ব্যাপটিসিয়া টিংটোরিয়া - Baptisia Tinctoria

 ব্যাপটিসিয়া টিংটোরিয়া 
(Baptisia Tinctoria)




প্রাকৃতিক অবস্থা ঃ লেগুমিনোসা।


প্রতিশব্দ : পোডেলাইরিয়া টিংটোরিয়া, বন্যনীল, নীলের ঝাঁটা, ইণ্ডিগো উইড, র‍্যাটেল বুস, ইয়েলো ক্রম, ব্যাপটিসি ।

গাছের বর্ণনা ঃ ইহা এক প্রকার ২ হইতে ৩ফুট উঁচু বর্ষজীবী জংলী গাছড়া। কাণ্ড গোলাকার, মসৃণ ও বহু শাখা বিশিষ্ট। পাতাগুলি ছোট এবং তিনপত্র বিশিষ্ট । পাতার কিনারা কিছুটা অণ্ডাকৃতি । ইহার বর্ণ নীল, সবুজ এবং পাতার শেষভাগে কোন বৃত্ত থাকে না। কাষ্টবৎ মূল ছোট আকারের হইয়া থাকে। বাহ্যিক দিক দিয়া কালো বর্ণের কিন্তু ভাঙ্গিলে ভিতরে হলুদ বর্ণ দৃষ্ট হয়।

উৎস : বন্যনীল নামক এক প্রকার গাছের মূল ও ছাল হইতে এই ঔষধটি প্রস্তুত হয়।
প্রাপ্তিস্থান : আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্থানেই ইহা জন্মিয়া থাকে।

প্রুভার : ডাঃ খোম্পসন ১৮৫৭ খৃঃ সর্বপ্রথম ইহা প্রুভ করেন।

প্রস্তুত প্রণালী : বন্যনীলের মূলের ছাল পরিশ্রুত সুরাসার সহযোগে হোমিও ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুসারে মূল অরিষ্ট প্রস্তুত করিতে হয়। 
২x শক্তি প্রস্তুত করিতে ১ ভাগ অরিষ্ট ২ভাগ পরিশ্রুত জল এবং ৭ভাগ সুরাসার প্রয়োজন হয়। ৩x এবং উচ্চ শক্তিতে পরিশ্রুত সুরাসার প্রয়োগ হয়।

ফরমুলা ঃ এফ-৩।

ক্রিয়াস্থান : রক্তের উপর ব্যাপটিসিয়ার প্রধান ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যায় । রক্তের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া ইহা রক্ত বিকৃতি ঘটাইয়া থাকে। ইহার ক্রিয়া দ্বারা গতি শক্তি ও জ্ঞান শক্তি বিধায়িনী স্নায়ুমণ্ডলী আক্রান্ত হইয়া গতি ও জ্ঞানের পক্ষাঘাত ও অবসাদ আনয়ন করিয়া থাকে। মস্তিষ্কের উত্তেজনা, চিত্তের চাঞ্চল্য, দুর্বলতা, মাংসপেশী সমূহে বেদনা এবং শরীর মধ্যস্থ সমস্ত পদার্থ পঁচিয়া যাওয়ার মত লক্ষণ ইহাতে উৎপন্ন হয় । শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ইহার ক্রিয়ার ফলে মুখ, গলমধ্য ও অন্ত্রের ক্ষত উৎপন্ন হয়।

ধাতু : শ্লেষ্মা ও রস প্রধান ধাতুতে এই ঔষধ ক্রিয়া করিয়া থাকে।

মানসিক লক্ষণ :
১। রোগী উদাসীন, কোন কার্যে মন সংযোগ করিতে পারে না।
২। কোন বিষয়ে চিন্তা শক্তি লোপ ।
৩। মানসিক বিভ্রান্তি, সে যেন দুইটি দেহ ধারণ করিয়াছে ।
৪। রোগী নিজে নিজেই এমন ভাবে কথা বলে থাকে যেন সে অপরের সাথে কথা বলিতেছে।
৫। কেহ বিরক্ত করুক রোগী তাহা চায় না। মাতাল হওয়ার মত অবস্থা। 

