জ ) চিকিৎসক রোগীকে এমন কোন প্রশ্ন করিবেন না যাহাতে রোগী হাঁ বা না বলিয়া প্রশ্নের জবাব দিতে পারে । আবার চিকিৎসক মনে মনে কোন ঔষধ স্থির করিয়া তার ভিত্তিতে কোন প্রশ্ন করিবেন না যাহাতে রোগী বিভ্রান্ত হইতে পারে ।
উত্তর : প্রত্যেক রোগীর রোগলক্ষণসমূহ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকা প্রয়োজন ।
ক ) সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মন ঃ চিকিৎসকের মনকে অবশ্যই সংস্কারমুক্ত ও নিরপেক্ষ হইতে হইবে । কোন রোগীর লক্ষণ নির্ণয় কালে দুই তিনটি লক্ষণ নির্ণয় করিয়াই যদি চিকিৎসক পূর্ব সংস্কার অনুযায়ী মনে করেন যে এই রোগী অমুক ঔষধে ভাল হইবে কারণ ঐ ঔষধ দারা এই ধরণের অনেক রোগী আরোগ্য লাভ করিয়াছে । তবে চিকিৎসক ঐ ঔষধের লক্ষণগুলি নির্ণয় করিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িবেন এবং ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন । তাই চিকিৎসককে অবশ্যই সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মন লইয়া লক্ষণ নির্ণয় কার্যে ব্রতী হইতে হইবে ।
খ ) সুস্থ ও সবল ইন্দ্রিয় শক্তি ৪ রোগ লক্ষণ নির্ণয় কালে চিকিৎসকের ইন্দ্রিয়সমূহ অর্থাৎ চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা প্রভৃতি সুস্থ ও সবল থাকিতে হইবে । ত্রুটিপূর্ণ ইন্দ্রিয় নিয়া রোগলক্ষণ নির্ণয় কার্যে অবতীর্ণ হইলে নির্ণীত লক্ষণসমূহও ত্রুটিপূর্ণ হইবে এবং চিকিৎসক ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন । কাজেই চিকিৎসকের এই ইন্দ্রিয় যদি সুস্থ , সবল ও সঠিক না থাকে তবে সঠিক লক্ষণ নির্ণয় করা সম্ভব হইবে না । গ ) রোগী পরিদর্শনে ও লক্ষণ নির্ণয়ে একনিষ্ঠ মনোযোগ : রোগী পরিদর্শন কার্যে চিকিৎসকের রোগীর প্রতি একনিষ্ঠ মনোযোগ থাকিতে হইবে । রোগীর ভিড় বা চিকিৎসকের কোথাও যাওয়ার তাগাদা , সেজন্য রোগীকে দুই একটি প্রশ্ন করিয়াই লক্ষণ নির্ণয় করিলে চলিবে না । সম্পূর্ণ মনোসংযোগ না করিয়া রোগ লক্ষণ নির্ণয় করিলে চিকিৎসক ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন এবং রোগীর ক্ষতি সাধনই করিবেন ।
ঘ ) রোগ চিত্র অংকনে বিশুদ্ধতা ও সত্যানুরাগ ও রোগীলিপি অংকনে বিশুদ্ধতা থাকা অত্যাবশ্যক । চিকিৎসক যাহা দেখিলেন , শুনিলেন এবং অনুভব করিলেন তাহা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে । কোন একটি লক্ষণ বাদ দিয়া চিকিৎসা কার্যে অবতীর্ণ হওয়া সঠিক হইবে না ।
ঙ ) বিশেষ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ঃ রোগীলিপি অংকনে চিকিৎসককে বিশেষ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হইতে হইবে যাহাতে রোগীর নিকট হইতে পরিপূর্ণ লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহ করিতে পারেন ।
চ ) রোগীর বর্ণনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ঃ রোগীর নিজস্ব বর্ণনার প্রতি চিকিৎসককে সম্পূর্ণ মনোযোগী হইতে হইবে এবং বিশ্বাস স্থাপন করিতে হইবে । ছ ) মানব প্রকৃতি ও রোগ প্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান : মানব প্রকৃতি ও রোগ প্রকৃতি সম্পর্কে চিকিৎসকের বিশেষ জ্ঞান থাকিতে হইবে । অন্যথায় সঠিক ও বিশুদ্ধ রোগচিত্র অংকন করা সম্ভব হইবে না ।
জ ) রোগলক্ষণ অনুসন্ধানে সতর্কতা ও ধৈর্য ঃ রোগলক্ষণ অনুসন্ধান কার্যে বিশেষ সতর্কতা ও ধৈর্য না থাকিলে সঠিক রোগ চিত্র অংকনে চিকিৎসক ব্যর্থ হইবেন ।
প্রশ্ন - কাহারা এবং কিভাবে রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসককে সাহায্য করিতে পারে ?
উত্তর ঃ রোগীলিপি প্রস্তুতকালে রোগী নিজে , তাহার আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব , পারিপার্শ্বিক লোকজন এবং সেবক সেবিকা চিকিৎসককে সাহায্য করিতে পারেন । রোগী নিজে চিকিৎসককের নিকট তাহার কষ্টের কথা যতদূর সম্ভব বর্ণনা করে । রোগীর আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব রোগীর অসুস্থকর লক্ষণ ও আচার ব্যবহারে যে সব অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করিয়াছেন এবং তাহাদের নিকট রোগী যে সব কষ্টের কথা বলিয়াছেন তাহা তাঁহারা চিকিৎসককে জানাইয়া সাহায্য করিতে পারেন । অনেক সময় মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীর মুখ হইতে তাহার অসুস্থতার কথা বড় একটা জানা যায় না । এই ক্ষেত্রে রোগীর সহচর , আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব এবং সেবক সেবিকাদের নিকট হইতে চিকিৎসক রোগীর বিভিন্ন অস্বাভাবিক অবস্থা সম্বন্ধে জানিয়া পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্ত…
১ ) রোগী পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষা তথা রোগীলিপি প্রস্তুত করার সময় প্রথমেই রোগীলিপি বই বা খাতার বাম পার্শে উপরে রোগীর নাম , ঠিকানা , বয়স , বৈবাহিক অবস্থা , পেশা প্রভৃতি লিখিয়া রাখিতে হইবে ।
২ ) রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার সময় তিন ধরনের ব্যক্তির মাধ্যমে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার পরিচয় জানা যায় ।
ক ) রোগীর নিজের বিবরণ
খ ) রোগীর আত্মীয় স্বজন এবং পরিচর্যাকারীর নিকট হইতে
গ ) চিকিৎসক স্বয়ং ।
৩ ) চিকিৎসক প্রথমে রোগীকে রোগের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করিতে বলিবেন । বর্ণনা কালে যেন এমন ধীরে ধীরে বলেন যাহাতে তিনি বর্ণনা হইতে প্রয়োজনীয় অংশটুকু ধীর , শান্ত ও সঠিক ভাবে লিখিয়া নিতে পারেন ।
৪ ) দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীর নিকট যাহারা সর্বক্ষন থাকেন তাহারা রোগীর মুখে কি কি বর্ণনা শুনিতে পাইয়াছেন , কখন রোগীকে কি করিতে দেখিয়াছেন প্রভৃতি তাহাদের নিকট হইতে জানিয়া নিবেন । রোগী , তাহার আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব , সেবা শুশ্রূষা কারীরা বর্ণনা কালে চিকিৎসক নীরব থাকিয়া শুধু শুনিয়া লিখিয়া যাইবেন । তাহারা অবাস্তব বা অবান্তর কিছু না বলিলে বর্ণনার বাধা দিবেন না ।
৫ ) তৃতীয় পর্যায়ে চিকিৎসক স্বীয় চক্ষু , কর্ণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা রোগীর যাবতীয় অবস্থা অনুধাবন করিবেন । চিকিৎসককে দর্শন , শ্রবণ ও স্পর্শন এই তিন পদ্ধতিতে রোগী পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষন করিতে হয় ।
৬ ) বর্ণনাকারীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত লক্ষণগুলি অবিকল ভাষায় রোগীলিপি বা খাতাতে প্রত্যেকটি নতুন ঘটনার লক্ষণ পৃথক ছত্রে একটু ফাঁক ফাঁক করিয়া লিখিয়া যাইতে হইবে যাহাতে কোন লক্ষণ রোগী ও তাহার পরিজনবর্গ প্রথমে অসম্পূর্ণভাবে এবং পরে বিস্তৃতভাবে বলিয়া অথবা চিকিৎসক প্রশ্ন দ্বারা সম্পূর্ন ভাবে জানিয়া ঐ স্থানে সংকেত করিয়া লইতে পারেন ।
৭ ) নিখুঁত রোগী চিত্র অংকনের জন্য রোগীর বর্ণনা , তাহার আত্মীয় স্বজন বা সেবাকারীদের বর্ণনার উপর নির্ভর করিলেও চিকিৎসককে তাঁহার নিজের বিবেক , বুদ্ধি , পর্যবেক্ষণ শক্তি , ধৈর্য ও মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা প্রভৃতি প্রয়োগ করিতে হয় ।
৮ ) এই ভাবে বিবরন লিখার পর চিকিৎসক খাতায় লিখিত লক্ষণগুলি একে একে পাঠ করিয়া রোগীকে শুনাইবেন এবং প্রত্যেকটি লক্ষণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া আরও তথ্য সংগ্রহ করিবেন ।
৯ ) . রোগী বহুকাল ধরিয়া ভুগিতে ভুগিতে কতকগুলি কষ্টকর লক্ষণকে স্বাভাবিক অবস্থার লক্ষন মনে করে এবং তাহা চিকিৎসককে জানাইবার প্রয়োজন মনে করে না । সেই সকল বিশেষ লক্ষণগুলি চিকিৎসক আগ্রহের সহিত জানিয়া নিবেন ।
১০ ) অনেক সময় রোগী তাহার অসুস্থতার কথা অতিরঞ্জিত করিয়া বলে , আবার অনেক সময় রোগের কথা অতি সংক্ষেপ করিয়া বর্ণনা করে , যাহার ফলে অনেক প্রয়োজনীয় কথা বাদ পড়িয়া যায় । এই সকল ক্ষেত্রে অতি সতর্কতার সহিত রোগীলিপি সংগ্রহ করিতে হয় যাহাতে প্রয়োজনীয় কোন দিক বাদ না পড়ে ।
প্রশ্ন - রোগীলিপি চিকিৎসা কার্যের একটি প্রধান অংশ - আলোচনা কর।
উত্তর ঃ রোগীর বিস্তারিত বিবরন লিপিবদ্ধ করা হইলে বা রোগীলিপি প্রস্তুত করা হইলে চিকিৎসা কার্যের একটি প্রধান অংশ শেষ হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া নেওয়া হয় । কারন এই বিবরনের উপর নির্ভর করিয়াই সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভবপর হয় । লক্ষণ সমূহ লিপিবদ্ধ থাকিলে প্রতিবারই নির্বাচিত ঔষধ সেবনের পর কি কি লক্ষণের অবলুপ্তি ঘটিয়াছে বা ঐ ঔষধ সেবনের ফলে কোন নূতন লক্ষণ প্রকাশ পাইয়াছে কিনা তাহা অতি সহজে নির্ণয় করা যায় । কাজেই রোগী লিপিই চিকিৎসকের পথ নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে ।
প্রশ্ন - চিকিৎসকের অপরিহার্য গুণ রোগের প্রতিকৃতি অংকনে কি ভাবে সাহায্য করিয়া থাকে ?
