পথ্য ও পরিচর্যা - কেইস টেকিং- চতুর্থ বর্ষ

পথ্য ও পরিচর্যা - কেইস টেকিং- চতুর্থ বর্ষ


প্রশ্ন - রোগাবস্থায় ও আরোগ্যের ক্ষেত্রে পথ্যাদি ও সাধারণ চিকিৎসার গুরুত্ব আলোচনা কর । 

উত্তর  ঃ রোগী যাহাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হইয়া উঠে এবং দ্রুত স্বাস্থ্য ফিরিয়া পায় সেজন্য পথ্যের যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । অসুস্থদেহে ক্ষয় সাধিত হয় বেশী । দেহের ক্ষয় পুরণের জন্য রোগীকে যত বেশী সম্ভব খাইতে দেওয়া উচিত । তবে রোগের প্রকার অনুসারে পথ্যা  প্রদান করা আবশ্যক । তাহা না হইলে পথ্য রোগ আরোগ্যের পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায় । রোগাবস্থায় এবং রোগারোগ্যের পথে একজন রোগীর প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত । আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন ডাল , মাছ , মাংস , সীম , সবুজ শাকশব্জী ও ফলমূল খাওয়া উচিত । রোগাবস্থায় যদি সঠিক পথ্য দেওয়া না হয় তবে রোগারোগ্য বিলম্বিত হয় । পথ্য দেওয়ার সময় সর্বদা লক্ষ্য রাখিতে হইবে যেন কোন ভেষজগুণ সম্পন্ন পথ্য না দেওয়া হয় এবং রোগের উত্তেজক কারণ হিসাবে কাজ করে এইরূপ পথ্য দেওয়া যাইবে না । কেননা ইহাতে ঔষধের ক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হইতে পারে । রোগী বিশেষ কোন দ্রব্যে অভ্যস্ত হইয়া পড়িলে হঠাৎ সকল দ্রব্য বন্ধ করিয়া দিলে নানারূপ মানসিক ও দৈহিক অবসাদজনক লক্ষণ সৃষ্টি হইতে পারে । এই সকল ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে মাত্রা ও পরিমাণ কমাইয়া পরে বন্ধ করা যাইতে পারে । দীর্ঘ সময় রাত্রি জাগরণ , অতিরিক্ত মৈথুন , অপরিষ্কার থাকা , খারাপ পুস্তকাদি পাঠ , অত্যন্ত ক্রোধ ও ক্ষোভ , অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম , জলাভূমি ও আর্দ্র স্থানে বাস , ভিজা কক্ষে বাস , প্রভৃতি আরোগ্য সম্পাদনের অন্তরার । চিকিৎসাকালে এই বিষয়গুলি যতদূর সম্ভব পরিত্যাগ করা আবশ্যক । আরোগ্যের বিঘ্ন ঘটাইতে পারে সেই সকল বস্তু ও বিষয়গুলি পরিত্যাগ করিয়া তাহার বিপরীত বস্তু ও বিষয়গুলি ব্যবস্থা করা রোগীর জন্য উৎকৃষ্ট পরিচর্যা ও আরোগ্যের পক্ষে সুফলপ্রদ । পথ্যাপ্স্য ও সাধারণ চিকিৎসার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে ।



প্রশ্ন - তরুণ বা অচিররোগের পথ্য সম্বন্ধে আলোচনা কর । 

উত্তর  ঃ তরুণ রোগে অতি দ্রুত রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে । তাই যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে । অচির বা তরুণ রোগের ক্ষেত্রে রোগী যাহা খাইতে বা পান করিতে চায় তাহা পরিমিত মাত্রায় দেওয়া হ্যানিমান সমর্থন করিয়াছেন । তাহাতে আরোগ্যের পথে যদি কিছু বাধাও আসে রোগীর অন্তরের পরিতৃপ্তি এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধের আরোগ্যদায়িনী শক্তি দ্বারা সে বাধা অতিক্রান্ত হয় । কারণ রোগীর আকাংখিত বস্তু যদি ভেষজগুণহীন হয় তবে আকাংখিত বস্তু গ্রহণে পরিতৃপ্তি লাভের পর জীবনীশক্তি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে । তাই তরুণ রোগে খাদ্য ও পথ্য সম্বন্ধে কিছুটা শিথিলতা সমর্থন করে । 


প্রশ্ন - চিররোগের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিমানের মন্তব্য বর্ণনা কর। 

উত্তর : চিররোগগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসাকালীন তাহাদের খাদ্য ও পথ্যে এবং অন্যান্য বিষয়ের প্রতি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ডাঃ হ্যানিমান নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন । কারণ পথ্য ও পরিচর্যার মধ্যে ভেষজগুন থাকিলে তথা রোগ উৎপাদিকা শক্তি থাকিলে তাহা পীড়ার বৃদ্ধি ঘটায় । ডাঃ হ্যানিমানের উপদেশ হইল এই যে , চিকিৎসাকালে সকল প্রকার ভেষজধর্মী খাদ্য বর্জন করিতে হইবে । যাহাতে সূক্ষ্মমাত্রার ঔষধের শক্তি উহা দ্বারা অভিভূত হইয়া না পড়ে । মদ , অতিরিক্ত চা , কফি , জর্দা , দোক্তা , মশলাযুক্ত খাদ্য , তীব্র সুগন্ধি দ্রব্য , ঔষধ মিশ্রিত সুগন্ধি , দাঁতের মাজন , কর্পূর মিশ্রিত খাদ্য , রাত্রি জাগরণ , অনিয়মিত খাদ্য , নস্য ব্যবহার , অতি মৈথুন , রুদ্ধ গৃহে বসবাস , আর্দ্রভূমিতে বাস , অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম , অত্যধিক ক্রোধ ও ক্ষোভ প্রভৃতি বিষয় দ্রুত আরোগ্য সম্পাদনের অন্তরায় । তাই বিষয়গুলি যতদূর সম্ভব পরিহার করিতে হইবে । চিররোগের ক্ষেত্রে আরোগ্যের বিঘ্ন ঘটাইতে পারে সেই সকল বস্তু ও বিষয়গুলিকে পরিত্যাগ করিয়া প্রয়োজন হইলে তাহার বিপরীত বস্তু ও বিষয় ব্যবস্থা করা উৎকৃষ্ট পরিচর্যা । যেমন ঔষধজ গুনবিহীন পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা , খারাপ বই পুস্তক পাঠে যাহাদের অভ্যাস , তাহাদেরকে নীতিজ্ঞানপূর্ণ পুস্তুত পাঠের ব্যবস্থা করা , আবদ্ধ ঘরে যে সময় কাটায় , তাহাকে উন্মুক্ত বায়ুতে ব্যায়াম ও ভ্রমণের ব্যবস্থা করা , চা , কফি , মদ প্রভৃতির পরিবর্তে , দুগ্ধ পানের ব্যবস্থা করা , অধিক মশলাযুক্ত খাদ্যের পরিবর্তে কম মশলাযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি ।


প্রশ্ন - ভেষজগুণ সম্পন্ন পথ্য হোমিও চিকিৎসাকালে রোগীকে দেওয়া যাইবে না কেন ? 
বা , চিকিৎসাকালে রোগীর খাদ্য ও পথ্য সম্বন্ধে কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে এবং কেন ? 

উত্তর : চিকিৎসাকালে রোগীর খাদ্য ও পথ্য সম্বন্ধে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত । হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অত্যন্ত সুস্পমাত্রায় ব্যবহৃত হয় । এই জন্যই চিকিৎসাকালে রোগীর খাদ্য ও পথ্যের মধ্যে এমন কিছু থাকিতে পারিবে না যাহার নিজস্ব ভেষজ গুণ আছে । চিকিৎসাকালে ভেষজ গুণ সম্পন্ন কোন পথ্য দিলে পথ্যের ভেষজ গুণটি ক্রিয়া করিয়া সূক্ষ্মমাত্রার ঔষধের ক্রিয়াকে বিনষ্ট করিতে পারে বা বাধা দিতে পারে । চিররোগের চিকিৎসায় আরোগ্য সম্পাদনের এইরূপ পথ্যঘটিত বিঘ্নগুলির প্রতি অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে । এই সকল পীড়ায় রোগীদের খাদ্যে অথবা অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রীতে অনেক সময় এমন সব পদার্থ থাকে যাহা বাস্তবিক পক্ষে ঐ সমস্ত রোগীদের রোগ বৃদ্ধি সম্পর্কে সহায়তা করিয়া থাকে । যেমন কফি , চা , মদ , জর্দা , দোভা , মশলা যুক্ত খাদ্য , ঔষধ মিশ্রিত সুগন্ধি , দাঁতের মাজন , তীব্র সুগন্ধি দ্রব্য , কর্পূর মিশ্রিত খাদ্য , গুরুপাক দ্রব্য , ভেষজগুণ সম্পন্ন যাবতীয় উদ্ভিদ খাদ্য , পেঁয়াজ প্রভৃতি খাদ্যদ্রব্য চিকিৎসাকালে বর্জন করিতে হইবে । কারণ এইগুলির দ্বারা ঔষধের ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটাইতে পারে । 


প্রশ্ন - চিকিৎসাকালে ভেষজগুণ সম্পন্ন খাদ্য কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে ? 