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। যে কোন তরুণ পীড়ায় বাহ্য, প্রস্রাব, ঘর্ম, শ্বাস প্রশ্বাস, ক্ষতস্রাব সমস্ততেই পঁচা গন্ধ । 
২। টাইফয়েড জ্বরে আচ্ছন্নভাব, প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই নিদ্রিত হইয়া পড়ে, সঠিক উত্তর দেওয়া হয় না।
৩। টাইফয়েড জাতীয় জ্বরে উচ্চতাপ সহ মস্তিষ্ক লক্ষণ, আচ্ছন্ন ভাব ।
৪। পেট ফাঁপা, কিন্তু পেট টিপিলে নরম বোধ, পেটের মধ্যে গড় গড় শব্দ । 
৫। জিহ্বায় প্রথমতঃ সাদা প্রলেপ, প্যাপিলি লাল বর্ণ শুরু, মধ্যস্থলে হলদে কটা। রং, পরে শুষ্ক, ফাটাও ক্ষতপূর্ণ, দাঁতে ময়লা সঞ্চয় ।
৬। মুখ থমথমে ও লালবর্ণ, যে পাশ ফিরিয়া শোয় সেই পাশেই হেইল ব্যথা অনুভব ।
৭। তরল পানীয় গিলিতে পারে কিন্তু কঠিন দ্রব্য গিলিতে কষ্ট।
৮। শয্যাক্ষত।
৯। গলায় ক্ষত কিন্তু ব্যথা থাকে না।
১০। বিছানা শক্তবোধ ।
১১। প্রায় সর্ব শরীরে নীল কাল দাগ। সর্ব শরীরে বেদনা, অস্থিরতা।

রক্তের উপর লক্ষণ :
রক্তের উপর ব্যাপটিসিয়ার প্রধান ক্রিয়া ও প্রভাব বিদ্যমান। সুস্থ দেহে ইহা ব্যবহারে রক্তের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া রক্ত বিকৃতি ঘটাইয়া ইহা টাইফয়েড জ্বরের ন্যায় অবস্থা উৎপন্ন করে। রক্তের মাধ্যমে ইহা শ্লৈষ্মিক ঝিল্পীতে ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া মুখ, গলমধ্য ও অন্ত্রের ক্ষত উৎপন্ন করে এবং গতি ও জ্ঞানের পক্ষাঘাত ও অবসান আনয়ন করিয়া থাকে।

টাইফয়েড জ্বরে লক্ষণ :
প্রথমাবস্থায় এই ঔষধ প্রয়োগ করিলে টাইফয়েড অংকুরেই আরোগ্য হয়। টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রক্তদোষ জনিত পীড়া সমূহে ও শরীরের নিঃসৃত স্রাবে অত্যন্ত পঁচা দুর্গন্ধ থাকিলে ইহা অত্যন্ত উপকারী। টাইফয়েড জ্বরে জেলসিমিয়ামের লক্ষণের অবস্থা অতীত হইবার পরই ব্যাপটিসিয়ার লক্ষণ উপস্থিত হয় এবং উহা ব্যবহৃত হয়। টাইফয়েড জ্বর অতি শীঘ্র বাড়িতে থাকিলেও সেই সঙ্গে পেটের দোষ আসিয়া পড়িলে বিলম্ব না করিয়া ইহা প্রয়োগ করা উচিত। নতুবা অস্ত্রের তরল পদার্থের পচন আরম্ভ হইয়া সত্ত্বরই পীড়া কঠিন আকার ধারণ করে । টাইফয়েড জ্বরের প্রথম সপ্তাহে অস্ত্রে ক্ষত হইবার পূর্বে ও উচ্চ জ্বরে ইহাতে শীঘ্র উপকার হয়। বর্ধিত অবস্থায় ২য় বা ৩য় সপ্তাহে যখন সমস্ত শরীর ভয়ানক বেদনা, তলপেট ফাঁপা কিন্তু নরম, তলপেটে ডানদিকের কুচকির একটু উপরে টিপিলে গড়গড় শব্দ ও বেদনা, কখনও সমস্ত তলপেটে বেদনা ও অস্থিরতা, শীতবোধ, বিছানা শক্তবোধ, নাড়ী স্কুল ও কোমল কিন্তু দ্রুত, কখনও পরিবর্তনশীল, মস্তক ভার ও মোচড়ান বোধ, শিরঃপীড়া কাল্পনিক বিকার, বিকারে আচ্ছন্ন ভাব, অসংলগ্ন প্রলাপ বকা, ডাকিলে সাড়া দেয় কিন্তু কোনও কথা জিজ্ঞাসা করিলে আংশিক উত্তর দিয়া পুনরায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে। জানিয়া থাকিলেও প্রশ্নোত্তর করিতে অনিচ্ছা, সর্বদা পার্শ্ব পরিবর্তন করে মুখ থমথমে ও ঘোর লালবর্ণ, দস্তে ও ওষ্ঠে কাল বর্ণের ময়লা সঞ্চয়, জিহ্বার মধ্যস্থলে হলদে রঙের ময়লা কিন্তু ধার শুষ্ক, লাল বর্ণ ও চকচকে, পিপাসা, নিঃশ্বাস ও মল মূত্র সব কিছুতেই দুর্গন্ধ, মটর ডালের ঝোলের নায় সবুজ বর্ণের মল, তাহাতে ফেনা, অস্ত্রমধ্যে ক্ষত হইবার সম্ভাবনা প্রভৃতি টাইফয়েড পীড়ায় রক্তামশায়, কোঁথানি ও বেগ প্রভৃতি থাকে তখন ইহা উপযোগী।

