পেট্রোলিয়াম, PETROLEUM - চতুর্থ বর্ষ

পেট্রোলিয়াম 
PETROLEUM








প্রতিশব্দ- খনিজ তৈল, কোল অয়েল, ওলিয়াম পেট্রা এলবাম, ওলিয়াম টেরাই।

উৎস ও বর্ণনা- পেট্রোলিয়াম হইতে ইহা প্ৰস্তুত হয়। পেট্রোলিয়াম একটি দেশীয় খনিজ তৈল। ইহা পাতলা স্বচ্ছ বর্ণহীন অথবা ফ্যাকাশে হলদে বর্ণের স্বাদ ও গন্দযুক্ত পদার্থ। আপেক্ষি গুরুত্ব ০.৮ হইতে ০.৯ । ইহা একটি দাহ্য পদার্থ, ইহাকে যখন জ্বালানো হয় তখন উজ্জ্বল কালো শিখায় ইহা জ্বলিতে থাকে। অন্যান্য উদ্বায়ী তৈল হইতে ইহাকে মুক্ত রাখিতে হইলে ইহাকে সমপরিমাণ তীব্র সুরাসার সহযোগে ধৌত করিতে হয়। ১ ভাগ কোন অয়েল ও ৯৯ভাগ পরিশ্রুত সুরাসার দ্রব করিয়া ইঁহার ২x শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয়।

প্রস্তুতের ফরমুলা- এফ ৬-বি (অরিষ্ট), এফ-৮ (বিচূর্ণ)।

প্রুভার- ডাঃ হ্যানিমান ইহা প্রুভ করেন ।

ক্রিয়াস্থান:- চর্ম ও মিউকাস মেমব্রেনের উপর ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে।

মানসিক লক্ষণ-
১) রোগী সামান্যতেই চটিয়া উঠে।
২) মনটি ইহার নাক্স ভমের ন্যায় কলহপ্রিয় এবং ইগ্নেশিয়া ও মেডোরিনামের ন্যায় সামান্য বিষয় বা তুচ্ছ কারনে ক্রোধ পরায়ণ ও ছিদ্রান্বেষী 1
৩) কাল্পনিক অনুভূতির প্রধান্য, ঐ প্রকার অনুভূতির ভাবটি স্ত্রীলোকদের প্রসবাস্তিক সূতিকাগারেই সমধিক বৃদ্ধি পাইতে দেখা যায়। ঐ সময় প্রসূতি প্রকৃত প্রস্তাবে একটি সন্তান প্রসব করা সত্ত্বেও মনে করেন একাধিক সন্তান প্রসব করিয়াছেন। রোগিনী ভাবেন তাহার তিনটি পা দুইটি মাথা, আবার কখন ও কখনও কেহ তাহার পার্শ্বে শুইয়া আছে ।
৪) গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে সমুদ্র ভ্রমণ জনিত বমনেচ্ছা বা বমনের ন্যায় অবস্থা হয় ।
৫) রোগী উদরে শূণ্যতা বোধ এবং ক্ষুধার তাড়নায় বার বার আহার করিতে বাধ্য হয়, কিন্তু আহারে বমন ও বিবমিষা বৃদ্ধি পায় ৷

 চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) বসা হইতে উঠিলেই মাথা ঘোরে।
২) গর্ভাবস্থায় বমি।
৩) গাড়িতে, রেলগাড়ীতে, জাহাজে চড়িলে পীড়ার উৎপত্তি।
৪) মাথায় পেছনে বেদনা ও ভারী বোধ ।
৫) পেট খালি বোধ, খালি হইলেই পীড়ার বৃদ্ধি।
৬) অত্যধিক ক্ষুধা ও পেটে শূণ্যতাবোধ, শীঘ্র শীঘ্র পীড়া হয় ।
৭) উদরাময়ের বাহ্য শুধু দিনের বেলায়, রাত্রিতে বন্ধ।
৮) পুং ও স্ত্রী জননেন্দ্রিয় ঘামে।
১) হস্তপদের চেটো গরম ও জ্বালা করে।
১০) হাতের চামড়া অমসৃণ, ফাটা, আঙ্গুলের ডগা ফাটা ও বেদনা ।
১১) শীতকালে চর্ম পীড়ার বৃদ্ধি।
১২) সামান্য আঘাত লাগিলে সে স্থান পাকে, ঘা হয়।
১৩) বগল ও পায়ের তলায় এতো দুর্গন্ধ ঘাম যে কেহ কাছে বসতে পারে না। 
১৪) কানের পিছনের একজিমা হতে ছাল (চামড়া) উঠে। 
১৫) মহিলাদের অত্যান্ত যোন চাহিদা, অপ্রাপ্ত বয়স্কার কামোন্মাদনা। 
 
