হেমিপ্লেজিয়া বা অর্ধাঙ্গ পক্ষাঘাত, তৃতীয় অধ্যায়, চতুর্থ বর্ষ

 হেমিপ্লেজিয়া বা অর্ধাঙ্গ পক্ষাঘাত 
Hemiplegia







হেমিপ্লেজিয়া বা অর্ধাঙ্গ পক্ষাঘাতের সংজ্ঞা :-
যে পক্ষাঘাতে একদিকের হাত, পা, মুখ, জিহ্বা এবং শরীরের ডানদিক অপেক্ষা বামদিক অধিক আক্রান্ত হয়, মস্তিষ্কের একদিকের পীড়াবশতঃ তাহার বিপরীত দিকের পক্ষাঘাত হয় তাহাকে হেমিপ্লেজিয়া বা অর্ধাঙ্গ পক্ষাঘাত বলে।



কারণ তত্ত্ব হেমিপ্লেজিয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ-
১) এপোপ্লেক্সি অর্থাৎ মস্তিষ্কের ধমনীর অবরুদ্ধতা বশতঃ মস্তিষ্কের কোমলতা।
২) সেরিব্রাল হেমোরেজ।
৩) সেরিব্রাল এম্বোলিজম।
৪) সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস এবং সেরিব্রাল এ্যাবসেস।
৫) হাইপারটেনসিভ এনকেফালোপ্যাথি।
৬) মেরুমজ্জার প্রদাহ, প্রস্রাবের পীড়া, ক্যান্সার, আঘাত লাগা প্রভৃতি।
৭) মৃগী, মেনিনজাইটিস, সিফিলিস প্রভৃতির পীড়া।
৮) খালিপেটে অতিরিক্ত পরিশ্রম প্রভৃতি।



লক্ষণাবলী-
১) এই পীড়ায় সচরাচর একদিকের হাত, পা, চর্বনপেশী ও জিহ্বার পেশী আক্রান্ত হয়। ডান অপেক্ষা বাম অঙ্গেই সচরাচর অধিক আক্রান্ত হইতে দেখা যায়।
২) আক্রান্ত অঙ্গের সঞ্চালন ক্রিয়া রহিত হয় বা স্পর্শ, তাপ, ব্যথা প্রভৃতি অনুভূতিগুলি আংশিক বা সম্পূর্ণ লোপ পায়।
৩) পক্ষাঘাতগ্রস্ত দিকের গাল শিথিল হয়। আক্রান্ত অঙ্গের দিকের মুখের কোণ বাঁকিয়া যায়।
৪) জিহ্বা বাহির করিলে আক্রান্ত দিকে বাঁকিয়া পড়ে। কথা জড়াইয়া যায়।
৫) স্মরণশক্তি বিলুপ্ত হয়, সামান্যতেই চোখে পানি আসে।
৬) ক্রমে ক্রমে আক্রান্ত অঙ্গ, হাত, পা শুষ্ক হইতে থাকে, গাঁত্রতাপ কমিয়া যায়।



ভাবীফল- ইহার ভাবীফল শুভ নহে। সচরাচর ইহা আরোগ্য হয় না। ইহা একটি মারাত্মক ধরণের পীড়া। ঔষধ প্রয়োগে ৮/১০ বৎসর রোগীকে জীবিত রাখা যায়। তারপর অনেকদিন ভুগিতে ভূগিতে রোগী মৃত্যুবরণ করে।



স্থিতিকাল- পীড়া দেখা দেওয়ার পর হইতে রোগী আজীবন এই পীড়ায় ভুগিয়া মৃত্যুবরণ করে।





