Senega – সেনেগা

 

এই ব্লগটি শুধুমাত্র নব্য চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য


 

Senegaসেনেগা

প্রাকৃতিক অবস্থা ঃ- পলিগালাসিয়াই । 

প্রতিশব্দ ঃ- পলিগালা সেনেগা , সেনেকা , র‍্যাটেল স্নেক রুট , সেনেকা রুট , র‍্যাটেল স্নেক মিল্ক ওয়ট ।

উৎস ও বর্ণনাঃ- প্রায় আধা ইঞ্চি পুরু , কঠিন এবং গ্রন্থিযুক্ত মূল বিশিষ্ট র‍্যাটেল স্নেকরুট নামক একপ্রকার বহুবর্ষজীবি পত্রমোচী গাছড়া হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয় । গাছগুলির মূল শাখাযুক্ত এবং তীব্র কটুগুন বিশিষ্ট । কান্ড ৬ হইতে ১২ ইঞ্চি লম্বা হয় । পাতাগুলি অবৃন্তক , আয়ত বল্লমাকার এবং অমসৃন মে এবং জুন মাসে এই সকল গাছড়ায় সবূজ সাদা বর্ণের ফুল ফুটিয়া থাকে । শুষ্ক মূল ঔষধে ব্যবহৃত হয় । 

প্রাপ্তিস্থান ঃ- যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের উন্মুক্ত শিলাযুক্ত সমভূমিতে এই সকল গাছড়া জন্মিয়া থাকে । 

আবিষ্কারক ঃ- ডাঃ জন টেন্টে , স্কটসকর্ম ১৮৩৫ সালে নিউইয়র্ক স্টেটে ভ্রমনের জন্য আসিয়া এই ঔষধটি আবিষ্কার করেন । 

প্রস্তুতের ফরমূলা ঃ- এফ- ৪ । 

ক্রিয়াস্থান ঃ- শ্বাস প্রশ্বাসের শ্লৈষ্মিক আবরনের উপর , চোখের শ্বেত অংশে ও সমস্ত চোখের উপর , পাকস্থলী ও অন্ত্র , পুরা , সন্ধিস্থল এবং দেহের বাম অংশে ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করে । 

ধাতু প্রকৃতি ঃ- শ্লেষ্মা প্রধান ব্যক্তি , প্রতিশ্যায় প্রবন স্থুল বালক , মোটা সোটা শিশু , অথবা সর্দি লাগিলে যাহাদের সম্যক প্রতিক্রিয়া জন্মে না তাহাদের পক্ষে সেনেগা বিশেষ উপযোগী ।

প্রয়োগ ক্ষেত্র ঃ- শ্বাসযন্ত্রের পীড়া , চক্ষুর পীড়া , যক্ষ্মা , পুরিসি , মূত্রথলীর প্রদাহ , প্রভৃতি 

মানসিক লক্ষণ ঃ- হঠাৎ বহুদিন পূর্বে দেখা অপ্রয়োজনীয় স্থানের কথা মনে পড়িয়া যায় । রোগীর ঝগড়া করার প্রবৃত্তি থাকে । উৎকণ্ঠা ও বিষণ্নতা । উত্তেজিত হইলে অভিমান করে । 

চরিত্রগত ঃ- 

১।নিস্তেজভাব , তৎসহ চক্ষুতে চাপবোধ এবং দুর্বলতা । 

২। কপাল ফাটিয়া যাইবার ন্যায় বেদনা 

৩। অক্ষিপত্রের প্রদাহ , অক্ষিপত্রগুলি শুরু এবং মামড়ি যুক্ত । শুষ্কতা তৎসহ চক্ষুগুলি কোটরগুলি অপেক্ষা যেন যথেষ্ট বড় এইরূপ অনুভূতি । বাধ্য হয় । দ্বিত্ব দর্শন । .

