আর্ণিকা মন্টেনা - Arnica Mont
প্রস্তুতের ফরমূলা:-
এফ - ৩ , জার্মানী - এফ - ৪ ।
মণ্টের আবিষ্কার:-
ডাঃ হ্যানিমান প্রথম এই ঔষধ পরীক্ষা করেন ।
প্রতিশব্দ:-
ওলফ
বেন , লিওপার্ডস বেন , ক্যালথা আলপিনা , পর্বতের আর্ণিকা , সেলটিক নার্ড , ক্রাইসানথেমাম
ল্যাটিফলিয়াম ।
উৎস:-
এক
কথায় বলিতে গেলে ওলফ বেন নামক বৃক্ষই আর্ণিকার উৎস । বাংলাদেশের অর্জুন গাছকে ইহার
সহিত তুলনা করা যায় ।
গাছের বর্ণনা:-
পর্বতময়
অঞ্চলে এই বহুবর্ষজীবি গাছড়াসমূহ জন্মিয়া থাকে । পাতাগুলি দেড় হইতে ৩ ইঞ্চি লম্বা
। গাছের কাণ্ড ১০ হইতে ১২ ইঞ্চি লম্বা ও সোজা। এই সকল গাছে জুলাই ও আগষ্ট মাসে হলুদ
বর্ণের অনেক ফুল ফুটিয়া থাকে । শিকড়সহ সমগ্র , টাটকা গাছড়াটি ঔষধে ব্যবহৃত হয় ।
প্রাপ্তিস্থান:-
মধ্য
ইউরোপের শীতলতম স্থানে , রাশিয়া এবং সাইবেরিয়ায় এই সকল উদ্ভিদ জন্মিয় থাকে । যুক্তরাষ্ট্রের
উত্তর পশ্চিম অংশে ইহা দেখা যায় ।
প্রস্তুত
প্রণালী :-
সমগ্র গাছড়া , মূল , পত্র ও পুষ্পের রস হইতে সুরাসার সহযোগে মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয় । পরে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে ১x শক্তি প্রস্তুত করিতে ১ ভাগ অরিষ্ট , ২ভাগ পরিশ্রত পানি ও ৬ ভাগ সুরাসার , ৩x এবং উচ্চ শক্তিতে শুধুমাত্র পরিশ্রুত সুরাসার ব্যবহার করিয়া প্রস্তুত করা হয় ।
প্রধান ক্রিয়াস্থান:-
রক্তের
উপর আর্ণিকার বিশেষ কার্যকারিতা আছে । শিরামণ্ডলকে ইহা আক্রমণ করে এবং তাহার ফলে রক্ত
সঞ্চালনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে । আঘাত লাগা , কোন স্থান হইতে পড়িয়া যাওয়া , মচকাইয়া
যাওয়া প্রভৃতি কারণে ব্যথা বা পীড়া হইলে , বহুদিন পূর্বে আঘাত লাগা জন্য কোন পীড়া
হইলে এবং প্রহার জর্জরিতের ন্যায় শরীর । শাখাসমূহে বেদনায় আর্ণিকা ক্রিয়া করিয়া
থাকে ।
মানসিক লক্ষণ:-
১.
রোগী সর্বদাই বিষন্ন এবং একাকী থাকিতে চায় ।
২.
উত্তেজনা প্রবণ , বিষন্ন , দুখিত , ভয়পূর্ণ
নানা রূপ কল্পনা করে , বিশেষতঃ ভাবে যে তাহার কোন হৃদরোগ হইয়াছে অথবা পচনশীল ক্ষতরোগে
আক্রমণ করিয়াছে ।
৩.
বুক চাপা স্বপ্ন দেখে , ভয়ঙ্কর স্বপ্ন । কর্মমাক্ত
জল , চোর , দস্যু প্রভৃতির স্বপ্ন, রাত্রিকালে ভয় পায় ।
৪.
রোগী চায় না যে কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক ।
৫.
স্মৃতিলোপ , ভ্রান্তি ও মস্তিষ্কের গোলমাল
, অচৈতন্য ভাব , সর্ববিষয়ে তাচ্ছিল্য - ও অমনোযোগীতা । রোগী মনে করে যে সে ভাল আছে
।
৬.
