মেডোরিনাম - MEDORRHINUM, চতুর্থ বর্ষ - মেটেরিয়া মেডিকা

মেডোরিনাম
MEDORRHINUM









প্রতিশব্দ:- গনোরিয়া বা প্রমেহ বিষ। 

উৎস:- গনোরিয়া বিষ গনোকক্কাস হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। গনোরিয়া জীবাণু হইতে প্রস্তুত বলিয়া মেডোরিনাম একটি নোসভ ঔষধ।

প্রুভার:- ডাঃ শ্যান ইহা গ্রুভ করেন ।

উৎস ও প্রস্তুত প্রণালী:- গনোরিয়া নিম হইতে ঔষধটি প্রস্তুত হইয়া থাকে। হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে উচ্চক্রম প্রস্তুত হয়।

ক্রিয়াস্থান:- মন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, শ্বাসযন্ত্র, লসিকাগ্রন্থি, শ্লৈষ্মিকঝিল্পী, বস্তিকোটর, সন্ধি প্রভৃতির সেলুলার তন্তুসমূহ, মেরুদণ্ড এবং অচিকিৎসিত বা কুচিকিৎসিত গনোরিয়া পীড়াজনিত বিকৃত স্বাস্থ্য ইহার প্রধান ক্রিয়া স্থান।

মানসিক লক্ষণ:- মনটিকে কেন্দ্র করিয়াই সর্বপ্রথম ইহার রোগ লক্ষণের সূচনা হইতে দেখা যায় অর্থাৎ স্মৃতি শক্তিটিকে বিনষ্ট করিয়া মনের উপর নানা প্রকার ঝংকার উৎপাদনই মেডোরিনামের প্রধান লক্ষণ। ইহার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ কিন্তু স্মৃতি শক্তি ও মনোযোগ প্রবৃত্তি কম। কোনও বিষয়ে দুইটি ছত্র পাঠ করিতে না করিতেই প্রথম ছত্রটি ভুলিয়া যায়। শব্দের বানান, পরিচিত ব্যক্তির নাম এমন কি নিজের নামটিও ভুলিয়া যায়। ইহার ছাত্রছাত্রীরা ইতিহাস ভূগোল প্রভৃতি বিষয় মনে রাখিতে পারে না। ব্যস্ততা, চঞ্চলতা ও দীর্ঘসূত্রতা ইহার মনের আর একটি দিক। দুর্বলতা হেতু কোনও কাজে অক্ষমতা অথচ সর্বদা ব্যস্ততা অর্থাৎ বিশ্রামের প্রয়োজন তথাপি মানসিক চঞ্চলতা হেতু অস্থিরতা ও কর্ম প্রবৃত্তি। অল্প সময়ও রোগীর নিকট দীর্ঘ মনে হয়। অপরদিকে বিষণ্ণতা ও ভীরুতা ইহার মনের আর একটি পরিচয়। নিজেকে নিজে অপরাধী ও পাপী বলিয়া মনে করে, সেজন্য মনটি বিষণ্ণ হয়। তাহার কার্যে কেহ কোন প্রতিবাদ করিলে বা বাধা দিলে সে একেবারে দমিয়া যায়, এমনকি অনেক সময় ক্রন্দন পর্যন্ত করিয়া দেয়। নিজের পীড়ার কথা চিকিৎসকের নিকট না কাঁদিয়া বলিতে পারে না। অপরের প্রতি কোনও প্রকার ক্রোধ প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ ভাব পোষণ না করিয়া আত্মগ্লানিতে ডুবিয়া থাকাই ইহার প্রবৃত্তি। বিষণ্নতা দিনের বেলায় থাকে, রাত্রিতে মনটি কিছুটা ভাল থাকে। কোনও বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সামান্য চিন্তার পর সব গোলমাল হইয়া যায়। স্নায়বিক দুর্বলতাটি বৃদ্ধি পাইলে রোগী সামান্য কারণে চমকাইয়া উঠে, কাঁপিতে থাকে, এমনকি অনেক সময় মূর্ছা যায়। মনটি এমন অবস্থায় আসিয়া উপস্থিত হয় যে, তাহার ভয় হয় বুঝি বা পাল হইয়া যাইবে বা কোন অমঙ্গল ঘটিবে।

