রেপার্টরীর ইতিহাস, দ্বিতীয় অধ্যায় - ৪র্থ বর্ষ

 দ্বিতীয় অধ্যায় - ৪র্থ বর্ষ

রেপার্টরীর ইতিহাস



প্রশ্ন- রেপার্টরীর ইতিহাস সম্বন্ধে যাহা জান সংক্ষেপে লিখ ।

উত্তর ঃ জার্মানীর কৃতি সন্তান ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমান কর্তৃক সদৃশ বিধান বা হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর হইতে বহু ঔষধ সুস্থ দেহে পরীক্ষা করিয়া উহার সমুদয় লক্ষণরাজি একটি পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেন। সুস্থ দেহে পরীক্ষিত ঔষধের লক্ষণসমূহ হ্যানিমান তাহার ছয় খন্ডে বিভক্ত “মেটিরিয়া মেডিকা পিউরা" নামক বিরাট গ্রন্থে “চিররোগ চিকিৎসা” নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু ইহা এত বিশাল হইয়া পড়িল যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীর বিশেষ বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করা প্রায় দুরুহ ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইল। কারণ বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত বিরাট গ্রন্থদ্বয় হইতে প্রয়োজনীয় লক্ষণ খুঁজিয়া বাহির করা বা ঐ গ্রন্থদ্বয় মুখস্ত রাখা কোন চিকিৎসকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

ডাঃ হ্যানিমান বহু চিন্তার পর এক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করিলেন। উক্ত অসুবিধা দূরীভূত করার জন্য তিনি ঔষধসমূহের প্রধান লক্ষণাদির সমন্বয়ে একটি লক্ষণসূচী লিপিবদ্ধ করেন এবং উহাকে রেপার্টরী নামে অভিহিত করেন। তাঁহার হস্ত লিখিত রেপার্টরীর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪২৩৯। প্রথমে ডাঃ হ্যানিমান তাঁহার ছাত্র ডাঃ গ্রস (Dr. Gross) এর দ্বারা অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আকারের দুই খন্ডে বিভক্ত একখানা রেপার্টরী লেখান। ইহা হস্তলিখিত এবং স্বয়ং হ্যানিমান কর্তৃক নির্দেশিত। অতঃপর হ্যানিম্যানের শিষ্য ডাঃ রাকার্ট (Dr. Ruckert) এবং হ্যানিমানের নিজ তত্ত্বাবধানে Repertory for Chronic Diseases - রেপাটরি অর কনিক ডিজিজ-  (দীর্ঘ স্থায়ী রোগের জন্য রেপাটরি) নামক রেপার্টরী সম্পাদন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অদ্যাবধি উপরোক্ত গ্রন্থগুলি মুদ্রিত হয় নাই।

একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে ডাঃ হ্যানিমানই রেপার্টরীর জনক, যদিও তাহা মুদ্রিত হয় নাই। ১৮৩২ সালে ডাঃ বোনিং হোসেন সর্বপ্রথম মুদ্রিত অবস্থায় (বোযোনিংহাউজেনের বৈশিষ্ট্য্রিএবং পাটরি) প্রকাশ করিয়া প্রথম রেপার্টরী প্রকাশের কৃতিত্ব অর্জন করেন। তারপর ১৮৩৮ সালে ডাঃ হেরিং ইংরেজী ভাষায় তাঁহার রেপার্টরী লিখেন। বিভিন্ন লেখকের প্রকাশিত অপ্রকাশিত রেপার্টরীর সাহায্যে ১৮৮০ সালে ডাঃ লিপে অত্যাধুনিক রেপার্টরী লিখেন। তারপর বিজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ কেন্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির জটিলতা দূর করিয়া ১৮৭৭ সালে তাঁহার বিখ্যাত Kents Repertory সংকলন করেন, যাহা আজও বিশ্বের হোমিওপ্যাথদের নিকট অপ্রতিদ্বন্দী হিসাবে সমাদৃত। মেটিরিয়া মেডিকার সাথে সংযুক্ত প্রথম রেপার্টরী লেখার গৌরব অর্জন করেন ডাঃ বোরিক। তিনিই সর্বপ্রথম ১৯২৭ সালে তাঁহার মেটিরিয়া মেডিকার সাথে যুক্ত করিয়া রেপার্টরী প্রকাশ করেন।