সামান্য কারণে চমকিয়া উঠে ।
৭.
প্রলাপ বকা কখনও বিড় বিড় করিয়া প্রলাপ বকে , আবার কখনও বা ভয়ানক আক্রোশের সহিত
প্রলাপ ।
৮.
রাত্রিকালে হৃৎপিণ্ড সম্বন্ধীয় উদ্বেগের সহিত
সেই মুহূর্তেই মৃত্যুভয় , হৃৎপিণ্ড হইতে উদ্বেগ সারা দেহে চড়িয়ে যায় । বিশেষ লক্ষণটি
হইল , সেই মুহূর্তেই মৃত্যু হইবে এমন ভয় ।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১. দেহে অত্যন্ত ক্ষতবােধ বেদনা , কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক ইহা * তাহার কাম্য নহে ।
২ । আঘাত হেতু বা অতিরিক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চালনার নিমিত্ত পীড়া , কোনও পীড়ায় রােগী অজ্ঞান ও অচৈতন্য অবস্থায় পড়িয়া বাহ্য প্রস্রাব করে ।
৩ । শােক , দুঃখ , ভয় , আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি উৎপন্ন পীড়া ।
৪ । অসাড় ভাব ও তথায় সড়সড়ানি ।
৫ । বাম পার্শ্ব আক্রান্ত ।
৬ । পক্ষাঘাত হেতু আক্রান্ত অংশ শীর্ণ হইয়া যায় ।
৭ । সমগ্র দেহ শীতল কিন্তু মাথা গরম ।
৮ । চর্মের নিচে কাল শিরার দাগ ।
৯ । রক্তস্রাব , কাল শিরার দাগ, রক্তহীনতা, ফুলিয়া শক্ত হওয়া, পুঁজোৎপত্তি হেতু পীড়া বা রক্ত দূষিত হইয়া কঠিন , পীড়া ।
১০ । কঠিন পীড়া সত্ত্বেও রােগী বলে যে তাহার কোন পীড়া নাই ।
১১ । অতিশয় বলক্ষয় ও অবসাদ, কাঁপুনি, পক্ষাঘাত , হস্তপদাদির হঠাৎ স্পন্দন, তড়কা ।
১২ । বেদনাজনক ক্ষত, উদ্ভেদ ও স্ফোটক ।
১২ । চোখ বন্ধ করিলে শিরােঘূর্ণন ।
১৪ । দুগ্ধ ও মাংসে অরুচি ।
১৫ । জিহ্বা লেপাবৃত - মাঝখানে বাদামী বর্ণের ডােরা ।
১৬ । ঘ্রাণ, স্পর্শ ও শ্রবণেন্দ্রিয়ের প্রাথর্য , কখনও অবসাদ
।
বিশেষত্ব:-
আৰ্ণিকার বিশেষত্ব এই যে , রক্ত প্রধান স্থূলকায় এবং খর্বাকৃতি লােক ইহার উপযুক্ত
ক্ষেত্র । সর্বাঙ্গে থেঁতলানাে ব্যথা অনুভব । তাই রােগী চুপচাপ থাকে । সামান্য স্পর্শও
রােগী সহ্য করিতে পারে না । প্রাতঃকালে , সন্ধ্যায় ও রাত্রিকালে , ঠাণ্ডা লাগিলে অথবা
শীত বা বর্ষাকালে উপসর্গের বৃদ্ধি । দৈহিক পরিশ্রমে , স্পর্শে বেড়াইলে , নড়াচড়ায়
, শব্দ শােনার পর নিদ্রায় বা মানসিক উত্তেজনার পর পীড়ার বৃদ্ধি , মুক্ত বায়ুতে ও
শুইয়া বিশ্রাম করিলে পীড়া লক্ষণের উপশম ।
প্রয়ােগ ক্ষেত্র:-