ব্যবহারের শর্তসমূহ:- কুচিকিৎসা দ্বারা প্রমেহ প্রাণ রোধ হেতু মেডোরিনাম একটি এন্টিসাইকোটিক ঔষধ। অসদৃশ বিধানে চাপা দেওয়ার ইতিহাস থাকিলে এবং ঐ প্রকার ব্যবস্থায় শরীরটি যখন সাইকোসিস দোষে জর্জরিত হইয়া বাত, স্মৃতিলোপ, স্ত্রীলোকদের জরায়ু ও ডিম্বাধার সংক্রান্ত নানা পীড়ার আবাসভূমিতে পরিণত হয়, তখনই ইহা প্রয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। বিশেষতঃ যখন অন্য সুনির্বাচিত ঔষধে ফল পাওয়া যায় না তখন ইহা উপযোগী। স্ত্রীলোকদের পেলভিক বা বস্তিগহ্বরে অবস্থিত যন্ত্রগুলির রোগে ইহা ফলপ্রদ। শীর্ণ, খর্বাকৃতির শিশুদের পক্ষে, বিশেষত যে সকল শিশুর পিতার প্রমেহ দোষ আছে তাহাদের পক্ষে এবং প্রমেহ রোধ হেতু বাতগ্রস্ত রোগীর পক্ষে ইহা উপযোগী।

মায়াজম:- ইহা প্রমেহ দোষয় ঔষধ এবং সাইকোসিস দোষে কার্যকরী। মনটিকে কেন্দ্র করিয়াই সর্বপ্রথম ইহার রোগ লক্ষণের সূচনা হইতে দেখা যায়। তরুণ গনোরিয়া স্রাব যখন কুচিকিৎসা দ্বারা অসদৃশ বিধানে চাপা দেওয়ার ইতিহাস থাকে এবং ঐ প্রকার ব্যবস্থায় শরীরটি যখন সাইকোসিস দোষে জর্জরিত হইয়া বাত, স্মৃতি লোপ, স্ত্রীলোকদের জরায়ু ও ডিম্বাধার সংক্রান্ত নানা পীড়ার আবাসভূমিতে পরিণত হয় তখনই লক্ষণ সমষ্টি সাদৃশ্যে ইহা প্রয়োগ করিতে হয়। ইহা ছাড়া যে ক্ষেত্রে মাতাপিতার দেহস্থ সাইকোসিস দোষটি পুত্রকন্যার দেহে প্রবাহিত হইয়া তাহাদের পুষ্টি বর্ধনের কার্যটি ব্যহত করে, বুদ্ধির স্থূলত্ব প্রাপ্তি ঘটায়, স্মৃতি শক্তিটি কমাইয়া দেয় এবং মনের উপর নানা প্রকার ঝংকার উৎপাদন করে তখনই মেডোরিনাম কার্যকরী।

