হৃদপিণ্ডের, মস্তিষ্কের - ধমনী বা শিরায় রক্ত জমাট বাধা

 

থ্রম্বোসিস - THROMBOSIS




সংজ্ঞা :-
থ্রম্বোসিস কথাটির অর্থ রক্ত জমাট বাধা। কোনও কারণে ধমনী বা শিরায় যদি রক্ত জমাট বাঁধে তবে তাকে থ্রম্বোসিস বলে।

প্রকারভেদ:- 
১) করোনারি থ্রম্বোসিস: হৃদপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে। 
২) সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস:-মস্তিষ্কের সরু সরু শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে। 

কারণ:-
১) যে বিশেষ গুণের জন্য রক্ত ধমনী, শিরা বা জালিকার মধ্যে জমাট বাঁধে না সেই গুণের অভাব। 
২) রক্তের গতিবেগ কম হলে। 
৩) শিরা বা ধমনীর মধ্যে চর্বি জমা। 
৪) শিরা বা ধমনীর স্নায়ু কাজের অভাব হেতু দুর্বলতা। 
৫) রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরলের পরিমাণগত হেরফের 
৬) রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি। 
৭) শিরা বা ধমনীর সংকোচন। 
৭) করোনারি আর্টারির মধ্যে কোনও স্থানে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন। 
৯) দীর্ঘকাল ধরে হহৃদযন্ত্রের দুর্বলতা।

তুলনামূলক লক্ষণ:-
হৃদশূল:-
১) দিনের বেলা অতিরিক্ত পরিশ্রমে প্রকাশ লাভ করে। 
২) ব্যথার আক্রমণ অধিককাল স্থায়ী হয় না।
৩) পাকস্থলীর ব্যথা বলে ভুল হবার সম্ভাবনা।
৪) অ্যাথেরোস ক্লোরোলিসের তেমন লক্ষণ থাকে না।
৫) বেদনা মৃদু প্রকৃতির এবং তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম।

করোনারি থ্রম্বোসিস:-
(1) বিশ্রামের সময় রাত্রিকালে প্রকাশ লাভ করে।
ii) ব্যথার আক্রমণ অধিকক্ষণ স্থায়ী হয়। (
(iii) পাকস্থলীর ব্যথা ভুল হবার সম্ভাবনা কম।
( iv) অ্যাথেরোস্ক্রেরোলিসের লক্ষণ বর্তমান থাকে।
(v) বেদনা ভয়ংকর প্রকৃতির এবং তীব্রতাও খুব বেশী।

সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস:-
i) High Blood Pressure অবশ্যই থাকবে।
(ii) হঠাৎ মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয় এবং অসহ্য বেদনা।
(iii) বমির কোনও লক্ষণ থাকে না।
(iv) পক্ষাঘাত রোগ দেখা দেয়।
(v) জ্ঞান ফিরে পেলে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।
(vi) হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে বলে বেশী কষ্ট পায় না।

করোনারি থ্রম্বোসিস:-
(1) কোনো কোনো সময় উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে। 
( (ii) হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড এবং অসহ্য যন্ত্রণা শুরু।
(iii) রোগী প্রচুর পরিমাণে বমি করে।
(iv) পক্ষাঘাত রোগ দেখা দেয় না।
(v) রোগীর জ্ঞান ফিরলেও বাঁচার সম্ভাবনা থাকে না।
(vi) রোগী বিলম্বে অজ্ঞান হয় তাই প্রথমে কষ্ট পায়।

আজকাল দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন কারণে রক্তের Cholesterol বেড়ে যাচ্ছে, তার ফলে করোনারি ধমনীর তীব্র সংকোচন ঘটে, যার ফলে হার্টের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হৃদপিণ্ডের প্রবল যন্ত্রণাই করোনারি থ্রম্বোসিসের প্রধান লক্ষণ। করোনারী থ্রম্বোসিসের প্রধান কারণ দুটি- রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং রক্তবহানালীর সংকোচন। আবার রক্তচাপ কম হলে ব্রেনের মধ্যে ঠিকমতো রক্ত পৌঁছে না। 

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও লক্ষণ:-

এপিস মেল:-  
ঝিল্লীর প্রদাহ, চর্ম ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্ফীতি। মস্তিষ্কের ঝিল্লী সমূহে, হৃদপিণ্ডের আবরক পীড়া। হৃদপিণ্ড বা শরীরের যে কোনও যন্ত্রের সংকোচনবোধ। শ্বাসকষ্ট, শ্বাসরোধ ভাব, আড়ষ্ট ভাব। হুল ফুটানো ব্যথা। 

আর্সেনিক আয়োড:
দীর্ঘকাল স্থায়ী দাহকর এবং ক্ষতকর স্রাব। হৃদপিণ্ড বৃদ্ধি, হৃদ আবেষ্টনীর ফোলা ভাব। মেদাপকর্ষ। নাড়ী থেকে থেকে সুতীব্র হয়ে উঠে। হৃদপিণ্ডের বৃহৎ ধমনীর পুরাতন পীড়া, রাত্রে ঘাম হয়, খুব বেশী ঘাম। ঠাণ্ডা বা শীত সহ্য করতে পারে না।

বোথ্রপস ল্যাংকিও ল্যাটাস:
এক প্রকার সর্পবিষ হতে প্রস্তুত। থ্রম্বোসিস পীড়ার উৎকৃষ্ট ঔষধ। অর্ধাঙ্গের পক্ষাঘাত, বারোধ, কথার জড়তা। স্নায়বিক কম্পন, ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে বেদনা। লক্ষণগুলো আড়াআড়িভাবে প্রকাশ পায়। কালো বমি।

ক্যালকেরিয়া আর্স:
হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচন এবং বেদনা। শ্বাসরোধ। বুক ধড়ফড় করে, পিঠের ব্যথা বাহু পর্যন্ত প্রসারিত।
হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতা সহ শ্বাসকষ্ট, শীত শীত ভাব। রক্তে লোহিত কণিকার অভাব। মৃগীরোগ। মাথায় রক্ত উঠে, মনে হয় সে উড়ে চলছে।

ক্র্যাটিগাস:
মাথা ঘোরা, নাড়ীর গতি কমে যাওয়া, বায়ু সেবনের স্পৃহা এবং রক্ত চাপ লক্ষণ। হৃদপেশীর প্রদাহ, হৃদক্রিয়া, ধমনীর পীড়া। নিদ্রাহীনতা, রক্তাল্পতা, শোথভাব। শীত শীত ভাব, ধমনীসমূহের অতি সম্প্রসারণ।

প্রয়োজন হতে পারে এমন আরো ঔষধ:-
এমিল নাই, অ্যাসিড অক্সালিক, এডোনিস ভার্নালিস, ডিজিটেলিস, ল্যাকেসিস, ক্যাকটাস গ্ল্যান্ডিফোরাস ।

বায়োকেমিক ঔষধ:
ক্যালকেরিয়া ফস:-
দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগহেতু হৃদকম্পন তৎসহ দুর্বলতার ভাব। হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতা হেতু রক্তপ্রবাহে গোলযোগ। নিঃশ্বাস গ্রহণ করার সময় হৃদপিণ্ডের চারিদিকে ভীষণ বেদনা বোধ।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোর:-
রক্তনালীর বৃদ্ধি হেতু মনে হয় হৃদপিণ্ড অনেকটা বৃদ্ধি লাভ করছে। হহৃৎপিণ্ডের ক্রিয়াশক্তি কমে যায়।
ক্যালকেরিয়া ফ্লোর
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