যে কোনরূপ আঘাত , থেতলানাে ব্যথা , আঘাতজনিত পীড়া , ভাদাল ব্যথা , জ্বর ও সূতিকা জুর
, গেঁটেবাত , বিসর্প , ক্ষোটক , চক্ষুপীড়া , হুপিং কাশি , শিশু কলেরা , উদরাময় ও
আমাশয় , পক্ষাঘাত প্রভৃতি পীড়ায় আর্ণিকা প্রয়ােগ করা হয় ।
আঘাত জনিত ব্যথা, নতুন ও পুরাতন আঘাত:-
আঘাতজনিত বা পতনজনিত যে কোন নতুন ও পুরাতন পীড়া
- তাহা । বেদনাই হােক , মূৰ্ছা হােক , অচৈতন্যাবস্থা হােক , তড়কা হােক বা গর্ভপাতই
হােক সকল পীড়াতে আর্ণিকা ক্রিয়াশীল । হঠাৎ পড়িয়া গিয়া দেহের যে কোন অংশে আঘাত
পাইলে , থেতলানাে ব্যথা হইলে , প্রদাহ এবং আঘাতের ফলে দেহের উপরিভাগ গরম এবং নিচের
অংশ শীতলবােধ হইলে আর্ণিকা উপকারী । আঘাতের ফলে যদি ভগ্নস্থান স্ফীত ও বেদনাযুক্ত হয়
, মস্তিষ্কে আঘাত হেতু অজ্ঞান হইয়া পড়ে , অসাড়ে মল মূত্র হইতে থাকে তবে আর্নিকা
দ্বারা চিকিৎসা না করিলে রােগী আজীবন মন্তি লক্ষণ দ্বারা কম বেশী উত্যক্ত হইবেন । কোন
ভোতা অস্ত্রাদির আঘাতের ফলে কাটিয়া , থেতলাইয়া বা স্ফীত হইয়া গেলে ইহা ব্যবহার্য
। আঘাতজনিত বহু লক্ষণেই আর্ণিকা উপকারী । আঘাতজনিত অণ্ডকোষের স্ফীতিতে , বক্ষঃস্থলে
আঘাত লাগার পর পরিসি হইয়া হা ফোটানবৎ বেদনা হইলে , পা পিছলাইয়া পড়িলে কিংবা কোন
ভারী জিনিষ তুলিলে অথবা অনেকক্ষণ ধরিয়া দ্রুত চলিলে যদি পেশীসমূহে থেতলানি ব্যথা হয়
ও কামড়ানি থাকে , মূত্রস্থলী প্রদাহে কষ্টজনক প্রসবের সময় শিশুর মস্তক নিষ্ক্রমণকালে
অত্রস্থলীতে আঘাত লাগিয়া প্রদাহ হেতু প্রস্রাব বন্ধ হইলে , ঘােড়ার গাড়ী বা সাইকেলে
চড়িয়া অত্যধিক ভ্রমণ হেতু হৎপিণ্ড আক্রান্ত হইয়া হৃৎপিরে নিম্নাংশে থেতলানি ব্যথায়
ও সেই সঙ্গে বুক ধড়ফড়ানিতে আর্ণিকা মহৌষধ । আঘাতে কালশিরা পড়িলেও ইহা উপকারী ।
বহুদিন পূর্বে আঘাত লাগার জন্য যদি কোন পীড়া হয় ও তাহা সহজে আরােগ্য না হয় তবে তাহাতেও আর্ণিকা প্রয়ােগ করিলে সুন্দর ফুল দর্শে । তাই দেখা যায় যে কি নতুন বা পুরাতন সকল প্রকার আঘাতে ও আঘাতজনিত পীড়াতে আর্থিক বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল এবং এই ঔষধের কথাই হােমিওপ্যাথদের প্রথম মনে পড়ে ।
জ্বরের লক্ষণ:-
উত্তর : কোন অন্তরুসেক্য রােগে আক্রান্ত হইয়া প্রবল জ্বর দেখা দিলে অথবা কোন দুর্ঘটনা