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১) গনোরিয়া রোগ চাপা পড়া হেতু উন্মাদ, বাত, হাঁপানী প্রভৃতি পীড়া । 
২) সাইকোসিস দোষের প্রাধান্য যুক্ত যে সকল পিতামাতার ঘরে সন্তান জনো, যে সকল শিশুর শৈশবেই শুষ্কতা বা শিশু্যকৃত পীড়া পুষ্টির পথ রুদ্ধ হইয়া যায়।
৩) হস্ত পদে দারুন জ্বালা এবং হিমাঙ্গ অবস্থায় কার্বোভেজের ন্যায় চু বাতাস পাইবার অভিলাষ দেখিয়া বাহ্যত ইহাকে গরম কাতর মনে হইতে পারে। কিন্তু মূলতঃ শীত কাতরতা। নাতিশীতোষ্ণ অবস্থাই ইহার নিকট আরামদায়ক।
৪) ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহে সর্ব শরীরে একটি কনকনানি বেদনার আবির্ভাব হয়। এবং তাহা সঞ্চালনে ও ঘুরিয়া বেড়াইলে হ্রাস পায়। তবে মাথাঘোরাতে ইহার বিপরীত অবস্থা-শয়নে মাথাগোরার উপশন এবং চলিয়া বেড়াইলে বৃদ্ধি ।
৫) সামান্য শব্দে রোগী চমকিয়া উঠে।
৬) পশ্চাৎদিকে বাঁকির না বলে মলমূত্র নিঃসরণে অক্ষমতা। 
৭) শিশুদের সর্দিকাশি ও ছাপানী ।
৮) বর্ষাকালে সমুদ্রতীরে, বেদনাদিত স্থানে উত্তাপ প্রয়োগে এবং উপুড় হইয়া শানে কাশি ও হাপানী বৃদ্ধি। ৯) হস্ত ও পদয়ের অস্থিরতা সহ রাত্রিকালে পুনঃ পুনঃ প্রচুর প্রস্রাব, অথচ ভাষাতেই উপশম, রোগের বিষয় চিন্তা করিলে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি।
১০) আহারের অল্পক্ষণ পরেই পুনরায় দারুণ ক্ষুধা।
১১) সর্ব সময়ের জন্য পিপাসা, এমনকি নিদ্রার মধ্যেই জল পানের স্বপ্ন দেখা। 
১২) মদ্য, লবণ, মিষ্টি দ্রব্য, বরফ, অগ্ন দ্রব্য, কমলালেবু, কাঁচা ফল প্রভৃতি খাওয়ার দারুণ অভিলাষ।
১৩) পুরাতন রাতের বেদনা-দিনে বৃদ্ধি রাত্রে উপশম ।
১৪) অন্যান্য ঔষধের ন্যায় ইহার রোগলক্ষণ বর্ষার দিনে বৃদ্ধি না পাইয়া বরং উপশম হয়। ইহা সাইকোটিক দোষয় মেডোরিনামের একটি বিপর্যয়পূর্ণ
১৫) সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইহার পীড়ার বৃদ্ধি ।

প্রয়োগ লক্ষণ:- সাইকোসিস বিষ জনিত বাত, গেঁটে বাত, আম বাত, পক্ষাঘাত, শিশুদের নানাবিধ পীড়া, স্ত্রীরোগ, পীড়া, প্রমেহ, মস্তিষ্কের পীড়া, শূল বেদনা, যকৃতের ফোঁড়া, ক্যান্সার, চর্মপীড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়।

প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতে মেডোরিনামের ব্যবহার:- প্রতিক্রিয়া আনিতে মেডোরিনামের কার্যকারিতা অদ্ভূত। কোনও রোগীতে সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও কাজ না হইলে জানিতে হইবে দেহাভ্যন্তরে নিশ্চয়ই কোন না কোন দোষ বর্তমান আছে। ঐ প্রকার প্রতিক্রিয়া শূন্য রোগীতে যদি বংশগত সাইকোসিস দোষের ইতিহাস পাওয়া যায় এবং বিকশিত লক্ষণসমূহে যদি সাইকোসিস দোষের প্রাধান্য বর্তমান থাকে তাহা হইলে সাহায্যকারী মধ্যবর্তী ঔষধ হিসাবে ২/১ মাত্রা মেডোরিনাম প্রয়োগ করিলে প্রতিক্রিয়া আসিরা রোগী আরোগ্য হয় অথবা পূর্ববর্তী ঔষধটির সাহায্য প্রাপ্ত হয়, সাইকোসিস দোষটি এরূপ গভীর ও বিশ্বাসঘাতক যে, উহা অতিশয় সংগোপনে যকৃতে ফোঁড়া, অর্বুদ, অস্বাভাবিক বর্ধন, ক্যান্সার, দুষ্টক্ষত প্রভৃতির আবির্ভাব ঘটাইতে পারে এবং সোরার সহিত মিলিত হইয়া যে কোন যন্ত্রে ঐ জাতীয় নানা প্রকার ভীতিজনক শেষ পরিণতি আনয়ন করিতে পারে।

