নেট্রাম সালফ - NATRUM SULPH, চতুর্থ বর্ষ- মেটেরিয়া মেডিকা

নেট্রাম সালফ
NATRUM SULPH





প্রতিশব্দ:- সাড়ি সালফাস, সোডিয়াম সালফেট। 



রাসায়নিক চিহ্ন:- Na2SO4 + 10H20.

উৎস ও বর্ণনা:- সোডিয়াম কার্ব্বনেট এবং সালফিউরিক এসিডের অন্তঃক্রিয়ার ফলে ইহা প্রস্তুত হয়। নাইট্রিক এসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বাই-প্রডাক্ট হিসাবেও ইহা পাওয়া যায়। তিক্ত লোনা স্বাদযুক্ত বর্ণ গন্ধহীন দানাকারে ইহা দৃষ্ট হয়। শুষ্ক বাতাসে ইহা বিকশিত হইয়া থাকে। ৩৫ তাপ মাত্রায় ইহার দানা গলিয়া যায় এবং লাল উত্তাপে বিশেষণ ছাড়াই তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। ২.৮ ভাগ জলে ইহা দ্রবর্ণীয় কিন্তু সুরাসারে অদ্রবণীয়।

গ্রুভার:- ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে ডাঃ ইসক্রেটার ইহা প্রুভ করেন।

প্রস্তুত প্রণালী:- সোডিয়াম কার্বনেট এবং সালফিউরিক এসিডের অন্তঃক্রিয়ার ফলে সোডিয়াম সালফেট প্রস্তুত হয়। দুগ্ধ শর্করা সহযোগে বিচূর্ণাকারে এই ঔষধ প্রস্তুত হইয়া থাকে। তরলীকরণের জন্য ফার্ম্মাকোপীয়ার ৫ম-এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
 
প্রস্তুতের ফরমুলা:- বিচূর্ণ-৭, তরল-৫ এ।

ক্রিয়াস্থান:- পিত্ত, লিভার, মূত্রযন্ত্র উপর ইহা ক্রিয়া করিয়া থাকে।
 
ধাতু প্রকৃতি:- নেট্রাম সালফ একটি এন্টি- সিফিলিটিক ও এন্টিসাইকোটিক ঔষধ। স্নায়ু রোগান্ত ও পিত্ত ধাতু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পীড়ায় ব্যবহৃত হয়।

প্রয়োগক্ষেত্র:- বায়ু ও পিজ পীড়া, জ্বর, চর্মপীড়া, বর্ষায় বা ভিজা ঠাণ্ডায় পীড়ার বৃদ্ধি হইলে, শ্বাসযন্ত্রের পীড়ার, প্রস্রাব যন্ত্রের পীড়ায়, পাকস্থলীর পীড়ায় গলনালী ও নাসিকার পীড়ায়, কর্ণপাড়ায় চক্ষু ও মস্তি ফের পীড়ায়, ইহা প্রয়োগ হয়।

মানসিক লক্ষণ:-
১) লোকের সাথে মিশিতে অনিচ্ছা, কেহ কথা বলিলে বিরক্তি রোধ।
২) মানসিক জড়তা ও ক্রোধ প্রবণতা, মানসিক পরিশ্রমে মানসিক লক্ষণের বৃদ্ধি ।
৩) উদ্দীপক গান বাজনায় রোগী বিরক্ত হয়।
৪) প্রাতঃকালে বিষণ্ণতা, প্রাতঃভোজনের পর উহা চলিয়া যায়।
৫) ভীড়ের ভয়, মন্দ কিছু হইবার ভয়, বিস্মৃতি পরায়ণ, সহজে ভয় পায়, হিষ্টিরিয়া গ্রস্ত, অলস, অমনোযোগী ও উন্মাদ। ভয়ে বা শব্দে নিদ্রায় চমকাইয়া উঠে। 
৬) রাত্রে, ভোরবেলায়, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা ও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, তৎসহ আত্মহত্যার আবেগ, আত্মসংযম করিয়া জীবন নাশের প্রবৃত্তি রোধ করিতে চায়।
 