উত্তর : রোগের প্রতিকৃতি অংকনে তথা রোগীলিপি প্রস্তুতে চিকিৎসকের অপরিহার্য গুণ পরিপূর্ণভাবে সহায়তা করিয়া থাকে । রোগীলিপি প্রস্তুতে চিকিৎসকের অপরিহার্য গুণের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্যতম , যাহা রোগের প্রতিকৃতি অংকনে সবিশেষ সাহায্য করিয়া থাকে ।
১) সংস্কার মুক্ত নিরপেক্ষ মন- সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মন চিকিৎসকের অপরিহার্য গুনের মধ্যে অন্যতম । কোন রোগীর লক্ষণ লিপিবদ্ধ কালে ২/৩ টি লক্ষণ নির্ণয় করিয়াই যদি চিকিৎসক পূর্ব সংস্কার বশত মনে করেন যে এই রোগী অমুক ঔষধে ভাল হইয়াছে , তবে চিকিৎসক ঐ ঔষধের লক্ষণগুলি নির্ণয় করিতেই ব্যস্ত হইয়া পড়িবেন এবং ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন । তাই চিকিৎসককে সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মন লইয়া লক্ষণ নির্ণয় কার্যে ব্রতী হইতে হইবে । তাহা হইলেই সঠিক রোগের প্রতিকৃতি অংকিত হইবে ।
২ ) সুস্থ ও সবল ইন্দ্রিয় শক্তি- রোগলক্ষণ নির্ণয় কালে চিকিৎসকের ইন্দ্রিয়সমূহ অর্থাৎ চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা প্রভৃতি সুস্থ ও সবল থাকিতে হইবে । ত্রুটিপূর্ণ ইন্দ্রিয় নিয়া রোগলক্ষণ নির্ণয় কার্যে অবতীর্ণ হইলে নির্ণীত লক্ষণ সমূহও ত্রুটিপূর্ণ হইবে এবং চিকিৎসক ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন । কাজেই সুস্থ ও সবল ইন্দ্রিয় শক্তি দ্বারা রোগের সঠিক প্রতিকৃতি অংকিত হইবে ।
৩ ) রোগচিত্র অংকনে বিশুদ্ধতা ও সত্যানুরাগ- বিশুদ্ধতা ও সত্যানুরাগ রোগের প্রতিকৃতি অংকনে যথেষ্ট সাহায্য করিয়া থাকে । চিকিৎসক যাহা দেখিলেন , শুনিলেন ও অনুভব করিলেন তাহা বিশুদ্ধভাবে কোন অণুমানের উপর নির্ভর না করিয়া লিপিবদ্ধ করিলে রোগের প্রতিকৃতি সঠিক ভাবে অংকিত হইবে । অন্যথায় ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হইবে ।
৪ ) বিশেষ বুদ্ধিমত্তা রোগের প্রতিকৃতি অংকনে চিকিৎসককে বিশেষ বুদ্ধিমত্তায় অধিকারী হইতে হইবে । তাহা হইলেই রোগীর নিকট হইতে পরিপূর্ণ লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহ করিতে পারিবেন ।
৫ ) রোগীর বর্ণনার প্রতি বিশ্বাসস্থাপন- রোগীর নিজস্ব বর্ণনার প্রতি চিকিৎসককে সম্পূর্ণ মনোযোগী হইতে হইবে এবং বিশ্বাসস্থাপন করিতে হইবে । কারন পীড়াক্রান্ত রোগীর বর্ণনাকে অবিশ্বাস করিলে রোগের প্রতিকৃতি নির্ণয়করা যাইবে না ।
৬ ) রোগী পরিদর্শনে ও লক্ষণ নির্ণয়ে একনিষ্ঠতা— রোগী পরিদর্শন কার্যে চিকিৎসকের রোগীর প্রতি একনিষ্ঠ মনোযোগ থাকিতে হইবে । যদি চিকিৎসক মনোযোগী না হন , যদি তাড়াহুড়া করিয়া কোথাও যাইতে হইবে তাই দুই একটি প্রশ্ন করিয়াই লক্ষণ নির্ণয় করিতে চেষ্টা করেন তবে তিনি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন । তাই রোগের প্রতিকৃতি অংকনে রোগীর প্রতি চিকিৎসকের একনিষ্ঠ মনোযোগ থাকিতে হইবে ।
৭ ) রোগ লক্ষন অণুসন্ধানে সতর্কতা ও ধৈর্য- রোগের প্রতিকৃতি অংকনের কাজে বিশেষ সতর্কতা ও ধৈর্য না থাকিলে সঠিক রোগচিত্র অংকনে চিকিৎসক ব্যর্থ হইবেন ।
প্রশ্ন - একটি রোগীলিপির নমুনা প্রস্তুত কর ।
উত্তর ঃ রোগীলিপির নমুনা
গোপনীয়
ক্রমিকনং তারিখ
রোগীর নাম বয়স
পিতা / স্বামীর নাম
জাতি , ধর্ম , বর্ণ
ঠিকানা
রেফার্ড বাই
কেসটেকিং এর তারিখ
ক ) রোগীর আকৃতিগত বর্ণনা
১। গঠন
২। উচ্চতা
৩।বর্ণ
৪। ওজন
৫। বুকের মাপ
খ ) পারিবারিক ইতিহাস
১। পিতা মাতা জীবিত না মৃত
২। তাহাদের স্বাস্থ্য কিরূপ
৩। মৃত হইয়া থাকিলে রোগের নাম 1
৪ । মৃত্যু কালীন বয়স ----- লিঙ্গ
৫। তাহারা কোন বিশেষ রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিনা
৬। জীবিত থাকিলে তাহারা কোন রোগে ভুগিতেছেন কিনা
৭। ক ) ভাই বোন কয়জন
খ ) মৃত কয়জন
গ ) কত বৎসর বয়সে মারা গিয়াছে ।
ঘ ) জীবিতদের স্বাস্থ্য কেমন
৮ । দাদা দাদী , নানা নানী , ফুফু খালার স্বাস্থ্য কেমন
গ ) বৈবাহিক অবস্থা
১। বিবাহিত / অবিবাহিত
২। কত বৎসর বয়সে বিবাহ হইয়াছে
৩। সন্তান কয়টি ৪। তাহাদের স্বাস্থ্য কেমন
৫। কয়টি জীবিত
৬। তাহাদের কোন রোগ আছে কিনা
৭। মৃত্যু হইলে কি রোগে মারা গিয়াছে ।
ঘ ) পেশা
১। কি কাজ করা হয়
২। বর্তমানে পেশা কি
৩। অতীতে কি পেশা ছিল
৪। বর্তমান পেশা মনঃপুত কিনা
ঙ ) রোগের ইতিহাস
১। কিভাবে রোগ আরম্ভ হইয়াছে ।
২। কিভাবে প্রকাশিত হইল
৩।পূর্বে কোন কঠিন পীড়া ছিল কিনা
৪। উহার চিকিৎসা কিভাবে হয় ।
৫। কি কি ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছিল
৬। বর্তমানে উহার কোন উপসর্গ আছে কিনা
চ ) বর্তমান পীড়া
১। কতদিন যাবত হইয়াছে ।
২। রোগের লক্ষণ
৩। রোগের কারণ
৪ । বর্তমান পীড়ার উপসর্গগত ও কারনগত বিশেষ বর্ণনা
৫। ক্ষুধা কিরূপ
৬। কোন খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ বেশী
৭। কোন খাদ্যের প্রতি বীতস্পৃহ ----
৮। পিপাসা কেমন
১। পরিপাক শক্তি কেমন
১০। শরীরে কোন চর্মরোগ আছে কিনা , তাহার বিবরণ
১১। আঁচিল , অর্বুদ আছে কিনা
১২। শীতকাতর না গরমকাতর
১৩। রোগীর সহজে ঠাণ্ডা লাগে কিনা
১৪ । খুব কাশি আছে কিনা
ছ ) দৈহিক বিবরণ
১। সাধারণ স্বাস্থ্য- সবল / দুর্বল
২। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যথাযথ বর্ণনা :
ক ) চোখ ---
খ ) কান
গ ) নাক
ঘ ) গলা
ঙ ) দাঁত
চ ) নখ
ছ ) চুল
৩। উঠানামা করিলে বুক ধড়ফড় করে কিনা
৪। দেহের কোন অংশ বিকল কিনা
জ ) মানসিক লক্ষণ
১। রোগী খিটখিটে , একগুঁয়ে বা শান্ত স্বভাবের
২। আত্মহত্যার প্রবণতা আছে কিনা
৩। সঙ্গী চায় না কি একলা থাকিতে ভালবাসে
৪ । মৃত্যুভয় আছে কিনা বা মৃত্যু কামনা করে কিনা
৫। জীবনে কোন মানসিক আঘাত পাইয়াছে কিনা
৬। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আছে কিনা
৭। স্মৃতিশক্তি ভাল / মন্দ
৮। স্মৃতিলোপ পাইয়াছে কিনা
ঝ ) যৌনপীড়ার ইতিহাস
১। উপদংশ / প্রমেহ রোগ আছে কিনা
২। থাকিলে কতদিন যাবত আছে
৩। এই রোগের জন্য কি চিকিৎসা হইয়াছে
৪। কি কি ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে
৫। বর্তমানে উহার কি কি উপসর্গ ও লক্ষণ আছে
৬। বর্তমান রোগের সঙ্গে উহার সম্পর্ক
৭। পুং জননেন্দ্ৰিয়
ক ) স্বপ্নদোষ আছে কিনা
খ ) কত দিন পর পর হয়
গ ) অপব্যবহার হইয়াছে বা হইতেছে কিনা
ঘ ) কামচিন্তা কেমন
ঙ ) লিঙ্গ শিথিল কিনা ।
চ ) লিঙ্গ ছোট না বড়
ছ ) অন্যান্য লক্ষণ
৮। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়
ক ) কখনও গর্ভস্রাব হইয়াছে কিনা
খ ) কখনও মৃত সন্তান প্রসব করিয়াছে কিনা
গ ) কামভাব বেশী না কম
ঘ ) প্রসবকালে কষ্ট বেশী না কম
ঙ ) জরায়ুচ্যুতি বা বক্রতা আছে কিনা
চ ) মাসিক ঋতু কত বৎসর বয়সে আরম্ভ হইয়াছে
ছ ) স্রাবের বর্ণ
জ ) স্ৰাৰের গন্ধ
ঝ ) স্রাবের পরিমাণ ঞ ঋতুর পূর্বে বা পরে কোন যন্ত্রণা হয় কিনা
১। কি জাতীয় যন্ত্রণা
২। কতদিন অন্তর মাসিক স্রাব হয়
৩। স্রাবের পরিমাণের সঙ্গে যন্ত্রণার কোন সম্পর্ক আছে কিনা
৪। স্রাব কখন বাড়ে কমে
৫। কতদিন স্থায়ী হয় ------
৬। স্রাবের অপরাপর লক্ষণ
৭। অন্যান্য লক্ষণ ------
ট ) পরিপাক যন্ত্রের লক্ষণ ঃ
১। পেটে বায়ু হয় কিনা
২। উদ্গার উঠে কিনা , উদ্গারের বর্গ ও গন্ধ কেমন
৩। পেট ফাঁপা কখন বাড়ে কমে
৮। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়
৪ ) পেটে ব্যথা আছে কিনা
৫ ) উহা কখন বাড়ে কমে
৬ ) মুখের স্বাদ কেমন ---
৭ ) মুখে দুর্গন্ধ আছে কিনা
৮ ) মাড়ি হইতে পূঁজ পড়ে কিনা
৯ ) মুখের বর্ণ ও লক্ষণগত বর্ণনা
১০ ) লালা পড়ে কিনা
ঠ ) পায়খানার বর্ণনা
১। পায়খানার প্রকৃতি
২। বর্ণ
৩। পরিমাণ
৪। পাতলা / কঠিন
৫। কখন কিভাবে বাড়ে
৬। মল পরীক্ষার রিপোর্ট
৭। আমাশয়ঃ ক ) কতদিন যাবত
খ ) আম পড়ে কি না
গ ) আমরক্ত পড়ে কি না
ঘ ) কতট বেশী পড়ে
ঙ ) কত বার পায়খানা হয়
চ ) কোঁথ দিতে হয় কি না
ছ ) পেটে বেদনা কখন বাড়ে কমে
ড ) প্রস্রাবের বর্ণনা :
১। প্রস্রাবের প্রকৃতি
২। বর্ণ
৩। গন্ধ
৪। পরিমাণ
৬। জ্বালাপোড়া আছে কিনা
৭। বেদনা আছে কিনা
৮। তলানি পড়ে কিনা
৯। প্রস্রাবের কোন রোগ আছে কিনা
১০। প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট
১১। দিনে রাতে কখন পরিমাণ বাড়ে বা কমে
ঢ ) বিবিধ বর্ণনা
১। শরীরের কোথাও জ্বালাপোড়া বা ব্যথা বেদনা হয় কিনা
২। ঘাম বেশী না কম ৩। কখন কোথায় কিরূপঘাম হয়
৪। ঘামের গন্ধ
৫। ঘামের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
৬। শেষ্মার প্রকৃতি
৭। কাশির প্রকৃতি
৮। কফ পরীক্ষার রিপোর্ট
রোগীর স্বাক্ষর ঃ চিকিৎসকের স্বাক্ষর ঃ
তারিখ
প্রশ্ন - রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য কি ?
উত্তর : রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য হইল রোগীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাহাকে সান্তনা দেওয়া , রোগীর প্রতি মনোযোগী হওয়া , তাহার রোগলক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া , অতঃপর রোগীর নাম , ঠিকানা , বয়স , পেশা প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করা ।
প্রশ্ন - রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য কি ?
উত্তর ঃ রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য হইল - রোগীকে তাহার রোগের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করিতে বলা । বর্ণনাকালে যেন এমন ধীরে ধীরে বলেন যাহাতে তিনি বর্ণনা হইতে প্রয়োজনীয় অংশটুকু ধীর , শান্ত ও সঠিক ভাবে লিখিয়া নিতে পারেন । অতঃপর রোগীর নিকট যাহারা সর্বক্ষণ থাকেন তাহারা রোগীর মুখে কি কি বর্ণনা শুনিতে পাইয়াছেন , কখন রোগীকে কি করিতে দেখিয়াছেন প্রভৃতি ' তাহাদের নিকট হইতে জানিয়া নিবেন । রোগী , তাহার আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব ও সেবাকারীরা কি বর্ণনা করেন তাহা বর্ণনাকারীর ভাষায় লিখিয়া নিবেন । তাহারা অবান্তর কিছু না বলিলে বর্ণনায় বাধা দিবেন না ।
প্রশ্ন - রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য কি ?
উত্তর : রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য হইল রোগলক্ষণ বর্ণনায় রোগীর দৈহিক , মানসিক এবং অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে যদি অপ্রকাশিত কিছু থাকে তবে অসম্পূর্ণ লক্ষণগুলি পুনরায় প্রশ্ন করিয়া সম্পূর্ণভাবে জানিয়া নেওয়া । রোগী অতিরঞ্জিত কিছু বলিলে তাহার বর্ণনা হইতে প্রকৃত লক্ষণগুলি সতর্কতার সহিত বাহির করিয়া নেওয়া এবং স্বীয় চক্ষু , কর্ণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা রোগীর যাবতীয় অবস্থাগুলি অণুধাৰণ করা এবং রোগের গুপ্ত কারণ কৌশলে জানিয়া নেওয়া ।
প্রশ্ন - রোগী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি ?
বা , রোগীলিপি কখন প্রয়োজন হয় ?
উত্তর : একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্তব্য হইল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোগী পরীক্ষা করা বা রোগীলিপি তৈরী করা । যথার্থ আরোগ্য সম্পাদনের জন্য চিকিৎসককে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও লক্ষণাদি সংগ্রহ করিতে হয় । রোগী পরীক্ষা বা রোগীলিপি তৈরী বলিতে আমরা বুঝি রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন করা । এলোপ্যাথিক বা ভিন্নপন্থীদের মতে কোন রোগীর চিকিৎসা করিতে হইলে সর্বপ্রথম রোগটি নির্ণয় করিতে হয় । বিভিন্ন নামের রোগের নির্দিষ্ট ঔষধ তাহাতে আছে । তাহাদের মতে Treat the disease and not the patient অর্থ্যাৎ রোগের চিকিৎসা কর , রোগীর নহে । কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে Treat the patient and not the disease অর্থাৎ রোগীর চিকিৎসা কর , রোগের নহে । তাই আমাদের প্রয়োজন রোগী পরীক্ষা করত রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন করা ।
প্রশ্ন - রোগী পরীক্ষায় চিকিৎসকের করণীয় কি ?
উত্তর : চিকিৎসক নিজে রোগী পরীক্ষা করিবেন এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পরীক্ষা করিয়া সুস্থ ও অসুস্থ্য অবস্থার পার্থক্য নির্ণয় করিবেন ।
ক ) রোগীর দৈহিক গঠনের অবস্থা ।
খ ) রোগীর আচরণ ।
গ ) রোগীর কন্ঠস্বর ।
ঘ ) রোগীর চেহারা ও আকৃতি ।
ঙ ) নাড়ীর প্রকৃতি ।
চ ) উদরের অবস্থা ।
ছ ) জিহ্বার অবস্থা ।
জ ) গাত্রতাপ ।
ঝ ) ফুসফুসের অবস্থা
ঞ ) হৃদপিণ্ডের অবস্থা ।
ট ) রক্তচাপ প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসকের কর্তব্য ও অপরিহার্য গুণ কি কি ?
উত্তর ঃ রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসকের কর্তব্য ও অপরিহার্য গুণাবলী নিম্নরূপ চিকিৎসকের কর্তব্য - চিকিৎসকের কর্তব্য হইল রোগীর প্রতি মনোযোগী হওয়া , রোগী যে সকল কষ্টের কথা বলে তাহা মনোযোগের সহিত শোনা , রোগীর রোগলক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া । তাহার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাহাকে সান্তনা দেওয়া ।
অপরিহার্য গুণ
১ ) চিকিৎসককে বিশেষ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হইতে হইবে ।
২ ) রোগ নির্বাচনে সুনিপুনতার অধিকারী হইতে হইবে ।
৩ ) রোগী পর্যবেক্ষনের বিশেষ ক্ষমতা থাকিতে হইবে ।
৪ ) মানব প্রকৃতি ও রোগের প্রকৃতি সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান থাকিতে হইবে ।
৫ ) রোগলক্ষণ অণুসন্ধানে বিশেষ সতর্কতা ও ধৈর্য থাকিতে হইবে ।
প্রশ্ন - রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস বলিতে কি বুঝায় ?
