ওপিয়াম - OPIUM, চতুর্থ বর্ষ - মেটেরিয়া মেডিকা

ওপিয়াম 
OPIUM






প্রাকৃতিক অবস্থা:- পেপাভেরাসিয়া (পোস্ত) । 

প্রতিশব্দ:- ওপিয়ম ক্রুডাম, মেকোনিয়াম, পাপাভাসেটিভাম, অহিফেন, আফিম।

উৎস ও ইহার বর্ণনা:- ভারত বর্ষের বহুস্থান, তুরস্ক, এশিয়া ও ইউরোপের কোন কোন অংশে আফিম গাছ জন্মিয়া থাকে। এই সকল গাছের শুকনা রস হইতে এই ঔষধটি প্রস্তুত হয় । গাছগুলি ৪ হইতে ৬ ফুট উঁচু, মূল আঁশযুক্ত, কাণ্ড খাড়া এবং শাখাগুলি গোল ও মসৃণ। ইহার পত্রসমূহ বৃহৎ এবং পরিবর্তনশীল ও আঁকড়ানো, পত্রের ভাগ খাঁজ কাটা। ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতবর্ষে এই সকল গাছে নিঃসঙ্গ সাদা ফুল দেখা যায়। উপর ও নিচের ভাগ চ্যাপ্টা আকারের ২ হইতে ৩ ইঞ্চি ব্যস বিশিষ্ট মসৃণ বীজ কোষ ইহাতে দেখা যায়। এই বীজ কোষে অসংখ্য বীজ থাকে। ইহাকে পোস্তা দানা বলা হয়। ওপিয়ামে অদ্ভূত তন্দ্রাময় গুণ, অগ্রহনীয় গন্ধ এবং তিক্ত বমিময় স্বাদ বিদ্যমান থাকে।

প্রস্তুত প্রণালী:- আফিমের অপর ফল সামান্য সামান্য করিয়া চিরিলে তাহা হইতে দুগ্ধবৎ রস বাহির হয়, সেই রস ঘনীভূত করিয়া ইহার অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। পরে ঐ অরিষ্ট হইতে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মে তরল ক্রমের ঔষধ প্রস্তুত হয়।
 
প্রস্তুতের ফরমুলা:- অরিষ্ট এফ-৪, বিচূর্ণ এফ-৭। 

 প্রুভার:- মহাত্মা হ্যানিমান ইহা প্রুভ করেন। 

ধাতুপ্রকৃতি:- ওপিয়ামের ধাতুর ব্যক্তি স্নায়বিক প্রকৃতির, চুল পাতলা, শিথিল পেশী, মিথ্যাবাদী ও নীতিজ্ঞানহীন ।

ক্রিয়াস্থান:- ইহা মস্তিষ্ক, পৃষ্ঠবংশীয় মজ্জা ও স্নায়ুবিধানের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া প্রথমে উত্তেজনা জন্মাইয়া পরে শীঘ্রই অবসাদ আনিয়া থাকে এবং সর্বাঙ্গীণ পক্ষাঘাতের মত অবস্থা আনয়ন করে। ইহার ক্রিয়ার ফলে গতি ও সহানুভূতি শক্তি লোপ পায় এবং চৈতন্য শক্তি বিলুপ্ত হয়। অস্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে শ্লেষ্মা ও অন্যান্য স্রাব নিঃসরণ হ্রাস পাইয়া কোষ্ঠবদ্ধতা হয় ও প্রস্রাবের পরিমাণ স্বল্প হয়। শ্বাসযন্ত্রের উপর ক্রিয়া হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে চলে, নাক ডাকিতে থাকে ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে। ওপিয়ামের ক্রিয়ার ধরণ-ইহা মাদক, বেদনা নিবারক, নিদ্রাকারক, মস্তিষ্কের উত্তেজনা কারক, ধর্ম উৎপাদক ও আক্ষেপ নাশক।

