সিকেল কর - SECALE COR, চতুর্থ বর্ষ - মেটেরিয়া মেডিকা

সিকেল কর 
SECALE COR









প্রাকৃতিক অবস্থা:- ফুংগি।

প্রতিশব্দ:- রাই আরগট, আলেরগোটা, এসিনিউলা ক্লেভাস, সিকেলি ক্লেভাটাম, ক-কম্পার রাই, শৃংগবিশিষ্ট রাই, রাই সরিষাজাত রোগা উদ্ভিদ ।

উৎস ও বর্ণনা:- ইহা সিকেলি সিরিয়্যাল বীজ এবং অন্যান্য শষ্যদানার উপর জন্মানো এক প্রকার ছত্রাক। আরগটগুলি সাধারণতঃ পোনে ১ ইঞ্চি হইতে অর্ধ ইঞ্চি লম্বা হইয়া থাকে। বাহ্যিক দিক দিয়া ইহা দেখিতে বেগুনী কাল বর্ণের। কিন্তু অভ্যন্তর ভাগ সাদা বর্ণের হইয়া থাকে। ইহাতে এক প্রকার অগ্রহণযোগ্য গন্ধ এবং উগ্র বিস্বাদ বর্তমান থাকে। ইউরোপে এবং ককেসাস পর্বতের সন্নিকট মরুভূমিতে ইহা পাওয়া যায়।

প্রস্তুতির প্রক্রিয়া:- যখন পরিপূর্ণভাবে ইহা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় অর্থাৎ শষ্য সংগ্রহ করার প্রাক্কালে ইহা সংগ্রহ করিতে হয়। টাটকা ভাবে শুষ্ক সমগ্র ছত্রাকটি ঔষধের ব্যবহৃত হইয়া অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। পরে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে শক্তিকৃত করা হয়।

প্রস্তুতের ফরমুলা:- এফ-৩।

প্রুভার:- ডাঃ এলেন ইহা প্রুভ করেন।
 
ধাতুপ্রকৃতি:- সিকেলি একটি নোসোড জাতীয় অতিশয় গভীর কার্যকরী এন্টিসোরিক ঔষধ। ইহার ধাতুর রোগী দুর্বল, কৃশ, অত্যন্ত রোগাজীর্ণ শীর্ণ, অস্থি কংকালসার, রুক্ষ মেজাজ, ফ্যাকাশে ও রক্তশূন্য।

ক্রিয়াস্থান:- মন, মস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জার উপর এবং জরায়ু ও তৎসংক্রান্ত অন্যান যন্ত্রসমূহে ইহার ক্রিয়া প্রধান। ইহার ক্রিয়ার দ্বারা মাংসপেশীসমূহ আক্রান্ত হইয়া আকুঞ্চন উৎপন্ন হয়। ইহা দুর্বল, কৃশ ও রোগাজীর্ণ স্ত্রীলোকদের পীড়ায় অধিক ক্রিয়া করিয়া থাকে।

মানসিক লক্ষণ:- রোগীর চিন্তাশক্তি বিলুপ্ত হয়। উন্মত্ততা, প্রলাপের সময় উন্মাদের ন্যায় কাহাকেও কামড়াইতে যায় এবং রোগী পানিতে ডুবিতে চায়, উন্মত্ততার সহিত রোগী হাসে ও হাততালি দেয় এবং নিজের গা ঠেলিয়া নিজেকে ডাকে। রোগীর শরীরের অভ্যন্তরে জ্বালাবোধ, সে জন্য ঠাণ্ডা লাগায়। রোগী মনে করে যে ঘরের মধ্যে দুইজন লোক আরোগ্য লাভ করিয়াছে। ক্রোধান্বিত থাকা আর একটি লক্ষণ। মৃত্যু ভয় ও অস্থিরতা।

জিহ্বা লক্ষণ:- জিহ্বা শুষ্ক, ফাটাফাট, কালির মত রক্ত বাহির হয়, জিহ্বা লেপাবৃত, পুরু, আঠাল, হরিদ্রাভ, ঠাণ্ডা ও নীলাভ। জিহ্বার অগ্রভাগে ঝি ঝিঁ ধরে। উহা কঠিন। জিহ্বা স্ফীত ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত ।