হেমিপ্লেজিয়া ও প্যারাপ্লেজিয়ার তুলনা:
হেমিপ্লেজিয়ায় একদিকের হাত, পা, চক্ষু প্রভৃতি আক্রান্ত হয়। ফলে দেহের অর্ধেক অংশের সঞ্চালন ক্রিয়া ও বোধশক্তি নষ্ট হয়, স্পর্শ, তাপ, ব্যথা বেদনা প্রভৃতি অনুভূতি আংশিক বা সম্পূর্ণ লোপ পায়। অন্যদিকে প্যারাপ্লেজিয়ায় দুই পা বা নিম্নাঙ্গ আক্রান্ত হয়। ফলে নিম্নাঙ্গের সঞ্চালন ক্রিয়া ও বোধশক্তি নষ্ট হয়, স্পর্শ তাপ, বেদনা প্রভৃতি অনুভূতিগুলি আংশিক বা সম্পূর্ণ লোপ পায়। প্যারাপ্লেজিয়ায় পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যায়, মূত্রথলীতে প্রস্রাব ভর্তি হইয়া ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হইতে থাকে। কিন্তু হেমিপ্লেজিয়ায় তাহা হয় না।



চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- 
ধাতুগত লক্ষণের সহিত মিলাইয়া ঔষধ সেবন করিলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগী আরোগ্য হইয়। যার। সব সময় রোগীর কোষ্ঠ এবং প্রস্রাব পরিষ্কার রাখিতে হইবে। আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক বা বৈদ্যুতিক সেঁক অনেক সময় দরকার হয়। সর্বদা পুষ্টিকর খাদ্য দ্রব্যের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ-

এলুমিনা- মেরুদণ্ডের পীড়া হইতে এই রোগ সৃষ্টি হয়, পদতলের চৈতন্য শক্তি বিলুপ্ত হয়। চোখ বন্ধ করিয়া রোগী এক পাও চলিতে পারে না। রাত্রিকালে চলিতে অক্ষম।

ক্যানাবিস ইণ্ডিকা- পক্ষাঘাত, সেই সাথে আক্রান্ত অঙ্গে ঝিনঝিনি অনুভব। ডানহাত এবং পদদ্বয়ের কম্পন। কথা বলিতে বলিতে খেই হারাইয়া ফেলে। পিঠে বেদনা বোধ। বসিয়া থাকিলে বেদনার বৃদ্ধি। সময় ও স্থানের দূরত্ব সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা।

হায়োসিয়ামস- কোন কঠিন পীড়ার পর কোন অঙ্গের বা বিশেষ পেশীর পক্ষাঘাত। সেই সাথে সেই অঙ্গে বা পেশীতে স্পন্দন এবং হ্যাচকা টানের ভাব। স্প্যাজম হইবার পর প্যারালাইসিস এজিট্যান্স। হাতের এবং বাহুর কম্পন, হাত পা ঠাণ্ডা বোধ।

কস্টিকাম- দেহাংশিক বিশেষ করিয়া শরীরের ডানদিকেই ইহা সমধিক ক্রিয়া প্রকাশ করে এবং শীতের দিনের শুষ্ক ঠাণ্ডা আবহাওয়া লাগার ফলেই হইয়া থাকে। আকস্মিক এবং ধীরগতিযুক্ত উভয়বিধ পক্ষাঘাত। অক্ষিপত্র, জিহ্বা ও ওষ্ঠের পক্ষাঘাত, রোগী কথা বলিতে, গিলিতে পারে না। পক্ষাঘাতের সহিত দৃষ্টি শক্তির ক্ষীণতা। পুনঃপুঃ নিষ্ফল মূত্রবেগ।

স্ট্যানাম- বামদিকের পক্ষাঘাত। হস্তমৈথুন, মানসিক আবেগ, ক্রিমি বা আক্ষেপ হেতু পীড়া। বাম অঙ্গ বেশী আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হাত বা রোগীর বক্ষস্থল যেন ভারী বোধ হয়। আক্রান্ত অঙ্গ সর্বদাই ঘামে ভিজা থাকে।

ইহা ছাড়া লক্ষণানুয়ায়ী এই পীড়ায় এনাকার্ডিয়াম, আর্ণিকা, বেলেডোনা, চায়না, আর্জেন্ট নাইট, ল্যাকেসিস, ডালকামারা, রাসটক্স, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া, কেলি কার্ব প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহৃত হয়।






 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)