হোমিওপ্যাথির নীতিমালা - নিয়ামনীতি - ১ম বর্ষ

  তৃতীয়অধ্যায় 

হোমিওপ্যাথির নীতিমালা 
Code of Homeopathic Ethics




প্রশ্ন-  নীতিবিজ্ঞান বা ইথিক্স কাহাকে বলে?

উত্তর : গ্রীক শব্দ “ইখোজ" হইতে ইংরেজী Ethics শব্দটি আসিয়াছে। গ্রীক Ethos শব্দের অর্থ হইল রীতিনীতি বা অভ্যাস, তাই Ethics অর্থ রীতিনীতি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের যে শাখায় মানবজীবনের চরম আদর্শ এবং এ আদর্শ লাভের সহায়ক নৈতিক নিয়মগুলি নির্ধারণ পূর্বক মানুষের আচরণ ভাল কি মন্দ বিচার করে, তাহাকে নীতিবিজ্ঞান বলে।



প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথির নীতিমালা বা Code of Homoeopathic Ethics কাহাকে বলে?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক নিয়ম নীতির যে শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের চরম আদর্শ, কর্তব্য, আরোগ্য বিধান, তথা আদর্শ আরোগ্য লাভের সহায়ক নৈতিক নিয়মগুলি নির্ধারণপূর্বক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের আচরণ ভাল কি মন্দ বিবেচনা করে তাহাকে হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা বা কোড অব হোমিওপ্যাথিক ইথিক্স বলে।



প্রশ্ন-  নীতিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় বা ক্ষেত্র বর্ণনা কর।

উত্তর : অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় নীতিবিজ্ঞানও একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এবং তাহার সহিত সংযুক্ত কতকগুলি আনুষঙ্গিক বিষয় লইয়া আলোচনা করে। এই বিষয়গুলি হইল
১) নীতিবিজ্ঞান নৈতিক চেতনার উপাদানসমূহ আলোচনা করে।
২) ইহা ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার উৎস, উদ্দেশ্য, কামনা, অভিপ্রায় প্রভৃতি নিয়া আলোচনা করে।
৩) ইহা কর্মের নৈতিকগুণ ও নৈতিক বিচার লইয়া আলোচনা করে।
৪) ইহা মানুষের কর্তব্য, সততা ও দোধ সম্পর্কে আলোচনা করে। ৫) ইহা ব্যক্তিত্ব, বিচারবুদ্ধি এবং ইচ্ছাধীনতা প্রভৃতি স্বীকার্য সত্য কে আলোচনা করে।
৬) ইহা নৈতিক বিচারের মানদণ্ড সম্পর্কীয় মতবাদগুলি আলোচনা করে।
৭) ইহা নৈতিক বাধ্যতাবোধ বা মর্যাল অবলিগেশন সম্পর্কে আলোচনা করে।
৮) ইহা নৈতিক গৌরব, অগৌরব এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে ।
৯) ভাল কাজে মনের প্রীতিভাব জাগে ও মন্দ কাজে মনের অপ্রীতির ভাব জাগে, মানুষের এই নৈতিক মনোভাবের স্বরূপ, উৎস এবং ইহার সাথে নৈতিকবিচার সম্বন্ধ সম্পর্কেও নীতিবিজ্ঞান আলোচনা করে।



প্রশ্ন- নীতিবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলি বর্ণনা কর।

উত্তর : উচিত ও অনুচিত, ভাল ও মন্দ এবং পরমার্থের ধারণাই হইল নীতিবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা। ইংরেজী শব্দ Right শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Rectus হইতে আসিয়াছে। Right শব্দের অর্থ হইল নিয়ম অনুসারে। যখন কোন মানুষের একটি ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে উচিত বলি, তখন বুঝি ঐ ক্রিয়াটি নিয়ম অনুযায়ী হইয়াছে। আর যখন বলি ক্রিয়াটি অনুচিত' হইয়াছে, তখন বুঝি ঐ ক্রিয়াটি নিয়ম অনুযায়ী হয় নাই। নীতিবিজ্ঞানের নিয়ম বলিতে আমরা নৈতিক নিয়মকে বুঝি। সুতরাং আমরা বলিতে পারি, যে ক্রিয়া নৈতিক নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে তাহা উচিত, আর যাহা সংগতি রক্ষা করে না তাহা অনুচিত।
যে বস্তু আমাদের কোন উদ্দেশ্য সাধন করে তাহাকেই আমরা সাধারণতঃ ভাল বলি। আর যাহা আমাদের কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে না তাহাকে মন্দ বলি ।
মানুষের পরমার্থ বা পরম কল্যাণ হইল সেই কল্যাণ যাহাকে তাহার নিজের জন্যই কামনা করা হয়। অর্থ, শক্তি, খ্যাতি, জ্ঞান ইত্যাদি মানুষের কাম্যবস্তু হইলেও এইগুলিকে পরমার্থ বলা যায় না, কারণ এইগুলির কোনটিই জীবনের চরম লক্ষ্য নয়। এইসব আপেক্ষিক কল্যাণ। যেহেতু এইগুলিকে কামনা করা হয় অন্য বস্তুকে লাভ করার জন্য পরমার্থ মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কাম্য বস্তু। ইহা কামনার শেষ ধাপ। পরমার্থ লাভের পর মানুষের কামনার আর কিছুই থাকে না।