উত্তর : চিকিৎসা কালে রোগীর খাদ্য ও পানীয় সম্বন্ধে বিশেষভাবে বিচার করিয়া চলিতে হইবে । অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাদ্য , মাদক দ্রব্য , কাঁচা শষ্য , সালাদ আহার এবং সকল প্রকার উত্তেজক পানীয় বর্জন করিতে হইবে । স্বাস্থ্য রক্ষক অথচ সহজে পরিপাক হয় এইরূপ লঘুপাক খাদ্য ও পানীয় আহার করিতে হইবে । 


প্রশ্ন - চিকিৎসাকালীন রোগীর খাদ্য ও পথ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয় বা , ‘ পথ্যাদি রোগারোগ্য ও ঔষধের ক্রিয়ার বাধা প্রদান করে । 

উত্তর : চিকিৎসাকালীন রোগীর খাদ্য ও পথ্য নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক । পথ্য ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হইল সংযম পালনের মধ্য দিয়া এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাহাতে ঔষধ দ্রুত ও বিনা বাধায় ক্রিয়াশীল হইতে পারে । খাদ্য ও পথ্য নিয়ন্ত্রণ করা না হইলে , চিকিৎসাকালীন ভেষজগুণসম্পন্ন কোন খাদ্য ও পথ্য গ্রহণ করিলে তাহা প্রদত্ত ঔষধের শক্তিকে অভিভূত , খর্ব বা বিনষ্ট করিতে পারে । যে কারণে চিকিৎসাকালীন রোগীকে সকল প্রকার ভেষজধর্মী খাদ্য বর্জন করিতে হইবে , পথ্যাদি হইতে হইবে ভেষজগুণ বর্জিত । এমনভাবে খাদ্য ও পথ্য নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে যাহাতে সূক্ষ্মধর্মী ঔষধের শক্তি উহা দ্বারা অভিভূত বা বিনষ্ট না হয় । কারণ ভেষজ ক্রিয়া সম্পন্ন পথ্য ও খাদ্য ঔষধের ক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে । 


প্রশ্ন - রোগীর আস্তর প্রকৃতিই পথ্যাপথ্যের নির্ভুল নির্দেশ দান করে আলোচনা কর । 
বা , ' সুস্থ মানসিক অবস্থা সম্পন্ন তরুণ রোগীর আভ্যন্তরীণ আকাংখাই পথ্যাপথ্যের নির্ভুল নির্দেশ দান করে আলোচনা কর । 

উত্তরঃ প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করিয়াই হোমিওপ্যাথির নীতি । প্রতিটি রোগীই অন্য রোগী হইতে স্বতন্ত্র । কাজেই তাহার ইচ্ছা ও অনিচ্ছা সযত্বে অনুধাবন করিতে হইবে এবং তাহা যদি ঔষধের বিপক্ষে ক্ষতিকারক না হয় তবে রোগীকে তাহার অভিলষিত দ্রব্য দিতে কিছু মাত্র আপত্তি করা উচিত নয় । কেননা প্রকৃতি সেই দ্রব্যই আকাংখা করে । কোন খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করিতে হইবে , কোনটা বর্জন করিতে হইবে তাহা রোগীর আন্তর প্রকৃতিই বিভিন্ন চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমাদিগকে জানাইয়া দেয় । রোগীর মানসিক অবস্থা সুস্থ থাকিলে রোগীর পথ্যাপথ্যের জন্য আভ্যন্তরীণ আকাংখা শক্তির আবেদন অনুসারে রোগীকে তাহার আকাংখিত বস্তু খাইতে দিলে ইহা প্রায়ই রোগীর জন্য হিতকর হয় । উপরন্তু কোন খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি ইচ্ছা ও অনিচ্ছা অনেক সময় আমাদের সঠিক ঔষধের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে । সকল অবস্থাতেই প্রকৃতির ভাষা বুঝিয়া পথ্যাদির ব্যবস্থা করিতে হইবে । 


প্রশ্ন -  রোগী চিকিৎসাকালে পথ্য ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কি ? 

উত্তর : পথ্য ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হইল সংযম পালনের মধ্য দিয়া এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাহাতে ঔষধ দ্রুত ও বিনা বাধায় ক্রিয়াশীল হইতে পারে । হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ক্রিয়া সূক্ষ্মস্তরে সাধিত হইয়া থাকে । শান্ত অনুকুল পরিবেশে ঔষধ শক্তি সরাসরি প্রাণসত্ত্বার উপর ক্রিয়াশীল হইতে পারে । কিন্তু কোন উত্তেজক দ্রব্য গ্রহণ করিলে তাহা দ্বারা প্রাণসত্বা বিক্ষুদ্ধ হয় এবং ঔষধের ক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় । ভেষজগুণ সম্পন্ন কোন খাদ্য গ্রহণ করিলে তাহা প্রদত্ত ঔষধের শক্তিকে অভিভূত , খর্ব বা বিনষ্ট করিতে পারে । তাই পথ্য ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হইল রোগীতে এমন অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাহাতে ঔষধের সূক্ষ্মশক্তি দেহযন্ত্রে সহজেই ঝংকার তুলিতে । 


প্রশ্ন -  চিকিৎসাকালীন রোগীর পথ্য ও খাদ্যে বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ কি কি ? 

উত্তর : চিকিৎসাকালীন রোগীর পথ্যে ও খাদ্যের মধ্যে যে সমস্ত বস্তুর ভেষজগুণ বর্তমান আছে সেগুলি বাদ দিতে হইবে । মশলা মিশ্রিত পানীয় , লেমনেড সোডা , বাসি পঁচা বা গুরুপাক দ্রব্য , সুগন্ধি দ্রব্য , শুকনা মাছ , নোনা মাছ , ভেষজগুণ সমন্বিত শাক শব্জী , পেঁয়াজ , রসুন , আদা , টক জাতীয় দ্রব্য , কর্পূর , মশলাযুক্ত খাদ্য , প্রভৃতি খাদ্য তালিকা হইতে বাদ দিতে হইবে । তাহা ছাড়া বিড়ি সিগারেট , দোক্তা , জর্দা , তামাক , নস্য গ্রহণ , চা ও কপি পান , মদ চিনি ও লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার অবশ্যই পরিহার করিতে হইবে । 


প্রশ্ন - রোগের প্রকৃতির উপর কিভাবে পথ্য নির্বাচন নির্ভর করে আলোচন কর । 

উত্তর : অচির রোগে প্রাণসত্তার চাহিদা বিভিন্ন চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে অতি স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয় । এই চিহ্ন ও লক্ষণ যে শুধু সঠিক ঔষধের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে তা নয় , পথ্যাদি নির্বাচনেও যথেষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে । অচিররোগে রোগীতে প্রকাশিত আকাংখা পুরণ হইলে রোগীর মনে তৃপ্তি আসে ও প্রাণসত্ত্বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে । ফলে রোগী সাময়িক উপশম বোধ করে । অচির রোগে যে দ্রব্য গ্রহণে রোগের বৃদ্ধি হয় রোগী সাধারণতঃ সে দ্রব্য নিজেই পরিহার করে । যেমন তরুণ প্রদাহ যুক্ত জ্বরে যেখানে একোনাইট প্রযোজ্য সেখানে পরিষ্কার শীতল জলের প্রতিই রোগীর আকাংখা থাকে । চিররোগের ক্ষেত্রে পথ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থায় বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন । অনিষ্টকর প্রভাব ও ভুল পথ্য রোগের বৃষ্টি ঘটায় বলিয়া ঐ সমস্ত প্রভাব ও দ্রব্য সযত্নে পরিহার করিতে হইবে । খাদ্য তালিকা হইতে ভেষজগুণ সম্পন্ন যাবতীয় দ্রব্য , উত্তেজক দ্রব্য , মাদক দ্রব্য ইত্যাদি বর্জন করিতে হইবে । উপযুক্ত পুষ্টিকর ও ভেষজ ক্রিয়াবিহীন খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করিতে হইবে ।


প্রশ্ন - খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাংখা ও অনীহার গুরুত্ব কতখানি ? 

উত্তর : খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাংখা ও অনীহার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করিয়া চলাই হোমিওপ্যাথিক নীতি । কাজেই তাহার আকাংখা ও অনীহা সযত্নে অনুধাবন করিতে হইবে এবং তাহা যদি ঔষধের ক্রিয়ার পক্ষে ক্ষতিকারক না হয় তবে তরুণ রোগে রোগীকে তাহার অভিলষিত দ্রব্য দিতে কিছুমাত্র আপত্তি করা উচিত নয় । কেননা প্রকৃতি সেই দ্রব্যই আকাংকা করে । কোন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করিতে হইবে বা বর্জন করিতে হইবে তাহা রোগীর আন্তর প্রকৃতিই বিভিন্ন চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমাদিগকে জানাইয়া দেয় । উপরন্তু কোন খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি আকাংখা ও অনীহা অনেক সময় আমাদেরকে সঠিক ঔষধের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে । আবার অচিররোগে যে দ্রব্য গ্রহণে রোগের বৃদ্ধি হয় রোগী সাধারণত সে দ্রব্য নিজেই পরিহার করে । আবার চিররোগের ক্ষেত্রে রোগীর খাদ্য তালিকা হইতে ভেষজগুণ সম্পন্ন যাবতীয় দ্রব্য , উত্তেজক দ্রব্য , মাদকদ্রব্য প্রভৃতি বর্জন করিতে হইবে । কারণ এইগুলি ঔষধের ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায় । উপরোক্ত আলোচনা হইতে বুঝা যায় যে খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাংখা ও অনীহার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । 


