রেপার্টরী ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা, তৃতীয় অধ্যায় - ৪র্থ বর্ষ

তৃতীয় অধ্যায়
রেপার্টরী ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা




প্রশ্ন-  রেপার্টরী ব্যবহারের সুবিধা বর্ণনা কর ।
বা, সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রেপার্টরীর প্রয়োজনীয়তা কি? 
বা, রেপার্টরীর উপকারিতা কি?

উত্তর ঃ রেপার্টরী ব্যবহারের সুবিধা বা উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হইল ।
(i) ইহা রোগীর প্রয়োজনীয় লক্ষণাবলীর সদৃশ ঔষধ প্রাপ্তির জন্য পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করে এবং নিদান লক্ষণাবলীর নির্ভুল ও নির্দিষ্ট ঔষধ যথাসম্ভব ত্বরান্বিত করিতে সাহায্য করে ও নির্দিষ্ট ঔষধ প্রাপ্তির ক্ষেত্রকে সংক্ষেপ করে।
(11) ইহা নির্বাচন যোগ্য ঔষধগুচ্ছ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে।
(iii) ইহা দ্বারা অনেক সময় চিকিৎসকের না জানা ঔষধও নির্বাচন করা সম্ভব। 
(iv) ইহা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংকশাস্ত্র। অংক কষিয়া
নির্ভুলভাবে সঠিক ঔষধ নির্বাচনে ইহা চাবিকাঠি।
(v) ইহা রোগীর কোন একটি ব্যাপক লক্ষণের প্রকৃত সদৃশ ঔষধ সন্ধান করিতে সাহায্য করে।
(vi) চিকিৎক অনেক সময় অপ্রচলিত ঔষধ ব্যবহার করিতে শিক্ষা লাভ করেন।  
(vii) ইহা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে লক্ষণের পার্থক্য নির্ণয় করিতে সাহায্য করে এবং নির্বাচনযোগ্য ঔষধ সমষ্টির তুলনামূলক বিশ্বেষণে সাহায্য করে। 
(viii) ইহা কোন কোন ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ঔষধের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে সাহায্য করে। 
(ix) চিকিৎসক অনেক সময় অপ্রচলিত ঔষধ ব্যবহার করিতে শিক্ষা লাভ করে। 
(x) ইহা প্রধান নির্বাচিত ঔষধ ছাড়াও সম্পর্কযুক্ত সহযোগী ও সাহায্যকারী ঔষধ এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রভৃতি পর্যায়ের ঔষধ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে । 
(xi) ইহার আলোচনা দ্বারা নিদান লক্ষণের উত্তম শ্রেণীবিভাগ করণের অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হওয়া যায়।
(xii) একদৈশিক পীড়ায় যখন লক্ষণগুলি স্পষ্ট নয় তখন সামান্যতম লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া রেপার্টরীর সাহায্যে অগ্রসর হওয়া যায়। 



প্রশ্ন- রেপার্টরী ব্যবহারের অসুবিধা বা অপকারিতা লিখ ।

উত্তর ঃ রেপার্টরী ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হইল ।
(i) পারিবারিক ইতিহাস বা বিগত জীবনের ইতিহাস, দৈবাৎ ঘটনা হইতে প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ও কদাচ প্রাপ্ত লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধ নির্বাচনে রেপার্টরীর সম্যক অবদান না থাকায় ইহার দৈন্যতা পরিলক্ষিত হয়। 
(ii) রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তির স্মরণশক্তি কমিয়া যায়। কারণ চিকিৎসক ঔষধের সমস্ত লক্ষণগুলি স্মরণ রাখার প্রয়োজন বোধ করে না।
(iii) রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল হইলে মেটিরিয়া মেডিকার প্রতি চিকিৎসকের আকর্ষণ কমিয়া যায়, ফলে তিনি ঔষধের পূর্ণ চিত্র শিক্ষা লাভ করিতে পারে না। 
(iv) অনেক জটিল ও চিররোগের ক্ষেত্রে রেপার্টরী খুব বেশী সাহায্য করিতে পারে না। যেখানে মায়াজম সন্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের প্রয়োজন হয় সেখানে রেপার্টরীতে অবস্থানরত লক্ষণের উপর নির্ভর করিলে ভুল হইবে। 
(v) জীবন রক্ষাকারী যন্ত্র রোগাক্রান্ত হইলে সদৃশ ঔষধ ব্যবহার করা বিপদজনক। এই ক্ষেত্রে রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ভুল করিতে বাধ্য ।
(vi) ঔষধ নির্বাচনে কতকগুলি ভিত্তির প্রতি নজর রাখিতে হয়, যাহা কোন রেপার্টরীতেই যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় নাই। যেমন সংক্রমক রোগের ভিত্তি, রোগ উৎপত্তির উত্তেজক কারণ, মায়াজম জনিত রোগাক্রমণের ইতিহাস প্রভৃতি ।
(vii) রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি স্থায়ী লক্ষণ, অস্থায়ী লক্ষণ এবং পরিবর্তনশীল লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে পারেন না। এইরূপ চিকিৎসক অস্থায়ী লক্ষণের উপর ঔষধ নির্বাচন করিয়া ভুল করিতে বাধ্য।
 (viii) নূতন আবিষ্কৃত নোসোডস্, বাওয়েল নোসোডস, স্টক ভ্যাকসিন, এন্টিবায়োটিকস্, বিদ্যুৎ, চুম্বক ও দুষ্প্রাপ্য ধাতুজ ঔষধসমূহ, পিত্ত ও দুগ্ধজ ঔষধসমূহ, হরমোন প্রভৃতি ঔষধসমূহ অধিকাংশ রেপার্টরীতে সংযোজিত না হওয়ায় ব্যবস্থাপত্র প্রস্তুতে চিকিৎসককে নিরাশ বা ব্যর্থতার গ্লানি বহন করিতে হয়।
(ix) রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মেটিরিয়া মেডিকা রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল নয়। সুতরাং রেপার্টরী ব্যবহার করিতে হইলে মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞান অবশ্যই থাকিতে হইবে।



