সায়েটিকা, তৃতীয় অধ্যায়, চতুর্থ বর্ষ

 সায়েটিকা বা নিতম্ব বেদনা বা কটি স্নায়ুবাত
Sciatica





প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর: কটিস্নায়ু বা উরু স্নায়ুর প্রদাহ হেতু স্নায়ুশূলবৎ বেদনার নাম সায়েটিকা বা কটিস্নায়ু বাত। পাছা হইতে উরুর পশ্চাৎভাগ দিয়া সায়েটিকা নামক যে একটা মোটা নার্ভ পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত চলিয়া গিয়াছে কোন কারণবশতঃ সেই নার্ভের কোন প্রদাহ হইলে তাহাকে সায়েটিকা বা কটিস্নায়ুবাত বলে।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের শ্রেণীবিভাগ লিখ।

উত্তর: সায়েটিকার শ্রেণীবিভাগ- সায়েটিকা ২ প্রকারের। যথা-

১) সিঙ্গেল সায়েটিকা।

২) ডাবল সায়েটিকা।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটিস্নায়ু বাতের কারণ তত্ত্ব লিখ। 

উত্তর: কারণ তত্ত্ব সায়েটিকার কারণসমূহ নিম্নরূপ।

১) হিপজয়েন্ট পীড়া হইতে ছড়াইয়া পড়া রেফার্ড পেইন সায়েটিকা রূপে প্রকাশ পায়।

২) ৪-৫ লাম্বার ভার্টিব্রার মধ্যের ডিস্ক স্থানচ্যুত হইয়া নার্ভে চাপ দিলে এই বেদনার সৃষ্টি হয়।

৩) ফরসেপ দিয়া প্রসব করানোর জন্য বা হেঁট হইয়া কোন ভারী জিনিষ তুলিতে গিয়া পাশের লাম্বার ও সেক্রাল নার্ডে চাপ দিলে।

৪) সায়েটিক নার্ভে আঘাত লাগা, যেমন গদি ছাড়া চেয়ারে বসিয়া দীর্ঘদিন ধরিয়া লেখাপাড়ার কাজ করা প্রভৃতি।

৫) অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগা বা ভিজা স্থানে অনেকক্ষণ বসিয়া থাকা বা ঘুমানো। ভিজা স্যাঁতস্যাতে স্থানে দীর্ঘদিন বাস করা।

৬) জরায়ুর নিকটস্থ কোন স্থানে টিউমার হওয়া বা অকালে ভ্রণ জোর করিয়া নষ্ট করা।

৭) বাত বা প্রদাহ হইয়া পীড়া, উপদংশ, মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের অস্থিসমূহের ক্ষয়পীড়া, বস্তি মধ্যে অর্বুদ, বা ভ্রূণের চাপ, উরুসন্ধির পীড়া, ভার্টিব্রার পীড়া প্রভৃতির ফলে।

৮) অস্ত্রমধ্যে গুটলে গুটলে মল দ্বারা সায়েটিক নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করা। ৯) শরীরে ভিটামিন 'বি' এর অভাব এবং পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ু বাতের লক্ষণাবলী বা উপসর্গ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

 উত্তর: লক্ষণাবলী-

১) একদিকের পায়ের স্নায়ু আক্রান্ত হয়, কখনও উভয় দিকের স্নায়ু আক্রান্ত হয়।

২) বেদনা কোমরের নিম্নভাগ অর্থাৎ পাছা বা উরু সন্ধির নিকটবর্তী স্থান হইতে আরম্ভ হইয়া উরুদেশের পশ্চাৎ দিক দিয়া হাঁটুর পশ্চাৎভাগ এবং কখনও কখনও পায়ের পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। অনেক সময় উরুর সম্মুখদিকেও বেদনা হয়।

৩) কখনও কখনও এই বেদনা সায়েটিকা নার্ভের শাখাসমূহে দেখা দেয় এবং চারিদিকে বেদনা ছড়াইয়া পড়ে।

৪) একদিকের বা উভয় দিকের স্নায়ু আক্রান্ত হইতে পারে এবং রোগ বেশীদিন থাকিলে পা ও উরুর পেশী শুকাইয়া যায়।

৫) সায়েটিক নার্ভের প্রসারণ পথ ধরিয়া তীব্র বেদনা ও তৎসহ জ্বালাবোধ এই পীড়ার একটি প্রধান লক্ষণ, কিছুদিন পর পর এই বেদনা অনুভূত হয় তারপর কিছুদিন পরে অবিরামভাবে বেদনা যন্ত্রণা দেখা দেয়।

৬) কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিলে পরে উঠিতে ও চলিতে কষ্ট হয়, চলিতে পায়ে টান- পড়ে, আক্রান্ত পা সোজা করিয়া হাঁটিতে পারে না।

৭) নড়াচড়ায় এবং রাত্রিকালে বা হাঁটাহাটি করিলে বেদনা তীব্র হয়। রাত্রে নিদ্রা হয় না, এক পাশে শুইয়া থাকে।

৮) আক্রান্ত পাশের পা প্রসারিত করিলে বেদনার বৃদ্ধি হয়, ভাল পায়ের উপর ভর দিয়া খোঁড়াইয়া হাঁটে।

৯) শয়ন কালে হাঁটু মুড়িয়া শুইতে বাধ্য হয়।

১০) তীব্র আক্রমণে রোগী বিছানায় শয্যাশায়ী হয়।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস লিখ।

