কুপ্রাম মেটালিকাম, CUPRUM METALLICUM - মেটেরিয়া মেডিকা- চতুর্থ বর্ষ,

কুপ্রাম মেটালিকাম
CUPRUM METALLICUM







রাসায়নিক চিহ্ন:- cu.

প্রতিশব্দ:- কপার, কুপ্রম, মেটালিক কপার, কুপ্রিয়াম ফাইলাম, কপার।

ফরমুলা:- বিচূর্ণ ৭। 

উৎস:- কপার বা তামা হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। কপার একটি ধাতব পদার্থ। খনি হইতে ইহা পাওয়া যায় ।

ঔষধ প্রস্তুতি:- বিশুদ্ধ তামা হইতে প্রস্তুত হইয়া থাকে। বিশুদ্ধ তামার মিহি চূর্ণ দুগ্ধ শর্করা সহযোগে বিচূর্ণ ঔষধ প্রস্তুত হয়। পানি বা সুরাসারে ইহা দ্রবণীয় নয়। ফার্মাকোপীয়ার নিয়ামানুসারে ইহার উচ্চক্রম তরলাকারে প্রস্তুত হয়।
 
প্রুভার:- ডাঃ হ্যানিমান ইহা প্রভ করেন।

ক্রিয়াস্থান:- ইহা পরিপাক যন্ত্র, লিভার, কিডনী, সেরিব্রো স্পাইন্যাল সিষ্টেম, নিউমোগ্যাটিক নার্ভ ও সঞ্চালনকারী যন্ত্রের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে। শৈষ্মিক ঝিলীর উপরও ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করে।
 
মানসিক লক্ষণ:-
১) রোগী হিংসুটে এবং বিষণ্ন। 
২) মানসিক অস্থিরতা।
৩) ইহার বয়স্ক রোগীরা শিশুর ন্যায় আচরণ করে।
৪) কোন কিছু উত্তর দেওয়ার পূর্ব্বে বহুক্ষণ চিন্তা করে।
৫) উন্মাদ, বিকারে ভীষণ চীৎকার করে। 

চরিত্রগত  লক্ষণ:-
১) আক্ষেপযুক্ত রোগ সমূহ, খিল ধরা, তড়কা। হাত ও পায়ের অঙ্গুলিতে আক্ষেপ ও খিলধরা আরম্ভ হয়। তীব্র সংকোচন উৎপাদক এবং কিছুকাল স্থগিত থাকিয়া উদ্ভুত বেদনা।
২) কলেরায়- পায়ের ডিমে ও পেটে অধিক খিলধরা।
৩) অল্পক্ষণ স্থায়ী আক্ষেপ, হাতের ও পায়ের আঙ্গুল হইতে খেঁচুনি আরম্ভ হইয়া সমস্ত শরীরে বিস্তৃত হয়। গর্ভাবস্থায় আক্ষেপ, প্রসব কালে আক্ষেপ ও সেঁচুনি।
৪) তড়কায় মুখ নীল বর্ণ হয়, বুড়ো আঙ্গুল হাতের মুঠার ভিতর রাখে।
৫) চর্ম পীড়ায় উদ্ভেদ বসিয়া গিয়া তড়কা, বমি, আক্ষেপ, মস্তিষ্ক লক্ষণ । 
৬) মুখে কোনও ধাতুর, তামার, কিম্বা মিষ্ট বস্তুর আস্বাদ, মুখ দিয়া লালা পড়ে।
৭) মৃগী-হাঁটু হইতে অরা (awra) আরম্ভ হইয়া উর্ধে উত্থিত হয়।
৮) জিহ্বার পক্ষাঘাত, তজ্জন্য অস্পষ্ট কথা বলে । 
৯) শীতার্ততা ও পরিবর্তনশীলতা। রোগী সর্বদা গরম কাপড়ের আচ্ছাদন চায়। 
১০) শীতল জলের স্পৃহা এবং উহা পান করিলে হিক্কা, বমনেচ্ছা ও কাশির উপশম।
১১) জল পানের সময় গড় গড় শব্দ করিয়া তরল পদার্থ নীচে নামা।
১২) হুপিং কাশি, কাশির ফিট অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে। দম বন্ধের মত হয়, মুখ নীলবর্ণ হইয়া যায়, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শক্ত ও আড়ষ্ট হয়, অজ্ঞানের মত হয়। জ্ঞান হইলে হইলেই বমি হয় ।

