সুক্ষ্মতম ও ক্ষুদ্রতম মাত্রা- ৬ষ্ঠ অধ্যায় - ১ম বর্ষ

 ৬ষ্ঠ অধ্যায়

সুক্ষ্মতম ও ক্ষুদ্রতম মাত্রা  

(Infinitesimal and minimum dose) 



প্রশ্ন-  মাত্রা বলিতে কি বুঝায়?

উত্তর ঃ মাত্রাকে ইংরেজীতে Dose বলে। Dose শব্দটি গ্রীক শব্দ Posos. হইতে উৎপন্ন; যাহার অর্থ হইল পরিমাণ। মাত্রা বলিতে ঔষধের পরিমান বুঝায়।


প্রশ্ন- সূক্ষ্মমাত্রা বা ক্ষুদ্রতমমাত্রা কাহাকে বলে?

বা, মাত্রা কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর : যখন কোন ভেষজ বা ঔষধের জড়তা অপসারিত করিয়া যে মাত্রা নির্ণীত হয় তাহাই সূক্ষ্মমাত্রা। অন্য কথায়, সুনির্বাচিত ঔষধের যতটা পরিমান ব্যবহার করিলে ঔষধের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে না অথচ রোগী স্থায়ীভাবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্মল আরোগ্য লাভ করে। ঐ পরিমাণকেই ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্মমাত্রা বলা হয়।


প্রশ্ন-  রোগ মাত্রা ও আরোগ্য মাত্রার পার্থক্য কি? 

উত্তর ঃ রোগ মাত্রা ও আরোগ্য মাত্রার পার্থক্য নিম্নরূপ-

১) রোগ মাত্রা স্থূল মাত্রার অন্তর্গত আর আরোগ্য মাত্রা সূক্ষ্ম মাত্রার অন্তর্গত।

২) রোগ মাত্রা দেহের ক্ষতি সাধন করে, কিন্তু আরোগ্য মাত্রা দেহের উপকার করে।

৩) রোগ মাত্রা নীতি বহির্ভূত আর আরোগ্য মাত্রা নীতিসম্মত।

৪) রোগ মাত্রা অপরিবর্তিত মাত্রা হইয়া থাকে, আর আরোগ্য মাত্রা হই পরিবর্তিত মাত্রা।

৫) রোগ মাত্রা ভেষজ পরীক্ষা, হত্যা বা আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, আর আরোগ্য মাত্রা রোগী চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।



প্রশ্ন- প্রথম মাত্রা কাহাকে বলে?

উত্তর : যে পরিমাণ ঔষধ প্রয়োগের পর দেহে ঔষধের ক্রিয়া অথবা পতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় ভাষাকে প্রথম মাত্রা করে।

 


প্রশ্ন-৬.৮। ঔষধের শক্তি ও মাত্রা বলিতে কি বুঝ?

উত্তর : ঔষধের শক্তি : ফার্মাকোপিয়ার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসারে মূল আরবকে তরল ভেষজবহ সহযোগে সূক্ষ্ম হইতে সূক্ষ্মতম অংশে বিভাজিত করা এবং ধাতব বা কঠিন জাতীয় পদার্থকে দুগ্ধ শর্করা সহযোগে বিচূর্ণ করিয়া সূক্ষ্ম হইতে সুক্ষ্মতম অংশে বিভাজিত করা অংশকে তথা ভেষজ বা ঔষধের জড়তা অপসারণ করাকে ঔষধের শক্তি বলে ।

ঔষধের মাত্রা : মাত্রাকে ইংরেজীতে Dose বলে। Dose শব্দটি গ্রীক শব্দ Posos হইতে উৎপন্ন; যাহার অর্থ হইল পরিমাণ। মাত্রা বলিতে ঔষধের পরিমান বুঝায়।



প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিতে সূক্ষ্ম বা ক্ষুদ্র মাত্রা ব্যবহারের যৌক্তিকতা কি?

বা, হোমিওপ্যাথিতে স্থূল । বৃহৎ মাত্রা ব্যবহৃত হয়না কেন?