৪ । কম্পিত অগ্নিশিখা সমূহের অকস্মাৎ দর্শন লাভ , পুনঃ পুনঃ চক্ষুগুলি মুছিতে বাধ্য হয়। দ্বিত্ব দর্শন।

৫। নাসিকায় অত্যধিক জলীয় সর্দি এবং হাঁচি । নাসারন্ধ্র ঝাল ঝাল বলিয়া মনে হয় । 

৬। মুখ মন্ডলের বামদিকে পক্ষাঘাত । মুখমন্ডলের উপর উত্তাপ অনুভূতি । মূখ বিবর ও ওষ্ঠগুলির কোণ সমূহে জ্বালাকর ফোস্কাসমূহ । 

৭। গলদেশ এবং গল গহ্বরে স্রাবযুক্ত প্রদাহ । তৎসহ গলায় ছাল উঠার ন্যায় অনুভূতি সহ স্বরভঙ্গ । 

৮ । কথা বলিতে গেলে গলার মধ্যে আঘাত লাগে । কণ্ঠনালীতে শ্লেষ্মা , স্বরলোপ , খুকখুকে কাশি , বক্ষকোটর সরু বলিয়া মনে হয় । 

৯। বুকের মধ্যে ঘড়ঘড় আওয়াজ । বৃদ্ধদের প্রচুর এবং চটচটে শ্লেষ্মা , উঠাইতে কষ্টকর । 

১০। পুরাতন হাঁপানী । 

১১। প্রস্রাবের পরিমাণ কম হয় । প্রস্রাবের মধ্যে কালি কালি পদার্থ এবং শ্লেষ্মা বিদ্যমান থাকে । প্রস্রাবের পূর্বে ও পরে জ্বালা ।  

 স্বরযন্ত্রের পীড়া ঃ-  স্বাসনলীর শ্লৈষ্কিক ঝিল্লীর উপর ক্রিয়া প্রকাশ করে এবং তাহাতে শ্লেষ্মা ও গয়ার সহজেই উত্থিত হয় । তজ্জন্য ইহা হাঁপানী কাশি ও পুরাডন ব্রঙ্কাইটিসেও উপকারী । পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস প্রতিবৎসর শীতকালে বৃদ্ধি হইলে ইহাতে উপকার হয় । ব্রঙ্কাইটিস পীড়ায় শ্বাসনলীতে অধিক পরিমানে শ্লেষ্মা জমিয়া থাকা সত্ত্বেও সর্দি সহজে উঠে না অনেক চেষ্টার পর অতিকষ্টে সামান্য সামান্য গয়ার উঠে , শ্বাসকষ্ট ও বুকে বেদনা হয় । উহাতে বুকের বেদনা এত বেশী হয় যে হাঁচিলে , কাশিলে , হাত দিয়া একটু চাপিলে এমনকি হাতটি তুলিলেও ভীষণ কষ্ট হয় ।  

স্বরযন্ত্রের পীড়ায় ঃ-  গান গাহিবার কিংবা একটু জোরে কথা বলিবার পর গলা ধরিয়া যায় , স্বর ভঙ্গ হয় । গলায় সর্দি জমিয়া থাকে , তাহাতে কথা স্পষ্ট উচ্চারিত হয় না । উচ্চস্বরে পাঠ করিবার কালে হঠাৎ গলা ধরে , স্বর যন্ত্রের আংশিক পক্ষাঘাত । 

 চক্ষুরোগে ঃ- বিভিন্ন চক্ষুরোগে অথবা চক্ষুতে ক্ষুদ্র আশের মত দাগ পড়িলে উহাতে সেনেগা প্রযোজ্য । একটি জিনিষ দুইটি দেখা , চক্ষুর সামনে আগুনের কনাদর্শন এবং চক্ষুর লেন্সে আঘাত লাগিবার পর অথবা চক্ষুর ছানি অস্ত্র করিবার পর যে সমস্ত লেন্স চূর্ন থাকিয়া যায় তাহা শীঘ্র শোষণ করিবার জন্য সেনেগা প্রযোজ্য । 

ফুসফুসের পীড়ায় ঃ-  ফুসফুসের কনজেশন , স্ফীতি , তৎসহ অত্যন্ত শ্বাসকষ্ট । ডানদিকের নিমোনিয়া , বুকে ঘড় ঘড় শব্দ ও অত্যন্ত সূঁচ ফোটানো ব্যথা , কাশিলে ও জোরে শ্বাস গ্রহন করিলে বৃদ্ধি প্রভৃতি সেনেগার প্রয়োগ লক্ষণ । 

