ভিরেট্রাম এলবাম - VERATRUM ALBUM

  ভিরেট্রাম এলবাম 
VERATRUM ALBUM






 

প্রতিশব্দ:- এলিবোমাম এলবাম, হেলিবোরাস এলাবাস, সাদা হেলিবোরাস, ইউরোপীয়ান হেলিবোর, ভেরেট্রাম ।

বর্ণনা ও উৎস:- হেলিবোরাস এলাবাস নাম গাছড়া হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। এই গাছটি ৫ ফুট লম্বা কান্ড বিশিষ্ট এক প্রকার গাছড়া। জুন হইতে আগষ্ট মাসে এই সকল গাছড়ায় হলুদ বর্ণের অথবা হলুদ সাদা বর্ণের ফুল ফুটিয়া থাকে। গাছড়ার সকল অংশই তীব্র কটূ গুণ বিশিষ্ট এবং বিষাক্ত। কিন্তু মূলের স্বাদ তিক হইয়া থাকে। শুষ্কমূল ঔষধে ব্যবহার হয়।

উৎপত্তিস্থান:- ইউরোপ, রাশিয়া, চীন ও জাপানের পার্বত্য অঞ্চলের নিকটবর্তী আর্দ্র স্থানে এই সকল গাছড়া জন্মিয়া থাকে।

প্রস্তুত প্রণালী:- জুন মাসের প্রথম দিকে ফুল আসার আগে- সংগৃহীত গাছড়ার মূল হইতে ইহার অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। পরে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে পরিশ্রুত সুরাসার সহযোগে উচ্চ শক্তির ঔষ প্রস্তুত হয়।
 
পস্তুতির ফরমুলা:- এফ ৪।

গ্রুভার:- মহাত্মা হ্যানিমান ১৮০৫ খৃষ্টাব্দে ইহা প্রুভ করেন।

ক্রিয়াস্থান:- মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের স্নায়ুমণ্ডলীর ভিতর দিয়া শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, পরিপোষণ যন্ত্র, জীবনী শক্তি ও হৃদপিণ্ডের উপর বিশেষ ক্রিয়া প্রকাশ করে। ইহার ক্রিয়ার ফলে পাকাশয় যন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে প্রদাহ উপস্থিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে। উদর যন্ত্রেই প্রধান ক্রিয়া দেখা যায়। মস্তিষ্কের উপর ক্রিয়ার ফলে বিকার ও কামোন্মাদ লক্ষণ উপস্থিত হয়।

চরিত্রগত বা পরিচায়ক লক্ষণ:
১) ভেদ, বমি, ঘর্ম প্রভৃতি শরীরস্থ সকল প্রকার স্বাভাবিক স্রাব অত্যধিক পরিমাণে নিঃসৃত হয়। দুর্গন্ধযুক্ত মল, প্রচুর ঘর্ম ও বমন ।
২) জীবনী শক্তির দুর্বলতা ।
৩) কপালে ঠাণ্ডা ঘর্ম এবং সমস্ত শরিরল ঠান্ডা।
৪) প্রচণ্ড পিপাসা ও অম্ল খাইবার ইচ্ছা, জলপানেও পিপাসার মেটে না।
৫) অতি সত্ত্বর দৈহিক তেলের হ্রাস। ভয়ানক অবসাদ, গায়ের চামড়া শীতল এবং চিমটি কাটিলে লোম খাডিয়ে যায়।
৬) মুখ বসিয়া যায়, নাক উঁচু হয়, সমস্ত শরীরে বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা হয়, হাতে পায়ে খিল ধরে।
৭) মল ত্যাগের আগে কখনও পেটে বেদনা থাকে, কখনও থাকে না। মল সজোরে নিঃসৃত হয় এবং মলে অবসাদ আসে। মল চাল ধোয়া জলের মত বা কুমড়া পচার মত। 
৮) রোগী একলা থাকিতে পারে না অথচ কাহারও সাথে কথাও বলে না।
৯) রোগী মনে করে যে, সে স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ করিতেছে। 

