ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী - পঞ্চম অধ্যায় - চতুর্থ বর্ষ




 প্রশ্ন-  ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীর গঠন প্রণালী লিখ।


উত্তর : ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীতে সর্বমোট ২৫ টি শাখা আছে। প্রথমে মন দিয়া আরম্ভ করা হইয়াছে এবং সর্বশেষে হ্রাস বৃদ্ধি দিয়া শেষ করা হইয়াছে। ঔষধগুলির গুরুত্ব অনুসারে বাঁকা অক্ষরে ও সাধারণ অক্ষরে লেখা আছে। বাঁকা অক্ষরের মান অধিক এবং সাধারণ অক্ষরের মান সাধারণ। তাঁহার রেপার্টরীর শাখাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হইল ।
(১) মন- এই শাখায় মানসিক লক্ষণ প্রথমেই স্থান পাইয়াছে।
(২) মস্তক- এই শাখায় মস্তকের ব্যথা, বেদনা, অনুভূতি, শিরঃঘুর্নন সহ মন্ত কের অন্যান্য পীড়াও স্থান পাইয়াছে।
(৩) চক্ষু— চক্ষু সম্বন্ধীয় যাবতীয় উপসর্গ, দৃষ্টিশক্তি প্রভৃতি ইহাতে স্থান পাইয়াছে।
(৪) কর্ণ- কানের ব্যথা, বেদনা, শ্রবণ শক্তির বিভিন্ন উপসর্গ সহ কর্ণের যাবতীয় উপসর্গ এই শাখায় স্থান পাইয়াছে ।
(৫) নাসিকা- নাকের বেদনা, ঘ্রান, নাসিকার রক্তস্রাব প্রভৃতি দ্বারা এই শাখা গঠন করা হইয়াছে। 
(৬) মুখমন্ডল- মুখমন্ডলের বাহ্যিক অবস্থা, চেহারার বৈশিষ্ট্য, পরিবর্তন ও বিভিন্ন উপসর্গ এই শাখার স্থান পাইয়াছে ।
(৭) মুখগহ্বর- মুখগহ্বরের যাবতীয় রোগলক্ষণ ইহাতে স্থান পাইয়াছে। ওষ্ঠকে এই শাখায় অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে।
(৮) জিহ্বা- জিহ্বার বিভিন্ন উপসর্গ, আকার আকৃতি এই শাখায় স্থান পাইয়াছে।
(৯) স্বাদ- জিহ্বা হইতে পৃথকভাবে স্বাদকে এই শাখায় দেখানো হইয়াছে ।
(১০) মাড়ি— এই শাখায় মাড়ির বিভিন্ন উপসর্গ দেখানো হইয়াছে। তবে দাঁত এই শাখার অন্তর্ভুক্ত নহে ।
(১১) দাঁত- দাঁতের ব্যথা বেদনা, ক্ষয় প্রভৃতি এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।
(১২) গলা- গলনালী ও গলার যাবতীয় উপসর্গ এই শাখায় স্থান পাইয়াছে। 
(১৩) পাকস্থলী- পাকস্থলীর নানাবিধ পীড়া, উপসর্গ, খাদ্যে রুচি অরুচি, বমি সম্বন্ধীয় রুব্রিক ইহাতে স্থান পাইয়াছে।
(১৪) উদর- এই শাখায় উদর ও মল, গুহ্যদ্বার প্রভৃতি স্থান পাইয়াছে এবং উদর সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পীড়া লক্ষণ ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে । 
(১৫) মূত্রযন্ত্র- মূত্রযন্ত্রের বিভিন্ন পীড়া এই শাখায় অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে । 
(১৬) পুং জননেন্দ্রিয়- পুরুষের নানা প্রকার যৌনপীড়া, লিঙ্গ প্রভৃতি এই
শাখায় অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে।
(১৭) স্ত্রী জননেন্দ্রিয়- স্ত্রী জননেন্দ্রিয়কে পৃথক শাখায় বিভক্ত করিয়া ইহাতে সকল রতিজ রোগসহ, স্তন, গর্ভকালীন পীড়া, প্রসব বেদনা প্রভৃতি সন্নিবেশিত হইয়াছে।
(১৮) রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি- যাবতীয় রক্ত সঞ্চালনজনিত, রক্ত গঠিত পীড়া,
শিরা, ধমনী প্রভৃতির পীড়া এই শাখায় স্থান পাইয়াছে ।
(১৯) গতিবিধায়ক পদ্ধতি - গতিবিধায়ক বা লোকোমোটর সিস্টেমের আলোচনা এই শাখায় করা হইয়াছে।
(২০) শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতি- এই শাখায় গয়ার, কাশি, ফুসফুসের যাবতীয় উপসর্গ, শ্বাস প্রশ্বাসের বিভিন্ন অবস্থা, স্বরযন্ত্র, স্বরনালী প্রভৃতি স্থান পাইয়াছে ৷
(২১) চর্ম- চর্মের যাবতীয় বৈকল্য, চর্মরোগ প্রভৃতি এই শাখায় স্থান
পাইয়াছে।
(২২) জ্বর- বিভিন্ন জাতীয় জ্বর, সর্দিজ্বর, টাইফয়েড, সবিরাম, ম্যালেরিয়া, সান্নিপাতিক জ্বর প্রভৃতি বিষয়াদি ইহাতে অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে ।
(২৩) স্নায়বিক পদ্ধতি- স্নায়বিক প্রদাহ, বেদনা, খিঁচুনি, মেরুমজ্জার প্রদাহ, মৃগী, অবসন্নতা, নিদ্রা, স্বপ্ন প্রভৃতি এই শাখায় স্থান পাইয়াছে।
(২৪) সাধারণ- সাধারণ শাখাটি যদিও সংক্ষিপ্ত আকারের কিন্তু ইহাতে বহু প্রয়োজনীয় শিরোনাম যেমন- বিষাক্ততা, টিউমার, কর্নমূল প্রদাহ, গ্রন্থিস্ফীতি, আঘাতজনিত পীড়া, রোগ প্রতিষেধক প্রভৃতি স্থান পাইয়াছে ৷
(২৫) হ্রাস-বৃদ্ধি- বোরিক রেপার্টরীর সর্বশেষ শাখা হইল হ্রাস-বৃদ্ধি। ইহাতে প্রথমে বৃদ্ধি এবং পরে হ্রাস, হ্রাসবৃদ্ধির সময়কাল, অবস্থা প্রভৃতি দেখানো হইয়াছে। প্রশ্ন-৫.২। ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী কয়টি শাখায় বিভক্ত এবং প্রথম ও শেষ অধ্যায় কি?


