হৃদপিণ্ড ও নাড়ীর দ্রুতগতি - Peroxismal Tachycardia, চতুর্থ বর্ষ - প্র্যাকটিস অব মেডিসিন

হৃদপিণ্ড ও নাড়ীর দ্রুতগতি 
Peroxismal Tachycardia



 

অক্সিসম্যাল ট্যাকিকার্ডিয়ার সংজ্ঞা:- সাধারণত হার্টের দুর্বলতা, স্নায়বিক দুর্বলতা বা ভালবের দুর্বলতার জন্য হঠাৎ নাড়ীর গতি অস্বাভাবিক দ্রুত হইয়া আবার হঠাৎ তিরোহিত হইলে তাহাকে পার-অক্সিসম্যাল ট্যাকিকার্ডিয়া বলে।

পার-অক্সিসম্যাল ট্যাকিকার্ডিয়ার কারণতত্ত্ব:- কারণতত্ত্ব- নিম্নলিখিত কারণে এই পীড়া হইয়া থাকে ।
১) হৃদপেশীর প্রদাহ, একিউট এন্ডোকার্ডাইটিস, পেরিকার্ডাইটিস, হৃৎশূল, ভালভিউলার ডিজিজ, ধমনীর স্থূলত্ব, অতিরিক্ত পরিশ্রম প্রভৃতি।
২) সুরা, কফি, চা পান, ডিজিট্যালিস, এট্রোপিন প্রভৃতি দ্বারা রক্ত দূষিত হওয়া। 
৩) লিভার, পাকস্থলী, উদর, জরায়ু, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, অস্ত্র, হৃদপিণ্ড, মূত্রথলী প্রভৃতি যন্ত্রের প্রত্যাবৃত ক্রিয়ার ফলে।
৪) জ্বর, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়া, ক্যানসার, ক্লোরোসিস, টিউবারকুলোসিস, পুরাতন ম্যালেরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি কারণে ।
৫) দৈহিক পরিশ্রম, ভয়, উত্তেজনা, প্রভৃতির ফলে।
৬) ঋতু অবসান কালে, অন্তঃসত্ত্বাবস্থায় এই পীড়া দেখা দেয়।  
৭) বাতজ্বরজনিত হৃদরোগেই ইহা বিশেষভাবে দৃষ্ট হয় ।

লক্ষণাবলী:- পীড়ার আক্রমণের সময় বুকের মধ্যে পক্ষ সঞ্চালনের ন্যায় বিশৃংখল কম্পন অনুভব, বক্ষঃশূল, উদর মধ্যে ভারী চাপবোধ, মূর্ছা, প্রচুর ঘর্ম, বমন বা বিবমিষা, চোখমুখ বিবর্ণ, ছটফটানি প্রভৃতি দেখা দেয়। নাড়ী স্পন্দন ১৩০-১৯০ বা ইহার বেশীও হইতে পারে। গুরুতর অবস্থায় রোগী নীলাভ বিবর্ণ হইতে পারে এবং ক্রমে ক্রমে রক্তাধিক্য বশতঃ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া যাইতে পারে।

রোগ নির্ণয়:- এই পীড়াকে সাইনাস টেকিকার্ডিয়া ও এট্রিয়াল ফ্লাটার হইতে পৃথক করিতে হইবে। সাইনাস টেকিকার্ডিয়া হঠাৎ আরম্ভ হয় না, উহা ধীরে ধীরে আরম্ভ হয় আবার ধীরে ধীরে কমিয়া যায়। তাহা ছাড়া সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়া রোগে হৃদপিণ্ডের গতি এত বৃদ্ধি পায় না। এই রোগে মানসিক অস্থিরতা, ব্যায়াম ও শোয়া বা বসা অবস্থায় কোন ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু সাইনাস ট্যাকিকার্ডিয়ায় ঐগুলি দ্বারা পরিবর্তিত হয়। এট্রিয়াল ফ্লাটারে সাধারণতঃ নাড়ীর গতি অবস্থানের পরিবর্তন করিলে বা পরিশ্রম করিলে নাড়ীর গতি অর্ধেক হইতে পারে। পার অক্সিসম্যাল ট্যাকিকার্ডিয়ায় বিশ্রাম, শোয়া বা পরিশ্রম দ্বারা নাড়ীর গতির কোন ব্যতিক্রম হয় না। হাতের একটি স্পন্দন শক্তিশালী অন্যটি দুর্বল হয়। ইলেকট্রো কার্ডিওগ্রাম দ্বারা নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা:- রোগীকে উদ্বেগশূন্য ও চিন্তামুক্ত রাখিতে হইবে। মানসিক প্রফুল্লতা, উৎসাহ, সুনিদ্রা ও পুষ্টিকর আহারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। যতক্ষণ পর্যন্ত নাড়ীর স্পন্দন স্বাভাবিক না হয় রোগীর শয্যাত্যাগ করা অনুচিত। 
নির্দেশক লক্ষণ:-
১) স্ট্রোফেনথাস হৃদপিণ্ডের উপর ক্রিয়া, হৃদপিণ্ডের সংকোচন এবং দ্রুত ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের 
স্পন্দন। হৃদপিণ্ডের সতেজভাব বজায় রাখে এবং রস সঞ্চয় দমন করে।
২) ন্যাজা হৃদশূল, হৃদপিণ্ডে ভারবোধ, বেদনা। বেদনা বাম কাঁধ ও বাম বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। উৎকণ্ঠা ও মৃত্যু ভয়। দেহ শীতল, নাড়ী দুর্বল ও অনিয়মিত।
৩) ডিজিট্যালিস- হৃদযন্ত্রের গোলযোগ, নাড়ী দুর্বল, অসম। হৃদবেষ্টের দুর্বলতা ও বিবর্ধন। হৃদধমনীতে তন্তুময় পদার্থ সঞ্চয়। বুকে সুঁচ ফোটানো ব্যথা ।
৪) পালসেটিলা-নাড়ীর গতি অতি দ্রুত, পরিবর্তনশীল প্রকৃতি, খোলা বাতাস চায় । তৃষ্ণাহীন ভাব, খিটখিটে ও শীতার্ত ।
৫) এমিল নাইট— হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া গোলমেলে, হৃদপিণ্ডের চারিধারে যন্ত্রণা ও সংকোচন। সামান্য উত্তেজনায় অতিশয় বুক ধড়ফড়ানি। অতিশয় হৃদস্পন্দন। হৃদপিণ্ড অতিশয় ভারবোধ।

ভাবীফল:- অনেকদিন স্থায়ী এবং ঘনঘন আক্রমণ অশুভ লক্ষণ। আক্রমণ ক্ষণস্থায়ী হইলেও যদি হৃদপিণ্ডের ভালভের পীড়া, ধমনী কাঠিন্য, হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি প্রভৃতি বর্তমান না থাকে তাহা হইলে ভাবীল অশুভ নহে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