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) জলাভূমির নিকট বাস হেতু, ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে গৃহে বাস হেতু অথবা জলে ভিজিলে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি। বিশেষতঃ শিশুদের ধাতুস্থ দোষ হেতু প্রায় সর্দি কাশি এমনকি হাঁপানি কাশি। দীর্ঘকাল ম্যালেরিয়ায় ভোগান্তি জনিত পীড়া।
২) স্পর্শে ও চাপে অনুভূতি বিশিষ্ট, মন ও দেহের দিক হইতে অত্যন্ত স্পর্শ কাতর । বেদনা বহু প্রকারের, মৃদু, তীব্র সমস্ত বেদনাই সঞ্চালনে উপশমিত হয়।
৩) লিভারের পীড়া, ছোট পাথুরী। প্রস্রাবে বালুকা নিঃসরণ, শর্করাযুক্ত বহুমূত্র রোগ। 
৪) গেঁটে বাত, সাইকোসিস ধাতুর জন্য আঁচিল।
৫) পিত্ত বমন বিশিষ্ট নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে শিরঃপীড়া। যন্ত্রণাগুলি সম্বন্ধে চিন্তা করিলে উহা বাড়িয়া উঠে। চাপে, খোলা বাতাসে ও শুইলে উপশম।
৬) পিত্ত বমন ও পিত্ত ভেদ ।
৭) নানা স্থানে পূর্ণতার অনুভূতি বা স্ফীতি- মাথায়, কর্ণে, উদরে এবং শিরা সমূহে। রোগগুলি সবই বসন্তকালে ও গরম আবহাওয়ায় বর্ধিত হয়। বসন্ত কাল আসিলেই চর্মপীড়া।
৮) যে পার্শ্বে শোয় মস্তিষ্ক যেন সেই পার্শ্বে খুলিয়া পড়ে। বাম পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে রোগ বৃদ্ধি ।
৯) জিহ্বার গোড়ার অংশে ময়লা ধূসর বর্ণের লেপ।
১০) আঘাত লাগিয়া কিম্বা পড়িয়া গিয়া মস্তিষ্কের পুরাতন পীড়া ।
১১) প্রমেহ স্রাব হলদে সবুজ মিশ্রিত, যন্ত্রণাশূণ্য।
১২) পেট বায়ুপূর্ণ, ভুটভাট করে। সকাল বেলায় উদরাময়ের বৃদ্ধি । সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠার কিছুক্ষণ পরেই বাহ্য পায়। বাহ্যের বেগ হঠাৎ আসে এবং সশব্দে তোড়ে বাহির হয়।
১৩) প্রমেহ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিমোনিয়া, বাম ফুসফুসের নিম্নভাগে আক্রান্ত হয়। বুকের ভয়ংকর বেদনার জন্য কাশিবার সময় দুই হাতে বুক চাপিয়া ধরিয়া বিছানা হইতে উঠিয়া বসে।
১৪) মুখে তিক্তস্থান।

রোগীচিত্র:- ইহার রোগীর জলো আবহাওয়ায় বা স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকিলেই অসুখ করে। জলের নিকট যে সকল উদ্ভিদ জন্মে তাহা খাইলেও অনিষ্ট হয়।  
বর্ষাকালে বা যে কোন প্রকারে জল লাগিলেই রোগী পীড়িত বোধ করে। রোগী সর্বদা সর্দিতে কষ্ট পায়। প্রতি বসন্ত কালে চর্ম রোগ দেখা দেয়। পেটে ভুটভাট করে । প্রাতঃকালে উদরাময়ের বৃদ্ধি। প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গের কিছু পরেই বাহ্য পায়। বাহ্যের বেগ হঠাৎ আসে ও তোড়ে বাহির হয়। প্রমেহ বিষে দুষ্ট ব্যক্তিরাই ইহার উপযুক্ত ক্ষেত্র।

লিভার পীড়ায় লক্ষণ:- ইহা লিভারের উৎকৃষ্ট ঔষধ। যকৃৎ প্রদাহ, পাণ্ডু রোগ। যকৃতে স্পর্শ সহিষ্ণু বেদনা। তীক্ষ্ণ সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। কোমরে কাপড় আঁটিয়া পরিতে পারে না। ডানপাশে শুইলে লিভারে ব্যথা বোধ । চলিবার সময়ে লিভারে টাটানি বোধ ও চুলকায়। দীর্ঘ নিঃশ্বাসে লিভারে তীক্ষ্ণ ব্যথা লাগে।

