স্পাইজেলিয়া - SPIEGELIA - তৃতীয় বর্ষ

স্পাইজেলিয়া - SPIEGELIA  




প্রাকৃতিক অবস্থাঃ-  লোগানিয়াসিয়াই । 

প্রতিশব্দঃ- স্পাইজেলিয়া এনথিলমিনা, পিংক রুট , এনুয়েল ওয়ার্ম গ্রস, ওয়ার্ম গ্রাস, গোলাপী মূল । 
 
উৎস ও বর্ণনাঃ- ইহা ১ হইতে দেড় ফুট লম্বা ওয়ার্ম গ্রাস নামক এক প্রকার বর্ষজীবি গাছড়া হইতে এই ঔষধটি প্রস্তুত হয় । মূল বেঁটে কেশযুক্ত এবং কালো বর্ণের । বহু সংখ্যক পাতলা শাখা দ্বারা মূল বিভক্ত থাকে । পাতাগু অবৃত্তক, মসৃণ, অভকার অথবা বল্লামাকার । জুলাই মাসে এই সকল গাছড়ায় সাদা বর্ণের ফুল ফুটিয়া থাকে । টাটকা গাছড়ায় এক প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত বমনোদ্রেক গন্ধ বর্তমান থাকে , শুঙ্ক গাছড়া ঔষধে ব্যবহাত হয় । 

প্রাপ্তিস্থান ঃ- পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এই সকল গাছড়া জন্মিয়া থাকে । 

প্রস্তুত প্রণালীঃ- স্পাইজেলিয়া গাছড়াকে শুষ্ক করিয়া তাহা হইতে এই ঔষধের মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয় । ২x এবং উচ্চ শক্তি পরিশ্রুত সুরাসারের সহিত প্রয়োগ হয় । 

প্রস্তুতের ফরমূলাঃ- এফ .৪ । 

ক্রিয়াস্থানঃ- স্নায়ু মন্ডলী , চক্ষু , হৃদপিণ্ড ও রক্তের উপর এই ঔষধ ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে । পঞ্চম স্নায়ুর শূল বেদনা ইহার ক্রিয়া সমূহের মধ্যে অত্যন্ত সুস্পষ্ট । প্রশ্ন -২১.৮ । স্পাইজেলিয়ার ধাতু গত বৈশিষ্ট্য লিখ । বা কোন ধাতুর রোগীতে স্পাইজেলিয়া ব্যবহৃত হয় । উত্তরঃ রক্তহীন , দুর্বল , বাতগ্রস্ত ও গড়মালা ধাতু দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদিগের চিকিৎসায় ইহা বেশ উপকারী । স্পাইজেলিয়া একটি স্নায়বিক যন্ত্রণাসর্বস্ব ঔষধ ।

মানসিক লক্ষণঃ- 
১। মানসিক ও দৈহিক স্পর্শকাতরতা । 
২। স্মৃতি শক্তি দুর্বল , কাজ কর্মে অনিচ্ছা । 
৩। রোগী বিষণ্ন আত্নহত্যার ইচ্ছা হয় । 
৪। তীক্ষ্ণ , সূচ্যগ্রবৎ বস্তুর প্রতি ভীতি । আলপিন ও সূঁচের প্রতি ভীতি । 
৫। সামান্য কারনে ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি । ভবিষ্যৎ বিষয়ে উৎকণ্ঠা । লিখ । 

চরিত্রগত লক্ষণঃ- 
১। তোলামি , রোগী প্রত্যেক শব্দের প্রথম ৩ : ৪ অক্ষর বার বার না বলিয়া উচ্চারন করিতে পারে না । 
২। কৃমি জন্মাইবার প্রবৃত্তি ও তজ্জনিত টেরা দৃষ্টি এবং তৎসহ নাভি মূলে তীব্র।
৩। স্নায়ুশূল বেদনা সূর্য উদয়ের সঙ্গে আরম্ভ হইয়া দুইপ্রহরে খুব বেশি হয় ও সূর্য অস্তের সঙ্গেই কমিয়া যায় । হৃৎপিণ্ডের শব্দ দূর হইতে শুনিতে ও দেখিতে পাওয়া যায় । অধিকাংশ পীড়াই বাম দিকে হয় । 
৪। আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করিলে ঠান্ডা ও অত্যন্ত বেদনা বোধ হয় । 
৫। বক্ষ্যস্থলের বাত । 
৬। হৃৎপিন্ডের স্পন্দন , একটুমাত্র নড়িলে ও সম্মুখে ঝুঁকিলে বুক এত জোরে ধড়ফড় করে যে জামার উপরে বাহির হইতে দেখা যায় । 
৭। সম্মুখ মন্তকে ও রগে ছিঁড়িয়া ফেলার মত বেদনা , তাহাতে চক্ষু পর্যন্ত টনটন করিতে থাকে । নড়িলে চড়িলে ও বিশেষতঃ পা পিছলাইয়া গেলে মাথা ব্যথার বৃদ্ধি । চক্ষুর বেদনা এত প্রচন্ড যে , সমস্ত শরীর না ঘুরাইয়া চক্ষু ঘুরাইতে পারে না । 
৮। তামাক সেবন জনিত দন্তশূল । 
৯। বক্ষে সূঁচ ফোটানবৎ বেদনা । শ্বাস কৃষ্ণতায় বামদিক চাপিয়া শুইতে পারে না । ডান দিক চাপিয়া অথবা মাথা তুলিয়া শুইতে বাধ্য হয় ।
১০। ছোট ছোট কৃমি সকল মলদ্বারে সুড়সুড় করে ও চুলকায় । 