প্রশ্ন - রোগী চিকিৎসায় পরিচর্যার গুরুত্ব লিখ । 

উত্তরঃ রোগীর চিকিৎসায় পরিচর্যার যথেষ্ট গুরুত্ব রহিয়াছে । রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য এবং দ্রুত হৃত স্বাস্থ্য ফিরিয়া পাওয়ার জন্য উপযুক্ত পথ্য ও পরিচর্যা প্রয়োজন । রোগগ্রস্ত মানবতার চাহিদা ও ইচ্ছা অনিচ্ছা বিভিন্ন চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় । রোগীতে প্রকাশিত আকাংখা পুরণ হইলে রোগীর মনে তৃপ্তি আসে ও প্রাণসত্ত্বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে । পথ্য ব্যবস্থা ও সাধারণ পরিচর্য একটি নীতি অনুযায়ী স্থির করা হয় । সে নীতি হইল স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি । প্রতিটি রোগী অন্য রোগী হইতে আলাদা । এই কারণেই বাঁধা ধরা কোন নিয়ম সমস্ত রোগীর বেলায় প্রযোজ্য হইতে পারে না । পরিচর্যা ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশেষ করিয়া শীত ও উত্তাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া বিশেষভাবে অনুধাবন করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত । যেমন - রোগীর ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও মুক্ত বাতাসের ব্যবস্থা , রোগীর যাহাতে ঠাণ্ডা না লাগে সেজন্য গাত্রে প্রয়োজনীয় আচ্ছাদন দেওয়া , তীব্র আলো সহ্য না হইলে রোগীর ইচ্ছানুযায়ী আলো নিয়ন্ত্রণ করা , শয্যা কোমল ও আরামদায়ক হওয়া , বিছানার চাদর পরিষ্কার রাখা , মেরুদণ্ডের রোগীর জন্য বায়ুপূর্ণ বা পানিপূর্ণ শয্যার ব্যবস্থা করা , রোগীকে হেলান বা ঠেস দিয়া বসানোর জন্য কাঠের বেড রেস্টের উপর নরম বালিশ রাখিয়া ঠেস দিয়া বসানো , রোগীর ঘর দুর্গন্ধমুক্ত করা ও সংক্রামক দোষ মুক্ত করার জন্য দেওয়াল , মেঝে , আসবাবপত্রাদি কার্বলিক সাবান ঘষিয়া ধৌত করা , খাবার যথাসম্ভব রুচিকর ও আকর্ষণীয় করিয়া প্রস্তুত করা , রোগীর ঘরে বা বাহিরে কোন গোলমাল না করা এই সব আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ও পরিচর্যার মাধ্যমে রোগীর প্রাণসত্ত্বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং দ্রুত সুস্থ হইয়া উঠে । শুধু ঔষধ সেবনে রোগী আরোগ্য লাভ করে না , সে সাথে উপযুক্ত পরিচর্যা না হইলে ঔষধ সেবনই বৃথা । তাই রোগী চিকিৎসায় পরিচর্যার গুরুত্ব অপরিসীম । 


প্রশ্ন - রোগীর পরিচর্যা সম্পর্কে সাধারণ নির্দেশাবলী আলোচনা কর । 

উত্তর : সদৃশ ঔষধ সেবনের সাথে সাথে রোগীর ভাল সেবাযত্ন ও পরিচর্যা অবশ্যই প্রয়োজন । অনেক সময় কিছু কিছু রোগে ঔষধ ছাড়া শুধু পরিচর্যাতেই রোগী সুস্থ হইয়া উঠে । নিম্নে পরিচর্যার সাধারণ নির্দেশাবলী আলোচনা করা হইল । 

১ ) রোগীর আরাম আয়েশের ব্যবস্থা- রোগীকে নিরিবিলি ও আরামদায়ক স্থানে থাকিতে দেওয়া উচিত । পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা যাহাতে থাকে । রোগীর অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম যাহাতে না লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে । বাতাস বেশী ঠাণ্ডা হইলে বা রোগী শীতবোধ করিলে তাহার গায়ে গরম কাপড় , কম্বল প্রভৃতি দিতে হইবে । আর আবহাওয়া যদি গরম হয় বা রোগীর গায়ে জ্বর থাকিলে তাহার গায়ে কিছুই দিতে হইবে না । 
২ ) তরল খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা জ্বর বা পাতলা পায়খানা থাকিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় ও তরল খাবার যেমন সরবত , ডাবের পানি , ফলের রস , নরম খাবার প্রভৃতি দেওয়া উচিত । 
৩ ) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রোগীকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত । প্রতিদিন তাহাকে গোসল করানো উচিত । যদি অসুস্থতার জন্য বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে না পারে তবে হাল্কা গরম পানিতে গা মোছাইতে হইবে । কাপড় , চোপড় , বিছার চাদর প্রভৃতিও যাহাতে নোংরা না থা ,সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত । 
৪ ) গৃহের পরিচ্ছন্নতা রোগীর গৃহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত । প্রতিদিন সকাল বিকাল দুই বেলা ঝাড় মোছ করিয়া গৃহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে । রোগীর গৃহে যাহাতে সর্বদা মুক্ত আলো বাতাস প্রবেশ করিতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত ।  
৫ ) সুষম ও উন্নত খাবার অসুস্থ শরীর বেশী ক্ষয় সাধন হয় । তাই অসুস্থ রোগীকে যত বেশী সম্ভব খাইতে দেওয়া উচিত । রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য ও পানীয় দেওয়া উচিত । আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন- সীম , ডাল , মাছ , মাংস , সবুজ শাক শব্জী ও ফলমূল রোগীর খাবার দরকার । অনেক ক্ষেত্রে বলকারক খাবার দিতে হয় । ভাত , রুটি , আলু , এই সবের জাউ , খিচুড়ী প্রভৃতি খাদ্য খাইতে দিতে হইবে । রোগী কিছু খাইতে না চাহিলে হাল্কা মিষ্টি জাতীয় সরবত খাওয়ানোর চেষ্টা করিতে হইবে ।  ইহা ছাড়া কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ পথ্যের দরকার হয় । 


প্রশ্ন - অতিরিক্ত অসুস্থ রোগীর বিশেষ পরিচর্যা সম্বন্ধে আলোচনা।

উত্তর  ঃ অতিরিক্ত অসুস্থ রোগীর বিশেষ পরিচর্যা সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হইল । 

১ ) তরল খাদ্য ও পানীয় - অত্যধিক অসুস্থ রোগীর পর্যাপ্ত তরল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত । বেশী পরিমাণে পান করিতে না পারিলে রোগীকে সামান্য সামান্য করিয়া পান করিতে দিতে হইবে । রোগী সারাদিন কতটা পরিমাণ পানীয় গ্রহণ করে তাহার একটা হিসাব রাখা দরকার । কারণ একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির কমপক্ষে দুই কেজির উপর পানীয় গ্রহণ করা উচিত এবং ৩ হইতে ৪ বার প্রস্রাব করা উচিত । যদি শরীরের পানি স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব না করে তবে তাহাকে বেশী পরিমাণে পানি পান করিতে হইবে । সামান্য লবণ মিশানো পুষ্টিকর তরল খাবার দিতে হইবে । এই সব খাইতে না চাহিলে নরম্যাল স্যালাইন বা গুড় লবণের সরবত দিতে হইবে । 
২ ) খাদ্য- রোগী অতিরিক্ত দুর্বল হইলে ও শক্ত খাদ্য খাইতে না পারিলে ডাল , ঝোল , ফলের রস , দুধ , ভাত বা গমের আটার জাউ , প্রভৃতি প্রদান করা উচিত । এই সাথে ডাল , সীম , কুচি করা মাংস , ডিম দিয়ে সুপ করিয়া দেওয়া যাইতে পারে । 
৩ ) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও বিছানায় পাশ ফিরাইয়া দেওয়া— গুরুতর অসুস্থ রোগীর জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব খুবই বেশী । রোগীকে প্রত্যহ গরম পানি দিয়া গোসল করাইয়া দিতে হইবে । যখনই বিছানা নোংরা হইবে ২/১ দিনপর পর বিছানার চাদর পরিবর্তন করিয়া দেওয়া উচিত । অত্যধিক দুর্বল রোগী অনেক সময় নিজে নিজে পাশ ফিরিতে পারে না । তাহাদেরকে দিনে কয়েকবার ধীরে ধীরে পাশ ফিরাইয়া দিতে হইবে । ইহাতে পিঠে ঘা হইবার আশংকা কম থাকে । 
৪ ) রোগীর অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করা রোগীর অবস্থার সামান্যতম পরিবর্তনও ভালভাবে লক্ষ্য করিতে হইবে । তাহা হইলে রোগীর অবস্থার উন্নতি না অবনতি হইতেছে তাহা বুঝা যাইবে । গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলি তালিকাভূক্ত করিতে হইবে । জ্বর বা গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি দিনে অন্তত ৪ বার পরীক্ষা করিয়া লিখিয়া রাখিতে হইবে ও সেই অনুযায়ী ঔষধের ব্যবস্থা করিতে হইবে । ক ) শরীরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রী , খ ) নাড়ির গতি প্রতি মিনিটে কত , গ ) শ্বাস প্রশ্বাস মিনিটে কত বার , ঘ ) কতবার প্রস্রাব ও পায়খানা করিয়াছে , প্রভৃতি । 


প্রশ্ন - রোগীর সেবা শুশ্রূষা বা নার্সিং চিকিৎসার প্রধান অংশ' আলোচনা কর । 

উত্তর  ঃ রোগীর সেবা শুশ্রূষা চিকিৎসার সর্বপ্রধান অংশ । শুধুমাত্র ঔষধ সেবনে রোগীর সুস্থতা আসে না । সামান্য জ্বর বা উদরাময়ে ইহার আবশ্যকতা অনুভূত না হইলেও কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ঔষধ সেবনের সাথে সাথে সেবা যত্নের গুণে রোগী আরোগ্য লাভ করে । রোগীর আস্তর প্রকৃতির পরিতৃপ্তি লাভের জন্য সেবা যত্ন বা নার্সের ভূমিকা অপরিহার্য । তাই রোগ চিকিৎসায় চিকিৎসকের চাইতে নার্সের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয় ।


প্রশ্ন - রোগীর সেবাকারীর বা নার্সের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচনা কর?