মানসিক লক্ষণ:-
১) রোগী অতিমাত্রায় উদাসীন, নিষ্ক্রিয় ও জড় বিশেষ সেজন্য যন্ত্রণা কষ্টের কোনও বোধশক্তিই তাহার থাকে না। পরিপূর্ণ সংজ্ঞা লোপ ও বোধ শক্তির অভাব ।
২) উন্মাদ অবস্থাতে রোগীর জ্ঞানটি সম্পূর্ণভাবে লোপ না পাইলেও অনুভূতি শক্তিটি বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং নানা জন্তু জানোয়ার তাহার দিকে ধাবিত হইতেছে ও তাহাকে আঘাত করিবার জন্য যেন সকলে ছুটিয়া আসিতেছে এইরূপ মনে করিয়া ভয় পায় ও শয্যা হইতে লাফাইয়া উঠে আবার কখনো গাত্রাচ্ছাদনটির নিচে সমগ্র মুখ ও দেহটি লুকাইয়া বুকে হাঁটিয়া শয্যার এধার ওধার করিতে থাকে।
৩) রোগী মনে করে তাহার শরীরে কোন অংশ খুব বড় হইয়াছে। 
৪) রোগী মনে করে তাহার কোন পীড়া হয় নাই। প্রতিক্রিয়ার অবস্থায় সে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে যায়।
৫) রোগী নিজ বাড়ীতে নাই এইরূপ অনুমান করে, শ্রবণ শক্তি বাড়িয়া যায়। 

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) সংজ্ঞা শূন্য অবস্থার সহিত রক্তবর্ণ চকচকে অর্থনীমিলিত চক্ষু ও মুখব্যাদানসহ সশব্দে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস।
২) জীবনীশক্তির প্রতিক্রিয়ার অভাব, সুনির্বাচিত ঔষধেও কোন ক্রিয়া করে না। 
৩) স্নায়ুর অসাড়তা, আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত।
৪) সকল পীড়াতেই অত্যন্ত নিদ্রালুতা, কিন্তু নিদ্রা হয় না।
নেত্র, কাকনিদ্রা, নিঃশ্বাসের সহিত নাক ডাকা ও গলার শ্লেষ্মার ঘড়ঘড় শব্দ।
৫) নিদ্রিতাবস্থায় বিছানার চাদর খোঁটে।
৬) আক্ষেপের পূর্বে চিৎকার।
৭) প্রসূতি ভয় পাইয়া সন্তানকে স্তন্য দিয়া সন্তানের তড়কা। 
৮) বিকারে রোগী অনর্গল কথা বলে, চক্ষুর অর্ধভাগ খোলা থাকে, মুখ লালবর্ণ, থমথমে, মুখ মলিন, সম্পূর্ণ অজ্ঞান ও অভিভূত ভাব।
৯) পরিপাকযন্ত্রের কর্মহীনতা, পেরিস্ট্যালিক ক্রিয়া লোপ, অস্ত্র যেন আবদ্ধ।
১০) কোষ্ঠকাঠিন্য, মল গুটলে কালবর্ণ। পেটে বেদনা, তলপেটে চাপবোধসহ প্রস্রাব বাহ্য সমস্ত বন্ধ এমনকি বায়ু পর্যন্ত নিঃসৃত হয় না। 
১১) প্রসূতির তড়কা বা ফিটসহ অজ্ঞানতা, পেটের অত্যন্ত ফাঁপসহ কলিক বেদনা।
১২) ম্যারাসমাস, শিশুকে বৃদ্ধের ন্যায় দেখায়।
১৩) চর্মের উদ্ভেদ হঠাৎ পশ্চাৎগামী হইয়া মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত, তড়কা। না।
১৪) গরমে, যে কোনও প্রকার ভয়ে, সুসংবাদে বা দুঃসংবাদে ও শোক তাপে পীড়ায় বৃদ্ধি। ভয় পাইয়া পীড়া, সেই ভয় অনেক দিন পর্যন্ত বর্তমান থাকে।
১৫। অনবরত হাঁটিয়া বেড়াইলে রোগের উপশম। 