চরিত্রগত বা পরিচায়ক লক্ষণ:-
১) রোগীর বাহ্যদেশ অতিশয় ঠাণ্ডা, কিন্তু শরীরাভ্যন্তরে নিদারুন জ্বালা
সেজন্য ঠাণ্ডা ঘরে, ঠাণ্ডা বাতাসে, ঠাণ্ডা জলে উপশম ।
২) রোগী শীর্ণকায়া, ক্রোধী, দুর্বল, ক্ষীণ ও শুদ্ধদেহ।
৩) চক্ষু তারা সম্প্রসারিত। চক্ষু কোটর প্রবিষ্ট ও স্থির এবং চক্ষুর কোণে নীল দাগ এবং এক দৃষ্টে চাহিয়া থাকে।
 ৪) হস্তপদ বিশেষতঃ আঙ্গুলের অগ্রভাগ অসাড় ও ঠাণ্ডা। হস্তপদ পাণ্ডুবর্ণ এক চোপসান অথচ আবৃত রাখিতে পারে। আবৃত করিলে যন্ত্রণায় অধীর হয়। 
৫) রোগীর খুব ক্ষুধা হয়, পিপাসা ও বেশী। কিছুতেই যেন পিপাসা নিবৃত্ত হয় না।
৬) মুখমণ্ডল মলিন সংকুচিত ও বসিয়া যাওয়ার মত, মুখমণ্ডলে খিল ধরা আরম্ভ হয় এবং সমগ্র শরীরে প্রসারিত হয়। মুখমণ্ডলের উপর সীসার রঙের ন্যায় গোলাকার দাগ। আক্ষেপজনিত মুখ বিকৃতি।
৭) মস্তিষ্কে নিষ্ক্রিয় বেদনা, আক্রান্ত স্থানে রক্ত সঞ্চয়, তৎসহ মলিন মুখমণ্ডল। এই বেদনা মস্তকের পশ্চাৎভাগ হইতে উঠিতে পারে। মস্তক পশ্চাৎ দিকে খেঁচিয়া থাকে। মাথার চুল ঝরিয়া যায় ।
৮) নাসিকা হইতে রক্তস্রাব, কালচে রক্ত ধীরে ধীরে ক্ষরিত হয়। জিহ্বা শুষ্ক, ফাটা, জিহ্বা হইতে কালির ন্যায় রক্ত নিঃসৃত হয়। জিহ্বা পুরু প্রলেপযুক্ত চটচটে পীতাভ, শীতল ও সীসার ন্যয় রঙ বিশিষ্ট, জিহ্বার অগ্রভাগ আড়ষ্ট এবং উহাতে ঝিনঝিন করে।
১) কলেরার মলের ন্যায় মল, তৎসহ শীতলতা ও খিলধরা। শরীর বরফের ন্যায় শীতল, আচ্ছাদন অসহ্য, অসাড়ে মলত্যাগ, মলত্যাগে অনুভূতি শূন্যতা, গুহ্যদ্বার পূর্ণভাবে প্রসারিত বা 'হা' করিয়া থাকে। কলেরায় খিলধরা ও ঠাণ্ডা চটচটে ঘর্ম, পৃষ্ঠদেশ, তলপেট, হাত পা ঠাণ্ডা, পা ঝিনঝিন করে।
১০) শিশুদের বিসুচিকায় ভেদ, বমি, বলক্ষয় অত্যন্ত তৃষ্ণা মুখ ও চক্ষু যেন চুপসাইয়া যায়। নাড়ী কখনও দ্রুতগামী, কখনও পাওয়া যায় না।
১১) চর্ম শুষ্ক ও সহজেই ফাটে। ফাটিলে এক ফোঁটাও রক্ত বাহির হয় না।
১২) নিদ্রা গভীর ও সুদীর্ঘ, অনিদ্রা, তৎসহ অস্থিরতা, জ্বর, উদ্বেগপূর্ণ স্বপ্ন,
যাহারা স্বভাবত ঔষধ এবং মদ্যপান করে তাহাদের অনিদ্রা। 
১৩) মূত্রাশয়ের পক্ষাঘাত, মূত্র অবরুদ্ধ, তৎসহ নিষ্ফল মূত্রবেগ, মূত্রাশয় হইতে কালরক্ত বাহির হয়। বৃদ্ধদের অসাড়ে মূত্রত্যাগ ।
১৪) জরায়ু বাহির হইবার মত বেদনা। জরায়ু ও ওভেরীতে রক্তাধিক্য ও টাটানি বেদনা। 
১৫) জরায়ু হইতে কাল দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা রক্তস্রাব, সামান্য নড়িলে চড়িলে তাহার বৃদ্ধি, গর্ভস্রাব, তৃতীয়মাসে গর্ভস্রাব হইবার উপক্রম ।
 ১৬) রক্তস্রাব হইবার পূর্বে জরায়ুতে অত্যন্ত কষ্টদায়ক সংকোচন।
১৭) প্রসব বেদনা ধীরে ধীরে শুরু হয় জুড়ানো বা ঘিনঘিনে ব্যথা থাকিয়া থাকিয়া হয় ও জুড়াইয়া যায়। বেদনার তেমন জোর নাই। 
১৮) স্মৃতিকাস্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত ও তরল, ঐ স্রাব কখনো অধিক কখনো বা কম।
১৯) স্ত্রীলোকদের স্তনে নিতান্ত স্বল্প পরিমাণে দুগ্ধ । শীর্ণকায়া স্ত্রীলোক। 
২০) রজঃস্রাব অনেকবার হয় এবং শীঘ্র শীঘ্র প্রকাশ পায়। পরিমাণে অধিক এবং স্বাভাবিক ৪/৫ দিনে বন্ধ না হইয়া অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেই সঙ্গে ইউট্রাসে বেদনা, ঐ বেদনার গতি নিম্নদিকে, রক্তস্রাবের সহিত হাত পা শীতল, শীতলঘর্ম, দুর্বলতা, সূক্ষ্ম নাড়ী ও হাত পায়ে খিল ধরে।