প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর ঃ হোমিওপ্যাথিক নীতি বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। একজন প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হইতে হইলে হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
 (১) হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা পাঠ করিলে একজন প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পীড়িতের প্রতি কি কর্তব্য সে সম্পর্কে অবহিত হইতে পারেন। 
(২) হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা একজন প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের চরম আদর্শ এবং ঐ আদর্শ লাভের সহায়ক নৈতিক নিয়মগুলি নির্ধারণপূর্বক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের আচরণ ভাল কি মন্দ তাহা বিচার করে।
(৩) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে নীতিবান, সত্যবাদী, মহৎ, বাস্ত বধর্মী, যুক্তিবাদী, উদার ও চরিত্রবান হইতে হয়, এই সকল গুনের অধিকারী হইতে হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা সাহায্য করে।
(৪) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পক্ষে কোনটি বাঞ্ছনীয় ও করণীয়, কোনটি করণীয় নয়, হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা তাহা নির্ধারণ করে। নীতি বহির্ভূত কার্যকলাপ হইতে একজন চিকিৎসক বিরত থাকার শিক্ষা নীতিমালা হইতে পাইয়া থাকেন।  
(৫) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একের প্রতি অপরের কর্তব্য এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের রোগীর প্রতি কর্তব্য সম্বন্ধে হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা আলোচনা করে।
(৬) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদবী বা উপাধি ব্যবহারের ও প্রচার নীতির সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিক নীতিমালায় সুস্পষ্ট ব্যাথা পাওয়া যায়।



প্রশ্ন- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের 'হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নীতিমাল' পুস্তিকার বিষয়বস্তু বা শিরোনাম সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর : মহাত্মা হ্যানিমানের 'অর্গানন অব মেডিসিন' গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত নীতিমালা আলোচিত হইয়াছে সেগুলি অবলম্বন করিয়া এবং ১৯৮৩ সালের ২৫ শে আগষ্ট প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের হোমিওপ্যাথিক প্রাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স No. XLI.1983 এর ৫৩১৫ পৃষ্ঠার ৩৪ সেকশনের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নীতিমালা তৈরি করা হইয়াছে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ১৯৮৪ সালে এই নীতিমালা সংগ্রহ ও সংকলন করিয়া পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করিয়াছেন এবং হোমিওপ্যাথিক বোর্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালাকে হোমিওপ্যাথিক কলেজসমূহের পাঠ্য তালিকায় “হোমিওপ্যাথিক নিয়ম নীতি" পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখিয়াছেন । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা' পুস্তিকায় নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হইয়াছে। যেমন
১) সকল প্রকার পীড়িতের প্রতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কর্তব্য।
২) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদবী ও উপাধি ব্যবহার ও প্রচারনীতি।
৩) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য নীতি বহির্ভূত কার্যকলাপ ।
৪) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একের প্রতি অপরের কর্তব্য। 
৫) বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের ঘোষণাপত্র।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ ন্যায় অন্যায় যাচাই করিয়া একটি নীতির ভিত্তিতে করিতে হয়।



