জন্মগত হৃদপিণ্ডের পীড়া - Congenital Heart Diseases, চতুর্থ বর্ষ - প্র্যাকটিস অব মেডিসিন

 দ্বিতীয় অধ্যায়
জন্মগত হৃদপিণ্ডের পীড়া
Congenital Heart Diseases





জন্মগত হৃদপীড়ার সংজ্ঞা:-
বিভিন্ন কারণে যদি জন্মের পরেই বিশুদ্ধ রক্ত দেহের সর্বত্র পরিচালিত হইতে না পারে এবং বাধাপ্রাপ্ত হয়, যদি হৃদপিণ্ডের ভালবগুলি কোনও প্রকার বিকৃতি ঘটে এবং হৃদপীড়ার সৃষ্টি হয় তাহাকে জন্মগত হৃদপীড়া বলে ।

জন্মগত হৃদপীড়ার শ্রেণীবিভাগ:
জন্মগত হৃদপীড়ার শ্রেণীবিভাগ : জন্মগত হৃদপীড়াসমূহকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সিসটেমিক ও পালমোনারী রক্তসঞ্চালনের মধ্যে চলাচলের ত্রুটি। যেমন--- Artial septal defect, Vetricular septal defect প্রভৃতি।
২) অবস্ট্রাকশন লীন (Obstruction Lesions)। যেমন- পালমোনারী স্টেনোসিস (Pulmonary Stenosis), এওটিক স্টেনোসিস (Aortic Stenosis)।
৩) চেম্বার, ভেসেল অথবা ভালব এর স্থানচ্যুতি। যেমন- ডেক্সট্রোকার্ডিয়া, ডানদিকের এওটা (Right Sided Aorta), টসিংডিং (Toussinding), সিনড্রম (Syndrom) প্রভৃতি।

জন্মগত হৃদপীড়ার কারণতত্ত্ব:-
১) ফুসফুসে রক্তচাপ সৃষ্টি হইলে, পীড়ার কারণে হৃদপিণ্ড স্ফীত বা প্রসারিত হইলে।
২) পালমোনারী শিরা স্ফীতি ঘটিলে।
৩) পীড়া হেতু দূষিত রক্ত পরিশোধিত না হইয়া পুনঃপ্রবেশ করিলে। 
৪) পেটে গ্যাস জমিয়া বা বিভিন্ন কারণে হৃদপিণ্ডে চাপ পড়িয়া শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটিলে ।
৫) অতিরিক্ত গরম ও ঠাণ্ডা লাগিলে ।
৬) শিশুকে প্রয়োজনাতিরিক্ত অঙ্গ চালনা করাইলে। 
৭) বিভিন্ন কারণে হৃদপিণ্ডের ভালভসমূহ কোন কাজ না করিলে।
৮) ২ হইতে ৩ মাসের গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা এবং অন্যান্য ভাইরাস জীবাণুর সংক্রমণ। মায়ের অসুস্থাবস্থায় মায়ের পেটে সন্তানের জন্ম হইলে। 
৯) হাইপার ক্যাল্কেমিয়া এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা।
১০) গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব।
১১) মায়ের ত্রুফিউলা ধাতুগত অবস্থা ইহার অন্যতম কারণ।
১২) বংশগত কারণ।

জন্মগত হৃদরোগের লক্ষণাবলী বা উপসর্গ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার:-
(১) কাতরতা অস্থিরতা ও ছটফটানি দেখা দিতে পারে ।
২) মাথাঘোরা, চোখ মুখ বিবর্ণ হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
৩) অনিদ্রা, খিঁচুনী প্রভৃতি দেখা দেয় ।
৪) শ্বাসরুদ্ধতা এবং শ্বাসনিষ্ক্রিয়তার লক্ষণ দেখা দেয় । 
৫) সিসটেমিক রক্ত সঞ্চালনে যখন ডি অক্সিজেনেটেড রক্ত প্রবেশ করে তখন সেন্ট্রাল সায়ানোসিন দেখা দেয়।
৬) শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা এবং অনেক সময় হার্ট ফেলের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৭) পালমোনারী এরিয়াতে সিসটোলিক মার্মার এবং ট্রাইকোসপিড এরিয়াতে মিড ডায়াস্টোলিক মারমার পাওয়া যায়।