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- স্ত্রীরোগ, গর্ভস্রাব, প্রসব বেদনা, কলেরা, চর্মপীড়া, কুমরী বাত, গ্যাংগ্রীন, ফুসফুসে পীড়া, মূত্রাশয়ের পক্ষাঘাত, প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয় ।

ধাতুগত লক্ষণ:- সিকেল করের রোগী অতিবৃদ্ধি বা দুর্বল প্রকৃতির। দুর্বল, অস্থিসার, জীর্ণশীর্ণ, শিথিল মাংসপেশী বিশিষ্ট স্ত্রীলোকদের পক্ষে এবং যাহাদের শরীরের প্রত্যেক দ্বার হইতে রক্তস্রাবের প্রবণতা থাকে, তাহাদের পক্ষে ইহা বিশেষ কার্যকরী। সিকেলির রোগীর বাহ্যদেহ অতিশয় ঠাণ্ডা কিন্তু শরীরাভ্যন্তরে নিদারুণ জ্বালা, সে জন্য ঠাণ্ডা ঘরে, ঠাণ্ডা বাতাসে, ঠাণ্ডা জলে উপশম ইহার প্রধান কথা। শরীরটি অর্থাৎ বাহিরটির অনুভবে ঠাণ্ডা এবং বাস্তবিকই স্পর্শেও ঠাণ্ডা বলিয়া মনে হয় অথচ রোগী ঠাণ্ডাই চায়। মুখমণ্ডল মলিন, পাংশু, অস্থিসার, চোখমুখ বসিয়া যায়, চোখের চারিদিকে কালিমা পড়ে-ইহাই সিকেলির রোগীচিত্র ও ধাতুগত লক্ষণ ।