বা আঘাত লাগার পর জ্বর হইলে ইহা উপকারী । রােগী অবসন্ন , জড়বুদ্ধি ও অচেতন হইয়া পড়ে
। রােগীর সর্বাঙ্গে থেঁতলানাে ব্যথা । জাগাইয়া তুলিলে রােগী যথাযথভাবে উত্তর দেয়
কিন্তু পুনরায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে । মুখমল বিরর্ণ । রক্তদুষ্টিজনিত শীত দেখা দেয়
। রক্তের ন্যায় কাল পদার্থ বমন হয় । পীড়িত সত্বেও ডাক্তারকে বলে — আমি পীড়িত নই
, আপনি বাড়ী যান । ইহা প্রায় বিরের প্রলাপের । ন্যায় অবস্থা । এইরূপ বাক্য বলিয়াই
রােগী বিছানার উপর কুণ্ডলী পাকাইয়া এইবে । এবং কিছু জিজ্ঞাস্য করিলে গোঁ গোঁ করিতে
থাকিবে । রােগী অল্পক্ষণ ও একপর্শ চাপিয়া শুইতে পারে না , ক্রমাগত এপাশ ওপাশ করে ।
কোন সবিরাম বা স্বল্প জ্বরে যদি টাইফয়েড লক্ষণ প্রকাশ পায় । জিহবা চকচকে হয় , দাতে
এবং ওষ্ঠে ময়লা জন্মে , রােগী অবসন্ন হইয়া পড়ে । সর্বাঙ্গে ব্যথা হয় , আৱক্ত জুরে
উদ্ভেদ বাহির না হইলে সাংঘাতিক প্রকারের আক্রমণে রােগীর সর্বাঙ্গ কৃষ্ণবর্ণ , চিত্রবিচিত্র
এবং লাল দাগে পূর্ণ হইয়া যায় । রােগী অবিরত পার্শ্ব পরিবর্তন করে এবং মন বিষন্ন ও
বিমূঢ় হয় তখন আর্ণিকা উপযােগী । | পুরাতন ম্যালেরিয়া জুরে ইহা ভাল উপকারী । রক্ত
সঞ্চয়জনিত শীতে , অবসন্নতা , অচৈতন্যতা , অৎ উদ্বেগসহ রক্ত সঞ্চয় হইলে এবং রক্ত
- সঞ্চয় কপ জুরে আর্ণিকা উত্তম ঔষধ । সবিরাম জ্বরের পূর্বাবস্থায় রােগীর খুব পিপাসা
থাকে ও জলপান করে । শীতাবস্থায় পিপাসা , সর্বাঙ্গে কঁপুনি , সর্বশরীরে এমনকি হাড়
পর্যন্ত ব্যথা , মাথা গরম । উত্তাপাবহায় - পিপাসা অধিক কিন্তু শীত থাকে , গাত্রবস্তু
খুলিয়া দেয় । রােগীর আচ্ছন্ন ভাব , দুর্বল । ঘর্মাবস্থায় ইকগন্ধ বাম , মাথায় ও
সর্বাঙ্গে টাটানি ব্যথা , শীতবােধ । জিহ্বা অপরিষ্কার , নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ও মুখ বিষাদ
। জ্বর ছাড়িয়া গেলেও মাথা ধরা ও গাত্র বেদনা যায় না : কুইনাইন সেবনে জুর আবােগ্য
না হইলে । অনেক সময় আর্নিকায় উপকার হয় ।
গর্ভাবস্থায় প্রয়ােগ লক্ষণ:-
উত্তরঃ
গর্ভাবস্থায় সর্বাঙ্গে বিশেষতঃ পেট , জরায়ু ও তলপেটে অত্যন্ত বেদনা ও । স্পর্শকাতরতা
লক্ষণে ইহা উপযােগী । জ্বণের নড়াচড়ায় অত্যন্ত কষ্ট বােধ হইলে এবং । সেজন্য রাত্রে
ঘুম না হইলে আর্ণিকা প্রযােজ্য । .