উত্তর- একজন আদর্শ সেবাকারী বা নার্সের কর্ম তৎপরতা , নিয়মানুবর্তিতা , মিষ্টভাষিতা , ধৈর্য , বুদ্ধিমত্তা , দায়িত্বশীলতা , পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও উত্তম স্বাস্থ্য — এই কয়েকটি গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন । ইহা ছাড়া রোগ সম্পর্কেও তাহার মোটামুটি কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । রোগীর দেহ রক্ষক হিসাবে তাহাকে সতর্ক প্রহরীর ন্যায় চিকিৎসকের আদেশ পালন এবং রোগীর কষ্ট লাঘবের জন্য তাহার সেবা , সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিধান , তাহাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা , সর্বদা সাহস , আশ্বাস ও অভয় প্রদান , কেহ তাহাকে বিরক্ত বা হতাশ না করে সেই দিকে দৃষ্টি রাখা , নিয়মিত ঔষধ পথ্যাদি প্রদান , তাহাকে গোসল করানো , মলমূত্রাদি ত্যাগে সাহায্য করা , নিয়মিত তাপমাত্রাদি গ্রহণ , রক্তচাপ ও নাড়ী পরীক্ষা ও তৎসহ রোগী সম্বন্ধে যাবতীয় জ্ঞাতব্য বিষয়াদি যেমন- তাহার মলমূত্রাদি ত্যাগের সংখ্যা , পরিমাণ , প্রকৃতি সকল প্রকার উপসর্গাদি রীতিমত লিপিবদ্ধ করিয়া চিকিৎসককে অবগত করানো প্রভৃতি কার্যাদি রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে পালন করিতে হইবে । রোগীর শয্যাদি যাহাতে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং কক্ষের বায়ু যাহাতে বিষাক্ত না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । ইহা ছাড়া রোগের সংক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করা এবং রোগ যাহাতে বিস্তার লাভ না করে তাহার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সেবাকারীর কর্তব্য । 
সকল বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখিয়া সেবাকারীকে ক্ষিপ্রতা সহকারে সুষ্ঠুভাবে তাহার উপরোক্ত কর্তব্যসমূহ পালন করিতে হইবে । যতক্ষণ তিনি রোগী পরিচর্যায় রত থাকিবেন । আলস্য বা নিদ্রা দীর্ঘায়িত হইলে রোগীর মহা অনিষ্ট সাধিত হইবে পারে । ইহা স্মরণে রাখিয়া দৃঢ়চিত্তে , সতর্কাবস্থায় , তৎপরতার সহিত চিকিৎসকের নির্দেশ পালন ও রোগীর রোগযন্ত্রণা লাঘবের জন্য সেবা শুশ্রূষাদি সম্পন্ন করিতে হইবে । সেবাকারী স্বয়ং নিয়মানুবর্তি না হইলে উক্ত কর্তব্যসমূহ পালনে শিথিলতা ও ত্রুটি থাকিবে । সর্বোপরি তাহাকে আন্তরিক সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করিতে হইবে । তাহাকে স্মরণ রাখিতে হইবে । আর্তমানবতার সেবা করা সৃষ্টিকর্তার সেবারই নামান্তর । তাই বলা হয় সেবাই উত্তম ও পরম ধর্ম ।


প্রশ্ন - মানসিক রোগী চিকিৎসাকালে চিকিৎসক ও সেবাকারীর করণীয় কি আলোচনা কর । 
বা , মানসিক ব্যাধির চিকিৎসায় ঔষধ ছাড়াও কি প্রকার আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা প্রদান করা উচিত ? 

উত্তর  ঃ যে সকল মানসিক ব্যাধি শারীরিক ব্যাধি হইতে সৃষ্টি হইয়াছে । সেই সকল ব্যাধির সর্বাধিক সাদৃশ্যবাহী সোরা বিনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও উপযুক্ত পথ্য ও পরিচর্যার দ্বারা রোগী আরোগ্য লাভ করে । এই প্রকার রোগীর চিকিৎসা কালে ঔষধ ছাড়াও নিম্নলিখিত ভাবমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাত্মা হ্যানিমান উপদেশ প্রদান করিয়াছেন । 
রোগীর প্রচণ্ড উন্মত্তায় চিকিৎসক ও পার্শ্বচরগণের বিরক্তিহীন সাহস ও ধীর সংকল্প প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর করুণ অনুযোগের প্রতি পরিজন , সেবাকারী ও চিকিৎসকের দৃষ্টি ও ভঙ্গিমায় নির্বাক সহানুভূতি প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর নিন্দনীয় আচরণ ও অশ্লীল বাক্যের প্রতি সম্পূর্ণ অমনোযোগীতা প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর অর্থহীন প্রলাপ ও বাচালতার প্রতি নিরুত্তর অথচ মনোযোগী ভাব প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগী কোন বস্তু নষ্ট করিয়া ফেলিলে কখনও তিরস্কার করা উচিত নয় । ঘরের জিনিষপত্রগুলি এমনভাবে রাখিতে হইবে যেন রোগীর কোন প্রকার বিরক্তি উৎপন্ন না হয় । কোন অবস্থাতেই রোগীর উপর অত্যাচার করা উচিত হইবে না । প্রতিবাদ , বার বার অপযুক্তি এবং রুঢ় আচরণ দ্বারা রোগীর দোষ সংশোধনের চেষ্টা উচিত হইবে না । প্রতিবাদ , বার বার অপযুক্তি এবং রুঢ় আচরণের দ্বারা রোগীর দোষ সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত নয় । যেহেতু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিস্বাদ নয় এবং অতি লঘু মাত্রায় দেওয়া হয় তাই যে কোন পানীয়ের সাথে মিশাইয়া দিলেই চলে । প্রশ্ন -০৪.১৮ । নার্স বা সেবিকাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আবশ্যকতা কি ? উত্তর : সেবাকারী বা নার্সদের দেহ , পোষাক পরিচ্ছদ , রোগীর গৃহের আসবাব পত্রাদি ও বিছানাপত্র পরিষ্কার না থাকিলে বিশেষত যে ব্যক্তি নোংরা তাহার উপর সেবার ভার পড়িলে রোগ উপশম না হইয়া বরং আরও বাড়িয়া যাইবে । অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা রোগজীবাণু বৃদ্ধির ও রোগীদেহে নূতন জীবাণু সংক্রমণে সহায়তা করে । পক্ষান্তরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অধিকাংশ রোগ জীবাণু বিস্তার লাভ করিতে পারে না বরং ধ্বংস হয় । তাই সেবাকারী বা নার্সদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা একান্তই আবশ্যক ।


প্রশ্ন - রোগীর বেদনা যন্ত্রণা লাঘবের জন্য কি কি ধরণের সেবার প্রয়োজন ? 

উত্তর  ঃ রোগীর ব্যথা বেদনা লাঘবের জন্য অনেক সময় রোগীর গায়ে হাত বুলানো , অঙ্গাদি মর্দন করা , বাতাস করা , বেদনার স্থানে সেঁক তাপ প্রদান , মাথায় পানি পঠি বা আইস ব্যাগ প্রদান , প্রভৃতির প্রয়োজন হয় । নিম্নে সেবার ধরণগুলি উল্লেখ করা হইল । 
১ ) সেঁক তাপ বেদনা নিবারণের জন্য সেঁক তাপ দিবার প্রয়োজন হইয়া থাকে । যে কোনরূপ বেদনা এই প্রক্রিয়ায় উপশম হইয়া থাকে । 
২ ) সেঁক তাপ দেওয়ার সহজ উপায়- ফুটন্ত পানিতে রোগীর জন্য নির্দিষ্ট হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মূল অরিষ্ট কয়েক ফোঁটা মিশাইয়া উহাতে ২/৩ প্রস্থ ফ্লানেল বা লিন্ট ভিজাইয়া তাহা নিংড়ানোর পর বেদনা স্থানে স্থাপন করিয়া একখন্ড ম্যাকিন্টিস দ্বারা ঢাকিয়া দিতে হইবে । ফ্লানেলটি বেশী গরম থাকিলে রোগীর গা সহা করিয়া লইতে হইবে । তীব্র বেদনায় ঘন ঘন এইরূপ তাপ দেওয়া দরকার । 
৩ ) ক্ষত আঘাত বা অস্ত্রোপচারজনিত ক্ষতে সেঁক তাপ- বোরাসিক লিন্ট বা সাধারণ লিন্ট বোরাসিক লোশানে সিদ্ধ করিয়া নিংড়াইয়া গা সওয়া গরম অবস্থায় ক্ষত স্থানে স্থাপন করিয়া মসৃণ রেশম বস্ত্র দ্বারা ব্যান্ডেজ করিতে হইবে । কার্বলিক লোশন বা মাকুরিয়াস পার - ক্লোরাইড লোশনেও লিন্ট সিদ্ধ করতঃ অস্ত্রোপচারজনিত ক্ষতে ফোমেন্ট করা হয় ।  
৪ ) বেলেডোনা বা ওপিয়াম ফোমেন্টেশন- বেদনা উপশমের জন্য ইহা প্রয়োগ করা হয় । ফুফানেল বা লিন্ট ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করার পর তাহা নিংড়াইয়া ৩০ ফোঁটা টিংচার ওপিয়াম বা বেলেডোনা ছিটাইয়া দিয়া তাহা বেদনার স্থানের উপর রাখিয়া ফোমেন্ট করা হয় । 
৫ ) সোডা ফোমেন্টেশন- বাতের বেদনায় ফ্লানেল বা লিন্টের উপর এক চা চামচ সোডিয়াম বাই কার্বনেট ছড়াইয়া উহাতে ফুটন্ত পানি ঢালিয়া , সিক্ত করার পর নিংড়াইয়া বেদনা স্থানে ফোমেন্ট করিতে হয় ! 
৬ ) হট ওয়াটার বোতল বা ব্যাগ- অনেক সময় গরম পানির বোতলে বা ব্যাগের দ্বারা বাষ্প তাগ দেওয়ার দরকার হয় । হঠাৎ কোন পীড়া যেমন শক , দুর্ঘটনা ও রক্তস্রাবের সঙ্গে সঙ্গে গরম পানির বোতল বা ব্যাগ দ্বারা উত্তাপ প্রয়োগে আশু কুফলের প্রতিরোধ করা যায় । গলস্টোন বেদনায়ও ইহা সাহায্য করিয়া থাকে । গরম পানির বোতল বা ব্যাগ ব্যবহার করিতে হইলে ইহার দুই তৃতীয়াংশ গরম পানি পূর্ণ করিয়া উত্তমরূপে বোতলের ছিপি বা ব্যাগের মুখ আটিয়া ব্যবহার করিতে হইবে । বোতল বা ব্যাগের উষ্ণতা যাহাতে গা সহা হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখিতে হইবে । 
৭ ) পুলটিস- বেদনা হ্রাসের জন্য সেঁক তাপের ন্যায় পুলটিসও ব্যবহৃত হয় । আজকাল এন্টিফ্লাজিস্ট্রিন ও বিভিন্ন পেস্ট প্রচলনের কারণে পুলটিসের ব্যবহার কম হইলেও কোন কোন সময় এন্টিফ্লাজিস্ট্রি অভাবে পুলটিশের প্রয়োজন হয় । পুলটিশ প্রস্তুত করার সময় তাহার আয়তন আক্রান্ত স্থান অপেক্ষা কিছু বড় ( অর্ধ হইতে এক ইঞ্চি স্থূল ) এবং যে কাপড়ের উপর পুলটিস প্রস্তুত করা হইবে পুলটিশের চাইতে ২ ইঞ্চি পরিমাণ অধিক বস্তু থাকা উচিত । সাধারণতঃ ব্রেড পুলটিশ , তিসি পুলটিশ , সরিষা পুলটিশ , কয়লা পলুটিশ ও স্টার্চ পুলটিস উল্লেখযোগ্য ।
৮ ) এন্টিফ্লাজিস্ট্রিন— প্রদাহ হ্রাসের জন্য ইহা ব্যবহৃত হয় । এন্টিফ্লাজিস্ট্রিনের পাত্রটি উষ্ণ পানিতে উত্তপ্ত করিয়া একখন্ড লিন্টের উপর ঘন প্রলেপ দিয়া প্রদাহ বা বেদনা স্থানে লাগাইয়া তাহার উপর তুলা ঢাকিয়া ব্যান্ডেজ করিয়া দিতে হইবে । ইহা ২৪ ঘণ্টা রাখা যায় । 
৯ ) কম্প্রেস- প্রদাহ হ্রাস ও রক্তস্রাব প্রতিরোধ করার জন্য কয়েক টুকরা শুকনা বা ভিজা কাপড় প্রদাহিত বা আহত স্থানে স্থাপন করিয়া শক্ত ব্যান্ডেজ করিয়া রাখিতে হয় । 
১০ ) ঠাণ্ডা পানির পঠি— জ্বর বৃদ্ধি পাইলে রোগীর কপালে ঠাণ্ডা পানির পট্টি দিলে তাহার জ্বর ও যন্ত্রণাদি প্রশমিত হয় । এনামেল বা কাঁচের বাটিতে কিছু ঠাণ্ডা পানি রাখিয়া তাহার সহিত ৫/৭ ফোঁটা অডিকোলন মিশাইয়া উহাতে ৪/৫ ইঞ্চি লম্বা দেড় ইঞ্চি প্রস্থ ৩/৪ ভাঁজ বস্ত্র খণ্ড ভিজাইয়া সামান্য নিংড়ানোর পর কপাল ও দুই পাশের রগের উপর রাখা হয় । উহা শুকাইয়া গেলে পুনরায় ভিজাইয়া উক্ত নিয়মে স্থাপন করা হয় । 
১১ ) আইস ব্যাগ- জ্বর বৃদ্ধি পাইলে ইহা ব্যবহার করা হয় । পর্যায়ক্রমে মস্তক ও কপালের উপর আইস ব্যাগ প্রয়োগে জ্বরসহ প্রচণ্ড শিরঃপীড়া ও প্রলাপ প্রায়ই প্রশমিত হয় । বরফ টুকরা করিয়া আইস ব্যাগের অর্ধেক পরিমাণ ও তৎসহ সামান্য লবণ মিশ্রিত করতঃ ব্যাগের মধ্যস্থ বায়ু নিষ্কাশন করিয়া ব্যাগের মুখ ভালভাবে আঁটিয়া দিতে হয় ।