প্রশ্ন - কোন রেপার্টরীই সর্বতোভাবে উপযুক্ত নয়- ব্যাখ্যা কর। বা, রেপার্টরীর সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর ।

উত্তর ঃ কোনকিছুই সীমাবদ্ধতার উর্ধে নয়। তাই রেপার্টরীর সীমাবদ্ধতায় অবাক হওয়ার কিছুই নাই। আজ পর্যন্ত যতগুলি রেপার্টরী রচিত হইয়াছে এবং প্রচলিত আছে উহাদের কোনটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কারণ রেপার্টরীতে নির্দেশিত ঔষধগুলির সবগুলি সুপরীক্ষিত নয়। বহু রেপার্টরীতে অর্গান রিমেডির স্থান নাই । অনেক নূতন আবিষ্কৃত ঔষধসমূহ এখনও কোন রেপার্টরীতে সংযোজিত হয় নাই । বংশগত ইতিহাস, বিগত জীবনের ইতিহাস, দৈবাতঘটনা প্রভৃতি হইতে প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ও কদাচপ্রাপ্ত লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধ নির্বাচনে রেপার্টরীর সম্যক অবদান নাই। আবার ঔষধ নির্বাচনে কতকগুলি ভিত্তির উপর দৃষ্টি রাখিতে হয়, যাহা কোন রেপার্টরীতে যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করা হয় নাই। যেমন- সংক্রামক রোগের ভিত্তি, রোগ উৎপত্তির উত্তেজক কারণ, রোগ দোষ জনিত রোগাক্রমণের ইতিহাস ইত্যাদি। চিররোগ ও জটিলরোগের ক্ষেত্রে রেপার্টরী খুব একটা সাহায্য করিতে পারে না। কারণ মায়াজম সম্বন্ধে জ্ঞানের যেখানে যথেষ্ট প্রয়োজন, সেখানে রেপার্টরীর অবস্থানরত লক্ষণের উপর নির্ভর করিলে ভুল হইবে। অতএব উপরোক্ত আলোচনা হইতে বলা যায় যে, কোন রেপার্টরীই সর্বতোভাবে উপযুক্ত নয় ।



প্রশ্ন-  একজন ভৈষজ্য বিজ্ঞানী বলেন যে, সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরী প্রয়োজন- তুমি কি এই মন্তব্যে একমত - আলোচনা কর।