উত্তর : হোমিওপ্যাথির অন্যতম নীতি হইল ঔষধকে সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করিতে হইবে। তানিমানের মতে সূক্ষ্মমাত্রার কার্যকরী ক্ষমতা বস্তুসত্তার পরিমান অপেক্ষা গুনাগুনের উপরই নির্ভর করে। সদৃশলক্ষণ মতে সদৃশলক্ষণ সম্পন্ন রোগে সদৃশ ঔষধ দ্বারা পীড়া আরোগ্য করিতে হইলে ঔষধের অতি অল্প মাত্রাই প্রয়োজন হইয়া থাকে। ঔষধের শক্তি প্রবলতর অথচ মাত্রা ক্ষুদ্র হওয়ায়, ঔষধের প্রভাব শরীর হইতে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দূরীভূত হইয়া যায়। ক্ষুদ্র মাত্রার ঔষধ ব্যবহার করার অর্থই হইল সদৃশ লক্ষণ মতে ব্যবহার করার পর ঔষধশক্তি রোগশক্তির স্থানগুলি দখল করে এবং রোগশকি দূরীভূত হইয়া যাওয়ার পর ঔষধশক্তির প্রাবল্য দেহের ঐ সকল যন্ত্রে তখনও থাকে অথচ স্বল্প সময়ের জন্য। কারণ ক্ষুদ্র মাত্রা দিয়া ক্রিয়া স্থিতির কাল বাঁধিয়া দেওয়া হইয়াছে। মাত্রা যত ক্ষুদ্র হইবে হোমিওপ্যাথিক বৃদ্ধি তত সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী হইবে। তদুপরি হোমিওপ্যাথিক আরোগ্য বিধান প্রক্রিয়ায় ঔষধের ক্ষুদ্রমাত্রা মানুষের প্রাণসত্তায় সেইটুকু শুধু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যেটুকু মানুষের তৎকালীন স্বাস্থাকে স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় উন্নীত করার জন্য আবশ্যক হয়। অর্থাৎ জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়া জনিত কোন অবস্থা সৃষ্টি হয় না। বৃহৎ মাত্রার ঔষধ ব্যবহৃত হইলে ইহার ক্রিয়া দীর্ঘকাল থাকিয়া গিয়া রোগীকে দুর্বল, করিয়া ফেলে। অধিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করিলে তার প্রাথনিক বা মুখ্য ক্রিয়ায় কিছু উপশম হইলেও ঔষধের গৌণ বা জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়ার কুফল মতিয়া থাকে। বৃহৎ মাত্রা প্রয়োগের কুফলে- 

(ক) পরীক্ষাকারী অথবা রোগীর মৃত্যু ঘটিতে পারে।

(খ) বৃহৎ মাত্রা ঔষধের প্রাথমিক ক্রিয়া প্রকাশের সাথে সাথেই তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়, ফলে ঔষধ পরীক্ষা ক্ষেত্রে ঔষধের প্রকৃত গুনাগুন বিচার করা সম্ভব হয়। না। আর রোগীর ক্ষেত্রে সাময়িক উপশম দেখা দিলেও পর মুহূর্তে তীব্র আকারে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়, যাহা রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

(গ) নির্বাচন ভুল হইলে রোগীর ক্ষেত্রে বৃহৎমাত্রার ঔষধ বিপর্যয় ডাকিয়া আনে।

সুতরাং দেখা যায় ঔষধের মাত্রার বিভিন্নতার উপর ঔষধের ক্রিয়ার তারতম্য লক্ষিত হয়। বৃহৎমাত্রার ঔষধ বিশেষ অঙ্গ অথবা দেহের বৃহৎ অংশে তীব্রভাবে ক্রিয়া প্রকাশ করে। আর ক্ষুদ্র মাত্রা সোজাসুজি ভাবে স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া সর্বদেহে ও মনে তাহার ক্রিয়া প্রকাশ করে অথচ বিপরীত ক্রিয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।



প্রশ্ন- উপযুক্ত সুক্ষ্মমাত্রার পরিমাণ সম্পর্কে মহাত্মা হ্যানিমানের মতামত কি? 