ত্তর : ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী ২৫ টি শাখায় বিভক্ত। ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীর প্রথম অধ্যায় হইল মন এবং শেষ অধ্যায় হইল হ্রাসবৃদ্ধি ।

প্রশ্ন- ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীর ব্যবহার পদ্ধতি লিখ।
উত্তর ঃ ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী ব্যবহার করিতে হইলে প্রথমে রোগীর লক্ষণাবলী সংগ্রহ করিয়া রেপার্টরীর ভাষায় লক্ষণসমূহকে সজ্জিত করিতে হইবে। তারপর লক্ষণানুসারে রেপার্টরী হইতে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণের জন্য বিভিন্ন ঔষধ বাছিরা। নিতে হইবে। যেমন যেখানে শিরঃপীড়ার কারণ, প্রকার, কোন পার্শ্বে হয়, ব্যথার নমুনা এবং হ্রাসবৃদ্ধি ইত্যাদি রুব্রিক প্রয়োজন অনুযায়ী খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। উক্ত লক্ষণের পার্শ্বে আবশ্যকীয় ঔষধগুলির নাম দেওয়া আছে এবং গুরুত্ব অনুসারে অধিক মূল্যের ঔষধগুলি বাঁকা অক্ষরে এবং সাধারণ মূল্যের ঔষধগুলি সাধারণ অক্ষরে লিখিত আছে। বাঁকা অক্ষরের ঔষধগুলির আংকিক মান ২ এবং সাধারণ অক্ষরের ঔষধের মান ১ ধরিয়া প্রয়োজনীয় লক্ষণ অনুযায়ী রেপার্টরীতে লিখিত ঔষধগুলির নাম একটি পৃথক কাগজে লিখিয়া লইতে হইবে। এইভাবে প্রত্যেকটি লক্ষণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ লিখিয়া প্রত্যেকটি ঔষধের আংকিক মান পৃথক পৃথকভাবে যোগ করিতে হইবে। যে ঔষধের আংকিকমান সর্বাধিক হইবে উহাই রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচিত হইবে। এইভাবে বোরিকের রেপার্টরী ব্যবহার করা হয়।