উত্তর : সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরী প্রয়োজন- আমি এই মন্তব্যে একমত। কেননা হোমিওপ্যাথিতে রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের উপর নির্ভর করিয়া রোগের প্রতিকারক স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়। ইহা একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় প্রায় দুই হাজারের মত ঔষধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। সব ঔষধের লক্ষণ মুখস্ত রাখা কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে রেপার্টরী ব্যতীত মেটিরিয়া মেডিকা হইতে কোন রোগীর জন্য একটি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা দুরুহ ব্যপার। অনেক সময় একই রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ঔষধ সদৃশ বলিয়া অনুমিত হয়। আবার কখনও কখনও কোন ঔষধের সহিত রোগীর লক্ষণ আংশিক সদৃশ হয়। এই সকল ক্ষেত্রে রেপার্টরী সঠিক ঔষধ নির্বাচনে সাহায্য করিয়া থাকে। তাছাড়া রেপার্টরী দ্বারা আমাদের নিম্নলিখিত উপকার হয়।
(i) লক্ষণের গুরুত্ব অনুসারে এবং অংক কষিয়া নির্ভুলভাবে সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ইহা চাবিকাঠি।
(ii) ইহা রোগীর প্রয়োজনীয় লক্ষণাবলীর সদৃশ ঔষধ প্রাপ্তির জন্য পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করে।
(iii) ইহা দ্বারা অনেক সময় চিকিৎসকের অজানা ঔষধও নির্বাচন করা সম্ভবপর হয়।
(iv) ইহা কোন কোন সময় দুই বা ততোধিক সম ঔষধের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে সহায্য করে।
(v) ইহা প্রধান নির্বাচিত ঔষধ ছাড়াও সম্পর্কযুক্ত সহযোগী ও সাহায্যকারী ঔষধ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে।
(vi) একদৈশিক পীড়াতে স্পষ্ট লক্ষণ না পাওয়া গেলে সামান্যতম লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া রেপার্টরীর সাহায্যে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় ।
(vii) অনেক অপ্রচলিত ঔষধ ব্যবহারের শিক্ষা লাভ করা যায় ।
(viii) ইহার আলোচনা দ্বারা নিদান লক্ষণের উত্তম শ্রেণীবিভাগ করনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।
উপরোক্ত আলোচনা হইতে আমরা বলিতে পারি যে, সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।




প্রশ্ন-  একজন ভৈষজ্য বিজ্ঞানী বলেন যে, সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরী অপ্রয়োজন- তুমি কি এই মন্তব্যে একমত - আলোচনা কর ।

উত্তর ঃ সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরী অপ্রয়োজন- আমি এই মন্তবো একমত। হোমিওপ্যাথি একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করিয়া রোগের প্রতিকারক স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়। রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র নির্ণয়ের জন্য রোগীর বংশগত ইতিহাস এবং মায়াজম জনিত রোগাক্রমণের ইতিহাস প্রয়োজন। কিন্তু রেপার্টরীতে উহাদের যথাযথ মূল্যায়ন না থাকায় রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল চিকিৎসক সঠিক ঔষধ নির্বাচনে ভুল করিতে বাধ্য। তাছাড়া রেপার্টরীর নিম্নবর্ণিত অসুবিধা সমূহও রহিয়াছে ।
(i) নূতন আবিষ্কৃত নোসোডস্, বাওয়েল নোসোস, স্টক ভ্যাকসিন, এন্টিবায়োটিকস, বিদ্যুত, চুম্বক, দুষ্প্ৰাপ্য ধাতুজ ঔষধসমূহ অধিকাংশ রেপার্টরীতে সংযোজিত না হওয়ায় ব্যবস্থাপত্র তৈরীতে চিকিৎসককে নিরাশ বা ব্যর্থতার গ্লানি বহন করিতে হয়।
(ii) বংশগত ইতিহাস বা বিগত জীবনের ইতিহাস, দৈবাৎ ঘটনা হইতে প্রাপ্ত অস্বাভাবিক ও কদাচ প্রাপ্ত লক্ষণ সাপেক্ষে ঔষধ নির্বাচনে রেপার্টরীর সম্যক অবদান না থাকায় ইহার দৈন্যতা পরিলক্ষিত হয়।
(iii) রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল হইলে মেটিরিয়া মেডিকার প্রতি চিকিৎসকের আকর্ষণ কমিয়া যায়, ফলে তিনি ঔষধের পূর্ণাঙ্গ চিত্র শিক্ষা লাভ করিতে পারেন না। 
(iv) অনেক জটিল ও চিররোগের ক্ষেত্রে রেপার্টরী খুব বেশী সাহায্য করিতে পারে না। যেখানে মায়াজম সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, সেখানে রেপার্টরীতে অবস্থানরত লক্ষণের উপর নির্ভর করিলে ভুল হইবে।
(y) ঔষধ নির্বাচনে কতকগুলি ভিত্তির প্রতি নজর রাখিতে হয়, যাহা কোন রেপার্টরীতেই যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় নাই। যেমন সংক্রমক রোগের ভিত্তি, রোগ উৎপত্তির উত্তেজক কারণ, মায়াজম জনিত রোগাক্রমণের ইতিহাস প্রভৃতি ।
(vi) রেপার্টরীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি স্থায়ী লক্ষণ, অস্থায়ী লক্ষণ এবং পরিবর্তনশীল লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে পারে না। এইরূপ চিকিৎসক অস্থায়ী লক্ষণের উপর ঔষধ নির্বাচন করিয়া ভুল করিতে বাধ্য।

অতএব উক্ত আলোচনা হইতে বলা যায় যে, একজন ভৈষজ্য বিজ্ঞানী বলিতে পারেন সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য রেপার্টরী অপ্রয়োজন ।
 




সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