প্রশ্ন- রেপার্টরী প্রণয়নে ডাঃ হ্যানিমানের অবদান বর্ণনা কর। 
বা, রেপার্টরীর উপর হ্যানিমানের কার্য সম্পর্কে যাহা জান লিখ।

উত্তর : ডাঃ হ্যানিমান কর্তৃক হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর হইতে অসংখ্য ঔষধ পরীক্ষিত হয় এবং পরীক্ষিত ঔষধাবলী সম্বলিত মেটিরিয়া মেডিকার আকারও বৃদ্ধি পাইয়া চলিল। তাঁহার রচিত “মেটিরিয়া মেডিকা পিউরা” গ্রন্থ ৬ খন্ডে বিভক্ত এবং ইহা এত বৃহৎ যে ইহার ঔষধসমূহের অজস্র লক্ষণাবলী মুখস্ত রাখা এক অসম্ভব ব্যাপার। কাজেই চিকিৎসাক্ষেত্রে কোন রোগীর বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচনে জটিলতা দেখা দিল। এই জটিলতা দূরীকরনার্থে হ্যানিমান বহু চিন্তার পর একটি সহজতর পদ্ধতি বাহির করেন। তিনি প্রধান প্রধান লক্ষণাবলীর সমন্বয়ে একটি লক্ষণসূচী লিপিবদ্ধ করেন এবং উহাকে রেপার্টরী নামে অভিহিত করেন। শেষ পর্যন্ত হ্যানিমান প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য যে হস্ত লিখিত রেপার্টরী ব্যবহার করিতেন তাহার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ইহার পর ডাঃ হ্যানিমান তাঁহার ছাত্র Dr. Gross এর দ্বারা হস্তলিখিত অপেক্ষাকৃত ব্যাপক ধরণের দুইখন্ডে বিভক্ত একটি রেপার্টরী লিখান। তৎপর ডাঃ হ্যানিমানের শিষ্য Dr. Ruckert এবং হ্যানিমানের নিজ তত্ত্বাবধানে Repertory for Chronic Diseases নামক রেপার্টরী সম্পাদন করান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যাঁহাদের চেষ্টায় হোমিওপ্যাথি এ বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে এবং যাহাদের পুস্তক সর্বকালের চিকিৎসকদের পথ নির্দেশক, তাঁহাদের রেপার্টরী সমূহ আজও মুদ্রিত হয় নাই। উপরোল্লিখিত রেপার্টরী সমূহ পশ্চিম জার্মানীর Stuttgant এ ডাঃ হেল এর জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
 


প্রশ্ন-  “ডাঃ হ্যানিমানই রেপার্টরীর অনক”- আলোচনা কর।

উত্তর ঃ একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে ডাঃ হ্যানিমানই রেপার্টরীর জনক। যদিও উক্ত রেপার্টরী মুদ্রিত হইয়া আলোর মুখ দেখিতে পায় নাই। তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন যে মেটিরিয়া মেডিকা নামক বিশাল গ্রন্থের ঔষধের লক্ষণসমূহ মুখস্ত রাখা অসম্ভব ব্যাপার। কাজেই চিকিৎসাক্ষেত্রে কোন রোগীর বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচনে সৃষ্ট জটিলতা দূরীকরণের জন্য হ্যানিমান একটি সহজতর পদ্ধতি বাহির করেন। তিনি প্রধান প্রধান লক্ষণাবলীর সমন্বয়ে একটি লক্ষণসূচী লিপিবদ্ধ করেন এবং এই সূচীপত্রই (Index) রেপার্টরী নামে খ্যাত। যদিও হস্তলিখিত ঐ রেপার্টরী অদ্যাবধি মুদ্রিত হয় নাই, তবুও হ্যানিমানই সর্বপ্রথম রেপার্টরী প্রণয়ন করেন। তাই বলা যায় ডাঃ হ্যানিমানই রেপার্টরীর জনক।




প্রশ্ন- প্রথম রচিত হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর নাম কি? এবং ইহার ভূমিকা কে লিখিয়াছিলেন?