প্রয়োগক্ষেত্র:- চর্মপীড়া, উদরাময়, অশূল, গর্ভাবস্থার পীড়া, শিরঃপীড়া, চক্ষুর পীড়া, প্রস্রাবের পীড়া, বাত রোগ, কাশি, দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস প্রশ্বাস, দৃষ্টি বিকৃতি প্রভৃতিতে এই ঔষধ ব্যবহৃত হয় ।

চর্মপীড়ায়:- প্রাধান্যযুক্ত একটি অতিশয় মূল্যবান ঔষধ। ইহার চর্মপীড়া অনেকটা গ্রাফাইটিসের মত। ইহার একটি বিশেষ লক্ষণ এই যে শীতকালে চর্মরোগ নানা উপসর্গের সহিত বৃদ্ধি পায়, কিন্তু গ্রীষ্মকাল আরম্ভ হইলে আপনা আপনিই আরোগ্য হইয়া যায় । ইহার উদ্ভেদ মাথায়, কানের পার্শ্বে, অণ্ডকোষে, যোনী এবং হস্তপদ সকল স্থানেই হইতে পারে। পেট্রোলিয়ামের চর্মপীড়ার প্রথমে গায়ে ঢাকা চাকা উদ্ভেদ বাহির হয়, পরে সেগুলি বোলতার চাকের আকার ধারণ করে। তদ্ভিন্ন নির্গত হয়, পরে সেস্থানে ক্ষত হয়, রস ও পূঁজ নির্গত হইতে থাকে, মামড়ি পড়ে। রোগীর দেহের চর্ম এত স্পর্শ প্রবণ যে জামা কাপড়ের সামান্য স্পর্শটুকুও রোগীর নিকট একেবারে অসহ্য বোধ হয়। অধিকন্তু হিপারের ন্যায় সামান্য ক্ষতটি পর্যন্ত ইহার না পাকিয়া সারিতে চায় না। ফাটা ফাটা খসখসে শক্ত আকারের ও অপরিচ্ছন্ন জাতীয় চর্মপীড়াই ইহার সাধারণ রূপ এবং শীতকালেই ঐভাব বৃদ্ধি পায়। জননেন্দ্রিয় স্থানে শীতকালীন শুষ্ক বা রসপূর্ণ হার্পিস জাতীয় চর্মপীড়ায় অতিশয় স্পর্শকাতরতা, চুলকানি ও ফাটা ফাটা ভাব এবং তৎসহ উদরে শূন্যতা বোধ ও আহারে উপশম বর্তমান থাকিলে পেট্রোলিয়াম অব্যর্থ। সারা বৎসর ব্যাপী প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে জননেন্দ্রিয়ের বহিঃদেশে ময়লাপূর্ণ ঘাম, হাতের ও পায়ের তলে জ্বালা, হিম প্রবাহ হইতে আবির্ভূত হাজা জাতীয় ক্ষত প্রভৃতি অবস্থাগুলিও আসিতে দেখা যায়। চর্মোপরি পেট্রোলিয়ামে উপরোক্ত লক্ষণ ব্যতীত প্রতি শীতের দিনে ভীষণ ভাবে হাত পা ফাটা, গাত্র চর্মের শক্ত আকার ধারণ, তৎসহ পায়ের তলে টাটানিযুক্ত ব্যথা প্রভৃতি দেখা দেয়। চর্মপীড়া চাপা দিলে প্রায়ই ইহার উদরাময় দেখা দেয়। 