প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নীতিমালাসমূহ বর্ণনা কর।

উত্তর : হোমিওপ্যাথি একটি আদর্শ বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। সঠিকভাবে প্রয়োগ দ্বারা আর্তমানবতার সেবা করাই ইহার উদ্দেশ্য। এই প্রয়োগ ব্যবস্থা সমাধা করিতে চিকিৎসককে ন্যায়-অন্যায় যাচাই করিয়া একটি নীতির উপর ভিত্তি করিতে হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নীতিমালাসমূহ নিম্নরূপ :
(ক) একজন চিকিৎসকের একমাত্র এবং মহৎ উদ্দেশ্য হইল রোগীর আরোগ্য বিধান এবং তাহাকে স্বাস্থ্যে পুনঃস্থাপিত করা ।
(খ) আরোগ্য বিধানের উচ্চতম আদর্শ হইল দ্রুত, বিনাকষ্টে ও স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
(গ) চিকিৎসককে সততা, আন্তরিকতা ও সেবামূলক মনোবৃত্তি নিয়া চিকিৎসা করা।
(ঘ) সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত ঔষধ চিকিৎসা কার্যে ব্যবহার করা।
(ঙ) মহাত্মা হ্যানিমানের হোমিওপ্যাথিক নিয়মে শক্তিকৃত ঔষধ রোগীতে ব্যবহার করা ।
(চ) লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহ করিয়া রোগের পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন পূর্বক উক্ত
লক্ষণসমষ্টির সাদৃশ্যতম ঔষধটি ব্যবহার করা ;
(ছ) রোগীক্ষেত্রে সূক্ষ্মতম ও ক্ষুদ্রতম মাত্রা প্রয়োগ করা।
জ) রোগের নয় রোগীর চিকিৎসা করা ।
ঋ) একবারে একটি ঔষধ প্রয়োগ করা। 
ঞ) কোন আঙ্গিক চিকিৎসা নয়, সামগ্রিক রোগীর চিকিৎসা করা। 
ট) রোগী ও ঔষধের স্বাতন্ত্র রক্ষা করা।
ঠ) সদৃশ ও বিসদৃশ বিধানের মিশ্রণ বর্জন করা। 