সার্বদৈহিক লক্ষণ:- শিশু, বয়স্ক, স্ত্রী ও পুরুষ সকল প্রকার রোগী ক্ষেত্রে মেডোরিনাম প্রয়োগ করিতে হইলে যে কয়টি লক্ষণ অবশ্যই বর্তমান থাকা প্রয়োজন তাহা এই যে, বাহ্য দেহটি ঠাণ্ডা থাকা সত্বেও সর্ব সময়ের জন্য বাতাস পাইবার অভিলাষ, হাতে ও পারে জ্বালা জন্য আচ্ছাদন অসহ্য এবং বাতাস, বিশেষ করিয়া পাখার বাতাস পাইতে আকাংখা অথচ সামান্য ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহ সহ্য করিতে পারে না। গলদেশে প্রচুর ঘর্ম, উৎকণ্ঠা পূর্ণ অবস্থায় হাতের ও পায়ের তলে এবং বগলে চর্ম নির্গমন-ঘর্মে ও ভিজা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, পাহাড় পর্বত অঞ্চলে ও সূর্যোদয় হইতে সন্ধ্যায় পর্যন্ত রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি এবং প্রাতঃকালেই সর্বাধিক বৃদ্ধি এবং সন্ধ্যার আগমনে মানসিক প্রফুল্লতা, সমুদ্র তীরে রোগ লক্ষণের উপশম, উপুড় হইয়া শয়ন অথবা মাথার উপর হস্তদ্বয় রাখিয়া চিৎ হইয়া শয়ন না করা পর্যন্ত নিদ্রা না আসা এবং বাম পাশে অধিকক্ষণ শুইতে অক্ষমতা পদদ্বয় শীতল ও ঘর্মাক্ত, পায়ের তলায় টাটানি ব্যথা, ডান কাঁধে ও বাহুতে বাতের বেদনা। উপরোক্ত লক্ষণসমূহ মেডোরিনামের প্রান্তদেশের লক্ষণ। ইহা ছাড়া সামান্যতম সঞ্চালনে হৃৎকম্প ও বুক ধড়পড়ানি- न, বরফ ও ঠাণ্ডা খাদ্যে অভিলাষ এবং জিঙ্কের ন্যায় পদদ্বয়ের অস্থিরতা, সালফারের ন্যায় জ্বালা ও অস্থিরতা এবং প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাবে কোমর ব্যথার উপশম, রোগের বিষয় চিন্তা করিলে লক্ষণসমূহের বৃদ্ধি এবং প্রচুর ক্ষুধা এবং তৎসহ ইহার মানসিক লক্ষণ ও সাইকোসিস দোষের ইতিহাস বর্তমান থাকিলে মেডোরিনামই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঔষধ বলিয়া জানা উচিত ।

শিশু চিত্র:- মেডোরিনামের শিশুচিত্রটি জানা না থাকিলে শরীরটি যৌবনের প্রারম্ভ হইতেই সাইকোসিস দোষজ্ঞ নানা প্রকার পীড়ার আবাসভূমিতে পরিণত হয় এবং প্রৌড়াবস্থায় বাত, হাঁপানী, হৃদযন্ত্রের নানা প্রকার বিশৃঙ্খলা, এমনকি শেষ পর্যন্ত পক্ষাঘাত, উন্মাদ শুদ্ধ জাতীয় ক্ষয় পীড়া এবং স্ত্রী সংক্রান্ত নানা পীড়াদিতে জীবনটি একেবারে অকর্মন্য হইয়া উঠে। মেডোরিনামের ধাতুযুক্ত শিশুরা রাত্রিকালে বড়ই গরমবোধ করে এবং শিশু কলেরা লোগের বা তক্ষতা ও শীর্ণতা প্রাপ্তি একটি সহজ প্রবণতাযুক্ত হইয়া পড়ে। সামা ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহে তাহাদের প্রায়ই সর্দিকাশি হয় এবং বয়স হইতেই উপুড় হইয়া শুইবার একটি প্রবৃত্তি দেখা যায়। ঠাণ্ডা সহ্য হয় না অথচ প্রচুর হাওয়া চায়। তাহা ছাড়া যৌবনের প্রারম্ভ পর্যন্ত প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত শয্যামূত্রের অভ্যাস বর্তমান থাকিতেও দেখা যায় এবং অতিমাত্রায় অস্থিরতা সহ শৈশবাবস্থা হইতেই হস্তমৈথুনের একটি ভয়ংকর প্রবৃত্তি জাগ্রত হয়। মোট কথা রক্তশূন্য, অক্ষ, শীর্ণ ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ক্ষয়প্রাপ্ত, খর্বাকৃতি এবং স্থূলবুদ্ধি বিশিষ্ট অধঃপতিত শিশুই মেডোরিনামের শৈশবচিত্র। ইহার ধাতুযুক্ত শিশুদের মাতাপিতার শরীরে সাইকোসিস দোষটি অবশ্যই বর্তমান থাকে। ডাঃ টি ওয়াইন্ডস এর মতে সিফিলিনাম প্রয়োগে শিশুদের ম্যারাসমাস আরোগ্য না। হইলে মেডোরিনানে উপকার হইবেই।