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- কলেরা, ভেদবমি, কোষ্ঠবন্ধতা, শিরঃপীড়া, মস্তিষ্ক বিকৃতি, জ্বর, বাত ও স্নায়ুশূল, হৃৎপিণ্ডের পীড়া, শ্বাসনলী প্রদাহ যকৃতের পীড়া, পক্ষাঘাত, স্ত্রীপীড় (বাধক) প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়।

প্রান্তদেশে কার্যকারিতা:- প্রান্তদেশ বলিতে হস্তপদ, মস্তক ও বহির্দেশ বুঝাইয়া থাকে। ইহার রোগীর মুখ পাণ্ডুবর্ণের, চোখ বসা, যেন মরা মানুষের মত। কপালে শীতল ঘর্ম এবং সার্বদৈহিক হিমাঙ্গতা। হাত পায়ে খিল ধরে, নাক উঁচু হয়। ঘাড় অতিশয় দুর্বল, মাথা খাড়া রাখিতে পারে না, বাঁকিয়া পড়ে, বিশেষতঃ শিশুদের হুপিং কাশিতে। মুখ, নাকের অগ্রভাগ, পায়ের পাতা, হাত পা, বাহু প্রভৃতি বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা। মস্তকের উপরিভাগ ঠাণ্ডাবোধ। শয্যায় শয়ন করিলে মুখ রক্ত বর্ণ হয়, উঠিলেই ফ্যাকাশে হইয়া যায়। বৃষ্টি ও বাতাস হইলে হাতে পায়ে বেদনা।

ঘর্ম লক্ষণ:- কপালে শীতল  ঘর্ম এই লক্ষণটি ভিরেট্রামের পথ প্রদর্শক। এই লক্ষণটি ভিরেট্রাম ভিন্ন অন্য কোন ঔষধে নাই। যে কোন পীড়াতে কপালে শীতল ঘর্ম দেখিলে ভিরেট্রাম প্রয়োগ করিতে হইবে। কলেরা, টাইফয়েড, নিমোনিয়া, হাঁপানী, কোষ্ঠবদ্ধ প্রভৃতি, কোলাপস, অবসন্নতা ও মুর্ছাভাব দেখিতে পাইলে তৎক্ষণাৎ ভিরেট্রাম এলবাম প্রয়োগ করা উচিত

কলেরায় লক্ষণ:- ভেদ বমন, ঘর্ম ও শীতলতার প্রাচুর্য পূর্ণ ঔষধ ভিরেট্রাম আসন্ন মৃত্যু অবস্থায়, বিশেষ করিয়া কলেরা রোগে প্রায়ই প্রয়োজন হয়। শরীরস্থ সকল প্রকার স্বাভাবিক স্রাবের প্রচুরতা এবং জীবনীশক্তির দুর্বলতা এই দুইটি চরিত্রগত অবস্থার মধ্য দিয়া রোগীর যখন সার্বদৈহিক অবসন্নতা ও হিমাঙ্গতা উপস্থিত হয় তখন ইহার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বমিতে খাদ্যবস্তু, পিত্ত ও অনেক সময় রক্তও মিশ্রিত থাকে। ইহার মল জলবৎ পাতলা, প্রথমে মলে বেশ রঙ থাকে। ক্রমশঃ ভেদ যত ঘন ঘন হইতে থাকে, ততই বর্ণ চলিয়া যায় ও কুমড়া পচা ছিবড়ে ছিবড়ে পাছাভাতের বা চাউল ধোয়ানি জলের মত বর্ণ হইয়া আসে। নাড়ী সুপ্ত হইয়া জিহ্বা শীতল, শ্বাস প্রশ্বাস শীতল। মলত্যাগের পূর্বে ইহার রোগী অস্ত্র মধ্যে প্রচণ্ড খামচানি ব্যথা বোধ করে এবং পেটটি গড় গড় করিয়া ডাকে, মলত্যাগের সময় কপালে ঠাণ্ডা ঘাম দেখা দেয়। উপরে মোচড়ানি বেদনাসহ বিবমিষা, বমন, শীত ও কম্প আরম্ভ হয় এবং বিবর্ণ আকার ধারণ করিয়া অনেক সময় মুর্ছাষিত হইয়া পড়ে। মলত্যাগের পর উদরে নিরতিশয় শূণ্যতা বোধ ও খালি খালি ভাব, সার্বদৈহিক দুর্বলতা দেখা দেয়। ইহার বমন জলপানে বা সামান্যতম সঞ্চালনে বৃদ্ধি পায়। বমি হুড় হুড় করিয়া হয়। কখনও জলের মত, কখনও সবুজ, কখনও হরিদ্রাবর্ণের, ফেনামত, কখনও টক, বমির পর পেটে খিল ধরে, ডেন বমনের পরই রোগী নিঝুম হইয়া পড়ে। ভেদ বমন বৃদ্ধির সাথে রোগী হস্তপদের আক্ষেপ দেখা দেয়, হাতের ও পায়ের চামড়া কুঁচকাইয়া যায় । শীতল জলপানের আগ্রহ, জলপানের পরেই বমি।