আক্ষেপ ও তড়কার লক্ষণ:- তড়কায় কুপ্রামের ক্রিয়া অসীম। আক্ষেপ লক্ষণই ইহাতে প্রধান। কলেরা পীড়ায় অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করিয়াও যখন দেখা যাইবে হাতে পায়ে আক্ষেপ ও বেঁচুনি আরম্ভ হইয়াছে তখনই কুপ্রাম মেট প্রযোজ্য। মহাত্মা হ্যানিমান বলেন- কলেরায় যে স্থলে হিমাঙ্গ অবস্থা অধিক সেখানে ক্যাফর, যে স্থলে ভেদ ও বমন অধিক সেখানে ভিরেট্রাম এবং যে স্থলে আক্ষেপ বেশী সেখানে কুপ্রাম মেট কার্যকরী। ইহার আক্ষেপ প্রথমে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বাঁকিয়া হাতের তালুতে লাগিয়া যায় এবং পরে অন্য আঙ্গুলগুলি বাঁকিয়া ও হাত মুষ্টিবদ্ধ হইয়া যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ হইলে সেই সাথে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলিও তলার দিকে বাঁকিয়া যায়। শিশুদের তড়কায় শিশু ফিটের সময় হাত মুঠা করিয়া রাখে ও খেঁচিয়া ধরে এবং সেই সাথে মুখ নীলবর্ণ হয়। কিছু পান করিলে গলায় ফস ফস, গড় গড় শব্দ হয়, তখন কুপ্রাম উপকারী। হাম, বসন্ত বা অন্য কোন প্রকার উদ্ভেদ বসিয়া গিয়া সামান্য কিছু বাহির হইয়া মিলাইয়া যাইবার ফলে তড়কা, হঠাৎ পুঁজস্রাব বন্ধ হইয়া, ঠাণ্ডা জলে স্নান করিয়া, ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া ও প্রস্রাবের পরিমাণ কমিয়া গিয়া তড়কা, কৃমি জনিত তড়কা প্রভৃতিতে যদি খেঁচুনি হাত কিংবা পায়ের আঙ্গুল হইতে আরম্ভ হয় তখন কুপ্রাম অব্যর্থ ।
সিকেলিতেও আক্ষেপ আছে তবে প্রভেদ এই যে, কুপ্রামের আঙ্গুলগুলি বাঁকিয়া সামনের দিকে যায় ও মুঠা হইয়া যায়, আর সিকেলিতে আঙ্গুল গুলি প্রসারিত হইয়া ফাঁক হইয়া পড়ে এবং পাছের দিকে বাঁকিয়া যায়।
বেলেডোনা:- রোগীর মুখ লালবর্ণ হয়, গায়ের ঘাম, চক্ষু যেন টানিয়া থাকে ও মিট মিট করে, মাথা আগুনের ন্যায় গরম ও ধড়ফড়ে জ্বর থাকে। তড়কায় প্রথমাবস্থার ইহা উপকারী।

হায়োসিয়ামস:- ইহাতে প্রথমে একহাতে খেঁচুনি, পরের বারে অন্য হাতে খেঁচুনি, এইভাবে পর পর আক্ষেপ হইতে থাকে। হাত কাঁপে ও হাত বাঁকিয়া যায়। মুখ দিয়া ফেনা নির্গত হয়, মাড়িতে হাত ও মুখের ভিতর আঙ্গুল দেয় । অতি কষ্টে খায়, ফিটের পর ঘুমাইয়া পড়ে।

ওপিয়াম:- মুখ ঘোর নীল বর্ণ ও ফোলা ফোলা, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয় হয়। ফিটের সময় খুব জোরে চীৎকার করিয়া কিংবা কাঁদিয়া উঠে। সমস্ত শরীর শক্ত হইয়া যায়। আঙ্গুল ফাঁক হইয়া থাকে। প্রসূতি যদি কোন কারণে ভয় পাইবার পর সন্তানের তড়কা হয়, তাহা হইলে ইহা উপকারী।

কলেরা লক্ষণ:- কুপ্রামের উদর সম্বন্ধীয় লক্ষণাবলীর মধ্যে কলেরায় চাল ধোয়ানি জলের মত বা কুমড়া পচানির ন্যায় অনবরত ভেন, বমন, গাত্রদাহ, অবিরাম পিপাসা, হৃৎপিণ্ডের ক্ষীণতা, নাড়ী লোপ। ভেদ বমির পরই শরীর ঠাণ্ডা হইয়া যায়। পাত্র চর্ম নীলবর্ণ, পায়ের ডিমে ও পাছায় খিল ধরিয়া সেখানকার মাংসপেশী গুলি যেন ডেলা বাঁধিয়া যায়। পেটে অত্যন্ত যন্ত্রণা হয়, শ্বাসকৃচ্ছ্রতা। কুপ্রামের আঙ্গুল মুঠা বাঁধিয়া যায়। আক্ষেপ প্রথমে হাত ও পায়ের আঙ্গুলে আরম্ভ হয় পরে সেখানে হইতে সারা দেহে হুড়াইয়া পড়ে। হিক্কার সঙ্গে আক্ষেপ, বমি ও ফাট বমি, বারংবার উদ্ধার, অত্যন্ত পেট ডাকা ও হিক্কার পর বমি থাকিলে কুপ্রামই উপযোগী।

