পুষ্টি ও খাদ্য, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য, দ্বিতীয় বর্ষ, ষষ্ঠ অধ্যায়

ষষ্ঠ অধ্যায় 

পুষ্টি ও খাদ্য

 




প্রশ্ন:- খাদ্য কাহাকে বলে? খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ কর।
            বা, খাদ্যের উপাদানসমূহ কি কি?

উত্তর : খাদ্য- যে সকল দ্রব্য আহার করিলে আমাদের শরীরের ক্ষয় পূরণ, পুষ্টি সাধন ও বৃদ্ধি পায়, তাপ ও শক্ত উৎপাদিত হয় এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি প্রভৃতিতে সহায়তা করে তাহাকে খাদ্য বলে। খাদ্যের শ্রেণী বিভাগ বা খাদ্যের উপাদান- খাদ্যের উপাদান ছয় প্রকার।
যথা-
i) আমিষ জাতীয় বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য (Protein) : যেমন-মাছ, মাংস, ছানা, দুধ, বাদাম প্রভৃতি। ইহা দেহের ক্ষয় পূরণ ও পুষ্টি বর্ধন করে।
ii) শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য (Carbohydrates) : যেমন- ভাত, রুটি, পাউরুটি, চিনি, গুড় প্রভৃতি। ইহা দেহে শক্তি ও উত্তাপ বৃদ্ধি করে।
iii) চর্বি বা স্নেহজাতীয় খাদ্য (Fate): যেমন-ঘৃত, মাখন, তৈল প্রভৃতি। ইহা দেহের উত্তাপ শক্তি বৃদ্ধি করে।
iv) লবণ জাতীয় খাদ্য (Salts) : যেমন-খাদ্য লবণ, ফসফরাস, ক্লোরিণ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি।
v) পানি (Water) : যেমন-খাবার পানি, পানি জাতীয় খাদ্য প্রভৃতি। ইহা রক্তের তারল্য বজায় রাখে ও রেচনতন্ত্র কার্যকরী রাখে।
vi) খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন (Vitamins) : যেমন- ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই প্রভৃতি। দুধ, ঘি, পালংশাক টমেটো, ডিম প্রভৃতিতে ভিটামিন পাওয়া যায়। ইহা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
 

প্রশ্ন- খাদ্য ও পুষ্টির মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর : খাদ্য ও পুষ্টির মধ্যে পার্থক্য- খাদ্য বলিতে এমন সামগ্রী বুঝায় যাহা গ্রহণ করিলে পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ তাহা ব্যবহার করিয়া তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে, নূতন দেহ কোষকলা গড়িয়া তোলে, ক্ষয় প্রাপ্ত কোষকলা পুনঃনির্মাণ করে, দেহ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দেহ যৌগসমূহ উৎপাদন করে। খাদ্যবস্তুকে বহুবিধ উপাদান সামগ্রীর সংমিশ্রণ বলা যায়। অপর পক্ষে পুষ্টি এক প্রাণবন্ত কর্মশীল প্রক্রিয়া যাহার মাধ্যমে দেহ গৃহীত খাদ্যকে কাজে লাগাইয়া শরীরকে পালন বা পোষণ করে। খাদ্যের গুণগত মূল্য বা মান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, দেহে ইহার পরিপাক, অবশোষণ ও বিপাক ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়সমূহ লইয়া পুষ্টি বিজ্ঞান গড়িয়া উঠিয়াছে। আমাদের দেহ নানারকম উপাদানে গঠিত এবং এই সকল উপাদান বিভিন্ন খাদ্য হইতে আসে। খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য, কিভাবে সে উদ্দেশ্য সাধিত হয় বা বাধাগ্রস্ত হয় সে সম্পর্কে জানার নামই পুষ্টি বিজ্ঞান।


প্রশ্ন- খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বা খাদ্যের কাজ কি কি?

উত্তর : খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বা খাদ্যের কাজ- নিচে খাদ্যের কাজ বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হইল। যথা-
i) শরীরের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
ii) শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
iii) বাঁচিয়া থাকার জন্য সকল প্রাণীরই খাদ্যের প্রয়োজন।
iv) শরীরের স্বাভাবিক তাপ সংরক্ষণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
v) শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
vi) শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি উৎপাদন এবং দেহকে সুস্থ রাখার জন্য
খাদ্যের প্রয়োজন। 


প্রশ্ন- আমিষ জাতীয় খাদ্যের (প্রোটিন জাতীয়) উৎসসমূহ কি কি?

উত্তর : আমিষ জাতীয় খাদ্যের (প্রোটিন জাতীয়) উৎসসমূহ- আমিষ জাতীয় খাদ্য দুই প্রকার উৎস হইতে পাওয়া যায়। যথা-
ক) প্রাণীজ উৎস বা জাত্যব আমিষ- জীব হইতে সংগৃহীত আমিষকে জান্তব আমিষ বলা হয়। যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা প্রভৃতি।
খ) উদ্ভিজ আমিষ-উদ্ভিদ হইতে যে সকল আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংগৃহীত হয় তাহাকে উদ্ভিজ আমিষ বলে। যেমন-বিভিন্ন প্রকার ডাল (মুগ, মশুরী, বুট, ছোলা, প্রভৃতি) সীমের বিচি, মটর শুটি, বরবটি, সয়াবিন, কলা, কাঁঠাল প্রভৃতি।


প্রশ্ন- আমিষ জাতীয় (প্রোটিন) খাদ্যের কাজ কি?