উত্তর: রোগ নির্ণয়ঃ ল্যাসেগুই সাইন-হাঁটু মুড়িয়া উরু পেটের উপর দিয়া যাওয়া পর্যন্ত রোগ কষ্ট জানায় না, কিন্তু ঐ অবস্থায় হাঁটু যদি সোজা তোলা যায়, তবে রোগী কষ্ট জানায় ও রোগী পা সোজা করিতে পারে না। গোড়ালিতে ঘা দিলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুমড়াইয়া আসে। তলপেটে ৫ম লাম্বারের নিচে এবং সেক্রাল প্লেক্সাসের উপর টিপ দিলে খুব লাগে।

গুটিয়াস সাইন-মাংস সেক্রামের যেখানে যুক্ত হইয়াছে, সেখানে আঘাত দিলে মাংস দড়িদড়ার ন্যায় কোঁচকাইয়া উঠে।

তবে সাধারণতঃ রোগীকে পরীক্ষা করিয়া তাহার সায়েটিক নার্ভের উপর চাপ দিলে বেদনাবোধ, স্পর্শ চেতনার হ্রাস, পেশীর শীর্ণতা, প্রভৃতি দ্বারা রোগ নির্ণয় করা যায়।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের ভোগকাল লিখ।

উত্তর: ভোগকাল- এই পীড়া সহজে আরোগ্য হয় না। রোগী কয়েক মাস এমনকি কয়েক বৎসর পর্যন্ত এই পীড়ায় ভুগিতে পারে। পীড়া যদি একবার রোগীকে আক্রমণ করে তবে বার বার আক্রমণের সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের ভাবীফল লিখ।

উত্তর: ভাবীফল- এই পীড়ার ভাবীফল তত মারাত্মক নয়। যদি এক পাশের স্নায়ুর আক্রমণ প্রতিরুদ্ধ হইয়া যায় তবে অপর পাশের স্নায়ু আক্রান্ত হইতে পারে। একবার পীড়া দ্বারা আক্রান্ত হইলে বার বার আক্রমণের সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না। সুচিকিৎসা না হইলে রোগীর পক্ষাঘাত হইতে পারে।



প্রশ্ন- সায়েটিকা বা কটি স্নায়ুবাতের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও পথ্য লিখ এবং পীড়ায় ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ লিখ।


উত্তর: চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-রোগের কারণ নির্ধারণ করিয়া তাহার সংশোধন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। রোগীর ডায়াবেটিস, সিফিলিস প্রভৃতি পীড়া থাকিলে সর্বাগ্রে তাহার চিকিৎসা করা উচিত। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে। আক্রান্ত পা যেভাবে রাখিলে রোগী আরাম বোধ করে সেভাবে তাহাকে শয়ন করাইয়া রাখিতে হইবে। গরম পানি বোতলে পুরিয়া আক্রান্ত স্থানকে চাপিয়া রাখিলে বেদনার সাময়িক উপশম হয়। সেঁক তাপ প্রয়োগ করা ভালো। রোগীর ধাতুদোষ সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত। কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করিতে হইবে। রোগীর যাহাতে ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।

পথ্য-লঘু ও পুষ্টিকর খাদ্য এবং ভাত, রুটি, ডাল প্রভৃতি সুপথ্য। মাংস, ডিম, দুই রবফ প্রভৃতি নিষিদ্ধ।

ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ:

১) একোনাইট- প্রবল শুষ্ক ঠাণ্ডা বায়ু লাগিয়া কটি স্নায়ু বাত হইলে, আক্রান্ত অঙ্গের পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত যদি ঝিনঝিন করে ও অসাড়তা বোধ হয়, রাত্রে বেদনার বৃদ্ধি এবং রোগীর অস্থিরতা, উদ্বেগ ও যন্ত্রণার কাতরতা দেখা যায় তবে ইহা উপযোগী।

২) কলোসিন্থ- সায়েটিকা স্নায়ু হইতে বেদনা আরম্ভ হইয়া হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বেদনা পরিব্যাপ্ত হইলে ও সেই বেদনা নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পাইলে ইহা উপকারী। পা ও কোমর অসাড় বোধ, চাপে ও গরমে উপশম। আক্রমণের পর পায়ের অসাড়তা ও পক্ষাঘাতের মত অবস্থা। ডান পার্শ্বের সায়েটিকা।

৩) ন্যাফেলিয়াম- সায়েটিকা রোগে আক্রান্ত স্থানে অবশতা, বাতরোগসহ প্রাতঃকালীন উদরাময়। কটিদেশের পুরাতন বেদনা, চিৎ হইয়া শুইলে উপশম। পিঠের নিম্নাংশে বেদনা, সায়েটিকা নার্ভের তীব্র বেদনা।

৪) কেলিবাইক্রম- বেদনা হঠাৎ আসিয়া হঠাৎ চলিয়া যায়। একস্থান হইতে অন্য স্থানে ঘুরিয়া বেড়ায়। বামদিকের সায়েটিকা। চলাফেরা করার সময় এবং পা মুড়িয়া রাখিলে বেদনার উপশম। শয়ন করিলে, বসিয়া থাকিলে বা দাঁড়াইলে পীড়ার বৃদ্ধি।

৫) কেলি আয়োড- পারদ অপব্যবহারে সম্ভূত অথবা উপদংশজনিত পীড়া হইলে, বেদনা রাত্রে বাড়িলে এবং আক্রান্ত স্থান চাপিয়া শুইলে বেদনার বৃদ্ধি ঘটিলে ইহা উপকারী। দক্ষিণ জংঘা ও হাঁটুতে ছিঁড়িয়া ফেলার ন্যায় তীব্র বেদনা।

ইহা ছাড়া লক্ষণানুযায়ী বার্বোরিস ভালগ, কষ্টিকাম, ফাইটোলাক্কা, ক্যামোমিলা, ব্রায়োনিয়া, লাইকোপোডিয়াম, এমন মিউর, রাসটক্স, লিডাম, ল্যাকেসিস ম্যাগফস প্রভৃতি ঔষধও উপকারী।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