প্রশ্ন - রোগীর কিরূপ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা উচিত ? 

উত্তর : রোগীর সেবার সহিত যথাসম্ভব সুখস্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করাও সেবাকারীর কর্তব্য । রোগীর শয্যা প্রস্তুত করা এবং প্রয়োজন মত পরিবর্তন করা , রোগীর পরিধেয় বস্তু সময়মত ও প্রয়োজনমত পরিবর্তন করা , রোগীর গায়ের কাপড় পড়িয়া গেলে তাহা ঠিক করা , হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনে উপযুক্ত প্রতিকারক ব্যবস্থা অবলম্বন করা , গৃহের আলো বাতাস যাহাতে অস্বাস্থ্যকর না হয় বা বায়ু দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা ও প্রতিকার করা , রোগীর গৃহে কোন প্রকার গোলমাল যাহাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা , কেহ যাহাতে রোগীকে বিরক্ত না করে এবং নিদ্রার ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় প্রভৃতি বিষয় লক্ষ্য রাখা সেবাকারীর কর্তব্য 


প্রশ্ন - রোগীকে কিভাবে সাহস ও অভয় দান করিবে ? 

উত্তর : রোগীকে সব সময় রোগ সম্পর্কে সাহস ও অভয় দান করা সেবাকারীর কর্তব্য । তাহাকে সর্বদা এমন ভাবে আশ্বাস দিতে হইবে যে রোগ যত কঠিনই হোক না কেন ডাক্তারের নির্দেশ মত ঔষধ সেবন ও বিধি নিষেধ পালন করিলে ইনশাআল্লাহ রোগ আরোগ্য হইবে । তাহার উচ্চজ্বর হইলে তাপমাত্রা গ্রহণকালে রোগী উহা জানিতে চাহিলে সেবাকারী কখনও প্রকৃত মান জানানো উচিত হইবে না । কারণ প্রকৃত মান জানিলে রোগী হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে । প্রলাপকালে নীরব না থাকিয়া সেবাকারীকে রোগীর বাক্যে সায় দিয়া আশ্বাস প্রদান করিতে হইবে । কোনরূপ প্রতিবাদ করা উচিত নয় । রোগী ভয় পাইলে শুশ্রূষাকারী তাহাকে অভয় প্রদান করিয়া দৃঢ়তার সাথে জানাইতে হইবে সেবাকারী তাহাকে নিকটে থাকিয়াই পাহারা দিতেছে , ভয়ের কোন কারণ নাই । সেবাকারীর কোন কাজ না থাকিলে রোগীর নিকটে তাহার দৃষ্টির আওতায় অবস্থান করিতে হইবে কারণ রোগী তাহাকে দেখিতে পাইলেও আশ্বস্ত হইবে । রোগীর আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব একত্রে অনেক লোক রোগীর নিকটে আসিলে তাহাদেরকে ভদ্রভাবে নিষেধ করিতে হইবে যেন সাধারণ কুশলাদি প্রশ্ন ছাড়া রোগের গুরুত্ব বা ফলাফল সম্বন্ধে যেন কোন আলোচনা না করেন । কেহ প্রশ্ন করিলে রোগী যাহাতে আশ্বস্ত হয় সেভাবে উত্তর দিতে হইবে । রোগীর সামনে কানে কানে কেহ কথাবার্তা বলিলে রোগী তাহার নিজের রোগ সম্পর্কে এবং আশংকার কারণ বিবেচনা করিয়া হতাশ হইতে পারে । তাই কথাবার্তা বলিতে হইলে নিম্নস্বরে পরিষ্কার ভাষায় রোগীও যাহাতে শুনিতে পায় এইভাবে কথা বলা উচিত । 



প্রশ্ন - রোগীর ঔষধ ও পথ্যাদি কিভাবে প্রদান করিবে ? 

উত্তর : সব সময় খালি পেটে ঔষধ সেবন করাইতে হইবে কারণ তাহাতে ঔষধের ক্রিয়া শীঘ্র প্রকাশিত হয় । চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেকই ঔষধ সেবন করানো নিয়ম । ঔষধ সেবনের আধা ঘন্টার মধ্যে কোন পথ্য সেবন করানো উচিত নয় । আবার পথ্য প্রদানের পর এক ঘণ্টার মধ্যে কোন ঔষধ সেবন করানো উচিত নয় । নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ সেবন করানোর কালে রোগী যদি নিদ্রিত থাকে তবে তাহাকে নিদ্রা হইতে জাগাইয়া ঔষধ সেবন করানো অনুচিত । ঘুম ভাঙ্গিলে তারপর ঔষধ সেবন করাইতে হইবে ।

নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণে রোগীকে পথ্য প্রদান করিতে হইবে । পথ্য প্রদানের অবহেলায় রোগী দুর্বল হইয়া যায় । ঠিকভাবে পথ্য প্রদান করিলে উপযুক্ত পুষ্টি সাধন হেতু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক হয় । কি ধরনের পথ্য দিতে হইবে চিকিৎসক তাহা নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন । সতর্কতার সহিত পথ্য তৈরী করিয়া পরিষ্কার পাত্রে পরিচ্ছন্নতার সহিত রোগীকে প্রদান করিতে হইবে । অন্যথায় পথ্যে তাহার বিতৃষ্ণার ভাব আসিবে । রোগী যাহাতে সহজে পথ্য গ্রহণ করিতে পারে সেদিকে নার্সকে তাহার সাহায্য করিতে হইবে । পথ্যাদি গ্রহণে রোগী অক্ষম হইলে নার্সকে চামচ দ্বারা কঠিন পথ্য এবং ফিডিং কাপে তরল পথ্য খাওয়াইতে হইবে । রোগীর আহারে অরুচি হইলে পরিমাণ হ্রাস করত বারে বারে পথ্য দিতে হইবে । পথ্য গ্রহণে বমনের ভাব হইলে উহাতে এক টুকরা বরফ সহ পান করাইলে প্রায়ই বমি ভাব থাকে না । পথ্যাদি গরম অবস্থায় আহার করানো উচিত । 

একেবারে অধিক পরিমাণে না গিলিয়া রোগী যাহাতে অল্প অল্প করিয়া গ্রহণ করে শুশ্রূষাকারীকে সেদিকে নজর রাখিতে হইবে । স্বাভাবিক ভাবে মুখ দিয়া আহার করানো সম্ভব না হইলে নাক , অন্ননালী বা মলাশয় পথে পথ্য প্রদান করা যাইতে পারে । 