উত্তর ঃ রোগ সম্বন্ধে প্রাচীনপন্থীদের ধারণা ও হোমিওপ্যাথিক নীতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে । চিকিৎসার ইতিহাসে রোগনির্ণয় বা ডায়াগনোসিস শব্দটি অতি পুরাতন । রোগের ডায়াগনোসিস না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ঔষধের কথা ভাবিতে পারেন না । বিসদৃশ মতের চিকিৎসকেরা রোগকে স্থূলবস্তু ভাবিয়া দেহের যে কোন অংশ বিশেষের প্রকাশিত বিকৃতিকে বা কোন অঙ্গের লক্ষণকে রোগ বলিয়া আখ্যায়িত করেন । বিসদৃশ মতের চিকিৎসকগন রোগের প্রকৃতি নির্ণয় করিতে পরিচিত নামের একটি রোগে ইহাকে অন্তর্ভুক্ত করেন বা প্রয়োজন বোধে নূতন নাম দিয়া রোগের সংখ্যা বাড়ান । Clinical diagnosis , Laboratory diagnosis , Pathological diagnosis তাহাদের ডায়াগনোসিসের ভিত্তি । কিন্তু হোমিওপ্যাথিক নীতি ইহার সম্পূর্ণ ভিন্ন । কারণ নানাবিধ তথ্যের সহিত পরিচয় লাভ হইলেও তাহা আরোগ্যকারী ঔষধকে চিনাইরা দেয়না । হোমিওপ্যাথিতে জীবনীশক্তির বিশৃংখল অবস্থায় দেহের বিভিন্ন অঙ্গে প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টিকে রোগ বলে । রোগী সম্বন্ধে জীবনীশক্তির বিশৃংখণাজনিত বিভিন্ন প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টি জানার নামই রোগ নির্ণয় ।
প্রশ্ন -রোগনির্ণয়ের গুরুত্ব বর্ণনা কর ।
উত্তর : রোগের প্রকৃতি যাহা দ্বারা নির্ণীত হয় তাহাকেই ডায়াগনোসিস বা রোগনির্ণয় বলা হয় । এই ভায়াগনোসিন শব্দটি চিকিৎসার ইতিহাসে অত্যস্ত পুরাতন । তবে প্রচলিত রোগনির্ণয় পদ্ধতি আঙ্গিক । ইহা রোগের পরিণতি ফলের উপর একমাত্র নির্ভরশীল । এই জাতীয় ডায়াগনোসিসে রোগীর ব্যক্তিনিষ্ট ও বস্তুনিষ্ট বা মানসিক লক্ষণের কোন বিবেচনা নাই । অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অপরিহার্য সদৃশ লক্ষণসমষ্টির প্রধান অঙ্গ ব্যক্তিনিষ্ঠ মানসিক লক্ষণসমষ্টি । তাই তথাকথিত ডায়াগনোসিস এর তেমন মূল্য হোমিওপ্যাথিতে নাই । তবে যথার্থ ডায়াগনোসিস এর অবশ্যই প্রয়োজন রহিয়াছে । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণ সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত করিয়াই রোগের প্রকৃতি ও প্রতিকৃতি নির্ণয় করেন । এই অর্থে ব্যক্তিগত রোগীর লক্ষণসমষ্টির দ্বারা রোগের চিত্র অংকন একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনোসিস । সুতারাং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে হোমিওপ্যাথিক একটি ডায়াগনোষ্টিক চিকিৎসা এবং হোমিও চিকিৎসায় ইহার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে ।
প্রশ্ন - রোগীলিপিতে প্রত্যেক নূতন বিষয় পৃথক ছত্র বা নূতন ছত্রে লিখিতে হয় কেন ?
উত্তর ঃ রোগীলিপিতে লক্ষণ লিখিবার সময় প্রত্যেকটি নূতন ঘটনার লক্ষণ নূতন ছত্রে বা পৃথক ছত্রে ফাঁক করিয়া লিখিয়া লইতে হইবে যাহাতে কোনলক্ষণ রোগী ও তাহার পরিজনবর্গ প্রথমে অসম্পূর্ণ এবং পরে বিস্তৃতভাবে বলিতে অথবা চিকিৎসক প্রশ্নদ্বারা সম্পূর্ণভাবে জানিয়া ঐ স্থানে সংযোগ করিয়া লইতে পারেন । সেইজন্য নূতন লক্ষণগুলি প্রত্যেকটি পৃথক পৃথক পংক্তিতে লিখিতে হয় এবং পংক্তিগুলিকে একটিকে আর একটির নীচে সাজাইয়া রাখিতে হয় ।
প্রশ্ন - এনামনেসিস কাহাকে বলে ? এনামনেসিসের উদ্দেশ্য কি ?
উত্তর : এনামনেসিসের অর্থ রোগীর লক্ষণসমষ্টি । রোগীর বর্তমান ও অতীত লক্ষণ , রোগলক্ষণের ক্রমবিকাশ , লক্ষণবৃদ্ধির কারণ , রোগীর বংশাণুক্রমিক রোগের ইতিহাস , রোগীর দৈহিক গঠনমূলক লক্ষণ , রোগ নিরাময়ের পারিপার্শ্বিক বাধা বিপত্তি , জীবাণুঘটিত ব্যাধির জটিল প্রকৃতি প্রভৃতি এনামনেসিসের অন্তর্ভুক্ত । অর্থাৎ রোগী সম্বন্ধে পুংখানুপুংখ ভাবে জানার নাম এনামনেসিস । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এনামনেসিস অপরিহার্য । পীড়ার আক্রমনে দেহ ও মনের উপর কিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটিয়াছে এবং তাহাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিরূপ সে সম্বন্ধে পরিচয় লাভ করাই এনামনেসিসের লক্ষ্য ।
প্রশ্ন -০১.৩৬ । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্মত দৃষ্টিকোণ হইতে রোগী পরীক্ষার উদ্দেশ্য কি ?
বা , আরোগ্য সম্পাদন এবং চিকিৎসা চালাইয়া যাইবার জন্য রোগীচিত্র লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা কি ?
বা , “ পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত না করিয়া যিনি মুখে মুখে চিকিৎসা করেন , তিনি শুধু রোগীকেই প্রতারিত করেননা নিজেও প্রতারিত হন ” -আলোচনা কর ।
বা , রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিত্র সংগ্রহ না করিয়া সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা কি সম্ভব ?
বা , রোগলক্ষণ সংগ্রহের উপকারিতা বর্ণনা কর ।
উত্তর : চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করিতে গেলে রোগচিত্র প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক । মহাত্মা হ্যানিমান রোগ বলিতে রোগচিত্র তথা রোগের লক্ষণকে বুঝাইয়াছেন । এই চিত্র পাওয়া যায় রোগের লক্ষণ দ্বারা । রোগীর অন্তর প্রকৃতির কোন ভাষা নাই , শুধু ইংগিত , ইশারা বা প্রকাশের মাধ্যমেই বা প্রকাশিত লক্ষনের মাধ্যমেই অন্তর প্রকৃতির ভাষা পাওয়া যায় । এই রোগ লক্ষণ বা রোগ চিত্রের উপর ভিত্তি করিয়াই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা করিয়া থাকেন । সব বিষয়ে জ্ঞান থাকিলেও যদি রোগচিত্র সম্পর্কে চিকিৎসকের জ্ঞান না থাকে তবে চিকিৎসক অকৃতকার্য হন । শিল্পী যেমন কতকগুলি রেখার সাহায্যে একটি মানুষের চিত্র অংকন করেন , তেমনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকও লক্ষণের সাহায্যে রোগীর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করিতে পারেন । ইহাতে তাহার পক্ষে রোগলিপি অণুসন্ধান করিয়া তাহা হইতে পরিচায়ক লক্ষণগুলি বাছিয়া মেটিরিয়া মেডিকা হইতে অধিকতর সদৃশ লক্ষণ যুক্ত ঔষধটি অতিসহজে বাছিয়া নিতে পারেন । পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত না করিয়া যিনি মুখে মুখে চিকিৎসা করেন , তিনি শুধু রোগীকেই প্রতারিত করেন না , নিজেও প্রতারিত হন । কোন ক্রমেই পূর্ণাঙ্গ চিত্র সংগ্রহ না করিয়া সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভবপর নয় । তাই আরোগ্য সম্পাদনে এবং চিকিৎসা চালাইয়া যাওয়ার জন্য রোগচিত্র লিপিবদ্ধ করার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে ।
প্রশ্ন - রোগীর দৈহিক পরীক্ষার পদ্ধতি আলোচনা কর ।
উত্তর : চিকিৎসক নিজে রোগীর দৈহিক পরীক্ষা করিবেন । প্রথমে তিনি রোগীর দৈহিক গঠনের অবস্থা কেমন তাহা দেখিবেন । তারপর রোগীর আক্রান্ত স্থানের আবরণ উন্মোচন করাইয়া স্থানটি ভালভাবে দেখিবেন । প্রথমে আক্রান্ত স্থানটির চর্মের উজ্জলতায় কোন অস্বাভাবিক বর্ণ ধারণ করিয়াছে কিনা তাহা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করিবেন । তারপর আক্রান্ত স্থানে কোন প্রকার স্ফীতি আছে কিনা তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে । আক্রান্ত স্থানের স্পর্শকাতরতা পরীক্ষার জন্য প্রথমে আক্রান্ত স্থান বাদ দিয়া সুস্থ স্থান হইতে হাতদ্বারা টিপিয়া ক্রমে আক্রান্ত স্থানে আসিতে হইবে । তারপর চক্ষু পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে এনিমিয়া বা জন্ডিসের কোন লক্ষণ আছে কিনা । এনিমিয়ার জন্য চক্ষুর নিম্নপাতা এবং জন্ডিসের জন্য চক্ষুর পাতা ফাঁক করিয়া দেখিতে হইবে । এইভাবে একে একে রোগীর জিহ্বার অবস্থা , ফুসফুসের অবস্থা , উদরের অবস্থা , নাড়ীর প্রকৃতি , গাত্রতাপ , রক্তচাপ প্রভৃতি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে ।
প্রশ্ন -০১.৩৮ । রোগীর নিজের বর্ণনাকালে চিকিৎসকের করণীয় কি ?
উত্তর : রোগীর নিজের বর্ণনাকালে রোগী তাহার কষ্টের কথা যাহা চিকিৎসকের নিকট বলিবে চিকিৎসক সেই সকল কথাগুলি হুবহু রোগীর ভাষায় লিখিয়া লইবেন । রোগী যখন তাহার রোগের বিশদ বিবরণ দিবে তখন চিকিৎসক নির্বাক থাকিয়া তাহার কথাগুলি সম্পূর্ণরূপে শেষ করিতে দিতে হইবে , যদি না রোগী এলোমেলো ভাবে বা অন্য প্রসঙ্গে কথা না বলে । চিকিৎসক যাহাতে দরকারী কথাগুলি লিখিয়া লইতে পারেন সেজন্য কথাগুলি তাহাকে ধীরে ধীরে বলিয়া যাইতে উপদেশ দিবেন । রোগী কোন কারনে উত্তেজিত হইলেও চিকিৎসক কোনক্রমেই উত্তেজিত হইবে না ।
প্রশ্ন - রোগের গুপ্ত কারণ কিভাবে সংগ্রহ করিতে হয় ?
বা , রোগীদের গোপন বিষয় জানিবার জন্য কি প্রকার কৌশল অবলম্বন করিতে হয় ?
উত্তর : রোগী অতি সহজে রোগের গুপ্ত কারণ চিকিৎসকের নিকট প্রকাশ করেনা বা বলিতে লজ্জাবোধ করে । যেমন , যৌন যন্ত্রের বিকৃতি , গোপন প্রণয় , অস্বাভাবিক উপায়ে যৌন তৃপ্তি , আত্মহত্যার অপচেষ্টা প্রভৃতি রোগোৎপাদক কারণ সমূহ রোগী ও তাহার বন্ধু বান্ধব বলিতে চাননা । এমনকি জিজ্ঞাসা করিলেও স্বীকার করেন না । এইরূপ ক্ষেত্রে রোগীকে নির্জনে অথবা গোপনে নিয়া অথবা রোগীর বন্ধু বান্ধবদের নিকট হইতে বিস্তারিত জানিয়া লইতে হইবে ।
প্রশ্ন -০১.৪০ । রোগ সম্পর্কে রোগীর অতিরঞ্জিত বর্ণনাকালে চিকিৎসকের কর্তব্য কি ?
উত্তর ঃ অনেকরোগী আছে যাহারা অসহিষ্ণু , রোগের নাম শুনিলেই মৃত্যুর ভয় করে , তাহারা সাধারণতঃ তাহাদের রোগ বর্ণনাকালে প্রতিটি লক্ষণই অতিরঞ্জিত করিয়া বলে । তাহাদের ধারণা অতিরঞ্জিত করিয়া বলিলে চিকিৎসকের সহাণুভূতি লাভ করা যাইবে । এই অবস্থায় রোগীর হাবভাব দেখিয়াই বুঝা যায় যে , রোগীর বর্ণনা অতিরঞ্জিত । এইক্ষেত্রে চিকিৎসক সতর্কতার সাথে রোগীর বর্ণনা হইতে প্রকৃত লক্ষণগুলি বাছিয়া বাহির করিয়া লইতে হইবে ।
প্রশ্ন - রোগ সম্পর্কে রোগী অতিসংক্ষেপে বর্ণনা করিলে চিকিৎসকের কর্তব্য কি ?
উত্তর ঃ অনেক রোগী আছে যাহারা আলস্য বশতঃ মানসিক দুর্বলতাহেতু বা লজ্জার জন্য রোগের অনেক কিছুই গোপন করিয়া যায় বা অস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করে অথবা ভয়ানক যন্ত্রনাকে সামান্য বলিয়া বর্ণনা করে । বিশেষ করিয়া স্ত্রীলোকদের মধ্যেই এই প্রবণতা অধিক দৃষ্ট হয় । আরও বিশেষ করিয়া যদি যৌনাঙ্গ , স্রাব , প্রেম , ভালবাসা বিষয়ক ব্যাপার হয় । এই সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসককে শালীনতার সঙ্গে অত্যন্ত কৌশলে প্রশ্ন করিয়া , যুবতীদের ক্ষেত্রে তাহাদের ভাবী , নানী , দাদী বা স্বামীর কাছে গোপনে জিজ্ঞাসা করিয়া অথবা লিখিত প্রশ্নের উত্তর নিয়া রোগের প্রকৃত অবস্থা জানা যাইতে পারে ।
প্রশ্ন - রোগচিত্র প্রণয়নে অপ্রকাশিত তত্ত্ব কিভাবে সংগ্রহ করিবে ?