প্রশ্ন-  আন্তর্জাতিক চিকিৎসা নীতিমালাসমূহ বর্ণনা কর।

উত্তর : আন্তর্জাতিক চিকিৎসা নীতিমালাসমূহ নিম্নরূপ
ক) সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকের দায়িত্ব একজন চিকিৎসককে তাঁহার পেশার সর্বোচ্চ আদর্শ বজায় রাখিতে হইবে। কোন অবস্থাতেই কোন লোভ লালসার কাছে নতি স্বীকার করা উচিত নয়। নিম্নলিখিত কাজগুলি সর্বদাই চিকিৎসাশাস্ত্রে অগ্রহণযোগ্য
১) জাতীয় স্বাস্থ্য আইনে বর্ণিত কোন সুযোগ সুবিধা বা পদবীর বাহিরে অন্য কোন ব্যক্তিগত প্রচারণা করা।
২) চিকিৎসা পেশায় গ্রহণযোগ্য নয় এবং যে ধরনের চিকিৎসা করিবার জন্য চিকিৎসককে সনদপত্র প্রদান করা হয় নাই সেই ধরনের চিকিৎসা কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করা বা সেই ধরনের চিকিৎসা করিবার পরিকল্পনা করা।
৩) রোগীর অজ্ঞাতে বা অজ্ঞতার সুযোগে কোন রোগীকে চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক সেবা দেয়ার বিনিময়ে নির্ধারিত পেশাগত ফি এর অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ বা প্রদান।
৪) রোগীর স্বার্থে রোগ প্রতিরোধ বা রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া একজন চিকিৎসক এমন কিছু করিতে পারিবেন না, যাহার ফলে রোগী দৈহিক বা মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়ে।
৫) কোন আবিষ্কার প্রকাশের আগে একজন চিকিৎসককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে একইভাবে কোন চিকিৎসাপদ্ধতি, যাহা চিকিৎসা শাস্ত্রে স্বীকার করা হয় নাই বা চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয় নাই তাহার প্রয়োগ করিতে গেলেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে।
৬) কোন চিকিৎসককে যখন কোন স্বাক্ষী বা সনদ প্রদান করিতে বলা হইবে তখন তিনি শুধু সেইটুকু বর্ণনা করিবেন যেটুকু তিনি প্রমাণ করিতে পারিবেন।
খ) রোগীর প্রতি চিকিৎসকের কর্তব্য : জন্ম থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মানুষের জীবন রক্ষার গুরুত্ব কতখানি তাহা একজন চিকিৎসককে সর্বদাই অনুভব করিতে হইবে। একজন চিকিৎসককে তাহার রোগীর প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্ঠাবান হইতে হইবে এবং তাহার বিজ্ঞানের সমস্ত জ্ঞান প্রয়োগ করিতে হইবে। তাহার ক্ষমতা বহির্ভূত কোন পরীক্ষা বা চিকিৎসা করিবার জন্য তাহাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অধিকারী অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হইতে হইবে। একজন চিকিৎসককে তাহার রোগীর গোপনীয় বিষয় সম্বন্ধে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখিতে হইবে, যাহাতে তাহা অন্যের কাছে প্রকাশিত না হয়। জরুরী অবস্থায় একজন চিকিৎসকের উচিত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া যতক্ষণ না তিনি নিশ্চিত হইবেন যে অন্য কেউ এই রোগীর চিকিৎসা করিতে পারে এবং করিবে।
গ) চিকিৎসকদের পরস্পরের প্রতি কর্তব্য : অন্যদের কাছে তিনি যেরূপ ব্যবহার আশা করেন একজন চিকিৎসকের উচিত অন্য চিকিৎসকের প্রতি সেইরূপ ব্যবহার করা। চিকিৎসকের উচিত নয় তাহার সহকর্মী বা অন্য চিকিৎসকদের কাছ হইতে রোগী সরাইয়া নেওয়ার ব্যবস্থা করা। একজন চিকিৎসকের উচিত বিশ্ব মেডিকেলি এসোসিয়েসন কর্তৃক স্বীকৃত 'জেনেভা ঘোষণা'র নীতিমালা মানিয়া চলা ।
ঘ) জেনেভা ঘোষণা : ১৯৪৯ সালের ১১ই অক্টোবর লন্ডনে বিশ্ব মেডিকেল এসোসিয়েসনের সাধারণ সভায় নিম্নলিখিত জেনেভা ঘোষণা গৃহীত হয়। ১) আমি স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমার জীবন মানবতার সেবায় উৎসর্গ করিব।
২) আমি আমার শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শ্রদ্ধা ও সম্মান করিব । ৩) বিশ্বস্ততা ও মর্যাদার সাথে আমি আমার পেশায় নিয়োজিত হইব।
৪) রোগীর স্বাস্থ্যই আমার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হইবে ।
৫) আমার সমস্ত ক্ষমতা বলে আমি চিকিৎসা পেশার সম্মান ও শাশ্বত ঐতিহ্য বজায় রাখিব।
৬) আমার কাছে বর্ণিত গোপনীয়তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল থাকিব।
২) আমার সহকর্মীদের আমি আমার সহোদর মনে করিব।
৮) আমার রোগী ও আমার কর্তব্যের মাঝে কোন ধর্ম, জাতীয়তা, গোত্র, দলগত রাজনীতি বা সামাজিক বিষয় প্রশ্রয় দিব না।
৯) ভ্রূণ জন্ম নেওয়ার পর হইতে জীবনের মূল্য সম্পর্কে আমি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করিব।
১০) কোন হুমকীর মুখেও আমি আমার চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করিব না।
 


প্রশ্ন-  সকল প্রকার পীড়িতদের প্রতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কর্তব্য কি?