উত্তর : আমিষ জাতীয় খাদ্যের কাজ- নিচে আমিষ জাতীয় খাদ্যের কাজগুলি উল্লেখ করা হইল। যথা-
i) আমিষ জাতীয় খাদ্য শরীরের গঠন, বৃদ্ধি ও পুষ্টি সাধন করে।
ii) ইহা দেহের ক্ষয়পূরণ করে।
iii) ইহা দেহে কতকগুলি জারক রস তৈরী করিতে সাহায্য করে।
iv) ইহার উদ্বৃত্ত অংশ শর্করা বা চর্বিতে পরিণত হইতে পারে।
v) ইহা দেহের আংশিক শক্তি ও তাপ উৎপাদন করে।
vi) ইহা দেহের কর্মশক্তি ও কর্মস্পৃহা সৃষ্টি করে।
vii) ইহা রক্তের অসমোটিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
viii) ইহা রক্ত জমাট বাঁধিতে সাহায্য করে।
ix) ইহা মাংসপেশী গঠন করে।


প্রশ্ন- আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে কি কি রোগ দেখা দেয়?

উত্তর : আমিষ (প্রোটিন) জাতীয় খাদ্যের অভাবজনিত রোগ- নিচে আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবজনিত রোগগুলি উল্লেখ করা হইল। যথা-
i) ইহার অভাবে দেহ সমান পুষ্টি লাভ করিতে সমর্থ হয় না।
ii) দেহ জীর্ণ শীর্ণ হইয়া পড়ে।
iii) কর্মে উৎসাহ ও প্রবৃত্তি থাকে না।
iv) দীর্ঘদিন আমিষের অভাবে রক্ত স্বল্পতা, শোথ, অজীর্ণ, ম্যারাসমাস প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।


প্রশ্ন- শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের উৎসসমূহ কি কি?

উত্তর : শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের উৎস- প্রধানত উদ্ভিদ হইতে এই জাতীয় খাদ্য পাওয়া যায়।
ক) মূল শ্বেতসার (Starch): ইহা চাউল, আটা, বার্লি, গোল আলু, ডাল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
খ) শর্করা (Sugar): ইহা গুড়, চিনি, মিছরী, ইক্ষু, মধু, মিষ্টিফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।
গ) সেলুলোজ (Cellulose): ইহা উদ্ভিদের জীবকোষের আবরণ হইতে পাওয়া যায়।


প্রশ্ন- শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের কাজ কি? তাহার অভাবে কি রোগ দেখা দেয়?

উত্তর : শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের কাজ- নিচে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের কার্যাবলী উল্লেখ করা হইল। যথা-
ক) এই জাতীয় খাদ্য অক্সিজেনের সাহায্যে দ্রবীভূত হইয়া দেহে উত্তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে।
খ) ইহা দেহের আমিষের ক্ষয় নিবারণ করে।
গ) ইহা খাদ্যকে সুস্বাদু করে।
ঘ) এই জাতীয় খাদ্যের সাথে ভিটামিন 'এ' ও 'ডি' থাকে। ইহা চর্মের মেদ ও লাবণ্য বৃদ্ধি করে।
ঙ) ইহা চর্মের কোমলতা রক্ষা করে।
চ) ইহা শরীরে হরমোন (টেস্টোটারন, এসট্রোজেন, প্রজেক্টারন) গঠন করে।
ছ) ইহা দেহাভ্যন্তরে কোমল তন্তুগুলির আবরণরূপে উহাদিগকে রক্ষা করে।
স্নেহজাতীয় খাদ্যের অভাবজনিত রোগ- ইহার অভাবে চর্মের মসৃণতা নষ্ট করে।


প্রশ্ন-  ভিটামিন বা খাদ্যাপ্রাণ বলিতে কি বুঝ?

উত্তর: খাদ্যের মধ্যে আমিষ, স্নেহ, শ্বেতসার, শর্করা, লবণ ছাড়া আর একটি উপাদান আছে যাহা কিছু কিছু না খাইলে শরীর অভাবগ্রস্ত, রোগপ্রবণ ও শীর্ণ হইতে থাকে। এই সূক্ষ্ম উপাদানটির নাম ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ।
 

প্রশ্ন-  ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর : ভিটামিনের প্রকারভেদ- এই পর্যন্ত যতগুলি ভিটামিন পাওয়া গিয়াছে ইংরেজী বর্ণমালা অনুসারে ইহাদিগকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হইয়াছে।
ক) ভিটামিন-'এ'
গ) ভিটামিন-'সি'
খ) ভিটামিন-'বি'
ঘ) ভিটামিন-'ডি'
ঙ) ভিটামিন-'ই' 'বি'
চ) ভিটামিন- 'কে' 'বি'
i) ভিটামিন-
ii) ভিটামিন-
iii) ভিটামিন-'বি'


প্রশ্ন- পানিতে দ্রবণীয় ও চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনসমূহ কি কি?