স্ত্রীলোকদের রক্তস্রাবে লক্ষণ:- ইহার স্ত্রীরোগীর জরায়ু ইত্যাদি যন্ত্রসমূহে শ্লথ ডাব বর্তমান থাকে যেন কোন 'আঁট নাই' সবই যেন আলগা শক্তিহীন ও নিস্তেজ প্রায়। অতিমাত্রায় তরল আকারে কাল বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত রক্তপ্রদর এবং নিরতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত সবুজ বর্ণের শ্বেত প্রদর স্রাব ইহার স্ত্রীরোগীর বিশিষ্ট লক্ষণ। সিকেলির সমস্ত স্রাবই দুর্গন্ধযুক্ত এবং ঋতু স্রাবের দাগ কাপড় হইতে উঠিতে চায় না। অপরদিকে ইহার রক্তস্রাবের প্রবলতাও যেমন, পচন প্রবৃত্তিও সেইরূপ। রজঃস্রাবের মাত্রাধিক্য হেতু ইহার শরীরে বিভিন্ন স্থানে পিপীলিকার ন্যায় সুড়সুড়ানি বোধ থাকে, ভিতরে জ্বালা বোধ অথচ বাহ্যিক হিমাঙ্গতা অর্থাৎ অপর ব্যক্তি রোগিনীর বাহ্য-দেহটি স্পর্শ করিলে একেবারে শীতল বলিয়া অনুভব করে। স্রাব কখনও অল্প কখনও অধিক। ইহার যতই রক্তস্রাব চলিতে থাকে রোগিনীও ততই ক্ষুধাবোধ করিতে থাকে। আবার স্রাবের মাত্রাধিক্যের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালা, অস্থিরতা, দৈহিক শুষ্কতাও অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। রোগিনী তখন প্রচুর ঠাণ্ডা জল পান করিতে চায় ও তাহাতে সাময়িক উপশম পায়। কিন্তু ঐ জল বেশিক্ষণ পেটে থাকে না, বমি হইয়া যায়। পূর্বোক্ত পিপীলিকা চলার অনুভূতিটি ঘর্ষণে উপশমিত হওয়া ইহার রোগিনীর আর একটি বৈশিষ্ট্যজনক লক্ষণ। সিকেলির ঋতুস্রাব এক ঋতু কাল হইতে পরবর্তী ঋতু কাল পর্যন্ত অবিরাম ভাবে চলিতে থাকে। রক্তস্রাবহেতু দুর্বল হইয়া পড়িলে রোগিনীর মূর্ছার ন্যায় হয়, সর্বশরীর কাঁপিতে থাকে, হাতে পায়ে খিল ধরে, শরীরে ঝিনঝিন ও সড়সড় করে, গা ঠাণ্ডা অথচ গায়ের ভিতর জ্বালা করিতে থাকে, আদৌ গায়ে কাপড় রাখিতে চায় না। ঋতুস্রাব, স্তন দুগ্ধ, প্রসবাস্তিক স্রাব লুপ্ত হইয়া যে কোনও পীড়া লক্ষণ দেখা দিলে এবং উপরোক্ত লক্ষণসমূহ থাকিলে সিকেলিই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঔষধ। ইহার পিপাসা প্রবল ।

গর্ভস্রাবে ব্যবহার:- তৃতীয় মাসে গর্ভস্রাব হইয়া ফুল আটকাইয়া থাকিলে এবং গর্ভস্রাব বা স্বাভাবিক প্রসবের পর লোচিয়া স্রাব দুর্গন্ধযুক্ত হইতে ইহা উপকারী। গর্ভপাতে অতিরিক্ত স্রাব হেতু রোগিনীর নাড়ী বন্ধ হওয়ার উপক্রম, সর্বাঙ্গ শীতল।

স্ত্রীরোগে লক্ষণ:- সিকেলির রোগিনী মাত্রই জননী নামের অযোগ্য। কেননা প্রথমতঃ- প্রচুর স্রাব হইলেও তাহা কখনই নিয়মিত ও সুস্থ স্রাব বলা যায় না, সেজন্য শুক্রকীটের পরিপুষ্টি বিধান তাহাতে সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ঃ- প্রাব সমূহের ক্ষতকারিত্ব স্বভাব জন্য প্রজনন যন্ত্রাদিতে ক্ষত এবং তজ্জনিত সঙ্গম কার্যে অক্ষমতা। তৃতীয়ত জবায়ু ইত্যাদি যন্ত্র উন্মুক্ত প্রায় আলগা থাকায় গর্ভাবস্থায় সাধারণতঃ তৃতীয় মাসের মধ্যেই গর্ভস্রাবের প্রবণতা। চতুর্থত কোনও মতে পূর্ণ গর্ভকাল প্রাপ্তি সত্ত্বেও প্রসবের সময় জরায়ুর অনিয়মিত সংকোচন অর্থাৎ সন্তান প্রসবের সাহায্যকারী যন্ত্রণা ও জরায়ুর স্বাভাবিক প্রসারণ শক্তির অভাবে ভূমিষ্ট হইবার পূর্বেই সস্তানের মৃত্যু সম্ভাবনা এবং পঞ্চমত, সুস্থ সন্তান ভূমিষ্ট হইলেও মাতার স্তনদ্বয়ের অপরিপূর্ণতা ও তাহাতে স্বাভাবিক ও সুস্থ দুগ্ধ সয় না হওয়ায় পুষ্টির অভাবে শিশুর মৃত্যু। স্ত্রীপীড়ায় উপরোক্ত লক্ষণের সহিত ইহার চরিত্রগত লক্ষণের মিল থাকিলে সিকেলি ব্যবহারে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। তাই স্ত্রীপাড়ায় ইহা উত্তম ঔষধ। 

