ও কষ্টকর, বক্ষস্থলে অস্বস্তি বোধ, হৃদপিণ্ডের অবসন্নতা, নাড়ী দুর্বল, অনিয়মিত ও ধীর, কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর, বুকে সুঁচ ফোটানো ব্যথা, রোগী মনে করে সামান্য নড়াচড়াতেই দমবন্ধ হইয়া যাইবে ।
৩) জিঙ্কাম মেট— কার্ডিয়াক এরিয়ার স্ফীতি ও স্পর্শে অতিশয় বেদনাবোধসহ দুরন্ত হৃদস্পন্দন, হৃদপিণ্ডের মধ্যে সহসা ধাক্কা ও ঝাঁকি বোধ। হৃদপিণ্ড যেন ছিঁড়িয়া ফেলিতেছে এমন বেদনা, হৃদপিণ্ডের আক্ষেপিক স্পন্দন।
৪) একোনাইট ন্যাপ- হৃদপিণ্ডে বা ফুসফুসে রক্ত জমিয়া বুকে বেদনা, বুক ধড়ফড়ানি, শ্বাসকষ্ট, চলাফেরা করিতে যন্ত্রণার বৃদ্ধি, হৃদকম্পের প্রাবল্য। সূচীভেদ্য। যন্ত্রণা সেজন্য রোগী সোজা হইয়া দাঁড়াইতে বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট।
৫) আর্জেন্ট নাইট্রিকাম- শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, বুক ধড়ফড়ানি, কম্পন, রোগী ডানদিকে শুইতে অক্ষম, তাহাতে হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি। বুকের মধ্যে ছোট স্থানে বেদনা, রাত্রে হৃদশূল বৃদ্ধি। শুইয়া থাকিলে উপসর্গের বৃদ্ধি। দ্রুত হাঁটিলে উপশম । ইহা ছাড়া লক্ষণানুসারে এনাকার্ডিয়াম, এপিস মেল, অরাম মেট, কনভ্যালেরিয়া, লাইকোপোডিয়াম ভার্জি, ক্রাটেগাস, স্পাইজেলিয়া, ক্যালমিয়া প্রভৃতি ঔষধও এই পীড়ায় ব্যবহৃত হয়।




হার্ট ফেল বা হৃদনিষ্ক্রিয়া (Heart Failure)


হার্ট ফেল সংজ্ঞা:- দেহের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনমত পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করা হার্টের প্রধান কাজ। এই রক্ত সরবরাহের কাজ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে হঠাৎ বা ধীরে ধীরে যখন হার্ট করিতে অসমর্থ হয় তখনই বুঝিতে হইবে হার্ট ফেলিওর হইল। হার্ট ফেল বলিতে হার্টের মাংসপেশীর কার্যে অক্ষমতা, ক্রিয়াহানি বা শক্তির বিলোপ বুঝায়। কোন পীড়ার কারণে হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক ক্ষমতার হ্রাস পাওয়াকে হার্ট ফেল বলে।

শ্রেণীবিভাগ:- হার্ট ফেল প্রধারণতঃ দুই প্রকার। যথা-
১) একিউট হার্ট ফেলিওর। 
২) ক্রনিক হার্ট ফেলিওর।

আক্রান্ত স্থান অনুসারে হার্ট ফেলিওর ২ প্রকার। যথা-
১) লেফট হার্ট ফেলিওর ।
২) রাইট হার্ট ফেলিওর।

আবার অবস্থা জনিত হার্ট ফেলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) রক্তাধিক্য বশত (কনজেসটিভ। 
২) হৃদশূল জনিত (এনজাইন্যাল) ।