উত্তর : ঔষধের উপযুক্ত সূক্ষ্মমাত্রার পরিমান সম্পর্কে মহাত্মা হ্যানিমান বলেন। ১০০টি অনুবটিকার এক যেন ওজন হয় এইরূপ ঔষধ সিক্ত একটিমাত্র শুভ অনুবটিকা জিহ্বার উপর প্রদান করিলে অল্পদিনের পীড়ার পক্ষে যৎপরোনাস্তি অল্পমাত্রা হয়। তবে যদি এইরূপ একটি মাত্র অনুবটিকা দুগ্ধ শর্করার সহিত বঁড়া করিয়া কিছু পরিমান জলের সহিত মিশ্রিত করিয়া প্রতিবার সেবনের পূর্বে ঔষধটিকে উত্তমরূপে আলোড়নপূর্বক রোগীকে সেবন করানো হয় তাহা হইলে শুষ্কাবস্থায় ঔষধ, সেবন করানো অপেক্ষা ইহা অধিক কার্যকরী হয়। বহুদিন স্থায়ী ও উগ্র পীড়ায় এইভাবে জল মিশ্রিত ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। তদুপরি তিনি আরও বলিয়াছেন যে, একফোঁটা ঔষধ দ্বারা ৫০০টি অনুবটিকা সিক্ত হয় এইরূপ অনুবটিকার একটিমাত্র অনুবটিকাই ক্ষুদ্রতম মাত্রা এবং এই ক্ষুদ্রতম মাত্রাই বিনা উপদ্রবে পীড়া আরোগ্য করিতে পারে।




প্রশ্ন-  এক বা একক মাত্রা কাহাকে বলে?

উত্তর : একমাত্রা ঔষধ বা একক মাত্রা সম্পর্কে বিভিন্ন চিকিৎসক বিভিন্ন মতামত পোষণ করেন। সাধারণতঃ কোন রোগীকে বা প্রভারদেরকে একবার যতটুকু ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তাহাকে একমাত্রা বা একক মাত্রা বলা হয়। তবে প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হইবে এমন সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত মাত্রা পূর্ব থেকে নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া অসম্ভব। যে কারণে মাত্রার এই পরিমান সঠিকভাবে এখনও নির্ধারিত হয় নাই। কারণ ভেষজ পরীক্ষাকালীন দেখা গিয়াছে যে একজন ব্যক্তি মানুষ যত দূর্বলই তাহাকে মনে হোক না কেন সে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং ঔষধের সামান্য পরিমানে সে আক্রান্ত হয় না। অথচ অল্প ক্ষমতাশালী ঔষধের সামান্য পারিমাণে অতিশয় পীড়িত হইয়া পড়ে। আবার কোন ব্যক্তি মানুষকে খুব বলশালী মনে হইলেও কম ক্ষমতাশালী ঔষধ দ্বারা অতি সহজেই পীড়িত হইয়া পড়ে। অতএব একমাত্রা বলিতে যে পরিমান ঔষধ প্রয়োগ করিবার পর রোগীর দেহে প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হয়, তাহাই একমাত্রা ঔষধ বলিয়া ধরিয়া নিতে হইবে। হ্যানিমানের মতে ৬ষ্ঠ সংস্করণ 'অর্গাননে' উল্লেখিত কোন ঔষধের একটি ১০ নং অনুবটিকাকে একমাত্রা ঔষধ ধরা হয়।




প্রশ্ন-  কোন ক্ষেত্রে নির্বাচিত ঔষধের উপযুক্ত মাত্রা কোনটি?

উত্তর ঃ কোন ক্ষেত্রে নির্বাচিত ঔষধের উপযুক্ত মাত্রা নির্ভর করে নির্বাচিত ঔষধটি রোগ লক্ষণের সঙ্গে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ তাহার উপর। রোগ লক্ষণের সঙ্গে ঔষধ লক্ষণের যত বেশী সাদৃশ্য থাকিবে, রোগীতে যত বেশী সংখ্যক পরিচায়ক লক্ষণ থাকিবে রোগীর সেই ঔষধের প্রতি প্রবণতা তত বেশী থাকিবে। কাজেই ঔষধের অতি অল্প পরিমাণও রোগীতে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিয়া প্রকাশ করিবে। সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত পরিমাণ হইল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রতম। কাজেই সাদৃশ্য যত বেশী ঔষধের পরিমান তত কম হইবে। অর্থাৎ ঔষধের শক্তি যত বেশী, মাত্রা তত কম, ঔষধের শক্তি যত কম, মাত্রা তত বেশী।



প্রশ্ন- একবারে একমাত্রা ঔষধ বলিকে কি বুঝায়?