জরায়ুর রক্তস্রাবে:-
স্বামী সঙ্গমের পর জরায়ুতে আঘাত লাগার দরুন জরায়ু হইতে রক্তস্রাব হইতে থাকিলে আণিকা বিশেষ উপযােগী ।
বাতের লক্ষণ:-
পড়িয়া গিয়া , আঘাত লাগা হেতু , অতিশয় দৈহিক পরিশ্রমের পর বা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য
যে সকল নতুন ও পুরাতন বাত রােগ প্রকাশ পায় আর্ণিকা উপকারী । রােগী অতিশয় স্পর্শ কাতর
, ব্যথায় রাত্রিতে ঘুমানাে যায় না । বিছানাটি বড়ই কঠিন বােধ হয় । | আর্ণিকা আবার
কতকগুলি পুরাতন পীড়ায় বিশেষতঃ গেঁটে বাতেও উপকারী । পুরাতন গেঁটে বাত রােগীদের অত্যন্ত
স্পর্শকাতরতার সহিত নতুন করিয়া সন্ধি বেদনা দেখা দেওয়া একটি সম্পূর্ণ সাধারণ ব্যাপার
। হয়ত বা বৃদ্ধ পিতামহ ঘরের কোণে আলাদা হইয়া বসিয়া আছেন , সে সময় যদি ছােট আদরের
নাতনীটি তাহার দিকে ছুটিয়া আসে তিনি বলিয়া বসিবেন , ‘ ওরে সরিয়া যা ” । তাহাকে একমাত্র
আর্ণিকা দিলে পরক্ষণেই তাহার কোলের উপর নাতনীকে ঝাপাইয়া পড়িতে দিবেন । মােট কথা লােগী
মনে করে যাহা কিছুই তাহার দিকে আসিতেছে তাহাই তাহাকে আঘাত করিয়া বসিবে । শীতকালে আর্দ্রতা
ও শীতলতা ও অতি পরিশ্রমের জন্য যে স্থানিক বাত জননা , আক্রান্ত স্থানে স্পশাধিক্য থাকে
, তাহাতে আর্থিক উপকারী । এই বাতের । বেদনা কনুই হইতে প্রকোষ্ঠ পর্যন্ত অথবা জমা ও
পায়ের অভ্যন্তর দিয়া তীৰ চিডিক মারার ন্যায় বােধ হয় ।
হুপিং কাশি:-
আণিকা পিং কাশিরও একটি ঔষধ । পশে বৃদ্ধি , ক্ষত , থেতলানব , বেদনা । আক্ষেপিক কাশির
সহিত রক্ত উঠা অথবা রক্তের চোরানুষ্ণ শ্লেষ্মা অথবা খাের মধ্যে ছোট ছোট আপপিনের মাথার
মত জমাট রক্ত । কাল শ্লেষ্মার সহিত রক্ত বমন । শিশু রাগী ও খিটখিটে । রাগ ও ছটফটানির
সহিত কালিতে আর করিলেই কাশি উঠে । রাত্রিতে কাশির ধমক । শিশু কাশি আসার পূর্বেই বেদনার
ভয়ে কাদিতে থাকে । হপিং কাশিতে সুঁচ ফোটানধৎ যন্ত্রণা , বুকের সপি , নিমােনিয়া অথবা
প্রবিসির সহিত দাহিক অবস্থায় বক্ষঃবেদনা । শিশুর বাম গাল লাল দেখায় ও শরীরের অন্যান্য
অংশ ঠাণ্ডা থাকে ।
প্রান্তদেশে পীড়য়:-
প্রাপ্তদেশ বলিতে হস্ত , পদ , মস্তিষ্ক , সর্বোপরি মানবদেহের বাহিরের " অংশকেই
বুঝানাে হয় । আণিকার একটি সাধারণ লক্ষণ এই যে , রোগীর দেহ , হাত , পাত শীতল থাকে কিন্তু
মাথাটি থাকে গরম । শিশুদের পাড়ায় মাতা যতবার শিশুর হাত পা স্পর্শ করেন ততবারই চীৎকার
করিয়া উঠে । কাপুনি , পক্ষাখাত , হস্তপদাদির হঠাৎ স্পন্দন । পক্ষাঘাত হেত্ব হস্ত বা