কারণতত্ত্ব:- নিম্নলিখিত কারণে হার্ট ফেল ঘটিয়া থাকে। 
১) হার্টের মাংসপেশী, মায়োকার্ডিয়ামের ক্রিয়হানির ফলে।
২) কারোনারি নাড়ীর ছিদ্র সরু হইলে হৃদপিণ্ড খুব কম রক্ত পায়, এই অবস্থায় কাজ করিতে গিয়া এনজাইনা পেক্টোরিসের লক্ষণ দেখা দিলে। 
৩) করোনারি নাড়ীর ছিদ্রের ভিতর রক্ত হঠাৎ জমাট বাঁধিয়া স্রোত বন্ধ হইয়া গেলে।
৪) হৃদপিণ্ডের তরুণ পীড়া যেমন বাতজ্বর হইলে।
৫) নিমোনিয়া, ডিপথিরিয়া, প্রভৃতি সংক্রামক পীড়ার আক্রমণে ।
৬) সিফিলিস, এন্ডোকার্ডাইটিস প্রভৃতি পুরাতন পীড়ার প্রকোপ।
৭) সুরা, অন্য কোন বিষ, থাইরয়েড গ্রন্থির বিষাক্ততা, প্রভৃতির ফলে। 
৮) হৃদ ভালভের অপকারিতা ও পেরিকার্ডিয়াম ছিঁড়িয়া যাওয়ার ফলে।
৯) হার্ট এর অনিয়মিত সংকোচনে এওটাতে রক্ত কম গেলে এবং vital organ গুলি কম পাইলে।
১০) হার্ট ব্লক হওয়ার ফলে।

লক্ষণাবলী:- হার্ট ফেলিওরের সূত্রপাতে বাহ্যিক লক্ষণসমূহ যত্নসহকারে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যেমন-
১) সামান্য পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
২) বিকালের দিকে ক্রমে ক্রমে শ্বাসকষ্টের বৃদ্ধি । 
৩) ফুসফুসের শোথ-গভীর নিদ্রাকালে ও ভোরে হঠাৎ প্রবল শ্বাসকষ্টের ফলে ছটফট করা।
৪) দমবন্ধ ভাব এবং মুখমণ্ডল ও সমস্ত শরীর নীল হইয়া যাওয়া।
৫) যকৃতের বৃদ্ধি ও যকৃতে চাপ দিলে বেদনাবোধ ।
৬) মূত্রকৃচ্ছতার অভাব ।
৭) হার্ট ফেলের লক্ষণ হিসাবে সামান্য সামান্য জ্বর লক্ষণ দেখা দেওয়া। 
৮) বাম ভেন্ট্রিকলের ফেলিওর জনিত পালমোনারী কনজেসনে একমাত্র লক্ষণ হইল অনিদ্রা ।
৯) রক্তচাপ কমিয়া যাওয়া।
১০) মুক্ত বায়ুর জন্য আঁকুপাঁকু করা।
১১) চর্মের উপর শিরাসমূহ অদৃশ্য হইয়া যাওয়া। 
১২) হস্তপদের শীতলতা, ক্রমশঃ সর্বাঙ্গ শীতল হইয়া যায়।
১৩) শরীরে ঘর্ম হয় এবং মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হইয়া যায় ।

রোগনির্ণয়:-
১) রোগীর লক্ষণ দেখিয়া।
২) ইসিজি করিলে ভেন্ট্রিকুলার গ্রাফিকের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
৩) ইকো কার্ডিওগ্রাফিতে ভেন্ট্রিকল বড় দেখা যায় ।
৪) বুক এক্সরে করিলে তাহাতে হার্টের শ্যাডো বড় দেখায়। ব্রংকো ভাসকুলার মার্কিং প্রমিনেন্ট দেখায়।
৫) প্রস্রাব পরীক্ষায় সামান্য পরিমাণে এলবুমিন পাওয়া যায় এবং R. B. C কাষ্ট থাকে।