উত্তর: পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-
i) ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স
ii) ভিটামিন-সি
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-
i) ভিটামিন-এ
ii) ভিটামিন-ডি
iii) ভিটামিন-ই
iv) ভিটামিন- কে


প্রশ্ন-  ভিটামিনের অভাবে কি কি রোগ হয়?

উত্তর: ভিটামিনের অভাবে যে যে রোগ হয়- বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ হয়। কোন ভিটামিনের অভাবে কি কি রোগ হয় তাহা নিম্নে আলোচনা করা হইল-
i) ভিটামিন 'এ' এর অভাবে চক্ষুরোগ, ব্রঙ্কোনিমোনিয়া, দন্তক্ষয়, রাতকানা রোগ এবং দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ii) ভিটামিন 'বি' এর অভাবে বেরিবেরি, জিহ্বায় ঘা, চক্ষুর পীড়া, চর্মপীড়া, রক্তহীনতা ও দুর্বলতা, অল্প বয়সে চুলপাকা, স্নায়ু দৌর্বল্য প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়া।
iii) ভিটামিন 'সি' এর অভাবে দেহের ওজন কমিয়া যায় এবং স্কার্ভি রোগ হয়। ইহাতে দাঁতের মাড়ি ফোলে। রক্ত ক্ষরণ হয়। পুঁজ হয় ও দাঁত পড়িয়া যায়।
iv) ভিটামিন 'ডি' এর অভাবে শিশুদের রিকেট ও টেটানী নামক রোগ, গর্ভবতীতে অষ্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়।
v) ভিটামিন 'ই' এর অভাবে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়া যায়।
vi) ভিটামিন 'কে' এর অভাবে রক্ত জমাট বাঁধিতে পারে না, ফলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।


প্রশ্ন-  ভিটামিন 'এ' এর উৎস কি কি?

বা, কোন কোন খাদ্যে ভিটামিন 'এ' পাওয়া যায়? ভিটামিন 'এ' এর অভাবে কি কি রোগ হয়?
উত্তর : ভিটামিন 'এ' এর উৎস- খাদ্যের সবুজ হলুদ রং এই ভিটামিনের বিশেষত্ব। সবুজ শাকসব্জী, পেঁপে, আম, মাছ, মাছের তৈল, যকৃত, দুধ, ক্ষীর, পনির, ডিমের কুসুম, গাঁজর, কমলালেবু, লাল আলু, ভুট্টা, টমেটো, লেটুস শাক, বাঁধাকপি, বরবটি, পালংশাক, কড ও হ্যালিবাট মাছের তৈলে ভিটামিন 'এ' প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
ভিটামিন 'এ' এর অভাব জনিত রোগসমূহ- ইহার অভাবে শরীরের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, রোগ প্রতিরোধ শক্তি হ্রাস পায়, নানাপ্রকার ডুরোগ যেমন-রাতকানা, জেরোপথালিমিয়া, চক্ষু প্রদাহ প্রভৃতি হইয়া থাকে। ইহার অভাবে ত্বকের সুস্থতা হ্রাস পায়, ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়। পক্ষাঘাত দেখা দেয়। সন্তানসম্ভবা মাতার খাদ্যে ইহার অভাব হইলে শিশু দুর্বল স্বাস্থ্যহীন হয়। ইহার অভাবে দন্তক্ষয় ও শ্বাসপীড়া জন্মে।


প্রশ্ন- ভিটামিন 'বি' এর উৎস কি কি?
বা, কোন কোন খাদ্যে ভিটামিন বি পাওয়া যায়? ভিটামিন বি এর অভাবে কি কি রোগ হইতে পারে?

উত্তর : ভিটামিন বি এর উৎস- আছাটা চাউল, গম, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, মটর, বরবটি, কাঁচাদুধ, ডিমের কুসুম, আটা, সুজি, আলু, ঢ্যাঁড়শ প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।
ভিটামিন 'বি' এর অভাবজনিত রোগসমূহ- ভিটামিন 'বি' এর অভাবে বেরিবেরি, পেলাগ্রা, প্রভৃতি রোগ হইয়া থাকে। ইহার অভাবে নার্ভসমূহ দুর্বল হইয়া পড়ে। পরিপাক শক্তি ও ক্ষুধা নষ্ট হইয়া যায়।


প্রশ্ন- ভিটামিন 'সি' এর উৎস কি কি?
বা, কোন কোন খাদ্যে ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়? ভিটামিন 'সি' এর অভাবে কি কি রোগ হইতে পারে?

উত্তর: ভিটামিন 'সি' এর উৎস- সকল প্রকার লেবু, মটর শুটি, বিলাতি বেগুন, পালংশাক, মূলা, আনারস, আঙ্গুর, লঙ্কা, বাঁধাকপি, মুগ, ছোলা, কলমি শাক, আপেল, আমলকি, জাম, পশুর যকৃত প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামির 'সি' থাকে।
ভিটামিন 'সি' এর অভাবজনিত রোগসমূহ- 'স্কার্ভি নামক এক প্রকার দুঃসাধ্য পীড়া ইহা প্রতিরোধ করে। ইহার অভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমিয়া যায়, কর্মে উৎসাহ থাকে না, দাঁতের মাড়ি দুর্বল হইয়া যায়। ইহার অভাবে অস্থি, দাঁত ও মাঁড়ির বিকৃতি ঘটে।


প্রশ্ন- ভিটামিন 'ডি' এর উৎস কি কি?
বা, ভিটামিন 'ডি' কোন কোন খাদ্যে পাওয়া যায়? ভিটামিন 'ডি' এর অভাবে কি কি রোগ হইতে পারে?