উত্তর : চিকিৎসক যদি মনে করেন রোগীর বর্ণনায় রোগীর মানসিক অবস্থা ও দেহযন্ত্রের ক্রিয়া বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয় নাই বা কোন অম্পূর্ণতা বা অস্পষ্টতা থাকে তবে চিকিৎসক আরও জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহা পরিষ্কার করিয়া নিবেন । অত্যন্ত সরল ও সাধারণ ভাবে প্রশ্ন করিতে হইবে যেন বর্ণনাকারী প্রশ্নের উত্তর সঠিক ও বিশদভাবে দিতে পারেন । ব্যথা বা যন্ত্রনার বিবরণ থাকিলে তাহার অবস্থান , প্রকৃতি , হ্রাসবৃদ্ধি , স্রাবের বিবরণ থাকিলে তার বর্ণ , প্রকৃতি , সময় ও সহযোগী লক্ষণ প্রভৃতি , জ্বরের বর্ণনা থাকিলে তার সূচনা , প্রকৃতি , বিভিন্ন পর্যায় , প্রত্যাবর্তনকাল প্রভৃতি পুংখানুপুংখ ভাবে জানিয়া লইতে
প্রশ্ন - যে কোন প্রকারেই হোক , রোগের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ থাকিলে তাহা জানিতে হইবে কেন ?
উত্তর ঃ রোগের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ থাকিলে তাহা যেভাবেই হোক জানিতে হইবে । চিররোগ বা অচিররোগ যে কোন রোগই হোক না কেন বহুদিন পূর্ব হইতে কোন সুনির্দিষ্ট কারণে রোগের আবির্ভাব ঘটিয়া থাকিলে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে প্রশ্ন করা হইলে রোগী উত্তরে কারণসমূহ প্রকাশ করিবে । কোন লজ্জাকর কারণ যাহা রোগী বা তাহার বন্ধুগণ স্বেচ্ছায় প্রকাশ করেনা , চিকিৎসক দক্ষতার সহিত প্রশ্ন করিয়া বা গোপনে সংবাদ লইয়া তাহা জানার চেষ্টা করিবেন । এই সকল গোপন কারণগুলির মধ্যে মৈথুন দোষ , লাম্পট্য , অতিরিক্ত মদ্যপান , অত্যধিক পেটুকতা বা কোন বিশেষ ক্ষতিকর খাদ্য ভক্ষণ , যৌন পীড়া যোস পাঁচড়ার আক্রমণ , অপ্রীতিকর প্রেম , পারিবারিক অশান্তি , হিংসাদ্বেষ , দুশ্চিন্তা , নিষ্ফল প্রতিহিংসা পরায়নতা , অহেতুক গর্ব , কুসংস্কার জনিত ভয় , ক্ষুধা বা কোন গোপন অঙ্গের অপরিনত অবস্থা , স্থানচ্যুতি প্রভৃতি । এই কারণগুলি সম্পর্কে অবহিত না হওয়া গেলে রোগ আরোগ্য সম্ভব নয় ।
প্রশ্ন - রোগীলিপি প্রস্তুতে রোগীর ধাতু প্রকৃতি ও আচরণ আবশ্যক হয় কেন ?
উত্তর : চিকিৎসক যদি ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত থাকেন এবং রোগীর আচার আচরণ সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষন করেন তবে রোগীলিপি প্রণয়ন অধিকতর সহজ ও নির্ভুল হয় । শুধু তাই নয় , ঔষধ নির্বাচন , আনুষঙ্গিক চিকিৎসা , রোগনির্ণয় , পথ্যাপথ্য , খাদ্যবিচার প্রভৃতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে জ্ঞানলাভ করিয়া চিকিৎসাকার্যকে সহজতর করাও সম্ভব । রোগীর ধাতুপ্রকৃতির সহিত মায়াজমের বিরাট সম্পর্ক রহিয়াছে । যেমন - স্নায়ু প্রধান , রক্তপ্রধান ধাতুর সহিত সোরা , শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর সহিত সাইকোসিস , পিত্ত প্রধান ধাতুর সহিত সিফিলিস মায়াজমের সম্পর্ক রহিয়াছে । আবার একই রোগীতে বিভিন্ন ধাতু প্রকৃতির উপস্থিতিতে মিশ্র মায়াজম টিউবারকুলারের সৃষ্টি হইতে পারে । তাই ধাতু প্রকৃতির পর্যবেক্ষন ও রোগীর আচরণ পর্যবেক্ষন করিয়া রোগনির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনের জন্য রোগীলিপি প্রণয়ন করা চিকিৎসকের অবশ্যই কর্তব্য ।
প্রশ্ন - অদ্ভুত লক্ষণের উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ নির্বাচন করিলে সাফল্য অনিবার্য ব্যাখ্যাকর ।
উত্তর ঃ ঔষধ নির্বাচনে হোমিওপ্যাথিতে সদৃশতম লক্ষণ , বিশিষ্ট ঔষধই নির্বাচন করা হয় । কিন্তু এই আদর্শ সব সময় সঠিক ভাবে পালন করা সম্ভব নয় । কারণ ইহার জন্য অসংখ্য ঔষধ ও দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন । রোগীর লক্ষণ সমূহের মধ্যে যে সব লক্ষণ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রম ধর্মী যাহা অদ্ভুত ও বিস্ময়কর এবং সুস্পষ্ট , যেখানে একটিমাত্র লক্ষণ একটিমাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে এই জাতীয় অসাধারণ ও অদ্ভুত লক্ষণের উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ নির্বাচন করিলে সাফল্য অনিবার্য ।
প্রশ্ন - ডাঃ হ্যানিমান কেন চরিত্রগত লক্ষণকে সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়াছেন ?
বা , রোগী পরীক্ষায় চরিত্রগত লক্ষণের ভূমিকা লিখ ।
উত্তর : নির্ভুলভাবে ঔষধ নির্বাচন করিতে হইলে সর্বপ্রথম লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারণ করা আবশ্যক । বিস্তৃতভাবে রোগীলিপি গ্রহন করিবার পর রোগীর ঔষধ নির্বাচনের সময় আমাদিগকে রোগীর চরিত্র নির্দেশক লক্ষণরাজির সন্ধান করিতে হইবে । রোগীর ব্যক্তিত্বে আরোপিত লক্ষণরাজির অভাব হইলে বা বিশেষত্ব সূচক লক্ষণের অভাবে তিনপৃষ্ঠা ব্যাপী লক্ষণ লিখিলেও ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হইবে না । সমগ্র রোগীলিপির মধ্যে অসংখ্য লক্ষণ থাকিলেও রোগীর জন্য যথার্থ ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়ত ৩ / ৪ টি লক্ষণের প্রয়োজন হইবে । সাধারণ লক্ষণ ও আঙ্গিক লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া ঔষধ নির্বাচন করা কষ্টকর । রোগীর নিজ ব্যক্তিত্বে বা চরিত্রে আরোপিত লক্ষণগুলিই চারিত্রিক লক্ষণ । মানুষ পীড়িত হইলে তাহার স্বভাব প্রকৃতিরই পরিবর্তন ঘটে । প্রতিটি মানুষের ধাতুপ্রকৃতি ভিন্ন হওয়ায় কোন একটি ঔষধ দুই ব্যক্তিকে একইভাবে প্রভাবিত করে না । চরিত্রগত লক্ষণের মধ্যে কিছু আশ্চর্যজনক , বিরল ও অসাধরণ লক্ষণগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষণ , কারণ এই লক্ষণগুলি রোগীটির সহিত সম্বন্ধযুক্ত । ঔষধ নির্বাচনে ইহাদের গুরুত্ব সর্বাধিক । তাই হ্যানিয়ান চরিত্রগত লক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়াছেন ।
প্রশ্ন - ডাঃ হ্যানিমানের রোগী পরীক্ষার পদ্ধতি কেমন ছিল ?
উত্তর ঃ একটি নুতন রোগী পরীক্ষা করিয়া লিপিবদ্ধ করিতে হ্যানিমানের দেড়ঘন্টা সময় লাগিত । এই উদ্দেশ্যে ১৬ টি নম্বর দেওয়া রেজিষ্টার বই থাকিত । প্যারিসে ৮ বৎসর অবস্থানকালে পরীক্ষিত সকল রোগীর বিবরণ এই সমস্ত রেজিষ্টার বইতে লিপিবদ্ধ । ২ , ৩ , ৪ , ৬ , বা ৮ বৎসর পূর্বের রোগী পুনরায় চিকিৎসার জন্য আসিলেও তাহাদের নাম পাওয়া যাইত । হ্যানিমান ও তাহার স্ত্রী গৃহে গিয়া যে সমস্ত শয্যাগত রোগীদের দেখিতেন তাহাদের লক্ষণ ও ঔষধের নাম গৃহে আসিয়া লিখিয়া রাখিতেন । বৃহস্পতিবার ও রবিবার চেম্বার বন্ধ থাকিত । হ্যানিমান কোন রোগীর ক্ষেত্রেই এমনকি শয্যাগত রোগীর ক্ষেত্রেও রোগীর বিবরণ না লিখিয়া এবং মেটিরিয়া মেডিকার আলোচনা না করিয়া ঔষধের ব্যবস্থা করিতেন না । তিনি কখনও পর্যায়ক্রমে বা মিশ্রিত করিয়া ঔষধ প্রয়োগ করিতেন না । রোগী পরীক্ষার ব্যাপারে কোন সংক্ষিপ্ত ব্যবস্থার আশ্রয় গ্রহন করিতেন না । হ্যানিমান প্রত্যেক রোগীর নিকট হইতেই অতি ক্ষুদ্র লক্ষণসমূহ , ধাতুগত লক্ষণসমূহ , বংশগত লক্ষণ এবং অন্যান্য বহু লক্ষণ লিপিবদ্ধ করিতেন । তিনি স্মরণ শক্তির উপর নির্ভর করিতেন না এবং বিশেষভাবে চিন্তা করিয়া রোগীর ঔষধ নির্বাচন করিতেন । দরিদ্র রোগীদের প্রতি সর্বদাই উদারতা প্রদর্শন করিতেন । হ্যানিমানের চেম্বার বেশ বড় ছিল এবং সমাজের উচ্চস্তরের লোকজনও তাহার নিকট আসিতেন । তাহার চেম্বার সব সময় রোগীতে পূর্ণ থাকিত । এক একজন রোগীর ডাক আসিতে প্রায় ৫ / ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করিতে হইত ।
প্রশ্ন - কি ভাবে বুঝিবে যে ব্যবস্থাপত্র ভুল হইয়াছে ?
উত্তর : যে ঔষধ রোগীতে প্রথম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে , যাহার প্রভাবে রোগলক্ষণের এবং রোগীর অবস্থার পরিবর্তন সূচিত হয় তাহাই হইল প্রথম ব্যবস্থাপত্র । ব্যবস্থাপত্র ভুল হইয়াছে কিনা তাহা পীড়ার হ্রাসবৃদ্ধি দেখিয়া বুঝিতে পারা যায় । অচিররোগ বা চিররোগের ক্ষেত্রেও ঔষধ প্রয়োগের পর অনেক সময় রোগীগন তাহাদের পীড়ার সামান্য হ্রাসবৃদ্ধির কথা চিকিৎসককে জানায় । অনেক সময় ঐ হ্রাসবৃদ্ধির কথা সকলে অনুভব নাও করিতে পারে । এই ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক ও সর্বাঙ্গীন অবস্থা লক্ষ্য করিয়া প্রকৃত ক্রিয়া বুঝিতে পারা যায় । পীড়ার সামান্য বৃদ্ধি হইলে রোগী অত্যন্ত বিমর্ষ ও নিরাশ হইয়া পড়ে । রোগীর নূতন উপসর্গ , অবান্তর লক্ষণ , বিমর্ষতা , ভাবভঙ্গী প্রভৃতি দ্বারা প্রকাশিত হয় যে রোগবৃদ্ধি পাইতেছে । রোগীর মানসিক যন্ত্রণাগুলি বাক্যদ্বারা প্রকাশ না করিলেও রোগীকে লক্ষ্য করিলে বুঝা যায় যে অণুপযুক্ত ঔষধ প্রদত্ত হইয়াছে । তাই তাহার পীড়ার বৃদ্ধি ঘটিয়াছে । এই বৃদ্ধি যে হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি নয় তাহাও চিকিৎসক বুঝিতে পারেন । এইভাবে চিকিৎসক বুঝিবেন যে ব্যবস্থাপত্র ভুল হইয়াছে ।
প্রশ্ন - ব্যবস্থাপত্র ভুল হইলে কি ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে ?
বা , ঔষধ নির্বাচন সঠিক না হইলে চিকিৎসকের কি করা উচিত ?
উত্তর : অচিররোগে কখনও রোগীতে প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়ার ফলে যদি সম্পূর্ণ নূতন , অবান্তর এবং বিপরীত লক্ষণ প্রকাশিত হয় তবে বুঝিতে হইবে যে ঔষধটি সুনির্বাচিত হয় নাই । ব্যবস্থাপত্র ভুল হইয়াছে এবং ভুল ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে । এইরূপ ক্ষেত্রে যদি রোগের বৃদ্ধি ঘটে তবে অবিলম্বে কোন প্রতিষেধক ঔষধ প্রয়োগ করিয়া বৃদ্ধি জনিত জটিল অবস্থার কতক অংশ প্রশমিত করিতে হইবে । আর যদি ঐ প্রতিকুল লক্ষণসমূহ তেমন প্রচন্ড ও গুরুতর না হয় তবে প্রতিষেধক ঔষধ প্রয়োগ না করিয়াই তৎক্ষনাৎ পূর্বেকার ভুল নির্বাচিত ঔষধের পরিবর্তে সদৃশবাহী নূতন ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা লিখ ।
উত্তর : উত্তমরূপে রোগী পর্যবেক্ষণ করিয়া রোগীলিপি প্রস্তুত করা হয় । রোগলক্ষণ তথা রোগীর সামগ্রিক চিত্র রোগীলিপিতে ফুটিয়া উঠে । রোগীলিপি সংগ্রহের পর সুনির্বাচিত ঔষধ ব্যবস্থা করিয়া প্রথম ব্যবস্থাপত্র দিতে হয় । প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করিয়া রোগীর পরিবর্তিত অবস্থাকে অনুসরণ করিয়া যে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয় তাহাকে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র বলে । প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ প্রয়োগের পর ঔষধের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণান্তে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ নির্বাচন চারিটি সংকেতের উপর নির্ভর করে ।
( ১ ) ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ ।
( ২ ) ক্রিয়ানাশক ঔষধ নির্বাচন ।
( ৩ ) সাহায্যকারী ঔষধ নির্বাচন এবং
( ৪ ) নূতন ঔষধ নির্বাচন ।
দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র যে কোন ভাবে দিতে গেলেই রোগীলিপি অবশ্যই অনুসরণ করিতে হইবে । কারণ প্রথম প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়া পর্যবেক্ষনের সাথে সাথে রোগীলিপি বিচারে আনিতে হইবে তাহা না হইলে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা যাইবে না । তাই দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে ।
প্রশ্ন - পূর্বে ঔষধ সেবনকারীর বা পূর্বে কোন চিকিৎসার অধীনে থাকা রোগীর ক্ষেত্রে রোগ চিত্র বা লক্ষণ কি ভাবে নির্ণয় করিবে ?