হঠাৎ মৃত্যুর কারণ:-
১) সুস্থ সবল ব্যক্তির হঠাৎ মৃত্যু হইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হইল করোনারী ধমনীর অবরোধ।
২) অনেক সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এনুজিরম ফাটিয়া মস্তিষ্কের এরাক্রয়েডের নীচে বা পেরিকার্ডিয়ামের মধ্যে রক্তস্রাব হইলে । 
৩) মায়োকার্ডিয়ামের ক্র্যাম্প, আক্ষেপ ও সাঁটিয়া ধরার কারণেও হঠাৎ মৃত্যু হয়।
৪) হঠাৎ রক্ত চাপ বৃদ্ধি পাইয়া জখমী হার্টকে স্তব্ধ করিয়া দিলে, সিম্প্যাথিটিক নার্ভের অকস্মাৎ উত্তেজনা বশতঃ হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।
৫) ভেন্ট্রিকলের ফিব্রিলেশন বশতঃ বা হৃদযন্ত্রের যে স্থান হইতে কুঞ্চন ক্রিয়ার সর্দি জন্ম হয় সেই স্থানের শুদ্ধভাবের ফলেও হঠাৎ মৃত্যু হইতে পারে।

জটিলতা:- হার্ট ফেলের জটিলতাগুলি নিম্নরূপ-
১) একিউট রেনাল ফেলিওর ।
২) কার্ডিওজেনিক শক।
৩) পালমোনারী ইডিমা ।
৪) ফাইব্রোসিস অব এন্ডোকার্ডিয়াম প্রভৃতি ।

আনুষঙ্গিক চিকিৎসা:- হার্ট ফেলের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে হইবে। আঘাত, শব্দ, পানিতে ডোবা প্রভৃতি কারণে শ্বাসক্রিয়া যদি হঠাৎ বন্ধ হইয়া যায় তখন আধঘন্টা ধরিয়া হার্ট মেসেজ করা উচিত। রোগীকে বিছানায় শোয়াইয়া পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে। এনিমিয়া, সিফিলিস, ডিপথিরিয়া প্রভৃতি রোগের কারণে হার্ট ফেল হইলে ঐ রোগের চিকিৎসা করিতে হইবে। ভালভের ত্রুটির জন্য হার্ট ফেল হইলে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশন করিলে সুফল পাওয়া যায়। হার্ট ফেলের লক্ষণ পাওয়া মাত্র রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে এবং শ্বাসকষ্ট হইলে অক্সিজেন দিতে হইবে। ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিছানায় শুইয়া থাকিতে হইবে।

ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) একোনাইট ন্যাপ- হৃদপিণ্ডে বা ফুসফুসে রক্ত জমিয়া বুকে বেদনা, বুক ধড়ফড়ানি, শ্বাসকষ্ট, চলাফেরা করিতে যন্ত্রণার বৃদ্ধি, হৃদকম্পের প্রাবল্য, মানসিক উদ্বেগ। সূচীভেদ্য যন্ত্রনা, সেজন্য রোগী সোজা হইয়া দাঁড়াইতে বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস, নিতে কষ্ট।
২) ক্যাক্টাস গ্রান্ডি- রোগী যেন দম বন্ধ হইয়া মূর্ছার মত হইয়া পড়ে। ঘর্মের সহিত নাড়ীর গতির হ্রাস হয়। বাম পার্শ্বে শয়ন করিতে কষ্ট, বুক ধড়ফড় করে। বুকে তীব্র বেদনা, ধীরে ধীরে বর্ধিত হইয়া ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। রোগী মনে করে তাহার বুকে যেন কেহ সবলে মুঠা করিয়া চাপিতেছে, আবার ছাড়িয়া দিতেছে।
৩) ডিজিট্যালিস- হৃদপীড়াসহ অতিশয় দুর্বলতা, চর্ম, চক্ষুর পাতা, ওষ্ঠ, নখ নীলবর্ণ হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত ও কষ্টকর, বক্ষস্থলে অস্বস্তিবোধ, হৃদপিণ্ডের অবসন্নতা, নাড়ী দুর্বল, অনিয়মিত ও ধীর, কসজেসটিভ হার্ট ফেলিওর, বুকে সুঁচ ফোটানো ব্যথা, রোগী মনে করে সামান্য নড়াচড়াতেই দম বন্ধ হইয়া যাইবে।
৪) আর্জেন্ট নাইট্রিকাম- শ্বাসকৃচ্ছতা, বুক ধড়ফড়ানি, কম্পন; রোগী ডানদিকে শুইতে অক্ষম, তাহাতে হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি, বুকের মধ্যে ছোট স্থানে বেদনা, রাত্রে হৃদশূল বৃদ্ধি। শুইয়া থাকিলে উপসর্গের বৃদ্ধি। দ্রুত হাঁটিলে উপশম ।
৫) জিম্বাম মেট— কার্ডিয়াক এরিয়ার স্ফীতি ও স্পর্শে অতিশয় বেদনাবোধসহ দুরস্ত হৃদস্পন্দন, হৃদপিণ্ডের মধ্যে সহসা ধাক্কা ও ঝাঁকি বোধ। হৃদপিণ্ড যেন ছিঁড়িয়া ফেলিতেছে এমন বেদনা, হৃদপিণ্ডে আক্ষেপিক স্পন্দন। ইহা ছাড়া লক্ষণানুসারে অরাম মেট, এনাকার্ডিয়াম, এপিস মেল, ক্র্যাটেগাস, স্পাইজেলিয়া, কনভ্যালেরিয়া, লাইকোপাস, ক্যালমিয়া প্রভৃতি ঔষধও এই পীড়ায় ব্যবহৃত হয়।