ভিরেট্রাম ও সিকেলি করের তুলনা:-

ভিরেট্রাম এলবাম  

১। ভেদ চাউল ধোয়া জলের ন্যায় বা কুমড়া পচার ন্যায় ছিবড়ে ছিবড়ে ।
২। ভেদ অপেক্ষা বমির ভাগ বেশী।
৩। ভেদ বমির পর দুর্বলতা ও হাত পায়ে প্রচণ্ড খিলধরা আছে।
৪। গায়ে জ্বালাপোড়া নাই ।
৫। শরীর বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা এবং গায়ে কাপড় রাখে।
৬। কপালের উপর ঠাণ্ডা ঘাম । 
৭। ইহা শীত কাতর।
৮। রোগী শীতলতা অভিলাষ করে, কিন্তু তাহাতে উপশম হয় না। গরমে উপশম হয়। 

সিকেলি কর

১। ভেদ চাউল ধোয়া জ কিংবা কলের জলের ন্যায় বর্ণহীন।
২। বমি অপেক্ষা কাট বমি ও ওয়াক তোলা বেশী।
৩। ভেদবমির পর দুর্বলতা আছে কিন্তু হাত পায়ে হিলধরা নাই। 
৪। ইহাতে গায়ে প্রচুর জ্বালা আছে।
৫। শরীর বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা অথচ গায়ে এক মুহূর্তের জন্যও কাপড় রাখিতে পারে না।
৬। কপালে ঠাণ্ডা ঘাম নাই । 
৭। ইহা গরম কাতর।
৮। রোগী শীতলতা অভিলাষ করে এবং তাহাতে উপশমও হয়। গরমে ইহার বৃদ্ধি।

 
কলেরায় ভিরেট্রাম ও আর্সেনিকের প্রভেদ:-

ভিরেট্রাম এলবাম

১। অত্যন্ত পিপাসা রোগীর শীতল জলপানে আকাংখা, প্রতিবারে প্রচুর জলপান করে।
২। ভেদ বমি পরিমান প্রচুর ।
৩। ভেদ বমির পরিমানের অনুপাতে অবসাদ আসে অর্থাৎ যে পরিমাণে ভেদ ও বমি হয়, সেই পরিমাণে পরিমানে অবসান জন্মে। 
৪। মানসিক অস্থিরতা কম।

আর্সেনিক এৰাম

১। অত্যন্ত পিপাসা-কিন্তু বার বার সামান্য পরিমাণে জলপান করে। জলপান করিবা মাত্রই ভেদ ও বমি হয়।
২। ভেদ বমির পরিমাণ কম কিন্তু সর্বদা বাহ্যের বেগ ও কাট বমি থাকে।
৩। প্রগাঢ় অবসাদ। ভেদ বমির পরিমাণের অনুপাতে শরীরে যেরূপ অবসাদ আসা স্বাভাবিক তাহার চেয়ে অনেক বেশী অবসাদ আসে।
৪। মানসিক অস্থিরতা খুব বেশী ।