প্রসব বেদনায় লক্ষণ:- শীর্ণকায়া স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে ইহা উপযোগী। রোগিনী অতিশয় রুগ্ন, অস্থি কংকালসার, চক্ষু ও গণ্ডদেশ যেন কোটরে প্রবেশ করিয়াছে, রুক্ষ মেজাজ ও শরীর ম্লান, ফ্যাকাশে ও রক্তশূন্য। ইহাতে কখন কখন প্রসব বেদনা অল্প অল্প হয়, কখনও বা ব্যথা এককালে নরম পড়ে বা বন্ধ হইয়া যায় (যেটাকে স্ত্রীলোকেরা জুড়ানো বলে), এক কথায় জোর ব্যথা, তাহা এই ঔষধে হয় না, অনেকস্থলে যেস্থানে ঐরূপ বেদনার জন্য প্রসবে কষ্ট ও বিলম্ব দেখিয়া ফরসেপ দ্বারা প্রসব করার আয়োজন হইতেছিল, সিকেল ৩০ বা ২০০ শক্তিতে তাহাও নিবারিত হইয়াছে। প্রসব বেদনায় সিকেলির নিম্নলিখিত লক্ষণগুলিও স্মরণ রাখা দরকার।
১) জরায়ু অত্যন্ত নরম, যেন মাংস পিত্তের ন্যায় থলথলে । 
২) কোমরে বা সেক্রম অস্থি প্রদেশ হইতে প্রসবের বেগের ন্যায় বেগ পেটে পরিচালিত হইয়া অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়।
৩) ইউটেরাইন বেদনা অনেকক্ষণ ধরিয়া হয় অথচ তাহাতে প্রসবের পথ বাড়ে না।

জরায়ু পীড়ায় লক্ষণ বর্ণনা:- জরায়ু ভ্রংশ। প্রচুর রজঃস্রাব বা জরায়ুর পাতলা, কালো, দুর্গন্ধময় রক্তস্রাব ও প্রসব বেদনার ন্যায় জরায়ু অর্বুদ। জরায়ুতে জ্বালাকর বেদনা ।

কলেরায় লক্ষণ:- প্রকৃত এসিয়াটিক কলেরাতে সিকেলি অনেক সময় প্রয়োজন হয়। নাড়ী দুর্বল কখনও কখনও পাওয়া যায় না, শরীরের নানা স্থানে খিল ধরা অথবা শরীরের বিবিধ স্থানে পেশীর হঠাৎ স্পন্দন, গাত্রত্বক শুষ্ক ও খসখসে চক্ষু বসিয়া যায়, সর্বশরীর যেন চুপসাইয়া যায়, বমি হয়, তবে বমি অপেক্ষা কাঠ বমি ও ওয়াক তোলা অধিক এবং জলবৎ, ভেদ খুব তোড়ের সহিত নির্গত হয়, রোগীর সর্বাঙ্গ শীতল অথচ গাত্রের আবরণ সহ্য করিতে পারে না। তথাপি ঠাণ্ডা চায়। কলেরার বর্ধিতাবস্থাতেই এই ঔষধ উপযোগী। আক্রমণাবস্থায় বা সারক ওলাউঠায় তত উপকারী নহে। কলেরার খিলধরায় অথবা অন্য লক্ষণের সহিত খিলধরা আরম্ভ হইলে ইহা অধিকতর উপযোগী । আক্ষেপের সময় হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি উলটা দিকে বাঁকিয়া যায় ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে অর্থাৎ আঙ্গুলগুলি পরস্পর পৃথক হইয়া বিপরীত দিকে বাঁকিয়া যায়। ভেদ চাল ধোয়ানি জলের ন্যায় বা পরিষ্কার জলের ন্যায়। পরিমাণে খুব বেশী, পেটে বেদনা থাকে না, সমস্ত শরীর বিশেষত হাতে ও পায়ে ঝিনঝিন ধরে ও সড়সড় করে । বুক জ্বালা করে বুকের মধ্যে যেন কেমন করে' (স্ত্রী লোকদের ক্ষেত্রে বেশী) অতিশয় গাত্রদাহ অথচ গা বরফের মত ঠাণ্ডা, গায়ে আবরণ রাখে না। পিপাসা অনিবার্য, এমনকি অত্যন্ত ঘনঘন জলপান করিতে চায় কলেরার এই অবস্থার সিকেলির সমকক্ষ ভিরেট্রাম, আর্সেনিক, কুপ্রাম বিসমাথ প্রভৃতি কতকগুলি ঔষধ আছে, তবে তাহাদের মধ্যে কিছু প্রভেদও লক্ষ্যণীয়।