লাইকোপোডিয়াম:- লিভার প্রদেশে নিরন্তর একটু একটু একঘেয়ে রকমের বেদনা। পেটের বামদিকে বায়ু জমিয়া ফুটফাট করে। রোগী প্রায়ই কোষ্ঠবদ্ধতা বা উদরাময়ে ভোগে। জিহ্বা ময়লা, ঘুম ভাঙ্গার পর প্রাতে মুখে টক আস্বাদ। অত্যন্ত ক্ষুধাবোধ, কিন্তু সামান্য আহার করিলে যেন পেট ভরিয়া যায়। পেট ফোলার জন্য রোগী পেটের বা বুকের কাপড় খুলিয়া দিতে বাধ্য হয়।

পিত্ত পীড়ায় লক্ষণ:- পিত্তের পীড়ায় নেট্রাম সালফ উৎকৃষ্ট ঔষধ। পিত্ত বমন, সেই সঙ্গে মুখে সর্বদা তিক্ত অথবা টক আস্বাদ এবং মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথা। পিত্তৰমন বিশিষ্ট নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে। শিরঃপীড়া। লবণাক্ত স্বাদযুক্ত সবুজ জলের মত বমি। সবুজ বর্ণের পিত্তভেদ- পাত্রত্বক রক্তহীন ও চক্ষু হরিদ্রাভ। বুকে ও গলায় অম্বলের ঢেকুর উঠা, বুক জ্বালা ও পেটে বায়ু সঞ্চয়, বায়ু জনিত কলিক। খালিপেটে বেদনার বৃদ্ধি, পিত্ত জনিত মুখে তিক্তস্বাদ প্রভৃতি লক্ষণে নেট্রাম সালফ ব্যবহার্য । 

শিরঃপীড়ায় লক্ষণ:- মস্তিষ্কের পশ্চাৎ ভাগে বেদনা। গ্রীবা দেশেও কুকুরে চিবানোর ন্যায় সুস্পষ্ট যন্ত্রনা। মাথা পশ্চাৎ দিকে আকৃষ্ট হয়। মাথা ঘোরা সেই সঙ্গে পিত্তাধিক্য হেতু গা বমি বমি ও জিহ্বায় পিত্তজ কোটিং কিম্বা মুখে অতিশয় তিক্তস্বাদ। মন্তকে ঘর্ম বাহির হইলে মাথা ঘোরার উপশম। কাশিবার সময় মাথা ফাটিয়া যাইবার ন্যায় বেদনা। মন্ত কের ঊর্ধদেশে উত্তাপ অনুভূতি। ডানদিকের রগের মধ্যে ছিদ্রকরণের ন্যায় বেদনা, তৎপূর্ব্বে পাকস্থলীতে জ্বলন। প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গের পর শিরঃপীড়া । মানসিক পরিশ্রমে শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। মাথায় আঘাত লাগার পর শিরঃপীড়া। মস্তক ত্বকে চুলকানি, পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি ।

চর্মপীড়ায় লক্ষণ:- গাত্রাবরণ খুলিলেই চুলকানি। এই চুলকানি প্রায়ই ম্যালেরিয়া ও ন্যাবা হেতু হইয়া থাকে। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস হেতু চর্মপীড়া। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জল ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ ও চুলকানি। প্রমেহ জনিত উদ্ভেদ, উহা হইতে রস নির্গত হয়। রস হরিদ্রাবর্ণের, সমগ্র শরীরে আঁচিলের ন্যায় দেখিতে লাল পিত্ত সমূহ জমিয়া থাকে।

শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায় বা ফুসফুসের লক্ষণ:- বহুদিন স্থায়ী সর্দি হইতে যে সকল হাঁপানি উৎপাদিত হয় তাহাতে ইহা উপযোগী। কণ্ঠনালীর উপদাহ হইতে ঘন ঘন আবেশে কাশির আক্রমণ। প্রচুর সাদা, চটচটে ঘন দড়ির মত সবুজ বর্ণের অথবা পুঁজের বর্ণের অথবা পুঁজের মত সর্দি বা গয়ার নিঃসরণ। আর্দ্র সান্ধা বায়ুতে এবং সকাল বেলায় জাগিয়া উঠিলে বুকে চাপবোধ। নিঃশ্বাস লইতে বুকের মধ্যে শূন্যতাবোধ। বক্ষে বেদনা, চাপিতে তাহার উপশম। সেই জন্যই কাশির সময় হাত দিয়া বুক চাপিয়া থাকে। রাম চক্ষুতে অত্যন্ত গৌচামারাবৎ বেদনা। ঠাণ্ডা ঋতুতে শ্বাসকৃচ্ছ্রতা। সাইকোসিস দোষদুষ্ট রোগীর ব্রঙ্কাইটিস ও নিমোনিয়া। অনেক সময় এই ঔষধ না পড়া পর্যন্ত আরোগ্য করা কঠিন হইয়া পড়ে। ইহা সাইকোসিস দোষদুষ্ট পিতামাতার শিশুর আর্দ্র হাঁপানিতেও বিশেষভাবে উপযোগী। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের পূজের ন্যায় শেম্মা উঠে। আর্দ্র হাঁপানীর সহিত প্রত্যেকবার গরম আবহাওয়ায় উপস্থিত হইলে প্রচুর চটচটে শেম্মা উৎক্ষেপ ।
 