কোষ্ঠবদ্ধতার লক্ষণ:- ইহার মল খুব শক্ত ও খুব বড় লম্বা ন্যাড়, রং কাল। অনেক সময় বেশ কয়েকদিন ধরিয়া ইহার রোগীর কোনও প্রকার মলবেগেই থাকে না। গোলাকৃতি কাল বলের মত মলপিত্ত গুহাপথে আটকাইয়া থাকে (চেলিডো, ওপিয়াম, প্লাম্বাম)। শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক ঐ প্রকার কোষ্ঠবন্ধে ইহা অনেক সময় লাইকোপোডিয়ান ও নাক্সের পর প্রয়োজন হয়। ঐরূপ কোষ্ঠবদ্ধতাসহ অনেক রোগী উদরে বায়ু সঞ্চয় ও তজ্জনিত শূল ব্যথার উদয় হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বিবমিয়া ও বমনের আবির্ভাব ঘটে এবং রোগীর কপালটি ঠাণ্ডা ঘামে পূর্ণ হইয়া উঠে। ইহার রোগী ঠাণ্ডা খাদ্য ও পানীয় পান করিতে চায়। অম্লবস্তু ও ফল ইহার প্রিয় খাদ্য, কিন্তু ফল ভক্ষণে পেটটি বায়ুতে ফুলিয়া উঠে। সেজন্য বেদনার আবির্ভাব ঘটে।

শিরঃপীড়ায় লক্ষণ:- ভিরেট্রামে স্নায়ুশূল জাতীয় প্রচণ্ড প্রকৃতির কষ্টকর শিরঃপীড়ার সহিত হিমাঙ্গতা, রক্ত ও পিত্তমিশ্রিত বমন ও কপালে প্রচুর ঘাম দেখা দেয় এবং সেজন্য রোগী একেবারে অবসন্ন হইয়া পড়ে। অধিকন্তু শিরঃপীড়ার সময় মস্তিষ্কে প্রচণ্ড বেগে রক্ত প্রবাহ চলিতে থাকা সত্ত্বেও রোগীর মনে হয়, তাহার মাথার মধ্যে যেন বরফ ভর্তি রহিয়াছে ঐ সঙ্গে প্রাপ্তদেশসমূহ ও ঠাণ্ডা অনুভূত হয় ।

মস্তিষ্কবিকৃতি লক্ষণ:- ভেদ, বমন, হিমাঙ্গতা, পিপাসা ইত্যাদির মাত্রা যেমন ভিট্রোমে প্রচণ্ড, সেইরূপ অশ্লীলতা ও বাচালতাপূর্ণ প্রচণ্ড প্রকৃতির উন্মাদ লক্ষণও ইহাতে লক্ষ্য করা যায়। ঘরের প্রতিটি জিনিষ পত্র চুরমার করিবার প্রবৃত্তি, বিশেষ করিয়া নিজের পরিধেয় জামা কাপড় ছিঁড়িয়া ফেলার একটি অদম্য বাসনার সহিত উলঙ্গ হইবার এবং যাহাকে তাহাকে চুম্বন করিবার ইচ্ছা উন্মাদ অবস্থার প্রকৃষ্ট লক্ষণ। কর্মশূণ্য ভাবে চুপচাপ থাকা ইহার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব, কোনও কাজ না থাকিলে ঘরের আসবাবপত্র একত্র স্তূপীকৃত করিয়া ইহার পাগল রোগী সময় কাটাইতে চায়। ঐ কাজে তাহাকে বাধা দিলে সে নিজের পরিধেয় বস্ত্রাদি ছিঁড়িতে থাকে, অপরকে কামড়াইতে যায় অথবা নতজানু হইয়া সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করিতে থাকে। অনেক সময় নিজেকে কোনও মহাপুরুষ মনে করিয়া অন্যকে নিজের হুকুম তামিল করিতে বলে বা অভিসম্পাত বর্ষণ করিতে থাকে। প্রস্রাবের সময় অনেক সময় ইহার স্ত্রীরোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয় হইয়া আক্ষেপসহ ঐ প্রকার উন্মাদ ভাব প্রায়ই প্রকাশিত হইতে দেখা যায়। অন্যান্য ঔষধের উন্মাদ লক্ষণের সহিত ইহার বিভিন্নতা এই যে, উন্মাদের উপরোক্ত প্রকার প্রচণ্ডতা কিছুক্ষণ চলিবার পর ভিরেট্রাম এলবামের পাগল রোগীর মুখমণ্ডলটি নীলাভ হইয়া উঠে। মাথাটি বরফের মত ঠাণ্ডা অনুভূত হয় এবং কপালে প্রচুর ঘাম বাহির হইতে থাকে। সারা জগৎ জুড়িয়া অগ্নিকাণ্ড চলিতেছে মনে করে, আবার কখনও কাল্পনিক দুর্ভাগ্যের কথা চিন্তা করিয়া ঘরের ভিতর নত মস্তকে চুপচাপ বসিয়া থাকে বা চীৎকার করিয়া বিলাপ করিতে থাকে। 