উত্তর : ভিটামিন 'ডি' এর উৎস- ডিমের কুসুম, মাছের তৈল, কাঁচা দুধ, মাখন, সূর্যস্নাত শাকসব্জী, নারিকেলের শাঁস, পশুর যকৃত, প্রভৃতিতে ভিটামিন 'ডি' পাওয়া যায়। সূর্যকিরণের স্পর্শে মানুষের দেহে এই ভিটামিন স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হয়।
ভিটামিন 'ডি' এর অভাবজনিত রোগসমূহ- ইহা অস্থির পুষ্টিসাধন ও ক্ষয় নিবারণ করিয়া থাকে। দেহে ইহার অভাব ঘটিলে অস্থি দুর্বল, নরম, বক্র হইয়া যায় অর্থাৎ রিকেট রোগ হয়। শিশুদের এই ভিটামিন বিশেষ প্রয়োজন। ইহার অভাবে ফুসফুসের নানা পীড়াও হইয়া থাকে।


প্রশ্ন-৬.১৭। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সম্বন্ধে আলোচনা কর।

উত্তর: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স- ইহা ভিটামিন বি, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি১২, প্রভৃতি অনেকগুলি ভিটামিনের সমষ্টি।
 
বি, (থায়ামিন) ৪ চাউলের বাহিরের পাতলা আবরণ, অংকুরিত গম, জাতা ভাঙ্গা আটা, ফলমূল, টমেটো, কমলালেবু, মাছ, মাংস প্রভৃতিতে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ইহা শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক কার্যে বিশেষ সহায়তা করে এবং স্নায়ু কোষের খাদ্য প্রাণ হিসাবে কাজ করে। ইহার অভাবে বেরিবেরি নামক এক প্রতার রোগ দেখা দেয়। ইহার অভাবে অক্ষুধা, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি দেখা দেয়।
বিং (রিবোষ্ণাবিন) ঃ গম, ছোলা, টমেটো, স. শাক সব্জী, লিভার, কিডনী, মাংস, দুধ, ডিম প্রভৃতিতে ইহা পাওয়া যায়। পানিতে ইহা দ্রবনীয়। সাধারণ উত্তাপে ইহা নষ্ট হয় না, তবে বেশীক্ষণ তাপ সহ্য করিতে পারে না। ইহার অভাবে নানা প্রকার চক্ষুপীড়া, মুখে, জিহ্বায় ও ঠোঁটের কোণে ঘা হওয়া প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়। ইহা অভাবে দেহের বৃদ্ধি ও পুষ্টি বন্ধ হইয়া যায়, চামড়া খসখসে হইয়া যায় ও চুল পড়িতে থাকে।

বি. (নিকোটিনিক এসিড): দুধ, ডিম, মাংস, টমেটো, মটর, বরবটি, ছোলা, যকৃত, বৃক্ক, শাকসব্জী প্রভৃতিতে ইহা পাওয়া যায়। পানিতে ইহা দ্রবণীয় এবং রান্নার তাপে ইহা বিশেষ নষ্ট হয় না। শর্করা জাতীয় দ্রব্য বিপাকে ইহা সহায়তা করে। দেহে ইহার অভাব ঘটিলে জিহ্বার উপর কাল দাগ পড়ে। চর্মরোগ ও পেলাগ্রা নামক রোগ হয়। শরীর রক্তহীন ও দুর্বল হয়।

বি (ফলিক এসিড) : যকৃত, ইষ্ট, সয়াবিন, বরবটি, ছোলা, মটর, সবুজ শাকসব্জী ও টমেটোতে ইহা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। পানিতে ইহা অল্প পরিমাণে দ্রবণীয়। আলোতে ইহা নষ্ট হয়। ইহা কোষের নিউক্লিয়াসে ডি- অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড তৈরী করে এবং লোহিত রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। ইহার অভাবে রক্তহীনতা দেখা দেয়।

বি. (পাইরিডক্সিন): মাংস, ডিমের কুসুম, যকৃত, ঈষ্ট, দুধ, সবুজ কাঁচা শাক সজী, কাঁচা পেঁয়াজ, টমেটো, ছোলা, মটর, মুগডাল, মেটে প্রভৃতিতে ইহা পাওয়া যায়। ইহা পানিতে দ্রবনীয় এবং যথেষ্ট তাপ সহ্য করিতে পারে। অনেক এনজাইমের কাজে ইহা সাহায্য করে। ইহা রক্তের শ্বেত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য বিপাকে ইহা সাহায্য করে। ইহার অভাবে চর্ম প্রদাহ কোমরের বাত, সায়োটিকা বাত প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