উত্তর ঃ পূর্ব হইতে চিকিৎসিত হইয়া আসিতেছিল এমন কোন রোগীকে তখনই পরীক্ষা করিলে রোগের ও ঔষধ সৃষ্ট লক্ষনের এক মিশ্র চিত্র পাওয়া যায় । এমতাবস্থায় রোগীকে কিছুকাল বিনা ঔষধে রাখিতে পারিলে ঔষধজনিত লক্ষণ তিরোহিত হয় এবং রোগের অবিমিশ্র ও স্থায়ী লক্ষণগুলি প্রকাশ হইয়া পড়ে । তাহাছাড়া কোনও ঔষধ সেবন করিবার পূর্বে অসুস্থাবস্থায় যে সকল যন্ত্রণা অনুভব হইয়াছিল তাহাই প্রকৃত রোগ । চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করিয়া এইগুলি লিপিবদ্ধ করিবেন । কিন্তু অচিররোগের ক্ষেত্রে শীঘ্র ঔষধ ব্যবস্থা না করিলে রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করিতে পারে । প্রকৃত রোগচিত্র পাওয়ার জন্য তাই অপেক্ষা করা চলে না । এই জন্য রোগীর তখনকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিয়া লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয় ।
প্রশ্ন - পূর্বে ঔষধ ব্যবহারকারী সংকটজনক পীড়ার রোগচিত্র কিভাবে প্রস্তুত করিবে ?
উত্তরঃ রোগী যদি পূর্বে কোন ঔষধ সেবন করিয়া আসে এবং তাহার পীড়া যদি দ্রুত বর্ধনশীল এবং সংকটজনক হয় তবে সঠিক রোগলক্ষণ নির্ণয়ার্থে ঔষধ প্রয়োগ বিলম্বিত করা যাইবে না । কারণ ঔষধ প্রয়োগ বিলম্বিত করিলে রোগীর মৃত্যু ঘটিতে পারে । এই অবস্থায় প্রথম ঔষধ সেবন করিবার পূর্বের লক্ষণগুলি রোগী বা তাহার আত্মীয় স্বজনদের নিকট হইতে জানিয়া লইতে হইবে । তাহা জানা না গেলে প্রথম ঔষধ সেবনের পরবর্তী লক্ষণগুলির উপর অর্থাৎ ঔষধ ও রোগের মিশ্র লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়াই সঠিক ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করিতে হইবে । ইহাতে প্রথম প্রয়োগকৃত বৈসাদৃশ্য ঔষধের কোন প্রকার মারাত্মক ক্রিয়া হইতে রোগী রক্ষা পাইবে ।
প্রশ্ন - প্রাচীন পীড়ায় একটি আদর্শ রোগীলিপি তৈরীতে জটিলতা কোথায় ?
বা , চিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন কেন ?
বা , চিররোগের ক্ষেত্রে রোগী পরীক্ষা বা রোগচিত্র প্রণয়নের অসুবিধাবলী কি কি ?
উত্তর : অচিররোগে রোগ অতিদ্রুত এবং তীব্রভাবে আবির্ভূত হয় বলিয়া উহার লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট রূপে অধিক সংখ্যক লক্ষণ প্রকাশ পায় । উহার কোন লক্ষণ সুস্থাবস্থায় থাকার প্রবণতা নাই বলিয়া উক্ত রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করা সহজতর হয় । কিন্তু চিররোগ অতিধীরে ধীরে আবির্ভূত হয় । উহার লক্ষণগুলি অস্পষ্টরূপে প্রকাশ পায় এবং অধিকাংশ লক্ষণ সুপ্তাবস্থায় থাকে বলিয়া চিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন । তাহাছাড়া চিররোগে দীর্ঘদিন ভুগিতে ভুগিতে রোগী প্রকৃত সুস্থাবস্থার করা ভুলিয়া যায় । তাই প্রকৃত অসুস্থাবস্থার তুলনা করিতে পারে না এবং দীর্ঘদিনের অসুস্থকর লক্ষণগুলিকে স্বাভাবিক বলিয়া মনে করে এবং তাহা চিকিৎসককে বলার প্রয়োজন মনে করে না । চিররোগের অনেক লক্ষণ বহুদিন পর পর পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় এবং রোগী এইসব লক্ষণগুলিকে পৃথক রোগ মনে করিয়া চিকিৎসককে বলাব প্রয়োজন মনে করে না । আবার রোগী দীর্ঘদিন ভুগিয়া নিজেও চিকিৎসার উপর বীতশ্রদ্ধ হইয়া পড়ে এবং রোগের দীর্ঘ কাহিনী আর চিকিৎসককে বলিতে চাহে না । ইহাতে চিকিৎসক পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্র সংগ্রহে ব্যর্থ হন । চিররোগের সূচনা হইতে পূর্ণবিকাশ লাভ করিতে দীর্ঘ সময় লাগে । চিররোগের উপবিষ অনেকদিন ধরিয়া বিভিন্ন অবস্থার মধ্যদিয়া প্রানসত্ত্বাকে অভিভূত করিতে চেষ্টা করে এবং প্রাণসত্বা ও ইহার নাগপাশ হইতে মুক্ত হওয়ার প্রানপন প্রয়াস চালায় । এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া অভিব্যক্ত ঘটে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে । রোগী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অসুস্থ হইয়া পড়ে । কিন্তু কোন ঘটনা , কোন রোগ ভোগেই মূল রোগের পরিচয় বহন করে না । প্রতিটি রোগভোগ মূল রোগের আংশিক প্রকাশ মাত্র । প্রতিটি রোগের আক্রমন যেন এক দীর্ঘ ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় । বিভিন্ন রোগভোগের ঘটনা না কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । সমস্ত ঘটনাই মিলিতভাবে প্রকৃত রোগের সার্বিক পরিচয় বহন করে । তাই চিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন ।
প্রশ্ন - চিররোগের লক্ষণসংগ্রহ প্রণালী বর্ণনা কর ।
বা , চিররোগের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে বা অবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে জানিবার জন্য কি কি বিষয়ের অনুসন্ধান আবশ্যক ?
উত্তর : চিররোগের ক্ষেত্রে রোগের সূচনা হইতে পূর্ণ বিকাশ লাভ পর্যন্ত দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন হয় । এই ক্ষেত্রে শুধু রোগীর বর্তমান ভোগের বিবরণ সংগ্রহ করিলেই চলিবে না , রোগীর রোগভোগের সম্পূর্ণ ইতিহাস এমনকি বংশগত রোগ ধারার ইতিহাসও সংগ্রহ করিতে হইবে । চিররোগের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে রোগীর উপদংশ বা আঁচিলযুক্ত গনোরিয়া রহিয়াছে কিনা তাহা অনুসন্ধান করিতে হইবে । কারণ উপদংশ বা প্রমেহ কোনটিই প্রায় এক দৃষ্ট হয় । না , সোরার সহিত উহাদের প্রায়ই যুক্ত থাকিতে দেখা যায় । তাই আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যখন উপদংশ ও প্রমেহের চিকিৎসা করেন তখন সেই সাথে সোরা দোষের চিকিৎসা করিতেও বাধ্য হন । এই তিনটি চিররোগ বীজের পরস্পরের সংমিশ্রনের ফলে এবং এলোপ্যাথিক কুচিকিৎসার দ্বারা নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করেন এবং নানারূপ বিকৃতি , বিবৃদ্ধি ও রূপান্তরের মাধ্যমে নানা প্রকার নাম পরিগ্রহ করে ।
উপরোক্ত তথ্যসমূহ যখন জ্ঞাত হওয়া যায় তখন একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক উক্ত চিররোগের যে সকল বিসদৃশ এলোপ্যাথিক ঔষধের প্রয়োগ করা হইয়াছে তাহা জানিতে পারেন । উহা জানাগেলে উক্ত চিররোগসমূহের মূল অবস্থা হইতে কখন , কি প্রকারে বিকৃত হইয়াছে তাহাও জানিতে সক্ষম হইবেন । তখন তিনি ঐ সকল কুচিকিৎসার কারণ , তাহার দোষসমূহ দূরীভূত করার চেষ্টা করিবেন । ইহা ছাড়া যে সকল ঔষধ অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করা হইয়াছে তিনি তাহা ভুলক্রমে পুনঃপ্রয়োগ হইতে বিরত থাকিবেন ।
অতঃপর রোগীর বয়স , জীবনযাপন প্রণালী , প্রত্যাহিক কাজকর্ম , পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা , বংশগত ইতিহাস ইত্যাদিও জানিবেন । ঠিক একই প্রকারে তাহার মানসিক অবস্থা ও প্রকৃতি জানিয়া লইতে হইবে এবং দেখিতে হইবে যে উহাদের মধ্য হইতে কোনটি তাহার রোগবৃদ্ধি করিতে পারে কিনা । দীর্ঘকাল রোগভোগের ফলে রোগী বুঝিতেই পারে না যে প্রকৃত রোগ কোনটি । অনেক সময় রোগের মূল উপসর্গগুলিতে রোগী এমন অভ্যস্ত হইয়া পড়েন যে সেগুলি তাহার নিকট আর রোগ বলিয়াই মনে হয় না । অথচ এসব ঘটনা রোগের সর্বাধিক পরিচয় বহন করে ।
এই সকল পরীক্ষা সমাপ্ত করার পরও চিকিৎসক রোগীর সহিত তাহার রোগ সম্বন্ধে আরও কথাবার্তা ও আলাপ আলোচনার মধ্যদিয়া অনেক সময় রোগীর বিশেষ উলেখযোগ্য ও বৈশিষ্টপূর্ণ লক্ষণসমূহ সংগ্রহ করিয়া রোগীচিত্রটি এইরূপে পূর্ণাঙ্গ করিতে পারেন যে উহার সাহায্যে লক্ষণ সাদৃশ্যের উত্তম ঔষধটি পাইয়া আদর্শ চিকিৎসা শুরু করিতে পারেন ।
গ্রশ্ন - অচিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ প্রণালী বর্ণনা কর ।
বা , অচিররোগের অবস্থা সম্বন্ধে জানার জন্য কি কি বিষয়ের অনুসন্ধান আবশ্যক ?
বা , তরুণ এবং অল্পদিন স্থায়ী রোগের অনুসন্ধান কি ভাবে করিবে ?
উত্তর ঃ অচিররোগের ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্তমান থাকে । অচিররোগ অল্পকাল স্থায়ী হয় , ইহার লক্ষণসমূহের বিকাশ অতিদ্রুত ঘটে । রোগ শক্তির প্রভাবে প্রাণসত্তা প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হয় বলিয়া বাহিরের সাহায্যের জরুরী প্রয়োজন হয় । কাজেই প্রাণসত্তা তখন সুস্পষ্ট লক্ষণ তুলিয়া ধরিয়া সাহায্যের বিশেষ দ্রব্যটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে । রোগী নিজে তাহার কষ্টকর উপসর্গগুলির প্রকৃতি সহজে বুঝিতে ও বর্ণনা করিতে পারে । তাহার পরিজনেরাও বুঝিতে পারেন কোন উপসর্গগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও দৃষ্টি আকর্ষক এবং চিকিৎসকও সেইরূপ লক্ষণের ব্যঞ্জনা সহজে ধরিতে পারেন । অল্পদিনের রোগ বলিয়া এবং কষ্টকর অনুভূতিগুলি তীব্র হয় বলিয়া রোগী স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবেই সব কথা খুলিয়া বলেন । কাজেই রোগের সার্বিক পরিচয় পাইতে চিকিৎসককে খুব বেশী প্রশ্ন করিতে হয় না । তবে স্মরণ রাখিতে হইবে যে অচিররোগের বিকাশ যেমন দ্রুত , তেমনি দ্রুত পরিনতির দিকেও অগ্রসর হয় । সেজন্য অচিররোগের ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় ।
প্রশ্ন - চিররোগের ক্ষেত্রে কিভাবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হয়?
উত্তর ঃ চিররোগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্বাচন করা বেশ কঠিন কাজ , রোগী প্রায়শই তাহার অতীত ইতিহাস , বংশ ইতিহাস , রোগের সম্ভাব্য উত্তেজক ও বাহক কারণ সমূহ ভুলিয়া যায় এবং দীর্ঘদিন রোগভোগের ফলে সঠিক প্রকৃতি , হ্রাসবৃদ্ধির ঘটনা প্রভৃতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের বর্ণনা দিতে পারে না । ইহা ছাড়া প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর সামান্য পরিবর্তন রোগী ঠিকভাবে উপলদ্ধি করিতে পারে না । ইহাতে ভুল বিবরণের কারণে চিকিৎসক ভুল ঔষধ নির্বাচন করেন ।
প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি কোন চিররোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ কিছুদিনের জন্য উপশমিত হইয়া পুনরায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় অথবা পূর্বের দূরীভূত লক্ষণ পুনরায় দেখা দেয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে পূর্বে প্রদত্ত ঔষধই অপেক্ষাকৃত উচ্চ শক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে । কিন্তু যদি কিছুদিন উপশম লাভের পর রোগী একটা স্থিতাবস্থায় আসিয়া দাঁড়ায় তবে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে লক্ষণগুলির কোনরূপ হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে কিনা ? যদি উপযুক্ত সময়ের ব্যবধানেও লক্ষণের কোন পরিবর্তন না ঘটে তবে প্রথম ব্যবস্থাপত্রে নির্বাচিত ঔষধই আর একবার উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করিয়া দেখা দরকার যে ঐ ঔষধটি রোখীতে আর কোন পরিবর্তন আনিতে পারে কিনা ?