স্ত্রীলোকদের পীড়ায়:- স্ত্রীলোকের যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবের সহিত ইহার এমন কার্ব ও বোভিষ্ট্যার মত ভেদ ও বমন বা অবসাদকারী উদরাময় চলিতে থাকে। তবে ভিরেট্রামের বৈশিষ্ট্য এই যে ঐ সঙ্গে প্রচুর ঠাণ্ডা ঘাম চলিতে থাকায় দুর্বলতার আতিশয্যে রোগিনী একেবারে শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে। কাজেই, ইহার লক্ষণযুক্ত স্ত্রীরোগী মাত্রেই প্রত্যেক ঋতুস্রাব আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বিমর্ষ হতাশ নিরানন্দের সমাচ্ছন্ন হইয়া উঠে- সমগ্র জগৎটি তাহার নিকট ঘোর অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন বলিয়া মনে হয়। ঐ অবস্থাটিকে বেশীদিন ধরিয়া চলিতে দিলে রোগিনীর যে কোনও ব্যক্তিকে চুম্বন করিবার প্রবৃত্তি বা মুর্ছা প্রবণতা দেখা দিবার সম্ভাবনা। ভিরেট্রাম এলবাম রোগিনী অনেক সময় নিজেকে গর্ভবর্তী মনে করেও সত্বর যে একটি শিশু সন্তান প্রসব করিবে ধারণা করে।

বাত ও স্নায়ুশূলে:- ইহার বাতের ব্যথা ও স্নায়ুশূল বর্ষার ভিজার আবহাওয়ায় দেখা দেয় এবং শয্যায় উত্তাপে বৃদ্ধি পায় ও অবিরাম চরিয়া বেড়াইলে উপশমিত হয়। সেজন্য ইহার রোগী রাত্রিকালে শয্যাত্যাগ করিয়া ঠাণ্ডা মেঝের উপর কেবলই পায়চারি করিতে বাধ্য হয়।