শিশুদের শীর্ণতা:- সাইডোসিস বা প্রমেহ নিষ যারা আক্রান্ত পিতা বা মাতার শিশু সন্তানদের শীর্ণতা রোগে ইহার প্রয়োগ হয়। রোগী প্রায়ই উদরাময়ে ভোগে ও শীর্ণ হইতে থাকে। কোন ঔষধই উপকার হয় না। কোন ক্ষেত্রে যদিও উপকার হয় তাহাও স্থায়ী হয় না। এই সকল ক্ষেত্রে উচ্চ শক্তির মেডোরিনাম একমাত্রা প্রয়োগ করিয়া সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ করিলে সুফল পাওয়া যায় ।

হৃদপিণ্ডের পীড়ায়:- হৃদপিণ্ডে পাখির পাখা নাড়ার মত ধড়ফড় করে, শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ড খুব তাড়াতাড়ি চলে। হৃদপিণ্ডে কাটিয়া ফেলার মত বা সূচ ফোটানোর মত তীক্ষ্ণ ব্যথা। নড়াচড়াতে ঐ ব্যথার বৃদ্ধি হয়। হৃদপিণ্ডে জ্বালা করে, ঐ জ্বালা বাম বাহুতে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

প্রমেহ পীড়ায়:- ইহার প্রমেহ ঘন ঘন লিঙ্গোদ্রেক, প্রস্রাব কালীন জ্বাगा ও টানা হেঁচড়ার মত বেদনা। ইহা ছাড়া স্বপ্নদোষ, ধ্বজভঙ্গ, চটি, নদীতে বেদনা, যা তারল্য, রেতঃকাপড়ে শুকাইলে মড়মড়ে হ্যা, প্রস্রাবের সহিত সুতার মত সাদা সাদা পদার্থ নির্গমন ইত্যাদি লক্ষণে মেডোরিনাম উপকারী।

শূলবেদনায়:- শুলবেদনায় উদর মধ্যে কাগজ ও পিনের অবস্থিতি জ্ঞাপক অনুভূতি বর্তমান থাকে এবং রোগী সম্মুখ দিকে নত হইতে চেষ্টা করিলে যন্ত্রণায় চিৎকার করিয়া উঠে। আহারের পর ইহার হিক্কা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়।

যৌন যন্ত্রে বা যৌন পীড়ায়:- যৌন পীড়ার বিভিন্ন অবস্থায় ইহা ব্যবহৃত হয়। প্রমেহ ঘনঘন লিঙ্গোদ্রেক, প্রস্রাব কালীন জ্বালা ও টানা হেঁচড়ার মত বেদনা। ইহা ছাড়া স্বপ্নদোষ, গ্রীট, সমস্ত মূত্রনালীতে বেদনা, ধাতু তারল্য, রেতঃ কাপড়ে শুকাইলে মড়মড় হওয়া, প্রস্রাবের সহিত সুতার ন্যায় সাদা সাদা পদার্থ নির্গমন প্রভৃতি লক্ষণে ইহা উপকারী। ইহা ছাড়া স্ত্রীযন্ত্রের উপর ইহার বেশ ক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। সাইকোসিস দোষদুষ্ট স্ত্রীলোকদের দুর্গন্ধযুক্ত প্রদর স্রাব, জরায়ুর প্রদাহ, ডিম্বাধার প্রদাহ, স্তনের উপর বা জরায়ুতে ক্যান্সার বা টিউমার, সেজন্য গ্রাবের গোলমাল। দীর্ঘদিন বন্ধ্যাত্ব পীড়া দুর্গন্ধ ও চুলকানিযুক্ত প্রদর স্রাবের ইতিহাস থাকিলে মেডোরিনাম প্রয়োগে স্ত্রীলোকদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