প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি রোগীতে কিছু নূতন লক্ষণ দেখা দেয় বাহা প্রয়োগকৃত ঔষধেরও নয় বা পূর্বের অবদমিত অবস্থারও নয় তবে বুঝিতে হইবে ইহা রোগের বৃদ্ধি । এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে নূতন করিয়া রোগীলিপি প্রস্তুত করিয়া ঔষধ পরিবর্তন করিতে হইবে । যদি কোন নূতন লক্ষণগুলি প্রয়োগকৃত ঔষধের লক্ষণ হয় তবে বুঝিতে হইবে ভুল ঔষধ নির্বাচন করা হইয়াছে । এই ক্ষেত্রে কয়েকদিন অপেক্ষা করিলে আপনা আপনিই লঙ্কণ চলিয়া যাইবে । তখন পুনরায় লক্ষণসমষ্টি পর্যালোচনা করিয়া দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে নূতন ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে ।
নূতন লক্ষণগুলি যদি রোগীর পুরাতন অবদমিত লক্ষণ হয় তবে বুঝিতে হইবে রোগী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতেছে । এখানে শুধু ধৈর্য্য ধরিয়া অপেক্ষা করিলেই দেখা যাইবে কিছুদিন পরে লক্ষণগুলি প্রথমে ঔষধের ক্রিয়াতেই ধীরে ধীরে দূরীভূত হইবে । কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় । লক্ষণগুলি দূরীভূত হইতেছে না তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ পুনরায় উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করিতে হইবে ।
যদি প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীর সকল লক্ষণ দূরীভূত হয় কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বার বার ঘুরিয়া আসে তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রথম ঔষধটির পরিপূরক ঔষধটি অবশ্যই রোগীর লক্ষণসমষ্টির সদৃশ হওয়া আবশ্যক । সোরা প্রধান মিশ্র মায়াজমেটিক রোগে যদি সুনির্বাচিত এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগের পর রোগীর সকল সোরিক লক্ষণসমষ্টি উপশমিত হয় কিন্তু রোগী হঠাৎ গলা বা জিহ্বায় ক্ষত বা অন্য কোন সিফিলিটিক লক্ষণ প্রকাশিত হয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে এন্টিসোরিক ঔষধ পরিবর্তন করিয়া এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে । অনুরূপ ভাবে কোন সাইকোটিক লক্ষণ দেখা গেলে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে এন্টিসাইকোটিক ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে । রোগী সম্পূর্ণ - আরোগ্য হওয়ার পূর্বে এই ভাবে অনেকবার চিকিৎসার পরিকল্পনা পরিবর্তন হইতে পারে ।
প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর যদি রোগীর সকল লক্ষণ হ্রাসপ্রাপ্ত হয় কিন্তু রোগী সামগ্রিক ভাবে ভাল অনুভব না করে তবে বুঝিতে হইবে রোগীদেহে কোন মূল্যবান দেহযন্ত্রের বিকৃতি ঘটিয়াছে এবং এই রোগী কখনও পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিবে না । এই অবস্থায় রোগীকে সারা জীবন উপশমদায়ক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - অচিররোগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র কিভাবে করিতে হয় ?
উত্তর : অচিররোগের ক্ষেত্রে সদৃশমতে কোন ঔষধ প্রয়োগের পর যদি রোগী । যন্ত্রনার উপশম হয় অর্থাৎ যদি সুনিশ্চিত উন্নতির লক্ষণ দেখা যায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন হইবে না । যতক্ষণ রোগীর উন্নতি অব্যাহত থাকে ততক্ষণ ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিতে হইবে । কিন্তু কয়েকঘন্টা পরে পুনরায় যদি প্রথমে হ্রাস পাওয়া লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োগকৃত ঔষধটির অপেক্ষাকৃত উচ্চ শক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে । কিন্তু এই রোগীতে যদি প্রথম হ্রাস পাওয়া লক্ষণগুলি বৃদ্ধি পায় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োগকৃত ঔষধটির অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে । অনেক ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি দূর হওয়ার পর রোগীর ক্রমোন্নতির পথে অগ্রসর হইবে এবং প্রয়োগকৃত ঔষধের একমাত্রাতেই আরোগ্য হইবে । কিন্তু যদি এই বৃদ্ধির জন্য রোগীর জীবন সংশয় দেখা দেয় তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে বিষণ্ণ ঔষধ দিয়া ঐ ঔষধের ক্রিয়া শেষ হইলে অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধির অবসান হইলে যদি প্রথমে প্রয়োগকৃত ঔষধটির লক্ষণ তখনও বর্তমান থাকে তবে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিতে অনেক বেশী সময়ের ব্যবধানে ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে ।
যদি কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন ক্রমোন্নতি অব্যাহত থাকার পর রোগ লক্ষণগুলি সম্পূর্ণ দূরীভূত না হয় বা পূর্বে দূরীভূত লক্ষণগুলি বার বার আবির্ভূত হয় এবং প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করিয়াও একই অবস্থা চলিতে থাকে তবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরিপূরক কোন ঔষধ দিতে হইবে ।
যদি কোন অচিররোগের সুনির্বাচিত ঔষধের প্রত্যেক মাত্রা প্রয়োগের পর ঔষধের ক্রিয়া খুব স্বল্পকাল স্থায়ী হয় এবং তাহার পরই তীব্র মারাত্মক , এই ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ শক্তি পরিবর্তন পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া প্রতি বারই অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে দ্রুত পুনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে । কারণ এই সব ক্ষেত্রে প্রদাহজনিত অবস্থার আধিক্যহেতু ঔষধের ক্রিয়া বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না ।
কিছুদিন সঠিকভাবে ভাল থাকার পর যদি রোগীর সকল লক্ষণ পুনরায় উদয় হয় তবে বুঝিতে হইবে এই অচিররোগের পেছনে কোন মায়াজমঘটিত দোষ বর্তমান আছে । এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ পরিবর্তন করতঃ কোন এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিতে হইবে ।
প্রশ্ন - লক্ষণের বিস্তারিত বিবরণ কি ভাবে অনুসন্ধান করিবে ?
বা , রোগের সামগ্রিক প্রতিনিধি স্বরূপ প্রত্যক্ষ লক্ষণাবলী কি এবং কিরূপে ঐ লক্ষণসমূহ সংগৃহীত হয় ?
উত্তর ঃ রোগ লক্ষণ দেহীর রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ । প্রত্যেক ব্যক্তিগত রোগী ক্ষেত্রে রোগীর দেহ ও মনের এবং স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে । জীবনীশক্তির বিকৃতি বা লক্ষণসমষ্টি পরিদৃশ্যমান এবং ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য । রোগজ লক্ষণগুলি রোগী স্বয়ং অনুভব করেন , আত্মীয় স্বজন বা সেবাকারীরা সেগুলি সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ করিয়া মন্তব্য করেন এবং চিকিৎসক স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করেন । এই সব লক্ষণের মধ্যে কিছু আছে ব্যক্তিনিষ্ট এবং কিছু বস্তুনিষ্ট লক্ষণ । ব্যক্তিনিষ্ট লক্ষণ হিসাবে রোগী নিজে তাহার ব্যথা বেদনা , অসুবিধা , অস্বস্তি , অস্থিরতা , তৃষ্ণা বা মানসিক অবস্থা চিকিৎসককে জানায় । বস্তুনিষ্ট লক্ষণ হিসাবে রোগীর আত্মীয় স্বজন ও সেবাকারীরা রোগীর প্রলাপবকা , দাঁতে দাঁত ঘর্ষন প্রভৃতি সম্বন্ধে মন্তব্য করেন । চিকিৎসক উল্লেখিত বস্তুনিষ্ট ও ব্যক্তিনিষ্ট লক্ষণ সংগ্রহ করার পর স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করতঃ অতিরিক্ত লক্ষণ সংগ্রহ করিয়া লক্ষণের সমন্বয় সাধন করেন ।
বর্ণনাকারীদের বক্তব্য শেষে চিকিৎসক বিশেষ লক্ষণের দিকে নজর দিবেন এবং সে সম্বন্ধে আরও সঠিক সংবাদ বাহির করিয়া নিবেন । প্রতিটি বিষয়ে আরও বিশেষ তথ্য জানার পর নিম্নোক্ত ভাবে প্রশ্ন করিয়া বিস্তারিত অনুসন্ধান করিবেন ।
১। কোন সময় এই লক্ষণটি দেখা যায় ?
২। রোগী এখন যে ঔষধ খাইতেছে তাহার পূর্বে কি তাহা ছিল ?
৩। ঔষধ ব্যবহার কালীন কি লক্ষণ আসিয়াছে ?
৪। ঔষধ বন্ধ করার কতদিন পর লক্ষণ আসিয়াছে ?
৫। বেদনার প্রকৃতি কি ধরণের , ঠিক কেমন বোধ হয় , বেদনা কি ঠিকই একই স্থানে হয় না কি স্থান পরিবর্তন হয় ?
৬। বেদনা যন্ত্রনা কি যখন তখন হয় না বিভিন্ন সময়ে হয় , না কি সদা সর্বদা থাকে বা থাকিত ?
৭। বেদনা কতক্ষণ পর্যন্ত থাকে ।
৮। দিন রাতের কোন সময়ে এবং দেহের কি প্রকার অবস্থানে ব্যথা বেদনা বৃদ্ধি পায় বা হ্রাস পায় ইত্যাদি
প্রশ্ন দ্বারা চিকিৎসক রোগ লক্ষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত অবগত হইবেন ।
প্রশ্ন -০১.৫৯ । স্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে মৃদু লক্ষণও ঔষধ নির্বাচনে অত্যাবশ্যক- আলোচনা কর । উত্তর : বহুদিন যাবত রোগ ভোগের ফলে স্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে রোগী এমনই অভ্যস্ত হইয়া পড়ে যে রোগের মৃদু লক্ষণগুলিকে রোগী তাহার স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বলিয়া ধরিয়া নেয় । তাই বর্ণনা কালে এইগুলি সাধারণতঃ বাদ দিয়া দেয় । কিন্তু এই প্রকার মৃদু লক্ষণগুলি প্রায়ই রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনে যথেষ্ট সাহায্য করিয়া থাকে । তাই স্থায়ী রোগের লক্ষণ নির্বাচন কালে চিকিৎসককে রোগীর সর্ববিধ সূক্ষ্ম ও মৃদু বৈশিষ্ট্যগুলি এবং তাহাদের হ্রাসবৃদ্ধির প্রতি অতি মাত্রায় যত্নবান হইতে হইবে ।
প্রশ্ন - আপাতদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইতে হইতে হঠাৎ উপশম ব্যাহত হইলে কি করিতে হইবে ?
উত্তর ঃ ঔষধ প্রয়োগের পর আপাতদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইতে হইতে হঠাৎ উপশম ব্যাহত হইলে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ না করিয়া ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিতে হইবে । কারণ উন্নতির লক্ষণগুলি চক্রাকারে আবর্তিত । কাজেই কিছুকাল অপেক্ষা করিলে উন্নতির লক্ষণগুলি আপনা হইতেই পুনরায় উপস্থিত হইবে ।
প্রশ্ন - অন্য ঔষধ ব্যবহারকারী কোন চিররোগীর চিকিৎসায় লক্ষণসমূহ পর্যবেক্ষণের উপযুক্ত সময় কোনটি ?
উত্তর ঃ কোন চিররোগী পূর্ব হইতেই যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করিয়া থাকে এবং ঔষধ ব্যবহার করিয়া যখন চিকিৎসকের নিকট আসে ঠিক তখনই পরীক্ষা করিয়া রোগ নির্ণয় করা সমীচিন নয় । কারণ তখনও পূর্ব ঔষধের ক্রিয়া শেষ হয় নাই । এই অবস্থায় রোগী পরীক্ষা করিলে মূল রোগের ও ঔষধজনিত একমিশ্র লক্ষণ পাওয়া যাইবে । প্রকৃত রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করা খুবই দুষ্কর হইয়া পড়িবে । একবার ঔষধ ব্যবহার করার পূর্বে যে লক্ষণ বিদ্যমান ছিল তাহাই পীড়ার প্রকৃত লক্ষণ এবং ব্যবহৃত ঔষধের ক্রিয়া শেষ হইয়া গেলে সেই লক্ষণ পুনরায় দেখা যাইতে পারে । সেজন্য কিছু দিন ঔষধ বন্ধ রাখিতে হইবে অথবা অনৌষধি দিয়া রোগীকে সন্তুষ্ট রাখিয়া অপেক্ষা করিতে হইবে । পূর্ব ঔষধের ক্রিয়া শেষ হইয়া যাওয়ার পরই লক্ষণসমূহ পর্যবেক্ষণের উপযুক্ত সময় ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমূহের উপশম সত্ত্বেও রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করিলে কি করিতে হইবে ?
উত্তর ঃ লক্ষণসমূহ একদিকে যেমন রোগের প্রতিচ্ছবি , অন্যদিকে ইহা ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি । লক্ষণ দূরীভূত হইলে রোগের অবসান অবশ্যম্ভাবী । ঔষধ প্রয়োগের পর লক্ষণের উপশম সত্ত্বেও অনেক সময় রোগী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না । এমতাবস্থায় বুঝিতে হইবে এই জাতীয় রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্যের অযোগ্য । কারণ তাহার কোন প্রধান অঙ্গ যেমন লিভার , কিডনী , হৃদপিণ্ড প্রভৃতি অকেজো হইয়াছে । এইরূপ ক্ষেত্রে উপযুক্ত উপ - মদায়ক ঔষধ প্রদান ছাড়া অন্য কোন পথ নেই ।
প্রশ্ন - ঔষধ প্রয়োগের পর আকাংখিত ক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত ?
উত্তর : ঔষধ প্রয়োগের পর রোগীর উন্নতির নিশ্চিত লক্ষণাবলী হইল
১। রোগী পূর্বাপেক্ষা অধিক সুস্থ বোধ করে ।
২। কোন নূতন উপসর্গের সৃষ্টি হয় না ।
৩। পুরাতন উপসর্গের হ্রাস বা বিলুপ্তি ঘটে ।
৪। উপসর্গের প্রকোপতার হ্রাস ঘটে ।
৫। দ্রুত উপসর্গের উপশম ঘটে ।
প্রশ্ন - ঔষধে কাজ না করিলে বা বিপরীত কাজ করিলে চিকিৎসকের দিক হইতে কি কি ত্রুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করিবে ?
উত্তর ঃ ঔষধে কাজ না করিলে বা বিপরীত কাজ করিলে চিকিৎসকের দিক হইতে নিম্নলিখিত ত্রুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে হইবে ।
১। প্রদত্ত ঔষধ নির্বাচন ভুল হইয়াছে কিনা তাহা রোগীলিপি পর্যালোচনা করিয়া দেখিতে হইবে ।
২। প্রদত্ত ঔষধের বিশুদ্ধতা সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে ।
৩। ঔষধের শক্তি ও মাত্রা সঠিক হইয়াছে কিনা বিবেচনা করিতে হইবে ।
৪। ঔষধের ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষা করা হইয়াছে কিনা দেখিতে হইবে ।
প্রশ্ন - ঔষধে কাজ না করিলে রোগীর দিক হইতে কি কি ত্রুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করিবে ?
উত্তর : ঔষধে কাজ না করিলে রোগীর দিক হইতে নিম্নলিখিত ত্রুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে হইবে । ১। রোগী কি ভাবে ঔষধ সেবন করিয়াছে এবং ঔষধ সেবনের সময় সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিতে হইবে ।
২। পীড়ার উদ্দীপক কারণ , পরিপোষক কারণ এবং প্রধান কারণ প্রভৃতি বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে হইবে । উক্ত কারণ গুলিকে জানিতে হইলে রোগীর শারীরিক , ধাতুপ্রকৃতি , মানসিক অবস্থা , বুদ্ধি ও নৈতিক চরিত্র , ব্যবসাবৃত্তি , সামাজিক অবস্থাসমূহ , বয়স , জননেন্দ্রিয়ের ব্যবহার , পূর্ব পুরুষের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীর পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি কিভাবে প্রস্তুত করিতে হয় ?