একজিমা লক্ষণ:- প্রমেহ পীড়া কিম্বা গর্মী বিষ দোষে লিঙ্গ প্রদেশে অণ্ডকোষে রসপূর্ণ উদ্ভেদ নির্গত হয়, তাহাতে প্রবল চুলকানি থাকে। কানের ভিতর একজিমা, তাহার পূজে বা রসে অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকে। কানে খোল হয়, কানের ভিতর গর্জনের মত শব্দ করে, কানের পশ্চাতে একজিমা- তাহাতে সর্ব্বদাই রস ঝরে, মামড়ি পড়ে, ফাটে। সোরায়সিস- হাতে একজিমা, হাতের পশ্চাৎ পৃষ্ঠের উপর একজিমা, আঙ্গুলের ডগা ফাটে, ঘা হয়, ঘা হইতে রস পড়ে। কুঁচকির স্থানে দাদ হইলে উহার ৩০ শক্তি সেবন ও উহার লিনিমেন্ট প্রস্তুত করিয়া বাহ্যিক ব্যবহার করিলে শীঘ্র উপকার হয়।

উদরাময় বা পাকাশয়িক গোলযোগে লক্ষণ:- ইহার উদরাময়ের প্রকৃতিটি বড়ই অদ্ভূত। কেননা উহা কেবল মাত্র দিবা ভাগেই বৃদ্ধি পায় এবং চর্মপীড়া চাপা পড়ার ফল স্বরূপেই আবির্ভূত হয়। চর্মপীড়া চাপা দেওয়ার প্রতিক্রিয়া রূপে গ্রীষ্মের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোর লক্ষণযুক্ত উদরাময়ের সূচনা হয়। কিন্তু শীতকালীন উদরাময়টি ইহাতে সাধারণতঃ বাঁধাকপি ভোজনের ফলেই আসিতে দেখা যায়। পেট্রোর বাহ্য অত্যন্ত পঁচা দুর্গন্ধ, তা জলের মত তরল। বাহ্যের সঙ্গে গোটা অজীর্ণ খাদ্য নির্গত হয়। ইহাতে ভোর হইতে বাহ্য শুরু হয়, পড়োর ন্যায় সারাদিনই হইতে থাকে, রাত্রিতে আদৌ বাহ্য হয় না। পড়োর বাহ্যেও অতিশয় দুর্গন্ধ, তবে ইহাতে পেটে কোন প্রকার বেদনা থাকে না এবং ক্রমশঃ বাহ্যের পরিমাণ কম হইয়া সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া যায়। আমাশয়ের বাহ্য ও সারাদিন হইয়া রাত্রিতে বন্ধ হইয়া গেলে ইহা উপকারী। ইহাতে বমি ও কাট বমি থাকে। সময়ে সময়ে আবির্ভাবশীল পুরাতন উদরাময় ।

অম্লশূলে লক্ষণ:- এনাকার্ডিয়াম, চেলিডোনিয়াম, গ্রাফাইটিস, ফসফোরাস প্রভৃতির মত ইহাতে অশূল বেদনা আহারের পরই নিবৃত্ত হয়। পেট্রোর বেদনা খালি পেটেই বাড়ে, বেদনা পাকস্থলী হইতে উর্ধে বুকে পর্যন্ত চলিয়া যায়। রোগী যন্ত্রনায় ছটফট করে, বেদনার সঙ্গে গা বমি বমি থাকে, কিছু খাইলে অল্প সময়ের জন্য যন্ত্রণার উপশম হয়।

শিরঃপীড়ায় লক্ষণ:- ইহার শিরপীড়ার প্রকৃতিটি বড়ই অদ্ভুত। কেননা গর্ভাবস্থায় বিশেষ করিয়া প্রসবের পর মস্তকের পশ্চাৎ ভাগে অসহ্য ভারবোধ থাকে। মনে হয় যেন ভারী সীসা চাপান আছে। মাথাটি যেন কাষ্ঠ নির্মিত। বেদনার প্রকৃতি দপদপানিবৎ এবং সময়ে সময়ে ইহার রোগী অনুভব করে যে, তাহার গুহ্য প্রদেশ হইতে একটি তীক্ষ্ণ বেদনা মেরুদণ্ডের ভিতর দিয়া মস্তকের পশ্চাৎ পর্যন্ত ধাবিত হইতেছে। ইহার মধ্যে মাথা ঘোরাও যথেষ্ট আছে, তবে ঐ মাথা ঘোরা, পূর্বোক্ত অবাস্তর অনুভূতি সমূহ যতই বৃদ্ধি পায় ততই প্রবলাকারে পরিস্ফুট হয় এবং তৎসহ বিবমিষা বা বমনের আবির্ভাব হয়। তাহা ছাড়া সামান্য নড়াচড়ায় বা মাথাটি নাড়িলেও বৃদ্ধি পায় ।