উত্তর : সকল প্রকার পীড়িতদের প্রতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কর্তব্য :
১) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সব সময় নিশ্চিত ভাবে তাঁহার কার্যকলাপের সর্বোচ্চ মান রক্ষা করিবেন।
২) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনও নিজে শুধু মাত্র আয়ের উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত হইতে পারিবেন না।
৩) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের অবশ্যই উদ্দেশ্য থাকিবে রোগীকে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা করার এবং তাঁহার চিকিৎসার ধারা নিশ্চয়ই ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমান রচিত "অর্গানন অব মেডিসিন” নামক গ্রন্থের উপর প্রতিষ্ঠিত হইবে ।
৪) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সর্বদা রোগীর স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করা ও মানুষের জীবন রক্ষা করার গুরুত্বকে নিশ্চিতভাবে মনে রাখিয়া চিকিৎসা কার্যে বর্তী হইবেন ।
৫) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট তাঁহার রোগী পূর্ণ আনুগত্যের এবং তাঁহার পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দাবী রাখে। যখনই কোন চিকিৎসা বা পরীক্ষা তাঁহার সাধ্যের বাহিরে হইবে তখন তিনি অপর এমন চিকিৎসককে আহবান করিবেন যাঁহার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে অথবা তিনি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ বা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীকে উপদেশ দিবেন ।
৬) চিকিৎসক হিসাবে তাঁহার উপর যে বিশ্বাস ন্যস্ত করা হইয়াছে সে পরিপ্রেক্ষিতে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর রোগ সম্বন্ধীয় যাবতীয় গোপন তথ্য যাহা তাঁহাকে বলা হইয়াছে বা তিনি জানিতে পারিয়াছেন সে সবের কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করিতে রোগীর নিকট দায়বদ্ধ থাকিবেন।
৭) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জরুরী ক্ষেত্রে রোগীকে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করিবেন, যদি না তিনি আশ্বস্ত হন যে তাহা অন্য কাহারো দ্বারা সম্ভব এবং তিনি তাহা নিশ্চয়ই দিবেন ।
৮) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিশ্চয়ই এমন শক্তিকৃত ঔষধ ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করিবেন যাহা সুস্থ মানব দেহে পরীক্ষিত হইয়াছে অথবা এই পেশার সাথে জড়িত উপযুক্ত বা যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা চিকিৎসা শাস্ত্রানুসারে অনুমোদিত।
৯) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ১৯৮৩ ইং সালের বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স নং ৪১ নিশ্চয়ই অনুসরণ করিবেন এবং ভবিষ্যতে সরকার কর্তৃক গৃহীত হোমিওপ্যাথির মূলনীতি ভিত্তিক ব্যবস্থাদি অবশ্যই পালন করিবেন।



প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদবী বা উপাধি ব্যবহার ও প্রচারনীতি বর্ণনা কর। 

উত্তর : ১) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁহার চিকিৎসা কর্মস্থলে বা চেম্বারের দরজায় বা দেওয়ালে একটি নাম ফলক ব্যবহার করিতে পারিবেন। সে নাম ফলকে তিনি তাঁহার শিক্ষাগত যোগ্যতা অথবা ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা যাহা তাঁহাকে এমন কর্তৃপক্ষ প্রদান করিয়াছে, যাহাকে ঐ ডিগ্রী, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য সরকার উপযুক্ত বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন বা ক্ষমতা দিয়াছেন, তাহা উল্লেখ করিতে পারিবেন।
২) কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁহার নামফলকে, প্যাড বা রোগীলিপিতে নিজেকে কোন বিশেষজ্ঞ বলিয়া বা কোন রকম চিকিৎসায় পারদর্শী বলিয়া প্রকাশ করিতে পারিবেন না ।



প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য নীতি বহির্ভূত কার্যকলাপ কি কি?

উত্তর : নিম্নলিখিত কার্যকলাপ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য নীতিবহির্ভূত বলিয়া বিবেচিত হইবে ।
১) নিজের গুণ বা পারদর্শিতা সম্পর্কে কোন প্রকার প্রচার বা বিজ্ঞপ্তি করা।
২) রোগীর সাথে কোন প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া অথবা গ্যারান্টি দিয়া কোন প্রকার চিকিৎসা করা। 
৩) হোমিওপ্যাথিক মূলনীতি বিরোধী যে কোন প্রকার টনিক, মলন, পেটেন্ট বা অন্য কোন প্রকার ঔষধ প্রস্তুত বা ব্যবহার করা।
৪) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিজ পেশার স্বাধীনতা থাকে না এমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে বা প্রোগ্রামের সাথে জড়িত থাকা !
৫) রোগীকে চিকিৎসা করার জন্য উপযুক্ত পেশাগত কি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার পুরস্কার বা অর্থগ্রহণ।
৬) রোগীর মানসিক বা শারিরীক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করিয়া বা নষ্ট করিয়া এমন কোন ঔষধ প্রয়োগ করা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যদি তাহা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কঠোর বিবেচনায় চিকিৎসাগত বা রোগ প্রতিরোধগত নির্দেশ অনুযায়ী রোগীর স্বার্থে তাঁহার উপর প্রয়োগ করা হইয়া থাকে।
৭) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে সকল আবিষ্কার স্বীকৃত হয় নাই এবং যাহা সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত হয় নাই সে সকল গবেষণা লব্ধ ফল প্রকাশ করা।
৮) আইনসংগতভাবে প্রমাণ করিতে পারা যাইবে না চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করা। 




প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একের প্রতি অপরের কর্তব্য কি কি?