ভাবীফল:- হার্ট ফেলের ভাবী ফলে মানবদেহের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রস্থলসমূহ রক্তের অভাবে কাজ বন্ধ করিয়া দেয় এবং রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হয়।


লেট হার্ট ফেল:- লেট হার্ট ফেল হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয় পালমোনারী শিরার মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে এবং পাম্প করিয়া এই রক্ত মহাধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে সরবরাহ করে। কিন্তু এই পরিশোধিত রক্ত বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ে আসার পথে বা বাম নিলয় হইতে বাহির হইবার পথে যদি কোন ছিদপথের ভালভের রোগ হয় তখন হার্টের মাংসপেশীর উপর চাপ পড়ে। প্রথম দিকে হার্টের হাইপারট্রফি হয়। অনেক দিন ধরিয়া এই অবস্থা চলিতে থাকিলে হার্টের রিজার্ভ পাওয়ার নষ্ট হইয়া যায়। ফলে হার্টের ডাইলেটেশন হয় এবং বাম নিলয় দেহের প্রয়োজনমত রক্ত সরবরাহ করিতে পারে না। ফলে যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহাকে লেফট হার্ট ফেল বলা হয়।

লেফ্ট হার্ট ফেলের কারণ:- নিম্নলিখিত কারণে লেফ্‌ট হার্ট ফেল হইয়া থাকে ।
১) হাই ব্লাড প্রেসার।
২) করোনারী থ্রম্বোসিস।
৩) ক্রনিক নেফ্রাইটিস।
৪) মাইট্রাল ইনকমপিটেন্স। 
৫) এ্যাডারেন্ট পেরিকার্ডিয়াম ।
৬) থাইরো টক্সিকোসিস।
৭) এওটিক ইনকম্পিটেন্স। 
৮) এওটিক রিগারজিটেশন।
৯) এওটিক স্টেনোসিস প্রভৃতি।

লক্ষণাবলী:- লেফ্ট হার্ট ফেলিওরের লক্ষণাবলী নিম্নরূপ ।
১) রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ।
২) দুর্বলতা প্রচুর থাকে।
৩) মাঝে মাঝে রোগী ভুল বকে ।
৪) ঘন ঘন কাশি হয় এবং কফের সহিত রক্ত আসে।
৫) শ্বাসকষ্ট হয়, রাত্রিতেই অধিকাংশ শ্বাসকষ্টের বৃদ্ধি ঘটে।
৬) রোগীর চেহারা মলিন দেখায় এবং ঘাম থাকে ।
৭) বুকে ব্যথা থাকে।
৮) রোগীর উদরে এবং পায়ে শোধ হয়।
৯) অনেক সময় সায়ানোসিস দেখা দিতে পারে প্রভৃতি।