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- কোনও কঠিন পীড়ায় রোগীর মস্তিষ্ক আক্রান্ত হইলে ওপিয়ামের প্রয়োগ ক্ষেত্র আসে। ভয় হইতে উৎপন্ন কোন পীড়া, অনুভূতির অভাব ও অসাড় ভাব, অচৈতন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব, কোষ্ঠবদ্ধতা, গিলিতে কষ্ট, উদরাময়, পেট ফাঁপা, জ্বর, শিশুদের ম্যারাসমাস, প্রসূতি অবস্থায় অজ্ঞান, অনিদ্রা, ফুসফুসের পীড়া, কলেরা, অস্ত্রশূল বেদনা, প্রস্রাবের পীড়া, চর্ম পীড়া, প্রভৃতি ক্ষেত্রে ওপিয়াম প্রয়োগ হয়।

ভয়জনিত পীড়ায় লক্ষণ:- ভয় পাইয়া পীড়া হইলে ও সেই ভয় অনেকদিন পর্যন্ত থাকিয়া গেলে কিংবা সেই ভয়টি দিনরাত দেখিলে ওপিয়াম উৎকৃষ্ট ঔষধ। রোগিনী বিকারগ্রস্ত, প্রলাপ বকে, মাথা গরম ও মুখমণ্ডল লাল। ইন্দ্রিয় শক্তির অত্যন্ত উত্তেজনা, রোগী ভয়চকিত দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। ভয়ের বস্তুটি চক্ষুর সামনে দেখে, একোনাইটে অত্যন্ত অস্থিরতা ও মৃত্যুভয় বর্তমান থাকে ও দেখিতে দেখিতে পীড়া ভয়ংকর আকার ধারণ করে, ওপিয়ামের তন্দ্রালুতা পাওয়া গেলে ওপিয়ামই শ্রেষ্ঠ। ভয় পাইয়া উদরাময় বা তড়কা হইলেও ওপিয়াম উপকারী। গর্ভকালের শেষাংশে ভয় পাইয়া গর্ভস্রাবের উপক্রম।

তন্দ্রাচ্ছন্নভাব ও ঘুমঘুমভাব লক্ষণে:- ঘুম ঘুম ভাব ওপিয়ামের লক্ষণ। টাইফয়েড রোগে রোগী একেবারে অজ্ঞান হইয়া যায়। চক্ষুর নিকট আলো ধরিলেও পাতা নড়ে না। গভীর নিদ্রা হয়, নাক ডাকে, শ্বাস- প্রশ্বাসে গলায় ঘড় ঘড় শব্দ হয়। আবার এদিকে অনিদ্রা, রোগী কিছুতেই ঘুমাইতে পারে না এবং শ্রবণ শক্তি এত অধিক হয় যে, অতি দূরে পশু পক্ষীর ডাকে কিংবা ঘড়ির আওয়াজের জন্য রোগী নিদ্রা যাইতে পারে না। তন্দ্রাচ্ছন্নভাব লক্ষণে ইহার সহিত এন্টিমটার্ট, এপিস, হেলিবোরাস ও নাক্স মেস্কেটার তুলনা হইতে পারে। কিন্তু ওপিয়ামের ন্যায় গভীর নিদ্রা, নাকডাকা ও গলায় ঘড় ঘড় শব্দ অন্য কোন ঔষধেই নাই এবং ওপিয়ামের রোগীর ন্যায় চক্ষুর আরক্ততা অন্য কোন ঔষধের দেখিতে পাওয়া যায় না।

গিলিতে কষ্ট লক্ষণে:- রোগী যখন পান করে তখন খাদ্য ও পানীয়বাহী নলের ক্রিয়াহীনতার জন্য পানি নিচে না যাইয়া নাক দিয়া বাহির হইয়া আসিলে ওপিয়াম উপকারী।