উত্তর : মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগী যখন যা করে এবং বলে সে মনে করে তাহা স্বাভাবিক এবং ঠিক করিয়াছে । সে জন্য রোগীর মুখ হইতে তাহার অসুস্থতার সম্বন্ধে খুব একটা জানা যায় না । কিন্তু মানসিক ব্যাধির ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণরাজি সুস্পষ্ট ও অভ্রান্তরূপে প্রকাশিত হয় , কাজেই চিকিৎসক বিচক্ষণতার সাথে একটু পরিশ্রম করিয়া অনুসন্ধান করিলেই উপযুক্ত রোগ চিত্র অংকন করিতে পারেন । আবার কিছু কিছু লক্ষণ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসক সতর্কভাবে গুপ্ত প্রবঞ্চনা করিয়া সংগ্রহ করিতে পারেন । তা ছাড়া রোগীর সহচর , আত্মীয়স্বজন , বন্ধু বান্ধব এবং সেবক সেবিকাদের নিকট হইতে রোগীর বিভিন্ন অস্বাভাবিক অবস্থার কথা জানিয়া লইয়া একটি পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত করিতে পারেন ।
প্রশ্ন - সোরা বীজ হইতে উৎপন্ন চিররোগ সমূহের অনুসন্ধান সম্বন্ধে হ্যানিমান কি কি উপদেশ দিয়াছেন ?
উত্তরঃ যে প্রণালী অবলম্বন করিয়া মহামারী রোগের সমগ্র চিত্রটি অংকন করিবার উপদেশ হ্যানিমান দিয়েছেন , সেইরূপ প্রণালী অবলম্বন করিয়া সোরাবীজ হইতে উৎপন্ন চিররোগের চিত্র অংকন করিতে হইবে । তবে চিররোগ সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে জানিতে হইলে মহামারী ও তরুণ রোগ অপেক্ষা আরও অধিক ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করিতে হইবে । একই রোগীর মধ্যে সোরার পূর্ণ প্রকাশ পায় না । সুতরাং পৃথকভাবে কতিপয় রোগী পরীক্ষা করিতে হয় । প্রথম রোগীতে কিছু , দ্বিতীয় রোগীতে কিছু , তৃতীয় রোগীতে কিছু এবং চতুর্থ রোগীতে কিছু লক্ষণ এইরূপে রোগী পরীক্ষায় যে সব লক্ষণ পাওয়া যায় উহারা পৃথকভাবে সোরার আংশিক লক্ষণ । উহাদের সমষ্টিতে সোরার পূর্ণ প্রকাশ । এইরূপে বহু লোকের লক্ষণ সংগ্রহে যখন সোরার সম্পূর্ণ চিত্রটি প্রাপ্ত হওয়া যায় তখন তাহার সাদৃশ্য লক্ষণ অনুসারে যে সমস্ত ঔষধ ঐ চিত্রের সহিত সদৃশ হয় শুধুমাত্র ঐ ঔষধগুলিকেই এন্টিসোরিক ঔষধ বলিয়া গ্রহন করা হয় । এইরূপে আবিস্কৃত এন্টিসোরিক ঔষধবলী সোরা হইতে উৎপন্ন চিররোগের প্রতিকারক ।
প্রশ্ন - মহামারী রোগ কাহাকে বলে ? ইহা কি কি কারণে সংঘটিত হয়?
উত্তর : যখন কোন রোগ কোন এলাকায় বা জনপদে অতি অল্প সময়ে বহু লোককে ব্যাপকভাবে আক্রমন করে , তাহাকে মহামারী রোগ বলে । যেমন - কলেরা , বসন্তু , হাম , প্লেগ , হুপিংকাশি প্রভৃতি । সাধারণতঃ যুদ্ধ বিগ্রহ , বায়ুর দূষিত প্রভাব , স্থানীয় পানি ও মাটির দোষে , পাবন , দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি কারণে মহামারী রোগ সংঘটিত হইয়া থাকে ।
প্রশ্ন - কি ভাবে মহামারী রোগ সমূহের অনুসন্ধান করিতে হয় ?
উত্তর : মহাত্মা হ্যানিমান মহামারী রোগ সমূহের অনুসন্ধান সম্বন্ধে বলিয়াছেন , প্রত্যেকটি রোগ সম্বন্ধে ব্যক্তিগত ভাবে লক্ষণসমূহ নির্ধারণ করিতে হইবে । ইতিপূর্বে এই জাতীয় পীড়ার প্রাদুর্ভাব ঘটিয়াছিল কিনা বা ঘটিয়া থাকিলে তাহার নাম কি ছিল ইত্যাদি জানার কোন দরকার নাই । রোগ চিকিৎসায় অনুমান , কল্পনা বা পূর্ব অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়ারও কোন আবশ্যকতা নাই । যত্ন সহকারে অনুসন্ধান করিলে ইহাই দেখা যাইবে যে , কোনও সংক্রামক মহামারী রোগ আগেরটির চাইতে হয়ত একেবারেই ভিন্ন ধরণের বা একেবারেই নূতন প্রকৃতির । একিউট রোগ বীজজাত বসস্ত , মাম্পস , প্রভৃতি পীড়া যেগুলি প্রায় একই ভাবে আসে সেগুলি ছাড়া এই সব রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসককে সংস্কারমুক্ত মন লইয়া নূতন ভাবে অনুসন্ধান কার্য চালাইতে হইবে ও লক্ষণসমূহ প্রত্যেক রোগীতে পৃথক পৃথক ভাবে নির্ধারণ করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - মহামারী পীড়ার রোগচিত্র কি ভাবে তৈরী করিবে ?
বা , মহামারী পীড়ার কারণ কি ভাবে অনুসন্ধান করিবে ?
উত্তর ঃ মহামারী রোগ দেখা দিলে তাহা পূর্বে কখনও হইয়াছিল কিনা তাহা জানার প্রয়োজন পড়ে না । কারণ উহা দ্বারা উক্ত রোগ চিকিৎসায় কোন কাজে আসে না । কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ দ্বারা নির্দিষ্ট নামের পীড়া পূর্বে দেখা দিলেও বর্তমানে ঐ নামের পীড়া আরও ভিন্ন লক্ষণ নিয়া প্রকাশ পাইতে পারে । যেহেতু লক্ষণ সমষ্টির সাহায্যে আমাদের চিকিৎসা করিতে হইবে , তাই পূর্বে যে ঔষধে উপকার হইয়াছিল সেই ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করিব এইরূপ ধারণা করা বৃথা । প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রোগীর বিশেষত্বের উপর নির্ভর করায় প্রত্যেক রোগীকেই প্রকৃত চিকিৎসক নূতন অজ্ঞাত মনে করিয়া পৃথকভাবে ও সম্পূর্ণ রূপে পরীক্ষা দ্বারা যাহা জানিতে পারিবেন তাহার উপর নির্ভর করিয়াই চিকিৎসা করিতে হইবে । কোন নামের রোগের প্রথম রোগী দেখিয়াই চিকিৎসক সেই রোগের সম্পূর্ণ চিত্র জানিতে পারেন না । অত্যন্ত সাবধানতার সহিত কয়েকটি রোগীর সম্পূর্ণ অবস্থা পরীক্ষা করিয়া সেই রোগের সম্পূর্ণ চিত্র জানিতে পারেন এবং উহার জন্য সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করিতে পারেন ।
কিছু রোগী হইতে কোন মহামারী রোগের চিত্র গ্রহন করার সময় চিকিৎসক শুধুমাত্র সেই লক্ষণগুলিকেই সংগ্রহ করিবেন যেগুলি অসাধারণ ও বিশেষত্ব পূর্ণ লক্ষণ এবং অন্যান্য পীড়ায় খুব কমই দেখা যায় । এই বিশেষত্বকেই পীড়াটির বিশেষত্ব বলা হইবে এবং তাহা দ্বারা সদৃশমতে উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভবপর হইবে । মহামারী রোগের এইরূপে বিশেষত্ব বাহির করার জন্য বিভিন্ন ধাতুর রোগীর পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে ।
প্রশ্ন - কি ভাবে মহামারী রোগের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় ?
উত্তর : দুই একটি রোগী দেখিয়া কখনও মহামারীর সামগ্রিক লক্ষণ বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভবপর নয় । অনেকগুলি রোগী দেখিয়া তবেই পীড়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভবপর । অন্যান্য পীড়ার ন্যায় মহামারী পীড়ায়ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ লিপিবদ্ধ করা উচিত । এই ভাবে লিপিবদ্ধ রোগচিত্র হইতে বিশিষ্ট লক্ষণসমূহ বাছিয়া লইতে সুবিধাজনক । একই বোধগম্য কারণ হইতে উৎপন্ন হইলেও রোগীর ধাতু প্রকৃতি অনুসারে রোগচিত্র বিভিন্ন হইয়া থাকে এবং সেজন্য ঔষধের ব্যবস্থাও এক হইতে পারে না । মহামারীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় কোন চিররোগবীজ রোগের পটভূমিকায় অদৃশ্যভাবে লুকায়িত থাকিয়া পরিপোষক কারণরূপে আরোগ্যের পথে বাধা প্রধান করে । চিকিৎসককে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখিতে হইবে ।
প্রশ্ন - মোডালিটি ( Modality ) বা রোগের হ্রাস - বৃদ্ধি কাহাকে বলে ?
উত্তর : পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী শীত ও গ্রীষ্মে , শীত ও উত্তাপে , আর্দ্রতায় ও শুষ্কতায় , দিবা রাত্রির বিভিন্ন সময়ে , পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় এবং অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রূপ হয় । যে অবস্থায় রোগ লক্ষণের পরিবর্তন ঘটে , বিশেষ করিয়া রোগ লক্ষণের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে তাহাকে মোডালিটি বলে ।
প্রশ্ন - চিররোগের ঔষধ প্রয়োগের পর নিম্নে বর্ণিত অবস্থার প্রত্যাশিত ফলাফল কি হইবে ?
ক ) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম , পরে বৃদ্ধি ।
খ ) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি ।
গ ) সুদীর্ঘকাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি ।
ঘ ) রোগলক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল চলিতে থাকে এবং রোগের অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হইতে থাকে ।
উত্তর : ক ) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম , পরে বৃদ্ধি- প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম পরে বৃদ্ধি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে তবে নিম্নশক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে । তাই নির্বাচিত ঔষধ উচ্চ শক্তিতে প্রদান করা প্রয়োজন এবং দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে ।
খ ) অধিককাল স্থায়ীবৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পরে অবনতি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ হয় নাই । তাই প্রতিষেধক হিসাবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে ।
গ ) সুদীর্ঘকাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি- অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে । কিন্তু ঔষধের মাত্রা বেশী হওয়ায় সদৃশ বৃদ্ধি ঘটিয়াছে । এমতাবস্থায় ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিলে সদৃশ বৃদ্ধি অন্তর্হিত হইবে । এখানে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন হইবে না ।
ঘ ) রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল ধরিয়া চলিতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হইতে থাকে এইরূপ অবস্থায় মনে করিতে হইবে ঔষধ সঠিকভাবে নির্বাচিত হইয়াছে কিন্তু রোগী অনারোগ্য ছিল । তাহার দেহযন্ত্রে নিদানগত অবস্থা বহু পূর্বে হইয়াছিল । এই অবস্থায় কোন গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রদান করা হইয়াছে । দ্রুত প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা না নিলে জীবন বিপন্ন হইতে পারে ।
প্রশ্ন - তরুণ পীড়ায় বা অচিররোগে ঔষধজনিত রোগ বৃদ্ধি অল্পতর করিবার উপায় কি ?
বা , কিভাবে হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধিকে আমরা পরিহার করিতে পারি ?
উত্তর ঃ সদৃশ বিধান মতে রোগীতে প্রয়োগকৃত ঔষধের মাত্রা যত কম হয় , প্রথম কয়েক ঘন্টায় আপাত দৃষ্টিতে ঔষধজনিত যে রোগবৃদ্ধি দেখা দেয় ঐ বৃদ্ধিও তত কম এবং স্বল্পকাল স্থায়ী হয় । কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রা কখনই অতটা লঘু করা যায় না যে লঘু মাত্রার দ্বারা অল্পদিন স্থায়ী একটি প্রাকৃতিক পীড়াকে সম্পূর্ণ আরোগ্য সাধন করিতে পারে । তাই নির্বাচিত ঔষধের মাত্রা যথাসম্ভব ক্ষুদ্র না হইলে উহা সেবনের পর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেই রোগের ভেষজজনিত বৃদ্ধি ঘটিবে । কাজেই তরুণ পীড়ায় যতদূর সম্ভব ক্ষুদ্র মাত্রা প্রয়োগ করাই ঔষধজনিত রোগবৃদ্ধি অল্পতর করিবার উত্তম উপায় ।
প্রশ্ন - সদৃশবৃদ্ধি বা হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি বলিতে কি বুঝ ?
বা , হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধির কারণ কি ?
উত্তর : সদৃশ বিধান মতে সুনির্বাচিত ঔষধের স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগে পীড়া নিরুপদ্রবে দূরীভূত হইয়া যায় । কিন্তু যদি নির্বাচিত ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় প্রয়োগ হয় তখন যেহেতু রোগ শক্তির চাইতে ঔষধ শক্তি বেশী হওয়ায় সদৃশ বিধান মতে জীবনীশক্তি রোগশক্তির কবল হইতে মুক্ত হইলেও প্রবলতর ঔষধশক্তি স্বাভাবিক নিয়মে সদ্যমুক্ত জীবনীশক্তিকে আক্রমন করিয়া পীড়িত করে । জীবনীশক্তির এই পীড়িত লক্ষণ বিগত রোগের চেয়ে প্রবলতর , কারণ ইহা ঔষধজনিত । রোগী মনে করে যে তাহার মূল পীড়াটি বৃদ্ধি পাইয়াছে । কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে উহা কিঞ্চিত বর্ধিত আকারে ঔষধজনিত পীড়া ছাড়া আর কিছুই নয় । হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কারণে এই বৃদ্ধি ঘটে বলিয়া ইহাকে সদৃশবৃদ্ধি বা হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি বলে ।
প্রশ্ন - হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি কিসের উপর নির্ভরশীল ?
উত্তর ঃ হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি ঔষধের মাত্রা ও সাদৃশ্যের উপর নির্ভরশীল । তরুণ রোগে প্রয়োগকৃত সমলক্ষণবাহী ঔষধের মাত্রা যতই লঘু হইবে ঔষধজনিত রোগের বৃদ্ধি ততই অস্পষ্ট ও ক্ষণকাল স্থায়ী হইবে ।
প্রশ্ন - অচিররোগ ও চিররোগের চিকিৎসায় কখন হোমিওপ্যাধিক বৃদ্ধি ঘটে ?
বা , অচিররোগ ও চিররোগের ঔষধজনিত রোগ বৃদ্ধির পার্থক্য কি ?
বা , ব্যাধির কোন অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি দেখা দেয় ?