প্রশ্ন - নাক দিয়া পথ্য প্রদানের নিয়ম বর্ণনা কর । 

উত্তর : মুখ দিয়া রোগীকে পথ্য প্রদান সম্ভাব না হইলে তরল খাদ্য নাক দিয়া প্রদান করা সম্ভব । নাক দিয়া পথ্য সেবনের জন্য একটি ৫/৬ নং রবারের ক্যাথিটার বা রবারের নল ও একটি কাঁচের ফানেল প্রয়োজন । রোগীকে খাদ্য প্রদানের পূর্বে ক্যাথিটার গরম পানিতে সিদ্ধ করিয়া এবং ফানেলটির পিস্টন
খুলিয়া উহার নলটি গরম পানিতে ধৌত করিয়া বোরিক লোশনে নিমজ্জিত করিয়া রাখিতে হইবে । এরপর বোরিক লোশনে তুলার তুলি নিমজ্জিত করিয়া রাখিতে হইবে । তুলার তুলি বোরিক লোশনে ভিজাইয়া উহা দ্বারা নাকের ভিতর মুছিয়া নিতে হইবে এবং রোগীর চিবুকের নিচে একখানি তোয়ালে রাধিতে হইবে । সেবাকারী সাবান দ্বারা হাত পরিষ্কার করিয়া পিচকারীর নল লইয়া তৎসহ ক্যাথিটারের নলটি সংযুক্ত করতঃ রোগীর মুখে অলিভ অয়েল বা মাখন মাখাইয়া বাম হাতে রোগীর মাথাটি সামান্য উঁচু করতঃ ডান হাত দ্বারা ক্যাথিটারের নলটি ধীরে ধীরে তাহার নাকের ভিতর ১০ ইঞ্চি পরিমাণ প্রবেশ করাইতে হইবে । ক্যাথিটারটি ধীরে ধীরে ফ্যারিংস অতিক্রম করিয়া খাদ্যনালীর মধ্যে প্রবেশ করিবে । ১০ ইঞ্চি পরিমাণ নাকের মধ্যে প্রবেশ করিলে নার্স তাহার সাহায্যকারীর হাত হইতে ফানেলের নলটি নিয়া ধরিবে এবং সাহায্যকারী উহাতে আস্তে আস্তে তরল পথ্য ঢালিলে তাহা খাদ্য নালী দিয়া পাকস্থলীতে প্রবেশ করিবে । পরে ক্যাথিটার ও ফানেল বাহির করিয়া বোরিক লোশনে ভিজাইয়া রাখিতে হইবে । 




প্রশ্ন - খাদ্যনালী পথে পথ্য প্রদানের নিয়ম লিখ । 

উত্তর : তরল খাদ্য এই পদ্ধতিতে প্রদান করিতে হয় । একটি রবারের নল ও একটি কাঁচের ফানেল নিয়া রোগীকে খাদ্য প্রদানের পূর্বে রবারের নলটি গরম পানিতে সিদ্ধ করিতে হয় । ফানেলটির পিস্টন খুলিয়া উহার নলটি গরম পানিতে ধৌত করিয়া বোরিক লোশনে নিমজ্জিত করিয়া রাখিতে হইবে । সেবাকারীর হাত সাবান দ্বারা ভালভাবে ধৌত করিয়া পিচকারীর নল নিয়া তৎসহ মাখন বা গ্লিসারিন মাখানো রবারের নলটি সংযুক্ত করতঃ রোগীর মুখের ভিতর দিয়া নলটি আস্তে আস্তে অন্ননালীতে প্রবেশ করাইতে নয় । ১০ ইঞ্চির প্রবেশ করিলে ফানেলের নলে সাহায্যকারী ধীরে ধীরে তরলপথ্য ঢালিয়া দিলে খাদ্যনালী দিয়া পথ্য পাকস্থলীতে প্রবেশ করিবে । 



প্রশ্ন -পাকস্থলী পথে পথ্য প্রদানের নিয়ম লিখ । 

উত্তর  ঃ গেট বা পাকস্থলী সার্জারী করা হইলে রোগীকে পথ্য দেওয়ার জন্য উপরে একটি ছিদ্র করিয়া উক্ত পথে একটি রবারের নল পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয় । অতঃপর উক্ত নলের বাহিরে ক্লাম্প করিয়া একটি কাঁচের ক্লানেল সংযুক্ত করতঃ পথ্য ঢালিয়া নলের বন্ধনী খুলিয়া নিলে খাবার পাকস্থলীতে যায় । পাকস্থলীতে হইতে পথ্যের কিছু অংশ বাহির হইয়া আসিলে রোগীকে ডান পার্শ্বে কাত করাইয়া শোয়াইতে হইবে । পথ্য প্রদানের পর রবারের নলটি ধৌত করতঃ পেটে ব্যান্ডেজ করিতে হইবে । 



প্রশ্ন - মলাশয় পথে কিভাবে পথ্য প্রদান করা হয় ? 

উত্তর  ঃ মলাশয় পথে পথ্য প্রদান একটি উত্তম ব্যবস্থা যদি রোগী মুখে খাদ্য গ্রহণে অসমর্থ হয় । এ কাজে একটি রবারের নল ও একটি ফানেল দরকার । নলের মুখ ক্যাথিটারের মত বন্ধ এবং একপাশে ছিদ্র থাকিলে ভাল হয় । পথ্য প্রবেশ করানোর আগে নলটি একটি কাঁচের গ্লাসে রাখিয়া গরম পানির পাত্রে বসাইয়া রাখিতে হইবে এবং পথ্য প্রদানের সময় পথ্যের উষ্ণতা যেন ১০০ ° ফারেনহাইট বা রোগীর দেহের তাপের সমান হয় । এই ধরনের পথ্য প্রদানের নিয়মকে নিউট্রিয়েন্ট এনিমা বলা হয় । 



প্রশ্ন - রোগীকে মাথা ধোয়ানোর পদ্ধতি কি ? 

উত্তর : রোগীর মাথা ধোয়ানোর পূর্বে ঘাড়ের নিচে দুইটি বালিশ এবং উহার উপর একটি অয়েল ক্লথ বা রবারের কাপড় এমনভাবে রাখিতে হইবে যেন পিঠের দিকে পানি না যায় । নিচে একটি গামলা বা বালতি রাখিয়া মাথা ধোয়ানো উচিত । ঠাণ্ডা পানি দ্বারা মাথা ধোয়াইতে হইবে । চুলে যাহাতে পানি আটকাইয়া না থাকে সেজন্য শুকনা কাপড় বা গামছা দ্বারা ভালভাবে মাথা ও চুল মুছিয়া দিতে হইবে । 



প্রশ্ন - দুর্বল রোগীকে কিভাবে স্পা করাইবে বা গাত্র মাজিবে ? 

উত্তর : যে সকল রোগী শয্যাগত ও অতিশয় দুর্বল তাহাদের মাঝে মাঝে গাত্র মার্জনা না করিলে গাত্রে ময়লা জমিয়া তাহার কুফলে রোগীর নানাবিধ চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই নার্সকে রোগীর প্রতি নজর রাখিতে হইবে । প্রথমে মাথা ধৌত করার ‘ পর হাত , বুক , পিঠ এবং সর্বশেষ পা স্পঞ্জ করিতে হয় । স্পঞ্জ করার সময় রোগীর ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করিয়া ও রোগীকে অয়েল ক্লথের উপর শোয়াইয়া চিকিৎসকের উপদেশ মত শীতল বা গরম পানিতে পরিস্কার তোয়ালে ভিজাইয়া রোগীকে সর্বাঙ্গ মুছিয়া দিতে হইবে । অত্যধিক গরম বা শীতল পানি এই কাজের অনুপযোগী । স্পঞ্জ করার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে শুষ্ক গরম তোয়ালে দ্বারা উত্তম রূপে মুছিয়া জামা কাপড় দ্বারা আবৃত্ত করত ধীরে ধীরে দরজা খুলিয়া দিতে হইবে । বাহিরের দমকা হাওয়া যেন রোগীর গায়ে না লাগে সেই দিকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে ।
 


প্রশ্ন -  দুর্বল রোগীর গোসলের প্রকার ভেদ লিক । 

উত্তর  ঃ দুর্বল রোগীকে সামান্য উষ্ণ পানিতে গোসল করানো হয় । উত্তপ্ত বা শীতল অবস্থায় সাগরের পানি বা লবণাক্ত পানিতে গোসল করানো যায় । খনিজ প্রস্রবনের পানিতে প্রচুর খনিজ পদার্থ থাকে বিধায় এই পানিতেও রোগ চিকিৎসার জন্য গোসল করানো হয় । ইহা ছাড়া বালুকা গোসল , কাদায় গোসল , বাষ্পে গোসল , উত্তপ্ত বায়ুতে গোসল ও রৌদ্র গোসলের প্রথাও প্রচলিত আছে । 



প্রশ্ন - রোগ চিকিৎসায় গোছলের উপকারিতা বর্ণনা কর । 

উত্তর : বিশুদ্ধ পানিতে গোসল অংশত উপশমদায়ক , অংশত সদৃশভাবে উপযোগী এবং স্বাস্থ্যের পুনপ্রবর্তনে সহায়ক । অচির রোগের ক্ষেত্রে গোসলের মাধ্যমে উচ্চতাপ প্রশমিত করা হয় । ২৫ ° হইতে ২৭ ° ইষদুষ্ট পানিতে গোসল তুষার ক্লিষ্ট , গলমগ্ন বা শ্বাসরুদ্ধ মৃত কল্প ব্যক্তিদের অবসন্ন স্নায়ুমণ্ডলীর চেতনা জাগ্রত হয় । আবার চিররোগের চিকিৎসার দ্বারা আরোগ্য লাভ করার পর জৈবিক তাপের অভাব হইলে ১০ ° হইতে ৬ ° শীতল পানিতে গোসল সৃদশ মতে সহায়ক হয় । মুহূর্ত মধ্যে এবং কিছুক্ষণ পর বার বার অবগাহনে অবসন্ন তন্ত্রসমূহের সাময়িক চেতনা পুনরায় ফিরিয়া আসে । এই উদ্দেশ্যে পানিতে ক্ষণকাল অবস্থান না করিয়া কয়েক মিনিট অবস্থান করা এবং ক্রমশ নিম্নতাপে ব্যবহৃত হওয়া উচিত । ব্রাইটস ডিজিজ জাতীয় ক্রণিক রোগসমূহে কিডনীদ্বয়কে যথাসম্ভব বিশ্রাম দেওয়া দরকার । সেজন্য চর্মের ক্রিয়া বর্ধিত করিয়া যথেষ্ট ঘর্ম নিঃসরণের জন্য গোসল করানো হয় । প্রশ্ন -০৪.৩১ । গোসল সম্পর্কে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ? উত্তর : দেহের উষ্ণতা না থাকিলে রোগীকে গোসল করানো উচিত নয় । রোগীকে গোসল করানোর পূর্বে ও পরে দেহের তাপমাত্রা গ্রহণ করিতে হইবে । দেহের উষ্ণ অবস্থায় ধর্ম থাকিলে ঘর্ম মোছাইয়া কিছুক্ষণ পর গোসল করানো উচিত । আহারের অব্যবহিত পরে বা রোগীর পেটপূর্ণ থাকিলে এই অবস্থায় গোসল করানো উচিত নয় । যে সকল রোগী দুর্বল বেশী তাহারা অধিক সময় ধরিয়া গোসল করা অনুচিত । 