বাতরোগে লক্ষণ:- বাতে হাঁটু শক্ত হইয়া গেলে এবং তথায় খোঁচামারা ব্যথা থাকিলে ইহাতে বেশ উপকার হয়। পুরাতন বাতে গাঁটে ব্যথা থাকিলে পেট্রোলিয়াম উপকারী। কোমরের বাত যদি প্রাতঃকালে বেশী বৃদ্ধি পায় তাহা হইলে ইহা উপকারী। রুটাতেও এই লক্ষণ আছে, কস্টিকামের মত ইহাতেও উঠিতে বসিতে গাঁটগুলিতে মট মট করিয়া শব্দ হয়।

প্রস্রাবের পীড়ায় লক্ষণ:- মূত্রাশয়ের দুর্ব্বলতা বশতঃ রাত্রিতে বিছানায় অসাড়ে প্রস্রাব ত্যাগ, প্রস্রাবের পর অসাড়ে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নিঃসরণ, প্রস্রাবের পর শেম্মা নির্গমন।

চক্ষুরোগে লক্ষণ:- চক্ষুর পাতায় প্রদাহ, মামড়ি পড়ে। চক্ষুর পাতা দুইটি জুড়িয়া যায়, প্রাতে চক্ষু খুলিতে পারেনা।  চক্ষুর শোষ ঘা, সন্ধ্যা বেলায় ও আলোকের মধ্যে সকল লক্ষণের বৃদ্ধি হয় ।

কাশিতে লক্ষণ:- চর্মপীড়ার সহিত সর্দি কাশি প্রভৃতি থাকিলে ইহা উপকারী। পেট্রোর কাশি শুষ্ক, রাত্রিতে বিছানায় শুইলে কাশি আরম্ভ হয় । শিশুদের এই প্রকার কাশিতে পেট্রোলিয়াম উপকারী।
 
গর্ভাবস্থার লক্ষণে:- গর্ভাবস্থায় পোয়াতির প্রায় সকল প্রকার পাকস্থলীর পীড়ায় গা বমি, বমি মুখ দিয়া সৰ্ব্বদা লালা নিঃসরণ প্রভৃতিতে ইহা উপকারী।

অর্শরোগে লক্ষণ:- এই পীড়ায় মলদ্বার ফাটা, চুলকানি, শীতকালে পীড়ার বৃদ্ধি হয়। অর্শের সাথে চর্মপীড়া, রোগীর কপি সহ্য হয় না।

প্রান্তদেশের লক্ষণ:- সন্ধিস্থানে কটকট করে। পুরাতন মচকানো ব্যথা। জানুর কঠিনতা। প্রতি শীতকালে আঙ্গুলের ডগাগুলি কর্কশ, বিদীর্ণ ও ফাটা ফাটা হয় ।

বৃদ্ধি:- পেট খালি হইলে উদর সংক্রান্ত রোগ, মাথা ঘোরা, শীতের দিনে, স্থলযান বা জলযানে, ঝড়, বিদ্যুৎপূর্ণ আবহাওয়ায়, শয্যাতাপে, সঞ্চালনে।

উপশম:- গ্রীষ্মের দিনে (চর্মপীড়া), রাত্রিকালে (আমাশয় ও উদরাময়), সম্মুখ দিকে নত হইলে (উদরশুল), মাথাটি উঁচু করিয়া স্থির ভাবে অবস্থান করিলে (মাথাঘোরা)।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- বাতে কষ্টিকামের সহিত, চর্মরোগে গ্রাফাইটিসের সহিত, গা বমি ককুলাসের সহিত সদৃশ সম্বন্ধ।

সম্পূরক ঔষধ:- সিপিয়া । 

পরবর্তী ঔষধ:- নাক্স, পালস, সিপিয়া, ব্রায়ো, ক্যালকেরিয়া, লাইকো, সালফার, সাইলিসিয়া, এসিড নাইট্রিক।
 
ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ককুলাস, নাক্স । 

ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৪০ হইতে ৫০ দিন । 

ব্যবহারের ক্রম বা শক্তি:- ৬x হইতে ১০০০ শক্তি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