যক্ষ্মাপীড়ায় ঃ- যক্ষ্মা পীড়াগ্রস্ত ও বৃদ্ধ রোগীদের বক্ষমধ্যে ঘড়ঘড়ানি যুক্ত প্রচুর শ্লেষ্মা সঞ্চয় সহ গলমধ্যে ও শ্বাসনলীর অগ্রভাগে নিরতিশয় শুষ্কতা , অবিরত খুসখুসানি ও জ্বালাবোধ হেতু তাহাদের নিদ্রাটি যখন প্রায়ই ভাঙ্গিয়া যায় এবং বার বার কাশি সত্ত্বেও সামান্য শ্লেষ্মা খন্ডটুকুও যখন বাহির হইতে চায় না , তখন সেনেগাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঔষধ বলিয়া বিবেচিত হইবার যোগ্য । ইহার শ্লেষ্মা শক্ত ও আঠাল , সেজন্য সহজে উঠিতে চায় না । মুখগহ্বরে তামার আস্বাদ , ইহার একটি মূল্যবান লক্ষণ এবং এই আস্বাদটি সর্বাবস্থায় বর্তমান থাকায় ইহার রোগী সব সময়ে বড়ই অস্বস্তিবোধ করিতে থাকে । যক্ষ্মা রোগের শেষাবস্থায় সালফার , হিপার সালফ , সাইলিসিয়া , ফসফোরাস প্রভৃতি গভীর কার্যকরী ঔষধ সমূহের ক্ষেত্রটি অতিক্রম করিয়া রোগী যখন শ্লেষ্মার ঘড়ঘড়ানি যুক্ত আওয়াজের মধ্য দিয়া মৃত্যুর মুখামুখি অবস্থায় আসিয়া উপস্থিত হয় তখন এ অবস্থাটিকে জোড়াতালী দিতে ইহা অপেক্ষা দ্রুতকার্যকরী ঔষধ আর নাই । 

মূত্র যন্ত্রে বা মূত্র থলীর প্রদাহে ঃ- ক্রমাগত রোগীর প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা সহ প্রস্রাবের পূর্বে ও পরে পুড়িয়া যাইবার মত অসহ্য জ্বালা যন্ত্রণা , ক্রমশঃ প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস , প্রস্রাবে আঁইশ আঁইশ পদার্থ ও শ্লেষ্মা । পৃষ্ঠে ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা । মূত্রগ্রন্থিস্থানে টানিয়া | ধরার ন্যায় ব্যথা । 

প্রান্তদেশে ঃ- বাহুতে ক্ষতকর , আকৃষ্টবৎ বেদনা । মনিবন্ধে বাত কন্টকবৎ বেদনা । জানুতে ও পায়ের আঙ্গুলের সন্ধিতে কষিয়া ধরার ন্যায় বেদনা । নিম্নাঙ্গের ও পদের শ্রান্তি । নিম্নাঙ্গে দুর্বলতা অনুভব । 

বৃদ্ধি - মুক্ত বাতাসে , বিশ্রামে , স্পর্শে , চাপে , প্রাতঃকালে । 

হ্রাস - ঘর্ম নিঃসরণে , ঢেকুর উঠিলে , চক্ষুবন্ধ করিয়া রাখিলে । 

ক্রিয়ানাশক ঃ- আর্ণিকা , ব্রায়োনিয়া , বেলেডোনা , ক্যাম্ফর ।

পরবর্তী ঔষধ ঃ- লাইকোপোডিয়াম , ক্যালকেরিয়া , ফসফোরাস , সালফার । 

ক্রিয়া স্থিতিকাল ঃ-  ৩০ দিন । 

ব্যবহারের ক্রম ঃ- হইতে ২০০ শক্তি ।

  

ডাঃ মোঃ মহি উদ্দিন

প্রভাষক:-ফেনী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

যোগাযোগ:- ফরাজী হোমিও হল

সদর হসপাতাল মোড়, উত্তর বিরিঞ্চি রোড়-ফেনী

মোবাইল:- ০১৮১৪-৩১৯০৩৩

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