উত্তর : প্রথম হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর পূর্ণ নাম- “Therapeutic Pocket book for Homoeopathic Physicians to use at the bed side and in the study of Materia Medica". ডাঃ হ্যানিমান নিজে ইহার ভূমিকা লিখিয়াছিলেন।




প্রশ্ন- কাহার লিখিত রেপার্টরী কোন ভাষায় ও কোন সময়ে সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয়? উক্ত রেপার্টরীর নাম কি?

উত্তর : ডাঃ বোনিং হোসেনের লিখিত রেপার্টরী "Boenning hausen Characteristics and Repertory" জার্মান ভাষায় ১৮৩২ সালে সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয়।




প্রশ্ন- কখন কাহার দ্বারা ইংরেজী ভাষায় প্রথম রেপার্টরীর প্রকাশিত হয়?

উত্তর : ১৮৩৮ সালে ডাঃ সি. হেরিং কর্তৃক সর্ব প্রথম ইংরেজী ভাষায় রেপার্টরী প্রকাশিত হয়।




প্রশ্ন- কোন্ রেপার্টরী ডাঃ হ্যানিমান কর্তৃক অনুমোদিত? উক্ত রেপার্টরীর বৈশিষ্ট্য কি? 


উত্তর ঃ ডাঃ বোনিং হোসেনের রেপার্টরী জার্মান ভাষায় মুদ্রিত হয় এবং ডাঃ হ্যানিমান ইহাকে অনুমোদন করেন। ইহার বৈশিষ্ট্য এই যে, এই গ্রন্থে সাধারণ লক্ষণ সমষ্টির উপর গুরুত্ব দিয়া ইহাকে ব্যাপকভাবে সাজানো হইয়াছে। এই রেপার্টরীর লক্ষণসমূহ অতি সহজে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বাহির করা যায়। 



প্রশ্ন-২.৮। কাহার রচিত রেপার্টরী আদর্শ স্থানীয় এবং আজ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার?

উত্তর ঃ হোমিওপ্যাথিতে আজ পর্যন্ত বহু রেপার্টরী লেখা হইয়াছে যাহার সংখ্যা প্রায় দুইশত। কিন্তু কোন রেপার্টরীই চিকিৎসকদের মন জয় করিতে পারে নাই। শুধু ডাঃ কেন্টের রেপার্টরীই ইহার ব্যতিক্রম। ১৮৭৭ সালে ডাঃ কেন্ট যে রেপার্টরী প্রণয়ন করেন তাহাই আদর্শ স্থানীয় এবং আজও সকল হোমিও চিকিৎসকের জন্য আলোর দিশারী এবং শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।



প্রশ্ন- মেটিরিয়া মেডিকার সংগে যুক্ত রেপার্টরী কে সর্বপ্রথম লিখেন? উক্ত রেপার্টরীর বৈশিষ্ট্য কি?

উত্তর : ডাঃ উইলিয়াম বোরিক ১৯২৭ সালে প্রথম মেটিরিয়া মেডিকার সঙ্গে যুক্ত করিয়া রেপার্টরী প্রকাশ করেন। বর্তমানে বাজারে যত রেপার্টরী প্রচলিত আছে উহারা এত বৃহৎ আকারের যে তাহা বহন করিয়া চলা কষ্টকর। একমাত্র ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীই সহজে বহন করা যায়। তাহা ছাড়া মেটিরিয়া মেডিকার সাথে রেপার্টরী যুক্ত থাকায় চিকিৎসকদের পক্ষে উভয়ের পর্যালোচনা করিতে সুবিধা হয়। এগুলি বোরিক রেপার্টরীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।




সমাপ্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