প্রয়োগক্ষেত্রঃ- হৃৎপিণ্ডের পীড়া , শিরঃপীড়া , বাত রোগ , মুখ মন্ডলের স্নায়ুশূল , তোলামি , এবং কৃমি রোগে ইহা ব্যবহৃত হয় । 

হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতাঃ- ইহার বক্ষদেশের যাবতীয় অবস্থার আনুষঙ্গিক লক্ষণ রূপে বাতের ব্যথা সুনিশ্চিত ভাবেই বর্তমান থাকে । স্পাইজেলিয়ার রোগী মাত্রেই ঠান্ডা আবহাওয়ায় । সামান্য পরিবর্তন বিশেষ করিয়া গরম হইতে ঠান্ডার পরিবর্তনটি মোটেই সহ্য করিতে পারেনা এবং তাহাতে রোগীর স্নায়বিক প্রকৃতির যাবতীয় বেদনা , বিশেষ করিয়া বাতের ব্যথা বৃদ্ধি পায় । বাত রোগী মাত্রই হৃৎপিণ্ডটি অল্প বিস্তর দুর্বল থাকে এবং অধিকাংশ বাত লক্ষণই ভিজা ঠান্ডায় বৃদ্ধি পায় । হৃৎকম্পন ভয়ানক প্রচন্ড , এমনকি গায়ে জামা থাকিলেও দেখা যায় , নামিতেছে , উঠিতেছে , হৃৎকম্পনে সমস্ত শরীর কাঁপাইয়া দেয় । হৃৎকম্পনের শব্দ রোগীর নিকট দাঁড়াইলেই শোনা যায় । হৃৎপিণ্ডের পীড়ার প্রথমাবস্থায় ইহা যেমন উপকারী আবার তরুণ প্রান্ডবস্থা উত্তীর্ণ হইয়া ঐ হৃৎপিন্ডের ভ্যালভিউলার পীড়া হইয়া ঐ রূপে জোরে জোরে হৃৎকম্পন হইলে তখনও ইহা সমান উপযোগী । এই ঔষধে অতি অল্প সময়ের মধ্যে অতি প্রচন্ড হৃৎকম্পন উপশমিত হয় এবং ইহা দীর্ঘকাল ব্যবহার করিলে আসল হৃৎপীড়া আরোগ্য হইয়া যায় । রোগী বামদিকে চাপিয়া শয়ন করিতে পারে না , কারণ তাহাতে বুক ধড়ফড়ানির অত্যন্ত বৃদ্ধি হয় । 

শিরঃপীড়ারঃ- মাথা ব্যথায় স্পাইজেলিয়া একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ । ইহার শিরঃপীড়ার প্রকৃতি সূর্যাবর্ত অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হইয়া দ্বিগ্রহরে সর্বাধিক বৃদ্ধি পাইয়া সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে উহার অবসান ঘটে এমনকি মেঘাচ্ছন্ন দিনেও ঐ প্রকার বেদনা দেখা দেয় । ঐ বেদনা সর্ব প্রথমে মাথার পশ্চাৎ দিকে আরম্ভ হইয়া মাথার উপর দিয়া উঠিয়া পরিশেষে বাম চক্ষু কোটরে কেন্দ্রীভূত হয় । ঐ বেদনার প্রকৃতি অতি মাত্রায় দপদপানি পূর্ণ , সূঁচ ফোটানবৎ ও স্পন্দনশীল এবং উহা নির্দিষ্ট দিন অন্তর বা প্রতাহই দেখা দেয় । সামান্য নড়াচড়ায় ও ধাক্কায় , সন্মুখ দিকে নত হইলে , সঞ্চালনে , গরম আলোকে , শব্দে ও প্রত্যেক ঋতু পরিবর্তনের সময় বৃদ্ধি পায় , আর দৃঢ় ঢাপনে , মাধ্যটি উঁচু বালিশে রাখিয়া চুপচাপ শুইয়া থাকিলে এবং যতক্ষণ মাথার ও চক্ষুতে ঠান্ডা জল দেওয়া হয় শুধু ততক্ষণই বেদনা সাময়িক ভাবে উপশমিত থাকে । স্পর্শকাতরতা অথচ দৃঢ় চাপনে উপশম এই দুইটি বিরুদ্ধভাবাপন্ন লক্ষণ এখানে দৃষ্ট হয় । ইহার চক্ষুশূল ও শিরঃপীড়া যেন ওতপোতভাবে জড়িত । কেননা একটির আবির্ভাব হইতে আর একটি দেখা দেয় অথবা ঐ দুইটি পৃথক পৃথক ভাবে দেখা দিলেও বুঝিতে পারা যায় না ঐ অবস্থায় শিরঃপীড়া না চক্ষুশূল । স্পাইজেলিয়ার বাম চক্ষুই প্রধানতঃ আক্রান্ত হয় এবং ঐ অবস্থায় এমনকি বেদনা শূন্য অবস্থাতেই কোনও কিছুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে হইলে সমগ্র দেহটি না ফিরাইয়া সেই বস্তুটিকে দেখিবার ক্ষমতা থাকে না । 