পদের । শীর্ণতা । কোনও কারণে যদি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সে জন্য অজ্ঞান হইয়া পড়ে , অসাড়ে মল মুত্র ত্যাগ
হয় । নাড়া কেমিল ও ভিন্নভিন্ন হয় তবে সময় মত আণিকা খাৱা চিকিৎসা না করিলে আজশিন
মস্তিষ্ক লক্ষণ দ্বারা রোগী উত্যক্ত হইবে । ইহা ছাড়া স্মৃতি শক্তি বিলুপ্ত হয় , কথা
বলিবার সময় ভূল হইয়া থাকে , রােগা যেন স্বপ্নে ভাসিয়া বেড়ায় । সর্বদা উখি ও উৎকণ্ঠিত
। সামান্য কারণে ভয় পাইয়া চমকিয়া উঠে । সামা শব্দে যেন মস্তকে আঘাত পায় এবং আলােকে
র দিকে তাকাইলে কষ্ট অব করে । কখনও মাথা ধরে আবার কখনও মৃগরি ন্যায় তড়কায় ফিট হয়
। মস্তিষের এই পাড়াতে আর্থিক বিশেষ উপকারী । আঘাতজনিত হস্তপদ প্রভৃতির পীড়ায় ও বেদনায়ও
ইহা বিশেষ উপকারী । প্রান্তদেশসমূহের বাত ও গিটে বাতেও আর্ণিকা সুন্দর ক্রিয়া করিয়া
থাকে ।
কয়লার ধূমজনিত শ্বাসরোগে আৰ্ণিকার লক্ষণ:-
উত্তর ঃ আঁতুড় ঘরের দরজা বন্ধ রাখিয়া তাহার মধ্যে কাঠের
কয়লার আগুণ । • জ্বালাইলে সেই আগুণের ধোয়ায় যে কার্বনিক এসিড প্রস্তুত হয় , পােয়াতি
ও শিশু তাহা নিঃশ্বাস দ্বারা গ্রহণ করিলে অনেক সময় অজ্ঞান হইয়া পড়ে । ইহাতে আর্ণিা
, বােভিষ্টা ও ওপিয়াম তিনটিই ভাল ঔষধ ।
পায়ের কড়ায়:-
পায়ের কড়া কাটিয়া ফেলিয়াই ঐ স্থানে আৰ্ণিকার মূল অরিষ্ট বাহ্য । প্রয়ােগ করিতে
হয় । বহুবার এইরূপ প্রক্রিয়া করিলে ও ঢিলা জুতা পরিলে কড়া । আরােগ্য হয় ।
একজিমা ও কাউরে:-
যদি কাউর ঘা বিখাউজের
উদ্ভেদ শরীরের উভয় পার্শ্বে সমপরিমিতভাবে দৃষ্ট হয় অর্থাৎ একহাতে যেরূপভাবে হয় অন্য
হাতে যদি সেইরূপভাবে হয় , কিংবা এক গালে যেরূপভাবে অপর গালেও সেইরূপ হয় এমন কি বুকের
উদ্ভেদের মত । পিঠেও উদ্ভেদ দেখা দেয় তাহা হইলে আর্ণিকা অমােঘ ঔষধ ।
এপেণ্ডিসাইটিসে:-
অতিশয় দুর্বলতা ও পেটে এত ব্যথা হয় যে রােগী
পেটে হাত দিতে দেয় না এই লক্ষণে আর্ণিকাই একমাত্র ঔষধ ।
অজীর্ণে:-
আহারের সময় পাকস্থলীতে বেদনা । আহারের পর দপদপানি মাথাব্যথা ও তন্দ্রালুতা , মুখে
দুর্গন্ধ , তিক্তাস্বাদ , জিহ্বায় পিচ্ছিল হলদে ময়লা , উকারের সহিত পচা ডিমের মত
দুর্গন্ধময় বায়ু নিঃসরন , পেট ফোলা , দুর্গন্ধময় মল থাকিলে আণিকা প্রযােজ্য । এত
দুর্বলতা হয় যে , প্রত্যেকবার মল ত্যাগের পর শুইয়া থাকিতে হয় ।
উদরাময় ও আমাশয়ে:-
উদরাময় ও আমাশয়ে যদি রােগীর মুখের স্বাদ টক
, তিক্ত , পিচ্ছিল বা | পচা পচা বােধ , খাদ্যে বিশেষতঃ মাংসে বা ঝােলে অরুচি , পিপাসা