উত্তর : হ্যানিমানের মতে ১০০টি অনুবটিকায় ১ গ্রেন ওজন হয় এইরূপ ঔষধসিক্ত অনুবটিকার একটি বটিকা হইল উপযুক্ত একমাত্রা। আবার পঞ্চাশ সহস্রতমিক ঔষধ প্রয়োগকালীন একটি পরিষ্কার বোতলে ৭/৮ টেবিল চামচ পরিশ্রুত জল নিয়া তাহাতে নতুন পদ্ধতিতে পস্তুত ঔষধের একটি অনুবটিকা ভালভাবে দ্রবীভূত করিয়া নিতে হইবে। তারপর এই দ্রবণটি ১০/১২ বার ভালভাবে ঝাঁকি দিয়া তাহা হইতে এক টেবিল চামচ নিয়া আবার ৭/৮ টেবিল চামচ পরিস্কার জলে মিশাইয়া ভালভাবে আলোড়িত করিয়া তাহার এক চামচ রোগীকে দিতে হইবে। ইহাই ঔষধের এক মাত্রা এবং একবারে একমাত্রা।



প্রশ্ন- একবারে একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয় কেন?

উত্তর : প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ঔষধের লক্ষণের সাদৃশ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া এককালে একটিমাত্র অবিমিশ্র ঔষধ প্রয়োগ করিবেন। একাধিক ঔষধ প্রয়োগ করিলে একাধিক ঔষধের শক্তি ও রোগ শক্তির তুমুল আলোড়নের ফলে অসুস্থ জীবনীশক্তি আরও অসুস্থ হইয়া পড়িবে। তাহা ছাড়া সুস্থ মানবদেহে একবারে একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ করিয়া তাহার লক্ষণাবলী লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। কিন্তু দুই বা ততোধিক ঔষধ প্রয়োগ করিয়া সুস্থ মানবদেহে এই মিশ্রণ কি জাতীয় লক্ষণাবলী সৃষ্টি করে তাহা কখনও দেখা হয় নাই। কাজেই মিশ্র ঔষধের সৃষ্টি লক্ষণ জানা নাই বলিয়া তাহা প্রয়োগ করা সম্ভব নয় এবং একক ঔষধ প্রয়োগই যুক্তিযুক্ত। দ্বিতীয়তঃ প্রয়োগকৃত একক ঔষধ আংশিক সাদৃশ্যবাহী হইলে তাহা রোগীতে অতিরিক্ত লক্ষণ সৃষ্টি করিয়া থাকে, ফলে ঐ ঔষধ সম্বন্ধে আমাদের জানের ভাতার আরও উৎকর্ম সাধিত হয়। তৃতীয়ত প্রয়োগকৃত ঔষধ ভুল নির্বাচিত হইলে উহা রোগীতে জটিলতা সৃষ্টি করিয়া থাকে ফলে ঐ ঔষধ রোগীতে কি প্রকার জটিলতা সৃষ্টি করিয়াছে তাহা আমরা জানিতে পারি। তাই এককালে একটিমাত্র ঔষধই আরোগ্যের নিমিত্ত প্রয়োগ করিতে হইবে।




প্রশ্ন- পরিবর্তিত মাত্রা কি?