কাশির লক্ষণ:- হুপিং কাশি বা আক্ষেপিক কাশিতেই কুপ্রাম মেট বিশেষ ফলদায়ক। এক সঙ্গে তিনবার করিয়া কাশি হয়। এইভাবে অনেকক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী কাশি। রোগীর যেন দম বন্ধ হইয়া যায়। কথা বলার শক্তি থাকে না, সেই সঙ্গে মুখ নীলবর্ণ ও শরীর যেন শক্ত কাট হইয়া যায়। হাত পা খেঁচিতে থাকে। সময়ে সময়ে কাশিয়া অজ্ঞানের মত হইয়া পড়ে। বমি হয়, ঠাণ্ডা জলপানে কাশি উপশম। কাশির বেগ শেষ হইয়া গেলে রোগীর শরীর ঠাণ্ডা হইয়া যায় । নিশ্চল ও স্থির হইয়া পড়িয়া থাকে এবং চক্ষু তারকা দুইটি উর্ধ্বদিকে নিমীলিত হইয়া পড়ে।

কণ্ঠনলীর আক্ষেপে লক্ষণ:- শিশুদিগের এই পীড়া অধিক হয় ও ইহা বড় কঠিন। এই পীড়ায় হঠাৎ কণ্ঠনালী বন্ধ হইয়া যায়, তাহাতে শিশু সর্ব শরীর নীলবর্ণ হয় ও পরক্ষণেই তাহার এত ঘন ঘন তড়কা হইতে আরম্ভ করে যে একটি ফিট কমিতে না কমিতে আর একটি ফিট আরম্ভ হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থায় সর্ব শরীরে আক্ষেপ ও তড়কা হইতে থাকে এবং শিশু যেন চুপসাইয়া যায়। অজীর্ণ কিংবা শিশু দত্ত নির্গমন কালীন থাইমস গ্রন্থির বৃদ্ধি তাহার রিফ্লেক্স ইরিটেশনই এই পীড়ার লক্ষণ।

স্ত্রী পীড়ায় লক্ষণ:- যে সকল স্ত্রীলোক বহু সন্তান প্রসব করিয়াছে কিংবা যাহারা স্বাস্থ্যহীন হইয়া পড়িয়াছে তাহাদের প্রসবের পর ব্যাঘাতে কুপ্রাম উপযোগী। প্রসব বেদনা আরম্ভ হইবার পূর্বে অন্ধকার দেখিতে থাকিলে তৎপর বেদনা আরম্ভ হইয়াই থামিয়া গেলে ও কনভালশান হইলে কুপ্রাম মেট ব্যবস্থের। প্রসবের পর ধনুষ্টংকার, প্রসব বেদনার সময় হাত পায়ের আঙ্গুলে ভয়ানক মিলধরা আরম্ভ হইয়া সমস্ত শরীরে ছড়াইয়া পড়ে, তলপেটে যন্ত্রণাদায়ক খিল ধরার জন্য প্রসবে ব্যাঘাত জন্মে। আক্ষেপে মুখমণ্ডল নীলবর্ণ ও হাত মুষ্টিবদ্ধ হইয়া যায় ।

বৃদ্ধি:- রাত্রিকালে, বমনের পর, অমাবস্যায়, চর্মরোগরুদ্ধ হইলে, স্পর্শে।

উপশম:- ঠাণ্ডা জলপানে, মর্মস্রাব কালে, ভেদ নির্গমনে।

অনুপূরক ঔষধ:- বেলেডোনা, আর্সেনিক, ভিরেট্রাম এলাম, ক্যাক্টেরিয়া কাৰ্ব্ব, পালসেটিলা ।
 
পরবর্তী ঔষধ:- পালসেটিলা, কষ্টিকাম, জিঙ্কা, আর্সেনিক, এপিস, বেলেডোনা।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ককুলাস, ইপিকাক, মার্কুরিয়াস, বেলেডোনা, ক্যাক্ষর, নাক্স, পালসেটিলা, ভিরেট্রাম, কোনিয়াম, হিপার, চায়না। 

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৪০ হইতে ৫০ দিন।

শত্তি বা ক্রম:- ৬ হইতে ৩০ শক্তি। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