বাত রোগঃ- স্পাইজেলিয়া রোগী মাত্রই অতি মাত্রায় স্নায়বিক যাতনা পূর্ণ । সুতরাং বাত রোণী প্রচন্ড সুঁচ ফোটা , ছিঁড়িয়া ফেলা , খোচামারা ও উত্তপ্ত লৌহ শলাকা বাহিত বিদ্যুৎ প্রবাহবৎ বেদনা হইতে থাকাই ইহার বাতের প্রকৃষ্ট লক্ষণ । এ ক্ষেত্রেও শরীরের বাম দিকটিই অধিক আক্রান্ত হইতে দেখা যায় এবং প্রায়ই সেই সঙ্গে ভয়ানক হৃৎকম্পন লক্ষণটি বর্তমান থাকে । বাত অবস্থায় ইহার রোগী চুপচাপ শুইয়া থাকাই পছন্দ করে । কেননা আক্রান্ত স্থানে এত বেশী টাটানি বেদনা থাকে যে , সামান্যতম নড়াচড়া , এমনকি চলন্ত গাড়ীর ক্ষীণতম ঝাঁকুনিটুকুও রোগী সহ্য করিতে পারেনা । যন্ত্রণাদি অতি মাত্রায় বৃদ্ধিপায় । তাহা ছাড়া সামান্য আলোক , শব্দ এমনকি ঘরের মেঝের উপর অন্য কোনও ব্যক্তি চলাফেরা করিলে যেটুকু শব্দ হয় তাহাতেও রোগীর যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায় এবং গরম প্রয়োগে ঐ যন্ত্রণা উপশমিত হয় । ভিজা ঠান্ডায় বৃদ্ধি ও বাম পার্শ্ব আক্রান্ত হইবার প্রবৃত্তি ইহাতে লক্ষিত হয় । বাতের পুরাতন অবস্থায় স্পাইজেলিয়া প্রয়োগ হয় । প্রসঙ্গত একটি কথা স্মরন যোগ্য যে স্পাইজেলিয়ার বাত ও হৃৎলক্ষণের সহচররূপে শোথ লক্ষণও আবির্ভূত হয় । কিন্তু ইহার শোথপূর্ণ স্থানে চাপ দিলে গর্ভ হয় না এবং ঐ অবস্থায় রোগীর মুখমণ্ডলে রং বেরং এর ছাপ লক্ষিত হয় । এই অবস্থাটির আশু প্রতিকার না হইলে শেষ পর্যন্ত রোগীর প্রস্রাবের সহিত এলবুমেন নির্গত হইতে থাকে । 

বিশেষভাবে কার্যকরীঃ- স্পাইজেলিয়া শরীরের বামদিকেই প্রধানতঃ ক্রিয়া করিয়া থাকে । ইহার শিরঃপীড়া মাথার পশ্চাৎদিক হইতে আরম্ভ হইয়া মাথার উপর দিয়া উঠিয়া পরিশেষে বাম চক্ষুকোটরে স্থির হয় । হৃদপিণ্ডের ক্রিয়ায় রোগী বাম দিক চাপিয়া শয়ন করিতে পারেনা , কারণ তাহাতে বুক ধড়ফড়ানির বৃদ্ধি হয় । বাত পীড়াও শরীরের বাম দিকেই আক্রান্ত হয় । সকল পীড়াই বাম দিকে আক্রমণ করে । তাই বাম দিক আক্রমণ করিলে স্পাইজেলিয়াই একমাত্র ঔষধ ।

হ্রাস - বৃদ্ধি ঃ- বৃদ্ধি - স্পর্শে , দেহ সঞ্চালনে , আহারের অব্যবহিত পরে , জলীয় বায়ুর সংস্পর্শে , বৃষ্টির দিনে , প্রাতঃকালে মধ্যাহ্নে , ধুমপানে , সূর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে , চক্ষু চালনায় , বাম পার্শ্বে শয়নে । হ্রাস - নিশ্বাস গ্রহণে , স্থির থাকিলে , উত্তাপে , নির্মল বায়ুতে , উঁচু বালিশে মাথা রাখিয়া দক্ষিণ পার্শ্বে শয়নে । 

অনুপুরক ঔষধঃ- একোনাইট , আর্সেনিক , বেলেডোনা , আর্নিকা , পালসেটিলা । 

ক্রিয়ানাশকঃ- পালসেটিলা , অরাম , ক্যাফর , ককুলাস । 

শক্তি- ৬ হইতে ২০০ শক্তি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