উদরাময়ে (পাকস্থলীর পীড়ায়) লক্ষণ:- উদরের কষ্ট বায়ু নিঃসরণ ও উদার উঠিলে উপশমিত হয়। বায়ু অবরুদ্ধ হইয়া খিলধরা ও নানাপ্রকার যন্ত্রণা। প্রাতঃকালীন উদরাময়, প্রাতে উঠিবার অনতিপরেই বা পায়ের উপর উঠিয়া দাঁড়াইবার অনতিপরে প্রচুর অধঃবায়ুর সহিত উদরাময় । বর্ষাকালীন উদরাময়। মল বেগে নির্গত হয়, সবুজাত পাতলা, অতি দুর্গন্ধ, পিচ্ছিল মল ত্যাগের পূর্ব্বে পেটে খিলধরা। মলত্যাগ কালে মলদ্বারে যন্ত্রণা, সময়ে সময়ে মল ত্যাগের পর প্রফুলতা বোধ। শাক সব্জী, ফল, পিঠা, ঠাণ্ডা, পানীয়, আইসক্রীম প্রভৃতি হইতে উদরাময়। উদরাময়ের সহিত পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা। ইহা অনিচ্ছায় নির্গত হয় এবং অজীর্ণ ভূক্তদ্রব্য মিশ্রিত মল বিশিষ্ট বহু পুরাতন উদরাময়ের রোগীকে আরোগ্য করিয়াছে। রুটি ও মাংসে অপ্রবৃত্তি, শ্বেতসারময় খাদ্য গ্রহণের পর বমনোদ্বেগ। প্রাতঃভোজনের পর বমনেচ্ছা । পেটে ভয়ানক বায়ু সঞ্চয় হয়, সেই সঙ্গে পেটে ব্যথা, লিভারের কনজেশন। ইহার কতগুলি পিত্ত লক্ষণ আছে। পিত্ত জ্বরের সহিত পেট ফোলা, বায়ু সঞ্চয় হেতু পেটে কলিক বেদনা- ঐ বেদনা ডান কুঁচকির দিক হইতে আরম্ভ হইয়া সমস্ত পেটে ছড়াইয়া পড়ে। নীচের পেটে উত্তাগ সেই সঙ্গে সবুজ রঙের পিত্তজ উদরাময়। উদরাময়ের বাহ্যে ঘন ময়লা কিম্বা সবুজ বর্ণের। হজম ক্রিয়া অত্যন্ত ধীর, ডান পার্শ্বে শুইলে যকৃতে যন্ত্রণা। বাম পার্শ্বে শুইলে ডান কুক্ষিদেশে টানভাব। মানসিক পরিশ্রমে ও রাগে যকৃত পীড়া উপস্থিত হয়। যকৃতে যেন অতিরিক্ত পিত্ত উৎপন্ন করে। বিকৃত, চটচটে পিত্ত, উহা হইতে শীঘ্রই পিত্ত শিলা উৎপন্ন হয়। ইহা দ্বারা সুস্থ পিত্ত উৎপন্ন হইয়া থাকে। ইহা বহু পিত্তপাথরী শূল আরোগ্য করিয়াছে এবং বহুক্ষেত্রে পিত্ত শিলা নির্গত হয় । অতিশর পরিশ্রম ও অধ্যয়ন হেতু উত্তেজনাশীল লিভার। লিভারের বেদনা তাহাতে হাত স্পর্শ মাত্রও সহ্য হয় না।
 