 


প্রশ্নঃ- বিভিন্ন প্রকার গোসল সম্পর্কে আলোচনা কর। 

উত্তরঃ-নিম্নে বিভিন্ন প্রকার গোসলের বর্ণনা দেওয়া হইল 
১ ) কোল্ড বাথ ( Cold bath ) : এই পদ্ধতিতে রোগীর গাত্রের উচ্চতাপ তাড়াতাড়ি হ্রাস পায় । তাই সতর্ক না হইলে বিপদের আশংকা থাকে । ইহাতে একটি বাথটবের ৪ অংশ ৯৮ ° ফারেনহাইট তাপের পানি দ্বারা পূর্ণ করিয়া রোগীকে একখানা পূর্ণ করিয়া রোগীকে একখানা চাদরের উপর শোয়াইয়া চারজনে চাদরের চারকোণ ধরিয়া তাহাকে শয্যা হইতে উঠাইয়া মাথা পানি হইতে উপরে রাখিয়া পানিপাত্রে ধীরে ধীরে শোয়াইতে হইবে । পরে টবের পানির সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি মিশাইয়া তাপমাত্রা ৮০ ° ফারেনহাইট পর্যন্ত নামাইয়া রোগীকে সর্বমোট ১৫ মিনিট উক্ত পানিতে রাখিয়া পুনরায় আস্তে আস্তে রোগীকে পানি হইতে উঠাইয়া শয্যায় রাখিয়া গাত্র উত্তমরূপে মোছাইয়া , শুষ্ক বস্ত্রাদি পরিধান করাইয়া কম্বল দ্বারা তাহার দেহ ঢাকিতে হইবে ।
২ ) কোল্ড স্পঞ্জিং ( Cold Sponging ) : একটি কম্বলের উপর একটি অয়েল ক্লথ বিছাইয়া রোগীকে শোয়াইয়া অন্য একটি কম্বল দ্বারা তাহাকে ঢাকিয়া দিতে হইবে । অতঃপর রোগীর মুখমণ্ডল হইতে শুরু করিয়া পায়ের তলা পর্যন্ত ৬০ ° ফারেনহাইট তাপমাত্রার ঠাণ্ডা পানি দ্বারা স্পঞ্জ করিতে হইবে । স্পঞ্জ করার সময় এক একটি অঙ্গ ঘষিয়া ঘষিয়া স্পঞ্জ করিয়া কম্বল দ্বারা ঢাকিতে হইবে । অনুরূপভাবে সারা অঙ্গ স্পঞ্জ করা হইলে রোগীর দেহ আস্তে আস্তে আঘাত করিয়া পানি ঝরাইতে হইবে কিন্তু গা ঢাকা থাকিবে । ইহার পর রোগীর বিছানা পরিবর্তন করিয়া তাহাকে শুকনা কাপড় পরাইয়া ঠাণ্ডা পানীয় সেবন করাইতে হইবে । 
৩ ) কোল্প প্যাক ( Cold Pack ) : কোল্ড স্পঞ্জিং এর নিয়মে রোগীকে শোয়াইয়া তাহার সর্বদেহের ঠাণ্ডা ভিজা নিংড়ানো বিছানার চাদর জড়াইয়া তাহাকে কম্বলে ঢাকিয়া একটি ফ্রেম দিয়া ঢাকিয়া রাখিতে হইবে । চাদরটি গরম হইলে পুনরায় তাহা ঠাণ্ডা পানিতে সিক্ত করিয়া নিংড়াইয়া উহা দ্বারা রোগীর সারাদেহে জড়াইতে হইবে । সতর্ক ভাবে লক্ষ্য করিয়া রোগীর কম্বল উত্তপ্ত হইলে ঠাণ্ডা বস্ত্রাদি সঙ্গে সঙ্গে অপসারিত করিয়া তাহাকে গরম কম্বলের উপর শোয়াইয়া গরম পানির বোতল ব্যবহার করিতে হইবে । ৪ ) গরম পানিতে গোসল ( Worm Bath ) : গরম পানিতে গোসল বলিতে ৯৮.৪ ° ফারেনহাইট হইতে ১১০ ° ফারেনহাইট তাপমাত্রার পানিতে গোসল করা বুঝায় । রোগীকে ১০-১৫ মিনিট বাথ টবে রাখিয়া পরে পানি হইতে উঠাইয়া তাহার দেহে একখানা পরিষ্কার শুকনা চাদর জড়াইয়া তাহাকে বিছানায় শোয়াইতে হইবে এবং রোগীর দেহ না মোছাইয়া নিজে নিজেই শুষ্ক হইতে দিতে হইবে । অস্থিরতা ও অদ্রিাসহ উচ্চ জ্বরে ইহা ফলপ্রদ । কিডনীর রোগে রক্তচাপ হ্রাস ও চিত্তবিষাদ রোগে মানসিক অবসন্নতা হ্রাস করিতে এই জাতীয় গোসলের ব্যবস্থা করা হয় । কঠিন পরিশ্রমের পর দেহের আড়ষ্টতা নিবারণ ও শীতকম্প নিরোধ করিতে ১০৪ ° ফারেনহাইট উত্তাপযুক্ত পানিতে ১০/১৫ মিনিট অবস্থান করিয়া ঠাণ্ডা পানির ধারা গ্রহণ করা উচিত । 
৫ ) অল্প গরম পানিতে গোসল বা টেপিড বাথ : টেপিড বাথ বলিতে ৯৮৪ ° ফারেনহাইট তাপমাত্রার পানিতে রোগীকে স্থাপন করিয়া ঠাণ্ডা পানি মিশাইয়া ৯০ ° ফারেনহাইট করাকে বুঝায় । উক্ত তাপ যাহাতে বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । প্রয়োজনে গরম পানি মিশাইয়া তাপমাত্রা ঠিক রাখিতে হইবে । প্রথম প্রথম রোগীকে পানিতে আধা ঘন্টার বেশী রাখা উচিত নয় । পরে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করিয়া ক্রমশঃ সময় বর্ধিত করিয়া ৮ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যাইতে পারে । রক্তে চাপ বৃদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র শান্ত করিতে রোগীকে এইরূপ গোসল করানো হয় । অনেক সময় প্রলাপ ও ম্যানিয়াতেও এইরূপ গোসল উপযোগী । 
৬ ) শাওয়ার বাথ ( Shower Bath ) : ক্রণিক সর্দি রোগে এই জাতীয় গোসল উপযোগী । ১০০ ° ফারেনহাইট তাপমাত্রার পানিতে ১/২ মিনিট কাল শাওয়ার বাথ ও ঝরা গোসল মন্থর ক্রণিক রোগে উপকারী । তবে তরুণ রোগের জন্য ইহা ক্ষতিকর । 
৭ ) সিট বাথ ( Seat Bath ) : শরীরের নিম্নাঙ্গের নানারূপ ব্যাধি , ঋতুশূল , অর্শ , কোষ্ঠবদ্ধতা , কটিবেদনা প্রভৃতিতে এই জাতীয় গোসল উপকারী । ৬০ ° ফারেনহাইট হইতে ১০০ ° ফারেনহাইট তাপমাত্রার পানিতে এইরূপ গোসল করা হয় । অনেক সময় দেহে যতদূর সহ্য করা যায় সেইরূপ উত্তাপযুক্ত পানিরও ব্যবহার করা হয় । এই পদ্ধতিতে রোগীকে একটি ওয়াশ টবের মধ্যে বসাইয়া তাহার নাভিদেশ পর্যন্ত উপরে বর্ণিত তাপের পানিতে ২ হইতে ১০ মিনিট কাল ডুবাইয়া রাখা হয় । রোগীর পা দুইটি বাহির হইয়া থাকিলে তাহা এবং দেহের উপরাংশ কম্বল দ্বারা ঢাকিয়া দিতে হইবে । প্রয়োজনমত ধীরে ধীরে উহাতে অধিকতর গরম পানি ঢালিয়া পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি করিতে হইবে । চর্মের কোন ক্ষতি না করিয়া পানির উত্তাপ ১৫০ ° ফারেন হাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায় । ১৫-২০ মিনিট কাল এইরূপ গরম পানিতে পা মাজা হয় । সেবাকারীরা পাদুইটি ক্রমাগত ঘষিয়া দিতে হইবে । পা মাজার সময় পানিতে বড় দুই চামচ সরিষাচূর্ণ মিশাইলে ফল ভাল হয় । পা মাজার সময় । রোগী তাহার কপালের উপর ঠাণ্ডা পানির পট্টি রাখিয়া দিলে মাথাধরা , মাথাঘোরা , জ্বরের সূত্রপাতে শীতার্ততা দূর করা , পায়ে বেদনা , ঠাণ্ডা লাগিয়া ঘুংড়ি কাশি , সর্দি বা ব্রঙ্কাইটিস , ফুসফুস বা মস্তিষ্কে রক্তাধিক্য , আক্ষেপযুক্ত হাঁপানি প্রভৃতিতে বিশেষ উপকারী । 
৮ ) ভেপার বাথ ( Vepour Bath ) : অনেক সময় ব্রাইটস ডিজিজের ক্ষেত্রে এই জাতীয় গোসল উপকারী । একটি বেদের চেয়ারের উপর রোগীকে বসাইয়া তাহাকে ও চেয়ারটিকে সম্পূর্ণরূপে কম্বল দ্বারা ঢাকিয়া চেয়ারের কয়েক ইঞ্চি নিচে ফুটন্ত পানির গামলা রাখিয়া উক্ত অবস্থায় রোগীকে ১৫/২০ মিনিটকাল অবস্থান করাইতে হইবে । বাষ্প গোসলের পর ঠাণ্ডা পানিতে গা মোছা নিষিদ্ধ । রোগী তৎক্ষণাৎ গা ঢাকিয়া শুইয়া থাকিতে 1 
৯ ) হট প্যাক ( Hot Pack ) : এই পদ্ধতির গোসলের ফলাফল অনেকটা ভেপার বাথের ন্যায় । রোগীর শয্যার উপর একখানা অয়েল ক্লথ ও তাহার উপর একখানা কম্বল বিছাইয়া রোগীকে তাহাতে শোয়াইতে হইবে । একখানা চাদর উ…
১২ ) বালুকা গোসল ( Sand Bath ) : ক্রণিক বাত রোগে এই প্রক্রিয়া ফলপ্রদ । সহনীয় গরম বালু দ্বারা রোগীকে শোয়াইয়া এই পদ্ধতিতে ঢাকিয়া দিতে হয় । 
১৩ ) কর্নমে গোসল ( Mud Bath ) : এই প্রক্রিয়া ক্রমিক বাত রোগে উপকারী । ১০২-১১২ ° ফারেন হাইট তাপমাত্রার কাদা ২০ মিনিট কাল রোগীর আক্রান্ত স্থানে পুরু করিয়া লাগাইয়া পরে গরম পানি দ্বারা ধৌত করত শুদ্ধ তোয়ালে দ্বারা ঘষিয়া মুছিয়া ফেলিতে হয় । 