আছে কিন্তু কি পান করিতে চায় জানে না , সকল পানীয়েই অরুচি , পেট ফুলিয়া উঠে , প্রায়ই
ঢেকুর উঠে , ঢেকুর তিক্ত , টক বা পচা ডিমের মত দুর্গন্ধযুক্ত প্রভৃতি লক্ষণ থাকে তবে
আর্ণিকা ব্যবহার্য ।
হৃৎপিণ্ডের পীড়ায়:-
গুরুতর পরিশ্রম করার দরুন হৃৎপিণ্ডের বৃদ্ধি । মনে হয় কেহ যেন হাত দিয়া হপগুটি জোরে চাপিয়া ধরিয়াছে । সমস্ত বুকে অসহ্য থেতলানােবৎ ব্যথা , কাপড় লাগিলেও অসহ্যবােধ । মাঝে মাঝে রোগী কাশে কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে না । রক্ত প্রধান ব্যক্তির নিয়মিত পরিশ্রমের পর বুক ধড়ফড় করিলে আর্ণিকা উপকারী ।
শিশু পীড়ায়:-
আণিকার একটি সাধারণ লক্ষণ এই যে , রােগীর সর্বদেহ , হাত পা শীতল এবং মাথা গরম থাকে । এই লক্ষণ আকস্মিক রক্ত সঞ্চয় , রক্ত সঞ্চয়জনিত সবিরাম সুরে ও শীতে পরিস্ফুট থাকে । দেহে ক্ষত বেদনা , শিশুদের গুরুতর শৈশবকালীন জুরের আক্রমণে আক্ষেপ সম্ভাবনা উপস্থিত হয় । অনেক চিকিৎসকই এই অবস্থায় বেলেডোনার কথা ভাবেন কেননা উহাতেও হস্তপদের শীতলতা ও মাথা । গরম লক্ষণটি আছে । যে সকল শিও কাহারও স্পর্শ পছন্দ করে না , যতবার মা শিশুর হাত পা ধরেন ততবারই শিত চীকার দেয় । তাহাদের ক্ষেত্রে অর্ণিকাকে কোন মতেই ভুলিলে চলিবে না । আণিকা ব্যবহারে একটি অতিরিক্ত সংকেত হইল এই যে , শিশুর পােশাক খুলিলে দেহে কৃষ্ণাভ দাগ দেখিতে পাওয়া যাইবে ।
বৃদ্ধি:-
সামান্য স্পর্শে , নড়াচড়ায় , ঠাণ্ডায় , শৈত্যে , দেহ সঞ্চালনে , আঘাতে , পরিশ্রমে
।
উপশম:-
খােলা বাতাসে , শয়নে অথবা মাথা নিচু করিয়া রাখিলে
, রাত্রে ।
পরবর্তী ঔষধ:-
একোনাইট, বেলেডােনা, চায়না, হিপার, লিডম, সালফার, রুটা, রাসটক্স, এসিড সালফ, ব্রায়ােনিয়া ।
সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:-
আঘাত লাগা হেতু পুরাতন পীড়ায় কোনিয়াম ।
ক্রিয়ানাশক ঔষধ:-
ক্যাক্ষর, আর্সেনিক, চায়না, একোনাইট, ইগ্নেসিয়া
।
ক্রিয়া স্থিতিকাল:-
৬ হইতে ১০দিন ।
ব্যবহারের শক্তি:-
৩ হইতে ২০০ শক্তি । বাহ্যিক প্রয়ােগে মূল অরিষ্ট
অধিক পরিমাণে পানির সহিত মিশ্রিত করিয়া ব্যবহার করিতে হয় ।
কবিতা
আগাতের
ফলে রোগ, আগাতের মত
ব্যাথা,
আগাতের ভয়ে
ভীতি, আতি স্পর্শদ্বেষ।
উত্তপ্ত
উত্তম অঙ্গ, নিম্নাঙ্গ শীতল অতি,
শিশুদের হস্তদ্বয় বরফ
বিশেষ।
সঞ্চিত
প্রভূত মল, তবু বাহ্য
নহি হয়,
মূত্রস্তম্ব সহ
আমরক্ত অতিসার।
বিকারে
অজ্ঞান রোগী ডাকিলে উত্তর
দেয়,
তখনি ঘুমিয়ে
পড়ার চিহ্ন আর্ণিকার ।
0 মন্তব্যসমূহ