ভেরিওলিনাম - VERIOLINUM

 

ভেরিওলিনাম
VERIOLINUM


 

 প্রতিশব্দ বা সমশব্দ :- বসন্তের জীবাণু।


উৎস ও প্রস্তুত প্রণালী :- মানব শরীরে বিকশিত গুটিবসন্তের পুঁজ হইতে ইহা প্রস্তুত হইয়া থাকে। পূঁজ হইতে বিচূর্ণ প্রস্তুত করিয়া- হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নিয়মে বিভিন্ন ক্রমের শক্তিকৃত ঔষধ প্রস্তুত হয়।

গ্রুভার :- ডাঃ বার্নেট, ডাঃ স্যান এই ঔষধটি প্রুভ করেন।

প্রস্তুতের ফরমুলা :- এফ ৮।

ধাতুদোষ ঃ টীকার কুফল নিবারনের বসন্তরোগে এবং তাহার পররোগে ইহার কার্যকারিতা সর্বাধিক। ইহাতে সোরা দোষের প্রাধান্যতা অধিক। বসন্ত রোগের আক্রমণ সম্ভাবনা প্রতিরোধ করিতে এবং চর্ম রোগ জাতীয় বসন্তের প্রকৃতিটি যেখানে সাংঘাতিক ও বিভীষিকাপূর্ণ সেখানে ঐ অবস্থাটিকে দমন করিতে ভেরিওলিনামের খ্যাতি অর্জন করে। রোগীর বংশগত ও অর্জিত দোষের ইতিহাস থাকিলে ইহা ব্যবহৃত হয়। বসন্ত পীড়ার প্রতিষেধক রূপেও এই ঔষধটি কার্যকরী। টাকার কুফলে বিভিন্ন লক্ষণ যথা বুদ্ধিহীনতা, একজিমা, হাঁপানী, অর্শ, টিউমার, শুষ্ক জাতীয় ক্ষয় প্রভৃতি আসার সম্ভাবনা থাকিলে এবং বিভিন্ন শরীরে রোগাক্রমণের প্রবণতা নষ্ট করিতে হইলে এই ঔষধ প্রয়োগ করা যায় । ইহা প্রয়োগে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি সৃষ্টি হয়।

ক্রিয়াস্থান :- চর্মের উপর ইহার প্রধান ক্রিয়া দৃষ্ট হয়। তাহা ছাড়া স্নায়ু, মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের উপর ক্রিয়া করিতে থাকে ।

চরিত্রগত লক্ষণ :-
১) রোগীর বংশগত ও অজিত দোষের ইতিহাস ।
২) বসন্ত রোগে আক্রমণ করিবে এইরূপ ভয়। বধিরতা, মাথার পেছনের দিকে বেদনা ৷ 
৩) বসন্ত পীড়া।
৪) শ্বাসরুদ্ধকর শ্বাসক্রিয়া, গলদেশ রুদ্ধ বলিয়া মনে হয়। কাশি, তাহার সাথে পুরু রক্তময় চটচটে শ্লেষ্মা, গলদেশের ডানদিকে পিত্তবৎ অনুভূতি ।
৫) দুর্দান্ত যন্ত্রণাদায়ক পিঠে ব্যথা, পায়ে কনকন ব্যথা ।
৬) সমস্ত শরীরে ক্লান্তি ও অস্থিরতা, কজিসমূহে বেদনা। পৃষ্ঠ হইতে তলপেটে বেদনা, স্থান পরিবর্তন করিয়া থাকে।
৭) তাপ জ্বর, শরীর হইতে তীব্র উত্তাপ বিচ্ছুরিত হইতে থাকে। প্রচুর দুর্গন্ধ ঘাম ।
৮) চর্মতপ্ত ও শুষ্ক, পূঁজ বটিসমূহের উদ্ভেদ ।
৯) রোগীর জিহ্বায় পুরু হলুদ বর্ণের লেপ পড়ে। রোগী জিহ্বা বাহির করিয়া ঘুমায় ।
১০) কখনও কখনও রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হয়।

প্রয়োগক্ষেত্র :- টাকার কুফল হেতু পীড়া, বসন্ত, কুষ্ঠ, অনেক দিনের চর্মপীড়া, হুপিং কাশি, হাঁপানী, নিমোনিয়া, অর্শ, টিউমার, শুষ্ক জাতীয় ক্ষয় প্রভৃতি পীড়ায় ইহা প্রয়োগ হয় ৷