 বি,২ (সায়ানোকোবালামিন) ৪ যকৃত, ডিম, দুধ, মাংস, ছানা প্রভৃতিতে ইহা পাওয়া যায়। পানিতে ইহা দ্রবণীয়। ইহার অভাবে রক্তহীনতা দেখা দেয়। শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে ইহা সাহায্য করে।


প্রশ্ন- ভিটাসিন বি কমপ্লেক্সের ভিটামিনগুলির নাম লিখ।

উত্তর : ভিটাসিন বি কমপ্লেক্সের ভিটামিনসমূহ- ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভিটামিনগুলির নাম নিম্নে দেওয়া হইল। যথা-
(i) বি, (থায়ামিন), (ii) বি২ (রিবোফ্লাবিন), (iii) বি. (নিকোটিনিক এসিড), (iv) বিঃ (প্যানটোথেনিক এসিড), (v) বি (ফলিক এসিড), (vi) বি, (পাইরিডক্সিন), (vii) বি১২ (সায়ানোকোবালামিন), (viii) কোলিন, (ix) বায়োটিন, (x) ইনোসিটল, (xi) প্যারা এমিনো বেনজোয়িক এসিড, (xii) বি১১।


প্রশ্ন- মালটিভিটামিন বলিতে কি বুঝ?

উত্তর : মাল্টিভিটামিন- ভিটামিন বি বলিতে একটি ভিটামিন মনে হইলেও ইহার মধ্যে বিভিন্ন ভাগ রহিয়াছে এবং ইহাদের কাজও বিভিন্ন। বি১, বি২, বিত, বি, বি৫, বি৬, বি১১, বি১২ প্রভৃতি ভিটামিনের মিলিত নাম ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বা মালটি ভিটামিন। 


প্রশ্ন- পানিতে দ্রবনীয় ও তৈলজাতীয় পদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিনসমূহ কি কি?

উত্তর: পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স, সি, ডি, প্রভৃতি। তৈল জাতীয় পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন- ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, প্রভৃতি।


প্রশ্ন-  আদর্শ খাদ্য কাহাকে বলে? দুগ্ধ একটি আদর্শ খাদ্য-যুক্তি দ্বারা প্রমাণ কর।

উত্তর : আদর্শ খাদ্য- দেহের গঠন, পুষ্টি ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য যে খাদ্য উপাদান দরকার অর্থাৎ আমিষ, শ্বেতসার, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি প্রভৃতি, এই সকল উপাদান যে খাদ্য দ্রব্যে বর্তমান থাকে তাহাকে আদর্শ খাদ্য বলে, যেমন-দুগ্ধ। দুগ্ধ একটি আদর্শ খাদ্য- সর্বপ্রকার দুধের মধ্যেই আমিষ, স্নেহ, শর্করা, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি বর্তমান রহিয়াছে। আমাদের শরীর রক্ষায় পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের যে সব উপাদান প্রয়োজন তার সর্বগুলিই দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। প্রোটিন, শর্করা, মাখন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ, বি, সি, ডি সবই গ্রহণ করা যায় এমন ব্যবস্থা দুধে আছে। দুধ অতি সহজ পাচ্য বলিয়া রোগী, বৃদ্ধ ও শিশু সব বয়সের লোকের জন্য ইহা অপরিহার্য। ইহা তরল বলিয়া অনায়াসে পান করানো যায় ও অতি সহজে পরিপাক হয়। বল, বুদ্ধি, মেধা ও কর্মে উৎসাহ আনিতে এবং সকল প্রকার রোগ প্রতিরোধেও দুধের সমকক্ষ খাদ্য পৃথিবীতে আর নাই। এই জন্য দুগ্ধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।


প্রশ্ন- গোদুগ্ধ ও মাতৃদুগ্ধের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর : গোদুগ্ধ ও মাতৃদুগ্ধের মধ্যে পার্থক্য- গোদুগ্ধ ও মাতৃদুগ্ধে বিভিন্ন শ্রেণীর উপাদানের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। যথা-





প্রশ্ন- সুষম খাদ্য কাহাকে বলে?

উত্তর : দেহের পুষ্টির জন্য যে খাদ্যে শ্বেতসার, আমিষ, স্নেহ, খনিজ লবণ, বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও পানি যথাযথ অনুপাতে বিদ্যমান থাকে এবং যাহা দেহে পর্যাপ্ত ক্যালরি সরবরাহ করে, ক্ষয় নিবারণ করে, পেশীতন্তু নির্মাণ করে, তাপ ও কর্মশক্তি যোগায় এবং শারীর বৃত্তিয় কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তাহাকে সুষম খাদ্য বলে।


প্রশ্ন- একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক সুষম খাদ্যের একটি তালিকা দাও।

উত্তর : একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক সুষম খাদ্যের তালিকা- নিম্নে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সুষম খাদ্যের তালিকা দেওয়া হইল-
 



প্রশ্ন- একজন সন্তান-সম্ভবা মহিলার দৈনিক সুষম খাদ্যের একটি তালিকা নাও।

উত্তর: একজন সন্তান-সম্ভবা মহিলার দৈনিক সুষম খাদ্যের তালিকা- নিম্নে একজন সন্তান সম্ভবা মহিলার দৈনিক সুষম খাদ্যের একটি তালিকা দেওয়া গেল-





প্রশ্ন- দেহের খাদ্য উপাদানে খনিজ পদার্থের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর?