প্রশ্ন- ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীর আকর্ষনীয় দিক বা ভাল লাগার কারণ কি?
বা, ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : হোমিও জগতে ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী এক বিরাট অবদান রাখিয়াছে। ইহা পৃথক কোন পুস্তক নয়, মেটিরিয়া মেডিকার সাথে যুক্ত করিয়াই তিনি রেপার্টরী প্রকাশ করিয়াছেন। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত এবং বিখ্যাত রেপার্টরীগুলির মধ্যে অধিকাংশই আকারে এত বৃহৎ যে তাহা বহন করা বা চিকিৎসকের সঙ্গে রাখা অসম্ভব। একমাত্র বোরিকের রেপার্টরীই সহজে বহনযোগ্য। ইহা ছাড়া রেপার্টরী মেটিরিয়া মেডিকার সাথে যুক্ত থাকায় চিকিৎসা বিষয়ক বিশেষ সুবিধা এবং জ্ঞান অর্জনেও সহায়ক। যেমন কোন রোগীর ঔষধ রেপার্টরী হইতে নির্বাচন করিয়া প্রয়োজনবোধে সাথে সাথে মেটিরিয়া মেডিকাতে মিলাইয়া দেখা সহজ সাধ্য। সাথে অন্যান্য লক্ষণগুলিও যাচাই করিয়া দেখিতে সুবিধা। ক্লিনিক্যাল শব্দ তিনি বেশী ব্যবহার করিয়াছেন। হ্যানিমান পদ্ধতিতে রেপার্টরী সাজানো হইয়াছে। অর্থাৎ আক্রান্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি ও সহযোগী লক্ষণাবলী গুরুত্ব অনুসারে সাজানো আছে। বর্ণনাও বিস্তারিত ও সুন্দর। চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে এই কারণেই বোরিকের রেপার্টরী সহায়ক এবং ইহাই এই রেপার্টরীর আকর্ষনীয় দিক।



প্রশ্ন- রেপার্টরীতে বোরিকের অবদান লিখ ।

উত্তর ঃ রেপার্টরীতে ডাঃ বোরিক অসামান্য অবদান রাখিয়া গিয়াছেন। তাঁহার লিখিত রেপার্টরী স্বতন্ত্র কোন গ্রন্থ নয়। ডাঃ বোরিক মেটিরিয়া মেডিকার সহিত যুক্তভাবে রেপার্টরী প্রকাশ করেন। বাজারে বহু বিখ্যাত রেপার্টরী প্রচলিত আছে, সেগুলি এত বৃহৎ যে তাহা বহন করিয়া চলা বা চিকিৎসকের সঙ্গে রাখা অসম্ভব ব্যাপার। একমাত্র বোরিকের রেপার্টরীই সহজে বহন করা যায়। তাহা ছাড়া মেটিরিয়া মেডিকার সাথে রেপার্টরী যুক্ত থাকায় কোন ঔষধ রেপার্টরী হইতে নির্বাচিত করিয়া সাথে সাথে মেটিরিয়া মেডিকাতে মিলাইয়া দেখাও সহজসাধ্য। সে সাথে অপরাপর লক্ষণগুলিও যাচাই করিয়া দেখা সম্ভব। ইহা ছাড়া বোরিকের রেপার্টরী হ্যানিমান পদ্ধতিতে সাজানো, অর্থাৎ আক্রান্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি, সহযোগী লক্ষণাবলী গুরুত্ব অনুযায়ী সাজানো আছে। শিরোনামগুলি যথাসাধ্য লক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া সাজানো হইয়াছে। পুস্তকের শেষে সূচীপত্র বর্ণমালার ক্রমে দেওয়া আছে, উক্ত সূচীপত্র ব্যবহার করিয়া প্রয়োজনীয় ঔষধও অতি সহজে পাওয়া যায়। এই সকল কারণে রেপার্টরীতে বোরিকের যথেষ্ট অবদান রহিয়াছে।