শিরঃপীড়ায় লক্ষণ:- স্নায়বিক ধরনের শিরঃপীড়া। মাথায় পেছন দিকে আরম্ভ হয় এবং সমগ্র মুখমণ্ডলের উপর বিস্তৃত হইয়া পড়ে। রোগী মনে করে যেন তাহার মাথা মস্তিষ্কের তলদেশে প্রবল কনকনানির জন্য বালিলের সহিত সাঁটিয়া যাইতেছে। প্রাতঃকালে পীড়ার বৃদ্ধি। গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে শিরঃপীড়া। রোগিনী উঠিয়া বসে এবং পুনরায় শুইতে অক্ষম হইয়া পড়ে। সকাল বেলা শিরঃপীড়া শুরু হয়, এত প্রচণ্ড যন্ত্রণা যে রোগী নড়াচড়া করিতে পারে না, চক্ষুর পলক ফেলা যায় না, মাথাও ঘুরাইতে কষ্ট, সামান্য শব্দ পর্যন্ত সহ্য হয় না। রোগীর চক্ষু কোটরাগত, মুখমণ্ডল বেগুনী বর্ণ হয়। উপরোক্ত লক্ষণে ওপিয়াম প্রযোজ্য।

পক্ষাঘাতে লক্ষণ:- বৃদ্ধ ও মাতালদের পক্ষাঘাত। জানু ও পায়ের দুর্বলতা, কঠিনাবস্থায় অজ্ঞানতা, নিদ্রা গভীর। সন্যাস পীড়ার পর পক্ষাঘাত, আক্রান্ত স্থানে কোন বেদনা থাকে না। শরীরের অসাড়তা। অস্ত্রের অসাড় ভাব। গুহাপথে অসাড়তা ও পক্ষাঘাত, মলত্যাগের অনুভূতি আদৌ থাকে না। প্রস্রাবেরও ঐরূপ অবস্থা। শরীরের ঠাণ্ডা ও আচ্ছন্ন ভাব ।

শিশু পীড়ায় লক্ষণ:- সদ্যপ্রসূত শিশুর চেহারা স্নান ও রক্তশূন্য, শ্বাস-প্রশ্বাস রহিত। কেবলমাত্র নাভির স্থানে একটু ধক ধক করিতে থাকে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি রহিত হাত পা শিথিল, ত্বক কুঞ্চিত, বৃদ্ধের মত আকৃতি। শিশুকে ভয় দেখাইবার পর বা ধমক দিবার পর তড়কা বা আক্ষেপ। স্তন্যপায়ী শিশুর মাতা ভয় পাইলে শিশুর তড়কা। শিল্প তড়কার পূর্বে বা পরে শিশু চিৎকার দিয়া উঠে। তিন চার দিন যাবত শিশু মলত্যাগ করে না, অস্ত্রের অসাড়াভাব, কোষ্ঠবদ্ধতা।

কোষ্ঠবদ্ধতায় লক্ষণ:- ওপিয়ামের কোষ্ঠবন্ধের কারণ সার্বদৈহিক নিষ্ক্রিয়তা ও অস্ত্রের পক্ষাঘাতিক অবস্থা। সমস্ত অস্ত্রের অনুভূতি শূন্যতা, কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থাতে অনুভূতি শূন্যতার ভাবটি বর্তমান থাকে, রোগী অস্ত্রমধ্যে প্রচুর ফল সঞ্চার সত্ত্বেও অনুভব করিতে পারে না, তাই মলত্যাগের জন্য তাহার কোন বেগই থাকে না। পেটে অনেক পরিমাণে জল জমিয়া যায়, তবুও মলত্যাগের ইচ্ছা থাকে না। সমগ্র দেহ ও মনে ওপিয়াম সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন ও নিষ্ক্রিয়। পীসক বিষজাত কোষ্ঠকাঠিন্য ও শূল পীড়ায় ওপিয়ানের মল কতকটা বাহির হইবার পর পুনরায় ভিতরে চলিয়া যায় ।