উত্তর ঃ অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণে মহাত্মা হ্যানিমান একমাত্রার পরিমান ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতির ঔষধের দ্বারা ঔষধিকৃত একটি ১০নং অনুবৃটিকা হইবে উল্লেখ করেন এবং একটি শিশিতে কয়েক ফোঁটা বিশুদ্ধ সুরাসার সহ - অংশ পর্যন্ত ৭/৮ টেবিল চামচ পরিশ্রুত জল নিয়া তাহার ভিতর ঐরূপ একমাত্রা ঔষধ নিয়া প্রত্যেকবার প্রয়োগের পূর্বে শিশিকে ১০/১২ বার ঝাঁকাইতে হইবে এবং ইহা হইতে একটেবিল চামচ জল মিশ্রিত ঔষধ একটি ৭/৮ টেবিল চামচ পরিশ্রত জলযুক্ত কাঁচের গ্লাসের ভিতর মিশ্রিত করিতে হইবে। তারপর গ্লাসের ঔষধকে ভালভাবে সজোরে নাড়া দিয়া ইহা হইতে একবারে এক বা দুই চামচ পরিমান রোগীকে প্রয়োগ করিতে হ্যানিমান উপদেশ দিয়াছেন। ইহার ফলে একক মাত্রা আরও বিভক্ত, সূক্ষ্ম ও পরিবর্তিত হয়। প্রয়োজন বোধে এই নিয়মে আরও গ্লাস পরিবর্তন। করিয়া কিংবা ঔষধকে এক ড্রাম শিশিতে মিশ্রণ তৈরী করিয়া প্রত্যেকবার প্রয়োগের -পূর্বে আগের নিয়নে ঝাঁকি দিয়া তাহা হইতে ঘ্রাণ নিতে বলেন। এইসব ঘটনার উক্ত ক্ষুদ্রতম এককমাত্রা আরও সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী হইয়া প্রতিবারেই কিছুটা পরিবর্তিত হয় এবং ফলে যে ধরনের মাত্রার সৃষ্টি হয় ইহাই পরিবর্তিত মাত্রা। "একক মাত্রা" নামক নিয়মনীতি বিকশিত হইয়া "পরিবর্তিত একক মাত্রায় উন্নীত হইয়াছে।


প্রশ্ন- একক মাত্রায় ঔষধ প্ররোগের উপকারিতা কি? 

বা, একবারে একমাত্রা কেন প্রয়োগ করা হয়?

উত্তর ঃ একবারে একটি মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ হইলে উহা অতিশয় কার্যকরী হয়। যদি একটি মাত্রাকে পানিতে গুলিয়া বিভক্ত করিয়া প্রত্যেকবারে প্রয়োগের পূর্বে ২ হইতে ১০/১২ বার ঝাঁকি দিয়া পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ করা হয় তবে উহা অধিক কার্যকরী হয়। ঔষধকে পরিবর্তিত একক মাত্রায় প্রয়োগ করিলে যাত্রাটি অনেক সূক্ষ্ম হয়। ঔষধ রোগীর লক্ষণের সহিত যত বেশী সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন হয় ও উহার মাত্রা যত বেশী ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্ম হইবে ততই আরোগ্যকারী পরিবর্তন পাওয়া যায়। এইজন্য ঔষধকে একক মাত্রায় প্রয়োগ করিতে হয়।



প্রশ্ন- একাধিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ নিষিদ্ধ কেন?

উত্তর ঃ একক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ ছাড়া একবারে যদি একাধিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তাহা হইলে মাত্রা অত্যন্ত বৃহৎ হইয়া যায়। বৃহৎ মাত্রায় ঔगধ প্রয়োগ করিলে রোগীর ক্ষতি সাধিত হয়। কেননা রোগশক্তি অপেক্ষা যদি ঔষধশক্তি অধিক হয়, এই অত্যধিক ঔষধ শক্তির ক্রিয়ার বিরুদ্ধে জীবনী শক্তি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে । তাই বৃহৎ পরিমানের ঔষধের কারণেই সেই ঔষধের কিছু লক্ষণ দেহ ও মনে প্রকাশ পায়। এই জাতীয় লক্ষণকে ঔষধজ লক্ষণ এবং বৃদ্ধিকে ঔষধঙ্গ বৃদ্ধি বলে। একাধিক মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার করা হইলে ঔষধজনিত বৃদ্ধি অত্যন্ত বেশী হয়। ঔষধজনিত বৃদ্ধি দর্বল, অত্যনুভূতিশীল, কিংবা মরণাপন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপদজনক। তাই রোগীকে এক সময়ে একাধিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত নয়। 



প্রশ্ন-৬.১৮। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রাকে কোন্ কোন্ মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়?

উত্তর : হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রা অনুবটিকা, সুগার অব মিল্ক, সুরাসার এবং পরিশ্রুত জলের মাধ্যমে (যাহার মধ্যে কোন ভেষজ গুন নাই) প্রয়োগ করা হয়। এই ঔষধের মাত্রা মুখ, জিহ্বা, মায়ের দুধের মাধ্যমে, ঘ্রাণে এবং অন্যান্য অঙ্গের মাধ্যমে সেবন, মাণ ও মর্দন দ্বারা গ্রহন করা যাইতে পারে।



সমাপ্ত




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