জ্বরপীড়ায় এবং কাশিতে:- ম্যালেরিয়া জাতীয় সবিরাম প্রকৃতির জুরে কোষ্ঠবদ্ধ বা কলেরা সদৃশ ভেদ ও বমন যাহাই থাকুন না কেন, সেই সঙ্গে কপালে প্রচুর ঘাম, প্রচুর পিপাসা ও হিমাঙ্গতা, এই লক্ষণ কয়টি বর্তমান থাকিলে ইহা সুন্দর কাজ করে। ইহার ঐ পিপাসা শীত, তাপ ও ঘর্ম সকল অবস্থাতেই বর্তমান থাকে। তবে নিরতিশয় হিমাঙ্গতা হেতু ইহার তাপাবস্থা প্রায়ই আসিতে দেখা যায় না। হিমাঙ্গতা সত্ত্বেও ইহার রোগী ঠাণ্ডা জল, ঠাণ্ডা খাদ্য, পানীয় পছন্দ করে। ভোর ৫টায় ইহার জ্বর আসা ও বৃদ্ধির নির্দিষ্ট সময়। ভিরেট্রাম এলবামের জ্বর রোগীকে দেখিলেই মনে হয়, এখনই বুঝি সে মারা যাইবে, কেননা সার্বদৈহিক হিমাঙ্গতা সহ তাহার চোখ মুখ বসিয়া যায়, নাকের অগ্রভাগটি সরু হইয়া উঠে এবং হাত পাগুলি বহুক্ষণ জলে ভিজাইয়া রাখিলে যেমন ঠাণ্ডা ও চুপসাইয়া যায় সেইরূপ আকার ধারণ করে। ঐ সঙ্গে সর্বদেহ ঘামে ভিজিয়া যায় ইহাই শেষাবস্থার চিত্র। কোনও কোনও রোগীর জ্বরের সহিত ব্রঙ্কাইটিস ও তরল শ্লেষ্মাটুকুও উঠে না এবং ক্রমে রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চলিতে আরম্ভ করে, নাড়ী সুতার ন্যায় ক্ষীণ ভাবে চলিতে থাকে। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসকষ্টের মধ্য দিয়া রোগী হিমাঙ্গ ও দুর্বল অবস্থাতেও রোগী ঠাণ্ডা জল পান করিতে চায়। হুপিং কাশিতে কাশির ধমকে ছেলে অসাড়ে বাহ্য প্রস্রাব কিম্বা বমি করিয়া ফেলিলেও তৎসহ শীতল ধর্ম থাকিলে ভিরেট্রাম উপকারী।

হৃৎপিণ্ড ও নাড়ী:- ভিরেট্রামে অত্যন্ত বুক ধড়ফড়ানি, তৎসহ উদ্বেগ ও অস্থিরতা, শ্বাসপ্রশ্বাসে জোর শব্দ। নাড়ী দ্রুত, ধীর, ক্ষীণ, সবিরাম ।

বৃদ্ধি:- পরিশ্রমে, সামান্যতম নড়াচড়ার, জলপানে, ঋতুস্রাবের আগে ও সময়ে, ভয় পাইলে, ভিজা ঠাণ্ডায়, মলত্যাগে, ঘর্মে, ফলতক্ষণে ও রাত্রিকালে।

উপশম:-  ঘুরিয়া বেড়াইলে (বাতের যন্ত্রণা), আচ্ছাদনে ও শুইয়া থাকিলে ।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- ভিরেট্রাম সাধারণত আর্সেনিক, আর্ণিকা, চায়না কুপ্রাম ও ইপিকাকের পর, ওল উঠা রোগে ক্যাক্ষরের পর, বমন বিরেচকসহ বাধক বেদনাতে এমন কার্ব, কার্বোভেজ ও বোডিষ্টার পর ভিরেট্রাম ফলপ্রদ ।

তুলনীয় ঔষধ:- অশ্লীল কথা বার্তায় হায়োসিয়ামস, জলপানে বমনে, আর্সেনিক, উদরাময়ে পড়ো এবং আক্ষেপে ইগ্নেশিয়া।

অনুপূরক বা পরবর্তী ঔষধ:- আর্নিকা, কার্বোভেজ, চায়না, কুপ্রাম মেট, পালসেটিলা, আর্জেন্ট নাইট, ক্যামোমিলা, সালফার, স্যাম্বুকাস।
 
ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- একোনাইট, আর্সেনিক, ক্যাক্ষর, চায়না, কফিয়া।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ২০ হইতে ৩০ দিন।

শক্তি বা ক্রম:- ৬, ৩০, ২০০ শক্তি। (উদরাময়ে ৬ষ্ঠ শক্তির নিম্নে ব্যবহার করা উচিত নয়)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