ব্যবহারের পূর্বশর্ত :- মহামারীরূপে যখন বসস্তের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন ইহা প্ৰতিষেধক রূপে ব্যবহার করা যায়। রোগীর বংশগত ও অর্জিত দোষের ইতিহাস থাকিলে ইহা ব্যবহৃত হয়। টীকার কুফলে বিভিন্ন দুর্লক্ষণ দেখা দিলে ইহা ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহারে সাবধানতা :- একমাত্রা বা দুইমাত্রা ঔষধ সেবনের পর শরীরের ব্যথা বা ব্যথাসহ জ্বর জ্বর ভাব বোধ হইলে আর ঔষধ সেবন নিষিদ্ধ।

প্রতিষেধক ঔষধ:- হোমিও চিকিৎসায় প্রতিষেধক ঔষধ বলিয়া কোন বিশেষ ঔষধ নাই। তবে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকগণ বসন্তের স্থুল বীজ মনুষ্য শরীরে প্রবিষ্ট করাইয়া যে টীকা দিয়া থাকেন তাহার কুফলে মানবদেহে ভবিষ্যতে নানা লক্ষণ সৃষ্টি হয়। হোমিওপ্যাথিক মতে শক্তিকৃত ঔষধ বিশেষ করিয়া ভেরিওলিনাম, ভ্যাক্সিননাম, ম্যালেন্ড্রিনাম প্রয়োগ করিলে ঐ প্রকার স্থুল মাত্রার টিকা দিবার প্রয়োজন হয় না। যে কারণে বসন্তের প্রতিষেধক হিসাবে ভেরিওলিনামকে ব্যবহার করা হয় এবং রোগের প্রবণতাটি প্রতিরোধ করার জন্যও শক্তিকৃত ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

ভেরিওলিনামের ব্যবহার :- বসন্তরোগ যখন মহামারীরূপে আক্রমণ করে, তখন ভেরিওলিনাম দ্বারা চিকিৎসা করিলে অনেক রোগী আরোগ্য হইতে পারে। বসন্ত রোগের আক্রমণ সম্ভাবনা প্রতিরোধ করিতে এবং চর্মরোগ জাতীয় বসন্তের প্রকৃতিটির যেখানে সাংঘাতিক ও বিভীষিকাপূর্ণ সেখানে ঐ অবস্থাটি দমন করিতে উপকারী। ঐ অবস্থায় কোমর ব্যথা, পদদ্বয়ের যন্ত্রণা, প্রবল শীতসহ জ্বর তাপ, প্রচুর দুর্গন্ধ ধর্ম ও পিপাসা এবং গুটিকাগুলি বাহির হইতে না পারা হেতু জ্ঞানশূন্যতা ভেরিওলিনামের নির্ভরযোগ্য প্রদর্শক লক্ষণ। 
ভেরিওলিনাম - ১) বসন্তের প্রকোপ ও জ্বর তাপকে সত্বর হ্রাস করে এবং গুটিকাগুলিকে পুঁজ সঞ্চয়ের পুর্বেই দমন করে। 
২) বসন্তপীড়াকে প্রতিরোধ করিতে ইহা যেমন কার্যকরী তেমনি ঐ রোগের প্রবণতাটি প্রতিরোধ করিতে সক্ষম। বসন্তের প্রাদুর্ভাবের সময় ইহার উচ্চশক্তি প্রতি সপ্তাহে ১ বার সেবন করিলে আর বসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর যদিও হয় তাহা হইলেও সাংঘাতিক হয় না।

জ্বর লক্ষণ :- প্রবল জ্বর, জ্বরের সহিত অসহ্য মাথা ব্যথা, মাথা তুলিতে গেলে রোগী যেন পিছন দিকে পড়িয়া যাইবে। দুর্দান্ত যন্ত্রণাদায়ক পৃষ্ঠবেদনা, পায়ে কনকন ব্যথা করে। সমগ্র শরীরে ক্লান্তি ও অস্থিরতা। জ্বর তাপ, প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত ঘর্ম। জ্বরের সহিত বমি ও গা বমি ভাব ৷ মুখমণ্ডল খুব গরম, রোগীর জিহ্বায় পুরু হলদে বর্ণের লেপ পড়ে। ঘুমানোর সময় জিহ্বা বাহির করিয়া ঘুমায়। চর্ম শুষ্ক।

মুখব্রনের লক্ষণ :- ব্রণহেতু যখন মুখমণ্ডলের গর্তের মত দাগ হয় তখন ভেরিওলিনাম আশানুরূপ কাজ করে।

বৃদ্ধি :- নড়াচড়ায় ও টীকা গ্রহনের কুফলে ইহার নানা রোগ লক্ষণ বিশেষ করিয়া কোমর ব্যথা বৃদ্ধি পায় ।

উপশম :- সুনির্দিষ্ট কোনও অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। 

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ :-ভ্যাক্সিনিনাম ও ম্যালাঞ্জিনাম। 

ক্রিয়ানাশক ঔষধ :- থুজা, এন্টিম টার্ট। 

ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম :- ৩০, ২০০ এবং উচ্চ শক্তি।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