স্ত্রী অঙ্গে বা স্ত্রীরোগে:- স্ত্রীযন্ত্রের উপর সাইকোসিস দোষের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। সেজন্য সাইকোসিস দোষদুষ্ট স্ত্রীলোকদের গর্ভধারণ ক্ষমতাটি প্রায়ই লোপ পাইতে দেখা যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে যদিও ২/১ জন্যে, তাহারা শুদ্ধ জাতীয় ক্ষয়রোগ, বক্ষঃযন্ত্রের নানা পীড়া বা পরিপাকযন্ত্রের বিশৃংখলা ভুগিয়া অপরিপুষ্ট, খর্বাকৃতি শীর্ণ ও রক্তশূণ্য শরীর ও বুদ্ধি শূন্য মন লইয়া আজীবন নানা প্রকার রোগভোগ করিতে থাকে। সাইকোসিস দুষ্ট স্ত্রীলোকদের দুর্গন্ধযুক্ত প্রদরস্রাব, জরায়ু প্রদাহ বা স্থানচ্যুতি, ডিম্বাধার প্রদাহ, স্তনের উপর বা জরায়ুতে ক্যান্সার বা টিউমার, সেজন্য গ্রাবের নানা প্রকার গোলযোগ ঋতুকালে রোগিনী মনে করে, স্কন্ধক্ষয়ের উপর কে যেন বসিয়া উকি ঝুঁকি মারিতেছে এবং সেজন্য অতিশয় উৎকণ্ঠার সহিত এদিক ওদিক চাহিয়া থাকেন, শেষ পর্যন্ত তাঁহারাই জরায়ু গ্রীবা ক্ষত লক্ষণে নিদারুণ কষ্ট পান। জরায়ুর মুখের নিকট একটি স্থান স্পর্শাধিক্য যুক্ত। ঋতুস্রাব প্রচুর, কালবর্ণের চাপচাপ বা উজ্জ্বল বর্ণেরও হয়। ঋতুকালে ভীষণ যন্ত্রণায় রোগিনী: মূর্ছান্বিত হইয়া পড়ে। সাবান দেওয়া সত্ত্বেও বস্ত্রাদি হইতে রক্তের দাগ উঠিতে চায় না। দীর্ঘদিন বন্ধ্যাত্ব পীড়ায় দুর্গন্ধ ও চুলকানিযুক্ত প্রচুর প্রদর স্রাবের ইতিহাস থাকিলে মেডোরিনাম প্রয়োগে কয়েক সপ্তাহ পরেই স্ত্রীলোকদের গর্ভবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জ্বর পীড়ায়:- তরুণ জাতীয় জ্বরে ইহার প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘদিন ধরিয়া অল্প অল্প জ্বর ভোগ করিয়া শরীরটি যখন জীর্ণ ও শীর্ণ হইয়া পড়ে এবং রোগী যখন শুষ্কতা জাতীয় ক্ষয় পীড়ায় ভুগিতে থাকে, তখনই মেডোরিনাম প্রয়োজন হয়। জ্বরাবস্থায় ইহার রোগী সব সময় পাখার বাতাস পাইতে চায়, রোগী ঘন ঘন প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব ত্যাগ করে এবং জুরাবস্থায় অনেক সময় গরম জল পান করিতে চায়। সর্বদেহে বেদনাও থাকে। সাইকোটিক দোষদুষ্ট শিশুদেরই সাধারণত ঘুষঘুষে জ্বরের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই প্রকার জ্বর অতিশয় বিশ্বাসঘাতক এবং আধঘণ্টা বড় জোর এক ঘন্টার বেশী থাকে না- অতি সংগোপনে আসা যাওয়া করে, ধীরে ধীরে শিশু যখন ক্রমেই শীর্ণ, শুষ্ক ও রক্তশূন্য হইতে থাকে তখন প্রকৃত অবস্থা ধরা পড়ে এবং বহুদিন হইতে রাত্রিশেষে শিশুর শরীরটি যে গরম হইত, মাতার তখন সে কথা মনে পড়ে। এই প্রকার রোগীদের মধ্যে শতকরা পঞ্চাশ জনের মেডোরিনাম প্রয়োজন হয়। বাকী পঞ্চাশজন অবশ্য লক্ষণ মতে এব্রোটেনাম, আয়োডিন, আর্জেন্ট নাইট, স্যানিকিউলা, সাইলিসিয়া প্রভৃতির দ্বারা আরোগ্য লাভ করে।