প্রশ্ন-  ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী চিকিৎসা বিষয়ক শব্দের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর ঃ ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী চিকিৎসা বিষয়ক শব্দের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তিনি মেটিরিয়া মেডিকা সংযুক্ত রেপার্টরীতে অসংখ্য চিকিৎসা বিষয়ক শব্দ (ক্লিনিক্যাল শব্দ) ব্যবহার করিয়াছেন যাহা অন্য কোন রেপার্টরীতে পাওয়া যায় না। মূলতঃ তার লিখিত রেপার্টরী হইল ক্লিনিক্যাল রেপার্টরী। অনেক চিকিৎসক এইসব ক্লিনিক্যাল শব্দের সাথে পরিচিত নন এবং তাঁহার রেপার্টরী পাঠ চিকিৎসক এই সকল নূতন শব্দের সাথে পরিচিত হন। ফলে চিকিৎসা বিষয়ক শব্দের জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং অনেক অজানা শব্দ চিকিৎসকের জ্ঞান ভান্ডারে রক্ষিত হয়। যেমন- বহুপাদ অর্বুদ, অরিঞ্জিকা, বিম্বিকা, শঙ্খাস্থি, অশ্মরী, বৃক্কক, ক্লোমগ্রন্থি, হনুস্তম্ভ, অনুকল্প রজঃ, উত্তুক গ্রন্থি, অনুজংঘাস্থি, কন্ধিকা, বিচর্চিকা, কিমি, ইন্দ্ৰবিধা, মোতিঝিরা, অহিপুতন, এডিসনাখ্য রোগ এই জাতীয় প্রচুর ক্লিনিক্যাল শব্দ আছে যাহার সাথে বহু চিকিৎসক পরিচিত নন। এই সকল শব্দগুলির অর্থ বাংলা মেডিকেল অভিধান হইতে জানিয়া নিয়া চিকিৎসক এইসকল চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞানার্জন করিতে পারেন। তাই বলা হয় ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী চিকিৎসা বিষয়ক শব্দের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।



প্রশ্ন-  ডাঃ বোরিকের রেপার্টরী ব্যবহারের অসুবিধা গুলি লিখ।

উত্তর : ডাঃ বোরিকের রেপার্টরীর যথেষ্ট ভাল দিক থাকিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইহা ব্যবহারের অসুবিধা দৃষ্ট হয়। সাধারণ চিকিৎসকদের জন্য ইহা ব্যবহার সহজসাধ্য নয়। কেননা রোগ সম্বন্ধে যদি চিকিৎসকদের সম্যক ধারনা না থাকে তবে ইহা সফলভাবে ব্যবহার সম্ভবপর নয়। রোগের মাধ্যমে রোগীর চারিত্রিক লক্ষণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করিতে হয়। তাহা ছাড়া রেপার্টরীতে সাধারণ লক্ষণের চাইতে চিকিৎসা বিষয়ক শব্দ (Medical term) অধিক ব্যবহার করা হইয়াছে যাহা সাধারণ চিকিৎসকের পক্ষে সহজ বোধগম্য নয়। ইহার রুব্রিকগুলির থেরাপিউটিক বিন্যাসও সব শাখায় একই পদ্ধতিতে করা হয় নাই। বিন্যাস একটু ভিন্নতর।



সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