কলেরায় ভিরেট্রাম ও সিকেলির পার্থক্য:
ভিরেট্রাম
১। বমি অপেক্ষা ভেদ বেশী।
২। ভেদ বমির পর দুর্বলতা ও হাতে পায়ে ভীষণ খিলধরা।
৩। কপালের উপর শীতল ঘর্ম । 
৪। ভেদ চাউল ধোয়া জল বা কুমড়া পচার ন্যায় ছিবড়ো ছিবড়ো। 
৫। শরীর বরফের ন্যায় শীতল এবং গায়ে কাপড় থাকে।
৬। ইহা শীতকাতর, শীতলতা পছন্দ করে কিন্তু তাহাতে উপশম হয় না। গরমে উপশম।
৭। গায়ে জ্বালা নাই।
সিকেলি
১। বমি অপেক্ষা ওয়াকতোলা ও কাট বমি বেশী।
২। ভেধ বমির পর দুর্বলতা আছে কিন্তু হাতে পায়ে খিলধরা নাই। 
৩। কপালের উপর শীতলঘর্ম নাই ।
৪। ভেদ চাউল ধোয়া জল কিংবা পরিষ্কার জলের ন্যায় বর্ণহীন।
৫। শরীর বরফের ন্যায় শীতল অথচ গায়ে কাপড় রাখিতে পারে না। 
৬। ইহা গরম কাতর। শীতলতা অভিলাষ করে এবং তাহাতে উপশমও হয়। ঘরমে বৃদ্ধি ।
৭। গায়ে খুব জ্বালা।

সূতিকা জ্বরে লক্ষণ:- জরায়ু হইতে পচা স্রাব হইতে থাকিলে এবং সেই সঙ্গে পেট ফাঁপা, শীতবোধ হইলে অথচ গায়ে কাপড় রাখিতে না পারিলে এবং মূত্ররোধ ও হিমাঙ্গ হইবার প্রবণতা থাকিলে সিকেলি উৎকৃষ্ট ঔষধ ।

বৃদ্ধদের গ্যাংগ্রীণ ক্ষতে লক্ষণ:- বৃদ্ধ বয়সে গ্যাংগ্রীণ বা দ্রুত পচন ক্ষত রোগে সিকেলি চমৎকার ঔষধ। পা ও পায়ের আঙ্গুলগুলিতে হাত ছোঁয়াইলে উহা বরফের মত ঠাণ্ডা বোধ হয়, কিন্তু রোগী উহার ভিতরের জ্বালায় অস্থির থাকে। আক্রান্ত স্থানে অসাড়াভাব, ঝিনঝিন ধরা, সড়সড়ানি থাকে।

প্রান্তদেশে লক্ষণ:- অত্যধিক তামাক সেবীদের হস্তপদের শীতলতা, তৎসহ আঙ্গুলে ঝিনঝিন ধরা। কম্পনশীলতা ও টলমল করিয়া চলা। হস্তাঙ্গুলি ও পদদ্বয় নীলাভ, কুঞ্চিত, ছড়াইয়া যায় অথবা পিছনদিকে বাঁকিয়া যায়, অসাড়। প্রবল খিলধরা, হাতপা বরফের ন্যায় শীতল। আঙ্গুলের অগ্রভাগে প্রবল বেদনা।