বাত রোগ:- নতুন ও পুরাতন উভয় প্রকার বাতেই ইহা উপযোগী। বাতের প্রদাহবস্থায়, সঞ্চালনে ইহার লক্ষণসমূহ বৃদ্ধি পায় কিন্তু মাংসপেশী এবং স্নায়বিক ধরনের বেদনায় রোগী বরং সঞ্চালনেই উপশম বোধ করে। গনোরিয়া তরুণ স্রাবটি চাপা পড়িলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেডোরিনামের সমলক্ষণে কোমরে ও পায়ের পাতায় বাত দেখা দেয় এবং এই অবস্থায় অতিশয় জ্বালাসহ পায়ের পাতাটি এরূপ স্পর্শ কাতর হইয়া উঠে যে, রোগীকে হামাগুড়ি দিয়া চলিতে হয়। পুরাতন সন্ধিবাত, সর্বাঙ্গের বাত ও স্নায়ুশূল। ডাঃ টি ওয়াইল্ড বলেন-কোনও রোগীর বাত হইলেই বুঝিতে হইবে তাহার বা তাহার পিতা পিতামহ কাহারো প্রমেহ পীড়া ছিল এবং মেডোরিনাম প্রয়োগে পীড়াটি উপশম হইবে। 

যকৃত লক্ষণ:- কোন প্রতিক্রিয়া শূন্য রোগীতে বংশগত সাইকোসিস দোষের ইতিহাস পাওয়া গেলে সাহায্যকারী মধ্যবর্তী ঔষধ হিসাবে ২/১ মাত্রা মেডোরিনাম প্রয়োগে রোগী দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইবে ও পীড়া আরোগ্য হইবে। ইহার যকৃত লক্ষণ বলিতে গেলে বলিতে হয় যে সাইকোসিস দোষটি অতিশয় বিশ্বাসঘাতক ও গভীর, উহা অতি গোপনে যকৃতে ফোড়া, অর্বুদ, ক্যান্সার অস্বাভাবিক বর্ধন, দুষ্টক্ষত প্রভৃতির আবির্ভাব ঘটায় এবং সোরার সহিত মিলিত হইয়া দেহের যে কোন যন্ত্রে ঐ জাতীয় নানা প্রকার ভীতিজনক শেষ পরিণতি আনয়ন করিতে পারে।

মস্তিষ্কের পীড়ায়:- মাথায় বেদনাসহ জ্বালা, মাথার মধ্যস্থলে চাপ ও ভারবোধ। মাথায় চুলকানি, খুদ্ধি, চুলে জটা বাঁধা প্রভৃতি। সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাথা ঘোরার বৃদ্ধি, শয়নে উপশম। মস্তকের পঞ্চাতে যন্ত্রণা অধিক হয়। উহা মেরুদণ্ডের দিকে ছড়াইয়া পড়ে। মনে হয় যেন তাহার মাথা ভারী ও পেছনের দিকে হেলিয়া পড়িতেছে। কাশিলে ও চক্ষুতে আলো লাগিলে শিরঃপীড়া। মাথায় এত আড়ষ্ট ভাব যে রোগী মনে করে সে পাগল হইয়া যাইবে। রোগী মনে করে যে তাহার কপালে একটা দুরবন্ধনী রহিয়াছে।