জননেন্দ্রিয় ও প্রস্রাব যন্ত্রের লক্ষণ:- ডায়াবেটিস রোগের ইহা উত্তম ঔষধ। প্রস্রাবে অতি মাত্রায় পিত্ত মিশ্রিত থাকে । বহুমূত্র- শর্করা শূন্য বা যুক্ত। মূত্রে ইটের গুঁড়ার ন্যায় তলানি। অনেক সময় প্রচুর সাদা বালির ন্যায় তলানি পড়ে। ইহা প্রচুর ফসফেট এবং তৎসহ জেলির ন্যায় শেত্মা তলানি আরোগ্য করিয়াছে। রোগীকে রাত্রিকালে মূত্রত্যাগ করিতে উঠিতে হয়। মূত্রত্যাগের সময় ও পরে জ্বালা। অবহেলিত গণোরিয়ায় এইসব লক্ষণ থাকিলে ইহা উপযোগী। পুরুষদের প্রবল সঙ্গম প্রবৃত্তি এবং কষ্টকর লিঙ্গোদ্রেক। গণোরিয়ায় যে সকল স্থানে স্রাব সবুজাত হলদে বর্ণ হয় এবং মূত্র ত্যাগের সময়ে ও পরে জ্বালা থাকে, তথায় ইহা প্রযোজ্য। উপমাংস নরম, মাংসল তৎসহ সবজেটে স্রাব। অণ্ডকোষ ও লিঙ্গাগ্র ত্বকের শোথ, লিঙ্গ ও অণ্ডকোষে চুলকানি। চুলকাইবার পর জ্বালা। পুরাতন গণরিয়া, বদ্ধ গণোরিয়া, যোনী ও মলদ্বারে উপদংশজাত কনডাইলোমালা তাহা হইতে সবুজ রস নিঃসরণ। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে প্রদাহ ও স্ফীতি এবং ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ বাহির হয়। ঋতুস্রাব প্রচুর, ক্ষতকর ও চাপ চাপ, প্রদর স্রাব বিদাহী, সবুজাভ, পূজবৎ ও অঙ্গগুলিকে হাজাইয়া দেয়। ঋতুকালে বা ঋতুর পূর্বে নাসিকা হইতে স্রাব । ইহা সূতিকা স্তম্ভ আরোগ্য করে।

বাতে লক্ষণ:- তাঙ্গ প্রত্যঙ্গে বেদনা। বেদনার প্রকোপে পুনঃ পুনঃ অবস্থানের পরিবর্তন করিতে বাধ্য হয়। বর্ষাকালীন বাত, রোগী সব সময় এপাশ ওপাশ করে। উরু সন্ধিতে বেদনা হয়। হাঁটুতে শব্দ করে এবং হাঁটু আড়ষ্ট হয়। ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে গৃহে বাস হেতু অথবা জলে ভিজিয়া বাত পীড়া। উরু সন্ধিতে বেদনা। সর্বাঙ্গে আঁচিল, কাপড় খুলিলেই শরীরে চুলকানি । গ্রীষ্মকালে ভাল থাকে।

প্রান্তদেশের লক্ষণ:- বগলের গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি। নখের গোড়ায় প্রদাহ। পদতলে জ্বালা, পদদ্বয়ের স্ফীতি, পায়ের আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে চুলকানি। অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বেদনা, উরু সন্ধিতে বেদনা, বামনিকে অধিক। জানু সন্ধির কাঠিন্য, জানু সন্ধিতে কট কট করে ।

বৃদ্ধি:- গান বাজনায়, বামদিকে শয়নে, মেঝের আর্দ্রতায়, আবহাওয়ার আর্দ্রতায়, স্পর্শে, শীতল দ্রব্য ভক্ষণে, প্রতি বসন্তের প্রারম্ভে, পরিশ্রমে, মৎস্য ও পানি ভক্ষণে, সকাল বেলায়।

উপশম:- তঙ্ক জলবায়ুতে, চাপে, স্থান পরিবর্তনে, শয়নে, ব্যায়ামের পর, টিপিয়া দিলে।

অনুপূরক ঔষধ:- আর্সেনিক, থুজা, বেলেডোনা ।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- নেট্রাম সালফের বৃদ্ধি শুধুমাত্র আর্দ্রতায়। ডালকামারায় উষ্ণকাল শীতলে পরিণত হইলে বৃদ্ধি। নেট্রাম মিউর ও নেট্রাম সালফের সহিতও ইহার সমগুণ সম্বন্ধ। রসপ্রধান ঋতুতে গর্মী ও প্রমেহ বিষ প্রবিষ্ট হইলে থুজা, মার্কসলের সহিত।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- পূজা, বেলেডোনা।

ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম:- ১x হইতে ২০০ শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