উদরাময়ে লক্ষণ:- কেবলমাত্র টাইফয়েড অবস্থায় এবং এব্রোটেনাম সদৃশ শুষ্ক শিশুদের শেষ অবস্থায় ওপিয়ামের লক্ষণযুক্ত উদরাময় আসিতে দেখা যায়। শিশুদের ঐ অবস্থায় উদরাময়ের সহিত প্রায়শই আক্ষেপ লক্ষণের প্রাধান্য বর্তমান থাকে। তন্দ্রাচ্ছন্ন বা সম্পূর্ণ সংজ্ঞা লোপ, নাসিকা গর্জন ও গলার ঘড়ঘড় আওয়াজ, অর্থ নিমিলীত চক্ষু, সংকুচিত চক্ষু তারকা, মুখমণ্ডলে গরম ঘাম, সময়ে সময়ে বিড় বিড়ানিপূর্ণ প্রলাপ, প্রস্রাবের অল্পতা বা একেবারে অভাব, তৎসহ দুর্গন্ধ কালবর্ণের পাতলা বাহ্য ইত্যাদিই ইহার চরিত্রগত লক্ষণ। হিমাঙ্গ অবস্থার সহিত অত্যন্ত দুর্গন্ধমল অসাড়ে নির্গত হইতে থাকিলেও ওপিয়াম ফলপ্রদ। আবার বাহা বন্ধ হইয়া সম্পূর্ণ অজ্ঞান, চক্ষুর পাতা স্থির, চক্ষুর ভিতর আঙ্গুল দিলেও চক্ষুর পলক পড়ে না, শিশুর এই প্রকার সংকটপন্ন অবস্থা আসিয়া পড়িলেও ওপিয়াম উপকারী। সময় ধরিয়া ইহার নির্দিষ্ট হ্রাস বৃদ্ধি কিছুই নাই, তবে আনন্দ ও দুঃখের সংবাদে অথবা ভয় পাইলে ইহার উদরাময়, এমনকি যে কোনও রোগের আবির্ভাব হইতে পারে। ডাঃ এলেন বলেন-- ক্ষুদ্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগ স্থলের ক্ষতে এবং পুরাতন আমাশয়ে অনবরত অ নির্গত হইলে ইহা প্রযোজ্য। পেট ফাঁপাতে পেটে বায়ু আবদ্ধ থাকিয়া পেট ফাঁপিলে ও উদ্গারে উপশম বোধ না হইলে ওপিয়াম ।

জ্বর পীড়ায় লক্ষণ:- ওপিয়ামের জ্বরের প্রকৃতি মৃদু ধরণের। যে সকল ব্যক্তি জ্বরাক্রান্ত হইয়া অনুভূতি শূন্য ও প্রতিক্রিয়া শূন্য হইয়া পড়ে তাহাদের ক্ষেত্রেই ইহা প্রয়োগযোগ্য। হাম, বসন্ত, টাইফয়েড প্রভৃতির সহচররূপে রক্তদৃষ্টিকারী সংক্রামিক জাতীয় জ্বরে অনেক সময় ওপিয়ামের লক্ষণাবলী আসিতে দেখা যায়। সর্বপ্রথম ব্রায়োনিয়া বা জেলসের চিত্র লইয়া জ্বরের সূচনা হয় এবং ধীরে ধীরে রোগী আশংকাজনকভাবে ওপিয়ামে পর্যবসিত হয়। টাইফয়েড জ্বরে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান অচৈতন্যভাবে শিবনেত্র হইয়া পড়িয়া থাকে, চক্ষুর পলক স্থির, চক্ষুতে জল পড়ে, রোগীকে জোরে চেঁচাইলা ডাকিলে কিংবা নাড়া দিলেও সাড়া দেয় না, সম্পূর্ণ অম্লান ভাবের সঙ্গে রোগীর নাক ডাকে ও গলা ঘড় ঘড় করে, পেট ফাঁপে, পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ থাকে, কখনও আবার অসাড়ে মলমূত্র নিঃসরণ হয়, মুখে চোল লালবর্ণ থাকে। বিকার অবস্থায়। উক্ত লক্ষণাবলীতে ওপিয়াম প্রযোজ্য। আবার প্রথমাবস্থায় উপরোক্ত বিকারের অজ্ঞানভাবে চলিয়া গিয়া প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হইলে বিপরীত লক্ষণগুলি
যেমন- ফ্যালফ্যাল চাইনি, মন্ত্রক ও হস্তপদাদির কম্পন, অনিদ্রা, সামান্য শব্দেও নিদ্রা যাইতে না পারা, শ্রবণ শক্তির তীক্ষ্ণতা, ছটফটানি ইত্যাদি উত্তেজনার ভাব থাকিলেও ইহা উপযোগী ।

