একক ঔষধ (Single Remedy) :
প্রশ্ন- পরিবর্তিত মাত্রা কাহাকে বলে?
উত্তর ঃ ক্ষুদ্রতম পরিমাণের একমাত্রা ঔষধ (ঔষধসিক ১টি ১০ নং অনুবটিকা) পানিতে গুলিয়া হাতা হইতে ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে প্রত্যেকবার ১০ বার সজোজের ঝাঁকি দিতে হয়। প্রত্যেকবার ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে যাত্রাকে জলে গুলিয়া বিভক্ত করিলে ও ঝাঁকি দিলে প্রথম বারের ঔষধের মাত্রা অপেক্ষা পরবর্তী মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হয়। একমাত্রা ঔষধকে এইভাবে আরও ক্ষুত্র ও পরিবর্তিত করিবার ফলে প্রত্যেকবার যে ধরণের মাত্রার সৃষ্টির হয় তাহাকে পরিবর্তিত মাত্রা বলে।
প্রশ্ন- পরিবর্তিত মাত্রায় ঔষধ ব্যবহারের উপকারিতা লিখ।
উত্তর : পরিবর্তিত মাত্রায় ঔষধ ব্যবহারের উপকারিতা নিম্নে দেওয়া গেল।
১) পরিবর্তিত মাত্রার ঔষধ পরিবর্তিত জীবনীশক্তির সাথে সামঞ্জস্য রাখিতে পারে বলিয়া অতি সহজেই দেহে গ্রহণযোগ্য হয়।
২) এই প্রক্রিয়ায় ভোজশক্তি সর্বোত্তম বিকাশ সাধন হইয়া থাকে। সেজন্য ইহা অধিক কার্যকরী।
৩) ঔষধ ধন ঘন প্রয়োগ করা যায়। পুনঃ পুনঃ প্রয়োগজনিত কোনরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তরুণ ও পুরাতন উভয় ক্ষেত্রেই ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ নীতিসম্মত।
৪) ইহাতে ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ অপেক্ষাকৃত সহজ।
৫) বার বার পরিবর্তিত শক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করিলে চিররোগের ভোগকাল বহুলাংশে কমানো যায় এবং ইহার ফলে আরোগ্য ক্রিয়া দ্রুততর হয়।
৬) ঔষধ প্ৰায় অনুভব হয় না বলিলেই চলে। অর্থাৎ ঔষধের প্রতিক্রিয়া মৃদুতম। সেজন্য সাংঘাতিক পীড়াতেও নির্ভয়ে ব্যবহার করা চরে।
প্রশ্ন- একক ঔষধ বলিতে কি বুঝ?
উত্তর : রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহ করিয়া এই লক্ষণসমষ্টির সহিত যে ঔষধের লক্ষণ অধিকতর সদৃশ হইবে সেই ঔষধটি উক্ত রোগীতে সঠিকভাবে প্রযোজ্য। রোগীর লক্ষণসমষ্টির স্বতন্ত্রতার উপর ভিত্তি করিয়া সুনির্বাচিত সদৃশ লক্ষণ বিশিষ্ট নির্বাচিত স্বতন্ত্র ঔষধটিই একক ঔষধ। এইরূপে নির্বাচিত ঔষধ অবিমিশ্র অবস্থায় রোগীকে প্রয়োগ করা হইলে তাহাকে একক ঔষধ বলে।
প্রশ্ন- এক সময় একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে-ব্যাখ্যা কর।
বা, এক সময় একাধিক ঔষধ ব্যবহারের অসুবিধা কি?
উত্তর : এক সময় দুইটি বা একাধিক ঔষধ বা পর্যায়ক্রমে ঔষধ ব্যবহার করা হোমিওপ্যাথিতে চলে না। ইহা হোমিওপ্যাথিক নীতি বহির্ভূত। প্রয়োগনীতি হইল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বস্তুস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখিয়া স্বাতন্ত্র্যে স্বাতন্ত্র্যে মিলন ঘটানো বা ঔষধ নির্বাচন অর্থাৎ ব্যক্তিগত রোগীর রোগ চিত্রের অনুরূপ ঔষধের একটি কৃত্রিম রোগচিত্র অনুসারে ঔষধ প্রয়োগ করা হোমিওপ্যাথির অনন্য বিধান। একই রোগীর রোগ লক্ষণ সমষ্টির দ্বারা অংকিত চিত্র একই ঔষধের মধ্যেই পাওয়া সম্ভব-একাধিক ঔষধে সম্ভব নয়। কেননা সুস্থ মানবদেহে দুই বা ততোধিক ঔষধের ক্রিয়ার সম্মিলিত ফল অজ্ঞাত। কাজেই রুগ্ন মানুষে আমরা একসঙ্গে একাধিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে পারি না। কারণ ব্যক্তির মতই প্রত্যেক ঔষধের বস্তু স্বাতন্ত্র্য বা বৈশিষ্ট্য আাছে। সুতরাং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য অনুসারে ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইলে দুই বা ততোধিক ঔষধের মধ্যে স্বতন্ত্র রোগ চিত্র পাওয়া যাইবে না। বস্তু ও ব্যক্তি স্বতন্ত্রতার কারণে একাধিক ঔষধ কখনও সদৃশ হইতে পারে না। দুইটি ঔষধ একত্রে প্রয়োগ করিলে উভয়ের ক্রিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হইয়া উঠে। সুতরাং আকাংখিত আরোগ্য ক্রিয়া আশা করা যায় না। এক সময়ে একটি মাত্র ঔষধই প্রয়োগ করিতে হয়।
প্রশ্ন- কত সময় অন্তর ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়? বা, ঔষধের পুনঃপ্রয়োগের নিয়ম কি?