উত্তর : ১) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁহার সতীর্থ এবং সহকর্মীদের সাথে এমন সব আচরণ করিবেন যাহা তিনি তাঁহাদের নিকট হইতে আশা করেন।
২) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কোন অবস্থাতেই অপর একজন হোমিওপাথিক বা অন্য কোন মতাবলম্বী চিকিৎসকের সম্পর্কে দুর্নাম বা কুৎসা রটনা করিতে বা কটুক্তি করিতে পারিবেন না । 
৩) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এই পেশায় রত এবং সকল মতাবলম্বী চিকিৎসকদেরকে সম্মান প্রদর্শন করিবেন ।
৪) কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অন্য কোন চিকিৎসকের নিকট হইতে কোন অবস্থাতেই প্রলুব্ধ করিয়া বা অন্য কোন উপায়ে রোগী সরাইয়া আনিতে পারিবেন না।
৫) একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের যদি জরুরী ক্ষেত্রে অন্য একজন চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখার জন্য আহ্বান করা হয় তিনি পূর্ণ সততার সাথে যে রোগীকে দেখিবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। তিনি রোগীকে বা রোগীর আত্মীয় স্বজনদের নিকট সকল অবস্থাতেই পূর্বতন ডাক্তারের কোন প্রকার ভুল চিকিৎসার খবর, যদি তাহা হইয়াও থাকে, গোপন রাখিবেন।



প্রশ্ন- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের ঘোষণাপত্রটি লিখ।

উত্তর : কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হওয়ার প্রাক্কালে অবশ্যই নিম্নলিখিত শপথ বাক্য পাঠ করিবেন :
১) আমি মনে প্রাণে শপথ করিতেছি যে আমি রোগার্ত মানুষের সেবায় আমার জীবন উৎসর্গ করিব ।
২) আমি আমার শিক্ষকদের প্রতি সব সময় যোগ্য সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিব।
৩) আমি সততা ও মর্যাদার সাথে আমার পেশায় নিয়োজিত থাকিব। 
৪) আমার নিকট আমার রোগীর স্বাস্থ্যই হইবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
৫) আমার উপর অর্পিত গোপনীয়তা আমি অবশ্যই রক্ষা করিব।
৬) আমি আমার ক্ষমতার সর্বদিক দিয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বৃত্তির সম্মান ও মহান ঐতিহ্য রক্ষা করিব।
৭) আমার সতীর্থদের সহিত আমি অবশ্যই সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষা করিব।
৮) আমার এবং আমার রোগীদের মধ্যে বাধার সৃষ্টি করিতে পারে এমন কোন ধর্মীয়, জাতীয়, গোষ্ঠীয়, দলগত বা রাজনৈতিক চিন্তা বা বিবেচনাকে আমি কখনও প্রশ্রয় দিব না।
৯) গর্ভ সঞ্চারের মূহূর্ত হইতে মানবজীবনের প্রতি যথাসাধ্য সম্মান প্রদর্শন করিব। এমনকি ভীতি প্রদর্শনেও আমি আমার চিকিৎসা জ্ঞান মানবিকতা পরিপন্থী কোন কাজে ব্যবহার করিব না।
১০) ‘অর্গানন অব মেডিসিন' গ্রন্থের নীতি অনুসারে পরীক্ষিত, শক্তিকৃত একটিমাত্র ঔষধ একবারে সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করিব। আমি সজ্ঞানে, সরল মনে, সশ্রদ্ধ চিত্তে এবং বিনা প্ররোচনায় উলেখিত শপথ নামা পাঠ করিলাম ।



প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিতে কোন বিশেষজ্ঞ বা পারদর্শী নাই কেন?

উত্তর : হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণভিত্তিক সার্বদৈহিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগের চিকিৎসা হয় না। রোগীর চিকিৎসা করা হয়। ইহাতে রোগীর দেহমনে প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টির দ্বারা চিকিৎসা পরিচালিত হয়। হোমিওপ্যাথিতে কোন অঙ্গভিত্তিক চিকিৎসা নাই। কোন বিশেষ রোগেরও কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নাই। এখানে সার্বদৈহিক তথা দেহমনে প্রকাশিত বিকৃত লক্ষণাবলী সদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা করা হয়। কাজেই হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুসারে . হোমিওপ্যাথিতে কোন পারদর্শী বা বিশেষজ্ঞ হইতে পারে না। তাই হোমিওপ্যাথিতে কোন পারদর্শী বা বিশেষজ্ঞ নাই।


সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