প্রসূতাবস্থায় অজ্ঞানতায় লক্ষণ:- প্রসূতির খেঁচুনি কিংবা প্রসব হইবার মধ্যবর্তী সময়ে প্রসূতি সম্পূর্ণ অজ্ঞান থাকে, প্রসব হইবার পূর্বে জোরে চিৎকার করিয়া উঠে, মুখে বেগুনী রঙ ধারণ করে ও ঘর্ম হয়। পীড়া কোন প্রকার ভয়জনিত হইলে ইহা আরও অধিক উপকারী।

অনিদ্রায় লক্ষণ:- বিছানায় পড়িয়া রোগী অনেকক্ষণ জাগিয়া থাকে, ঘুম অত্যন্ত পাতলা, চোখে সহজে ঘুম আসে না, সামান্য শব্দ মাত্রই ঘুম ভাঙ্গিয়া যায়। তাহার পর বহুগুণ পর্যন্ত জাগিয়া থাকিয়া তবে ঘুম আসে। রোগী আচ্ছন্নভাবে থাকিয়া ভীতিজনক দৃশ্য দেখে এবং গোঁ গোঁ করে। এই সকল লক্ষণে ওপিয়াম উপকারী।

ফুসফুসের পীড়ার লক্ষণ:- ফুসফুসের পক্ষাঘাত হইবার সূচনা, শ্বাস-প্রশ্বাস যেন উপর হইতে চলে, সময়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে এবং হাপাইতে থাকে। রোগী শুইতে পারে না। নিমোনিয়া প্রভৃতি পীড়ায় গলা খড় খড় করে, বুকে সর্দি ভরা, কাশে কিন্তু সর্দি তুলিয়া ফেলিতে পারে না।

শিশু কলেরা লক্ষণ:- শিশু কলেরায় বাহ্য বমি সব বন্ধ হইয়া যদি শিশু অচৈতন্য ভাবে পড়িয়া থাকে এবং চক্ষুর পলক না পড়া, ডাকিলে সাড়া না দেওয়া, কোন প্রকার প্রতিক্রিয়ার অভাব, অর্ধবোজা চক্ষু, গলা ঘড়ঘড় করা, নাক ডাকা প্রভৃতি লক্ষণে ওপিয়াম উপকারী। তবে লক্ষ্যণীয় এই যে, এই অবস্থায় পুনরায় বাহ্য বমি দেখা দিলেই প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হইয়াছে বুঝিতে হইবে এবং রোগীও ক্রমে আরোগ্যের পথে চলিতেছে জানিতে হইবে।

অস্ত্রশূল বেদনায় (কলিক) লক্ষণ:- ওপিয়ামে পেটে বায়ু জমাহেতু পেট ফুলিয়া উঠে এবং ঢেকুর উঠিতে থাকে। কিন্তু তাহাতে পেট বেদনা অথবা পেট ফোলার কোনও উপশম হয় না। পেট বেদনা ও কোষ্ঠবন্ধের সহিত দুর্গন্ধ মল বমন হইলে ইহা উপকারী।