চর্মপীড়ায় লক্ষণ:- সিকেলির রোগীর বিশেষ করিয়া স্ত্রীরোগীর প্রচুর রক্তস্রাব প্রবণতা থাকে, সেজন্য তাহাদের প্রায়ই রক্তহীনতা দেখা দেয়। রক্তের অবস্থাও ইহার শোচনীয়, শরীরের স্থানে স্থানে ঢাকা উদ্ভেদ বাহির হয়। ইহার কারণ এই যে, ঐ সকল স্থানে রক্ত জমাট বাঁধিয়া যায়। ইহার ক্ষতগুলি কালচে বর্ণের অথচ পচনক্রিয়াযুক্ত। ইহাকে শুষ্ক পচা ঘা বলে। এই সঙ্গে গরমে বৃদ্ধি এবং শৈত্য প্রিয়তার আতিশয্য থাকিলে ইহা অবশ্যই প্রযোজ্য । শরীরের নানাস্থানে বিভিন্ন জাতীয় ফোঁড়াও ইহাতে দেখা যায়। তাহাতে সবুজ বর্ণের পূঁজ থাকে এবং ঐগুলি হইতে দীর্ঘদিন যাবত রক্ত পুঁজ নিঃসরিত হইতে দেখা যায়। ইহার ফোঁড়ার বিশেষত্ব এই যে সেগুলি অতি ধীরে ধীরে পাকে ও বিলম্বে আরোগ্য হয়। চর্মদল প্রকৃতির ভীষণতাপূর্ণ বসন্তের উদ্ভেদগুলি ভালভাবে বাহির হইতে না হইতে শুষ্কাবস্থা ধারণ করিলে অথবা তাহাতে জলবৎ পাতলা রক্ত সঞ্চয় হইতে থাকিলে সিকেলির দ্বারা মৃত্যুমুখী রোগী পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করে।

তড়কায় লক্ষণ:- হাত একধার মুঠা করে, আবার পরক্ষণেই আঙ্গুলি ছেতরাইয়া পশ্চাৎ দিকে বাঁকিয়া যায়। মুখের পেশীসমূহে স্পন্দন। প্রথমে মুখের পেশীর স্পন্দন আরম্ভ হয় এবং ক্রমশঃ ঐ রূপ পেশীর স্পন্দন সমস্ত দেহে ছড়াইয়া পড়ে। প্রস্রাব বন্ধ থাকে।

ফুসফুসের পীড়ায় লক্ষণ:- লাংস বা ফুসফুসে পচন ধরিয়া অত্যন্ত দুর্গন্ধ নিঃসৃত হইতে থাকিলে সিকেলি, ল্যাকেসিস, আর্সেনিক ও চায়না উপকারী।

গ্যাংগ্রীন ক্ষত লক্ষণে:- গ্যাংগ্রীন দ্বারা আক্রান্ত স্থানে অসাড় ভাব; অথচ জ্বালা। ঝিনঝিন ধরা ও সড়সড়ানি থাকে।

শিশু কান্নায় লক্ষণ:- শীর্ণ ও ক্ষীণ শিশু, ফ্যাকাশে মুখমণ্ডল, শিথিল পেশী, অতিশয় বিষণ্ণতা ও নিরোৎসাহ শিশুদের কান্নায় ইহা ব্যবহার্য।

ইচ্ছা-অনিচ্ছা:- রোগী ঠাণ্ডা চায়, পানি পান করিতে চায়, খুব পিপাসা, ক্ষুধাও বেশী। গায়ে কাপড় সহ্য হয় না। শীতলতায় উপশম ।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধসমূহ:- মারাত্মক বিসুচিকায় ইহা কলচিকাম সদৃশ। আর্সেনিকও ইহার সদৃশ। সিকেলির পর চায়না ফলপ্রদ । প্রসব বেদনায় পালসেটিলা ও বেলেডোনার সহিত, রক্তস্রাবে ফেরাম ফস ও চায়নার সহিত সম্বন্ধযুক্ত।

বৃদ্ধি:- স্পর্শে, সর্বপ্রকার গরমে, নড়াচড়ায়, মাসিক রক্তস্রাবের পূর্বে।

উপশম:- শীতল বাতাসে, শীতল স্নানে, অনাবৃত অবস্থায়, ঘর্মস্রাবে, ঘর্ষণে, পাখার বাতাসে ও খোলা বাতাসে।

অনুপূরক ঔষধ:- একোনাইট, চায়না, পালসেটিলা, আর্সেনিক, মার্কসল, বেলেডোনা।


ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ক্যাফর, ওপিয়াম।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ২০-৩০ দিন।

শক্তি বা ক্রম:- Ø-২০০ শক্তি। ধাতুগত অবস্থায় পরিবর্তন সাধনে সিএম পর্যন্ত সমান কার্যকরী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