প্রশ্ন - ডুস বা এনিমা কখন প্রয়োজন হয় ? ডুস দেওয়ার প্রণালী কি ? ভুস ব্যবহারের সতর্কতা কি কি ?

উত্তর : ১ ) ডুস বা এনিমা কখন প্রয়োজন : অনেক সময় রোগীর অস্ত্র পরিষ্কার করিয়া মলত্যাগের জন্য ডুসের প্রয়োজন হয় । এইরূপ ভুসকে প্যাসেটিভ এনিমাও বলে । ইহার জন্য ২/৩ পাইন্ট পানি ধরে এমন কাঁচ পাত্র বা ডুস ক্যান , ৬ হাত রবারের নল ও একটি কাঁচ নির্গত মুখনল বা নজলের দরকার হয় । শিশুদের ডুস দিবার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট মুখনলের প্রয়োজন । 
২ ) ডুস দিবার প্রণালী- ডুস দিবার পূর্বে একটি পরিষ্কার পাত্রে ২ পাঃ গরম পানি ব্রাখিয়া তাহার সহিত ২ আঃ সাবান ও বড় ২ চামচ অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল মিশাইতে হইবে এবং সাবান পানির সহিত সম্পূর্ণ দ্রবীভূত না হওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে নাড়িতে হইবে । প্রাথমিক ব্যবস্থা সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীর শয্যার প্রান্ত ঘেষিয়া তাহার উপর একটি অয়েল ক্লথ বিছাইয়া রোগীকে বাম কাতে শোয়াইয়া ও তাহার জানুদ্বয় গুটাইয়া উদরের সহিত ঠেকাইয়া রাখিয়া তাহার কোমর শয্যার প্রান্তে সরাইয়া আনিতে হইবে । ডুসের মুখনলের চাবি আঁটিয়া ডুস ক্যানের মধ্যে সাবানের পানি ঢালিতে হইবে । সাবানের পানির উষ্ণতা যেন ৯৮ ° ফারেনহাইট থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । অতঃপর বেড প্যানটি নিকটে রাখিয়া মুখনলের অগ্রভাগ পরিষ্কার নারিকেল তৈল মাখাইয়া ডান হাতে ধরিয়া বাম হাত দ্বারা রোগীর জানু সামান্য উঁচু করিয়া আস্তে আস্তে ঠেলিয়া দিতে হইবে । এইরূপে মুখনলটি মলদ্বারের মধ্যে ২/৩ ইঞ্চি প্রবেশ করিলে মুখনলের চাবি খুলিয়া দিলে ডুসক্যানের পানি ধীরে ধীরে রোগীর মলাশয়ে ঢুকিবে । পানি প্রবেশ কালে রোগী খুব যন্ত্রণা বোধ করিলে মুখনলের চাবি বন্ধ করিয়া পানি প্রবেশ রোধ করিতে হইবে এবং যন্ত্রণা দূর হইলে পুনরায় পানি প্রবেশ করিতে দিতে হইবে । এইভাবে ডুসক্যানের পানি সম্পূর্ণ বা তাহার অধিকাংশ মলাশয়ে প্রবেশ করিলে মুখনলটি মলদ্বার হইতে বাহির করিয়া নিতে হইবে । বয়স্ক রোগীদের জন্য দেড় পাউন্ড পর্যন্ত এবং শিশুদের জন্য বয়সের দ্বিগুন আউন্স পানি প্রয়োজন । অল্প বয়স্ক শিশুকে কাঁচের পিচকারী দ্বারা এনিমা দেওয়া সুবিধাজনক । 
৩ ) ডুস ব্যবহারে সতর্কতা- কেবলমাত্র মলাশয়ে পায়খানা জমিয়া থাকিলে সেবাকারী চিকিৎসকের উপদেশ ব্যতীত ভুস ব্যবহার করিতে পারে । কিন্তু অপরাপর ক্ষেত্রে কখনও ঠাণ্ডা পানির এনিমা দেওয়া উচিত নয় । 



প্রশ্ন -  দুর্বল রোগীকে কিভাবে প্রস্রাব করাইবে ? 

উত্তর  ঃ দুর্বল রোগী শয্যা হইতে উঠিতে না পারিলে তাহাকে শায়িত অবস্থায় প্রস্রাব করাইতে হইবে । এই জন্য প্রস্রাব পাত্র ব্যবহার করা হয় । শায়িত অবস্থায় রোগী প্রস্রাব করার পর নার্স চিকিৎসকের অবগতির জন্য প্রস্রাবের পরিমাণ , প্রকৃতি , কোন তলানি পড়ে কিনা প্রভৃতি স্বয়ং লক্ষ্য করিয়া চিকিৎসকের বা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য রোগীর কক্ষের বাহিরে কোন নিরাপদ স্থানে ভালভাবে মুখে ঢাকনা দিয়া রাখিবে । তাহা দরকার না হইলে নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্রাব ফেলিয়া দিয়া প্রস্রাব পাত্রটি গরম পানিতে ভালভাবে ধুইয়া মুখবন্ধ করিয়া কোন সুবিধাজনক স্থানে রাখিতে হইবে । 



প্রশ্ন -  কখন ক্যাথিটারের প্রয়োজন হয় ? ক্যাথিটার ব্যবহারে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করিবে ? 

উত্তর : ১ ) ক্যাথিটার কখন প্রয়োজন হয় কোনও কারণে যদি প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যায় বা রোগী নিজে প্রস্রাব ত্যাগে সম্পূর্ণ অসমর্থ হয় তখন ক্যাথিটারের সাহায্যে তাহার প্রস্রাব নিষ্কাশন করাইতে হয় । অনেক সময় বৃদ্ধদের প্রষ্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পাইয়া মূত্রনলীর ক্রিয়ার ব্যাঘাত হইলে স্থায়ীভাবে ইহার ব্যবহার প্রয়োজন ২ ) ক্যাথিটার ব্যবহারে সতর্কর্তা- ক্যাথিটার ব্যবহারের পূর্বে ও পরে উহা উত্তমরূপে পরিষ্কার ও শোধন করত সর্বদা ধাতব বা কাঁচ নির্মিত আধারে রক্ষা করা উচিত । ক্যাথিটার ব্যবহারের সময় নার্সের দুই কনুই পর্যন্ত গরম পানিতে ভালভাবে ঘষিয়া পরিষ্কার করত কার্বলিক লোশনে কিছুক্ষণ ডুবাইয়া রাখিয়া তারপর ব্যবহার করা উচিত । কারণ মূত্র যন্ত্রাদি খুবই সংক্রামন প্রবণ এবং সামান্য ত্রুটিতে সিষ্টাইটিস রোগের উদ্ভব হইতে পারে । ক্যাথিটারটি ব্যবহারের পূর্বে উহা একটি পরিষ্কার পাত্রে ৫ মিনিট কাল পানিতে ফুটাইয়া বোরিক লোসন বা কার্বলিক লোশনের মধ্যে রাখিতে হইবে । 




প্রশ্ন -০৪.৩৬ । কিভাবে ক্যাথিটার প্রয়োগ করিতে হয় ? 

উত্তর : পুরুষ রোগীকে ক্যাথিটার প্রয়োগ করিতে হইলে ক্যাথিটারের মুখে ভালভাবে ভেসেলিন মাখাইয়া লিঙ্গটি উঁচু করিয়া ধরিয়া লিঙ্গ ছিদ্র মধ্যে ধীরে ধীরে আদৌ বল প্রয়োগ না করিয়া ক্যাথিটারটি প্রবেশ করাইতে হইবে । উহা মূত্রনলীতে পৌছিলে ক্যাথিটারের অন্য মুখ দিয়া মূত্র ঝরিতে থাকিবে । স্ত্রীরোগীর জন্য ক্যাথিটার প্রয়োগ করিতে হইলে পূর্বে রোগীকে চিৎ করিয়া শয়ন করাইয়া তাহার মূত্রনলী মুখ , যোনিমুখ প্রভৃতি সিদ্ধ করা ড্রেসিং গজ দ্বারা উপর হইতে নিচের দিকে পরিষ্কার করিয়া নিতে হইবে । পরে দুই উরুর মাঝে একটি প্রস্রাব আধার বা বেড প্যান রাখিয়া পরিষ্কার শোধিত একটি ৮ নং ক্যাথিটারের মুখে ভেসেলিন মাখাইয়া ধীরে ধীরে মূত্রনালী মুখ দিয়া ভিতরে প্রবেশ করাইয়া ক্যাথিটারের অপর মুখ প্রস্রাব আধারে রাখিলে ধীরে ধীরে মূত্র ঝরিতে থাকিবে । প্রস্রাব ত্যাগের পর পুনরায় উক্ত স্থানগুলি পূর্বে সিদ্ধ করা গজের দ্বারা ধৌত ও পরিষ্কার করিতে হইবে ।



সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