উত্তরঃ দেহের খাদ্য উপাদানে খনিজ পদার্থের প্রয়োজনীয়তা- দেহ গঠনে
এবং দেহের আভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণে খাদ্য উপাদানে খনিজ পদার্থের ভূমিকা অপরিসীম। মানব দেহের ওজনের শতকরা ২০ ভাগের একভাগ হইল খনিজ লবন। প্রতিদিন আমাদের দেহ হইতে মলমূত্র ও ঘামের সাথে কিছু খনিজ পদার্থ দেহ হইতে বাহির হইয়া যায়। এই খনিজ পদার্থ বা খনিজ লবণের অভাব পূরণ না হইলে দেহ ভাঙিয়া পড়ে। মানব দেহের বিশেষ প্রয়োজনীয় লবণগুলি হইল- ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, সালফার, আয়োডিন এবং ক্লোরিন। ইহা ছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, তাম্র প্রভৃতিও কিছু কিছু পরিমাণে আছে। প্রধানতঃ নিম্নলিখিত কারণে খাদ্য উপাদানে খনিজ পদার্থ থাকা প্রয়োজন।
i) মাংসপেশী স্নায়ুর কাজ, রক্ত জমাট বাঁধার কাজ, অস্থি ও দন্ত গঠনের কাজ প্রভৃতির জন্য ক্যালসিয়াম বিশেষ প্রয়োজন'।
ii) লৌহ রক্তের লোহিত কণিকার প্রকটি উপাদান। শরীরে ইহার অভাব হইলে রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। 7
iii) ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম উভয়ই অস্থি ও দন্তগঠনের জন্য প্রয়োজন।
ইহার অভাব হইলে রিকেট, অষ্টিওম্যালেসিয়া ও দন্তক্ষয় রোগ হয়।
iv) গন্ধক আমাদের চুল, নখ ও চর্মের গঠন ও পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়।
ⅳ) আয়োডিন থাইরয়েড গ্রন্থির রস থাইরক্সিন প্রস্তুতে সাহায্য করে। ইহার
অভাবে দেহ ও মনের জড়তা আসে ও গলগণ্ড রোগ হয়।
vi) তাম্র রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরী করিতে লৌহকে সাহায্য করে।
vii) রক্তের জন্য ক্লোরিন দরকার। পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরী করার জন্য ইহার দরকার হয়। সোডিয়াম অন্ত্রের রস প্রস্তুতে সাহায্য করে।


প্রশ্ন- খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কি কি উপায় অবলম্বন করা উচিত?

উত্তর : খাদ্য সংরক্ষণের উপায়- খাদ্য সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করা উচিত। যথা-
i) উত্তাপ প্রয়োগ- খাদ্য সংরক্ষণের ইহা সাধারণ উপায়। খাদ্য ফুটাইয়া রাখিলে সমস্ত জীবাণু নষ্ট হইয়া যায়।
ii) শুদ্ধ করণ- আর্দ্রতা হেতু খাদ্যে বীজাণু বৃদ্ধি যায়। এজন্য কতকগুলি খাদ্যকে শুদ্ধকরণ প্রথায় রক্ষা করাই শ্রেয়।
iii) স্মোকিং- বাষ্পীয়করণের দ্বারা রক্ষণকার্য এই প্রথায় চালিত হয়। প্রথমতঃ লবণ মিশাইয়া এই কাজ করা হয়। এই প্রথায় দ্রব্যাদি শুষ্ক থাকে। বাষ্পে জীবাণুনাশক পদার্থ জন্মায় বলিয়া ইহার দ্বারা নির্বীজনের কাজ হয়।
iv) লবণ দ্বারা জারণ- মাছ, মাংস সাধারণতঃ লবণ দিয়া রক্ষিত হয়। সমুদ্রের পানি, সিরকা এবং ক্ষীণ লবণাম্ন দ্বারা এই কাজ সাধিত হয়। চিনি সিরাপ আকারে ফলাদি রক্ষণে ব্যৱহৃত হয় এবং লবণও সিরকার ন্যায় কার্য করে।
v) শৈত্য প্রয়োগ- প্রায় সমস্ত প্রাণিজ জীবাণু শীতল গুদামে বিনষ্ট হয়। শীতলতা খাদ্য রক্ষণের একটা উৎকৃষ্ট উপায়। মাছ, মাংস, ডিম, ফল এমনকি দুধও অনেকদিন শীতল অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে।



প্রশ্ন- দেহ গঠনে কয়েকটি খাদ্যের নাম লিখ।

উত্তর : দেহ গঠনে কয়েকটি খাদ্যের নাম- দেহ গঠনকারী কয়েকটি খাদ্য দ্রব্য হইল মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা বিভিন্ন প্রকার ডাল, সয়াবীন, ফলমূল শাক সব্জি প্রভৃতি।



প্রশ্ন- শক্তি উৎপাদনকারী কয়েকটি খাদ্যের নাম লিখ।

উত্তর: শক্তি উৎপাদনকারী কয়েকটি খাদ্যের নাম- শক্তি উৎপাদনকারী কয়েকটি খাদ্য হইল- ঘি, মাখন, চর্বি, ডিম, মাংস, আটা, চাউল, আলু, চিনি, গুড় প্রভৃতি।



প্রশ্ন- খাদ্য উৎকৃষ্ট কিন্তু ভোজনের দোষে উৎপন্ন ব্যাধিসমূহ কি কি?