জন্মগত হৃদপীড়ার চিকিৎসা:-
জন্মগত হৃদপীড়ার চিকিৎসা ও ঔষধের সাহায্যে এই পীড়ার চিকিৎসা করা হইলে আরোগ্যের আশা করা যায় কারণ এই পীড়ায় দেহযন্ত্রের ত্রুটি দেখা দেয় এবং ঔষধ দ্বারা আরোগ্যের ক্ষেত্র নয়। ইহা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্র। তাই যত শীঘ্র সম্ভব অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ঔষধগুলি লক্ষণানুসারে ব্যবহারে উপকার দর্শে।

ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:-
১) ডিজিট্যালিস- রোগীর নাড়ী ধীর গতি বিশিষ্ট, অনিয়মিত, দুর্বল ও সবিরাম অর্থাৎ আ, ৫ম, ৭ম স্পন্দন হয় না এবং শোথ লক্ষণ প্রকাশ পায়। শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত ও কষ্টকর, বুকে সুঁচ ফোটানো ব্যথা, সর্বদাই ভয়, বিষণ্ণতা। সামান্য নড়াচড়ায় যেন দম বন্ধ হইয়া যাইবে।
২) একোনাইট— হৃদপিণ্ডে রক্ত জমিয়া বুকে বেদনা, বুকে ধড়ফড়ানি, শ্বাসকষ্ট। উৎকণ্ঠাজনিত হৃদকম্প, অনেক সময় মূর্ছা যায়। বুকে সূচীভেদ্য বেদনা, সোজা হইয়া দাড়াইতে বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস লইতে কষ্ট। অত্যধিক মৃত্যু ভয়।
৩) ক্যাকটাস- রোগী যেন দমবন্ধ হইয়া মূর্ছার মত হইয়া পড়ে, বুকে তীব্র বেদনা, মনে হয় কি একটা ভারী জিনিস তাহার হৃদপিণ্ডের উপর চাপানো আছে। বুকে যেন কেহ জোরে মুঠা করিয়া চাপিতেছে। হৃদপিণ্ডের শোথ, অঙ্গ প্রতঙ্গে শোথ, কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস।
৪) ল্যাকেসিস- নিদ্রার পর বা নিদ্রার উপক্রমে শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, রোগী মনে করে
হৃদপিণ্ড যেন চাপিয়া ধরিয়া রাখিয়াছে।
৫) জিজ্ঞাম- প্রতিক্রিয়া শক্তির অভাবযুক্ত জীবনীশক্তির নিস্তেজতা। হৃদপিণ্ডের মধ্যে সহসা ধাক্কা ও ঝাঁকি বোধ। কার্ডিয়াক এরিয়ার স্ফীতি ও স্পর্শে অত্যধিক বেদনাবোধসহ দুরস্ত হৃদস্পন্দন।
ইহা ছাড়া এই পীড়ায় আর্সেনিক, নাক্সভন, প্রভৃতি ঔষধগুলিও লক্ষণানুযায়ী ব্যবহৃত হয়।

জন্মগত হৃদপীড়ার ভাবীফল:-
এই পীড়ার ভাবীফল মারাত্মক পীড়া দেখা দিলে প্রথমাবস্থায় সুচিকিৎসায় উপকার হইতে পারে। সুচিকিৎসা না হইলে বহুদিন পর্যন্ত রোগীকে কষ্ট দিতে পারে। বয়স বেশী হইলে রোগ আরোগ্যের সম্ভাবনা খুবই কম এবং হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতাজনিত রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