প্রস্রাবের পীড়ায় লক্ষণ:- মুত্রথলী প্রস্রাবে পরিপূর্ণ অথচ রোগী কিছুমাত্র জানিতে পারে না। মূত্রথলীর সম্পূর্ণ অসাড়তা, তজ্জন্য মূত্র নির্গত হইতে পারে না। মূত্রথলীতে প্রস্রাব জমিয়াও প্রস্রাব না হইলে ওপিয়ামের মত হায়োসিয়ামস, কস্টিকাম, আর্সেনিক ইত্যাদি উকপারী। কিন্তু মূত্রথলীতে প্রস্রাব না জমিলে আর্সেনিক, লাইকো, ভিরেট্রাম, কেলিবাইক্রম প্রভৃতি ফলপ্রদ । জ্বর প্রভৃতি কোনও তরুণ পীড়ায় কিংবা ভয় পাইয়া বা প্রসবের পর প্রসূতির প্রস্রাব বন্ধ থাকিলে ওপিয়াম উপকারী।

নিম্নশক্তি প্রয়োগের কুফল:- ওপিয়াম (আফিম) নিম্নক্রম * কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকে মনে করেন যে ইহা সর্বপ্রকার বেদনার মহৌষধ, ইহা স্থূলশক্তিতে ব্যবহার করিলে বেদনার হ্রাস ঘটে। কিন্তু যন্ত্রণা বা বেদনার সাময়িক উপশমের লক্ষ্যে ইহা নিম্নশক্তি ব্যবহারের ফলে রোগী দেহে নূতন উপসর্গের সৃষ্টি করিবে এবং পীড়া জটিল ও দূরারোগ্য হইয়া পড়িবে। নিম্নশক্তি ব্যবহারে রোগী অবসাদগ্রস্ত হইয়া সর্বাঙ্গীন পক্ষাঘাতের মত অবস্থা আনয়ন করে। ইহা মাদকগুণ বিশিষ্ট, নিদ্রাকারক ও মস্তিষ্কের উত্তেজনা বৃদ্ধিকারক।

প্রান্তদেশে লক্ষণ:- গ্রীবাদেশের শিরাসমূহের স্ফীতি বেদনাহীন পক্ষাঘাত। পশ্চাৎদিকে বাঁকিয়া যাওয়া। অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঝাঁকি দিয়া উঠে। স্পন্দনে মনে হয় সংকোচক পেশীসমূহ অতিরিক্ত ক্রিয়া করিতেছে। হস্ত পদের শীতলতা।

বৃদ্ধি:- হঠাৎ আনন্দ ও দুঃখের সংবাদ অথবা ভয় পাইলে, উত্তপ্ত হইলে, চর্মপীড়া ও স্রাব চাপা পড়িলে, নিদ্রার সময় ও নিদ্রাস্তে, মদ্য জাতীয় পানে, বায়ু নিঃসরণে, পীড়ার কথা চিন্তা করিলে।

উপশম:- ঠাণ্ডায় অবিশ্রাম ভাবে ঘুরিয়া বেড়াইলে, বমনে, জলপানে, কফি পানে, মলত্যাগের পর।

তুলনীয় ঔষধ:- সহসা ভয় পাইয়া শিশুর তড়কা হইলে-একোনাইট তুল্য, প্রসূতির ভয় পাওয়ার ফলে স্তন্যপায়ী শিশুর আক্ষেপে-হায়োসিয়ামস তুল্য, ঘুমে চোখ বুজিয়া আসে তথাপি ঘুম না হইলে-বেল, ক্যামো, তুল্য, কোষ্ঠবদ্ধতায়- গ্রাফাইটিস তুল্য, মানসিক আবেগে- ইগ্নে তুল্য।

সম্বন্ধযুক্ত বা অনুপূরক ঔষধ:- নাক্স ভম, ব্রায়ো, বেল, একোন, এন্টিম টার্টের পূর্বে কিংবা পরে ইহা ফলপ্রদ। আফিম সেবীদের উদরাময়ে বা অন্যান্য পীড়ায় ইহার উচ্চশক্তি।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- কফিয়া, কুপ্রাম, জেলস, ইপি, মার্ক, এসিড এসেটিক, বেল, সাইকিউটা, ক্যামো, জিঙ্ক, পালস, নাক্স, এসিড মিউর।

ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৪ দিন ।

ব্যবহারে শক্তি বা ক্রম:- ৬ হইতে ২০০ বা উচ্চশক্তি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