পাকস্থলীর উপর ক্রিয়া :
রোগী শুধুমাত্র তরল পদার্থ পান করিতে পারে। গলনালীর আক্ষেপ বশতঃ ৰমন। পাকাশয়ের রোগ হইতে জ্বর। ক্ষুধাহীনতা, বার বার জল পান করিতে চায়। পাকাশয়ের উপরের অংশে বেদনা। মনে হয় যেন শক্ত কিছু আটকাইয়া আছে। মন ও বিয়ারে সকল লক্ষণের বৃদ্ধি। পাকস্থলী ও অস্ত্রে প্রদাহযুক্ত ক্ষত।
গর্ভপাতের পর সেন্টিসিমিয়া রোগে ব্যাপটিসিয়ার লক্ষণঃ
গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হইয়া যোনিয়ার দিয়া দুর্গন্ধ স্রাব নিঃসৃত হইলে এমনকি শেষে সেপটিসিমিয়া রোগ পর্যন্ত উৎপন্ন হইলে ইহার আভ্যন্তরীণ ব্যবহারে ও ডুসমারা বাহ্যিক যথা সময়ে প্রয়োগে বিপদের ভয় থাকে না। রোগিনী অতিশয় দুর্বল, প্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত, স্বল্প প্রস্রাব, শুইয়া থাকিলে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসেও দুর্গন্ধ থাকে।

রক্তামশায়ে লক্ষণ :
কুছন অনেক বেশী। বাহ্যে ভয়ানক দুর্গন্ধ ও রক্ত মিশ্রিত। অনবরত বাহ্যের ফলে রোগী কাহিল হইয়া মরণাপন্ন অবস্থা হয়। অনেক সময় ঘোলাটে ও কাল বর্ণের বাহ্য ব্যাপটিসিয়ার রক্তামশায় অতি সাংঘাতিক আকার ধারণ করে। বাহ্যের বেগ ও হইয়া থাকে। পেটে বেদনা মোটেই থাকে না। মুখ, শরীর এমনকি শ্বাসেও দুর্গন্ধ থাকে। ইহার রোগীর অতিশয় দুর্বল হইয়া পড়ে।

মুখ ক্ষতে লক্ষণ : 
গলা, দাঁত মুখ যে কোন স্থানেই ক্ষত হোক না কেন এমনকি ডিপথিরিয়ার ঘায়েও যদি অতিশয় দুর্গন্ধ থাকে, ক্ষতস্থান ঘোর লালবর্ণ হয় ও তাহাতে বেদনার লেশমাত্র না থাকে তবে ব্যাপটিসিয়া উপকারী। পারদ সেবন জনিত বা রক্তামশায় হেতু অথবা অন্য পীড়া হেতু মুখের এইরূপ ঘা হইলে উপরোক্ত লক্ষণে ইহা দ্বারা উপকার হইবে। প্রসূতি বা সন্তানের মুখের ঐরূপ পঁচা ঘায়ে এই ঔষধে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।

জিহ্বা লক্ষণে ব্যাপটিসিয়া, জেলস, ব্রায়ো ও রাসটক্সের তুলনা : ব্যাপটিসিয়া-জিহ্বার মধ্যভাগ কটা, অগ্রভাগ ও পার্শ্ব লালবর্ণ। ইহাতে কখনও জিহ্বা প্রথমে সাদা লেপযুক্ত দেখা যায়। পরে কটা রং ধারণ করে। 
জেলসিমিয়াম- জিহ্বায় লেপ সামান্য, জিহ্বা কাঁপে। 
ব্রায়োনিয়ায়-জিহ্বায় সাদা বর্ণের লেপ, ঠোঁট শুষ্ক, অতিশয় গিপাসা। 
রাসটক্সে জিহ্বার অগ্রভাগ লাল ও ত্রিভুজাকার ।

বৃদ্ধি : ঘরের ভিতর, ঘুম ভাঙ্গার পর, চলার সময়, ঠাণ্ডা বাতাসে, শরৎকালে, মদ্যপানে।

হ্রাস : পার্শ্ব পরিবর্তনে, মুক্ত বায়ুতে, ঘর্ম হইলে।

অনুপূরক ঃ এসিড নাইট্রিক, ক্রোটন, এসিড মিউর, হ্যামামেলিস, টেরিবিন্থ ।

সদৃশ ঃ ব্রায়োনিয়া, আর্স, আর্নিকা, জেলস ।

ক্রিয়া নাশক : ফাইটোলাক্কা, স্যাঙ্গুনেরিয়া ।

ক্রিয়া কাল : ৬ হইতে ৮দিন । 

ক্রম : ৪, ১×, ২x, ৬, ৩০, ২০০ শক্তি। (টাইফয়েডে ৪ এবং ১x শক্তি)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