রোগ নির্ণয়:-
১) রোগীতে প্রকাশিত লক্ষণের সাহায্যে।
২) ইসিজি করিলে লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফেলিওরের গ্রাফিক চেঞ্জ দেখা যায়।
৩) বক্ষের এক্সরে করিলে তাহাতে হার্টের শ্যাডো দেখা যায়। ব্রঙ্কো ভাসকুলার মার্কিং প্রমিনেন্ট দেখায়। ৪) ইকোকার্ডিও গ্রাফিতে লেফট ভেন্ট্রিকল বড় দেখায়।
৫) প্রস্রাব পরীক্ষায় সামান্য পরিমাণে এলবুমিন পাওয়া যায়। ইহা ছাড়া R B C কাষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়।

জটিলতা:-
১) লেফট হার্ট ফেলের সাথে সাথে রাইট হার্ট ফেল ।
২) কার্ডিওজেনিক শক দেখা দিতে পারে।
৩) একিউট রেনাল ফেল হইতে পারে।
৪) পালমোনারী ঈডিমা দেখা দিতে পারে।
৫) ফাইব্রোসিস অব এন্ডোকার্ডিয়াম ।



রাইট হার্ট ফেল:- সুপিরিয়র ও ইনফিরিয়র ভেনাকাভার মাধ্যমে ডান অলিন্দে আগত অপরিশোধিত রক্ত ডান নিলয়ের মধ্যে দিয়া পালমোনারী ধমনীর মাধ্যমে পরিশোধিত হওয়ার জন্য ফুসফুসে যায়। কিন্তু ডান নিলয় ফুসফুসে রক্ত পাঠাইবার ক্ষমতা যদি হারাইয়া ফেলে তখন হার্টের ডাইলেটেশন হয়। ফলে যে সকল লক্ষণ, প্রকাশ পায় তাহাকে রাইট হার্ট ফেল বলে।

কারণ তত্ত্ব:- নিম্নলিখিত কারণে রাইট হার্ট ফেল হইয়া থাকে ।
১) লেফট হার্ট ফেল ঘটিলে। 
২) করোনারী থ্রম্বোসিস।
৩) কার্ডিওমায়োপ্যাথি ।
৪) মাইট্রাল এবং ট্রাইকাসপিড স্টেনোসিস।
৫) কনজেনিট্যাল পালমোনারী স্টেনোসিস।
৬) সেপ্টাল ডিফেক্ট।
৭) কনস্ট্রিকটিভ পেরিকার্ডাইটিস লিখ । 

লক্ষণাবলী:- রাইট হার্টফেলের লক্ষণাবলী নিম্নরূপ।
১) রোগীর শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকে। 
২) ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।
৩) লিভার বৃদ্ধি পায় এবং উহাতে বেদনা বোধ হয় । 
৪) সামান্য পরিশ্রম করিলে রোগী হাঁপাইয়া উঠে।
৫) প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস পায়।
৬) উদরে ও পায়ে শোথ দেখা দেয়।
৭) গলার জুগুলার শিরার স্ফীতি দেখা দেয়।

রোগ নির্ণয়:-
১) পীড়ার লক্ষণাবলী দেখিয়া রোগ নির্ণয় করা যায়।
২) বুকের এক্সরে করিলে তাহাতে রাইট ভেন্ট্রিকল বড় দেখা যায় 
৩) ইসিজি করিলে তাহাতে রাইট ভেন্ট্রিকুলার ফেলিওরের গ্রাফিক পরিবর্তন

জটিলতা:- এই পীড়ায় নিম্নলিখিত জটিলতা দৃষ্ট হয় ।
১) একিউট রেনাল ফেলিওর দেখা দেয়।
২) কার্ডিওজেনিক শক হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