উত্তর : খাদ্য উত্কৃষ্ট কিন্তু ভোজনের দোষে উৎপন্ন ব্যাধিসমূহ- খাদ্য উৎকৃষ্ট কিন্তু ভোজনের দোষে ব্যাধি চারি প্রকারের হইতে পারে। যথা-
i) অতিভোজন- অতি ভোজনে অজীর্ণতা, কোষ্ঠবদ্ধতা বা উদরাময় হয়। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য অতিভোজনে বাত রোগ, লিভার পীড়া ও শোণিত রোগ হয়। শর্করা বা চিনি জাতীয় খাদ্য অতিভোজনে পেট ফাঁপা অম্লরোগ ও ডায়াবেটিস রোগের সৃষ্টি হয়।
ii) অল্পভোজন- অল্পভোজনে দেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, তাপ উৎপাদন ও উপযুক্ত দৈহিক শক্তি হ্রাস পাওয়ায় দেহ ক্রমশঃ ক্ষীণ ও দুর্বল হইয়া পড়ে। জীবনী শক্তি ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক শক্তি কমিয়া যায় বলিয়া যক্ষ্মা, নিমোনিয়া, ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি পীড়া সহজেই আক্রমণ করে। খাদ্যাভাব হেতু ভিটামিনেরও অভাব ঘটে ফলে চক্ষুরোগ, রিকেট, বেরিবেরি, স্কার্ভি, পেলাগ্রা প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়। দেহে ক্যালসিয়াম ও লৌহের অভাব ঘটে ফলে অস্থি বৃদ্ধি, পুষ্টি ও হিমোগ্লোবিনের হ্রাস ঘটে। অল্প পানি পানে রক্তের তারল্য রক্ষা হয় না, পাচক রস ভালভাবে সৃষ্টি হয় না।
iii) অপরিমিত মাত্রায় খাদ্যবস্তু এবং অসংযত আহার- খাদ্য যদি সঠিক মাত্রায় ভোজন না করা হয় তাহা হইলে নানা প্রকার উদরাময় পীড়ার সৃষ্টি হয় এবং দেহের ঠিকমত পুষ্টি সাধন হয় না। তেমনি খাদ্য যদি তাড়াতাড়ি আহার করা হয় বা গুরুপাক হয় অথবা যখন তখন যদি কদাচিত আহার করা হয়, কখনও অতিভোজন বা অল্প ভোজন হয় তাহা হইলে পাকস্থলীর দোষ ঘটিতে পারে।
iv) ব্যক্তিগত দৈহিক বৈশিষ্ট্য- ইহা নিজ দেহের বিশেষত্ব। কোন কোন ব্যক্তির কোন বিশিষ্ট খাদ্য সহ্য হয় না। চিংড়ি, মাছ, ডিম, কাঁকড়া, ছানা, বাঁধাকপি প্রভৃতি আহারে অনেকের হাঁপানী, বমি, অস্ত্র প্রদাহ, আমবাত প্রভৃতি পীড়া হইয়া থাকে।



প্রশ্ন- বিভিন্ন বয়সের খাদ্যের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: বিভিন্ন বয়সের খাদ্যের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা- বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন খাদ্যের প্রয়োজন হয়। নিম্নে বিভিন্ন বয়সের খাদ্যের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হইল-
i) শিশু অবস্থায়- শিশুকালে মাতৃদুগ্ধই প্রধান এবং মাতৃদুগ্ধ পান করিয়াই শিশু দিনদিন বৃদ্ধি পায়। শিশুদের জন্য মায়ের দুধই সমস্ত উপাদান সমন্বিত সহজপাচ্য ও তরল আদর্শ খাদ্য।
ii) বাল্য অবস্থায়- এই অবস্থায় বালক বালিকারা বড় হয় বলিয়া তাহাদের বন্ধি ও পুষ্টি, দেহগঠনের এবং শক্তির জন্য বেশী পরিমাণে প্রোটিন ও শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
iii) প্রৌঢ় অবস্থায়-' এই সময় দেহের আর বৃদ্ধি হয় না এবং দেহের উত্তাপও অধিক পরিমাণে হ্রাস পায়। এই বয়সে দহন ক্রিয়ার সাহায্যের জন্য ও কর্মশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের চাইতে অল্প পরিমাণে শ্বেতসার ও স্নেহজাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
iv) বৃদ্ধ অবস্থায়- এই অবস্থায় পরিপাক শক্তি হ্রাস পায় ও দেহের কর্মশক্তি ক্রমশঃ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সুতরাং শ্বেতসার ও স্নেহজাতীয় এবং বিশেষতঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য অল্প পরিমাণে ব্যবহার করিতে হয়। কেবলমাত্র দেহক্ষয় পূরণের জন্যই কিছুমাত্র প্রোটিন খাদ্যের প্রয়োজন হয়।



প্রশ্ন- স্বাস্থ্যকর খাদ্য কি?