পেটের বেদনায়:- শূল বেদনায় উদর মধ্যে কাগজ ও পিনের অবস্থিতি জ্ঞাপক অনুভূতি বর্তমান থাকে এবং রোগী সম্মুখ দিকে নত হইতে চেষ্টা করিলে যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়া উঠে। পেটে কামড়ানি ব্যথা, খাওয়ার পরও কমে না। পেটের ভিতর কম্পন। যকৃত ও প্লীহার বেদনা, পেটে ভর দিয়া উপুড় হইয়া শুইলে কিছুটা উপশম। নবজাত শিশুর কোষ্ঠ কাঠিন্য ।

শিশুদের শয্যামূত্রে:- ইহার শিশু রক্ত শূন্য, শুষ্ক, শীর্ণ ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন, ক্ষয়প্রাপ্ত খর্বাকৃতি এবং স্থুল বুদ্ধি বিশিষ্ট । মেডোরিনামের ধাতুযুক্ত শিশুদের মাতাপিতার দেহে সাইকোসিস দোষ বর্তমান থাকে। এই শিশুরা প্রতিরাত্রে বিছানায় প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব করে, প্রস্রাব ঝাঁঝাল ও ঘোর লালবর্ণের, গরম এবং যেখানে লাগে হাজিয়া যায়। প্রস্রাবে খুবই দুর্গন্ধ। শিশুদের কিডনী ও কোমরে খুব বেদনা থাকে। কিছু পরিমাণ প্রসাব ত্যাগ করিলে মোটামোটি আরামবোধ ।

নিম্নশক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সাবধানতা:- কোন তরুণ পীড়াতেই এবং নিম্নক্রমে মেডোরিনাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। যেহেতু ইহা নোসড শ্ৰেণীভূক্ত ঔষধ এবং গনোরিয়া বিষ সম্ভূত। তাই ইহার নিম্নক্রম ব্যবহারে রোগলক্ষণ ও রোগীতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিবে এবং পীড়াটি আয়ত্বের বাহিরে চলিয়া যাইবে। বংশগত দোষ নিবারণ করিতে উচ্চতম শক্তিগুলিই ২/১ মাত্রা ব্যবহার করা উচিত, ইহার বেশী নয়।

বৃদ্ধি বা উপচয়:- রোগের কথা চিন্তা করিলে, আবদ্ধ ঘরে, আচ্ছাদনে, মেঘ বিদ্যুৎসহ ঝড়ের সময় এবং ভিজা ও ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহে, নড়াচড়ায়, অতি প্রত্যূষে, সূর্য কিরণে, বিছানার গরমে।

উপশম:- উপুড় হইয়া শুইলে, পশ্চাৎ দিকে বাকিলে, অনাচ্ছাদিত অবস্থায়, সজোরে ঘর্ষণে, সমুদ্র তীরে, রাত্রিকালে, বর্ষার দিনে ও মুক্ত বাতাসে, পাখার বাতাসে।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ তুলনীয়:-হাঁপানী কোপেভা, কেলিবাই, কেলি আয়োজ, শিশুদের শয্যামূত্র-এসিড বেঞ্জো, ক্রিয়োজোট, রাতে-রেডিয়াম, রাসটক্স, শিশুদের শীর্ণতায়-এব্রোটেনাম।

তুলনীয় ঔষধ:- ব্যারাইটা, নেট্রাম মিউর, সোরিনাম, সালফার, সিফিলিনাম, পুজা, জিঙ্কাম। 

অনুপূরক ঔষধ:- সাইকোটিক কম্পাউন্ড।
 
পূর্ববর্তী ঔষধ:- লাইকো, সাইলি, সিফিলি, নেট্রাম সালফ।

ক্রিয়ানাশক ঔষধ:- ইপিকাক ।

ক্রম বা শক্তি:- ২০০ হইতে ঊর্ধ্বতম শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