উত্তর : যতক্ষণ পর্যন্ত প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়া বর্তমান ততক্ষণ পর্যন্ত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ করা চলে না। হোমিওপ্যাথিক নিয়মে ঔষধ প্রয়োগের পর রোগলক্ষণ হ্রাস পাইতে থাকিলে এবং রোগী সুস্থ বোধ করিলে ঔষধের আর পুনঃপ্রয়োগের প্রয়োজন নাই । অর্গাননের ৪র্থ সংস্করণে আমরা দেখি যে হোমিওপ্যাথিক মাত্রার দ্রুত বারংবার প্রয়োগ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আগের মাত্রার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ঔষধ পুনর্বার প্রয়োগ করা উচিত নয়। অর্গানন ৫ম সংস্করণে একটা অনুকূল ধারনা পাওয়া যায়।
তাহা হইল সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচিত ঔষধের সূক্ষ্মতম অথচ শক্তিশালী এক একটি মাত্রা পর্যন্ত বিরতিতে পুনঃপ্রয়োগ করা যাইতে পারে। নিম্নশক্তিতে সাধারণতঃ ঘনঘন পুনঃপ্রয়োগ মানিয়াই নেওয়া হইয়াছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন উচ্চশক্তি নিয়া। অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণে হ্যানিমান লিখিয়াছেন সযত্নে নির্বাচিত একটি ঔষধ এখন মাসের পর মাস ধরিয়া দৈনিক দেওয়া যাইতে পারে। রোগের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখিয়াই পুনঃপ্রয়োগের প্রয়োজনটিকে নির্ণয় করিতে হইবে। দশমিক, শতমিক অপেক্ষা পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতির ঔষধের শক্তি ও মাত্রা আরোগ্যদায়ী পদার্থের আরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কনিকা বহন করে। এই জন্যই নবতম এই শক্তির ব্যবহারে অহেতুক ঔষধঙ্গ বৃদ্ধি প্রায় সম্পূর্ণভাবে রোধ করা যায়। এই পদ্ধতির ঔষধ ব্যবহার করিতে হইলে একটি সূক্ষ্ম অনুবটিকাকে প্রায় ১২০ মিলি বিশুদ্ধ জলে দ্রবীভূত করিয়া উহার এক চা চামচ পরিমান লইয়া একটি মাত্রা করা হয়। পরিবর্তিত মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করিলে ঔষধ আরও শক্তিশালী হয়। রোগীর ক্ষেত্রে এইরূপ পরিবর্তিত মাত্রার অতি ঘনঘন পুনঃপ্রয়োগ করা যায়, যাহা আরোগ, ক্রিয়াকে নিশ্চিতভাবে দ্রুতগতি সম্পন্ন করিয়া থাকে।
প্রশ্ন- মাত্রা এবং শক্তির ব্যবহার ও পুনঃপ্রয়োগ সম্পর্কে হ্যানিমাन কি বলিয়াছেন?
ঔষধ, রোগ, এবং রোগীর উপর নির্ভরশীল। রোগীর প্রবণতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাত্রা ও শক্তির পরিবর্তন আবশ্যকীয়। প্রবণতা অধিক হইলে মধ্যম ও উচ্চশক্তির ঔষধের অভি নুন্যতম ও সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়োগ করা প্রয়োজন । এইরূপ ক্ষেত্রে ঔষধের ঘন ঘন পুনঃপ্রয়োগ না করাই ভাল। আবার প্রবণতা কম থাকিলে নিম্নশক্তির ঔষধের ন্যূনতম মাত্রা প্রয়োজনে পুনঃপ্রয়োগ রোগীর পক্ষে উপকারী।
0 মন্তব্যসমূহ