উত্তর : স্বাস্থ্যকর খাদ্য- যে খাদ্যের মধ্যে উপযুক্ত মাত্রায় মানুষের শরীর পোষণ ও বর্ধন উপযোগী উপাদান আছে, যাহা টাটকা ও সহজপাচ্য, অতি কঠিন বা কোমল নয়, অতি উষ্ণ বা শীতল নয়, যাহা সুগন্ধ ও মুখরোচক তাহাকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্য বলে। এইরূপ স্বাস্থ্যকর খাদ্যে শ্বেতসার ও শর্করা যতখানি থাকিবে তাহার এক তৃতীয়াংশ আমিষ ও স্নেহজাতীয় উপাদান থাকা উচিত।



প্রশ্ন-খাদ্যের বিষক্রিয়া যা ফুডপয়জনিং কাহাকে বলে? কি প্রকারে খাদ্যে বিষক্রিয়া সংঘটিত হয়?

উত্তর : খাদ্যের বিষক্রিয়া বা ফুডপয়জনিং- খাদ্যে বা পানীয়ের সহিত খাদ্যনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করার ক্ষমতাসম্পন্ন জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া বা বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত জিনিষ গ্রহণ করিলে পাকাশয়ের অস্ত্রে প্রদাহ হইতে পারে। ইহাকে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া বলা হয়।



প্রশ্ন- কিভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া সংঘটিত হয়?

উত্তর: খাদ্যে বিষক্রিয়ার সংঘটন- বিভিন্ন প্রকার ফুড পয়জনিং সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হইল যথা-
i) উত্তেজনা সৃষ্টিকারী (Infection type) : খাদ্যের সহিত ব্যাকটেরিয়া শরীরের মধ্যে গিয়া প্রায় ৮ ঘন্টা উত্তিকালের পর ব্যাকটেরিয়ার বিষের সৃষ্ট বিষক্রিয়া পাকাশয়ের অস্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং তাহার ফলে বমন, তলপেটে বেদনা, উদরাময় এবং শরীর শীতল হইয়া যাওয়া লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়।
ii) বিষ সৃষ্টিকারী (Toxin type) : খাদ্যগ্রহণ করার পূর্বেই খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রাপ্তির ফলে খাদ্য পচিয়া যায় এবং এইরূপ খাদ্য অধিক পরিমাণে গ্রহণ করিলে এই বিষক্রিয়া উৎপন্ন হয়। সাধারণতঃ খাদ্য কিভাবে বিষাক্ত হয় তাহা নিম্নে বর্ণিত হইল।
ক) বিষাক্ত জীব জন্তুর মাংস।
খ) বিষাক্ত জীব জন্তুর মূলমূত্রের সহিত নির্গত রোগ জীবাণু মিশ্রিত হইলে খাদ্য বিষাক্ত হয়।
গ) মানুষ 'বাহক' হিসাবে খাদ্যে হাত দিয়া খাদ্য কলুষিত করিতে পারে।
গবাদি পশু বিষক্রিয়া উৎপন্নকারী জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হইতে পারে। উহার মাংস ভক্ষণ করিলে বিষক্রিয়া করিতে পারে। হাঁসের ডিমে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করিতে পারে। বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী বিশেষ ধরণের জীবাণু দ্বারা হাঁস আক্রান্ত হয়। ইঁদুরের মলমূত্রে এই জীবাণু থাকিতে পারে। খাদ্য অরক্ষিত থাকিলে এইরূপ হইবার সম্ভাবনা। মাছি দ্বারা এই জীবাণু খাদ্যের সহিত মিশ্রিত হইতে পারে।
iii) বটিউলিজম (Botulism) : ইহা ভিন্ন প্রকারের ফুড পয়জনিং। খাদ্যনালীতে এক প্রকারের বিষ শোষিত হইয়া এই বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। ইহা সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম Clostridium botulinum, সাধারণতঃ এই জীবাণু * মাটিতে থাকে এবং মাটি হইতে ইহা খাদ্যে বিশেষ করিয়া ফল ও শাক সব্জিতে মিশিয়া খাদ্য বিষাক্ত করে। যে সমস্ত খাদ্যে প্রোটিন আছে তাহাতে ইহা বৃদ্ধি পায় এবং বিষ সৃষ্টি করে। ১৭৫° ফাঃ তাপে ইহা ধ্বংস হয়। বিষাক্ত খাদ্য আহারের ১২ হইতে ১৪ ঘণ্টা পর ইহার লক্ষণ দেখা দেয়। বমি ও উদরাময় লক্ষণ সামান্য দেখা যাইতে পারে কিন্তু কোষ্ঠবদ্ধতাই ইহার সাধারণ লক্ষণ। দৃষ্টিশক্তির বিকৃতি, চোখের উপরের পাতায় পক্ষাঘাত, নার্ভের পক্ষাঘাত, দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ প্রকাশ পায়। ৪ হইতে ৬ দিনের মধ্যে হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া রোগী মারা যায়।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