উত্তর : হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগের ফলে যে বৃদ্ধি ঘটে তাহা অচিররোগ বা তরুণপীড়া এবং চিররোগ উভয় ক্ষেত্রেই দৃষ্ট হয় , তবে এখানে সময় কালের পার্থক্য বিদ্যমান । অচিররোগের ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি অপেক্ষাকৃত সবল থাকে বিধায় ঔষধের সাথে প্রবল বিক্রিয়া করিয়া রোগের ক্ষণস্থায়ী বৃদ্ধি ঘটায় । এই বৃদ্ধি সাধারণত কয়েকঘন্টা মাত্র স্থায়ী হয় । ঔষধের প্রাথমিক ক্রিয়ার একঘন্টা বা কয়েকঘন্টা পর্যন্ত মনে হয় যেন রোগীর মূলপীড়াটির বৃদ্ধি হইয়াছে । কিন্তু তৎপরেই ঔষধের প্রাথমিক ক্রিয়ার শেষ মুহূর্তে রোগী সর্বতোভাবে আরাম বোধ করিতে থাকে এবং ঔষধের এই প্রাথমিক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ যে আরামবোধ তাহা কখনও কখনও ঔষধের ঐ ক্রিয়ার পরেও চলিতে থাকে । কিন্তু চিররোগের ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি অত্যন্ত নির্জীব থাকে বলিয়া ঔষধের সাথে প্রবল বিক্রিয়া করিতে অসমর্থ হয় , তাই রোগের ঔষধজনিত বৃদ্ধি ঘটে না । কিন্তু রোগ নির্মূল হওয়ায় ক্ষণকাল পূর্বে জীবনীশক্তি যখন যথেষ্ট শক্তিশালী হয় তখনই ঔষধের সাথে প্রবশ বিক্রিয়া করিয়া রোগের ক্ষণস্থায়ী বৃদ্ধি ঘটাইতে পারে । সুতরাং ঔষধজনিত রোগবৃদ্ধি অচিররোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রথমাবস্থায় এবং চিররোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার শেষ মুহূর্তে দেখিতে পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন -০১.৭৮ । সদৃশ ঔষধ লঘু মাত্রায়ও সদৃশবৃদ্ধি ঘটাইতে সক্ষম কেন ?
উত্তর : হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রাকে কখনও এত ক্ষুদ্র করা যায় না । যাহা ক্ষণস্থায়ী জটিলতা শূন্য প্রাকৃতিক রোগকে পরাভূত , প্রশমিত , আরোগ্য বা ধ্বংস করিতে পারে । তাই সদৃশ ঔষধ লঘু মাত্রায়ও সদৃশবৃদ্ধি ঘটাইতে সক্ষম ।
প্রশ্ন - হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি ও রোগজ বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধিও রোগজবৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করা হইল ।
১ ) হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি বা ঔষসজনিত বৃদ্ধি ক্ষণস্থায়ী । কারণ অধিকতর শক্তিশালী ভোলশক্তি প্রাকৃতিক পীড়াকে ধ্বংসকরার সাথে সাথেই প্রচণ্ড পরানে জীবনী শক্তিকে আক্রমন করিয়া থাকে । তবে যাত্রা ক্ষুদ্র বলিয়া অধিককাল স্থায়ী হয় এবং ঐ বৃদ্ধি অপসারণের জন্য কোন ঔষধেরও না । জীবনীশক্তি ঔষধজনিত কৃত্রিম রোগের কবল হইতে বিনা এবসেই যুক্তি লাভ করে । কিন্তু রোগ বৃদ্ধি তাহা নহে । রোগঞ্জ বৃদ্ধি দীর্ঘ মেয়াদী , মূল রোগের বৃদ্ধি মিনা চেরোগ না এবং তরুণ রোগে পথ্য নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশনায় থাগিতে পারে । মূল প্রাকৃতিক রোগবৃদ্ধি চলাকালে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হইতে থাকে ।
২ ) হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধিতে রোগীর মানসিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত শান্ত ও সুস্থির থাকে । কিন্তু রোগজ বৃদ্ধিতে রোগীর আচার আচরণে , চোখে মুখে ও ভাষ ভঙ্গিতে একটা অবস্থা দেখা দেয় ।
৩ ) হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধিতে রোগীর আভ্যন্তরীক লক্ষণের উপশম এবং বাহ্যিক লক্ষণের বৃদ্ধি হয় । অথচ রোগজ বৃদ্ধিতে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় লম্বণের বৃদ্ধি ঘটে ।
৪ ) হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধির পরিনামে রোগীয় জীবনীশক্তির উন্নতি হয় । অথচ রোগজ বৃদ্ধিতে জীবনীশক্তি ক্রমেই ধ্বংস ও অবনতি প্রাপ্ত হয় ।
প্রশ্নঃ- পীড়ার হ্রাসবৃদ্ধি নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে হ্যানিমান কি বলিয়াছেন , সংক্ষেপে বর্ণ না কর।
উত্তরঃ পীড়ার হ্রাস ঘটিবে এই উদ্দেশ্যেই রোগীকে ঔষধ সেবন করানো হয় । সামান্য হ্রাসবৃদ্ধি প্রত্যঙ্গ করা প্রত্যেকের পক্ষে কঠিন হইলেও তাহা রোগীর মানসিক অবস্থা ও গতিভঙ্গী হইতে নিশ্চিত ভাবে শেখা যায় । রোগের প্রকোপ করিতে থাকিলে রোগী মানসিক ভাবে আরামবোধ করে এবং তাহার হাব ভাব হইতে তাহা বোধগম্য হয় । রোগীর অস্থিরতা ও অধিক হতাশা তার রোগ লক্ষণ বৃদ্ধির পরিচায়ক । তবে মনে রাখিতে হইবে আরোগ্যকারী ঔষধ সেবনেও পীড়ার কিছুটা বৃদ্ধি ঘটা স্বাভাবিক ও সঙ্গত । কিন্তু তাহা ক্ষণস্থায়ী এবং তাহা ঔষধজনিত বৃদ্ধি । ক্ষণিকের এই ঔষধজনিত বৃদ্ধি ঔষধের ন্যূনতম পরিমানের কারণে অচিরেই নিস্তেজ হইয়া যায় । তাই ঔষধজনিত বৃদ্ধিকালে রোগী ভিতর হইতে সুস্থ বোধ করিতে থাকে । কিন্তু সঠিক ঔষধ প্রযুক্ত না হইলে যে বৃদ্ধি ঘটে তাহা মূল রোগের বৃদ্ধি বলিয়া গণ্য হয় এবং তাহাতে রোগীর অবস্থা আরও শোচনীয় হইয়া পড়ে । আবার ইহাও মনে রাখিতে হইবে প্রতিকারক ঔষধের অতিরিক্ত পরিমান ও মাত্রার কারণে অধিক বৃদ্ধি রোগীর পক্ষে ক্ষতিকর এবং মারাত্মক হওয়ার সম্ভবনা ।
প্রশ্ন - রোগী যদি রোগের হ্রাসবৃদ্ধি সম্বন্ধে কিছু বলিতে না পারে তখন চিকিৎসকের কি করা উচিত ?
উত্তর : অনেক সময় দেখা যায় পীড়ার হ্রাসবৃদ্ধি সম্বন্ধে রোগী কিছুই উপলব্ধি করিতে পারে না বা প্রকাশও করিতে পারে না । অনেকে ইচ্ছা করিয়াও সুস্থ আছে এমন কথা বলিতে চায় না । এই সকল ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক অবস্থা এবং তাহার যাবতীয় কার্যকলাপ ও আচরণ দ্বারা উপশম বা বৃদ্ধির নিশ্চিত আভাষ পাওয়া যায় । রোগের সামান্য উপশম হইলেই রোগীর অধিকতর শান্ত ভাব , প্রফুলতা ও প্রসন্নতা প্রভৃতি স্বাভাবিক অবস্থার প্রত্যাবর্তন দেখা যাইবে । আবার রোগের সামান্য বৃদ্ধিতেই আমরা ইহার বিপরীত মানসিক অবস্থা অবলোকন করি । যদি রোগী হ্রাসবৃদ্ধি সম্বন্ধে কোন কথা বলিতে না পারে এই সকল ক্ষেত্রে রোগী বিবরণীতে পূর্বের যে সকল লক্ষণ লিপিবদ্ধ আছে তাহার প্রত্যেকটি লইয়া রোগীর সাথে আলাপ আলোচনা করিলে তাহারা বিবরণীতে লিখিত লক্ষণগুলির অতিরিক্ত কোন নূতন লক্ষণের কথা না বলে বা পুরাতন কোন লক্ষণের বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ না করে তবে রোগীর উপশম সম্বন্ধে চিকিৎসক নিশ্চিত হইতে পারেন । এই সব ক্ষেত্রে যদি রোগীর মন মেজাজের কোন অবনতি না ঘটে তবে বুঝিতে হইবে যে ঔষধ কাজ করিতেছে অথবা উপশমের জন্য যদি যথেষ্ট সময় এখনও না হইয়া থাকে তবে শীঘ্রই উপশম কার্য সম্পন্ন হইবে মনে করিতে হইবে । আর যদি রোগীর উপশমে অযথা বিলম্ব হয় তবে বুঝিতে হইবে রোগীর কোন পারিপার্শ্বিক কারণ বা কোন ভ্রান্ত আচরণেই উপশমে বিঘ্ন ঘটাইতেছে ।
প্রশ্ন - রোগলক্ষণের হ্রাসবৃদ্ধির আভাষ কিরূপে প্রকাশ পায় ?
বা , কিভাবে চিকিৎসক পীড়ার হ্রাসবৃদ্ধির পরিচয় পান ?
উত্তর : সকল রোগে বিশেষ করিয়া তরুণ পীড়ায় পীড়ার হ্রাসবৃদ্ধির চিহ্নগুলি সকলে ধরিতে পারে না । কিন্তু রোগীর মানসিক অবস্থা এবং তাহার যাবতীয় কার্যকলাপ ও আচরণ হইতেই পীড়ার বৃদ্ধি বা উপশমের নিশ্চিত আভাস পাওয়া যায় । রোগের সামান্য উপশম হইলেই রোগীর অধিকতর স্বস্তি , অধিকতর শান্তভাব , প্রফুল্লভাব ও প্রসন্নতা প্রভৃতি স্বাভাবিক অবস্থার প্রত্যাবর্তন দেখিতে পাই । অন্যদিকে পীড়ার বৃদ্ধি ঘটিলে উহার বিপরীত অবস্থা প্রকাশ পায় । বৃদ্ধি অবস্থায় রোগীর মানসিক অবস্থা , কাতরভাব , আলাপ , ব্যবহার , আচরণ ও ভঙ্গীতে এক প্রকার অস্বাচ্ছন্দতা , অসহায় ও শোচনীয় অবস্থা সহজেই চিকিৎসকের চোখে ধরা পড়ে কিন্তু ভাষায় ইহা বর্ণনা করা যায় না ।
প্রশ্ন - পীড়ার বৃদ্ধি বা উপশম হওয়া সম্বন্ধে কখন চিকিৎসকের কোন সংশয় থাকেনা ?
উত্তর : রোগীদের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছেন যাহারা পীড়ার উপশম বা বৃদ্ধি , সঠিক বিবরণাদিতে অসমর্থ বা তাহা স্বীকার করিতে চাহেন না । এই সকল ক্ষেত্রে রোগীর অধিকতর স্বস্তি , শান্তভাব , প্রফুল্লভাব ও প্রসন্নতা দেখিলে পীড়ার উপশম হইয়াছে বলিয়া নিঃসংশয় হওয়া যায় । অপর পক্ষে রোগের সামান্য বৃদ্ধিতেই ইহার বিপরীত মানসিক অবস্থা ও আচরণাদি দেখা যায় । চিকিৎসক সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগের পর যদি কোন নূতন লক্ষণের আবির্ভাব দেখেন তাহা হইলে পীড়ার বৃদ্ধি এবং নূতন কোন লক্ষণের বিকাশ ছাড়াই মূল লক্ষণ হ্রাস পাইলে পীড়ার উপশম সম্বন্ধে চিকিৎসকের সকল সন্দেহ বিদূরীত হইবে ।
প্রশ্ন - সম্পূর্ণ আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইতে হইতে হঠাৎ উপশম ব্যাহত হইলে কি করিতে হইবে ?
উত্তর : ঔষধ প্রয়োগের পর আপাত দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইতে হইতে হঠাৎ উপশম ব্যাহত হইলে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ না করিয়া ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করিতে হইবে । কারণ উন্নতির লক্ষণাদি চক্রাকারে আবর্তিত হয় । তাই কিছুকাল অপেক্ষা করিলে উন্নতির লক্ষণগুলি আপনা হইতে পুনরায় দেখা দিবে ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমূহের উপশম সত্বেও রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করিলে কি করিতে হইবে ?
উত্তর : লক্ষণসমূহ একদিকে যেমন রোগের প্রতিচ্ছবি অন্যদিকে ইহা ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি । লক্ষণ দূরীভুত হইলে রোগের অবসান অবশ্যম্ভাবী । ঔষধ প্রয়োগের পর লক্ষণের উপশম সত্ত্বেও অনেক সময় রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না । এমতাবস্থায় বুঝিতে হইবে এই জাতীয় রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্যের অযোগ্য । কারণ তাহার কোন প্রধান অঙ্গ যেমন লিভার , কিডনী , হৃদপিণ্ড প্রভৃতি অকেজো হইয়াছে । এইরূপ ক্ষেত্রে উপযুক্ত উপশমদায়ক ঔষধ প্রদান ছাড়া অন্য কোন পথ নাই ।
প্রশ্ন - রোগের লক্ষণ চলিয়া যায় অথচ রোগী নিজে বিশেষ আরাম বোধ করে না — ইহাতে কি বুঝা যায় ?
উত্তর ঃ রোগের লক্ষণ চলিয়া যায় অথচ রোগী আরাম বোধ করে না এই ক্ষেত্রে বুঝিতে হইবে আরোগ্যের পথ গ্রহন করিবার ক্ষমতা জীবনী শক্তির নাই । এখানে সাময়িক উপশম ছাড়া গত্যন্তর নাই ।
প্রশ্ন - ঔষধ দেওয়ার পর নুতন লক্ষণ উপস্থিত হয়- ইহাতে কি বুঝা যায় ?
উত্তর ঃ ঔষধ দেওয়ার পর নূতন লক্ষণ উপস্থিত হয় ইহাতে নির্দেশিত হয় যে ঔষধ নির্বাচনে ভুল হইয়াছে ।
প্রশ্ন - বৃদ্ধির লক্ষণ প্রায় অনুপস্থিত তবুও রোগী ধীর গতিতে আরোগ্য লাভ করে - ইহাতে কি বুঝিবে ?
উত্তর : বৃদ্ধির লক্ষণ প্রায় অনুপস্থিত তবুও রোগী ধীর গতিতে আরোগ্য লাভ করে , ইহাই প্রকৃত পক্ষে আদর্শ আরোগ্য । কোন গভীর যান্ত্রিক পীড়া এই প্রকার রোগীতে থাকে না এবং ঔষধের যে শক্তি ও মাত্রা ব্যবহার করা হইয়াছে তাহা সঠিক ও উপযুক্ত হইয়াছে ।
সমাপ্ত
0 মন্তব্যসমূহ